ঢাকা ১০ চৈত্র ১৪৩১, সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫
English

সকালে যেসব পানীয় পান করবেন

প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৩, ১২:২৬ পিএম
আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০২:৩৩ এএম
সকালে যেসব পানীয় পান করবেন

সকালে ঘুম থেকে উঠে কী ধরনের পানীয় খাবেন, তা নিয়ে ভাবনার শেষ নেই। কী খেলে সারাদিন শরীরটা সুস্থ থাকবে, তা নিয়ে আছে নানা মত। সেটা নিয়েই আজকের আয়োজন। সকালে কোন ধরনের পানীয় উপকারী, চলুন জেনে নেই। মায়োক্লিনিক অবলম্বনে লিখেছেন রাকিব।

পানিতে লেবুর রসের সঙ্গে মধু
অনেক আগে থেকেই লেবু ও মধু সহযোগে পানি পান করার কথা শোনা যায়। সকালে খালি পেটে এই পানীয়টি গ্রহণ করলে হার্ট ভালো থাকে। পাশাপাশি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বজায় থাকে, হজম প্রক্রিয়া সচল থাকে এবং ঠান্ডা-কাশির সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। কুসুম গরম পানিতে মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে পান করতে হয়। তবে দীর্ঘসময় পান করলে অ্যাসিডিটি, দাঁতের ক্ষয়, অনিয়ন্ত্রিত সুগারসহ বেশকিছু সমস্যা হতে পারে।

পানিতে ইসবগুল
পানিতে ইসবগুল মিশিয়ে পান করার অনেক উপকারিতা আছে। সকালে এই আয়ুর্বেদিক পানীয়টি গ্রহণ করলে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা মিটে যায়। এ ছাড়া হজম প্রক্রিয়া ভালো রাখতে, অতিরিক্ত কোলেস্টেরল বা চর্বির পরিমাণ কমাতে ভালো কাজ করে। পানিতে মিশিয়ে এটি পান করতে হয়। অনেকে কিছু সময় পানিতে ভিজিয়ে রেখে ফুলে উঠলে পান করেন। মাত্রাতিরিক্ত ইসবগুল পান করলে বমি বমি ভাব, পেটে ব্যথা, ক্ষুধা কম লাগাসহ কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে।  

পানিতে চিয়া সিড
চিয়া সিড একটি আদর্শ খাবার। পানিতে কিছু সময় ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে পান করলে নানা ধরনের উপকার পাওয়া যায়। যেমন- এটা ভালো ফ্যাটের উৎস। এটা থেকে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। এ ছাড়া রক্তে চিনির মাত্রা ও প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখতে চিয়া সিড সাহায্য করে। এটা পানিতে মিশিয়ে পান করতে হয়। তবে দীর্ঘসময় ভিজিয়ে রাখার প্রয়োজন নেই। অতিরিক্ত চিয়া সিড সেবনের ফলে কারও কারও অ্যালার্জি, ডায়াবেটিস হঠাৎ কমে যাওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে।

পানিতে তিসি
কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় ভুগছেন যারা, তারা এক গ্লাস পানিতে তিসি ভিজিয়ে খেলে উপকার পাবেন। এ ছাড়া যাদের ডায়াবেটিস, পাকস্থলীর প্রদাহ, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ, মাসিকের সমস্যাসহ ত্বকের নানা সমস্যায় ভুগছেন- তাদের জন্যও তিসি দারুণ কাজ করে। এটা পানিতে মিশিয়ে পান করতে হয়। দীর্ঘদিন তিসি-পানি পান করলে প্রদাহজনিত সমস্যা তৈরি হতে পারে। এটি ইস্ট্রোজেনের মতো কাজ করে বলে হরমোনের স্বাভাবিক কার্যকলাপে পরিবর্তন আনে। গর্ভবতী মা এবং যারা সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন, তারা এটি এড়িয়ে চলবেন।

জিরা পানি
জিরা পানিতে ফুটিয়ে সকালে খালি পেটে পান করলে নানা ধরনের উপকার পাওয়া যায়। এটি হজম প্রক্রিয়া ভালো রাখতে বেশ সাহায্য করে। প্রদাহজনিত সমস্যা কমাতে কার্যকর। গর্ভকালে মর্নিং সিকনেস কমাতেও ভালো কাজ করে। তবে দীর্ঘদিন ধরে এটি পান করলে বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা তৈরি হতে পারে।

পানিতে মেথি
মেথি একটি আয়ুর্বেদিক উপাদান। এটি পানিতে মিশিয়ে পান করলে কোলেস্টেরল ও ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে আসে। এ ছাড়া ক্যানসার প্রতিরোধে, টেস্টোস্টেরন লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখতে, ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতে, হজম প্রক্রিয়া ভালো রাখতে এবং মলাশয় পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে থাকে মেথি-পানি। তবে গর্ভকালে এটা পান না করাই ভালো। এক টানা দীর্ঘসময় পান করলে অ্যালার্জি সমস্যা, বদহজম, কিডনির জটিলতা তৈরি হতে পারে।

পানিতে দারুচিনি
দারুচিনি পানিতে ফুটিয়ে অথবা দারুচিনির গুঁড়া কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে সকালে খালি পেটে পান করলে নানা শারীরিক উপকার পাওয়া যায়। এই পানীয় রক্তের চিনি নিয়ন্ত্রণে রাখে। এ ছাড়া হৃৎপিণ্ড ভালো রাখতে, হজম প্রক্রিয়া সচল রাখতে, কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। পাশাপাশি অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের চমৎকার উৎস দারুচিনি। তবে এটি অনেকের অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। সেই সঙ্গে দুগ্ধদানকারী মায়েদের জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ।

মোহনা জাহ্নবী

লাল মাংস খাওয়ার ১০ উপকারিতা

প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২৫, ০৪:২২ পিএম
আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২৫, ০৪:৩৩ পিএম
লাল মাংস খাওয়ার ১০ উপকারিতা
লাল মাংস উচ্চমানের প্রাণিজ প্রোটিন সরবরাহ করে। ছবি এআই

লাল মাংস (Red Meat) হলো সেই ধরনের মাংস, যা মূলত গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি প্রাণীর থেকে আসে। এটি উচ্চমাত্রার প্রোটিন, আয়রন, ভিটামিন বি১২ এবং জিংকের অন্যতম প্রধান উৎস। যদিও অনেকে লাল মাংসের অতিরিক্ত গ্রহণকে স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ মনে করেন, তবে পরিমিত পরিমাণে খেলে এটি শরীরের জন্য ভালো। আসুন দেখে নিই লাল মাংস খাওয়ার ১০টি দারুণ উপকারিতা।

 

১. উচ্চমানের প্রোটিনের প্রধান উৎস
প্রোটিন আমাদের শরীরের কোষ গঠনে, পেশির বৃদ্ধি ও মেরামতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। লাল মাংস উচ্চমানের প্রাণিজ প্রোটিন সরবরাহ করে, যা অ্যামিনো অ্যাসিড সমৃদ্ধ।

উপকারিতা
• পেশির গঠন মজবুত করে।
• টিস্যু মেরামতে সহায়তা করে।
• শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

 

২. আয়রনের ভালো উৎস
লাল মাংসে হিম আয়রন (Heme Iron) থাকে, যা উদ্ভিদভিত্তিক আয়রনের তুলনায় শরীর সহজেই শোষণ করতে পারে। আয়রন হিমোগ্লোবিন উৎপাদনের জন্য অপরিহার্য, যা আমাদের শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করে।

উপকারিতা
• রক্তশূন্যতা (Anemia) প্রতিরোধে সাহায্য করে।
• রক্তের লোহিত কণিকা বৃদ্ধিতে সহায়ক।
• শরীরকে শক্তি জোগায়।

 

লাল মাংস মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য উন্নত করে। ছবি এআই

 

৩. ভিটামিন বি১২ সরবরাহ করে
লাল মাংসের অন্যতম প্রধান উপাদান হলো ভিটামিন বি১২। এটি মস্তিষ্কের কার্যকারিতা, স্নায়ুর সুস্থতা এবং রক্তকণিকা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

উপকারিতা
• মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য উন্নত করে।
• স্নায়ুবিক সমস্যা প্রতিরোধ করে।
• শারীরিক ও মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করে।

 

৪. জিংকের সমৃদ্ধ উৎস
জিংক আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ক্ষত সারানোর ক্ষেত্রে সহায়তা করে। লাল মাংস জিংকের একটি দুর্দান্ত উৎস।

উপকারিতা
• দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে।
• ক্ষত দ্রুত নিরাময়ে সাহায্য করে।
• কোষ বিভাজন ও বৃদ্ধিতে সহায়ক।

 

৫. শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে
লাল মাংসে থাকা পুষ্টি উপাদানগুলো শরীরে শক্তি উৎপাদনে সাহায্য করে। এটি ক্যালোরির ভালো উৎস, যা দেহের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়ক।

উপকারিতা
• দেহের কর্মক্ষমতা বাড়ায়।
• দীর্ঘক্ষণ পুষ্টি সরবরাহ করে।
• ক্যালোরির মাধ্যমে শক্তি উৎপাদন করে।

 

লাল মাংস অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করে। ছবি এআই

 

৬. হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক (পরিমিত মাত্রায়)
যদিও অতিরিক্ত লাল মাংস খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে, তবে পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করলে এটি হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক হতে পারে।

উপকারিতা
• শরীরে উপকারী চর্বি সরবরাহ করে।
• কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
• হৃদযন্ত্রের পেশিকে শক্তিশালী করে।

 

৭. হাড় মজবুত করে
লাল মাংসে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং প্রোটিন থাকে, যা হাড়ের গঠন মজবুত করতে সাহায্য করে।

উপকারিতা
• অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করে।
• দাঁত ও হাড়ের ঘনত্ব বজায় রাখে।
• বৃদ্ধ বয়সে হাড়ের দুর্বলতা কমায়।

 

৮. পেশির গঠন ও বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে
লাল মাংসে থাকা উচ্চমাত্রার প্রোটিন এবং ক্রিয়েটিন পেশির গঠন ও শক্তিবৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

উপকারিতা
• অ্যাথলেটদের জন্য উপকারী।
• শরীরচর্চার পর দ্রুত পুনরুদ্ধারে সহায়ক।
• পেশির শক্তি বৃদ্ধি করে।

 

৯. মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, লাল মাংসে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং বি-ভিটামিন মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় কার্যকর।

উপকারিতা
• হতাশা ও উদ্বেগ কমায়।
• স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে।
• ব্রেন ফাংশন উন্নত করে।

 

লাল মাংস দাঁত ও হাড়ের ঘনত্ব বজায় রাখে। ছবি এআই

 

১০. টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে
লাল মাংসে থাকা প্রোটিন, জিংক ও স্বাস্থ্যকর চর্বি টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা বাড়াতে সহায়তা করে, যা বিশেষ করে পুরুষদের স্বাস্থ্য ও কর্মক্ষমতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

উপকারিতা
• পেশির বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে।
• যৌন স্বাস্থ্য উন্নত করে।
• শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে।

 

পরামর্শ
যদিও লাল মাংসের অনেক উপকারিতা রয়েছে, তবে অতিরিক্ত গ্রহণ করলে এটি হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। তাই লাল মাংস খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত—
▶ পরিমিত পরিমাণে খান – সপ্তাহে ২-৩ বার গ্রহণ করা ভালো।
▶ কম চর্বিযুক্ত মাংস বেছে নিন – অতিরিক্ত স্যাচুরেটেড ফ্যাট এড়িয়ে চলুন।
▶ গ্রিল বা সেদ্ধ করে খান – ভাজা বা প্রসেসড মাংস এড়িয়ে চলুন।
▶ শাকসবজি ও ফাইবারযুক্ত খাবারের সঙ্গে খান – হজমে সহায়ক হবে।

 

সবশেষ
লাল মাংস আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। কারণ এটি প্রোটিন, আয়রন, ভিটামিন বি১২, জিংক ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি সরবরাহ করে। তবে এটি পরিমিত মাত্রায় গ্রহণ করাই স্বাস্থ্যকর। কারণ অতিরিক্ত খেলে এটি কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে। সঠিকভাবে গ্রহণ করলে এটি শক্তি বৃদ্ধি, পেশির গঠন, মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়ন ও হাড় মজবুত করতে সহায়তা করে।
সুতরাং, সুষম খাদ্যাভ্যাসের অংশ হিসেবে লাল মাংস খান এবং সুস্থ থাকুন!

প্রতি বছর যে স্বাস্থ্য পরীক্ষাগুলো করা জরুরি

প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২৫, ০৩:২৯ পিএম
আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২৫, ০৩:৩৮ পিএম
প্রতি বছর যে স্বাস্থ্য পরীক্ষাগুলো করা জরুরি
৩০ বছর বয়সের পর থেকে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো জরুরি। ছবি এআই

সুস্থ ও দীর্ঘায়ু জীবন নিশ্চিত করতে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক রোগ প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করা গেলে সহজেই প্রতিরোধ বা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। বিশেষ করে ৩০ বছর বয়সের পর থেকে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো আরও বেশি জরুরি হয়ে ওঠে। কারণ এই সময় থেকে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, লিভার ও কিডনির সমস্যা, ক্যানসারসহ বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি বাড়তে থাকে। আসুন দেখে নিই প্রতি বছর কোন স্বাস্থ্য পরীক্ষাগুলো করা জরুরি—

সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা

এই পরীক্ষাগুলো যেকোনো বয়সের মানুষের জন্য উপকারী, কারণ এগুলো শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে ধারণা দেয়।

▶ সম্পূর্ণ রক্ত পরীক্ষা (Complete Blood Count - CBC)
• এই পরীক্ষা রক্তে লোহিত কণিকা (RBC), শ্বেত রক্তকণিকা (WBC) এবং প্লাটিলেটের পরিমাণ নির্ধারণ করে।
• রক্তস্বল্পতা (অ্যানিমিয়া), সংক্রমণ, প্রদাহ বা রক্তজনিত অন্যান্য সমস্যার পূর্বাভাস দেয়।

 

▶ রক্তে শর্করার মাত্রা (Blood Sugar Test - Fasting Blood Sugar, HbA1c)
• ডায়াবেটিস বা প্রি-ডায়াবেটিস আছে কি না, তা নির্ণয় করতে হয়।
• HbA1c পরীক্ষা গত তিন মাসের গড় রক্তের শর্করার পরিমাণ দেখায়।
• পরিবারে ডায়াবেটিসের ইতিহাস থাকলে প্রতি বছর এটি করানো জরুরি।

 

৩০ বছরের পর থেকে প্রতি বছর লিপিড প্রোফাইল পরীক্ষা করানো উচিত। ছবি এআই

 

▶ লিপিড প্রোফাইল (Cholesterol Test)
• রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা পরিমাপ করা হয়, যা হৃদরোগের অন্যতম কারণ।
• HDL (ভালো কোলেস্টেরল), LDL (খারাপ কোলেস্টেরল) ও ট্রাইগ্লিসারাইড লেভেল পরীক্ষা করা হয়।
• ৩০ বছরের পর থেকে প্রতি বছর এই পরীক্ষা করানো উচিত।

 

▶ লিভার ফাংশন টেস্ট (Liver Function Test - LFT)
• লিভারের কার্যকারিতা কেমন তা বুঝতে সাহায্য করে।
• SGPT, SGOT, বিলিরুবিন, অ্যালবুমিন, আলকালাইন ফসফাটেজ ইত্যাদির মাত্রা নির্ণয় করা হয়।
• নিয়মিত মদ্যপান করলে, ওজন বেশি থাকলে বা হেপাটাইটিসের ঝুঁকি থাকলে এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

 

▶ কিডনি ফাংশন টেস্ট (Kidney Function Test - KFT)
• কিডনির কার্যকারিতা নির্ণয়ের জন্য এই পরীক্ষা প্রয়োজন।
• ক্রিয়েটিনিন, ইউরিয়া, ইলেকট্রোলাইট লেভেল চেক করা হয়।
• ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ থাকলে প্রতি বছর এটি করা উচিত।

 

▶ থাইরয়েড ফাংশন টেস্ট (Thyroid Function Test - TSH, T3, T4)
• থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়।
• অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি, ক্লান্তি, চুল পড়া বা শারীরিক দুর্বলতা থাকলে এটি গুরুত্বপূর্ণ।

 

বিশেষ স্বাস্থ্য পরীক্ষা (বয়স ও ঝুঁকির ভিত্তিতে)

নিয়মিত সাধারণ পরীক্ষা ছাড়াও নির্দিষ্ট বয়স পার হলে বা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা থাকলে কিছু বিশেষ পরীক্ষা করা প্রয়োজন।

▶ রক্তচাপ পরীক্ষা (Blood Pressure Measurement)
• উচ্চ রক্তচাপ (হাইপারটেনশন) নীরব ঘাতক।
• প্রতি বছর অন্তত একবার রক্তচাপ পরিমাপ করা জরুরি।

 

ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে প্রতি বছর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা দরকার। ছবি এআই

 

▶ হৃদযন্ত্রের পরীক্ষা (Heart Health Checkups)
• ইসিজি (ECG): হৃদযন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যকারিতা বোঝার জন্য।
• ইকোকার্ডিওগ্রাম (Echocardiogram): যদি হৃৎপিণ্ডে কোনো সমস্যা থাকে তবে এটি করানো দরকার।
• ৪০-এর পর বা পরিবারে হৃদরোগের ইতিহাস থাকলে এই পরীক্ষাগুলো দরকার।

 

▶ চক্ষু পরীক্ষা (Eye Examination)
• দৃষ্টিশক্তি, রেটিনার অবস্থা ও গ্লুকোমার ঝুঁকি পরীক্ষা করা হয়।
• ডায়াবেটিস রোগীদের বছরে একবার চোখ পরীক্ষা করানো বাধ্যতামূলক।

 

▶ ডেন্টাল চেকআপ (Dental Checkup)
• দাঁত ও মাড়ির স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে বছরে একবার দাঁতের ডাক্তার দেখানো উচিত।

 

▶ হাড়ের ঘনত্ব পরীক্ষা (Bone Density Test - DEXA Scan)
• বিশেষ করে নারীদের জন্য ৪০-৫০ বছরের পর এটি গুরুত্বপূর্ণ।
• অস্টিওপরোসিস বা হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি নির্ধারণে সহায়তা করে।

 

নারীদের জন্য বিশেষ স্বাস্থ্য পরীক্ষা

▶ স্তন পরীক্ষা ও ম্যামোগ্রাফি (Breast Examination & Mammography)
• ৪০ বছরের পর প্রতি বছর স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি নির্ধারণে ম্যামোগ্রাফি করানো উচিত।
• যদি পরিবারে স্তন ক্যানসারের ইতিহাস থাকে, তবে ৩০ বছর থেকেই স্ক্রিনিং শুরু করা ভালো।

 

▶ জরায়ুমুখের ক্যানসার পরীক্ষার জন্য প্যাপ স্মিয়ার ও HPV টেস্ট
• ৩০ বছরের পর থেকে প্রতি তিন বছর অন্তর প্যাপ স্মিয়ার করানো উচিত।
• জরায়ুমুখের ক্যানসার প্রতিরোধে এটি অত্যন্ত কার্যকর।

 

প্রতি বছর ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি১২ ও আয়রন লেভেল চেক করানো জরুরি। ছবি এআই

 

পুরুষদের জন্য বিশেষ স্বাস্থ্য পরীক্ষা

▶ প্রস্টেট পরীক্ষা (Prostate-Specific Antigen - PSA Test)
• ৫০ বছরের পর পুরুষদের প্রতি বছর প্রস্টেট ক্যানসারের জন্য PSA টেস্ট করানো উচিত।
• যদি পারিবারিকভাবে প্রস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি থাকে, তবে ৪০-এর পর থেকে এই পরীক্ষা করানো ভালো।

 

সংক্রমণ ও অন্যান্য পরীক্ষা

▶ হেপাটাইটিস বি ও সি পরীক্ষা
• লিভারের দীর্ঘমেয়াদি রোগ প্রতিরোধে বছরে একবার করানো ভালো।

 

▶ STD পরীক্ষা
• যৌন সংক্রমিত রোগ (HIV, Syphilis, Gonorrhea) শনাক্ত করতে নির্দিষ্ট ঝুঁকিতে থাকলে করানো উচিত।

 

▶ ভিটামিন ও খনিজ পরীক্ষা
• ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি১২ ও আয়রন লেভেল চেক করানো জরুরি।
• দেহে পুষ্টির ঘাটতি থাকলে এটি করানো দরকার।

 

সবশেষ

প্রতি বছর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো শুধু রোগ নির্ণয়ের জন্য নয়, বরং রোগ প্রতিরোধের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হলে অনেক দীর্ঘমেয়াদি ও প্রাণঘাতী রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। আপনার বয়স, পারিবারিক ইতিহাস ও জীবনধারা অনুযায়ী উপযুক্ত পরীক্ষা নির্ধারণ করে নিন এবং সুস্থ থাকুন।

কানে পানি ঢুকলে যা করবেন

প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২৫, ০২:৫৮ পিএম
আপডেট: ২১ মার্চ ২০২৫, ০৩:০৯ পিএম
কানে পানি ঢুকলে যা করবেন
কানে পানি গেলে শুনতে সমস্যা হতে পারে। ছবি এআই

কানে পানি ঢুকে যাওয়া একটি সাধারণ সমস্যা। বিশেষত সাঁতার কাটার সময় বা গোসলের সময় এটি হতে পারে। যদিও সাধারণত এটি গুরুতর কিছু নয়, তবে যদি পানি দীর্ঘ সময় ধরে কানে থেকে যায়, তাহলে ইনফেকশন হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই কানে পানি ঢুকলে দ্রুত ও নিরাপদ উপায়ে তা বের করা জরুরি।

 

কানে পানি ঢোকার লক্ষণ

◉ কানে ভারী অনুভূত হওয়া।
◉ শুনতে সমস্যা হওয়া বা শব্দ কম শোনা।
◉ কানের ভেতরে চুলকানি বা অস্বস্তি।
◉ মাঝে মাঝে বুদবুদ ফাটার মতো শব্দ শোনা।
◉ দীর্ঘ সময় পানি থাকলে ব্যথা ও সংক্রমণ হতে পারে।

 

কান থেকে পানি বের করার উপায়

১. মাথা কাত করে ঝাঁকানো
এটি সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর উপায়। মাথা কাত করে (যে কানে পানি ঢুকেছে সেই দিকটি নিচে) হালকা ঝাঁকাতে হবে। এতে মধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে পানি নিজেই বের হয়ে আসতে পারে।


২. কান টানটান করা
মাথা একদিকে কাত করে হাত দিয়ে কানের লতি (earlobe) টানলে কানের ভেতরের পথ প্রশস্ত হয়, ফলে পানি সহজেই বের হয়ে যেতে পারে। চোয়াল নাড়ানো বা হাই তোলার মতো কাজ করলেও পানি বের হতে পারে।


৩. ভ্যাকুয়াম পদ্ধতি
মাথা একদিকে কাত করে হাতের তালু দিয়ে কানের ওপর আলতোভাবে চাপ দিন ও ছেড়ে দিন। এটি ভ্যাকুয়ামের মতো কাজ করে এবং পানিকে টেনে বের করতে সাহায্য করে। এভাবে কয়েকবার করলে পানি বের হয়ে যেতে পারে।


৪. পাশ ফিরে শোয়া
যদি অন্য কোনো পদ্ধতি কাজ না করে, তাহলে আক্রান্ত কানের দিকটি নিচে রেখে শুয়ে থাকুন। মধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে ধীরে ধীরে পানি বের হয়ে যাবে।


৫. গরম সংকোচন (Warm Compress)
একটি গরম কাপড় বা তোয়ালে নিয়ে আক্রান্ত কানের ওপর হালকা চাপ দিন। ৩০ সেকেন্ড ধরে রাখুন, তার পর সরিয়ে ফেলুন। এটি কয়েকবার করলে পানি বের হয়ে যেতে পারে।


৬. হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করা
হেয়ার ড্রায়ারকে কম তাপে রেখে আক্রান্ত কানের কাছ থেকে কিছুটা দূরত্বে ধরে রাখুন। হালকা গরম বাতাস কানের ভেতরের পানিকে বাষ্পে পরিণত করে শুকিয়ে ফেলতে পারে। তবে এটি খুব কাছ থেকে করলে কানের পর্দা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, তাই সাবধানতা অবলম্বন করুন।


৭. অ্যালকোহল ও ভিনেগারের মিশ্রণ ব্যবহার
সমপরিমাণ অ্যালকোহল ও ভিনেগার মিশিয়ে কয়েক ফোঁটা কানে দিন। এটি পানিকে বাষ্পীভূত করতে সাহায্য করবে এবং ইনফেকশন প্রতিরোধ করবে। তবে কানের পর্দায় ছিদ্র থাকলে এটি ব্যবহার করা উচিত নয়।

কানে পানি গেলে কটন বাড বা অন্য কোনো বস্তু দিয়ে কান খোঁচানো উচিত নয়। ছবি এআই

 

করণীয় নয়

◉ কানে পানি ঢোকার পর কাপড় বা টিস্যু জোরে ঢুকিয়ে পরিষ্কার করতে গেলে পানি আরও ভেতরে চলে যেতে পারে।
◉ তুলো কানের গভীরে প্রবেশ করালে কানের পর্দার ক্ষতি হতে পারে।
◉ কটন বাড বা অন্য কোনো বস্তু দিয়ে কান খোঁচানো উচিত নয়। এতে ইনফেকশন বা ক্ষতি হতে পারে।

 

কখন ডাক্তার দেখানো জরুরি?

যদি নিচের কোনো উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত—
◉ ২-৩ দিনের মধ্যে পানি বের না হলে।
◉ কানে তীব্র ব্যথা অনুভূত হলে।
◉ কানের ভেতর থেকে দুর্গন্ধযুক্ত তরল বের হলে।
◉ শুনতে সমস্যা হলে।
◉ কান লাল বা ফুলে গেলে।

 

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

◉ সাঁতার কাটার সময় কান ঢেকে রাখার জন্য বিশেষ ইয়ারপ্লাগ ব্যবহার করুন।
◉ গোসলের সময় কানে পানি যাতে না ঢোকে, সেজন্য সতর্ক থাকুন।
◉ কান পরিষ্কার করার সময় খুব বেশি ভেতরে হাত দেবেন না।

 

সবশেষ

কানে পানি ঢুকলে আতঙ্কিত না হয়ে দ্রুত ও সঠিক পদ্ধতিতে তা বের করার চেষ্টা করা উচিত। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সহজ উপায়ে পানি বের হয়ে যায়। তবে যদি সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয় বা সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

যখন শরীর অতিরিক্ত ঘামে

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৫, ০৩:১৩ পিএম
যখন শরীর অতিরিক্ত ঘামে
ছবি সংগৃহীত

ঘাম হওয়া একটি স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়া। ঘামের মাধ্যমে আমাদের শরীর থেকে অপ্রয়োজনীয় ও বর্জ্য পদার্থ বের হয়। ঘামের মাধ্যমে শরীরের তাপমাত্রার ভারসাম্য রক্ষা হয়। অতিরিক্ত ঘাম হলে শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যায়। তাপমাত্রা কমে যায়। এমনকি মানুষ শকে চলে যেতে পারে। যেমন Heatstroke হয়। ঘাম পুরো শরীরে হতে পারে, আবার নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় বেশি হতে পারে। স্বাভাবিক তাপমাত্রায় অস্বাভাবিক ঘাম হলে উদ্বিগ্ন হওয়ারই কথা। 


ঘাম কী 
ঘাম হলো আমাদের ঘর্মগ্রন্থি (Sweatgland) থেকে নিঃসৃত এক ধরনের তরল পদার্থ।


অতিরিক্ত ঘামের কারণ কী?

সাধারণ কারণ
অতিরিক্ত গরম বা তাপমাত্রা আর্দ্রতা।
ব্যায়াম করা- শারীরিক পরিশ্রম করা।
গরম খাদ্য- ঝাল ও মসলাযুক্ত খাদ্য খাওয়া।
অতিরিক্ত চা ও কফি পান করা। 
টেনশন বা ভয়ে ঘাম হওয়া।
জ্বরের ও ব্যথার ওষুধ খাওয়ার পর ঘাম হওয়া ইত্যাদি।

বিশেষ কারণ 
ডায়াবেটিস কমে বা বেড়ে গেলে।
রোগী শকে গেলে
প্রেশার কমে গেলে, হার্টঅ্যাটাক হলে।
অন্তঃসত্ত্বার রক্তশূন্যতা ও মাসিক বন্ধ হওয়ার পর।
Sympathetic Nervous System-এর কিছু রোগ।
কিছু ওষুধের কারণে।
কিছু রোগ যেমন Pheochromocytoma, Lymphoma, Carcinoid Syndrome ইত্যাদি।

হাত-পা বেশি ঘামা
অনেকের হাতের তালু, পায়ের তলা ও বগলে ঘাম বেশি হয়। এটা সারা বছরেই হতে পারে, আবার মাঝে মধ্যে হতে পারে। ঘাম বেশি হওয়ার কারণে দৈনন্দিন কাজকর্ম ব্যাহত হয়। অনেকে সব সময় টিস্যু বা রুমাল ব্যবহার করেন। বেশি ঘামার কারণে আক্রমণ স্থান ঠাণ্ডা, চামড়া স্যাঁতসেঁতে এবং অনেক সময় দুর্গন্ধযুক্ত হয়। 

হাত-পা ঘামার কারণ কী?
প্রকৃত কারণ এখনো অজানা। তবে বংশগতভাবে (Autosomal Dominant) হতে পারে। অতিরিক্ত টেনশন, মানসিক চাপ ও ভয় বেড়ে যেতে পারে। এসব লোকের Sympathetic Over Activity হয়। ফলে অল্পতেই নার্ভাস হন ও দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। বড় হওয়ার পর কারও কারও কমে যায়। ঘুমের সময় সাধারণত হাত-পা ঘামে না।

চিকিৎসা
পুরো শরীরে বেশি ঘাম হলে তার কারণ নির্ণয় করে চিকিৎসা দিতে হবে।
টেনশন ও দুশ্চিন্তামুক্ত থাকুন। চর্মরোগ ছাড়া অস্বাভাবিক ঘাম হলে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

লেখক: চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ, সিনিয়র কনসালট্যান্ট, আলোক হেলথকেয়ার, মিরপুর, ঢাকা

জেনে নিন গরমে শরীর দুর্গন্ধমুক্ত রাখার ১০ উপায়

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৫, ০১:১৩ পিএম
জেনে নিন গরমে শরীর দুর্গন্ধমুক্ত রাখার ১০ উপায়
গরমকালে শরীরকে দুর্গন্ধমুক্ত রাখা কঠিন হলেও কিছু সহজ অভ্যাস গড়ে তুললে এটি সম্ভব। ছবি এআই

গরমের সময় শরীর থেকে ঘাম হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু অতিরিক্ত ঘাম ও ব্যাকটেরিয়ার কারণে অনেক সময় শরীরে দুর্গন্ধ হতে পারে। এটি শুধু অস্বস্তিকর নয়, বরং আত্মবিশ্বাসেও প্রভাব ফেলে। তাই আসুন জেনে নেই, গরমে শরীরকে দুর্গন্ধমুক্ত রাখার জন্য কিছু কার্যকর উপায়...

১. প্রতিদিন নিয়মিত গোসল করুন
গরমে শরীরকে দুর্গন্ধমুক্ত রাখতে প্রতিদিন অন্তত একবার বা তার বেশি গোসল করা অত্যন্ত জরুরি। ঠাণ্ডা পানি দিয়ে গোসল করলে শরীর সতেজ থাকে এবং ব্যাকটেরিয়া জন্মানোর সম্ভাবনা কমে যায়। বিশেষ করে যাদের অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার প্রবণতা আছে, তাদের জন্য দিনে দুইবার গোসল করাই ভালো।
গোসলের সময় জীবাণুনাশক সাবান বা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বডি ওয়াশ ব্যবহার করুন। এগুলো শরীর থেকে ব্যাকটেরিয়া দূর করে দুর্গন্ধ কমাতে সাহায্য করে। বিশেষ করে বগল, গলা, পা ও অন্যান্য সংবেদনশীল অংশ ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।

 

২. সঠিক ডিওডোরেন্ট বা অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট ব্যবহার করুন
ডিওডোরেন্ট এবং অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট দুর্গন্ধ দূর করতে কার্যকর। তবে অনেকেই এদের মধ্যে পার্থক্য জানেন না।
▶ ডিওডোরেন্ট: ব্যাকটেরিয়া কমিয়ে ঘামের দুর্গন্ধ দূর করে।
▶ অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট: ঘাম হওয়া কমিয়ে দেয়।
যারা বেশি ঘামেন, তারা অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইডযুক্ত অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট ব্যবহার করতে পারেন। তবে সংবেদনশীল ত্বকের জন্য অ্যালকোহলমুক্ত ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করাই ভালো।

 

৩. পরিষ্কার ও হালকা পোশাক পরুন
গরমের দিনে হালকা, ঢিলেঢালা ও পরিষ্কার কাপড় পরা উচিত। বিশেষ করে সুতি কাপড় শরীরের ঘাম শুষে নেয় এবং বাতাস চলাচলে সাহায্য করে। ফলে ব্যাকটেরিয়া কম জন্মায়। এ ছাড়া, প্রতিদিনের পোশাক ধুয়ে পরিষ্কার করে পরা জরুরি। ঘামের কারণে কাপড়ে ব্যাকটেরিয়া জন্মায়, যা আবার দুর্গন্ধের কারণ হতে পারে।

 

৪. নিয়মিত বগল ও শরীরের লোম পরিষ্কার করুন
বগল ও শরীরের অন্যান্য অংশে লোম বেশি থাকলে ঘাম বেশি জমে, যা ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ঘটায় এবং শরীরে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। তাই গরমের সময় বগলের লোম নিয়মিত পরিষ্কার রাখা উচিত। শেভিং বা ট্রিমিং করলে বগলে ঘামের পরিমাণ কমে এবং দুর্গন্ধ হওয়ার সম্ভাবনাও কমে যায়।

 

৫. সঠিক খাবার খান
আপনার খাদ্যাভ্যাসের ওপরেও শরীরের গন্ধ নির্ভর করে। কিছু খাবার ঘামের দুর্গন্ধ বাড়িয়ে দিতে পারে, যেমন- অতিরিক্ত মসলা ও ঝালযুক্ত খাবার, পেঁয়াজ ও রসুন, ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল। অন্যদিকে, পর্যাপ্ত পানি পান করলে শরীর থেকে টক্সিন দূর হয় এবং ঘামের দুর্গন্ধ কমে। এ ছাড়া, বেশি করে শাকসবজি, ফলমূল ও দই খেলে শরীর থেকে প্রাকৃতিকভাবে ভালো গন্ধ আসে।

 

৬. পা ও জুতার যত্ন নিন
অনেকের পা থেকে দুর্গন্ধ হয়, যা গরমকালে আরও বাড়তে পারে। এটি মূলত ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের সংক্রমণের কারণে হয়। এর জন্য কিছু সহজ সমাধান হলো প্রতিদিন পা ধোয়া ও শুকনো রাখা। পাশাপাশি জীবাণুনাশক পাউডার বা ফুট স্প্রে ব্যবহার করা। এ ছাড়া খোলামেলা ও আরামদায়ক জুতা পরা এবং মোজা প্রতিদিন পরিবর্তন করা।

 

৭. ঘরের ভেতরে ও বাইরে পরিষ্কার থাকুন
শরীরের পাশাপাশি যেসব জায়গায় আপনি বেশি সময় কাটান, সেগুলোও পরিষ্কার রাখা জরুরি। বিশেষ করে বিছানার চাদর, বালিশের কাভার ও তোয়ালে নিয়মিত ধোয়া উচিত। দীর্ঘসময় ধরে ঘামে ভেজা পোশাক পরে থাকা উচিত নয়। গরমে নিয়মিত হাত-মুখ ধুয়ে নেওয়া শরীরকে সতেজ রাখতে সাহায্য করে।

 

৮. প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করুন
বাজারের কেমিক্যালযুক্ত ডিওডোরেন্টের পরিবর্তে কিছু প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করেও শরীরের দুর্গন্ধ দূর করা সম্ভব। যেমন- 
▶ বেকিং সোডা: এটি ঘাম শুষে নিয়ে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি কমায়।
▶ লেবুর রস: ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে সাহায্য করে এবং দীর্ঘস্থায়ী সতেজতা দেয়।
▶ নারিকেল তেল: এতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান আছে, যা ত্বককে মসৃণ ও দুর্গন্ধমুক্ত রাখে।

 

৯. স্ট্রেস কমান
মনোবিজ্ঞানীদের মতে, অতিরিক্ত স্ট্রেস থাকলে শরীর বেশি ঘামে এবং সেই ঘাম থেকে দুর্গন্ধ হয়। তাই নিজেকে রিল্যাক্স রাখার চেষ্টা করুন। ধ্যান, যোগব্যায়াম বা হালকা ব্যায়াম করলে স্ট্রেস কমে এবং ঘামের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আসে।

 

১০. পর্যাপ্ত পানি পান করুন
পানি শরীরকে ঠাণ্ডা রাখতে সাহায্য করে এবং ঘামের মাধ্যমে অতিরিক্ত টক্সিন বের করে দেয়। ফলে ঘামের দুর্গন্ধ কমে যায়। প্রতিদিন কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত।

 

উপসংহার
গরমকালে শরীরকে দুর্গন্ধমুক্ত রাখা কঠিন হলেও কিছু সহজ অভ্যাস গড়ে তুললে এটি সম্ভব। প্রতিদিন গোসল করা, পরিষ্কার পোশাক পরা, সঠিক খাবার খাওয়া এবং প্রাকৃতিক প্রতিকার ব্যবহার করলে গরমেও সতেজ ও দুর্গন্ধমুক্ত থাকা যায়। এ ছাড়া, হাইজিন মেনে চলা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা দুর্গন্ধ কমানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী।