
মাতৃত্বের অনুভূতি হলো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ অনুভূতি। একজন নারীর জীবনে পূর্ণতা আনে মাতৃত্বের স্বাদ। সন্তান ধারণ থেকে শুরু করে সন্তানের পৃথিবীর আলোর মুখ দেখা পর্যন্ত একজন মাকে বিভিন্ন শারীরিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। অনাগত সন্তানের প্রতি তাদের এতটাই দুর্বলতা থাকে যে, নিজের রূপচর্চা ও স্বাস্থ্য চর্চার কথা ভাবে না। কিন্তু এই সময় হবু মাকে থাকতে হবে সদা প্রফুল্ল। কোথাও যেন যত্নের কোনো অবহেলা না করা হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
আরামদায়ক পোশাক
গর্ভকালে শারীরিক পরিবর্তন আসে বলে দৈনন্দিন জীবনের ছন্দে আসে পরিবর্তন। শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, কুর্তি বা নিজের স্বাচ্ছন্দ্য অনুসারে অন্য যেকোনো পোশাকই পরা যাবে এ সময়। নার্সিং কুর্তি, গাউন, মিডি বা কাফতান নিজের ওয়্যারড্রবে রাখতে পারেন। ফ্রক হতে পারে অন্তঃসত্ত্বাদের জন্য অন্যতম একটি পোশাক। তবে সব পোশাক ঢিলেঢালা ও আরামদায়ক হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অতিরিক্ত টাইট পোশাক পরলে শরীরে স্বাভাবিক রক্ত সঞ্চালন বাধাপ্রাপ্ত হয়। পেশিতেও টান লাগে। অসুস্থ বোধ হয়। এ ছাড়া এই সময় হরমোনের মাত্রায় পরিবর্তন হয়। তাই শরীরে ওজন বাড়ে। টাইট পোশাক পরলে অস্বস্তি বাড়বে। হালকা রঙের সুতি কাপড়ের ও আরামদায়ক পোশাক বেছে নিতে পারেন। নকশার ক্ষেত্রে খুব হালকা নকশার পোশাক পরা উচিত। যেকোনো অবস্থা থেকে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় যেকোনো ব্যাপারে খুব দ্রুত অস্বস্তি অনুভূত হয়। তাই খুব বেশি নকশা আছে এসব পোশাক অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে।
গর্ভাবস্থায় ত্বকে পরিবর্তন
গর্ভাবস্থায় ত্বক আর চুল নিয়েও সমস্যায় পড়তে হয়। এসবই মায়ের সুস্থতার অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই হবু মায়ের ত্বক কিংবা চুলের ব্যাপারেও হতে হবে যত্নশীল। গর্ভের শিশু আকারে বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে পেটের ত্বকে টান পড়তে থাকে। ফলে ত্বকে ফাটা দাগ দেখা দেয়। এই সময়ে হরমোনজনিত কারণে ত্বকের তৈলাক্ততা বেড়ে যায়। মুখের ত্বকের তৈলাক্ততা বাড়ার কারণে ব্রণ দেখা দেয়। মুখে মেছতাসহ গলা, ঘাড় ও ত্বকের বিভিন্ন ভাঁজে গাঢ় দাগ দেখা দিতে পারে।
যেভাবে যত্ন নেবেন
ত্বকে দাগ দূর করতে গর্ভধারণের শুরু থেকেই লিপিড রেপ্লিনিশিং ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন। স্ট্রেচ মার্ক ক্রিমও ব্যবহার করা যায়। এ ছাড়া নারকেল তেল, জলপাই তেল, কোকো বাটার ব্যবহার করতে পারেন। যেটিই বেছে নিন না কেন, তা মালিশ করুন চক্রাকার গতিতে, গোসলের পরে আর রাতে ঘুমানোর আগে পেট, ঊরু ও কোমরে। ত্বকের তৈলাক্ততা দূর করতে নিয়মিত ক্লিনজার বা স্ক্র্যাবার দিয়ে পরিষ্কার রাখতে হবে। ত্বকের মসৃণতা ঠিক রাখতে ইমোলেন্ট বা ময়েশ্চারাইজার ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করতে পারেন। গর্ভাবস্থায় ত্বক সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। ঘরের বাইরে গেলে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। ব্রণ প্রতিরোধে নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার থাকতে হবে।
বাড়িতেই নিজের একটু যত্ন নিলে ত্বক-চুল সুস্থ থাকবে, মনও থাকবে সতেজ। চুলের আগা ফেটে যাওয়া, চুল পড়ার মতো সমস্যা হতে পারে গর্ভাবস্থা থেকে তাই সপ্তাহে অন্তত এক দিন চুলে জলপাই তেল মালিশ করতে পারেন। এরপর ১০ মিনিট উষ্ণ তোয়ালে পেঁচিয়ে রেখে ভালোভাবে শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে, বাতাসে চুল শুকিয়ে নিন।
ঘটা করে রূপচর্চা করার মতো অবস্থা অনেকেরই থাকে না। নিজে ঘরে স্ক্রাব তৈরি করে নিন আর গোসলের সময় প্রতিদিন ব্যবহার করুন। এই স্ক্রাব এক থেকে দেড় মাস পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারবেন। বারবার বানানোর ঝক্কিও সামলাতে হবে না।
আধা কাপ মুলতানি মাটি, আধা কাপ শুকনো কমলা লেবুর খোসার গুঁড়া ১, আধা কাপ চন্দন গুঁড়া একসঙ্গে মিশিয়ে ছোট কাচের জারে রেখে দিন। প্রতিদিন এই স্ক্রাব পানির সঙ্গে পেস্ট করে নিয়ে মুখে, গলায় ও ঘাড়ে মাখবেন ১৫ মিনিট এর জন্য। এরপর গোসল করে ফেলবেন। আলাদা করে আর কোনো প্যাক লাগানোর প্রয়োজন হবে না এতে।
পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম
পর্যাপ্ত ঘুম শারীরিক দুর্বলতা কাটানোসহ মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে শরীরকে কর্মক্ষম করে। দুপুরে খাওয়ার পর অন্তত ৩০ মিনিট ঘুমানো উচিত। ঘুমানোর সময় পা একটু উঁচু রাখতে পায়ের নিচে বালিশ রেখে ঘুমাতে হবে। এতে পায়ে রক্ত সঞ্চালন ভালো হবে। গর্ভাবস্থায় হাঁটাচলা, ব্যায়াম, সাঁতার কাটা ইত্যাদি বিষয়ে চিকিৎসকের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী চলুন।
কলি