হিমোগ্লোবিন মূলত আমাদের রক্তের ভেতরে থাকা লৌহসমৃদ্ধ প্রোটিন। এটি রক্তের মাধ্যমে সারা শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করতে সাহায্য করে। একজন পুরুষের রক্তে ন্যূনতম ১৩ গ্রাম ও নারীদের শরীরে ১২ গ্রাম হিমোগ্লোবিন থাকা প্রয়োজন। এর ঘাটতি হলে দুর্বলতা, মাথা ঘোরানো, বমি ভাব, অ্যানিমিয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। আয়রন, ভিটামিন বি১২, ফলিক অ্যাসিড এবং ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ে।
মাংস
লাল মাংস আয়রনের অন্যতম উৎস। তাই রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে খাবার তালিকায় নির্দিষ্ট পরিমাণে গরু কিংবা খাসির মাংস রাখুন। পাশাপাশি গরুর কলিজা রক্তে আয়রন-এর পরিমাণ বাড়াতে বিশেষভাবে কার্যকরী। নারীদের প্রতি মাসে নির্দিষ্ট সময়ে অনেক রক্ত বেরিয়ে যায়। তাই বিশেষজ্ঞরা নারীদের খাবারে কলিজা রাখতে বলেন। এ ছাড়া হাঁস, টার্কি ও মুরগির মাংসও আয়রনের উৎস।
দুধ
দুধ শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও প্রোটিন যোগাতে সাহায্য করে। দুধে খুব বেশি পরিমাণে আয়রন না থাকলেও এতে প্রায় সব রকমের ভিটামিন আছে। এ ছাড়াও দুধে আছে পটাশিয়াম ও ক্যালসিয়াম। এই খাদ্য উপাদানগুলো রক্তের হিমোগ্লোবিন বাড়িয়ে রক্তশূন্যতা দূর করতে সহায়তা করে।
সামুদ্রিক মাছ
সামুদ্রিক মাছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও খনিজ পদার্থ রয়েছে। আমাদের বাজারে সার্ডিন, স্যামন, টুনা ইত্যাদি সামুদ্রিক মাছ সহজলভ্য। রক্তে আয়রনের পরিমাণ বাড়াতে এ জাতীয় মাছ খেতে পারেন।
শস্যদানা
রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে নিয়মিত মুগ কিংবা মসুর ডাল খেতে পারেন। ডালে পর্যাপ্ত প্রোটিন, আয়রন ও ফলিক অ্যাসিড রয়েছে। এ ছাড়া সয়াবিনও প্রোটিনের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। প্রোটিন রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে। ওটস, গম এর তৈরি খাবার খেলেও হিমোগ্লোবিন বাড়ে।
ডার্ক চকোলেট
হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি কমাতে পারে ডার্ক চকোলেট। মিল্ক চকোলেটে শর্করার পরিমাণ বেশি থাকে। এমন চকোলেট বেশি খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। ডার্ক চকোলেটে সেই ঝুঁকি নেই। বরং এটা খেলে শরীরে আয়রনের ঘাটতি কমবে। হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করতে আয়রনসমৃদ্ধ ডার্ক চকোলেট বেশি করে খেতে পারেন।
ফলমূল
সাইট্রাস বা ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার রক্তে আয়রন শোষণ করে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে। ডালিম, কমলা, লেবু, আমলকি, স্ট্রবেরি, কিউই এগুলো ভিটামিন সিসমৃদ্ধ ফল। হিমোগ্লোবিন বাড়াতে এই জাতীয় ফল খেতে পারেন।
বিট
হিমোগ্লোবিন বাড়াতে বিটের রস খেতে পারেন। এতে রয়েছে প্রচুর আয়রন, ফলিক অ্যাসিড, ফাইবার ও পটাশিয়াম। এর পুষ্টিমান শরীরের লাল রক্তকণিকা বাড়ায়।
সবুজ শাকসবজি
পালং, মেথি ও কচুশাক আয়রন ও ফলিক অ্যাসিডের অন্যতম উৎস। এগুলো মাছ, মাংসের তুলনায় যোগান ও দামেও সহজলভ্য। হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখতে প্রতিদিন খাবারে আয়রনযুক্ত সবুজ শাকসবজি রাখুন।
ডিম
শরীরে সুস্থ রাখতে নিয়মিত ডিম খেতে পারেন। এতে থাকা আয়রন ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান শরীরের জন্য নানাভাবে উপকার করে। ডিমের কুসুমে থাকে প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ। শরীরের দুর্বলতা কাটাতে সেদ্ধ ডিম বেশ উপকারী।
ফলিক অ্যাসিডসমৃদ্ধ খাবার
হিমোগ্লোবিন বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ফলিক অ্যাসিডের অন্যতম উৎস বিভিন্ন নিরামিষ খাবার। এর মধ্যে মাশরুম, বাদাম ও আখরোট উল্লেখযোগ্য।
মধু
মধু আয়রনের একটি ভালো উৎস। আয়রন ছাড়াও মধুতে কপার ও ম্যাঙ্গানিজ আছে। এই উপাদানগুলো শরীরে হিমোগ্লোবিন প্রস্তুত করতে সহায়তা করে। রক্তশূন্যতা দূর করতে প্রতিদিন ১ চামচ মধুর সঙ্গে পরিমাণমতো লেবুর রস মিশিয়ে পান করতে পারেন।
এ ছাড়া হিমোগ্লোবিন বাড়াতে আয়রন শোষণ বাড়ানোর জন্য শরীরে যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান করা, নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ এবং পর্যাপ্ত ঘুমানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।