
বিগত কয়েক বছরে বসন্তের সাজ-ফ্যাশনে বেশ পরিবর্তন এসেছে। পাশ্চাত্যর মতো আমাদের দেশে বসন্তকালে পরার জন্য তৈরি পোশাকগুলোর মোটিফে ঘুরে ফিরে এসেছে ফুল। ফুলেল ছাপার পোশাক এবারের বসন্ত সংগ্রহে দেখা যাচ্ছে। বৈচিত্র্য রয়েছে পোশাকের মোটিফ ও ডিজাইনে। বাহারি রঙের পোশাকেও বসন্তবরণ করা হচ্ছে।
যেমন হবে পোশাক
বসন্তবরণ মানেই বর্ণিল পোশাক। এই দিনটিতে নারীদের বেশির ভাগই শাড়ি বেছে নেন। তবে সালোয়ার কামিজ, কুর্তা, স্কার্ট-টপস অথবা পাশ্চাত্য ঘরানার পোশাকও মানিয়ে যায় বসন্তের আবহের সঙ্গে। শাড়ি পরলে ব্লাউজে আনতে পারেন নতুনত্ব। সুতি, কোটা, জর্জেট ও সিল্কের শাড়ি বেছে নিতে পারেন। শাড়ির জমিনের কোথাও আছে এক থোকা ফুল বা কোথাও একগুচ্ছ পাতা। আবার কোথাও কবিতা বা গানের লাইন এঁকে শাড়িতে আনা হয়েছে বাংলা প্রকৃতির আদল। বাংলাদেশের প্রকৃতি ও ঐতিহ্য এত সমৃদ্ধ যে, প্রতিটি ঋতুতেই আলাদা আলাদা মোটিফে কাজ করার সুযোগ থাকে। তাই অনেকে হলুদ জমিন শাড়ির ওপর ছোট ছোট সাদা ফুলের কাজ করে। সাদা কাপড়ের ওপর হলুদ রঙের ফুলও বসন্তের বার্তা দেয়।

অনেকগুলো রং দিয়ে শাড়িতে স্ট্রাইপের নকশা করেছে। এ ছাড়া এই সময়ে ঢিলেঢালা কামিজ, কুর্তি, টিউনিক, টপস পরেন অনেকে। ফুলহাতা না পরে হাফহাতা বা স্লিভলেস পোশাক পরতে পারেন। বটম হিসেবে পালাজ্জো, ধুতি সালোয়ার, ওয়াইড লেগড জিনস বা গ্যাবার্ডিনের প্যান্ট, লম্বা স্কার্ট পরলে ভালো লাগবে। ট্রেন্ড হিসেবে মিডি ও ম্যাক্সি ড্রেসের জনপ্রিয়তা অনেক।
চাইলে এগুলো দর্জির কাছ দিয়ে সুতি বা লিনেন ফেব্রিকে বানিয়ে নিতে পারেন। বসন্তে বর্ণিল পোশাক এনেছে ফ্যাশন হাউসগুলো। বসন্ত কালেকশনে রয়েছে মেয়েদের জন্য শাড়ি, থ্রি-পিস, কেপ টপ, কাফতান, কুর্তি, শর্ট টপ। ছেলেরা অন্য সময় ফুলেল মোটিফ এড়িয়ে চললেও এ সময়ে বেশ পছন্দ করে। পাঞ্জাবিতেও জায়গা করে নিয়েছে ফুলেল নকশা। ছেলেদের পাঞ্জাবির পাশাপাশি ক্যাজুয়াল শার্ট, কুর্তা, পলো, টি-শার্ট, ডাই শার্ট রয়েছে। ছোটদের কালেকশনে টি-শার্ট, স্কার্ট টপ, ফ্রক, টপস, প্যান্ট টপ, জাম্প স্যুট, ক্যাজুয়াল শার্ট, কুর্তা, পলো, টি-শার্ট, টুইন টপসহ আরও নানা স্টাইলিশ পোশাক।
পোশাকের কাপড়
ঋতুর তাপমাত্রার কথা মাথায় রেখে ক্রেতাদের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে আরামদায়ক শিফন ও কটন ফেব্রিক। এমন আবহাওয়ায় সবচেয়ে ভালো সুতি কাপড়ের পোশাক। সুতি কাপড়ের ভেতর দিয়ে বাতাস চলাচল করতে পারে। এ ছাড়া এর ঘাম শোষণক্ষমতাও বেশি। সুতির পরই আরামদায়ক কাপড়ের দৌড়ে এগিয়ে নরম লিনেন। এ ছাড়া বেছে নিতে পারেন খাদি, ভিসকস, ধুপিয়ান, শিফন, সিল্কের পোশাক।
ফুলের নকশা
জমিনের রং, কাপড়ের ধরন, পোশাকের ডিজাইন সবকিছুই আপনার শারীরিক অবয়বে প্রভাব ফেলতে পারে। পাতলা গড়নের মেয়েদের যেকোনো ছাপা নকশাতেই মানাবে। ভারী গড়নের মেয়েরা আজকাল ফ্রকের মতো চারদিকে ছড়ানো পোশাক বেশি পছন্দ করছেন। ঢোলা কিন্তু কলার দেওয়া কুর্তা, বড় টপের সঙ্গে মেঝেছোঁয়া স্কার্ট কিংবা লম্বা কোটির মতো দুই পরত দেওয়া কামিজ পরছেন অনেকে। ঘন ফুলের নকশা বা ফুলের মোটিফের পোশাক ভালো লাগে। এ ছাড়া মাল্টিকালার প্রিন্টের পাশাপাশি ফ্লোরাল প্রিন্টে ওয়াটার প্রিন্ট ইফেক্ট ব্যবহার করে অনেকে পোশাক ডিজাইন করছেন।
সালোয়ার-কামিজ, স্কার্ট, টপস, গাউনে রং মেলেছে ছোট বড় উজ্জ্বল বিভিন্ন ফুলের পোশাক। এ ছাড়া লিনেন, কটন, সিল্ক, হাফসিল্ক, ভয়েল, টু-টোন কাপড়ে তৈরি পোশাকগুলোতে নকশা ফুটিয়ে তুলতে হাতের কাজ, এমব্রয়ডারি, স্ক্রিন ও ব্লক প্রিন্ট, ডিজিটাল প্রিন্ট এবং টাই-ডাইয়ের ব্যবহার হয়েছে।
পোশাকে প্রকৃতির রং
ফাল্গুনের প্রথম দিনটিতে চারদিক প্রকৃতির রংগুলোতে সেজে উঠে। নতুন পাতার কচি সবুজ রং কিংবা গাঁদা ফুলের হলুদ-কমলা রং- বসন্তবরণের সাজে প্রকৃতির এই রংগুলোতেই সেজে উঠতে পছন্দ করে সবাই। বসন্তের চিরায়ত রং বাসন্তীর পাশাপাশি লাল, কমলা, সবুজসহ অনেক রং দেখা যায়। সাদার ওপরেও বিভিন্ন রঙের নকশা করা কাপড় জড়িয়ে নিতে পারেন গায়ে। যে রঙেরই হোক না কেন, বসন্তে ফুলেল নকশা দারুণ মানিয়ে যায়। এ ছাড়া সব উজ্জ্বল রঙের ফুটে উঠেছে ফুলের প্রিন্টগুলো। লাল, গোলাপি, হলুদ, নীল, পিচ, বেগুনি, কমলা, চকলেট আর সবুজের সব কটি শেড ফুটে দেখতে পাবেন ফুলেল ছাপার যেকোনো কাপড়ে।
কাপড়ের কাটছাঁট
ফুলের আকৃতি আর কাপড়ের ধরন বুঝে পোশাক কাট ঠিক করা হয়। অনেক ফ্যাশন হাউস ঝলমলে কাপড়ে আধুনিক ছাঁট পোশাক ডিজাইন করেছে, আরামদায়ক কাপড় সুতিতে চেনা কাটের পাশাপাশি ফুলেল ছাপায় কাটিং, প্যাটার্ন ট্রেন্ডি অনুসরণ করেছে।
টপসে সেমি বোট নেক, রাউন্ড নেক, রাউন্ড উইথ ফল, ব্র্যান্ড কলার পোশাক বসন্তে বেশ মানানসই। গাউন, কামিজ, টরসোর মতো ড্রেসে ফ্লোরাল প্রিন্টের ব্যবহার করে আলাদা ডিজাইন করা হয়েছে। এ ছাড়া কিছু কিছু ফ্যাশন হাউস উৎসবের মোটিফে ডিজাইন না করে, সব জায়গায় সব আয়োজনে পরা যায় এমন পোশাক ডিজাইন করেছে। বেন কলার দেওয়া লুজ ফিটিংয়ের শার্ট, স্লিভলেস, স্লিভসহ তুর্তি। ভি নেক, নচ বা কোট কলার ও সাইড বেল্ট দিয়ে ভিন্ন লুক আনা হয়েছে, যা পরা যাবে উৎসব থেকে শুরু করে যেকোনো আয়োজনে।
কলি