
দেশীয় ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্পকে নতুন প্রজন্মের কাছে উপস্থাপন করার লক্ষ্যে রাজধানীর আলোকি কনভেনশন সেন্টারে বসেছিল ঢাকা মেকার্সের তৃতীয় আসর। ঢাকার নতুন প্রজন্মের সৃজনশীলতার কিছুটা হলেও আঁচ পাওয়া গেছে এবারের আসরে।
এবারের আয়োজনে জামদানি, নকশিকাঁথা, শতরঞ্জি, শীতলপাটি, টেপাপুতুল ইত্যাদি ঐতিহ্য নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে আলোকির গ্লাস হাউসে বসেছিল ক্র্যাফট মার্কেট। মার্কেটপ্লেস ছিল আলোকির মূল বলরুমে। প্রায় ৬০ জন উদীয়মান শিল্পী ও উদ্যোক্তা বৈচিত্র্যময় এবং উদ্ভাবনী সব পণ্য তুলে ধরছেন। দোতলা ছিল আর্ট মার্কেট, যেখানে ছিল শিল্প প্রদর্শনী ও ক্রয়ের ব্যবস্থা। উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে করা হয়ে ছিল সংগীতের মঞ্চ। মুক্তমঞ্চের পাশেই লাল রঙের ফলের ক্রেট দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল খাবার জায়গা।
জিরো ওয়েস্টকে মাথায় রেখে, পরিবেশবান্ধব প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি পাত্রে খাবার পরিবেশন করা হয়। মেকার্স মার্কেটের পাশে প্লে গ্রাউন্ড ইংকের সৌজন্যে ম্যানুয়াল গেম জোনে ‘রস-কশ’ গেমস নামের গেমস জোন করা হয়েছিল। সংগীতপ্রেমীদের জন্য ঢাকা জ্যান প্যাড নামে মিউজিক্যাল বুথ করে ছিল। এখানে হারমোনিয়াম, তবলা, গিটার, কি-বোর্ড, ইউকেলেলের মতো বাদ্যযন্ত্র রাখে সাজানো হয়েছিল। যে যার খুশিমতো এসে গিটার বাজিয়ে ছবি তুলেছে।
ফুড জোনের পাশেই ছিল ‘হাউস অব অ্যানিমেশন’ যেখানে তিনজন অ্যানিমেশন আর্টিস্টের ইলাস্ট্রেশন, গ্রাফিকস, এনিম, এলিমেন্ট, ভিজ্যুয়াল আর্ট উপস্থাপন করা হয়েছে। ঢাকা মেকার্সের পাঁচ দিনই মুক্তমঞ্চে ছিল সংগীতায়োজন।
বাইরের খোলা অংশে ডেমোনেস্ট্রেশন জোনে রিসাইকেলড ক্র্যাফট, আলপনা, বডি পেইন্টিং পারফরম্যান্স ও রিকশা আর্ট অন অবজেক্ট, ইয়ান্ত্রার পরিচালনায় ট্যাপেস্ট্রি তৈরির পরিবেশনা, ফোক পেইন্টিং অন অবজেক্ট পরিবেশনা, লাঠিখেলা, বাঁশি বাজানো পরিবেশনা ও সাধুসঙ্গের পরিবেশনার মাধ্যমে প্রাণবন্ত হয়ে উঠে আলোকির প্রাঙ্গণ।
ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্পর সঙ্গে নজর কেড়েছে উদীয়মান শিল্পীদের চারুশিল্প। মেকার্স মার্কেট প্লেসে শাবানা, আয়শা, হানিফ পাপ্পু, গুড ফর লিভিং, অলক্ষ্মী, ডেয়ারিং, ইকিগাই, সো কলড আর্টিস্ট, হল্লা, ক্রিস্টাল ইন আ র্যাপ, ব্যাড গার্ল নেশন, লী-বার, সেভেন ডেইজ ডায়েরি, বক্স অব অর্নামেন্টস, পশুপ্রেমীদের জন্য বিশেষ স্টল ফারি ঘর গুডিস, মিল্ক, সোর, ইকারুস, র্যান্ডম, পাকা, ডাক্কা, ফুটপাত, অরাম, আর্টিস্ট সিদ্দিক, রফিক ওয়ার্ক বক্স, স্টুডিও সিক্স বাই সিক্স, তাওসিন তাওহা, ওয়াইল্ড ওভেন, পেস্টেল হোক্স, রেড পেন্সিল, নুজ আর্ট, এথনিক ওয়্যার, মনির হোসেন, স্ট্রেইট আউট টোকো, ডি এম মার্চেন্ট, হোসেন ওয়ার্কস, কংক্রিট অ্যান্ড বিয়ন্ড, প্লাম পিসেস, গেরো, যথাশিল্প, সি লা ভি, পটারি বুথ, পেস্টেল হোমস, ওগোপোগো স্টুডিওর মতো সৃজনশীল উদ্যোক্তারা স্টল বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে।
এ ছাড়া মিনিয়েচার টেরারিয়াম, ক্যালিগ্রাফি, সাস্টেইনেবল লেদার, জিরো ওয়েস্টেজ ওয়ার্কশপ আর নকশিকাঁথার অনুপ্রেরণায় ভূত ইলাস্ট্রেশনের ওয়ার্কশপগুলো নজর কেড়েছে।
এবারের আয়োজনে রিকশার হুডের আর্টওয়ার্ক দিয়ে পণ্য তৈরি করেছেন হল্লা, কানের দুল, মালা, টোট ব্যাগ, গিটার স্ট্রাপসহ অনেক পণ্য। নতুন প্রজন্মের কাছে লুঙ্গির ঐতিহ্য তুলে ধরতে ল-তে ছিল বেশ কিছু উদ্যোগ। পাবনায় তৈরি করা তাদের ভেজিটেবল ডাই করা টাই আর লুঙ্গি ছিল আকর্ষণীয়।
ভবিষ্যতে সম্ভব হলে মসলিনের পকেট স্কয়ার আনার পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের। আইচা নারকেলের খোল দিয়ে বিভিন্ন জিনিস বানিয়ে চমক দিয়েছেন। জেন–জি ফ্যাশনিস্তাদের পছন্দের শীর্ষে ছিল বান্দরবানের বিডসের গহনা। অনেকেই গলায় পরে ঘুরেছেন পুরো মেলাজুড়ে। ৩০ জানুয়ারি শুরু হওয়া পাঁচ দিনের এই উৎসব শেষ হয় ৩ ফেব্রুয়ারি।
কলি