
ঈদের সময় অনেকেই ঘরের সাজে পরিবর্তন আনেন। অল্প খরচে টুকটাক কিছু জিনিস যোগ-বিয়োগ করেই ঘরে আনা যায় নতুনত্ব। মনের হাওয়া বদল নির্ভর করে ঘরবাড়ির সৌন্দর্যের ওপর। কাজেই ঈদের পবিত্র দিনটিতে বাড়ি সুন্দর থাকুক, সেই সঙ্গে মনও থাকুক ভালো।
ঘর পরিষ্কার
ঈদ উপলক্ষে গৃহসজ্জার শুরুটা হতে পারে ঘরের পরিচ্ছন্নতা দিয়ে। আসবাবের ধুলোবালি পরিষ্কারের জন্য ব্যবহার করতে পারেন ফার্নিচার ক্লিনার। সুপারশপে এখন লিকুইড ফার্নিচার ক্লিনার পাওয়া যায়। আর আসবাব বেশি পুরোনো হলে ঈদ উপলক্ষে আরেকবার পলিশ করে নিতে পারেন। ঘরের ইনডোর প্ল্যান্টসগুলো দু-চার দিন আগেই ধুয়ে বা মুছে পরিষ্কার করে নিন। বেসিনে সাবানের পরিবর্তে লিকুইড হ্যান্ডওয়াশ ব্যবহার করুন। অবশ্যই একটি পরিষ্কার তোয়ালে রাখতে ভুলবেন না।
ঘরে সুগন্ধি ব্যবহার করুন
বাড়িতে আনন্দদায়ক পরিবেশ আনতে সুগন্ধ দিয়ে ভরে ফেলুন। গোলাপ, জুঁই বা চন্দনের মতো সুগন্ধি বেছে নিন। পরিবেশের কথা মাথায় রেখে সুগন্ধি মোমবাতি ব্যবহার না করে ব্যবহার করতে পারেন আর্টিফিশিয়াল ক্যান্ডেল। সুগন্ধযুক্ত ক্যান্ডেল ব্যবহারে ঘরজুড়ে সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়বে।
ড্রয়িং রুম
ঈদের দিনে অতিথিরা অন্য ঘরের তুলনায় বসার ঘরেই বেশি সময় থাকেন। তাই অন্দরসজ্জায় বসার ঘরকেই বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। ঈদের দিন ড্রয়িং রুমের টেবিলে একটি বড় ক্রিস্টালের পাত্রে পানি রেখে তাজা ফুলের পাপড়ি ছড়িয়ে দিন। এর সঙ্গে ফ্লোটিং ক্যান্ডেল রাখতে পারেন। বসার ঘর উজ্জ্বল ও হালকা রঙের মিশেলে সাজাতে পারেন। রুমে চমক আনতে বদলে নিন আপনার সোফার কুশন কভারগুলো। সোফার গদির রং হালকা হলে কুশন কভারের রং গাঢ় নিতে পারেন।
সিকুইনের কুশনের ব্যবহার করতে পারেন। চাঁদ, তারা বা মিনারের ডিজাইন করা কুশন কভার পাওয়া যায়। বাড়ির সব রুমের সব পর্দা একই রকম না করে কয়েকটি প্যাস্টেল শেড মিলিয়ে সাজাতে পারেন। এতে নরম ও কোমল ভাব আসবে। এ ছাড়া রুমে নতুন রূপ দিতে ডেকোরেটিভ লাইট ঝুলিয়ে দিতে পারেন। কর্নারে শেলফে বা শো কেসে নতুন শোপিস যোগ করুন।
বড় অ্যাকুরিয়াম যদি দেখাশোনা করতে ঝামেলা হয়, তাহলে ছোট গ্লাসের জারে দু-একটি মাছ রাখতে পারেন। কিংবা সুন্দর কোনো জারে একটু পানি দিয়ে ভাসিয়ে রাখতে পারেন কৃত্রিম পদ্মফুল। কয়েকটি গাছ এনে রাখতে পারেন রুমে। বাথরুমের সামনে রাখা পাপোশ পরিবর্তন করতে পারেন।
শোবারঘর
বেডরুম সাজাতে আসবাবপত্র একটু এদিক-ওদিক সরিয়ে নতুনভাবে সাজিয়ে নিতে পারেন। বিছানার চাদর, পর্দা, কুশন কভার ইত্যাদি পরিবর্তন করে নিলে আপনার শোবার ঘরটি হয়ে উঠবে বেশ আকর্ষণীয়। বিছানার পাশের সাইড টেবিলে কিছু তাজা ফুল রেখে দিলে সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়বে ঘরজুড়ে। ঘরে ঢুকলে সবার প্রথমেই যে জিনিসটা চোখে পড়ে তা হলো বিছানার চাদর। তাই বিছানার চাদরটি যদি হয় আপনার ঘর, ঘরের আসবাব, বিছানা সবকিছুর সঙ্গে মানানসই এবং রুচিসম্মত তাহলে দেখবেন ঘরে ঢুকলেই সুন্দর এক অনুভূতি হবে।
বিছানায় হালকা ও চোখের আরাম দেবে, এমন রঙের চাদর ভালো লাগবে। আবার গাঢ় রং ব্যবহারে আসে উৎসবের ভাব। শোবার ঘরের বিছানার চাদরগুলোয় সুতি কাপড়ের প্রাধান্য দিন, এতে নতুনত্বের পাশাপাশি স্বস্তি ও আরাম পাবেন। ঈদের আগেই আপনার বেড রুমের জন্য বিছানার চাদরের সঙ্গে মিলিয়ে পর্দা কিনে ফেলতে পারেন। অথবা এক রুমের পর্দা আরেক রুমে দিয়েও পুরো বাসার চেহারায় নতুনত্ব আনা যায়।
দেয়াল
ঘরের দেয়ালে রং বদলে ফেলতে পারেন। এজন্য হালকা রংকে প্রাধান্য দিন। আপনার ঘরের রং যদি সাদা হয়, তাহলে তো খুবই ভালো। তা ছাড়া ঈদের সাজে ঘরের দেয়ালেও আনতে পারেন ভিন্নতা। ওয়ালপেপার দিয়ে মুড়ে দিতে পারেন আপনার পুরোনো দেয়াল। তবে পুরো ঘর ওয়াল পেপার দিয়ে ঢেকে দেওয়াটা ভালো দেখাবে না। ঈদের আগে বসার ঘর, সামনের রুমের দেয়াল টেক্সচার কিংবা এম্বোস জাতীয় ওয়ালপেপার দিয়ে মুড়ে দিতে পারেন। দেয়ালে টাঙান প্রাকৃতিক কোনো ছবি, পছন্দসই ওয়ালমেট, কারুকাজ করা কোনো নকশিকাঁথা অথবা এরকম কোনো ভাস্কর্য।
এ ছাড়া ঘরকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য ঘরের দেয়ালের এক কোণায় নিজেদের ফ্যামিলি ছবির ফ্রেম দিয়ে ছবির গ্যালারি তৈরি করে নিতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন যা-ই করেন না কেন সেটা যেন আপনার রুচি আর ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মানানসই হয়।
ডাইনিং রুম
ঈদের দিন শুধু খাবার পরিবেশনই নয়, আশপাশের আয়োজনও করতে হয় আকর্ষণীয়। খাবার ঘরের পর্দা হালকা সবুজ রং খুব ভালো মানায়। খাবার টেবিলে বিছিয়ে দিন টেবিল রানার, টেবিল ম্যাট এবং ম্যাচিং ন্যাপকিন। আর টেবিলের মাঝখানে রেখে দিতে পারেন আকর্ষণীয় ফলের ঝুড়িতে কিছু তাজা কিছু ফল। প্লেট, গ্লাসসহ যাবতীয় তৈজসপত্রে রাখুন নান্দনিকতার ছোঁয়া। ঈদের আমেজ ধরে রাখতে বেছে নিতে পারেন মোগল ও পারস্যের নকশা করা তৈজসপত্র। বিভিন্ন জ্যামিতিক প্যাটার্নের তৈজসপত্রও ইদানীং বেশ চলছে।
আর আপনি যদি হন দেশীয় পণ্য প্রিয় বাঙালি, তবে প্রাচীন ঐতিহ্য টেরাকোটার তৈজসপত্রে ভিন্ন আঙ্গিকে অতিথিদের খাবার পরিবেশন করুন। টেরাকোটার তৈজসপত্র বেশ পরিবেশবান্ধব।
নানা ঢংয়ের আলো
ডাইনিং টেবিলের ওপরে পেন্ড্যান্ট কিংবা শ্যান্ডেলেয়ার ধরনের লাইট ব্যবহার করতে পারেন। সবচেয়ে ট্রেন্ডি ডেকোর হচ্ছে ফেইরি লাইট। মাল্টি কালার লাইটের সঙ্গে সাদা এবং হলুদ ওয়ার্ম লাইট ব্যবহার করতে পারেন। রুমকে ঈদে স্পেশাল লুক দিতে একটি বোতলে কর্ক ফেইরি লাইট দিয়ে রেখে দিতে পারেন একটা সাইড টেবিলে, কিংবা সেন্টার টেবিলে অথবা ডাইনিং টেবিলে।
এ ছাড়া চাঁদ ও তারা আকারের ফেইরি লাইট জানালার সঙ্গে টাঙিয়ে দিতে পারেন। ছোট ইরানি ঝাড়বাতি বা টার্কিশ লাইট দিয়ে বসার ঘর বা খাবার ঘর সাজাতে পারেন। বাজেট কম হলে হ্যান্ডপেইন্ট করা লাইট ও বাঁশ দিয়ে তৈরি টেবিল ল্যাম্পে ঘরের আবহ পরিবর্তন করতে পারেন।
কলি