ঢাকা ২৪ মাঘ ১৪৩১, শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
English
শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৪ মাঘ ১৪৩১

দেখা হয় না

প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫৯ এএম
আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ পিএম
দেখা হয় না

দীর্ঘদিন একটা ভুল বিশ্বাস ছিল
মনে হতো একদিন
কোনো না কোনো এক শহরের রাস্তায়
হঠাৎ আমাদের দেখা হয়ে যাবে। 

একবার ভিয়েনায় মনে হয়েছিল
একটু পরেই তুমি আসবে, আমি তাই
দানিয়ুব নদীর পাড়ের রেস্তোরাঁয়
তিন ঘণ্টা তোমার প্রতীক্ষায় বসে ছিলাম।

সেবার রোমের ট্রেভি ঝরনার বুকে
ধাতব মুদ্রা ছুড়ে দেবার মুহূর্তে মনে হয়েছিল
এই শহরে এত মানুষের সাথে দেখা হলো
এবার নিশ্চয়ই তোমার সাথে দেখা হবে।

আর তোমার শহরে গিয়ে তো আমি
একবারও হোটেল থেকে বাইরে যাইনি
পাছে তুমি আমার খোঁজে এসে 
না পেয়ে ফিরে চলে যাও! এয়ারপোর্টে
তোমাকে না দেখেও খুব অবাক হয়েছিলাম। 

চলতি পথে হঠাৎ করে 
কত মানুষের সাথে দেখা হয়
যাদের সাথে জীবনে আর কোনো দিন
দেখা না হলেও কোনো ক্ষতি হতো না!

বহুবার এমন হয়েছে
তুমি আমি একই শহরে আছি
অথচ আমাদের কখনো দেখা হয়নি!

এভাবে একই শহরে অনেকবারই থাকব
কিন্তু আমাদের দেখা হবে না।

ঘরে ফেরা সোজা নয়: আসাদ চৌধুরী

প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:৫৮ পিএম
ঘরে ফেরা সোজা নয়: আসাদ চৌধুরী
আসাদ চৌধুরী

গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, স্মৃতিকথা- যা কিছুই তিনি লিখেছেন, দেশভাগের ক্ষত, দীর্ঘশ্বাস, হাহাকার ও অশ্রু চুঁইয়ে বেরিয়েছে। গল্পকার হিসেবে তার খ্যাতি ও কীর্তি বিস্ময়কর। ছোটগল্পকে সঙ্গী করে কথাসাহিত্যে তার অভিযাত্রা, বিস্তার ও প্রসিদ্ধি। গল্প অনেকেই লেখেন, লেখালেখির শুরুতে গল্প দিয়ে আরম্ভ করে ক্রমশ উপন্যাসের দিকে ঝুঁকে পড়েন।…

‘ঘরে ফেরা সোজা নয়’ তার একটি গ্রন্থের নাম। তিনি নিজেও আর ঘরে ফিরতে পারলেন না! ঘর থেকে হাসপাতালে গেলেন, কিন্তু কিছুতেই ঘরে ফেরা হলো না তার। সোজা তো নয়ই, কিছুতেই নয়! কবিতার বইয়ের নামটি জীবনের সঙ্গে সত্য করে দিলেন তিনি। কবিরা তো সৃজন-ঈশ্বর, তাই তারা আগে ভাগেই অনেক কিছু বলে দেন। বলে দিতে পারেন। তিনি যেন কোথায় গেলেন, আর দেখা যাবে না তার ঘরে, মঞ্চে, পর্দায়, পথে; আর খাবেন না ‘তবক দেওয়া পান’। রবীন্দ্রনাথের মতো ৮০ বছরের সমান বয়সী হয়ে অনন্তলোকের দিকে যাত্রা করলেন তিনি, তিনি সমকালীন বাংলা কবিতার খ্যাতিমান কবি, প্রাবন্ধিক, শিশুসাহিত্যিক, অনুবাদক, জীবনী লেখক, ভ্রমণ লেখক, ভারী কণ্ঠের বক্তা, আবৃত্তি শিল্পী, দেশসেরা উপস্থাপক, মুক্তিযোদ্ধা, বাংলা একাডেমির ফেলো, সাবেক পরিচালক, সদাহাস্যোজ্জ্বল, রসিক, বাংলাদেশের অসাধারণ প্রকৃতি ও ঐতিহ্য-রঙের এক দীর্ঘ সাক্ষীসুতো আসাদ চৌধুরী। নদী মেখলা বরিশালে জন্ম নেওয়া কবি, শেষনিঃশ্বাস ফেললেন তার দ্বৈত নাগরিকের দেশ কানাডার অশোয়া শহরের লেক রিজ হাসপাতালে। মরণব্যাধি রোগ ব্লাড-ক্যানসার কেড়ে নিল তাকে। রোগকেও দোষ দিয়ে লাভ নেই, তার জীবন এখানেই শেষ হবে হয়তো লেখা ছিল। জীবনের বাতি সবারই নিভে যাবে এক এক করে কিন্তু কিছু কিছু মানুষের চিরতরে চলে যাওয়া অনেকেরই মন ভীষণ খারাপ করে দেয়! আমিও বিষণ্ন, বিমর্ষ, বিস্মিত, বিপন্ন বোধ করছি, কারণ কবি তো বটেই, তার চেয়ে বেশি বড় আমাদের প্রজন্মের অভিভাবক, আরও খুলে বললে, স্নেহদড়ি লাগিয়ে রাখা যেন একজন সিনিয়র ফ্রেন্ড অর্থাৎ একসঙ্গে দীর্ঘ পথ চলা বন্ধু। এই বন্ধুবৎসল কবি ও অভিভাবকের সঙ্গে শেষ দেখাটি হলো না, যদিও শেষ দেখা বলে কিছু নেই। কিন্তু প্রথমবারের মতো কানাডায় গিয়ে, ঠিক এক মাস আগে তার শেষ অবস্থানের খুব কাছের মহাসড়ক দিয়ে অর্থাৎ টরন্টো থেকে মন্ট্রিয়েল দুবার যাতায়াত করেও দেখা করতে পারিনি সময়ের অভাবে। এমনকি সর্বশেষ বাংলাদেশ থেকে যখন অসুস্থ হয়ে কানাডায় ফিরে যান, তার কয়েকদিন আগেই আমাকে সেল ফোনে কল করেছিলেন। আমি সময়ের অভাবে ধরতে পারিনি? হায়রে সময়! পরে যখন তাকে ফোন করব, তখন তিনি হাসপাতাল থেকেই চলে গেছেন স্ত্রী-ছেলেমেয়েদের কাছে। টরন্টোয় অনুষ্ঠিত আমার অগ্রজ কবি ও সাংবাদিক সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলালের বড় মেয়ে অনাদি নিমগ্নের বিয়েতে এসেছিলেন তার বড় ছেলে আসিফ ও মেয়ে শাওলি, তাদের সঙ্গে দেখা হলো, কথা হলো, তার খোঁজখবর নিলাম। ওরা বলল, একদিন এসে বাবাকে দেখে যান। কিন্তু যাওয়া হলো কই? সেপ্টেম্বরের ৫ তারিখে কানাডা থেকে উড়াল দিলাম বাংলাদেশে আর ঠিক এক মাস পর ৫ অক্টোবর তার সুদূরের দেশে ফিরে যাওয়ার খবর পেলাম... মনটা বৃষ্টির জলে যেন ভিজে গেল অথবা তুষের আগুনের মতো ভিতরটা পুড়তে থাকল...

কবি আসাদ চৌধুরী তার বর্ণাঢ্য কর্মের জন্য ৮০ বছর বয়সেও রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ স্বাধীনতা পুরস্কার পাননি, তাতে কী। মরণোত্তর হয়তো পাবেন? পেয়েছেন তো একুশে পদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারসহ দেশের অসংখ্য সেরা সেরা পুরস্কার ও পদক। তবে ইতিহাসের অপরিহার্য গ্রন্থ ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’ ও জাতির পিতার জীবনীগ্রন্থ ‘সংগ্রামী নায়ক বঙ্গবন্ধু’ গ্রন্থদ্বয়ের অসাধারণ পরিশ্রম ও মননের জন্য জীবিতাবস্থায় স্বাধীনতা পুরস্কারটি পেলে তৃপ্তি পেতেন একথা বলা যায়। আসলে প্রকৃত লেখকরা কোনো প্রাপ্তির আশায় সৃজনে থাকেন না, কিংবা বলা যায় তাদের আকাঙ্ক্ষা কম। সেই আসাদ চৌধুরীও নির্লোভ। তার মুখ দেখলে কখনো মনে হয়নি তার এটি পেতেই হবে। কিন্তু তিনি লিখে গেছেন নিরন্তর। তার ১৮টি কবিতার বইসহ মোট গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় ৪১টি। কয়েকটি বইয়ের নাম দেখুন কী সুন্দর- ‘তবক দেওয়া পান (১৯৭৫)’, ‘বিত্ত নাই বেসাত নাই (১৯৭৬)’, ‘প্রশ্ন নেই উত্তরে পাহাড় (১৯৭৬)’, ‘জলের মধ্যে লেখাজোখা (১৯৮২)’, ‘যে পারে পারুক (১৯৮৩)’, ‘মধ্য মাঠ থেকে (১৯৮৪)’, ‘মেঘের জুলুম পাখির জুলুম (১৯৮৫)’, ‘দুঃখীরা গল্প করে (১৯৮৭)’, ‘নদীও বিবস্ত্র হয় (১৯৯২)’, ‘বাতাস যেমন পরিচিত (১৯৯৮)’, ‘বৃন্তির সংবাদে আমি কেউ নই (১৯৯৮)’, ‘কিছু ফল আমি নিভিয়ে দিয়েছি (২০০৩)’, ‘ঘরে ফেরা সোজা নয় (২০০৬)’। এই শেষ কাব্যগ্রন্থটির নাম দিয়েই লেখা শুরু করেছিলাম, দেখুন তার কাব্যগ্রন্থের নামগুলো যেমন সুন্দর, তেমনি তার কবিতা অসংখ্য পাঠককে সুন্দরের শীর্ষে নিয়ে যায়। তার লেখা একটি প্রেমের কবিতা দিয়েই শেষ করি: আপনারা শুধু কবি আসাদ চৌধুরীর এই ক’টা কবিতা পড়েন, দেখুন কতটা আপনাকে নাড়াবে? ‘রিপোর্ট ৭১’, ‘শহীদদের প্রতি’, ‘প্রথম কবি তুমি প্রথম বিদ্রোহী, ‘বারবারা বিডরালকে’, ‘সত্যি ফেরারি’। শেষ করি তার একটি কবিতার চরণ দিয়ে: 

‘কোন ঘাসে ছিল 
দুঃখ তোমার     
কোনে ঘাসে ছিল
প্রেম
কোথায় ছিলেন 
রূপালি জ্যোৎস্না
ঢের সূর্যের হেম
কখনো নদীতে 
সোনালি গীতিকে
একথা বলেছিলেম’।

বাকেরগঞ্জের ঘাস, নদী, গীতি, ঢাকার প্রেম আর অসোয়ার জ্যোৎস্না গায়ে মেখেই কবি আসাদ চৌধুরী হারিয়ে গেলেন সুদূরের কোন নদীতে কিংবা ঘাসের বিছানায়। আর হবে না দেখা, কথা। বুকে হাহাকার লাগছে আসাদ ভাই, বিদায়।

বইমেলায় প্রথম সপ্তাহে নির্বাচিত ২৪ বই

প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:১৯ পিএম
আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:১৮ পিএম
বইমেলায় প্রথম সপ্তাহে নির্বাচিত ২৪ বই

প্রতিটি বই একটি পৃথিবী। বই হলো বিনোদন ও শিক্ষার মাধ্যম। আর বইমেলা হলো জ্ঞানের উৎসব। এই উৎসবে অক্ষরের পর অক্ষর বসিয়ে শব্দ তৈরিতে, আর লিখিত শব্দগুলো একটি সেতুতে পরিণত হয়। যা আমাদের সাহিত্যযাত্রার অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎকে সংযুক্ত করে। আমাদের জনগণের চেতনা সংরক্ষণ, উদযাপন এবং বিশ্বের সঙ্গে সেতু তৈরি করে বইয়ের পাতা।...

উন্নতি উত্থান ও অভ্যুত্থান
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী 
শ্রেণি: প্রবন্ধ ও সমালোচনা
প্রকাশনী: কথাপ্রকাশ, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৫
পৃষ্ঠা: ২৪০; মূল্য: ৫০০ টাকা

এই বইয়ের সাতটি প্রবন্ধের প্রত্যেকটির ভেতরই অনেকগুলো গল্প আছে। গল্পগুলো কল্পিত নয়, বাস্তবিক। অর্থাৎ প্রতিটি গল্পের পেছনেই ইতিহাস রয়েছে। সাত প্রবন্ধের একটি হচ্ছে ‘উন্নতি, উত্থান ও অভ্যুত্থান’। সেটি দিয়েই বইয়ের নামকরণ। উন্নয়ন ঘটেছে; উত্থানও ঘটছে; কিন্তু সেটা কাদের উন্নতি, কেমন উন্নতি, বড় প্রশ্ন কিন্তু সেটাই। আমাদের দেশেও ফ্যাসিবাদী সরকার ভেবেছিল উন্নয়ন দেখিয়ে গণতন্ত্রের দাবিকে দাবিয়ে রাখবে। তবে পারেনি। ফ্যাসিবাদ তো দু-চারজন শাসকের ব্যাপার নয়; এ হচ্ছে সারা বিশ্বের সমস্যা।


অপ্রকাশিত চিঠিপত্র
সৈয়দ মুজতবা আলী 
শ্রেণি: ডায়েরি ও চিঠিপত্র সংকলন
প্রকাশনী: কবি প্রকাশনী, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৫
পৃষ্ঠা: ৯৬; মূল্য: ২৫০ টাকা

সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখা ৩৭টি দুর্লভ অপ্রকাশিত চিঠি একত্রিত হলো এই সংকলনে। বহু বিখ্যাত বাঙালি ব্যক্তিত্বকেই মুজতবা আলী নিজে নিয়মিত চিঠি লিখতেন, পৃথিবীর নানা প্রান্তে থাকা তার ভক্ত-পাঠকদের পাঠানো চিঠির জবাবও পত্রাকারে দিতে কার্পণ্য করতেন না। মওলানা ভাসানী, আবু সয়ীদ আইয়ুব, কামরুদ্দীন আহমদ, আবদুল কাদিদের মতো সুপরিচিত মানুষদের কাছে লেখা তার চিঠি এই সংকলনে মিলবে। পাওয়া যাবে তার জীবনের কতিপয় অজানা কৌতূহলোদ্দীপক অধ্যায়ের সন্ধানও।

স্বৈরতন্ত্র প্রতিরোধের পথ: রাষ্ট্র সংস্কার ও সংবিধান সংশোধন
নজরুল ইসলাম
শ্রেণি: রাজনীতি, সংবিধান ও সংবিধান প্রসঙ্গ
প্রকাশনী: প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা
প্রকাশকাল: ২০২৪ (বইমেলা: ২০২৫)
পৃষ্ঠা: ১৫৬; মূল্য: ৪২০ টাকা

২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটেছে। প্রবল হয়েছে জনগণের বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা। এ জন্য রাষ্ট্র সংস্কার ও সংবিধান সংশোধন খুবই জরুরি। কিন্তু কোন প্রক্রিয়ায় এ সংস্কার করা হবে তা নিয়ে আলোচনা চলছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিত সামনে রেখে এ বইয়ে রাষ্ট্র সংস্কার ও সংবিধান সংশোধন নিয়ে সুচিন্তিত পর্যালোচনা ও প্রস্তাব করা হয়েছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রকাঠামোর সংকটগুলো কী এবং এ থেকে উত্তরণের উপায় কী হতে পারে- এমন অনেক প্রশ্নের উত্তর রয়েছে এ বইয়ে।

লাল সালাম: বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি
গঠনসংগ্রাম: ১৯৪৭-১৯৭১
মতিউর রহমান
শ্রেণি: রাজনৈতিক গবেষণা ও প্রবন্ধ
প্রকাশনী: প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৫
পৃষ্ঠা: ৪৪৮; মূল্য: ৭০০ টাকা

১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত কমিউনিস্ট পার্টির দলিলপত্র ছাড়াও এই বইয়ে রয়েছে সে সময়ের নানা ঘটনার পর্যালোচনা। উঠে এসেছে দেশভাগের পর থেকে কৃষক আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের বিস্তারিত দিক এবং কমিউনিস্ট পার্টির ভূমিকা। ষাটের দশকব্যাপী ছাত্র ও গণ-আন্দোলন থেকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে কমিউনিস্ট পার্টির সংশ্লিষ্টতার বর্ণনা রয়েছে এখানে। ১৯৪৮ সালে এ অঞ্চলের কমিউনিস্ট পার্টির গঠনপর্বের নানা সংগ্রাম এবং রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের মধ্য দিয়ে পার্টির কঠিন যাত্রাপথের বর্ণনা দিয়েছেন লেখক।


মহিলা মুক্তিযোদ্ধা
ফরিদা আখতার (সম্পাদিত)
শ্রেণি: নারী মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনা
প্রকাশনী: আগামী প্রকাশনী, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৫
পৃষ্ঠা: ১৫৬; মূল্য: ৪৫০ টাকা

১৭ ডিসেম্বর, ১৯৯০ তারিখে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহিদ মিলারে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসের একটি নতুন সূচিত হয়েছে। এই দিন মহিলা মুক্তিযোদ্ধারা সমবেত হয়েছিলেন এক অপূর্ব সমাবেশে। যারা বন্দুক হাতে যুদ্ধ করেছেন, আহতদের সেবার জন্য যুদ্ধক্ষেত্রের হাসপাতালে যারা নিয়োজিত ছিলেন, যারা মুক্তিযোদ্ধাদের রান্না করে খাইয়েছেন, যারা বিদেশে থেকে দেশের জন্য কাজ করেছেন, যারা নিজের সন্তানকে, স্বামীকে যুদ্ধে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দিয়েছেন- সেসব মহিলা মুক্তিযোদ্ধা সমবেত হয়েছিলেন তাদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে শোনাতে।

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ: অগ্রন্থিত চিঠিপত্র তাঁর লেখা, তাঁকে লেখা
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
শ্রেণি: ডায়েরি ও চিঠিপত্র সংকলন
প্রকাশনী: প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৫
পৃষ্ঠা: ১৭৬; মূল্য: ৪৭০ টাকা

নানা প্রয়োজনে এবং কুশল বিনিময়ের অংশ হিসেবে ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ স্বজন-পরিজন ও বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে চিঠি লিখেছেন। তাকেও লিখেছেন অন্যরা। ১৯২৬ সাল থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত অগ্রন্থিত চিঠি নিয়ে এই বই। ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক এসক চিঠি শহীদুল্লাহর ব্যক্তিজীবনের নানা দিক এবং সেই সময়ের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতার টুকরো পরিচয় তুলে ধরে। চিঠিগুলোতে পাণ্ডিত্যের ভাবমূর্তির আড়ালে এক সন্তানবৎসল পিতা ও মমতাময় স্বামী শহীদুল্লাহকেও পাওয়া যায়।


চীনদেশে কয়েকবার
হাসনাত আবদুল হাই
শ্রেণি: নানাদেশ ও ভ্রমণ
প্রকাশনী: আগামী প্রকাশনী, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৫
পৃষ্ঠা: ৩০৮; মূল্য: ৯৯৭ টাকা

চীনদেশ অন্য দেশের মানুষকে সব সময় আকর্ষণ করেছে তার বিপুল সম্পদের জন্য। কমিউনিস্ট বিপ্লবের আগে পাশ্চাত্যের এমন কোনো দেশ ছিল না, যেই দেশ সেই দেশে শোষণ-শাসনের জন্য উপনিবেশের ঘাঁটি গড়ে তোলেনি। মাও সে তুংয়ের নেতৃত্বে ত্রিশ বছরব্যাপী যে বিপ্লব হয় তার উদ্দেশ্য শুধু চীনকে বিদেশি শাসন-শোষণ থেকে মুক্ত করা নয়, মার্কসবাদের ভিত্তিতে একটি শোষণমুক্ত সমাজ গড়ে তোলা। প্রথম থেকেই দেশ গড়ার কৌশল নিয়ে অতি বাম এবং অতি ডানপন্থিদের মধ্যে মতানৈক্য ছিল। মাও সে তুং যতদিন বেঁচে ছিলেন অতি বামপন্থিরাই সে দেশের নীতিনির্ধারণ করেছে।...

আমিই রাষ্ট্র: বাংলাদেশে ব্যক্তিতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্র
আলী রীয়াজ
শ্রেণি: রাজনৈতিক গবেষণা ও প্রবন্ধ
প্রকাশনী: প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা 
প্রকাশকাল: ২০২৪ (বইমেলা: ২০২৫)
পৃষ্ঠা: ১১২; মূল্য: ২৪৪ টাকা

পনেরো বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ স্বৈরতান্ত্রিক শাসনে পিষ্ট হয়েছে, যা ক্রমান্বয়ে হয়ে উঠেছিল ব্যক্তিতান্ত্রিক। রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়ে ব্যক্তিই হয়ে উঠছিল রাষ্ট্র। ব্যক্তিতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্রের লক্ষণগুলো কী? কীভাবে এই ধরনের শাসনের উত্থান ঘটে? রাজনীতি ও সমাজের কোন উপাদানগুলো ব্যক্তিতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্রের পথ সুগম করে? এক ঐতিহাসিক ক্রান্তিলগ্নে দাঁড়ানো বাংলাদেশের রাজনীতি ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ বুঝতে আগ্রহীদের জন্য অবশ্যপাঠ্য এই বই।


গণপ্রতিরক্ষা
ফরহাদ মজহার 
শ্রেণি: বিবিধ বিষয়ক প্রবন্ধ
প্রকাশনী: আগামী প্রকাশনী, ঢাকা
প্রকাশকাল: ২০২৪ (বইমেলা: ২০২৫)
পৃষ্ঠা: ২৮০; মূল্য: ৪০০ টাকা

বাংলাদেশ ‘অরক্ষিত’। বাংলাদেশ সব দিক থেকেই শত্রু পরিবেষ্টিত। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় বাংলাদেশ কীভাবে টিকে রয়েছে সেটাই বিস্ময়। ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে, পরাশক্তির মধ্যে দ্বন্দ্ব ও বিরোধ তীব্র হচ্ছে| জায়নিস্ট কলোনিয়াল রাষ্ট্র ইসরায়েল গাজায় বোমা নিক্ষেপ ও নির্বিকার গণহত্যা চালিয়ে বিশ্বকে স্তম্ভিত করে দিয়েছে। কোনো পরজীবী গণবিচ্ছিন্ন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের জনগণকে রক্ষা করতে পারবে না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সাফল্যের পেছনে ছিল সৈনিক-জনতার মৈত্রী। চাই গণপ্রতিরক্ষাব্যবস্থা।...


শূর্পণখা
হরিশংকর জলদাস
শ্রেণি: পৌরাণিক ও কিংবদন্তি উপন্যাস
প্রকাশনী: কথাপ্রকাশ, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৫
পৃষ্ঠা: ২৫৬; মূল্য: ৭০০ টাকা

‘শূর্পণখা’ হিংস্র নরখাদক বলশালী রাক্ষসের কাহিনি নয়, এ এক অনার্য জনজাতির কাম-লোভ-ক্রোধ-ভালোবাসা-প্রতিশোধ-প্রতিরোধের বৃত্তান্ত। রাবণ আপন বোন শূর্পণখার স্বামীকে নিধন করল কেন? এর পেছনে কি কোনো কূটচাল আছে? শূর্পণখা কি স্বামীনিধনের শোধ নিল? সীতাহরণের ফল কী দাঁড়ালো? রাবণের জ্বলন্ত চিতার সামনে দাঁড়িয়ে শূর্পণখা অশ্রুহীন থাকল কেন? পাঠকের এসব প্রশ্নের উত্তর ধারণ করেই হরিশংকর জলদাসের উপন্যাস ‌শূর্পণথা’।...


শেখ হাসিনার পতনকাল
আসিফ নজরুল
শ্রেণি: রাজনৈতিক ইতিহাস
প্রকাশনী: প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৫
পৃষ্ঠা: ২৫৬; মূল্য: ৪৫০ টাকা

এই গ্রন্থে চিত্রিত হয়েছে শেখ হাসিনার শাসনকালে বাংলাদেশের রাজনীতি, দুঃশাসন, আইনের অপব্যবহার, দমন-পীড়ন, নির্বাচনব্যবস্থার ধ্বংসসাধন, মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিচারব্যবস্থার দলীয়করণ, শিক্ষাঙ্গনে অরাজকতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও উন্নয়নের নামে অনৈতিকতার চর্চা, ভারততোষণ এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নানা দিক। এ বইটি দশটি অধ্যায়ে বিভক্ত। ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রকাশিত এসব নিবন্ধ। এ বইয়ের শেষ অধ্যায়ে রয়েছে সেই ঝুঁকিপূর্ণ সংগ্রামমুখর দিনগুলোর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা-অনুভূতির কথা।

সিক্রেটস
আন্দালিব রাশদী 
শ্রেণি: সমকালীন গল্প
প্রকাশনী: প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৫
পৃষ্ঠা: ৮০; মূল্য: ২৫০ টাকা

নারীর হৃদয় গোপনীয়তার গভীর সমুদ্র। যে নারীকে সবচেয়ে বেশি জানেন বলে আপনি দাবি করেন, আসলে তার কতটুকু জানেন? অতি সামান্যই, কিন্তু তার জীবনের বেশ কিছু গোপন অধ্যায় জানেন আন্দালিব রাশদী।...  ‘ছাব্বিশ বছর! আমার জন্মেরও সাত বছর আগে! আমার শরীরের ওপর থেকে ভার হঠাৎ নেমে গেল, স্যার পিছলে বিছানার ওপর পড়ে গেলেন। আমি দ্রুত উঠে কাপড় পরতে পরতে সুইচ অন করতেই ফ্লুরোসেন্ট লাইটের আলোতে ঘরটা ধবধবে হয়ে ওঠে। আঁতকে উঠি।... 


বিষাদ বসুধা
মোস্তফা কামাল
শ্রেণি: উপন্যাস
প্রকাশনী: সময় প্রকাশন, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৫
পৃষ্ঠা: ২০৮; মূল্য: ৪৮০ টাকা

কথাসাহিত্যিক মোস্তফা কামালের ‘বিষাদ বসুধা’ উপন্যাসের কাহিনি এমন- উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়ে মোহিনী। ভালোবেসে বিয়ে করে তারই বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী আরেফিনকে। গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের ছেলে আরেফিন। সমাজে উচ্চবিত্ত আর নিম্নবিত্তের যে সংঘাত সেটাই যেন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে মোহিনীদের পরিবারে। শুরু হয় মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব।... তার কর্মকাণ্ড বারবার বিব্রত হতে হয় মোহিনীকে। একপর্যায়ে মোহিনী যখন আরেফিনকে ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়;… তার পর… তার পর… পড়ে দেখতে হবে…

বাউল: শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ড. মুহম্মদ এমদাদ হাসনায়েন
শ্রেণি: কবিতা ও বাউলগান
প্রকাশনী: কণ্ঠধ্বনি প্রকাশনী, কুষ্টিয়া
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৫
পৃষ্ঠা: ৮০; মূল্য: ৫০০ টাকা

রবীন্দ্রনাথের অন্তরেও ছিল বাউলসত্তা। কুষ্টিয়ায় এসে তা পূর্ণতা পেয়েছে। বাউলদের সঙ্গে তিনি একাত্মা হয়েছেন, দেখেছেন। এমনকি বাউলের পোশাকও পরেছেন। রবীন্দ্রনাথকে বলা হতো খ্যাপা বাউলকবি। জোড়াসাঁকোর অভিজাত ঠাকুর পরিবারে না জন্মে কুষ্টিয়ায় জন্মগ্রহণ করলে তিনিও হয়তো বাউলের মতো একতারা হাতে গান গেয়ে খ্যাপার মতো ঘুরে বেড়াতেন। কেননা, বাউলদের অন্তরের প্রেরণা এবং রবীন্দ্রনাথের প্রেরণা যে এক! রবীন্দ্রনাথ মন্তব্য করেন, ‘...ইহাকে দেখিলেই এমনি আত্মীয় বলিয়া মনে হয় যে, কিছুমাত্র চিন্তা না করিয়া ইহাকে প্রাণের অন্তঃপুরের মধ্যে প্রবেশ করিতে দিই।’

নানা চোখে জীবনানন্দ
ফয়জুল লতিফ চৌধুরী (সম্পাদনা)
শ্রেণি: প্রবন্ধ সংগ্রহ
প্রকাশনী: কথাপ্রকাশ, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৫
পৃষ্ঠা: ৩৬৮; মূল্য: ৭০০ টাকা

জীবনানন্দ দাশ (১৮৯৯-১৯৫৪) বলেছিলেন, সকল দেশের সাহিত্যেই দেখা যায় একজন শ্রেষ্ঠতম কবির কাব্যে তার যুগ এমন মানবীয় পূর্ণতায় প্রতিফলিত হয় যে, সেই যুগের ইতস্তত বিক্ষিপ্ত পথে যেসব কবি নিজেদের ব্যক্ত করতে চান, ভাবে, ভাষায়, কবিতা, ইঙ্গিতে বা নিহিত অর্থে সেই মহাকবিকে এড়িয়ে যাওয়া তাদের পক্ষে দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। রবীন্দ্রনাথের মূল্যায়ন প্রসঙ্গেই জীবনানন্দ এই মন্তব্য করেছিলেন। জীবনানন্দের রচনাগুলোতে বহুকৌণিক বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে কবিতা, উপন্যাস ও প্রবন্ধ-নিবন্ধের স্বরূপ উদঘাটিত হয়েছে।

ভাষা আন্দোলনে: আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী
এম আবদুল আলীম 
শ্রেণি: ডায়েরি ও চিঠিপত্র সংকলন
প্রকাশনী: আগামী প্রকাশনী, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৫
পৃষ্ঠা: ১৪৮; মূল্য: ৪৫০ টাকা

ভাষা আন্দোলন ও একুশের গানের সঙ্গে ওতপ্রেতোভাবে মিশে আছে কবি, গীতিকার, যশস্বী সাংবাদিক আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীর নাম। ১৯৪৮ এ ১৯৫২; দুই পর্বের ভাষা আন্দোলনেই তিনি প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন। বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হন। ১৯৫৫ সালে শহিদ দিবস পালন করতে গিয়ে প্রায় এক মাস কারাভোগ করেন। বায়ান্নতে ভাষা শহিদ রফিক উদ্দিনের মস্তকবিহীন লাশ দেখে রচনা করেন একুশের অমর সংগীত আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি।...


গান্ধী-জিন্নাহর রাজনীতি ভারত-ভাগ
নূরুল ইসলাম
শ্রেণি: ঔপনিবেশকাল ও ভারত বিভাগ
প্রকাশনী: আগামী প্রকাশনী, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৫
পৃষ্ঠা: ৪৩২; মূল্য: ১১৯৭ টাকা

ইংরেজরা ভারতবর্ষ দখল করে এ দেশে তাদের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করে। তারা এখানে অনেক ইংরেজি স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে। এর ফলে এ দেশে একটি ইংরেজি শিক্ষিত সমাজ গড়ে ওঠে। তারা ভারতীয়দের স্বার্থ রক্ষার জন্য গঠন করেন সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস (১৮৮৫)। এর বিশ বছর পরে ভারতের ইংরেজি শিক্ষিত মুসলমানরা তাদের সম্প্রদায়ের কল্যাণের জন্য গঠন করেন নিখিল ভারত মুসলিম লীগ (১৯০৬)।...

গৌতম বুদ্ধ
জ্যোতি বিকাশ বড়ুয়া
শ্রেণি: স্মৃতিকথা, ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব, সাক্ষাৎকার
প্রকাশনী: কথাপ্রকাশ, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৫
পৃষ্ঠা: ১৬৬; মূল্য: ৪০০ টাকা

বাংলায় অসংখ্য বৌদ্ধগ্রন্থ রয়েছে। এসব গ্রন্থে বুদ্ধজীবন ও তার প্রচারিত ধর্মের ইতিবৃত্ত নানাভাবে প্রকাশিত। এর মধ্যে রয়েছে তথ্যসংবলিত ও গবেষণামূলক বড় বড় গ্রন্থ। কিন্তু সাধারণ মানুষের পাঠোপযোগী বা সহজপাঠ্য প্রামাণ্য বুদ্ধজীবনী খুব একটা চোখে পড়ে না। সেই ঘাটতি মেটাতে জ্যোতি বিকাশ বড়ুয়ার এই বই। গ্রন্থটি ঐতিহাসিক তথ্য ও উপাদানের ওপর ভিত্তি করে রচিত হলেও বুদ্ধজীবনের পূর্ণাঙ্গ 
বিবরণ নয়।...

ভারতের রাজনৈতিক দল
অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক 
শ্রেণি: আন্তর্জাতিক রাজনীতি
প্রকাশনী: ইউপিএল, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৫
পৃষ্ঠা: ২১৪; মূল্য: ৫৬০ টাকা

অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের পিএইচডি অভিসন্দর্ভ পলিটিক্যাল পার্টিস ইন ইন্ডিয়ার বাংলা অনুবাদ ভারতের রাজনৈতিক দল। উপনিবেশিক আমলে উপমহাদেশে রাষ্ট্রক্ষমতা কীভাবে চর্চিত হতো এবং হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক রাজনীতির উদ্ভব ও ফলাফল সন্ধান অধ্যাপক রাজ্জাকের অন্যতম আগ্রহের জায়গা। এই গ্রন্থে উপনিবেশিক ইতিহাসকে যে প্রেক্ষাপট থেকে দেখেছেন, তা একই সঙ্গে ছিল অভিনব ও যুগান্তকারী।...

বাংলাদেশ জনপদের ইতিহাস ও সংস্কৃতি
ভেলাম ভান সেন্দেল
শ্রেণি: ইতিহাস-প্রসঙ্গ বাংলাদেশ
প্রকাশনী: ইউপিএল, ঢাকা
প্রকাশকাল: ২০২৪ (বইমেলা: ২০২৫)
পৃষ্ঠা: ৪৮২; মূল্য: ৯৩০ টাকা

বিখ্যাত ডাচ নৃবিজ্ঞানী ভেলাম ভান সেন্দেল লিখিত A History of Bangladesh বাংলাদেশের ইতিহাস বিষয়ে বিশ্বব্যাপী অন্যতম পঠিত গ্রন্থ। প্রথাগত বর্ণনামূলক ইতিহাসের বই এটি একদমই নয়, পাঠক বরং এই বইতে বাংলাদেশকে চিনবেন ভূখণ্ডটির যাবতীয় জটিলতা, বৈচিত্র্য ও গতিশীলতা দিয়ে। বাংলাদেশকে বোঝার জন্য ভেলাম ভান সেন্দেল যেমন সমকালীন তথ্য ও তত্ত্ব ব্যবহার করেছেন, তেমনই ভাষার সাবলীলতা ও উপস্থাপনার গুণে বইটি পড়ার অভিজ্ঞতাও দারুণ আনন্দময়।...

বাংলাদেশের উর্দু সাহিত্য
আসাদ চৌধুরী
শ্রেণি: অনুবাদ কবিতা
প্রকাশনী: ঐতিহ্য, ঢাকা
প্রকাশকাল: ২০২৪ (বইমেলা: ২০২৫)
পৃষ্ঠা: ১৫২; মূল্য: ৩৩০ টাকা

আমৃত্যু আসাদ চৌধুরী ছিলেন বাংলাদেশে উর্দু সাহিত্যের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক এবং অকৃত্রিম অনুরাগী। তিনি বাংলাদেশি উর্দু কবিদের সুপ্রচুর কবিতা অনুবাদ করেছেন এবং এখানকার উর্দুভাষী কবি-লেখকদের মূলধারার সাহিত্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করতে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। তাঁর মৃত্যুর কিছু আগে ঐতিহ্যকে দিয়ে যাওয়া এই পাণ্ডুলিপি বাংলাদেশে উর্দু সাহিত্যচর্চায় বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।


বিষয় দস্তইয়েফস্কি
মশিউল আলম (অনুবাদক)
শ্রেণি: সাহিত্য ও সাহিত্যিক বিষয়ক প্রবন্ধ
প্রকাশনী: মাওলা ব্রাদার্স, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৫
পৃষ্ঠা: ২০৮; মূল্য: ৪৫০ টাকা

বিশ্বজুড়ে সর্বাধিক পঠিত সাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম এই রুশ লেখককের জন্ম হয়েছিল রাশিয়ার মস্তো শহরে ১৮২১ সালে। ১৯৮১ সালে তার মৃত্যুর পর ৪০ বছর পেরিয়ে গেছে; তবু আজও পৃথিবীর দেশে দেশে কোটি কোটি মানুষ তার বইগুলো পড়ে। দস্তইয়েফস্কির জীবন ও সাহিত্য সম্পর্কে ১০টি প্রবন্ধের অনুবাদ দিয়ে সাজানো হয়েছে এই বই। প্রবন্ধগুলো অনুবাদ করা হয়েছে রুশ ও ইংরেজি থেকে। এসব প্রবন্ধে দস্তইয়েফস্কির প্রধান উপন্যাসগুলো সম্পর্কে গভীর ও বিশদ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ রয়েছে।...

সিন্ধু সভ্যতা
রমজান আলী আকন্দ
শ্রেণি: সমাজ ও সভ্যতা
প্রকাশনী: প্রতীক প্রকাশনা সংস্থা, ঢাকা
প্রকাশকাল: ২০২৪ (বইমেলা: ২০২৫)
পৃষ্ঠা: ১৬০; মূল্য: ৩০০ টাকা

প্রাচীনকালে সিন্ধু ও ইরাবতী নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে সিন্ধু সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে সিন্ধু সভ্যতা আবিষ্কারের পর ভারতীয় সভ্যতা প্রাচীন মিসর ও সুমেরীয় সভ্যতার সমকালীন পর্যায়ে পৌঁছে। পণ্ডিতদের মতে, সিন্ধু সভ্যতা প্রাচীন মিসরীয় সভ্যতার সমসাময়িক কিংবা আরও প্রাচীন। এই সভ্যতার প্রাপ্ত নিদর্শন থেকে মনে হয় সিন্ধু, হরপ্পা, লুথাল, সুদকাজেনদোড়, কোনটাসি এবং অরও অনেক নগরকে কেন্দ্র করে সিন্ধু সভ্যতা গড়ে উঠেছিল।...

সংবাদপত্রে জুলাই অভ্যুত্থান
আহম্মদ ফয়েজ
শ্রেণি: আন্তর্জাতিক রাজনীতি
প্রকাশনী: আদর্শ, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৫
পৃষ্ঠা: ৫৬০; মূল্য: ২০০০ টাকা

এটি যতটা না বই, তার চেয়ে বেশি ঐতিহাসিক প্রামাণ্য দলিল। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসজুড়ে হয়ে যাওয়া ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। এই ঘটনার রাজনৈতিক তাৎপর্য ব্যাপক। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই সময়ে ব্যাপক নিয়ন্ত্রণ ও দলীয় দালালির ফলে গণমাধ্যমের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। কাগজে ছাপা সংবাদপত্রের গুরুত্ব ক্রমান্বয়ে কমতে থাকলেও ২০২৪ সালের জুলাইয়ে এসে সংবাদপত্র হঠাৎ করেই যেন ফিরে পেয়েছিল পুরানো জৌলুস।...

গ্রন্থনা: ড. মুহম্মদ এমদাদ হাসনায়েন

একজন শক্তিমান কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস

প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০৫ পিএম
একজন শক্তিমান কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
আঁকা: নিয়াজ চৌধুরী তুলি

কথাসাহিত্যিক শওকত আলীর মতে, ‘আখতারুজ্জামানের রচনা লেখার ভেতর দিয়ে আমাদের প্রতিদিনের জীবনযাপনের জগৎটির মধ্যেই যে আরও নানান দেখবার ও বুঝবার দিক আছে আমরা তা নতুন করে আবিষ্কার করতে পারি। জীবন ও জগৎকে দেখবার একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি আবিষ্কার করি।’…

বাংলা সাহিত্যে বহু বাঁকবদলের ভেতর দিয়ে আসা আখতারুজ্জামান ইলিয়াস। তার গল্প-উপন্যাসের মতোই প্রবন্ধগুলোও একটানা পড়া যায় না কিংবা পড়েই মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলা যায় না। ভাবতে-ভাবতে পড়তে হয়, আবার পড়তে-পড়তে ভাবতে হয়। কখনো ঝাঁকুনি দিয়ে নিজের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। নিজের সম্পর্কে ইলিয়াস বলতেন, তিনি চব্বিশ ঘণ্টার লেখক। জন্ম ১৯৪৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন রংপুর ও বর্তমান গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা থানার গোটিয়া গ্রামের মাতুলালয়ে। মৃত্যু ১৯৯৭ সালের ৪ জানুয়ারি। পিতা বদিউজ্জামান মোহাম্মদ ইলিয়াস এবং মাতা মরিয়ম ইলিয়াস। ইলিয়াস সম্পর্কে কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক বলেছেন, ‘ইলিয়াসের উপন্যাস প্রকৃতপক্ষেই বিশ্বমানের, নোবেল পুরস্কার পেয়ে থাকেন যেসব কথাসাহিত্যিক, তিনি ছিলেন সেই মাপেরই লেখক।’ পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী বলেছেন, ‘কী পশ্চিম বাংলা, কী বাংলাদেশ সবটা মেলালে তিনি শ্রেষ্ঠ লেখক। 

ধারাবাহিক উপন্যাস মোহিনী

প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:৫৮ এএম
আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ পিএম
মোহিনী
অলংকরণ: নিয়াজ চৌধুরী তুলি

ষষ্ঠ পর্ব

প্রশাসন এবং পুলিশ খুবই ভালো কাজ করেছে। বিস্ময়কর মনে হয়েছে আমার কাছে। 
তাই, বলিস কি! আনোয়ারা বেগম বিস্ময়ের সঙ্গে বললেন।

মোহসীন আহমেদ বললেন, মোহিনী ঠিকই বলেছে। তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সরকারকে একেবারে ডুবিয়ে দিয়েছে। লোকটা কোনো কাজের না। কথাও বলতে পারে না ঠিকমতো। প্রধানমন্ত্রী না হলে যে কি হতো! মনে নেই এই লোক এর আগে কী করেছিল? 

আনোয়ারা বেগম ও মোহিনী তাৎক্ষণিকভাবে মনে করতে পারছিলেন না। তারা মোহসীন আহমেদের দিকে তাকিয়ে থাকেন। মোহসীন আহমেদ বিরক্তির ভঙ্গিতে বললেন, তোমরা সব ভুলে যাও। গত বছর ডেঙ্গুর প্রকোপে ঢাকার নাস্তানাবুদ অবস্থা ছিল। সেই সময় সে স্ত্রীকে নিয়ে বিদেশে চলে গিয়েছিল না! এই খবর মিডিয়ায় আসার পরপরই প্রধানমন্ত্রী তাকে দেশে ফিরিয়ে এনেছিলেন। লোকটা কিছু বলে মনে হয় না।

মোহিনী বললেন, আমারও তাই ধারণা। টিভিতে তার কথাবার্তা শুনি তো! আমার কাছে লোকটাকে ভাঁড়ের মতো মনে হয়। কী বলে না বলে!

বাদও তো দেয় না। আনোয়ারা বেগম বললেন। 
মোহসীন আহমেদ বললেন, আমাদের দেশে মন্ত্রিত্ব একবার পেলে কেউ আর ছাড়তে চায় না। আচ্ছা, আমাদের কথায় আবার ফিরে আসি। আনোয়ারা এবার তুমি বলো, আমরা যেভাবে চালাচ্ছি। মানে করোনার সময় কারও কোনো কাজ নেই। কিন্তু বেতন দিয়ে যাচ্ছি। এটা কি ঠিক আছে? নাকি বেতন কমিয়ে দেব!

আপাতত থাক। ডিসেম্বর পর্যন্ত যেভাবে আছে সেভাবেই চলুক। এর পরও যদি করোনা অব্যাহত থাকে তখন বেতন কমানোর কথা চিন্তা কোরো। 
মোহিনী, তোমার কী মত? মোহসীন আহমেদ জানতে চাইলেন। 
আমিও মা’র বক্তব্যের সঙ্গে একমত।

মোহসীন আহমেদ বললেন, তাহলে এটাই সিদ্ধান্ত। আমরা ডিসেম্বর পর্যন্ত বেতন দিয়ে যাব। এর পরও করোনা থাকলে বেতন কমানোর সিদ্ধান্ত নেব। 
আনোয়ারা বেগম ও মোহিনী সম্মতিসূচক মাথা নাড়ল। মোহসীন আহমেদ আনোয়ারা বেগমকে উদ্দেশ করে বললেন, তোমার সুচিন্তিত মতামতের জন্য ধন্যবাদ।

মোহিনী মুচকি হাসলেন। তার পর নিজের কক্ষের দিকে চলে গেল। আনোয়ারা বেগমও উঠে চলে যান। মোহসীন আহমেদ ব্যক্তিগত নোটবই বের করে সিদ্ধান্তটি লিখে রাখলেন। 

বিকেলে নিজের কক্ষে শুয়ে শুয়ে গান শুনছেন মোহিনী। রবীন্দ্রসংগীত তার বড় প্রিয়। আরও প্রিয় জয়তী চক্রবর্তীর কণ্ঠে যখন এই গানটি শোনে। 

নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে রয়েছ নয়নে নয়নে। 
হৃদয় তোমারে পায় না জানিতে 
হৃদয়ে রয়েছ গোপনে হে। 

আহা! কী দরদ দিয়ে যে জয়তী গানটি গেয়েছেন চিন্তাই করা যায় না। গানটি যে মোহিনী কতবার শুনেছেন! যত শোনেন ততই শুনতে ইচ্ছা করে। একেবারে হৃদয় ছুঁয়ে যায়। গান শুনতে শুনতেই তার মনে পড়ে শাহবাজ খানের কথা। কিশোরী বয়সের ভালোলাগা, ভালোবাসা। কখন ভালো লেগেছিল আবার কখন সেই ভালোবাসা নিমিষেই বিলীন হয়ে গেল বুঝতেই পারলেন না। তার পর কেটে গেল অনেক বছর। 

হঠাৎ একদিন শাহবাজ মোহিনীর অফিসে এসে হাজির। মোহিনী ভূত দেখার মতো তাকে দেখছেন। কিছুই বলছেন না। এতদিন পর এলেন অথচ ও তাকে বসতেও বলছেন না! তার পর তিনি শাহবাজের মুখে শুনলেন, আমি এখনো তোমাকে ভুলতে পারছি না মোহিনী। অনেক চেষ্টা করেছি। মা-বাবার ইচ্ছায় বিয়ে করে সংসার জীবন শুরু করেছি। তাও প্রায় পনেরো বছর কেটে গেছে। অথচ স্ত্রীকে ঠিক ভালোবাসার মানুষ হিসেবে পাইনি। সব সময় ভাবতাম, সে তোমার মতো হবে। কিন্তু না। সে কিছুতেই তোমার মতো নয়। অবশ্য সে তো অন্য একটা মেয়ে। তোমার মতো হবে কি করে! কী হলো মোহিনী? কিছু বলো!

মোহিনী শাহবাজের কথাগুলো চোখ বন্ধ করে শুনলেন শুধু। কিছুক্ষণ সময় নিলেন। তার পর তিনি হা হা হা করে হাসলেন।

শাহবাজ বিস্ময়ের সঙ্গে বললেন, তুমি হাসছ! হ্যাঁ হাসবেই তো। এই বয়সে আমার ছেলেমানুষি সাজে না। অথচ তোমাকে দেখে আমি সেই কিশোর বয়সে চলে গেছি! সত্যি বলছি। বিশ্বাস করো।  
মোহিনী আবার হাসলেন। হা হা হা। 
তার পর পাগলের মতো আরও কিছু কথা বলে চলে গেলেন। যাওয়ার সময় শুধু বললেন, আমি আবার আসব। 
মোহিনী বিস্ময়ের সঙ্গে শাহবাজ খানকে দেখেন। আর মনে মনে বলেন, সত্যিই সে পাগল হয়ে গেল! 
শাহবাজ খান আবারও মোহিনীর কাছে এলেন। আবারও বললেন, আমি তোমাকে ভালোবাসি মোহিনী! তোমার কথা আমি কিছুতেই ভুলতে পারছি না। কিছুতেই না। তুমিই বলে দাও আমি কি করব!

শাহবাজ খানের কথাগুলো বারবার মোহিনীর মনে পড়ে। তিনি মনে মনে ভাবেন, ও কেন আবার অতীতে ফিরতে চায়? কী হবে অতীতে ফিরে গিয়ে? কিশোর বয়সে কতজনকেই তো ভালো লাগে। সবাইকে কি জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেওয়া যায়! যে জীবন শুরুই হয়নি; সে জীবন নিয়ে নতুন করে ভাবার অবকাশ কোথায়! তাছাড়া ওর তো একটা সংসার আছে! সেখানে আমি কেন? না না! এ হয় না! শাহবাজ ভুল করছে। ভুল পথে পা বাড়িয়েছে। আমার জন্য তিন তিনটি জীবন বিপন্ন হতে পারে না। আমি অতটা অমানবিক হতে পারব না।

শাহবাজের নামটা তার মন থেকে মুছে ফেলতে চান মোহিনী। কিন্তু ইচ্ছা করলেই কি আর সবকিছু মুছে ফেলা যায়!  


শাহবাজ খান পাগলের মতো ছোটাছুটি করেন। তিনি কখনো নিবিড় পরিচর্যা কেন্দের সামনে যান। স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। চোখ বন্ধ করে স্ত্রীর কথা ভাবেন। তার চোখের সামনে নানা স্মৃতি ভেসে ওঠে। তিনি আবেগাপ্লুত হন। মনে মনে বলেন, নীলিমা আমার জীবন থেকে চলে যাবে! কেন যাবে? এত অভিমান কেন হলো ওর? আমি কি খুব অবিচার করেছি? আমি কি ওকে ঠকিয়েছি? না তো! আমি কেবল আমার ছোটবেলার বান্ধবীর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করতে গিয়েছি। আর তো কিছু করিনি। নীলিমা কী ভেবেছে, আমি পরকীয়ায় জড়িয়েছি! নাকি নীলিমাকে কেউ প্ররোচিত করেছে? নিশ্চয়ই ভুল বুঝেছে নীলিমা। বড্ড অভিমানী মেয়ে সে। আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে। আমার সঙ্গে অন্য কোনো মেয়ের বন্ধুত্ব কিছুতেই সে মানতে পারে না। সন্দেহবাতিকও তার বেশ প্রবল। যদি অন্য কোনো মেয়ের সঙ্গে প্রেমে জড়িয়ে যাই! সেই ভয়ে সে সব সময় তটস্থ থাকে।

শাহবাজ খান নিজেকেই নিজে দোষারোপ করেন। আমি কেন তাকে বুঝতে পারলাম না। সে একটা ভুল ধারণা নিজের ভেতরে পুষে রাখল! আর আমি কিছুই টের পেলাম না! এটা আমার অযোগ্যতা। আমি স্বামী হিসেবে ব্যর্থ। স্ত্রীর মন বুঝতে পারলাম না। কেন তার ভেতরের যন্ত্রণা আঁচ করতে পারলাম না!

শাহবাজ খান চিকিৎসক দলের প্রধানের কক্ষে গিয়ে আকুল ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করেন, ডাক্তার সাহেব রোগী বাঁচবে তো! আমি কিচ্ছু জানি না ডাক্তার সাহেব! আপনি যে করেই হোক রোগীকে বাঁচান! যত টাকা লাগুক। আমি আমার সব সম্পদের বিনিময়েও যদি আমার স্ত্রীকে ফিরে পাই; তাহলে আমি সেটাই চাই। ওকে বাঁচাতে না পারলে আমার সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাবে। আমার সাজানো সংসার তছনছ হয়ে যাবে। আমার সন্তান দুটির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে যাবে। আমি ওদের মুখের দিকে তাকাতে পারি না। হু হু করে কান্না আসে। ডাক্তার সাহেব আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন! 
চলবে...

আগের পর্ব পড়তে ক্লিক করুন-

পর্ব-১

পর্ব-২

পর্ব-৩

পর্ব-৪

পর্ব-৫

সৈয়দ মুজতবা আলী: বাংলা সাহিত্যের ধ্রুব

প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:৫৬ এএম
সৈয়দ মুজতবা আলী: বাংলা সাহিত্যের ধ্রুব
আঁকা: নিয়াজ চৌধুরী তুলি

সিলেট সফর শেষ করে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন আগরতলায়। আগরতলা থেকেই নীল রঙের খামে, নীল রঙের কাগজে কবির নিজ হাতে লেখা চিঠির উত্তর পেলেন মুজতবা আলী। রবীন্দ্রনাথ জবাব দিলেন, ‘আকাঙ্ক্ষা উচ্চ করিতে হইবে- এই কথাটার মোটামুটি অর্থ এই- স্বার্থই যেন মানুষের কাম্য না হয়। দেশের মঙ্গলের জন্য ও জনসেবার জন্য স্বতঃস্ফূর্ত উদ্যোগ কামনাই মানুষকে কল্যাণের পথে নিয়ে যায়। তোমার পক্ষে কী করা উচিত তা এতদূর থেকে বলে দেওয়া সম্ভব নয়। তবে তোমার অন্তরের শুভেচ্ছাই তোমাকে কল্যাণের পথে নিয়ে যাবে।’…

বই কিনে কেউ কখনো দেউলিয়া হয়নি!

বই সম্পর্কে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এমন সরল কিন্তু অন্তর্ভেদী মন্তব্য লিখেছেন সৈয়দ মুজতবা আলী। বিস্ময়কর প্রতিভার মহিমা নিয়ে তিনি জন্মেছিলেন এই পোড়া বাংলায় ১৯০৪ সালে। প্রয়াত হয়েছেন ১৯৭৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি। দীর্ঘ জীবন তিনি লুটেপুটে, নির্মাণে, শ্রমে-ঘামে, দেশে-বিদেশে যেমন উপভোগ করেছেন, তেমনি ছড়িয়ে রেখেছেন সৃজনশীলতার মহাস্বাক্ষর। জানতেন অনেক ভাষা।  ছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতনের ছাত্র, সান্নিধ্য পেয়েছেন মহাকবির। শান্তিনিকেতনের ছাত্র হওয়ার আগে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে যোগাযোগ সূত্র তৈরি হয় ১৯১৯ সালেই।

১৯১৯ সালে রবীন্দ্রনাথের সিলেট ভ্রমণের সময় ‘আকাঙ্ক্ষা’ শিরোনামের বক্তব্য শোনেন কিশোর মুজতবা আলী। জাদুকররা যেমন মন্ত্রমুগ্ধ করে, অনেকটা তাই। কিশোর মুজতবা খুব মনোযোগ দিয়ে স্থানীয় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে দেওয়া প্রাচ্যের জন্য গৌরব বয়ে আনা নোবেলজয়ী লেখকের বক্তৃতা শুনলেন। তার পর সাহস করে সপ্তাহখানেক পর গোপনে এক চিঠি লিখলেন কবিকে। চিঠিতে তিনি জানতে চাইলেন, ‘আকাঙ্ক্ষা উচ্চ করতে হলে কী করা প্রয়োজন?’

সিলেট সফর শেষ করে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন আগরতলায়। আগরতলা থেকেই নীল রঙের খামে, নীল রঙের কাগজে কবির নিজ হাতে লেখা চিঠির উত্তর পেলেন মুজতবা আলী। রবীন্দ্রনাথ জবাব দিলেন, ‘আকাঙ্ক্ষা উচ্চ করিতে হইবে- এই কথাটার মোটামুটি অর্থ এই- স্বার্থই যেন মানুষের কাম্য না হয়। দেশের মঙ্গলের জন্য ও জনসেবার জন্য স্বতঃস্ফূর্ত উদ্যোগ কামনাই মানুষকে কল্যাণের পথে নিয়ে যায়। তোমার পক্ষে কী করা উচিত তা এতদূর থেকে বলে দেওয়া সম্ভব নয়। তবে তোমার অন্তরের শুভেচ্ছাই তোমাকে কল্যাণের পথে নিয়ে যাবে।’

পথ রচিত হয়ে গেল চিঠিতে। ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে এই অঞ্চলে প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় আর সিলেটের সৈয়দ মুজতবা আলী যাচ্ছেন কলকাতায় শান্তিনিকেতনে, বোঝা যায় উল্টো স্রোতে চলতে লিখতে হাঁটতে দারুণ পছন্দ করতেন তিনি। নইলে কৈশোর উত্তীর্ণ সৈয়দ কেন যাবেন শান্তিনিকেতনে? শান্তিনিকেতনে যাওয়ার কারণেই তিনি বিশ্বকে পেয়েছিলেন হাতের মুঠোয়। ফলে মাত্র তেইশ বছর বয়সে সৈয়দ আফগানিস্তানের কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলেন শিক্ষক হয়ে মহামহিব রবীন্দ্রনাথের চিঠি নিয়ে।

আফগানিস্তানে দুই বছর অবস্থানের ফলাফল দুটি ‘দেশে বিদেশে’ এবং ‘শবনব’ উপন্যাস। কত প্রাঞ্জল আর তীক্ষ্ণ ভাষায় জীবনের প্রতিলিপি বর্ণনা করা যায় ক্ষুরধার কলমে, তার অকাট্য প্রমাণ ‘দেশে বিদেশে’ ভ্রমণসাহিত্য। প্রেম কত বিচিত্র অনুষঙ্গে মানুষের ভেতরের সুর, ছন্দ ও ব্যাকরণ পাল্টে দেয়, ‘শবনব’ উপন্যাস তারই জাজ্বল্যমান উদাহরণ। 

সৈয়দ মুজতবা আলী উপন্যাস লিখেছেন চারটি- অবিশ্বাস্য, শবনব, শহর-ইয়ার এবং তুলনাহীনা। ভ্রমণকাহিনি পাঁচটি- দেশে বিদেশে, জলে ডাঙ্গায়, ভবঘুরে ও অন্যান্য, মুসাফির ও বিদেশে। গল্পগ্রন্থ  ও রম্যরচনা- এক ডজন মানে বারোটি- চাচা কাহিনী, পঞ্চতন্ত্র, ময়ুরকণ্ঠী, টুনি মেম, দ্বন্দ্বমধুর, চতুরঙ্গ, বড় বাবু, দু-হারা, সত্য পীরের কলমে, বিচিত্রা, রায় পিথৌরার কলমে এবং যাত্রাপথে। প্রবন্ধ গ্রন্থ আটটি- ধূপছায়া, রাজা উজির, কত না অশ্রুজল, পরিবর্তনে অপরিবর্তনীয়, বাঙলাদেশ, উভয় বাঙলা, পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা, ভাষা সংস্কৃতি সাহিত্য। আত্মজীবনী লিখেছেন দুটি- দিনলিপি, গুরুদেব ও শান্তিনিকেতন। ঐতিহাসিক চরিত্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নায়ক জার্মানির হিটলারের জীবনীও লিখেছেন। তিনি কেন হিটলারের জীবনী লিখেছেন, আজ প্রশ্ন করা যায় কিন্তু উত্তর পাওয়া যাবে না। বইটি পাঠ করলে হয়তো একটা সুরাহা মিলতে পারে। 

পড়াশোনা করেছেন রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতন ছাড়াও আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়, জার্মানির বন বিশ্ববিদ্যালয় এবং মিসরের আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে। জার্মানির বন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সৈয়দ মুজতবা আলী পিএইচডি ডিগ্রি নেন তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বে। নিজেকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন বিশ্বময় জ্ঞানে মননে সৃষ্টিশীলতায়। 

সাদা চামড়ার বেনিয়াদের ব্রিটিশ শাসনের ফলে উপমহাদেশের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির করুণ ও ভয়াবহ চিত্র পাদটিকা গল্পে কয়েকটি লাইনে সৈয়দ মুজতবা আলী তুলে ধরেন অবিশ্বাস্য সৃষ্টিশীলতায়- পণ্ডিতমশাই বললেন, ‘বেশ বেশ। তবে শোন। মিম্বর উল্লার শালা বলল, লাট-সায়েবের কুত্তাটার পিছনে মাসে পঁচাত্তর টাকা খরচা হয়।… বলতো দেখি, যদি একটা কুকুরের পেছনে মাসে পঁচাত্তর টাকা খরচ হয়, আর সে কুকুরের তিনটে ঠ্যাং হয়, তবে ফি ঠ্যাঙের জন্য কত খরচ হয়?’… তাড়াতাড়ি বললুম, ‘আজ্ঞে, পঁচিশ টাকা।’ পণ্ডিতমশাই বললেন, ‘সাধু, সাধু।’ তার পর বললেন, ‘উত্তম প্রস্তাব। অপিচ আমি, ব্রাহ্মণী, বৃদ্ধা মাতা, তিন কন্যা, বিধবা পিসি, দাসী একুনে আটজন, আমাদের সবার জীবনধারণের জন্য আমি মাসে পাই পঁচিশ টাকা। এখন বল তো দেখি, তবে বুঝি তোর পেটে কত বিদ্যে, এই ব্রাহ্মণ পরিবার লাট-সায়েবের কুকুরের কটা ঠ্যাঙের সমান?’ আমি হতবাক। ‘বল না।’ আমি মাথা নীচু করে বসে রইলুম। শুধু আমি না, সমস্ত ক্লাস নিস্তব্ধ। পণ্ডিতমশাই হুঙ্কার দিয়ে বললেন, ‘উত্তর দে!’ মূর্খের মতো একবার পণ্ডিতমশাইয়ের মুখের দিকে মিটমিটিয়ে তাকিয়েছিলুম। দেখি, সে মুখ লজ্জা, তিক্ততা, ঘৃণায় বিকৃত হয়ে গিয়েছে। ক্লাসের সব ছেলে বুঝতে পেরেছে- কেউ বাদ যায়নি- পণ্ডিতমশাই আত্ম-অবমাননার কী নির্মম পরিহাস সর্বাঙ্গে মাখছেন, আমাদের সাক্ষী রেখে।

সৈয়দ মুজতবা আলীর দৃষ্টি ও সৃষ্টি কত গভীরে প্রোথিত ছিল, পাদটিকা গল্পের পণ্ডিতমশাইয়ের পরিস্থিতি পাঠ করলেই আমরা বুঝতে পারি। হাজার হাজার পৃষ্ঠা পড়ার প্রয়োজন হয় না। এখানেই তিনি বাংলা শিল্প সাহিত্যে সংস্কৃতির অসামান্য স্রষ্টা, চিরকালের প্রণম্য।