
বর্তমান সময়ের গুরুত্বপূর্ণ কথাশিল্পী মোস্তফা কামাল। তার ‘বিষাদ বসুধা’ উপন্যাস অসামান্য এক শিল্পকর্ম। পুরো পৃথিবী যে করোনা আক্রান্ত হয়েছিল, তাতে চেনা পৃথিবী অচেনা হয়ে উঠেছিল, সেই প্রেক্ষিতে এ দেশের মানুষের জীবনযাপনে কী ভয়াবহ নিস্তব্ধতা, অনিশ্চয়তা আর অন্ধকার নেমে এসেছিল, সেটাকেই উপজীব্য করে তিনি উপন্যাসটি রচনা করেছেন। এদিক বিবেচনা করলে এটি একটি বিশেষ সময়-পরিস্থিতিনির্ভর উপন্যাস। সে কারণে একে বিশেষায়িত উপন্যাস হিসেবে অভিহিত করা যেতে পারে। আমাদের সাহিত্যে উপন্যাস সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় শাখা। সাহিত্যে উপন্যাস বা কবিতা-গল্প যেটাই হোক, সেখানে নিজের অবস্থান সুনিশ্চিত করতে হলে নিজস্ব স্টাইল তৈরি ও বিষয়বস্তুতে ভিন্নতা ধারণ ব্যতীত সম্ভব নয়। প্যারীচাঁদ মিত্র থেকে শুরু করে এ সময়কাল বিবেচনায় নিলে, যারা খ্যাতিমান হয়েছেন উপন্যাস সাহিত্যে, তারা প্রত্যেকেই নিজস্বতাগুণে অমরত্ব বা কালোত্তীর্ণ হতে পেরেছেন। মোস্তফা কামালের সাহিত্যকর্ম সেই বিবেচনায় কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারছে বা পেরেছে, সে বিচার-বিবেচনার সময় এখনো আসেনি। তবে স্বতন্ত্র তীব্র একটা আলো তার সাহিত্যকর্মে যে ছড়ানো, বিভাসিত- তাতে করে তিনি যে কালের যাত্রায় ভিন্নতর সাহিত্যসাধক, তা অনুমান করে নিতে অসুবিধে হয় না। তার উপন্যাসের প্যাটার্ন ও বলার ভঙ্গি একদমই আলাদা। উপন্যাসে শিল্প যে একটা বড় ব্যাপার এবং অতি গুরুত্বপূর্ণ, মোস্তফা কামালের উপন্যাসে সেটা দারুণভাবে আছে। শুধু গল্পের জন্য গল্প বললে সেটা সার্থক শিল্পকর্ম হয় না। হয়তো পাঠক মেলে। জনপ্রিয়তাও হয়। কিন্তু সাহিত্যগুণ বিচার-বিশ্লেষেণে এসবের গুরুত্ব থাকে না। মোস্তফা কামালের সাহিত্যকর্ম শুধু গল্প বলার জন্য গল্প নয়, সেখানে সুনির্দিষ্ট সুপরিকল্পিত বার্তা থাকে, দর্শন থাকে, উপস্থাপনে মৌলিকত্ব থাকে এবং শিল্পের ব্যবহারে সচেষ্ট ও সচেতন থাকেন তিনি।
বাংলা উপন্যাসের ধারায় আমাদের সমৃদ্ধ ইতিহাস আছে। মোস্তফা কামাল সেই সমৃদ্ধ ইতিহাসের ধারায়, এ সময়ের একজন গুরুত্বপূর্ণ লেখক। বাংলা উপন্যাসের প্রথম সার্থক স্রষ্টা বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু তার আগেও বাংলা ভাষায় উপন্যাস বা উপন্যাস ধরনের আখ্যান রচিত হয়েছে। হ্যানা ক্যাথরিন ম্যুলেন্সের ‘ফুলমণি ও করুণার বিবরণ’, প্যারীচাঁদ মিত্রের ‘আলালের ঘরের দুলাল’ ও কাঙাল হরিনাথ মজুমদারের ‘বিজয় বসন্ত’ এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। বঙ্কিমচন্দ্রই প্রথম বাঙালি লেখক যিনি বাঙালি বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাধারণ সবশ্রেণির পাঠকদের আকৃষ্ট করতে পেরেছিলেন। তার উপন্যাসের বিষয়বস্তুও ছিল অতীতের লেখকদের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। গঠনশৈলী, ভাষা, বিষয়বস্তু, শৈল্পিকতা- সবদিক থেকে নতুনত্বে পূর্ণ। বাংলা উপন্যাস সাহিত্যের মূলত সেখান থেকেই শক্ত ও সফল অভিযাত্রা ঘটে। রবীন্দ্রনাথের মতো বিশ্বপ্রতিভাও উপন্যাসে প্রথম দিকে বঙ্কিমের জন্মপ্রিয়তার কাছে ম্লান ছিলেন। কিন্তু তার উপন্যাস সবদিক থেকে বঙ্কিম থেকে ভিন্ন ছিল। সময়ের সিঁড়ি ধরে রবীন্দ্রনাথের উপন্যাসে একসময় মগ্ন হয়ে ওঠেন বাঙালি পাঠক। বাংলা ছোটগল্পেরও সার্থক সৃষ্টি রবীন্দ্রনাথের হাতে। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে উপন্যাস ও গল্প রচনা করে রবীন্দ্রনাথের সময়কালেই তুমুল জনপ্রিয়তা পান। এভাবে মানিক-বিভূতি-তারাশঙ্কর বাংলা উপন্যাসে বিষয়বস্তু ও নির্মাণশৈলীতে পূর্বসূরিদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। মীর মশাররফ হোসেন, মোহাম্মদ নজিবর রহমান ও আকবর হোসেনও যে ব্যাপক জনপ্রিয় হতে পেরেছিলেন, তার কারণ তাদের উপন্যাসে বিষয়বস্তু, গঠন ভাষাশৈলীতে পুরো নিজস্বতা বিদ্যমান ছিল। উপন্যাসের এ ধারাবাহিকতায় নিজস্ব শৈলীতে বিখ্যাত হয়েছেন সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, জগদীশ গুপ্ত, আকবর হোসেন, শওকত ওসমান, হাসান আজিজুল হক, সেলিনা হোসেন, রাজিয়া খাতুন, মাহমুদুল হক, রাবেয়া খাতুন, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, হুমায়ূন আহমেদ, জহির, ইমদাদুল হক মিলন-সহ অনেক কথাশিল্পী, তারা উপন্যাসে গতানুগতিক ধারাকে গ্রহণ করেননি। যারা গতানুগতিকতা গ্রহণ করে সাহিত্যকর্ম করেছেন, তাদের সমকালীন অনেকেই বাহবা লাভ করলেও কালের যাত্রায় বিস্মৃত ও অগুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেছেন, তাদের সৃষ্টিকর্ম সেভাবে গুরুত্বের দাবিদার হয়ে উঠতে পারেনি। ফলে মেধাবী ও দূরদর্শী যেকোনো কথাশিল্পীই সৃষ্টিকর্মে বিষয়বস্তু থেকে শুরু করে গঠনপ্রক্রিয়া, শিল্পমান, নিজস্ব বার্তা, সমাজ-সমকাল-রাজনীতি-ইতিহাস-ঐতিহ্য-অর্থনীতি-অবক্ষয় এসব গ্রহণে ও সৃষ্টিশীলতায় সতর্ক থাকেন। যারা বাংলা কথাসাহিত্যে অমরত্ব অর্জন করেছেন তারা মৌলিকত্বে অসম্ভবরকম সচেতন ছিলেন এবং সৃষ্টিকর্মে নিজস্ব ধরন বা স্টাইল প্রতিষ্ঠা করে মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, সমাজ-অর্থনীতি-রাজনীতিসহ আরও বহু বিচিত্র বিষয় উপন্যাসের উপজীব্য হিসেবে গ্রহণ করে নিজস্বতা সৃষ্টিতে দক্ষতা দেখিয়েছেন। প্রত্যেকেই নিজস্ব মৌলিকতাকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। মোস্তফা কামালও সেই জায়গাটিতে অধিকতর সচেতন তার শিল্পকর্মের মৌলিকত্বে ও নিজস্ব স্টাইল নির্মাণে।
বাংলা সাহিত্যে অধিকাংশ উপন্যাসই পারিবারিক-সমাজব্যবস্থা ও রোমান্টিকতাকে কেন্দ্র করে মূল বিষয়বস্তুতে গড়ে ওঠা। রাজনীতি, সমকাল এসব ধারণ করেও যেসব উপন্যাস রচিত হয়েছে, সে ক্ষেত্রে দায়বোধ কাজ করেছে বেশি। এ ধরনের উপন্যাস রচনার ক্ষেত্রে লেখকের আত্মসচেতনা ও বিশেষ প্রস্তুতি থাকতে হয়। ইচ্ছে করলেই এ ধরনের উপন্যাস হুট করে লেখা যায় না। লেখককে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেই এ ধরনের উপন্যাস রচনা করতে হয়। সে কারণে বাংলা সাহিত্যে বিশেষায়িত উপন্যাসের সংখ্যা খুব বেশি নয়। ভাষা আন্দোলন বা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাসের সংখ্যা অপ্রতুল। এর পরও কথা হলো, এসব বিষয়ে যেসব উপন্যাস রচিত হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে সার্থক উপন্যাস বা বৃহত্তর ক্যানভাসে কয়টি উপন্যাস রচিত হয়েছে, যেখানে ভাষা আন্দোলন বা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করা হয়েছে। এগুলো জাতীয় বিষয়। কিন্তু মাত্র কয়েক বছর আগে যে করোনাসংকট তৈরি হয়, তাতে গোটা পৃথিবী একসঙ্গে প্রায় মৃত্যুনগরীতে পরিণত হয়েছিল। এরকম ঘটনা পৃথিবীতে বিরল, যা একই সঙ্গে গোটা পৃথিবীর রোগে পরিণত হয়েছিল। বাংলাদেশও স্বাভাবিকভাবে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। করোনায় বাংলাদেশেরও অর্থনৈতিক অবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাভাবিক জীবনযাপন ভেঙে পড়েছিল। প্রতিদিন স্বজন আত্মীয়হীন করুণ মৃত্যু। এই প্রথম মানুষ বুঝল, মানুষ মূলত একা। এই ভয়াবহ ঘটনা নিয়ে পৃথিবীতে অসংখ্য সাহিত্যকর্ম রচিত হয়েছে। বাংলাদেশেও সৃজনশীল সাহিত্যে অনেক কবি-সাহিত্যেকের উপন্যাস-কবিতা-গল্পে করোনা মূল বিষয়বস্ত হয়ে উঠেছে, সেই সময়কালকে ধারণ এবং সেই সময়কালের মৃত্যু-ভয়াবহতার কঠিনতম যে বাস্তবতা, তা অনেকের সাহিত্যকর্মে যথাযথভাবে তুলে ধরার প্রয়াস লক্ষণীয়। সমকালকে ধারণ না করে মহৎ সাহিত্য সৃষ্টিও তো অসম্ভব একটি ব্যাপার। মোস্তফা কামাল এ সময়কালে মেধাবী ও নিবেদিত লেখক। করোনাকালীন সময়কালকে ধারণ করে সেই সময়ের বহমাত্রিক কঠিন ও রূঢ় বাস্তবতাকে ধারণ করে ‘বিষাদ বসুধা’ উপন্যাস লিখেছেন। এ কাজটি বেশ কঠিন। কারণ তার সময়কালের এ ঘটনা, নিজের দেখা, হয়তো নিজেও অনেকখানি শিকারও। সেটাকে শিল্পসম্মতভাবে উপস্থাপন করা বেশ কঠিন। কারণ দেখা ঘটনা বা জীবনের কোনো ঘটনা সহজেই বলা যেতে পারে, কিন্তু সেটিকে শিল্পরূপ দিয়ে সর্বজনীন করে মহৎ সাহিত্য নির্মাণ কঠিনই। মোস্তফা কামাল সততা ও ধ্যানীভঙ্গিতে নির্মোহ দৃষ্টিতে করোনাকালীন বাংলাদেশের যে ভয়াবহতা, আর এর ভেতর দিয়েই মানবহৃদয়ের বহুমাত্রিক ক্ষতবিক্ষত স্বরূপটি তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছেন। আরও বিস্ময়কর, তিনি এ উপন্যাসে নিজের মাতৃভাষার প্রতি গভীর মমত্বের প্রকাশ করেছেন। তিনি খুব কৌশলে বলেছেন, চীনের লোকজন ইংরেজি জানে না। জানার প্রয়োজনও মনে করে না। যাদের প্রয়োজন তারা চীনা ভাষা শিখে নেবে। মূলত এর মাধ্যমেই তিনি আমাদের ভাষাপ্রীতির মূল মেসেজটি দিয়ে দিয়েছেন।
বিষাদ বসুধা উপন্যাসের নামকরণে প্রথমেই মীর মশাররফ হোসেনের বিষাদ-সিন্ধু নামটি স্মরণ করিয়ে দেয়। কারণ বিষাদ-সিন্ধু উপন্যাসটি এত বছর পরও এখনো বাঙালি পাঠকমনে তরতাজা হয়ে বেঁচে আছে। সে কারণে বিষাদ বসুধা যে বিষাদ-সিন্ধু নামটি মনে করিয়ে দেবে এটাই স্বাভাবিক। বিষয়বস্তুতে ও বিরাটত্বে দুটো উপন্যাস একদমই দুই মেরুর। বিষাদ বসুধা ছাড়া অন্য আর কোনো নামও এখানে যৌক্তিক হতো বলে মনে হয় না। উপন্যসটির প্রধান চরিত্র মোহিনীর নামে ভাবা যেতে পারত, কিন্তু বিষয়বস্তুর যে বিরাটত্ব, তাতে ‘মোহিনী’ চরিত্রের মধ্যেও পুরোট ধারণ করা সম্ভব ছিল না। যেমন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’ উপন্যাসের নামকরণ রোহিনী হতে পারেনি। রবীন্দ্রনাধ ঠাকুরের’ চোখের বালি’ উপন্যাসের নাম বিনোদিনী নয়, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘গৃহদাহ’ উপন্যাসের নাম অচলা হয়নি, কিংবা ‘পদ্মানদীর মাঝি’ উপন্যাসের নামও তো কপিলা হতে পারত, হয়নি। কারণ কপিলা পুরো উপন্যাসটিকে ধারণ করার ক্ষমতা রাখে না। একইভাবে আকবর হোসেনের ‘অবাঞ্ছিত’ উপন্যাসের নামকরণ রোকেয়া হয়নি। অথচ এসব উপন্যাসের এরা প্রত্যেকেই প্রধান চরিত্র। কিন্তু উপন্যাসের বিশালত্বে-বিষয়বস্তুতে-গুরুত্বে এসব চরিত্রকে ছাপিয়ে সর্বজনীন ও অধিক অর্থপূর্ণ নাম এসে নির্বিধায় দখল করে নিয়েছে- এখানেই লেখকের শিল্পমত্তার পরিচয়। মোস্তফা কামাল উপন্যাসটির নামকরণে দুর্দান্ত শিল্পদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।
উপন্যাসটি পাঠের শুরুতে একটুও অনুধাবন করা যায়নি, এটা করোনাকালীন সময়কালকে ধারণ করে রচিত। উপন্যাসটিতে ৩৪টি অধ্যায় আছে। মোট পৃষ্ঠা ২০৭। ৪৮ পৃষ্ঠায় এসে প্রথম করোনার কথা পাঠককে বললেন লেখক। অথচ উপন্যাসটির মূল উপজীব্য করোনাকে কেন্দ্র করে। কী অদ্ভুত শিল্পশক্তিতে লেখক ধীরে ধীরে করোনাকালীন সময়কালের মধ্যে, কঠিন বাস্তবতার মধ্যে নিয়ে যাচ্ছেন, এবং যা খুবই প্রাসঙ্গিকতায়। এক অদ্ভুত কৌশলে পাঠককে তিনি ধাবিত করেন করোনার ভয়াবহতার ভেতর। প্রথম দিকে বিশেষ করে ছয় অধ্যায়ের মধ্যে এসবের ছিটেফোঁটাও নেই। তখন মস্তিষ্কের কোষে কোষে নক করছে ‘চোখের বালি’ কিংবা ‘মাদাম বোভারি’র মতো এক নতুন মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত-সংকট। বিনোদিনী যেমন প্রকাশ্যে না বলে নিজের ভেতর নিজে যেমন অনেক প্রশ্ন তুলেছে-উত্তর খুঁজেছে, বোভারি যেমন অনেক কথাই রোদলফকে না বলে নিজের ভেতর বোঝাপড়া করেছে, মোহিনীও তো ঠিক তাই- নিজের সঙ্গে নিজের বোঝাপড়া-অজস্র প্রশ্ন- আত্মসমালোচনা করেছেন। বহুবার বোঝাপড়া করতে চেয়েছেন আরেফিনের সঙ্গে। এক-দুবার করেছেনও। মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত-রাগ-অভিমান ক্ষোভ যখন চরমে মোহিনীর, তখনই করোনার কবলে মুষড়ে পড়েন তিনি নিজেই- আরেফিনের জন্য। কারণ আরেফিন তখন চীনের হুবে শহরে অফিসের কাজে। হুবে তখন করোনা আক্রান্ত শহর। করোনায় মরছে মানুষ। যে আরেফিনের প্রতি মোহিনীর এত ক্ষোভ, অভিমান, করোনার খবরে বেদনায় আছড়ে পড়েন নিজের ভেতরে নিজেই। মনস্তাত্ত্বিকতার সঙ্গে লেখক কঠিন এক বাস্তবতার মুখে দাঁড় করিয়ে দেন মোহিনীর সঙ্গে পাঠককেও। সেখান থেকে আর কিছু ভাবার সুযোগ থাকে না। প্রবল স্রোতধারায় অসহনীয় এক বাস্তবতার ভেতর দিয়ে শুধুই ধাবিত হতে হয় সম্মুখে। সেই স্রোতধারার ভেতর প্রেম-প্রণয়, ব্যবসা-বাণিজ্য, মানবতা, অমানবিকতা, খাদ্যসংকট, দুর্বিষহ জীবনযাপন, অসংখ্য অযত্ন-অনাদর-অসহায় মৃত্যু- একাত্ম হয়ে ভেসে যায়, সেখান থেকে উজান ঠেলে ফিরে আসা কঠিনের চেয়ে কঠিন- অসম্ভব এক ব্যাপার হয়ে ওঠে।
চলবে...