
ঈদের আনন্দ উদযাপন হয় নানা কায়দায়। তবে আনন্দ প্রকাশে সবচেয়ে পরিচিত পদ্ধতি হলো ভালো খাদ্য প্রস্তুত করা। পরিবারের অন্য সদস্যদের দাওয়াত করে নানা রসনার রান্না করে খাইয়ে তবে বাঙালির তৃপ্তি। খাদ্য গ্রহণ করে ওজন বৃদ্ধির ভয় থাকলেও সবার সঙ্গে একত্রিত হওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করতে ইচ্ছা হয় না। তাই পারিবারিক উৎসবগুলোতেও অংশগ্রহণ করা হয়ে যায়। কিন্তু সুস্বাস্থ্যের জন্য ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আড্ডার ছলে বেশি খাওয়া হলে দেহের উচ্চতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ঠিক রাখা সম্ভব নয়।
গরম পানিতে লেবু ও মধু দিয়ে পান করুন
প্রতিদিন সকালে গরম পানিতে লেবুর রস ও মধু দিয়ে পান করুন। এতে শরীরের অতিরিক্ত ক্যালরি ক্ষয় হবে এ ছাড়া লেবু হজমের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ফলে কিছু বেশি খাওয়া হলেও তা হজম হয়ে যাবে।
প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটুন
রোজায় অনেকের ব্যায়ামের রুটিন পরিবর্তন হয়ে গেছে। হয়তো সকালের হাঁটা ছেড়ে দিতে হয়েছে। ঈদের দিন থেকে সকালে ৩০ মিনিট হাঁটার রুটিন তৈরি করুন এতে শরীরের মেটাবলিজম বাড়বে এবং অতিরিক্ত যেসব খাবার আমাদের দেহে যাচ্ছে তা ক্ষয় হবে। এতে শরীরের ওজন বৃদ্ধি পাবে না।
চিনি কম খান ও লো ফ্যাট ফুড সিলেক্ট করুন
ওজন কমাতে চাইলে আপনার রেগুলার সুগার ইনটেক কমানো ছাড়া উপায় নেই। আপাতত কোল্ড ড্রিংকস, বাইরের ফ্রুট জুস- সব বাদ দিন। চায়ে বা কফিতে চিনি একদম নগণ্য পরিমাণ (চিনি না দিলে তো ভালোই) ব্যবহার করুন। অনেকে জিরো ক্যালরি সুগার ব্যবহার করেন। এটা পরিহার করুন। এই আর্টিফিশিয়াল সুগার ওয়েট গেইন, মেটাবলিক সিনড্রোম, টাইপ-২ ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ ইত্যাদির ঝুঁকি বাড়াতে ভূমিকা রাখে। আর হ্যাঁ, কেক-পেস্ট্রি থেকে আপাতত ক’দিনের ছুটি নিন! জানি, ঈদের সময় মন একটু চায় যে কোল্ড ড্রিংকস খেতে, কিন্তু বেশি পরিমাণে খেলে আপনি নিজের অজান্তেই অনেক বড় ভুল করে ফেলবেন। এর বদলে লো ফ্যাট দই, শসার সালাদ, মধু দিয়ে লেবু পানি এগুলো খেতে পারেন।
শর্করা কম খান
যেহেতু একটুখানি ওজন বেড়ে যেতে পারে ঈদের পর, তাই প্রতিদিনের খাবার মেন্যু থেকে শর্করার পরিমাণটা একটু কমিয়ে দিন। তবে ভুলেও প্রোটিন বা ভিটামিনসমৃদ্ধ খাবার বাদ দেবেন না। আপনি হয়তো দুটো রুটি খান, তার জায়গায় দেড়টা রুটি খান। মাছ-মাংস ভুনা, তেলতেলে খাবার তো ঈদের সময় খাবেন, পরবর্তী কয়েকদিন একটু বুঝে খাবেন। যাতে ওজন হুরহুর করে না বেড়ে যায়।
প্রচুর পানি খান
ঈদের সময় প্রচুর পানি পান করুন। বিশেষ করা খাওয়ার আগে কমপক্ষে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিন। এতে আপনার হজমে গণ্ডগোল হবে না। সেই সঙ্গে আপনি অতিরিক্ত খেয়ে ফেলার প্রবণতা থেকেই মুক্তি পাবেন।
চর্বি পরিহার করা
ঈদে রান্নার প্রথম উপকরণ থাকে বিভিন্ন ধরনের রেড মিট। আর রেড মিটে চর্বি তো থাকবেই। আবার মেহমানদের সামনে সামাজিকতা রক্ষা করতে রেডমিট আয়োজন ও করতে হবে নিজেও একটু খেতে হবে। কিন্তু মাংসের চর্বিটা ফেলে খাওয়াই ভালো। কারণ মাংসের চর্বি বেশি খেলে খুব দ্রুত মুটিয়ে যাবেন আপনি। তাই রান্না করার সময়ে চর্বি ফেলে রান্না করাই ভালো।
প্রতিদিন হজম সহায়ক কিছু খান
ইসবগুলের ভুসি, তোপনার দানা এবং সোনাপাতা জাতীয় হজম সহায়ক ঔষধি রয়েছে যাতে আছে প্রচুর ফাইবার, যা মেদ ঝরাতে সহায়তা করে। তাই এই সময়ে প্রতিদিন দুই বেলা করে ইসবগুলের ভুসি বা এ জাতীয় খাওয়ার অভ্যাস করে ফেলুন। এতে আপনার মেদ কমবে। সেই সঙ্গে হজম ক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে।
সালাদ/টকদই/লেবু
ঈদের সময়ে প্রতিবেলা খাবারের সঙ্গেই টক দই, লেবু, সালাদ ইত্যাদি খাবার রাখুন। এই খাবারগুলো অতিরিক্ত মেদ ঝরিয়ে দিতে সহায়তা করে। সেই সঙ্গে এই খাবারগুলো আপনাকে রাখবে তরতাজা।
৮টার মধ্যে রাতের খাবার সেরে ফেলুন
ঈদের দাওয়াত থাকলেও চেষ্টা করুন আপনার রাতের খাবারটা ৮টার মধ্যেই সেরে ফেলার। খুব বেশি দেরি হলেও ৯টার পরে আর রাতের খাবার খাওয়া উচিত নয়। ঘুমানোর কমপক্ষে ২-৩ ঘণ্টা আগেই রাতের খাবার খাওয়ার কাজ সেরে ফেলা উচিত।
পরিমাণ মতো খাবার খান
দীর্ঘদিন সিয়াম সাধনার কারণে শরীরে খাদ্য ঘাটতি আছে আবার আড্ডায় বসে খাবার খেলে কথাচ্ছলে একটু বেশি খাওয়া হয়ে যায়। অতিরিক্ত যাতে না খাওয়া হয়ে যায় তাই একবারে একটু একটু করে সব খাবার প্লেটে নিয়ে নিতে হবে এবং সেটা ছোট ছোট বাইটে সব সময় ধরে খেতে হবে। এতে পরিমাণের বেশি খাওয়া এড়ানো সম্ভব।
তুলসী বা জিরা পানি খাওয়া
তুলসীপাতার পানি ও জিরার পানি শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সহযোগিতা করে। তাই এ সময় তুলসীপাতার পানি অথবা জিরার পানি খেতে পারেন।
নিজেকে ব্যস্ত রাখুন
নিজেকে কোনো কাজে ব্যস্ত রাখুন। কাপড়ের আলমারিটা গুছিয়ে ফেলুন, ঘর গোছান, পরিবারের সঙ্গে ভালো সময় কাটান। নিজের কাজগুলো নিজের হাতে করে ফেললে ক্যালরি তো পুড়বেই, সেই সঙ্গে আপনিও ফিট থাকবেন! আর অ্যাক্টিভ থাকলে কিন্তু মনটাও ভালো থাকে!
কলি