আমাদের দেশে বর্ষায় ভ্যাপসা গরম থাকে। এই সময়ের স্যাঁতসেঁতে পরিবেশের কারণে শিশুরা অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। শিশুর পরিচ্ছন্নতা, পোশাকের ধরন, খাদ্যাভ্যাস- সব কিছুর যত্নের পাশাপাশি তার ব্যবহৃত কাপড়গুলোর দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। এই মৌসুমে শিশুদের সুস্থতার দায়িত্ব বড়দের।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
বর্ষায় শিশুর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। হঠাৎ পরিবেশ অনেক গরম হলে দীর্ঘসময় ধরে ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করানো বা বৃষ্টি হচ্ছে পরিবেশ ঠাণ্ডা বলে একদমই গোসল করানো হলো না এটা ঠিক নয়। শিশুকে মোটামুটি ২৫ ডিগ্রি তাপমাত্রার পানি দিয়ে ১০-১৫ মিনিট শরীর, মাথা, হাত-পা, চোখ ভালো করে ধোয়াতে হবে। শরীর ও মাথা ধোয়ানোর সময় সাবান বা স্যাভলন-জাতীয় অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান ব্যবহার করা আবশ্যক। বর্ষায় রোগজীবাণু বংশবিস্তার করে। আর বংশবিস্তারের স্থান হলো পানি। তাই স্বচ্ছ দেখা গেলেও পানিতে জীবাণু থাকতে পারে। এ ছাড়া ফুটন্ত পানি ঠাণ্ডা করে চোখ ও মুখমণ্ডল পরিষ্কার করা উত্তম। এতে চোখের কনজাংকটিভা জাতীয় রোগ থেকে শিশু সুরক্ষিত থাকবে।
উপযুক্ত পোশাক
শিশুকে পাতলা সুতির কাপড় পরাতে হবে। বৃষ্টিতে পরিবেশ ঠাণ্ডা থাকলেও শিশুর দেহের একটা তাপমাত্রা আছে। ফেনিল বা উলের কাপড় পরিয়ে বর্ষার শীত থেকে শিশুকে রক্ষা করার কিছু নাই। এতে আরও তাদের দেহের তাপমাত্রা আটকে গিয়ে গরমে ঠাণ্ডা বা জ্বর বেঁধে যেতে পারে। প্রয়োজনে সুতি কাপড়ের জামাটা বড় হাতাযুক্ত বা সম্পূর্ণ দেহকে আবৃত করে এমন করে বানাতে হবে।
খাবার ও পানি
শিশুকে নিরাপদ পানীয় জল সরবরাহ করতে হবে এবং যেহেতু বর্ষায় মাছি প্রজনন করে, তারা নানাবিধ রোগ তাদের পাখা ও পায়ের মাধ্যমে খাদ্যে ছড়াতে পারে। তাই সবসময় খাবার ঢেকে রাখতে হবে। আর প্রতিবার খাদ্য পরিবেশন করার আগে ভালোভাবে গরম করে, ঠাণ্ডা করে কুসুম গরম অবস্থায় পরিবেশন করতে হবে। পানীয় জলের ফিল্টার পরিষ্কার রাখতে হবে অথবা পানি ফুটিয়ে জীবাণুমুক্ত করে শিশুকে খেতে দিতে হবে। না হলে ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েডের মতো পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি থেকে যাবে।
.jpg)
শুষ্ক ডায়াপার
শিশু যদি ডায়াপার পরে, তা হলে সতর্ক নজর রাখতে হবে। দীর্ঘসময় ভেজা ডায়াপারে থাকলে সর্দি, জ্বর, ডায়াপার পরা স্থানে র্যাশ হতে পারে। ডায়াপার পরানোর আগে পাউডার দিয়ে ডায়াপার পরাতে হবে। আর প্রতি ছয় ঘণ্টা অন্তর শিশুর ডায়াপার পরিবর্তন করতে হবে। তবে শিশু যদি বেশি বেশি হিসু করে, তা হলে ছয় ঘণ্টা অপেক্ষা করার অবকাশ নেই। যখনই ডায়াপার ভিজে যাবে তখনই পরিবর্তন করে দিতে হবে।
বৃষ্টিতে ভেজা থেকে বাঁচানো
শিশুরা সবসময়ই বৃষ্টি দেখলে আনন্দিত হয়। বৃষ্টিতে ভেজার অনুমতি না পেলেও জানালা গলিয়ে হাত বের করে একটু হাত-মুখ ভেজায়। আবার বৃষ্টি শেষে কোথাও পানি জমে থাকলে তাতে পা ভেজাতে চেষ্টা করে। তাই বাইরে গেলে শিশুকে ছাতার নিচে, সম্ভব হলে কোলে তুলে রাখতে হবে। যাতে বৃষ্টিতে ভিজে না যায়। বর্তমানে বায়ুদূষণের কারণে অ্যাসিড বৃষ্টি হয়, যা শিশুর ত্বকের সমস্যা তৈরি করতে পারে।
মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা
বর্ষা মশার প্রজনন মৌসুম। এ সময় মশার রক্তের প্রয়োজন হয়। শিশুরা যেহেতু প্রতিরোধ করতে পারে না, তাই মশা তাদের আক্রমণ করে বেশি। এ ছাড়াও বর্ষার স্বচ্ছ পানি এডিস মশার আবাসস্থল। ফলে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া রোগেরও আশঙ্কা থাকে। তাই মশার কামড় থেকে শিশুকে রক্ষা করতে মশারি এবং মশা তাড়ানোর স্প্রে ব্যবহার করুন। বাইরে খেলতে গেলে শিশুকে মস্কুইটো রিপেলেন্ট ক্রিম লাগিয়ে দেবেন, যাতে মশা কামড়াতে না পারে।
ঘরের পরিবেশ
বর্ষায় এমনিতেই ঘরের পরিবেশ স্যাঁতসেঁতে হয়ে থাকে। ঘর মুছলে সহজে শুকাতে চায় না। ঘরের যেসব দরজা, জানালা দিয়ে আলো-বাতাস প্রবেশ করে, সেগুলো খুলে রেখে ঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করুন। তবে বৃষ্টির ছাঁট যাতে প্রবেশ না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
শিশুর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ খাবার দিন। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত প্রোটিন, শর্করা ও চর্বিজাতীয় খাবার নিশ্চিত করতে হবে। খাদ্যতালিকায় প্রচুর শাকসবজি এবং অন্তত একটা ফল রাখতে হবে। সব ভিটামিন মিনারেলের ভারসাম্য নিশ্চিত করা যায় এমন সাপ্তাহিক খাদ্যতালিকা তৈরি করতে হবে। বাইরে আর্দ্রতার তারতম্য অনুযায়ী সুস্থ থাকতে পর্যাপ্ত পানি পান নিশ্চিত করতে হবে।
ত্বকের যত্ন
বর্ষায় শিশুর ত্বক ঘামে বেশি, আবার বৃষ্টি হলে শুষ্কও হয়ে যায়। এমতাবস্থায় শিশুর ত্বকে হালকা ময়েশ্চারাইজার ও পাউডার ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে ত্বক আর্দ্রতার কারণে বেশি ঘামবে না। আবার ময়েশ্চারাইজার ত্বককে ভালো রাখবে।
ডাক্তারের পরামর্শ
বর্ষাকালে যেকোনো ধরনের সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
কলি