
নানা বৈচিত্র্য নিয়ে আসা বসন্ত ঋতুকে বরণ করে নেওয়ার ব্যাপারে বাঙালিদের জুড়ি নেই। উৎসব উপলক্ষে ঘরটাকে সুন্দর করে সাজিয়ে তুলতে পারলে নিজেরও ভালো লাগবে। তা ছাড়া প্রতি উৎসবে ঘর সাজানো যেন বাঙালির এক ধরনের ঐতিহ্যে। বসন্তের আগমনের সঙ্গে পরিবেশের তাপমাত্রায়ও পরিবর্তন আসে। এই সময়ে ঘরকে রঙিন রঙে সাজাতে পারেন।
ফুল ও ফুলদানি
বসন্ত মানেই রংবেরঙের ফুল দিয়ে ঘর সাজানো। কাঁচা ফুলের সুন্দর ঘ্রাণ, রং মনকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। এই সময়ে লিভিং রুম বা ড্রইং রুমে সতেজ ফুল দিয়ে সাজাতে পারেন। বাসন্তী ফুলের সৌন্দর্য-সৌরভে ঘর ভরিয়ে দিতে কিন্তু ছোট একটি ফুলদানিই যথেষ্ট। কারুকার্যপূর্ণ ও রুচিসম্মত ফুলদানি ব্যবহার করতে পারেন। এটির একটি আলাদা সৌন্দর্য আছে। কাচের বা সিরামিকের ফুলদানিতে চম্পা, চামেলি, রজনিগন্ধ্যা ছাড়াও বিভিন্ন রঙের গোলাপ ফুল দিয়ে রাখতে পারেন। বারান্দায় টবে ছোট ছোট ফুলের গাছ রাখলে দেখতে বেশ সুন্দর লাগবে। শুধু ঘর নয়, সিঁড়ির ধাপে ধাপে মাটির ফুলদানিতে গাছ বা পাতাবাহার রাখতে পারেন। এমন ফুলদানিতে ফুল রাখতে পারেন বাড়ির বারান্দায়ও। প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম, যে ফুলই ব্যবহার করুন না কেন, ফুলদানিটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন। প্রাকৃতিক ফুলের ক্ষেত্রে প্রতিদিন পানি পরিবর্তন করতে হবে। কৃত্রিম ফুল মাসে একবার ডিটারজেন্ট পাউডার দিয়ে পরিষ্কার করুন। ঘরের পরিবেশের সঙ্গে মানানসই বাহারি নকশার ফুলদানি পছন্দ করুন। এজন্য সাদা বা ক্রিম রঙের দেয়াল বেশি মানানসই হয়। এ ধরনের দেয়ালে ফুলের রং বেশি ফুটে উঠবে।
পর্দার ব্যবহার
ঘরের সৌন্দর্য দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয় ঘরের পর্দা। এই দিনে অতিথিদের আনাগোনা থাকে তাই ঘরে ও জানালায় নতুন পর্দা লাগিয়ে সুন্দরভাবে সাজিয়ে তুলতে পারেন। বসন্তের জন্য উজ্জ্বল এবং গাঢ় রং ব্যবহার করতে পারেন। এক রঙের পর্দা না লাগিয়ে ঘরের রঙের সঙ্গে মিল রেখে পর্দা লাগাতে পারেন। পর্দার ডিজাইন ফুলের হলে ভালো হয়। আবহাওয়ার উপযোগী জানালায় হলুদ, আকাশি, নীল রংকে প্রাধান্য দিয়ে হালকা কাপড়ের পর্দা ব্যবহার করতে পারেন। হলুদ পর্দায় সূর্যের আলোকরশ্মি পড়ে পুরো ঘর আলোকিত হয়ে উঠবে।
ঘরের রং
বসন্তে ঘর হয়ে উঠবে রঙিন। অন্দরমহল রঙ করার প্রয়োজন হলে বসন্তের প্রাকৃতিক রঙগুলো ব্যবহার করতে পারেন। এ ছাড়া বারান্দা বা বাড়ির বাইরে উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার মন্দ হবে না। দরজা-জানালায় উজ্জ্বল রঙ করেও ঘরে নিয়ে আসতে পারেন বসন্তের ছাপ।
দেশীয় উপাদান
বসার ঘরে দেশি আসবাবের সঙ্গে ঘরের রাখতে পারেন বেত অথবা বাঁশের ল্যাম্পশেড। বারান্দায় রাখতে পারেন বেতের আরামদায়ক চেয়ার। দেয়ালে টাঙাতে পারেন মাথাল, বিভিন্ন ওয়ালম্যাট, কাগজের তৈরি ফুল ইত্যাদি। ঘরে দেশীয় আমেজ ফুটিয়ে তুলতে খাবারের টেবিলে রাখা যেতে পারে মাটির তৈরি থালা, বাটি, গ্লাস এবং মগ। এ ছাড়া ঘরের মেঝেকে আকর্ষণীয় করতে মাদুর, শীতলপাটি কিংবা শতরঞ্জি ব্যবহার করতে পারেন। এসব সামগ্রীতে বাসন্তী রং থাকলে ভালো হয়।
দেয়াল ও কর্নার
বর্তমান সময় বাসা বাড়িগুলো একটু ছোট ধাঁচের হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে খুব বেশি আসবাব রাখা সব সময় সম্ভব হয় না। তবে চাইলেই ঘরের দেয়াল বা ঘরের কর্নারগুলোর দিকে একটু বিশেষ নজর দেওয়া যায়। ঘরের দেয়ালগুলো যদি অন্যরকমভাবে সাজানো যায় এবং যা দেখতে আকর্ষণীয় লাগবে। দেয়ালে রঙিন নকশা জাতীয় ফ্রেম বোহো আর্ট, রিকশা আর্ট, ম্যান্ডেলা আর্ট ও নানা আলোকচিত্র ফ্রেমবন্দি করে সেগুলো দেয়ালে লাগানো যায়। ঘরের একটি কর্নারে ওয়াটারফল রাখা যেতে পারে কিংবা নানা রঙের মোড়া এবং তার ওপরে কিছু গল্পের বই, লণ্ঠন ও মোমবাতি এসব দিয়ে ঘরের কর্নারগুলো সাজানো যেতে পারে।
বালিশ ও বিছানা
শোবার ঘরের বালিশ ও বিছানার চাদরের ক্ষেত্রে উজ্জ্বল রং পছন্দে রাখতে পারেন। বিছানাকে নকশিকাঁথা দিয়েও সাজাতে পারেন। সুন্দর কারুকার্য খচিত বিছানার চাদর ও ব্লক নকশার কুশন পুরোপুরি গ্রামবাংলার ছোঁয়া এনে দেবে। ঘরে বসন্তের ছোঁয়া আরও বৃদ্ধি করার জন্য সোফা ও কুশনে পরিবর্তন করলে ভালো দেখাবে। এ ছাড়া হলুদ রঙের কুশন ঘরের সৌন্দর্যে বসন্তের আবেশ এনে দেবে।
কলি