
কলেজে পড়ার হয়তো কোনো পথই ছিল না সিরাজের। তবু ও বহু কষ্ট করে টাকা জোগাড় করে কলেজের রঙিন গণ্ডিতে প্রবেশ করল। পড়াশোনায় সে খারাপ নয়। তবে সংগীত এবং আবৃত্তি তার প্রতিভার দুটি দিক।
কলেজ থেকে বারো মাইল দূরে এক ঝোপঝাড়ে ভরা কাদামাটির গ্রামে সিরাজের বাড়ি। বাড়ির অবস্থা এককালে ভালোই ছিল। বর্তমানে গ্রাম্য রাজনীতিতে সে অসহায়।
দুই দাদা ও দুই বৌদির কাছে বিধবা ভাগের মা এমন এক পরিস্থিতিতে পড়েছে, যেন বিশাল সমুদ্রের জলে মুখ বের করে মৃত্যুর চিন্তায় ব্যস্ত। কূল নেই। ভরসা নেই। ভরসা শুধু সহায়-সম্বলহীন সিরাজ শেখ।
সকাল থেকে ছেলে পড়িয়ে বাসে করে রোজ কলেজে আসে সিরাজ। বড়ই কষ্ট। কিন্তু কী করবে। রাজনীতির দাপট!
ময়ূরাক্ষী নদীর ধারে প্রাণ জুড়ানো হাওয়া। কখনো কখনো শুষ্ক বালিয়াড়ি ঝড়। ফাঁকা মাঠে বিরাট প্রাসাদ। সাঁইথিয়া অভেদানন্দ কলেজ।
গ্রামের ছেলে শহরের ছেলেদের সঙ্গে খুব একটা মিশতে পারে না। অবশ্য সে চেষ্টাও করে না। কোনোরকমে পাস করে ছোটখাটো একটা চাকরিই তার লক্ষ্য।
ভর্তির পর বেশ কয়েক মাস কেটে যায়। আসে সরস্বতী পুজো। ঠিক হয়েছে জলসা হবে। ক্লাসে ক্লাসে পড়েছে নোটিস।
সিরাজের ক্লাসের, অর্থাৎ এগারো ক্লাসের ছাত্রী শবরী ভালো গান করে। তার রবীন্দ্র সংগীতে অনেকেই মুগ্ধ। তার গানে মুগ্ধ পিন্টুও! পিন্টু শবরীর কাছে প্রস্তাব রাখে। রিকশা থেকে শবরী নামতেই পিন্টু বলে- কী শবরী নাম দেবে না?
-কীসে?
-কেন রবীন্দ্রসংগীতে।
-ফাংশানটা কবে?
-সরস্বতী পুজোর পরদিন।
-আমার ইচ্ছে নেই।
-কেন তোমার অত সুন্দর গলা। গলার অবমাননা করছ!
-আমার গান কবে শুনলেন?
-কেন যুব-উৎসবে।
-আমি রাতে এসে গাইতে পারব না।
-কেন তোমার অসুবিধা কী?
-বলতে পারছি না।
শবরী ধীরে ধীরে সিঁড়ি ডিঙিয়ে ক্লাসের দিকে এগোতে থাকে। পিন্টুও পিছু পিছু ক্লাসে ঢোকা মাত্রই মেয়েরা উচ্চস্বরে হেসে ওঠে। পিন্টু কিছুটা ইতস্তত বোধ করে বলে, তোমরা হাসছ কেন? হাসছ কেন?
শবরী রেগে ওঠে, বলে আমি গান গাইব না আপনার কিছু বলার আছে!
পিন্টুর মুখ লাল হয়ে যায়। বন্ধুদের কাছে সে হেরে যায়। ক্লাসে হাসির রোল পড়ে যায়।
সিরাজ কিন্তু সুযোগ খোঁজে। পিন্টু ক্লাস থেকে বেরোতেই তার হাতে একটা চিরকুট ধরিয়ে দেয়। পিন্টু নাক সিটকিয়ে বলে- আরে গেঁয়ো ভূত কী গাইবে!
পিন্টুর নাকসিটকানিতে সিরাজ হতাশ হলেও মরিয়া হয়ে বলে একবার চান্স দিন না।
পাশে দাঁড়িয়ে ছিল রাজকুমার, সে অবশ্য সিরাজকে আশ্বাস দেয়। সিরাজ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। বৈদ্যুতিক আলোয় জমকালো স্টেজে অনুষ্ঠান করার সুযোগ পায় সিরাজ। ভরাট গলায় গেয়ে ওঠে রবীন্দ্রসংগীত ‘ভরা থাক ভরা থাক’, মুগ্ধ হয়ে যায় কলেজের ছেলেমেয়েরা, চমকে ওঠে শবরী, কারণ সে কলেজের সেরা গাইয়ে। কিন্তু সিরাজের গলা তার চেয়ে অনেক ভালো।
গোপন তারে তারে টান পড়ে সিরাজের। তবে সে বড় লাজুক, লড়াকু নয়। মৃদু ইশারা সৃষ্টি হয় চোখের কোণে কোণে, মুখে লজ্জার ভাব থাকলেও সিরাজ একটু মরিয়া হয়ে ওঠে।
সেদিন ক্লাসের মধ্যে দারুণ হইচই পড়ে যায়, ডায়েরি থেকে শবরীর রঙিন ফটো চুরি হয়ে যায়। শবরীর মুখ-চোখ লাল হয়ে ওঠে, সব মেয়ের মধ্যে বেশ উদ্বেগের ভাব। শবরী যাদের সন্দেহ করে তাদের মধ্যে সিরাজ পড়েনি। কারণ একটা গ্রাম্য নিরীহ বালক কি কোনোদিন শহরে জাঁদরেল মেয়ের ছবি চুরি করতে পারে। একটা রহস্যের জাল ছড়িয়ে পড়ে সারা কলেজে। সিরাজ কলেজের আনন্দের স্বাদ পায়। সে পড়াশোনায় অসুবিধার জন্য বাসে যাতায়াত বন্ধ করে দেয়। এবং নেতাজী পল্লিতে একটা মেসে নিজের স্থান করে নেয়। কয়েকটি ছেলেকে পড়িয়ে যা আয় হয় তাই তার সম্বল, তবে তা থেকে মাকেও কিছু পাঠাতে হয়। মেসের সঙ্গী বলতে সমরেশ’দা সংগীতশিল্পী, সপ্তম আচার্য কাপড় ব্যবসায়ী আর বিমান বাবু রিটায়ার্ড অফিসার, সবাই সংস্কারমুক্ত, জাতিভেদ নেই, তিনজনেই খুব অভিজ্ঞ। মানুষকে ঘৃণা করার কোনো মানসিকতা তাদের নেই।
সমরেশবাবু সিরাজকে খুবই ভালোবাসে। তবে সিরাজের মনের কথা হয় বিমানবাবুর সঙ্গে, বিমানবাবুর সঙ্গে সম্পর্কটাও মধুর করে নিয়েছে। বিমানবাবুকে সে দাদু বলে।
বিমানবাবু কথায় কথায় বলে- কী হে প্রেমের থলিটা একটু দূরে ফেলে দাও।
সিরাজ মুচকি হাসে।
-তোমার এ কী ধরনের ভালোবাসা, কথা নেই শুধু ইশারা।
-বড় কঠিন ভালোবাসা দাদু।
-কঠিন কী হে, বড় বেদনাদায়ক।
চারজনের মেসের নাম ‘অভিশপ্ত মেস’। কেউই সংসার ধর্মে জড়িত হতে পারেনি।
প্রত্যেকের ফেলে আসা জীবন বড় বেদনাদায়ক। বিমানবাবুর পেনশনে চলে। সমরেশবাবু সংগীতের শিক্ষক, আর আচার্যবাবু কাপড়ের বোঝা নিয়ে স্টেশনে বসে থাকে। দুঃখের আঘাতে দুঃখ বিতাড়িত, শ্যামলা যৌবনের লেশ নেই এতটুকু। তাই মেসের নাম ‘অভিশপ্ত মেস’।
সিরাজের সব কথা, ভিতরের আন্দোলন- সবকিছুই সবাই জেনে ফেলে। সমরেশবাবু অবশ্য শবরীর সংগীতের শিক্ষক। সিরাজ একথা জানতে পারলে একটা মৃদু হাসি বেরিয়ে আসে। সমরেশবাবুর পেছন ধরে, সমরেশবাবুও বলে আমার সঙ্গে শবরীদের বাড়ি চল, তবে একটা কথা কি জানিস, ওরা সরকার পরিবারের মেয়ে। বিরাট বড় লোক, ওর প্রত্যাশা করা বৃথা। তারপর ওর বোধ হয় বিয়ে হচ্ছে একজন বড় বাস্তুকারের সঙ্গে।
-বাস্তুকার! কিছুটা শুনেছি,... আমি কোনো আশা নিয়ে যেতে চাই না।
-তাহলে?
-কারণ আমি তো বিধর্মী।
-সিরাজ। দেখাবার হলে বুকটা খুলে দেখাতাম তোকে।
-বুঝি সমরেশদা সবই বুঝি। কিন্তু ভালোবাসার অধিকার তো আমার আছে।
সন্ধ্যার পর রাস্তায় লাইট জ্বলে ওঠে। দুজনে বেরিয়ে পড়ে। শবরীদের বাড়িতে সমরেশবাবুর খুবই খাতির। শবরী সিরাজকে দেখে বাড়ির ভিতরে ঢুকে যায়। পর্দার আড়াল থেকে দুটো জ্বলন্ত চোখ এসে পড়ে সিরাজের ওপর। সিরাজের মুখের ওপর নীরবতার ছাপ। মলিনতার আলপনা, তার ওপর আবার রক্তের দাগ পড়ে যায় যখন শবরীর মা হাসতে হাসতে এসে বলে শবরীর বিয়ে ২৭শে বৈশাখ।
সমরেশবাবুর মুখ থেকে কৃত্রিম হাসি বেরিয়ে আসে। সিরাজের পরিচয় জিজ্ঞেস করে শবরীর মা। পরিচয়ে তার মুখটা একটু কুঁচকে যায়, জলখাবারের তেমন উৎসাহ দেখায় না। সিরাজ সম্পর্কে অনেক কথাই সমরেশবাবু বলে। কিন্তু শবরীর মা চুপচাপ শুনে যায়।
সমরেশবাবু বেশিক্ষণ বসে না, শবরীকে ডেকে আজ একটু কাজ আছে কাল আসব বলে বেরিয়ে পড়ে। শবরীর চঞ্চল চোখ দুটো পড়ে সিরাজের দিকে। তাকিয়ে থাকে রাস্তার দিকে, অতঃপর শবরী জানালার ধারে দাঁড়িয়ে সিরাজের পদক্ষেপ গুনতে থাকে।
সিরাজ গ্রাম থেকে ধাক্কা খেয়ে শহরে পেল যন্ত্রণা।
সারা রাতের ঘুম তার হারিয়ে যায়। শবরীর রঙিন বাঁধানো ছবিটা টাঙিয়ে রেখেছে ঠিক আয়নার পাশে। শুয়ে শুয়ে মুখ দেখে আয়নায়, পাশে শবরীর ছবি। সিরাজ রাতের খাবার না খেয়েই শুয়ে পড়ে। কিন্তু তার ঘুম নেই। মুখের ছবি পড়ে আয়নার চোখ দুটো শবরীর ছবিতে। সে আপন মনে বলে ওঠে- শবরীর জীবনে কত আনন্দ কত সুখ ফুটে উঠবে।
ফুলশয্যার রাত হয়ে উঠবে কত সুন্দর। শবরী একজনের কোলে ঢলে...
বিছানা থেকে উঠে বসে, দেওয়ালের মাঝ থেকে কোনো কথা আসে না। নীরব ঘরে শুধু নাইট বাল্বটা জ্বলতে থাকে।
সমরেশবাবু বলে ওঠে- কিছু খেলি না, রাত জাগিস না। মনকে বোঝা।
সিরাজ নিজেকে ঠিক বোঝাতে পারে না। সে নিজেকে নিয়ে যেতে চায় এক অন্ধকারময় পৃথিবীতে। সেও চলে যেতে চায় শবরীর সঙ্গে। শুধু পাশে পাশে থেকে ভালোবেসে নিজেকে শেষ করতে। তাই সে স্বপ্ন দেখে শবরী যেখানে থাকবে সেই ব্যান্ডেল থার্মাল পাওয়ার কলোনি। সিরাজ-এর ২৭শে বৈশাখের পর এভাবে দিন কাটতে থাকলে মেসের সবাই বলে- তোর অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে। তুই শেষ হয়ে যাবি। উত্তরে শুধু বলে, শেষ তো হয়ে গেছি। শেষ হওয়ার আর কিছু নেই।
অভিশপ্ত মেসকে বিদায় দিয়ে তাই বেরিয়ে পড়ে ব্যান্ডেলের দিকে। সম্বল কাঁধে একটা ব্যাগ। সংকল্প সেখানে প্রাইভেট পড়িয়ে খাবে। মেসের তিনজনের চোখে জল আসে। কারণ তাদের জীবনও অভিশপ্ত। ফেলে আসা জীবনের কথা মনে পড়ে তাদের।
শবরীর বিয়ের ছয় মাসের মধ্যে সিরাজ উপস্থিত হয় ব্যান্ডেলে। এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত ঘোরে একটু বাসস্থানের জন্য। অবশ্য শবরীর ঠিকানা বের করতে দেরি হয়নি। সেটা সে জোগাড় করেছিল সমরেশবাবুর মাধ্যমে।
তপ্ত রোদের বেলায়। পড়ন্ত বিকালে ঘোরে এখানে-সেখানে। অবশেষে এক কামারের বাড়িতে আশ্রয় চায়। কামারের বাড়িতে দুজন সদস্য। কামার নিবারণ কর্মকার এবং তার স্ত্রী সনকা।
প্রথমে বিফল হলেও আশ্রয় একটু জোগাড় করে। কারণ কামারের স্ত্রী জাতিতে ছিল মুসলমান। এখন কর্মকার। সিরাজ তার কাছে জাতি লুকোয় না। সহানুভূতির আলিঙ্গনে টানে সিরাজকে-
কোথায় বাড়ি?
-সাঁইথিয়া।
-সাঁইথিয়া।
সনকা যে মেয়েটির বাড়িতে কাজ করে তার বাড়িও সাঁইথিয়া। অবশ্য সে জানে সনকা হিন্দু। সনকা অবশ্য সিরাজকে তার পূর্ব ইতিহাস বলে না। সনকা কাউকেই বলেনি সেও বিতাড়িত।
সনকার সন্দেহ জাগে। সিরাজকে সব সময়েই উদাসীন দেখে। সে নিজের মতো করেই খাওয়ায়। বকে। উপদেশ দেয়। অবশ্য সিরাজ সনকাকে তার সমস্ত কথা না বলেও পারেনি। খুলে বলেছে। সনকার সহানুভূতি সিরাজকে মুগ্ধ করে।
সনকা কথায় কথায় শবরীকে বলে- সাঁইথিয়া থেকে একটা ছেলে এসেছে।
-সাঁইথিয়া থেকে? কী নাম?
-সিরাজ সেখ।
-সিরাজ! কিন্তু ও যে মুসলমান।
-তাতে কী আছে। মানুষ তো।
-সনকা।
শবরীর চোখ দুটো স্থির হয়ে যায়। যেন শবরী ঝাঁপ দিয়ে একটু এগিয়ে যেতে চায়।
-ভালো গান জানে।
-তাই।
-কবিতা পড়ে খুবই সুন্দর। আমাকে খুবই খাতির করে। বড় মায়াবী।
শবরী কোন কথা বলে না। বলে তাড়াতাড়ি কাজ করে নে। আমি একটু বাজারে যাব।
সনকা কাজ করে বাড়ি ফেরে। বেশ রাত। নিবারণ তাসের আড্ডায়। সিরাজ একটা লণ্ঠন জ্বেলে চুপ করে বসে আছে। চোখের সামনে তার দুটি রূপ, এক ভাগের মা যন্ত্রণায় ছটফট করছে। বেকার। ভূমি পরিত্যক্ত। অন্যদিকে প্রেয়সী। দুইয়ের মাঝখানে একটা চাবুক মারতে সে চায়।
-বৌদি একটু জল দেবে।
-কেন দেব না। জলের গেলাস এনে বলে- আজ তোমার কথা হচ্ছিল। তোমাকে গভীরভাবে ভালোবাসে।
-না বৌদি আর নয়।
-কেন তোমার আবার কী হলো।
-কিছু না। আমার ভালোবাসার মূল্য দিতে চায়।
-কী মূল্য দেবে?
মৃদু হাসে। সমরেশদা বলেছিল আমাদের এক সেকেন্ডের জীবনকে আমরা নিয়ে যাই পঞ্চাশ বছর। একশ বছরে। শুধু মায়ার টানে। কিন্তু এক সেকেন্ডেও তো শেষ করা যায়।
-সমরেশদা কে?
-আমার গুরু।
-তুমি হতাশ হয়ো না। কত মেয়ে পাবে।
-না বৌদি তা হলে ভালোবাসার মূল্য কোথায়?
-তুমি ভুল করো না।
রাতের খাবার তৈরিতে ব্যস্ত সনকা। সিরাজ ঘরের মধ্যে ঢুকে যায়। বেশ কিছুক্ষণ পর হঠাৎ সনকা চিৎকার করে ওঠে। পাড়া-প্রতিবেশীরা ছুটে আসে। নিবারণ হতভম্ব হয়ে যায়। সনকা চিৎকার করে কেঁদে ওঠে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পাড়ার লোকেরা তাড়াতাড়ি দেহটা পুড়িয়ে দেয় শ্মশানে নিয়ে গিয়ে। সনকার মধ্যে পোড়াতে দ্বিধা থাকলেও সে কিছু বলতে পারে না।
সনকা ব্যাগ খুলে দেখে শবরীর একটা রঙিন ছবি এবং একটি চিঠি-
শ্রীচরণেষু বৌদি,
আমার মৃত্যুর পর পারলে শবরীর হাতে চিঠিটা তুলে দেবে। এবং বলবে কলেজ জীবন হতে একটা অপদার্থ ছেলে যে ভালোবাসা বুকের মধ্যে বহন করে চলেছিল তার আজ চির সমাপ্তি। ভালোবাসার মূল্য ভোগের মধ্যে মাপা যায় না। শবরীকে সুখে থাকতে বলো। তুমি প্রণাম নিও।
ইতি-
সিরাজ
পরের দিন কাজ করতে গিয়ে সনকা চিঠিটা এবং ফটো দেখায়। অবশ্য সে নিবারণকে কোনো কথা বলেনি। শবরী ফটোটা দেখে বলে-এ ফটো আমার কলেজে চুরি হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু মারা গেল কেন।
-কী জানি। চোখের জল মোছে।
শবরীর বুকের ভিতর একটা বিরাট ঝড় ওঠে। সে তার স্বামীকে সরাসরি জিজ্ঞেস করে- আচ্ছা তুমি তো বিদেশি সভ্যতায় মানুষ। তোমাকে একটা কথা বলব,
এক শ’বার বল।
-এখন যদি কেউ আমাকে ভালোবাসে, আমার কী করা উচিত?
-সেটা তোমার ব্যক্তিগত ব্যাপার।
-তুমি হলে কী করবে?
-ভালোবাসা গভীর হলে নিশ্চয়ই বিয়ে করব।
-জান আমাকে একজন গভীরভাবে ভালোবাসত। সে কাল শেষ হয়েছে শুধু আমার জন্যই।
শবরীর স্বামী নিতাই বাবু বলে- এর জন্য দায়ী কে?
-আমি। কিন্তু তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে...।
-কিন্তু বিয়ের আগে?
-ভালোবাসাটা ছিল নীরব। শুধু ইশারার, কথায় নয়।
-যন্ত্রণাময় ভালোবাসা। উচ্চ সভ্যতায় প্রিয়, বিয়েটা কোন ফ্যাক্টর নয়।
-তুমি কি মন থেকে বলছ?
-তা হয়তো নয়। তবে একটা সমাজের কথা বলছি। যেখানে জিজ্ঞাসার কোনো প্রয়োজন নেই।
শবরীর চোখ দুটো স্থির হয়ে যায়। নষ্ট-পচা সমাজের ছবি দেখতে থাকে। অনেক দূরে সমুদ্রের পাড়ে গিয়ে আবার ফিরে আসে দৃষ্টি। শবরী আঁতকে ওঠে, চিতার আগুনের ছাই নিয়ে মুছে দিতে চায় সিঁদুর। সহিষ্ণুতা সতীত্বের বুকে হানে পদাঘাত। শবরী স্বপ্ন দেখে ভাঙার, স্বপ্ন দেখে পরিচ্ছন্ন, স্বচ্ছল সমাজের যেখানে কোনো বাধা নেই, যেখানে কোনো ভেদাভেদ নেই। যে সমাজ শুধু মানুষের।