কেরানির পোস্টে চাকরি করতেন কফিল উদ্দিন। অফিস থেকে ফেরার পথে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। কী তার অপরাধ, তিনি নিজেও জানতেন না। তবে চারদিকের পরিবেশ যে অশান্ত, তা টের পান। ছয় মাস কারাদণ্ড ভোগের পর জেল থেকে বেরিয়ে মুক্ত বাতাসে এসে প্রথম যে মুখটি তার মনে পড়ল তা হলো তার ছেলের মুখ। বিয়ের পর প্রায় পাঁচ বছর নিঃসন্তান ছিলেন তিনি। একটা সন্তানের জন্য ভয়াবহ হাহাকার ছিল তার। ফলে এই পাঁচ বছর যে বা যারা যা পরামর্শ দিয়েছেন তাই মাথায় সমাদরে নিয়েছিলেন। কবিরাজি থেকে শুরু করে তাবিজ-তুম্বা, ঝাড়ফুঁক কিছুই বাদ যায়নি। অবশেষে একদিন তার স্ত্রী সুখবরটা দেন। কিন্তু বিধি যদি আপনাকে নিয়ে পরিহাস করে আপনি যা চাইবেন ঠিক সেভাবে পাবেন না। ছেলেটি জন্ম নিল প্রতিবন্ধী হয়ে। তবুও তো বাবা হতে পেরেছেন। আনন্দে আটখানা তিনি। কোলেকাঁখে নিয়ে ঘুরতেন। নিজ হাতে খাওয়াতেন। রাতে বুকের ওপর নিয়ে শুতেন। পেশাব-পায়খানা নিজ হাতে পরিষ্কার করতেন। প্রতি বছর প্রতিবেশীদের নিয়ে হইহুল্লোড় করে তার জন্মদিন পালন করতেন। বিষণ্ন বিকেল। ছেলের মুখ ক্রমশ তীব্র থেকে তীব্রতর হলো।
কানাগলির ভেতর একটা টিনশেড বাসায় পুত্রপরিজনসহ থাকেন তিনি। দুটো ছোট্ট রুম। সারাক্ষণ ঝুপঝুপ অন্ধকার। বারান্দা বলতে কিছু নেই। এ রকম গুমোট পরিবেশও তাকে অনাবিল আনন্দ এনে দেয় যখন তিনি ছেলের সঙ্গে হাতিঘোড়া নিয়ে খেলায় মত্ত থাকেন। সেই খেলনাগুলো প্রায় নষ্ট ও বিবর্ণ হয়ে গেছে। ছেলের কথা ভেবে ফুটপাত থেকে একটা নতুন হাতি কিনলেন। হাতি সাধারণত কালো রঙের হয়; কিন্তু এই হাতিটা বেশ রংচঙা। ঘোড়া-ট্রেনও কিনতে মন চাইছিল, কিন্তু তার পকেট তাকে সাবধান করে। অগত্যা অপূর্ণতা নিয়েই বাসায় ফিরলেন। দরজা ভেজানো ছিল। বাইরে থেকে বউয়ের নাম ধরে গলা ফাটালেন; কিন্তু সাড়া মিলছিল না। কপালে চিন্তার ভাঁজ স্পষ্ট হলো। আস্তে করে দরজা ঠেললেন। জংধরা টিনের দরজা। ক্যাঁ-কোঁ শব্দ করে হাট হয়ে গেল। ভেতরে কাউকে দেখতে না পেয়ে মুখটা শুকিয়ে গেল তার। খোঁজাখুঁজি করলেন। ছেলেটাকে খাটের নিচে পেশাব-পায়খানার ওপর নিথর পড়ে থাকতে দেখে তার কণ্ঠনালি ছিঁড়ে বেরিয়ে এল চিৎকার। বউয়ের নাম ধরে আবারও ডাকলেন। বউ থাকলে তো! ছেলেকে খাটের নিচ থেকে টেনে বের করলেন। তার কপালে-শরীরে হাত বুলিয়ে দেখলেন বেঁচে আছে তো! প্রাণের স্পর্শ পেলেন, কিন্তু তাপমাত্রা অনেক। জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছিল। কোলে উঠিয়েই ত্বরিত মহল্লার ডাক্তারখানায় গেলেন।
মরতে মরতে বেঁচে গেছে! আর কয়েক ঘণ্টা দেরি করলেই শেষ! আপনারা মানুষ? এরকম ধমক ও ছেলের পরিষেবা নিয়ে বাসায় ফিরলেন। প্রতিবেশীর কাছে শুনলেন, দুই দিন আগে থেকে মহিলা লাপাত্তা। একজন তরুণী ইতস্তত বোধ করলেও বলতে বাধ্য হলো, ভাবিকে এক যুবকের সঙ্গে রিকশায় দেখেছে সে। মাথাটা চক্কর দিল তার। এ জন্য দায়ী তিনি নিজে। কারাগারে যাওয়ার কয়েক মাস আগে বউকে মোবাইল ফোন কিনে দিয়েছিলেন। মোবাইল পাওয়ার পর বউ সন্তান তো বটেই, খাওয়া-নাওয়া পর্যন্ত ভুলে গিয়েছিল। টিকটক, ইউটিউব, চ্যাটিং নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকত সে। বউকে একটু বেশিই ভালোবাসতেন তিনি; তাই এসব বিষয় আমলে নেননি। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। চোখে ঘোর অমানিশা। কী করবেন, দিশা পাচ্ছিলেন না। কারণ, এ প্রতিবন্ধী ছেলেকে কে দেখভাল করবে? কে তার দায়িত্ব নেবে? জেলে যাওয়ার কারণে চাকরিটা আছে কি না, সে চিন্তাও তার মাথায় কুটকুট করে কামড়াল। পরদিন, ছেলেকে কাঁধে নিয়ে অফিসে গেলেন। তার বস একটা বিশেষ রাজনৈতিক দলের সাপোর্টার। ভিন্নমতালম্বীদের সহ্য করতে পারেন না। তাকে বাইরে বসিয়ে রেখে বকেয়া পাওনা তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে শীতল মেজাজে ‘সরি’ বলেই তার পর্ব শেষ করলেন।
আকাশ ভেঙে পড়ল মাথায়। একদিকে সন্তানকে নিয়ে যুদ্ধ, আরেকদিকে অর্থনৈতিক যুদ্ধ। একটা ছোটখাটো চাকরির জন্য অফিসের দরজায় দরজায় ঘুরলেন। কতিপয় নোংরা মানুষের দুয়োধ্বনি ছাড়া কপালে কিছুই জুটল না। বেকারত্বের অভিশাপ যখন তাকে কুরে কুরে খাচ্ছিল, ঠিক সে সময় তার এক বন্ধু এগিয়ে এলেন। তিনি স্টকমার্কেটের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী। তবে ভাগ্যবান; যে স্টকেই বিনিয়োগ করেছেন, সেখান থেকেই প্রফিট ঘরে তুলেছেন। চাকরিবাকরি না করেও তার সংসার দিব্যি চলে। তার পরামর্শে যা সঞ্চয় ছিল, তা স্টকমার্কেটে বিনিয়োগ করলেন। ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে কয়েকদিন হাউসে ঘুরলেন। শনৈঃ শনৈঃ বাড়তে থাকল তার স্টকের দাম। বাড়তে বাড়তে দেড় মাসের মধ্যে দ্বিগুণ। তার বন্ধু তাকে বেচার পরামর্শ দিলেন; কিন্তু তিনি কর্ণপাত করলেন না। ভয়ংকর লোভে পড়লেন। তার স্বপ্নের শাখাপ্রশাখার বিস্তার ঘটাল। যে ছেলেকে ভালোমতো সময় দিতে পারেন না, মনের খুশিতে তাকে আদরযত্নে ভরিয়ে দিলেন। ছেলের সামনে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন টাকাটা তিন গুণ হলেই ইন্ডিয়ায় যাবেন। ভালো ডাক্তারের অধীনে তার চিকিৎসা করাবেন। এমনকি তার দেখভালের জন্য বেবিসিটার পর্যন্ত রাখবেন। তার কথার অর্থ ছেলে বোঝে না। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলে তার গালে দুষ্টামি করে চিমটি কাটেন, মাথা ধরে ঝাঁকুনি দেন।
কিন্তু তিনি যে বড় ধরনের ঝাঁকুনি খাবেন, তা ঘুণাক্ষরেও জানতেন না; কারণ, স্টকমার্কেটে তার অভিজ্ঞতা জলে না নেমেই গভীরতা মাপার মতো। তার সুহৃদ বন্ধু আবারও তাকে বিক্রির পরামর্শ দিলে এবার তিনি মনঃক্ষুণ্ন হলেন। ভাবলেন, তার বন্ধু তার ভালো চায় না। চাইলে এরকম জোরজবরদস্তি করে? ইচ্ছে করেই বন্ধুকে এড়িয়ে চললেন। কয়েকদিন যেতে না যেতেই মার্কেটে ধস। ব্যাপক দরপতন। যা বিনিয়োগ করেছিলেন, তা তলানিতে। পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব। স্বপ্ন চুরমার। মানসিক টানাপোড়েনে ধূমপান বাড়িয়ে দিলেন। একের পর এক সস্তা সিগ্রেট। সিগ্রেট কেনার পয়সা না পেলে যন্ত্রণায় ছটফট করতেন। অ্যাশট্রে-তে জমানো ছাইভষ্ম হাতের তালুতে ঢেলে খেয়ে ফেলতেন। তাতেও স্বস্তি না মিললে রাস্তায় নামতেন। আটআনা, একটাকার মুদ্রা যা-ই কুড়িয়ে পেতেন, তা দিয়ে বিড়ি কিনতেন। কিন্তু ছেলের মুখে কী তুলে দেবেন? বিড়ি? নাহ! খাবার কিনতে পয়সা লাগে। যে বন্ধুটিকে সবচে’ কাছের ভাবতেন, তার কাছেও যেতে পারছেন না, কারণ, তিনি তার কথা শোনেননি। ধারদেনা করে কিছুদিন চললেন, তার পর আটকে গেলেন; একেবারে কাদায় গরুর গাড়ি আটকে যাওয়ার মতো। চোখে সরষে ফুল। অন্ধকার খাদে তার পৃথিবী যেন কঠিন গদ্যময়। চোখের নিচে কালি, গণ্ডদেশে কালশিটে। উসকোখুসকো চুল ক্রমশ জটার দিকে ধাবিত। তোবড়ানো মুখে চাপদাড়ি। সময়ের আগেই বয়সের ভারে বেশ ন্যুব্জ। হঠাৎ এতটাই পরিবর্তন, তাকে দেখলে পরিচিতরাও ভিড়মি খান। বিড়বিড় করেন, এই মানুষটার হলো কী!
বাড়িভাড়া দিতে না পারায় মালিক ঘনঘন দরজার কড়া নাড়েন। এই সামনের মাসে দেব, এক জায়গায় টাকা আটকে আছে, এসব কাকুতি-মিনতিতেও বাড়িঅলার মন গলে না। বাড়িছাড়ার তাগাদা দেন। এদিকে পাওনাদাররাও কম কীসে! হুমকির পর হুমকি। ফলে ঘর ছাড়তে বাধ্য হোন। এমন এক রাষ্ট্রব্যবস্থায় তার এবং তাদের বসবাস যেখানে দাঁড়ানোর কোনো জায়গা নেই। পালিয়ে বেড়ানোই উত্তম। ডাস্টবিন থেকে খাদ্য-অখাদ্য কুড়িয়ে খান। ছেলেকেও খাওয়ান। প্রায়শ দুজনই অসুস্থ হয়ে পড়ে। ডাক্তাররা যে কসাই, বিনেপয়সায় কে তাদের চিকিৎসা করবে! পরিস্থিতি ভয়ানক নাজুক। কখনো খিদের কামড় সহ্য করতে না পেরে আমজনতার কাছে হাত পাতেন; কিন্তু তাদের করুণালাভে ব্যর্থ হোন। মাথা চুলকান। বুঝতে পারেন মাথাটা অকামের জঞ্জাল হয়ে উঠেছে। ভালো বুদ্ধি কাজ করে না। উপায়ান্তর না পেয়ে ছেলেকে রেললাইনের ধারে ফুটপাতের ওপর শুইয়ে দেন। তার পর কাপড় দিয়ে ঢেকে দেন। পথচারীদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন: ভাই, কিছু সাহায্য করেন। লাশটাকে দ্যাশে নিতে চাই। কিন্তু সেখানেও বাগড়া। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা এসে তাকে উঠিয়ে দেয়। জীবনযুদ্ধে এতটাই পর্যুদস্ত, এতটাই অসহায় রাগে-ক্ষোভে চরম বিরক্তিতে ছেলেকে নর্দমায় ফেলে দেন। পেছন ফিরে আর তাকান না। চলে আসেন খানিকদূর। হোক না প্রতিবন্ধী; হাজার হলেও ঔরসজাত। বুকটা ধড়ফড় করে, হৃৎপিণ্ড মোচড় দেয়, পা টলমল করে। পিতৃত্বের অমোঘ টানে আবার ফিরে আসেন নর্দমার কাছে। দেখেন, ছেলেটা মরেনি। দেহটা কাদার মধ্যে ডুবে গেলেও মাথাটা ওপরে। তার চোখদুটো জ্বলজ্বল করছিল। যেন কারও দিকে তাকিয়েছিল সে। ছেলের আকুতিভরা নিষ্পাপ মুখ দেখার পর তার মৃতপ্রায় চোখদুটো ছলছল করে উঠল। এক পা-দু পা করে নিচে নেমে ছেলেকে টেনে তুললেন। তার পর বুকে জড়িয়ে ধরলেন। বুক ফেটে কান্না আসছিল তার, কিন্তু কেঁদে কী লাভ? কান্না পাথরচাপা দিয়ে ছেলেকে কাঁধে নিলেন।
হাঁটতে হাঁটতে চলে এলেন শহরের একপ্রান্তে। কোথায় তার গন্তব্য, জানেন না তিনি। হৃদয়হীন সমাজে আঘাত পেতে পেতে তার মস্তিষ্ক পচে গেছে, গলে গেছে, তবুও সেখান থেকে বোধের চারা গজাল; আচ্ছা, ছেলেটাকে যদি তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া যায়! পরক্ষণে ভাবলেন, যে মা তার বিকলাঙ্গ সন্তানের চিন্তা না করে স্বীয় সুখের আশায় পরপুরুষের সঙ্গে গৃহত্যাগ করতে পারে, তার হৃদয় কতটা দয়াদ্র! এবার স্ত্রীকে না, নিজেকেই দোষারোপ করে তার ভাবনাকে গুরুত্ব দিলেন। শুনেছেন, এদিকেই তার প্রাক্তন স্ত্রী কোনো না কোনো বাড়িতে তার স্বামীর সঙ্গে থাকে। কীভাবে তাকে খুঁজে পাবেন, এলোমেলো ভাবনাগুলো হঠাৎ শিস দিল। তার প্রাক্তন স্ত্রীর এক বান্ধবী অনেক আগেই তার বর্তমান ঠিকানা সম্পর্কে একটা ধারণা দিয়েছিল। সে মোতাবেক বাড়িটা হলুদ রঙের দোতলা বাড়ি। তখন প্রায় সন্ধ্যে। কাকতালীয়ভাবে সেই বাড়িটার সামনেই দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। প্রকাণ্ড লোহার গেট। দরজায় কয়েকবার ধাক্কা দেন। ভেতর থেকে কেউ সাড়া দেয় না। হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে দরজার ওপর উপর্যুপরি ধাক্কাতে থাকেন। ধাক্কানোর শব্দ পৌঁছে যায় অন্দরমহল অবধি। এক সময় দরজা খোলেন এক ভদ্রমহিলা। কিন্তু তিনি তাদের দেখামাত্র বিপদ আঁচ করে দড়াম করে দরজা বন্ধ করেন তাদের মুখের ওপর। অপমান কী জিনিস, তা বেমালুম ভুলে গেছেন। স্থাণুবৎ দাঁড়িয়ে রইলেন কতক্ষণ। ভগ্ন হৃদয়ে সরে এসে রাতের আঁধারে মিলিয়ে গেলেন। কিন্তু ছেলেটা খিদের কারণে কুকুরের বাচ্চার মতো কুঁইকুঁই আওয়াজ তুলছিল। তার পেটও রাক্ষসে আচরণ করছিল। ছেলেকে ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে রেখে হোটেলে খাবার চুরি করতে গেলেন। ধরা খেয়ে বেধড়ক পিটুনি। হোটেলবয়রা তাকে পুলিশে দিল। পুলিশের হাত-পা ধরেও যখন থানা থেকে ছাড়া পাচ্ছিলেন না, তখন মলমূত্র ত্যাগ করে ভয়াবহ দুর্গন্ধ ছড়ালেন। বমি করতে করতে পুলিশ অবশেষে গরাদের দরজা খুলে দিল।
ততক্ষণে একরাত একদিন পেরিয়ে গেছে। ছেলের কাছে পৌঁছে দেখলেন তার ছেলের নিথর দেহ পড়ে আছে। ছেলেকে একবার স্পর্শও করলেন না। ঘৃণা ও প্রতিশোধের আগুন জ্বলল। সোজা চলে এলেন সেই হলুদ বাড়িতে। প্রাচীর টপকালেন। শ্বাসরোধ করে হত্যা করলেন পরস্ত্রী হরণকারীকে। তার প্রাক্তন তখন পুলিশকে মোবাইল করছিল, তার হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নিয়ে তার মুখে জোর করে মোবাইল ঢুকিয়ে একপ্রান্তে সজোরে আঘাত করলেন; সঙ্গে সঙ্গে গলায় আটকে গেল মোবাইলটা। তার পর তিনি নিজেই পুলিশে ধরা দিলেন।
জেলগেটে দাঁড়িয়ে তার মনে হলো এ দেশ বিবেকশূন্য মানুষদের কারাগার, আর তার জীবন একটা বিষাক্ত কারাগার।