
কোরবানির ঈদ মানেই খাওয়া-দাওয়ার বিশাল সমারোহ। এক বা দুদিন নয় বরং এই ঈদে ৮ থেকে ১০ দিন ধরে চলে মাংস, মিষ্টান্নের হরেক পদের রান্না। যারা খেতে ভালোবাসেন তাদের জন্য এই ঈদ একই সঙ্গে আনন্দ ও দুশ্চিন্তার কারণ। একদিকে খানাপিনার উৎসব। অন্যদিকে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ, ছুটি কাটিয়ে ওজন বাড়ার ভয়। তাই ঈদে ওজন নিয়ন্ত্রণে মানতে হবে কিছু বিশেষ নিয়ম।
ঈদের দিনই হোক ‘ট্রিট মিল’
বলাবাহুল্য, ঈদের দিন কিছুটা বেহিসেবি খাওয়া-দাওয়াই হবে। অনেকে এক সপ্তাহ পর্যন্ত ঈদের ভূরিভোজ করেন। আর তাতেই বাধে বিপত্তি। বরং যারা ডায়েটে আছেন তারাও নিজের পেট ও মনকে পুরোপুরি গুরুত্ব দিয়েই ঈদ উদযাপন করুন। তবে ঈদের এই খানাপিনাকে ‘ট্রিট মিল’ হিসেবে গণনা করুন। অর্থাৎ শুধু ঈদের দিন উপলক্ষেই আহারে এই বিশেষ ছাড়। ঈদ-পরবর্তী দিন থেকেই ফিরে যেতে হবে সাধারণ খাবার রুটিনে।
প্রতিবেলায় মাংস নয়
ঈদের পর বেশ কিছুদিন বাড়িতে মাংসের কোনো না কোনো পদ রান্না করাই থাকে। অনেকের বাড়িতে টানা সাত থেকে আট দিন পর্যন্ত চলে মাংস খাওয়া। এর পরিবর্তে এক দুই দিন পরপর মাংস খান। প্রতিদিন খেলেও শুধু একবেলাই পাতে মাংস রাখুন। অন্যান্য বেলায় কম ক্যালরিযুক্ত হালকা খাবার খান।
তেল, চর্বি ও মসলা বাদ
আমাদের ঐতিহ্যবাহী গরু, খাসির মাংসের প্রায় সব পদেই সাধারণত প্রচুর তেল-মসলা ব্যবহার করা হয়। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে বাদ দিতে হবে অতিরিক্ত তেল, মসলাযুক্ত খাবার। এজন্য করতে পারেন মাংসের নানা পদের এক্সপেরিমেন্ট। প্রতিবার মসলাযুক্ত মাংসের তরকারি রান্না না করে তৈরি করতে পারেন কমমসলা যুক্ত বিভিন্ন বিদেশি রেসিপি। তা ছাড়া মাংসের গায়ে লেগে থাকা চর্বিই শরীরে বেশি ফ্যাট তৈরি করে। রান্নার আগেই মাংস থেকে চর্বির অংশ কেটে ফেলে দিন। কিংবা রান্নার পর তেলের ওপর ভেসে থাকা চর্বি চামচ দিয়ে সরিয়ে ফেলুন।
মিষ্টান্ন, কোমল পানীয় এড়িয়ে চলুন
ঈদ মানেই মুখমিষ্টির আয়োজন। তবে খেয়াল রাখবেন এই ঈদে এমনিতেই মাংস তুলনামূলক বেশি খাওয়া হয়। এর সঙ্গে চিনিযুক্ত খাবার যোগ হলে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। স্থূলতা এড়াতে ঈদের খাবার তালিকা থেকে ডিজার্ট আইটেম একেবারেই বাদ রাখুন। আবার পোলাও, মাংস খাবার খাওয়ার পর কমবেশি সবাই কোমল পানীয় পান করতে পছন্দ করেন। খাবার হজম করে এতে সাময়িক স্বস্তি মিললেও এগুলো স্বাস্থ্য ও ডায়েটের জন্য বেশ ক্ষতিকর। পরিবর্তে খাবার হজম করতে টক দই, ঘরে তৈরি সোডা ইত্যাদি পান করুন।
বেশি পানি পান করুন
ঈদে ভারী খাবার খাওয়ার আগে প্রতিবার এক থেকে দুই গ্লাস পানি পান করুন। তাহলে ক্ষুধাভাব অনেকটাই কমে যাবে। ফলে বেশি খাবার খেয়ে ফেলার সুযোগ থাকবে না। আবার মাংস জাতীয় খাবার হজম করতেও পাকস্থলীর বেশি সময় লাগে। পানি খাবার হজমে সহায়তা করে ও পাকস্থলী পরিষ্কার রাখে।
সালাদ, ফলমূল হোক সঙ্গী
খাবার প্লেটে মাংসের পাশাপাশি নিয়মিত সালাদ ও ফলমূল রাখুন। প্লেটের অন্তত অর্ধেক সবজি, সালাদ, ফলমূল দিয়ে পূর্ণ করার চেষ্টা করুন। তাহলে খুব বেশি পরিমাণে মাংস খাওয়ার সুযোগ পাবেন না। বাড়িতে তৈরি শসা, লেবু, পেঁয়াজ দিয়ে মাখানো নিতান্তই সাধারণ সালাদও ওজন কমাতে ভূমিকা রাখে। টক দই ড্রেসিং করে তৈরি করতে পারেন বাহারি বিদেশি সালাদ। এ ছাড়া লেবু, কমলা, আঙুরজাতীয় সাইট্রাস ফল শরীরে মেদ কমাতে সাহায্য করে।
হাঁটার অভ্যাস করুন
ঈদের ছুটি সাধারণত শুয়ে-বসে আত্মীয়দের বাসায় বেড়িয়ে কাটানো হয়। অন্য সময়ের চেয়ে বেশি খাওয়া-দাওয়া উপরন্তু কাজ কম করার ফলে সহজেই ওজন বেড়ে যায়। এ সময় শরীরচর্চা বা বাইরে কাজকর্ম না করা হলেও নিয়মিত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন।
কলি