আমাদের সমাজ-সাহিত্য-সংস্কৃতি জীবনে কত যে প্রতিভাধর, ত্যাগী উদারমনা মানুষ আছেন একেবারে প্রচার বিমুখ নীরবে-নিভৃতে তাদের ক’জনকে জানি ও চিনি আমরা? কোনো দিন লোকচক্ষুর সামনে আসেননি, নিজেদের সহজ-সরল মনে সানন্দচিত্তে ত্যাগ করেছেন, মিশিয়ে দিয়েছেন নিজেকে নির্বিবাদের অন্তরালেই। এমনই এক মহৎ ব্যক্তিত্ব হলেন সাহিত্যিক, অনুবাদক, শিশুসাহিত্যিক কামালউদ্দীন খান।
গবেষক শামসুজ্জামান খানের ভাষায়, ‘কামালউদ্দীন খান ছিলেন আধুনিক বাঙালি মুসলিম সমাজের এক আত্মপ্রচার বিমুখ সৎ সজ্জন এবং ধীমান চিন্তাজীবী, বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে তার আজীবনের চিন্তাজগৎ বিজ্ঞানের আলোয় ছিল আলোকিত। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল তার ইতিহাসবোধ, যুক্তিশীলতা ও সমাজ চেতনার দীপ্রতা। ফলে তাকে আমরা পেয়েছি একজন অসাম্প্রদায়িক, বিজ্ঞানমনস্ক ও মানবিক চৈতন্যে ভাস্বর লেখক ও ভাবুক, সামাজিক শ্রেয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ মানুষ হিসেবে।’
হাজার বছরের প্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্য সমৃদ্ধ জনপদ চট্টগ্রামের পাহাড়, নদী, সমুদ্র ও দিগন্ত প্রসারিত বেলাভূমি বেষ্টিত চট্টগ্রামের অনুপম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভরপুর চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার চুনতী গ্রামের ডেপুটি বাড়িতে বিস্মৃত প্রায় বাঙালি মনীষা, বাঙালির ইতিহাসের বিরল উত্তরাধিকারী আলোকিত মানুষ কামালউদ্দীন আহমদ খান ২৮ বৈশাখ ১৩১১ বঙ্গাব্দ এবং ১৯০৫ সালের ১১ মে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা তৈয়বুল্লাহ খান এবং মাতা মোসলেমা খাতুন। পিতামহ খান বাহাদুর নাসিরউদ্দিন খান।
স্থানীয় গ্রামের পারিবারিক মক্তবে লেখাপড়ার হাতেখড়ি। স্থানীয় স্কুল থেকে প্রবেশিকা ও চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তী সময়ে ১৯২৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গোল্ড মেডেলিস্ট হিসেবে পদার্থবিদ্যায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইস চ্যান্সেলর স্যার আশুতোষ মুখোপ্যাধায়ের প্রশংসিত ও স্নেহাধন্য প্রতিভাধর ছাত্র হিসেবে তিনি সবার প্রিয়পাত্র ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন কামাল উদ্দীন খান মুসলিম সাহিত্য সমাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন।
১৯৩১ সালে সাহিত্য সমাজের সভায় তিনি ‘সভ্যতার উত্তরাধিকার’ নামে একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। সেখান থেকেই সাহিত্য জগতে তার সরব উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। মুসলিম সাহিত্য সমাজের মুখপাত্র ‘শিখা’সহ প্রভৃতি পত্রিকায় ও সলিমুল্লাহ হল বার্ষিকীতে সমাজ সংস্কৃতি বিষয়ে নিয়মিত প্রবন্ধ লেখেন।
শিক্ষাজীবন শেষে সরকারের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে সরকারি হিসাবরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি জীবন শুরু করেন। চাকরি জীবনে কলকাতা, বর্ধমান এবং ৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর ঢাকায় চলে আসেন। কলকাতায় অবস্থানকালীন হাবীবুল্লাহ বাহার এবং শামসুন্নাহার মাহামুদ সম্পাদিত ‘বুলবুল’ পত্রিকা পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৩৯ সালে তিনি বরিশাল অঞ্চলে অভিজাত পরিবারের সন্তান বেগম সুফিয়া এন হোসেনের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। কামালউদ্দীনের সঙ্গে সুফিয়ার বিয়েটা বিদ্রোহ কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রস্তাবেই হয়েছিল। বিদ্রোহী কবি প্রায়শ সওগাত অফিসে এসে পড়েন। এমনই এক দিন শুভাকাঙ্ক্ষীদের আলোচনায় সব কথা শুনে তিনি নির্দিধায় বলেন, ‘সুফিয়াকে কামালউদ্দীনের সঙ্গে বিয়ে দিতে, কথাটা সবাই ভালো করে বোঝার আগেই কবি ঝড়ের মতো যেভাবে এসেছিলেন তেমনি ঝড়ের মতোই চলে গেলেন। বিবাহ-পরবর্তী সময়ে যিনি বিখ্যাত সাহিত্যিক সর্বজন শ্রদ্ধেয় বেগম সুফিয়া কামাল হিসেবে সুপরিচিত। ইতিপূর্বে তার বিবাহ হয়েছিল। এক সন্তানের মা হওয়ার পর তিনি বিধবা হন। সে সন্তানের নাম আমেনা (দুলু) কামাল উদ্দীন খান ছিলেন তার দ্বিতীয় স্বামী।
এ সম্পর্কে বেগম জওশন আরা রহমান লিখেন, ‘নব পরিণীতা মামানী সুফিয়া কামালকে নিয়ে মামা কামালউদ্দীন খান নিজ বাড়ি চুনতী গ্রামে আসলেন। মায়ের মুখে শুনেছি মামানী আমার নানার বাড়ির প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেই এক মুঠো মাটি কপালে ঠেকিয়ে বলেছিলেন, এ মাটি আমার তীর্থ ভূমি। এ পরিবারের সঙ্গে আমার সম্পর্ক যাতে চিরদিন সুমধুর থাকে এই প্রার্থনা করি।’
বলাবাহুল্য যে, তারা দীর্ঘ সুখী দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করেন। তাদের মোট পাঁচ সন্তান রয়েছে। তারা হলেন যথাক্রমে শাহেদ আহমদ কামাল, আহমদ কামাল, সাজেদ কামাল, সুলতানা কামাল ও সাঈদা কামাল।
ব্রিটিশ ও পাকিস্তান সরকারের হিসাব ও নিরীক্ষা বিভাগের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হয়েও কামালউদ্দীন খান বাঙালির স্বাধিকার প্রতিষ্ঠায় ছিলেন একনিষ্ঠভাবে নীরব একজন কর্মী, ফলে কোনো সরকারই তার প্রতি সুবিচার করেননি। তার কাজের যথাযথ মূল্যায়নও হয়নি। বরং পদে পদে হেনস্তার শিকার হয়েছেন। কিন্তু কখনো আপন দেশ-জাতির সেবার মনোভাবের কোনো বদল ঘটাননি এবং নিজে যেমন, তেমনি কবি সুফিয়া কামালকেও প্রভাবিত করেননি। পেশাগত জীবনে যেমন ওয়াসায় কাজ করেছেন, তেমনি আত্মিক টানে পালন করেছেন বিখ্যাত ফ্রাঙ্কলিন বুক সোসাইটি প্রতিষ্ঠায় বিশেষ ভূমিকা। তাছাড়া ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠাতায়ও তার ভূমিকা রয়েছে।
কামালউদ্দীন খানের লেখালেখির জগৎ একরৈখিক নয়, বহুমাত্রিক প্রবন্ধ, কবিতা, সনেট, একাঙ্কিকা, ছোটগল্প, অনুবাদ, সাহিত্য সমালোচনা, গ্রন্থ পর্যালোচনা সবই তার লেখালেখির জগৎকে সমৃদ্ধ ও চিৎপ্রকর্ষমণ্ডিত করেছে। তার অনুবাদ দক্ষতাও তাকে বিশিষ্টতা দান করেছে। শিশু সাহিত্যিক হিসেবেও তিনি অনবদ্য, ছোটদের জন্য তার অনুবাদ প্রন্থ ‘পরদেশিয়া’ অসাধারণ। এ ছাড়া কামালউদ্দীনের জ্ঞান-সাধনার মধ্যে সুফিবাদী ধারার প্রভাব স্পষ্ট। তার জীবনচরণ ও অবয়বের মধ্যেও এক রকমের সুফি ও ঋষিভাব লক্ষণীয়। জ্ঞান চর্চা ও আধ্যাত্মিক সাধনার সমন্বিত ধারা তার পারিবারিক ঐতিহ্যের অংশ।
তার প্রকাশনা তালিকা দেখলে বোঝা যায় যে, তিনি কতটা মননশীল, উদার যুক্তিবাদী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। তিনি নীরবে সাহিত্যচর্চার মাধ্যমে তার যুক্তিবাদী মননশীলতার পরিচয় রেখে গেছেন। সর্বোপরি বেগম সুফিয়া কামালের খ্যাতির পেছনে তার যে নীরব ভূমিকা ছিল সে কথাই বলাবাহুল্য। আমাদের সাহিত্যের ইতিহাসে কামালউদ্দীন খান একজন উজ্জ্বল প্রতিভা।
ধর্ম, সমাজ, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান বিষয়ে কামাল উদ্দীন খান শতাধিক মৌলিক প্রবন্ধ লিখেছেন। নানা মনীষীর ইংরেজি রচনার বাংলা অনুবাদও করেছেন। উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় বিভিন্ন কারণে তার রচনাবলি সুষ্ঠুভাবে সংরক্ষণ করা যায়নি। সাহিত্যিক হিসেবে তার প্রকাশিত প্রবন্ধ ও গ্রন্থের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা এখানে প্রদান করা হলো। যদিওবা এ তালিকা পরিপূর্ণ নয়।
একাঙ্কিকা: ‘অতি বিবাহ’, জয়তী, বৈশাখ ১৩৩৭, কলিকাতা।
প্রবন্ধ: ‘সভ্যতার উত্তরাধিকার’, শিখা, পঞ্চমবর্ষ ১৩৩৮, ঢাকা।
ছোটগল্প: ‘যে জীবন সম্ভোগস্পৃহায়’ জয়তী, ১৩৩৭।
প্রবন্ধ: ‘বস্তু রহস্য’ বুলবুল, ভাদ্র-অগ্রহায়ণ ১৩৪০, কলিকাতা, ‘আধুনিক আল কিমিয়া’, বুলবুল, শ্রাবণ ১৩৪৩।
অনুবাদ: ‘The Reconstruction of Religious Thought in Islam’ by Sir Muhammad Iqbal. ‘ইসলাম ধর্মীয় চিন্তার পুনর্গঠন’, পাকিস্তান পাবলিকেশনস, ঢাকা-১৯৫৭।
অনুবাদ: Six Lectures on the Reconstruction of Religious Thought in Islam and Is Religion Possible? by Sir Allama Iqbal, Oxford University Press। ওই গ্রন্থের ভূমিকা এবং চতুর্থ, ষষ্ঠ ও সপ্তম পরিচ্ছেদের অনুবাদ।
অনুবাদ: ‘কোয়েটা’, রূপময় পশ্চিম পাকিস্তান, পাকিস্তান পাবলিকেশনস, জ্যৈষ্ঠ ১৩৭০।
কবিতা: ‘ওরে পথহারা অন্ধ’ ‘নিশি যে কাটিতে নাহি চায়’, ‘নিশীথের প্রিয়তমা’ বুলবুল পত্রিকা ও শামসুল হুদা সম্পাদিত ‘কয়েকটি কবিতা’ সংকলন ১৯৪৬।
সনেট : ‘আজি তুমি গৃহলক্ষ্মী’ আবদুল কাদির সম্পাদিত ‘সনেট শতক’, পৌষ ১৩৮০ প্রভৃতি।
‘সওগাত’ সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন তার স্মৃতিচারণে বলেন, ‘কামালউদ্দীন খান ছিলেন এক প্রতিভাধর লেখক। সাহিত্যে তার অবদান আছে অথচ মূল্যায়নের সুযোগ মেলেনি। তার লেখা ছিল ঋদ্ধ; সমৃদ্ধ। কিন্তু তিনি খুব বেশি লেখেননি। খালুজান মনে হয় ত্যাগই স্বীকার করেছেন স্ত্রীর জন্য। সুফিয়া কামালকে সম্পূর্ণ কবি সাহিত্যিক ও প্রগতিশীল চিন্তা চেতনার মানুষ হতে কামালউদ্দীন খান নিজস্ব চিন্তা ত্যাগ করতেও দ্বিধা করেননি। বেগম সুফিয়া কামাল কবিখ্যাতি ও জনসেবক হিসেবে জনপ্রিয়তা অর্জনে তার অকুণ্ঠ সমর্থন সর্বাত্মক সহযোগিতা ত্যাগেরই প্রকৃষ্ট উদাহরণ।’
পঞ্চাশের দশকের শেষের দিকে বেগম সুফিয়া কামাল ও কামালউদ্দীন খান সবুজ গাছগাছালিতে ঘেরা একতলা বাড়ি ৬৫৮ এ, ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, ৩২ নম্বর রাস্তায় চলে আসেন। ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের ‘সাঁঝের মায়া’ নামক বাড়িটি ছিল লেখক সাহিত্যিকদের আড্ডা ও মিলন ক্ষেত্র। অত্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন এ বাড়িটিতে সকাল-সন্ধ্যা দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মুক্তিচিন্তার আধুনিকমনস্ক, দেশাত্মবোধে উজ্জীবিত মানুষদের আসা যাওয়ায় মুখরিত ছিল।
সওগাত সম্পাদক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন তার স্মৃতিচারণে বলেছিলেন, “তারাবাগ ছেড়ে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে কামালউদ্দিন ‘সাঁঝের মায়া’য় উঠে আসলেন। সীমানা ছাড়িয়ে জীবন নির্ভরতার প্রশস্ত প্রাঙ্গণে তখনো কামাল উদ্দীন খান একইভাবে সচেতন সতর্ক সংগঠক। মুখমণ্ডল আর শুভ্র দেহাবয়ব বিশিষ্ট যে মানুষটি তারাবাগের প্রকৃতিঘেরা পরিবেশে বাস করতেন, তিনি তার পারিবারিক শুচিস্নিগ্ধ পরিবেশ তৈরি করে নতুন বাসাটিকেও প্রকৃতির বনানী কিংবা বাগিচায় পরিণত করেছিলেন, এই বাসর বারান্দায় সুফিয়া কামাল মহিলা পরিষদ, ছায়ানট ইত্যকার নানা সংগঠনের কর্ণধার হিসেবে তৎপর থেকেছেন। নিরত এই উদার বাস্তববাদী মানুষটি নীরবেই কিংবা আড়ালেই থেকে গেছেন। কেউ জানেননি তার কীর্তির কথা ও কাজ।’
প্রগতিশীল সাহিত্যিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব সমাজ ও রাষ্ট্রের এবং জীবন কর্মে গভীর ও স্বচ্ছ দৃষ্টিসম্পন্ন মানবিক ও অসাম্প্রদায়িক চিন্তা চেতনার অগ্রণী পুরুষ কামালউদ্দীন আহমদ খান ৪ কার্ত্তিক ১৩৮৩ বাংলা ৪ অক্টোবর ১৯৭৭ সালে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের ‘সাঁঝের মায়া’ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন।
তিনি সামাজিক ও আর্থিক মর্যাদায় অভিজাত পরিবারের সন্তান হলেও ব্যক্তিজীবনে ছিলেন অনুকরণযোগ্য সৎ, নিরহংকার, সজ্জন। সেকি সামাজিক ও বংশগৌরবের দেয়াল তুলে নিজেকে জাহির করা বিকৃত রুচিতে আসক্ত ছিলেন না মোটেই। তিনি আজীবন মনুষ্যত্বের সাধনা করে গেছেন। তিনি বিশ্বাস করতেন ‘জ্ঞান সাধনার ভেতরে মানুষের জন্য অনন্ত কল্যাণ নিহিত রয়েছে।’ ফলে তিনি হয়ে উঠেন বাঙালির চিন্তাবিচার কিংবা মানবিক বোধের জাগরণের এক মহান ঋত্মিক।
কামালউদ্দীন খানের মতো একজন নীরব মানবকল্যাণ সাধকের মহতী জীবন সেই কথাটিই আমাদের প্রজন্মের জন্য জীবনী শক্তি হিসেবে কাজ করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।