কক্সবাজারের প্যাঁচার দ্বীপে অবস্থিত পরিবেশবান্ধব মারমেইড বিচ রিসোর্ট-এ অনুষ্ঠিত এই দুই দিনব্যাপী সম্মেলনে ৬০ এর অধিক স্থপতিঅংশগ্রহণ করেন। তাঁরা ইকো-ট্যুরিজম, জলবায়ু সহনশীল পর্যটন উন্নয়ন, এবং এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ তৈরিতে স্থাপত্যের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন।
আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতনামা স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম এর তত্ত্বাবধানে আয়োজিত এই সম্মেলনে মূলত টেকসই পর্যটন এবং জলবায়ু-সহনশীল ডিজাইন নিয়ে আলোচনা করা হয়, যা বিশেষভাবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রাসঙ্গিক। সম্মেলনটি ইকো-ট্যুরিজমের গুরুত্ব এবং এর ভূমিকা তুলে ধরে, যা পরিবেশ এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষায় সহায়তা করে।
সম্মেলনের প্রথম দিন স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম বক্তৃতায় বলেন, কক্সবাজারের প্রাকৃতিক পরিবেশ, যা ইতিমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হুমকির মুখে, ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, এবং পর্যটকদের জন্য নতুন কোনও মানসম্পন্ন অভিজ্ঞতা তৈরি হচ্ছে না। তিনি ইকো-ট্যুরিজমএর গুরুত্ব তুলে ধরেন, যা স্থানীয় সম্প্রদায়ের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার পাশাপাশি পরিবেশ এবং ঐতিহ্য রক্ষায় সাহায্য করে।
সম্মেলনে স্থপতি এহসান খান, যিনি কক্সবাজারের মাস্টার প্ল্যান তৈরির দায়িত্বে আছেন, তাঁর পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি জানান কিভাবে কক্সবাজারের নির্মাণের সাথে পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা করা যায় এবং স্থাপত্যের মাধ্যমে কক্সবাজারের প্রাকৃতিক ঐতিহ্য রক্ষা করা সম্ভব।
সম্মেলনটি “ইকো-ট্যুরিজম এবং স্থাপত্য চর্চায় টেকসইতা” শীর্ষক প্যানেল আলোচনার মাধ্যমে শুরু হয়, যেখানে উপস্থিত ছিলেন স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম, স্থপতি খন্দকার হাসিবুল কবির, স্থপতি এহসান খান, এবং অন্যান্য বিশিষ্ট স্থপতিরা।
বিকেলে সাতজন স্থপতি তাঁদের প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন, তারপর একটি গাইডেড সানসেট মেডিটেশন হয়, যা প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে নকশা সচেতনতা গঠনে সহায়তা করে। দ্বিতীয় দিনে আরও দশজন স্থপতি তাঁদের কাজ উপস্থাপন করেন, এবং সম্মেলনটি শেষ হয় একটি ওপেন-ফ্লোর প্যানেল আলোচনার মাধ্যমে, যা পরিচালনা করেন স্থপতি নাহাস আহমেদ খালিল, এবং স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম এর সমাপনী বক্তব্য দিয়ে।
সম্মেলনের একটি আকর্ষণীয় অংশ ছিল বাংলাদেশের বিখ্যাত স্থপতিদের আধুনিক কাজের প্রদর্শনী, যা দেশের স্থাপত্য দৃশ্যের জন্য উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।
এ. এম. জিয়া উদ্দিন খান পাবলো, স্থপতি এবং মারমেইড বিচ রিসোর্টের এর চেয়ারম্যান বলেন, “আমরা যেমন স্থপতিরা শুধু বর্তমানের জন্য নয়, বরং একটি টেকসই ভবিষ্যতের জন্য নকশা করার দায়িত্বে আছি, এই সম্মেলন একটি মুহূর্ত, যেখানে স্থাপত্যের উদ্ভাবনী চিন্তা এবং পরিবেশ সংরক্ষণ একসঙ্গে একীভূত হয়েছে।”
আনিসুল হক চৌধুরী সোহাগ, মারমেইড বিচ রিসোর্ট এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বলেন, “আমরা খুব খুশি যে, এই সম্মেলনে আর্কিটেকচারের সকল মাস্টারমাইন্ডরা অংশগ্রহণ করেছেন এবং তাদের চিন্তাভাবনা শেয়ার করেছেন, যা কক্সবাজার এবং আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথে বড় ভূমিকা রাখবে।”
“ডিসকোর্স বাই দ্য শোর” - আর্কিটেক্টস সামিট ২০২৫ কক্সবাজারের টেকসই উন্নয়নে স্থাপত্যের ভূমিকা পুনঃনির্মাণের সুযোগ সৃষ্টি করেছে, এবং ভবিষ্যতে ইকো-ট্যুরিজম এবং টেকসই স্থাপত্য বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা ও সহযোগিতার পথ খুলে দিয়েছে।
এই সম্মেলন বাংলাদেশকে ইকো-ট্যুরিজম, টেকসই ডিজাইন, এবংজলবায়ু-সহনশীল স্থাপত্য ক্ষেত্রে বৈশ্বিক নেতৃত্বে স্থান করে দিয়েছে, যার ধারণাগুলি ভবিষ্যতের কক্সবাজার এবং অন্যান্য উন্নয়নে প্রভাব ফেলবে। এছাড়া স্থাপত্য এবং টেকসই পর্যটন উন্নয়ন ক্ষেত্রের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক এ সম্মেলন।
সম্মেলনের আয়োজনে ছিলেন স্থপতি সাইকা ইকবাল মেঘনা, স্থপতিদিদারুল ইসলাম ভূঁইয়া, স্থপতি সুব্রত সোভন চৌধুরী, স্থপতি রাশেদ হাসান চৌধুরী, স্থপতি খন্দকার আসিফুজ্জামান রাজন, এবং স্থপতিতাবাসসুম জারিন তিথি।
/এমএস