ঢাকা ৩০ ভাদ্র ১৪৩১, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ধারাবাহিক উপন্যাস ত্রিপুরা উপাখ্যান ও সাবিনার কথা

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০১:১৬ পিএম
আপডেট: ০২ আগস্ট ২০২৪, ০৩:৩৬ পিএম
ত্রিপুরা উপাখ্যান ও সাবিনার কথা

গত সংখ্যার পর

তোমরা আজ হয়তো ভাবতে পারবে না- এ সময় দিনেরাতে নদীর স্রোতের মতো ছিন্নমূল মানুষ প্রবেশ করতে থাকে ত্রিপুরার নানা অঞ্চল দিয়ে। এত বড় শরণার্থী বিপর্যয় আগে কোথাও ঘটেনি পৃথিবীতে! একটি হিসাব থেকে বুঝতে পারবে ত্রিপুরার মানুষ বাংলাদেশের যুদ্ধের দাহন কতটা ভোগ করেছে। ১৯৭১ সালে রাজ্যের মোট লোকসংখ্যা যেখানে ১৫.৫৬ লাখ, সেখানে বাংলাদেশ থেকে শরণার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩.৪২ লাখ বা প্রায় ১৪ লাখ। পরের দিকে এই সংখ্যা আরও বেড়েছে। ফলে ত্রিপুরার জনজীবন ও অর্থনীতিতে প্রচণ্ড চাপের সৃষ্টি হয়। কী করবে মানুষ বুঝে উঠতে পারে না। 

মল্লিকা সেনগুপ্ত: স্যার, একটি প্রশ্ন করি। সমাজ, অর্থনীতিতে এই যে ভয়ংকর রকম চাপ, সাধারণ মানুষের এত যে কষ্ট, এর পরও কেন সবকিছু মেনে নেয় ত্রিপুরার মানুষ? 

রথীন দত্ত: সঠিক প্রশ্নই করেছ। ব্যাপারটা স্বভাবতই ভাববার। তবে আমার কী মনে হয় জান, প্রকৃতির, মাটির একটা টান আছে, যা ভঙ্গুর নয়, নানা টানাপোড়েনে ভূখণ্ড ভাগ হয়ে গেলেও সেই অবিভাজ্য টান ধরে রাখে প্রকৃতি। এর মধ্যে আছে ভাষা-সংস্কৃতি ও জলবায়ুর এক গন্ধ। হয়তো সে কারণেই কষ্টকে কষ্ট বলে ভাবেনি ত্রিপুরাবাসী। 

ইতিহাসগতভাবে ত্রিপুরায় যে বাঙালি তার ৯৫ ভাগ পূর্ববঙ্গ বা পূর্ব পাকিস্তান থেকে এসেছে- প্রায় সবাই ওপারের মানুষ- বলতে পার দেশ ভাগে বিতাড়িত মানুষ। এই মানুষদের সবাই হিন্দু ধর্মালম্বী, যারা নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে নতুন ভারতে পাড়ি দিয়েছে ১৯৪৭-এর দাবানলে পুড়ে। আবার এমন অনেকে আছেন যাদের পূর্বপুরুষ ছিলেন রাজ দরবারের কর্মচারী। কিন্তু এদের সবার আশা-আকাঙ্ক্ষা, রাগ-বিরাগ বৈশিষ্ট্য এক। অতএব, ১৯৪৭-এর আগে-পরের যে বিভেদ তা টিকে থাকেনি- নিমিশে উবে গেছে! হিন্দু, মুসলমান, পাহাড়ি ও নানা ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত জনগোষ্ঠীর ভেতরে বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক মুসলমান এবং হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান নির্বিবাদে ঠাঁই করে নিয়েছে- মানুষের ভেতরে মানুষ যেভাবে ঠাঁই করে নেয়! এই আত্মীয়তার ক্ষেত্রে ধর্ম ও কলোনিয়াল লিগেসি বিরোধ টানেনি। ধর্ম যে ব্যক্তির একান্ত আপনার বিষয়, রাষ্ট্র বা সমাজের নয় এবং ধর্ম বিশ্বাস যে ভাষা-সংস্কৃতির বিভাজন মানে না, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ তা নতুন করে শিখিয়ে দিয়েছে। 

মল্লিকা সেনগুপ্ত: হয়তো তাই হবে। কিন্তু এপার ওপারে দুই পারেই যেভাবে উগ্রবাদ ছড়িয়ে পড়ছে, নতুন করে বিভেদ তৈরি হচ্ছে, তাতে কিন্তু শঙ্কার কারণ আছে। 

সার্জন রথীন দত্ত: নিশ্চয়ই, শঙ্কার কারণ তো আছেই। দেখ, ১৯৭১ কেবল বাংলাদেশের নয়, ভারতেরও সমানভাবে। ভারতের সেনাবাহিনী হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশের মিত্রবাহিনী। অকাতরে প্রাণ দিয়েছে মুক্তিবাহিনী, রক্ত গেছে মিত্রবাহিনীরও। অতএব, দুই দেশকে এক রক্তের বন্ধনে আবদ্ধ করেছিল ১৯৭১, নতুন ইতিহাস তৈরি করেছিল। সেই ভাতৃত্বকে উগ্র ধর্মবাদ চর্চা দিয়ে বিনষ্ট করা কখনো সমীচীন নয়। 
মল্লিকা সেনগুপ্ত: ঠিক বলেছেন, স্যার। এবার তাহলে আগের প্রসঙ্গে যাই আমরা। 

সার্জন রথীন দত্ত আবারও আগের প্রসঙ্গে ফিরলেন। ফেরার আগে তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে নিলেন। 

বুঝলে, পরিস্থিতি যথেষ্টই ঘোলাটে তখন। কী হবে, কীভাবে পরিস্থিতি সামলানো যাবে? ভারত সরকার শেষ পর্যন্ত কতটা নামবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে- কিছুই নিশ্চিত নয়। মুজিবকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি সশরীরে থাকলে পরিস্থিতি একরকম হতো। কিন্তু তিনি তো নেই। এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ ও দলের হুইপ ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলামসহ কয়েকজন শীর্ষ নেতা পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নিয়েছেন। বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স তাদের দেখাশোনা করছে। অন্য নেতাদের কেউ কেউ গোপন পথে মেঘালয় ও আসামে পাড়ি দিয়েছেন। কে কোথায় উঠেছেন কেউ খবর রাখে না। একটা সুখবর খবর হলো তাজউদ্দীন আহমদ এরই মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। বুঝতেই পার সাক্ষাৎকারটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ- ভারতের সমর্থনের প্রশ্নে কত বড় ইতিবাচক ঘটনা। 

মল্লিকা সেনগুপ্ত: স্যার, পক্ষে-বিপক্ষে নানা কথা আছে, থাকবেও। তবু শ্রীমতি গান্ধী সম্পর্কে আপনার অভিমত কী? 
সার্জন রথীন দত্ত: দেখ, আমি রাজনীতির মানুষ নই। মিসেস গান্ধীর রাজনৈতিক বিরোধীরা যা ইচ্ছে বলতে পারেন। কিন্তু যদি ১৯৭১ সালের কথা বল, তাহলে আমার মতামত খুবই স্পষ্ট। আমার মনে হয় কি জান, ১৯৭১ সালে ইন্দিরা গান্ধী ভারতের প্রধানমন্ত্রী না হয়ে যদি অন্য কেউ থাকতেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন যদি ভারতের সঙ্গে মৈত্রী চুক্তির সঠিক রূপয়ানে গুরুত্ব না দিত এবং বাংলাদেশ যুদ্ধের রাজনৈতিক মূল্যায়ন মস্কোর ভূমিকা যথার্থ না হতো, তাহলে নিঃসন্দেহে বলা যায়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিলম্বিত হওয়ার কারণ ছিল। 

মল্লিকা সেনগুপ্ত: বুঝলাম স্যার, এবার আগের কথায় ফিরি আমরা। 

শোন, তাজউদ্দীনের সঙ্গে শ্রীমতি গান্ধীর পরপর দুটি বৈঠক হয়। বিস্তারিত আলোচনার পর স্থির হয়, অনতিবিলম্বে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে বাংলাদেশের সরকার গঠন করা হবে, যে সরকার যুদ্ধ পরিচালনা করবে। আরও ঠিক হয় ভারত তার ভূমি ব্যবহার করে রেডিওসহ সব ধরনের প্রচার কাজ চালাতে দেবে। আরও বড় সিদ্ধান্ত হয় ভারতের মাটিতে বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী গড়ে উঠবে- যার দেখাশোনা করবে বাংলাদেশ ও ভারত যৌথভাবে। কিন্তু সবচেয়ে বড় সংকট দেখা দিল বিভিন্ন রাজ্যে আশ্রয় নেওয়া নেতৃবৃন্দের মধ্যে কার্যকর যোগাযোগ স্থাপিত না হওয়ায়। এ ক্ষেত্রে বিএসএফ সহায়তা করল। অতি অল্প সময়ের মধ্যে সবাইকে খুঁজে বের করা সম্ভব হলো। 

এদিকে আগরতলায় আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা, বিশেষ করে যারা ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে এমএনএ বা এমপিএ হয়েছেন তারা পাকিস্তান বাহিনীর নির্বিচার গণহত্যা ও নারী নির্যাতনের চিত্র বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরার উদ্যোগ নিলেন। ২ এপ্রিল ১৯৭১ তারা একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসলেন মেলারমাঠে অনিল ভট্টাচার্যের বাড়িতে। 

সেদিনের বৈঠকটি ছিল পাকিস্তানি গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রথম আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ, যা এক মাইলফলক। জহুর আহমদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভা থেকে আওয়ামী লীগের ৩৫ জন এমএনএ, এমএলএ সর্বপ্রথম বিশ্ববাসীর সামনে একটি যৌথ বিবৃতি প্রচার করলেন। বিবৃতিটি পাঠানো হয় জাতিসংঘের মহাসচিব উ থান্ট-এর কাছে। Stop this Genocide- ‘বন্ধ কর এই গণহত্যা’ শিরোনামে ইংরেজিতে তৈরি হয় বাংলাদেশের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের প্রথম যৌথ বিবৃতিটি।

চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ-আল-হারুন, টাইমস অব ইন্ডিয়ার সাংবাদিক সুভাষ চক্রবর্তী এবং পান্নালাল দাশগুপ্ত সম্পাদিত ‘কম্পাস’ সাময়িকীর নিজস্ব প্রতিনিধি অমর রাহা এটি রচনা করতে সহায়তা করেন। এরা সবাই তখন আগরতলায়। প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া (পিটিআই) বার্তা সংস্থার অফিসের একটি পুরনো টাইপ রাইটারে এই বিবৃতি টাইপ করা হয়। পিটিআইয়ের বিশেষ প্রতিনিধি মধুসুধন গুহ রায় তখন বাংলাদেশের যুদ্ধ ‘কভার’ করতে আগরতলায় আছেন। মধুবাবু টেলিফোনে কলকাতায় হেয়ার স্ট্রিটের পিটিআই অফিসে খবরটি পাঠিয়ে দিলেন। এটি ছিল তার ‘স্কুপ নিউজ’। কারণ অন্য কাউকেই খবরটি তখনো দেওয়া হয়নি। পরদিন সব জাতীর স্তরের খবরের কাগজে খবরটি ফলাও হয়ে বেরোল। এরপর গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ল। 

চলবে...

১ম পর্ব

২য় পর্ব

৩য় পর্ব

৪র্থ পর্ব

৫ম পর্ব

৬ষ্ঠ পর্ব

৭ম পর্ব

৮ম পর্ব

৯ম পর্ব

১০ম পর্ব

১১তম পর্ব

১২তম পর্ব

অব্যাখ্যাত

প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:২৬ পিএম
আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৩৫ পিএম
অব্যাখ্যাত

মন কাঁদে, দেহও কাঁদে
দু-কূলপ্লাবী প্লাবনে ঝরে কত টালবাহানা;

অঘ্রাণ আসে, অঘ্রাণেরা হাসে
তালবীথিকায় তবুও অখণ্ডিত থাকে কিছু কৈফিয়ত; 

কুম্ভশালায় নানান পট! সত্রশিখায়
কিছু হাসি কিছু দুঃখ মেশানো;

রাতের চরণধ্বনির অপেক্ষায়
গুণমোহিত শুকতারা।

ক, খ এবং

প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:২৫ পিএম
আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৩৫ পিএম
ক, খ এবং

আপনি কি জানেন ক ও খ একটু কাছাকাছি এসেছে।
মুখে নিস্তব্ধতা, অথচ জাহাজে বোহেমিয়ান আয়োজন।
সংবাদমাধ্যম এসব দেখছে।

ক চাইছে সমুদ্রের সংসার!
খ চাইছে লাইট হাউজের আলোয় হারিয়ে যাওয়া!
আপনি লিখতে থাকুন জানালা, দরজার তফাৎ!

খবরটা কি হেডলাইন হওয়া উচিত?
নাকি মেরুকরণের ভাবনা থেকে সরে যাবে দুটো জীবন।

আপনিও কি ভেবে দেখেছেন বালির ঘরে শামুকজীবন!
আসলে নাভিতে গদ‍্য আর মুখে কবিতা!
এরই নাম কি ক, খ-এর সমীকরণ!

আবার ফিরে আসব

প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:২৫ পিএম
আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৩৫ পিএম
আবার ফিরে আসব

এতো কান্না আমি জমাব কোথায়?
তেমন নিরাপদ ঘর নেই হৃদয় কুঠিরে
এতো ত্যাগের মহিমা আমি কোথায় 
সযত্নে রাখি এমন নিরাপদ ভবন নেই 
অরণ্য শোভিত নিরালোকে!
বত্রিশটি শিশু কাঁদে রোজ রাতে 
আমার গলা জড়িয়ে আমাদের কী অপরাধ?
ছয় শ পঞ্চাশ আরও আরও বেশি তরুণের 
প্রতিবাদী পদভার আমি শুনতে পাই
এই নাও দিয়ে গেলাম স্বৈরাচারমুক্ত
এক স্বাধীন স্বদেশ!
এই নাও দিয়ে গেলাম ধানবোঝাই গোলাঘর
দুধেল গাই আর বাটি ভরা দুধ!
গণতন্ত্রের উদার আকাশে তোমরা 
গাইবে সেতুবন্ধের গান, সেই গান শুনতে শুনতে
কবরে অন্ধকারে আসবে সূর্যালোক 
আলোয় আলোয় ভরা কোনো জ্যোৎস্নারাতে
আমরা আবার ফিরে আসব
ততদিনে একটি নিরাপদ বিশ্বাস
তোমরা বুকের অতলে রেখে দিও!

নতুন বই

প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:২২ পিএম
নতুন বই

বই এমনই এক দর্পণ, যা মনের ইতিহাস সঞ্চয় করে। যারা সাধারণের ঊর্ধ্বে উঠতে চায় তাদের জন্য বই পড়ার বিকল্প নেই। ভারতীয় বাঙালি কথাসাহিত্যিক প্রতিভা বসু বলেছেন, ‘বই হচ্ছে শ্রেষ্ঠ আত্মীয়, যার সঙ্গে কোনদিন ঝগড়া হয় না, কোনদিন মনোমালিন্য হয় না।’...

জামায়াতে ইসলামী উত্থান বিপর্যয় পুনরুত্থান
মহিউদ্দিন আহমদ
প্রকাশনী: অনন্যা, ঢাকা
প্রকাশকাল: আগস্ট ২০২৪
পৃষ্ঠা: ৩৬৮, মূল্য: ৭৫০ টাকা

জামায়াতে ইসলামী হিন্দ, জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ এবং শেষমেশ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। ১৯৪১ সালে জন্ম নেওয়া রাজনৈতিক দলটির এই পরিক্রমা প্রায় সাড়ে আট দশকের। দলের নাম অদলবদল হলেও দর্শন ও দৃষ্টিভঙ্গি থেকে গেছে অভিন্ন। নিজেদের একটি ইসলামী আন্দোলন বললেও এটি পুরোদস্তুর একটি রাজনৈতিক দল। দেশে ডজন ডজন ইসলামী দল আছে। তাদের মধ্যে শুধু জামায়াতে ইসলামীই গুরুত্বের সঙ্গে রাষ্ট্রক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতির চর্চা করে। ভোটের হিসেবে জামায়াত খুব ছোট নয়। ১৯৭০ সালে এটি দ্বিতীয় স্থানে ছিল। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এই দুই প্রধান দলের বাইরে তারাই সবচেয়ে বেশি ভোট পায়। এদিক দিয়ে বিচার করলে দেখা যায়, জনগণের কাছে জামায়াত একটি ‘অপশন’।

১৯৭১ সালে এ দেশে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। পাকিস্তানিরা গণহত্যা চালিয়েছিল। ওই সময় জামায়াতসহ কয়েকটি দল পাকিস্তানি সামরিক সরকারের পক্ষ নিয়েছিল। দেশ মুক্ত হলে দলটি বিপাকে পড়ে। স্বাধীনতাবিরোধী ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করার কারণে দলটি নিষিদ্ধ হয়। পরে সংবিধানে পরিবর্তন এলে জামায়াত আবার হাজির হয় দৃশ্যপটে। একের পর এক নির্বাচন করে তারা রাজনৈতিক বৈধতা পেয়ে যায়। এক সময় তারা একটি জোট সরকারের অংশ হয়ে সরকার পরিচালনা করে, ২০ বছর আগে যা কল্পনা করা যেত না। তাদের এই পুনর্বাসন সম্ভব হয় প্রধান দুই দলের প্রশ্রয় পেয়ে। এই বইতে জামায়াতে ইসলামীর সুলুক সন্ধান করা হয়েছে। রাজনীতি বড়ই বিচিত্র। খালি চোখে সবটা ধরা পড়ে না। আড়ালে থেকে যায় অনেক কিছু। এই বইয়ে সেসব ছেঁকে তোলার চেষ্টা হয়েছে। একই সঙ্গে উঠে এসেছে ওই সময়ের চালচিত্র।

 

 

The Hermit Next Door 
দ্য হারমিট নেক্স ডোর
কেভিন হার্ন
প্রকাশক: সাবটেরেনিয়ান প্রেস, নিউইয়র্ক   
প্রকাশকাল: ৩০ জুন ২০২৪
পৃষ্ঠা: ৭৮, মূল্য: ৪.৯৯ ডলার

নিউইয়র্ক টাইমস বেস্ট সেলিং লেখক কেভিন হার্নের নতুন উপন্যাস ‘দ্য হারমিট নেক্স ডোর’। এ উপন্যাসের কাহিনির অন্যতম কেন্দ্রীয় চরিত্র উইনি মে। তার স্বামীর মৃত্যুর পর শোক কাটিয়ে ওঠার জন্য কিশোর ছেলে প্যাক্সকে নিয়ে উইনি টেনেসি থেকে ওরেগনে চলে আসে। তার প্রত্যাশা, সে এখানে ছেলেকে নিয়ে নিরিবিলি থাকতে পারবে। তবে এখানে আসার পর জানতে পারে, আরেক ঝামেলার কথা: তাদের প্রতিবেশীর নাম মি. ফিশার। বছরের পর বছর তার সঙ্গে নাকি প্রতিবেশীদের দেখাই হয়নি। ঘটনাচক্রে প্যাক্স তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে বুঝতে পারে, ফিশার আসলে এই গ্রহের মানুষ নয়। সে এখানে কীভাবে যেন আটকে গেছে। নিজের গ্রহে ফিরে যেতে পারেনি। সে প্যাক্সের সহায়তা চায় যাতে তারা অন্য কাউকে তার পরিচয় না জানায়। না হলে লোকে তার জীবন অতিষ্ঠ করে তুলবে। এখন উইনি এবং প্যাক্সের প্রধান চিন্তার বিষয় ফিশারের নিরাপত্তা।

শরীর কাব্য

প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:১৮ পিএম
আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৩৫ পিএম
শরীর কাব্য
অলংকরণ: নিয়াজ চৌধুরী তুলি

প্রেম কর? 
প্রশ্নটা শুনেই হকচকিয়ে গেল সুবর্ণা। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, জি না। 
আজহার মাহমুদ অবাক কণ্ঠে বললেন, সত্যি তুমি প্রেম কর না?
সুবর্ণা আবার একই কথা বলল, জি না। 
আজহার মাহমুদ জোর দিয়ে বললেন, তুমি মিথ্যা বলতেছ কেন? তোমার শরীর দেখে মনে হচ্ছে তুমি প্রেম কর। 

সুবর্ণা এবার আরও বিব্রত হলো। কোনো নারীর শরীর দেখে কি বোঝার উপায় আছে, সে প্রেম করে কি করে না। আজহার মাহমুদ তো দেখি মানুষ হিসেবে সুবিধার না। লুচ্চা টাইপের মানুষ। তিনি কি সুবর্ণার শরীর স্ক্যান করতে শুরু করেছেন। সুবর্ণার শরীরে কোনো কাপড় নেই। সুবর্ণা উলঙ্গ... ছি ছি, এসব কী ভাবছে সুবর্ণা। 

তার মনে হলো আজহার মাহমুদ লোলুপ দৃষ্টি নিয়ে সুবর্ণার বুকের দিকে লম্পটের মতো তাকিয়ে আছেন। 
আজহার মাহমুদ মৃদু হেসে বললেন, তুমি এখন কী ভাবতেছ বলব? 
সুবর্ণা হ্যাঁ না কিছুই বলল না। 
আজহার মাহমুদ বললেন, আমাকে তুমি লুচ্চা টাইপের মানুষ ভাবতেছ। মনে মনে আমার ওপর অনেক রুষ্ট তুমি। কথা সত্যি কিনা বল। 
হ্যাঁ। মাথা নাড়ল সুবর্ণা। 

আজহার মাহমুদ খুশি হয়ে বললেন, তোমার সাহস দেখে আমি মুগ্ধ। এবার আসল কথাটা বলি। আমি কীভাবে বুঝলাম তুমি প্রেম কর? শুনবে?
সুবর্ণা কোনো কথা বলল না। তবে আজহার মাহমুদের প্রতি তার আগ্রহ বেড়ে গেল। একটা মেয়ে প্রেম করে কি করে না, সেটা কি তার শরীর দেখে বলে দেওয়া সম্ভব? 

আজহার মাহমুদ বললেন- শোনো সুবর্ণা, তোমাকে একটা কথা বলি। প্রেম করতে গিয়ে মেয়েরা প্রথম যে ভুলটা করে, প্রেমিকের কাছে শরীর বিলিয়ে দেয়। প্রেমিকার সঙ্গে দেখা হলেই প্রেমিক যে কাজটা করে, ছলে বলে কৌশলে প্রেমিকার স্তনে হাত দেওয়ার সুযোগ খোঁজে। দলাই মতলাই করে। এভাবেই তার সর্বনাশ শুরু হয়। বিয়ের আগেই স্তন ঝুলে যায়। তোমাকে সর্বনাশের একটা গল্প বলি। আমার এক পরিচিত লোক, বাসর রাতেই বউয়ের সঙ্গে তুমুল ঝগড়া শুরু করে। কথায় আছে বিড়াল প্রথম রাতেই মারতে হয়। এখানে বিড়াল নামটা কেন ইউজ করলাম নিশ্চয়ই বুঝতে পারতেছ? তো বিড়াল মারতে যাবে। স্ত্রী তার শরীর থেকে শাড়ি, ব্লাউজ, ব্রা খুলে ফেলেছে। হঠাৎ স্বামী চিৎকার দিয়ে উঠল। কী সর্বনাশ। অ্যাই তোমার ‘দুধ’ এমনে ঝ্যালঝ্যালা কেন?

স্ত্রী ‘দুধ’ শব্দটা প্রথমে বুঝতে পারেনি। তাই অবাক হয়ে জানতে চাইল- ‘দুধ’ মানে কী? 
‘দুধ’ মানে বুঝ নাই? দুধ মানে স্তন। তোমার স্তন এত ঝ্যালঝ্যালা কেন? নিশ্চয়ই কোনো পুরুষের হাত পড়েছে। অ্যাই তুমি কি কারও সঙ্গে প্রেম করতা? সত্য কথা বল। সত্য কথা বললে আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিব। এই পর্যন্ত বলে সুবর্ণার দিকে তাকালেন আজহার মাহমুদ। ধারণা করে বল, ওদের বিয়েটা কী শেষ পর্যন্ত টিকেছিল? 

আজহার মাহমুদের কথা শুনে লজ্জা, অপমানে চোখ তুলে তাকাতে পারছে না সুবর্ণা। প্রথম সাক্ষাতে কোনো পুরুষ কি একজন নারীর 
সামনে এভাবে যৌনতা নিয়ে কথা বলে? নিশ্চয়ই এই লোকের মানসিক সমস্যা আছে। 
আজহার মাহমুদ আবার একই প্রশ্ন করলেন- তোমার কী ধারণা, ওদের বিয়েটা টিকেছিল? 
সুবর্ণা হ্যাঁ না কিছুই বলল না।
 
আজহার মাহমুদ মৃদু হেসে বলললেন, ওদের বিয়েটা টিকেছে। ওরা এখনো সুখে-শান্তিতে সংসার করছে। এটা কীভাবে সম্ভব হলো? সম্ভব হয়েছে বিশ্বাসের কারণে। সেদিন বাসর রাতে জীবনের সব কিছু খুলে বলেছিল স্ত্রী। এক তরুণের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। দেখা হলেই স্তনে হাত দিতে চাইত। সুবর্ণা মাইন্ড কর না। আমার ধারণা তোমার কেসটাও একই রকম। তোমার প্রেমিক তোমার স্তনের প্রতিই বেশি অনুরক্ত। দেখা হলেই স্তন ধরে ঝুলে পড়তে চায়। 

লজ্জা, অপমানে সুবর্ণার দুই কান রীতিমতো গরম হয়ে উঠেছে। না, এই লোকের সামনে আর একদণ্ডও বসে থাকা ঠিক হবে না। হঠাৎ চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল সুবর্ণা। সিদ্ধান্ত নিল এই অফিসে সে কাজ করবে না। অসম্ভব। আজহার মাহমুদের মতো লুচ্চাটাইপের মানুষের সঙ্গে একই অফিসে কাজ করা ঠিক হবে না। আজহার মাহমুদকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হন হন করে তার রুম থেকে বেরিয়ে গেল সুবর্ণা। 

বাসায় ফিরে নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল সুবর্ণা। সুবর্ণার মা মিসেস সুরাইয়া মেয়ের জন্য দুপুরের খাবার নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। দুপুরের খাবার খেতে খেতে সুবর্ণার চাকরির প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা শুনবেন এমনটাই পরিকল্পনা ছিল সুরাইয়ার। কিন্তু সুবর্ণা এভাবে হন হন করে নিজের ঘরে ঢুকল কেন? অফিসে কি কিছু হয়েছে। কেউ কি তাকে অপমান করেছে? দরজায় টোকা দিলেন সুরাইয়া- সুবর্ণা? অ্যাই সুবর্ণা? কী হয়েছে? দরজা বন্ধ করলি কেন? দরজা খোল। সুবর্ণা।

ভেতর থেকে সুবর্ণা বলল, মা আমার কিছু হয়নি। আমি কিছুক্ষণ একা থাকব। 
একা থাকবি মানে? তোর নিশ্চয়ই কিছু একটা হয়েছে। দরজা খোল মা। লক্ষ্মী মা আমার। দরজা খোল... সুবর্ণা! 
সুবর্ণা আবার একই কথা বলল- মা বললাম তো আমার কিছু হয়নি। ঝামেলা কোরো না তো। আমি কিছুক্ষণ একা থাকব, প্লিজ মা... 

সুবর্ণার মনে হলো গোসল করলে বোধ করি শরীর-মন দুটোই শান্ত হবে। বাথরুমে ঢুকে শরীরের সব কাপড় খুলে ফেলল সুবর্ণা। বাথরুমের আয়নায় তার নগ্ন শরীর দেখা যাচ্ছে। এর আগে বাথরুমের আয়নায় শরীর দেখার ইচ্ছে হয়নি। আজ হচ্ছে। বিশেষ করে নিজের স্তন দেখার আগ্রহ বেড়ে গেল। সুবর্ণার শরীর কাঁপছে। আজহার মাহমুদ ঝ্যালঝ্যালা স্তনের কথা বলেছেন। সুবর্ণার স্তনের তো একই অবস্থা। এতদিন সে খেয়াল করেনি। তার স্তন দেখলে যে কেউ ভাববে সুবর্ণা একাধিক সন্তানের মা। অথচ সুবর্ণার তো বিয়েই করেনি। ঝরনার কল ছেড়ে অনেকক্ষণ গোসল করল সুবর্ণা। স্তন দুটিকে বারবার উঁচিয়ে ধরে সুডৌল আকার দিতে চাইল। কিন্তু সেটা সম্ভব হলো না। বাথরুম থেকে বেরিয়ে অনেকক্ষণ বিছানায় নগ্ন শরীরে বসে রইল সুবর্ণা। তার কেবলই মনে হচ্ছে শরীর তার অথচ শরীরের নিয়ন্ত্রণ শপে দিয়েছে অন্য কাউকে। এটা ঠিক হয়নি। মারাত্মক ভুল করেছে সুবর্ণা। 

মোবাইল ফোনে রিং হচ্ছে। রিমন ফোন দিয়েছে। সুবর্ণা ভাবল রিমনের সঙ্গে আজ একটা বোঝাপড়া করতেই হবে। 
হ্যালো... কে? সুবর্ণা ইচ্ছে করেই কে শব্দটা উচ্চারণ করল। 
রিমন অবাক হয়ে বলল, সুবর্ণা আমি? চিনতে পারছ না?
ও তুমি? বল!
চাকরির প্রথম দিন কেমন গেল? 
ভালো না। 
কেন? 
সাক্ষাতে বলব। 

কণ্ঠে উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে রিমন বলল, এখনই বল। অফিসে কোনো ঝামেলা হয়েছে? 
হ্যাঁ। 
কী ধরনের ঝামেলা? 
বললাম তো সাক্ষাতে বলব। 
তুমি কি চাকরি ছেড়ে দিয়েছ?
হ্যাঁ। 
কেন?
ফোনে এতকিছু বলতে পারব না। রিমন...? 
বলো। 
তুমি কি এখন ফ্রি? সিরিয়াস কিছু কথা বলব? 
বলো। আমি ফ্রি। 
আমার কথা শুনে হুট করে কোনো ডিসিশন দেবে না। ভেবে ডিসিশন দেবে। 
ঠিক আছে বল। 

তুমি আমাদের রিলেশনের ব্যাপারে কী ভাবছ? 
কী ভাবছি মানে? কথা ক্লিয়ার করো। 
আমরা বিয়ে করছি কবে?
বিয়ে? ভূত দেখার মতো চমকে উঠল রিমন। সুবর্ণা অবাক হয়ে বলল, বিয়ের কথা শুনে তুমি এভাবে চমকালে কেন? তার মানে আমাদের বিয়ের ব্যাপারে তুমি সিরিয়াস না?
রিমন ইতস্তত করে বলল, হঠাৎ বিয়ের কথা উঠছে কেন? আমাদের মধ্যে কি এমন কোনো ডিসিশন হয়েছে। 

সুবর্ণার মনে হলো তার মাথার ওপর আকাশ ভেঙে পড়ছে। তারই নগ্ন শরীর বিদ্রূপ করছে তাকে। কত করে বলেছিলাম এভাবে শরীর খুলিস না। বিপদে পড়বি। বিছানার চাদর টেনে নিয়ে শরীর ঢাকতে ঢাকতে সুবর্ণা বলল, রিমন তুমি কি বুঝেশুনে আমার সঙ্গে কথা বলছ? 
রিমন এতটুকু বিচলিত না হয়ে স্বাভাবিক কণ্ঠে বলল, হ্যাঁ আমি বুঝেশুনেই কথা বলছি। 

তার মানে আমরা বিয়ে করছি না? 
না। এখনই আমি বিয়ের কথা ভাবছি না। 
এখন না ভাব, ভবিষ্যতে... 
ভবিষ্যতের কথাও বলতে পারব না। 
তার মানে তোমার কাছে আমাদের বিয়ের কোনো পরিকল্পনা নেই? 
রিমন কোনো উত্তর দিল না। 
ফোন কেটে দিল সুবর্ণা। 

কিছুদিন পরের ঘটনা। অফিস কক্ষে সহকর্মীদের সঙ্গে একটি নতুন অনুষ্ঠান বিষয়ে আলাপ করছিলেন আজহার মাহমুদ। হঠাৎ সুবর্ণা এসে হাজির। আজহার মাহমুদ তো অবাক। তার সঙ্গে অন্যরাও অবাক। তবে আজহার মাহমুদ সুবর্ণাকে কিছু বুঝতে দিলেন না। 
তুমি সুবর্ণা না? চেনা মানুষকে অচেনা প্রশ্ন করলেন। 

সুবর্ণা মৃদু হেসে বলল- হ্যাঁ আমি সুবর্ণা। আমাকে আপনারা এভাবেই ভুলে গেছেন? সুবর্ণার কণ্ঠে একটু যেন অভিমান। আজহার মাহমুদ বললেন- তোমাকে আমরা মনে রাখব কোন কারণে? বল? তোমাকে কেন্দ্র করে আমরা আমাদের টেলিভিশন চ্যানেলের জন্য একটা অনুষ্ঠান সাজালাম, প্রথম পর্বে উপস্থাপক হিসেবে ভালোই করলে। তার পর বলা নেই, কওয়া নেই তুমি হঠাৎ উধাও হয়ে গেলে। এটা তো ভাই কাজের কথা হলো না। 

সুবর্ণা একটু বিব্রত। চোখ তুলে কথা বলার সাহস পাচ্ছে না। আজহার মাহমুদ ছাড়া আর যারা অফিস কক্ষে এতক্ষণ কথা বলছিল তারা সবাই চলে গেল। এবার যেন সাহস পেল সুবর্ণা। আজহার মাহমুদের চোখের দিকে তাকিয়ে ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গিতে বলল, ভাই আপনার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। 
ক্ষমা, কেন? 
আপনাকে আমি কষ্ট দিয়েছি। 

কষ্ট তুমি দাওনি। আমি দিয়েছি। তবে সেদিনের কথাটা পরিষ্কার হওয়া দরকার। তুমি প্রেম করো কিনা- এই প্রশ্ন কেন জিজ্ঞেস করেছিলাম জানো? তুমি অফিসের কাজে কতটা মনোযোগ দিতে পারবে সেটা যাচাই করার জন্য। তরুণী মেয়েদের প্রেমিক থাকলে ওরা অফিসের কাজে মনোযোগ দিতে পারে না। ব্যাপারটা সিওর হতে চেয়েছিলাম। তবে তোমার বুক নিয়ে যে কথাগুলো বলেছিলাম ওটা ছিল প্রেডিকশন। তোমার সহ্যক্ষমতা যাচাই করতে চেয়েছিলাম। এবার বল, হঠাৎ কী মনে করে? প্রেম ঠিক আছে তো, নাকি? 

সুবর্ণা হঠাৎ মাথা নিচু করে কেঁদে ফেলল। আজহার মাহমুদ অস্থির হয়ে বললেন- অ্যাই মেয়ে, তুমি কাঁদতেছ কেন? ছ্যাঁকা খাইছ?
সুবর্ণা কোনো উত্তর দিল না। মাথা নিচু করে হেচকি তুলে কাঁদতে থাকল।
অনেকক্ষণ কাঁদল, তার পর যাওয়ার সময় মুখ তুলে আজহার উদ্দিনকে বলল, আমি যদি মাঝে মাঝে আপনার সঙ্গে দেখা করতে আসি তাহলে আপনি কি বিরক্ত হবেন? মাইন্ড করবেন?

আজহার মাহমুদ মৃদু হেসে বললেন, না মাইন্ড করব না। তুমি এলে আমার ভালোই লাগবে। 
এর পর অনেকদিন সুবর্ণার সঙ্গে দেখা হয়নি আজহার মাহমুদের। মাস ছয়েক পর হঠাৎ একদিন সকালে আজহার মাহমুদের মিরপুরের বাসায় হাজির সুবর্ণা। কাজের মেয়ে ময়না দরজা খুলে দিয়েছে। 
কাকে চান? 

আজহার ভাই আছেন?
আছেন। ঘুমাচ্ছেন। 
আমি একটু ড্রয়িংরুমে বসি। উনার ঘুম ভাঙলে বলবেন মালিবাগ থেকে সুবর্ণা এসেছে। 
নাম বললেই চিনবে? 
হ্যাঁ চিনবে। 

আপনি বসেন। সুবর্ণাকে ড্রয়িং রুমে বসতে দিয়ে পাশের রুমের দিকে পা বাড়াল ময়না। কয়েক মিনিট পর হন্তদন্ত হয়ে ড্রয়িং রুমে ঢুকলেন আজহার মাহমুদ। তাকে দেখে সুবর্ণা শোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল- স্লামালেকুম। 
ওয়ালাইকুম সালাম। তুমি হঠাৎ? আমার বাসা খুঁজে পেলে কীভাবে? দাঁড়িয়ে আছ কেন? বসো।  
সুবর্ণা বলল- বসব না। আমার সঙ্গে আপনাকে এক জায়গায় যেতে হবে। 

এক জায়গায় যেতে হবে মানে? অবাক বিস্ময়ে প্রশ্ন করলেন আজহার মাহমুদ। 
সুবর্ণা দমভরে কয়েকবার নিঃশ্বাস নিয়ে সাহস সঞ্চয় করে বলল, আমার পরিচিত একজন ডাক্তার আছেন। আমি আপনাকে তার কাছে নিয়ে যাব। 
ডাক্তারে কাছে আমাকে? কেন?
আপনার চিকিৎসা করাব। 
আমার চিকিৎসা? আমার কী হয়েছে? 

সুবর্ণা হঠাৎ কাঁদতে কাঁদতে বলল, আমি শুনেছি আপনি নাকি শারীরিকভাবে অক্ষম। এটা আমি মেনে নিতে পারছি না। আমার পরিচিত ডাক্তার বলেছেন চিকিৎসা করলে অক্ষম পুরুষও সক্ষম হয়ে ওঠে। আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই। প্রমাণ করতে চাই আপনি অক্ষম নন। প্লিজ আপনি আমাকে সহায়তা করুন। আমাকে ফিরিয়ে দেবেন না। আজহার মাহমুদকে জড়িয়ে ধরল সুবর্ণা। উভয় সংকটে পড়ে গেলেন আজহার মাহমুদ।

বিশেষ একটি কারণে তার বিয়েভীতি আছে। বাসর রাতে তার বড় ভাইয়ের বিয়ে ভেঙে যায়। শারীরিক অক্ষমতাকে দায়ী করে প্রথমে রাতেই স্বামীকে তালাক দেয় নববধূ। বড় ভাই আর বিয়ে করেননি। বড় ভাইয়ের ঘটনাটা আজহার মাহমুদের ওপর ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলেছে। তাই বিয়ের চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেছেন। আজহার মাহমুদের মেয়েবন্ধুর সংখ্যা অনেক। মেয়েরা তার সান্নিধ্য খোঁজে। এদের মধ্যে বিবাহিত আছে কয়েকজন। 

শারমিন নামে একজন কোটিপতির বউ আজহার মাহমুদকে অফার করেছিল- আসেন একদিন লড়াই করি। আপনার বিয়েভীতি দূর হয়ে যাবে। রাজি হননি আজহার মাহমুদ। কিন্তু সুবর্ণাকে ফিরিয়ে দিতে মন চাইছে না। সুবর্ণা পরম মমতায় আজহার মাহমুদকে জড়িয়ে ধরে আছে। কাঁদছে সুবর্ণা। ‘আমি আপনার অপমান সইতে পারছি না। আমার ওপর বিশ্বাস রাখেন। সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। আমি সব কিছু ঠিক করে দেব।’ 

সুবর্ণাকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে আজহার মাহমুদের। তার মনে হলো ভয় কেটে যাচ্ছে... ।