
সকালে ঘুম থেকে উঠে কী ধরনের পানীয় খাবেন, তা নিয়ে ভাবনার শেষ নেই। কী খেলে সারাদিন শরীরটা সুস্থ থাকবে, তা নিয়ে আছে নানা মত। সেটা নিয়েই আজকের আয়োজন। সকালে কোন ধরনের পানীয় উপকারী, চলুন জেনে নেই। মায়োক্লিনিক অবলম্বনে লিখেছেন রাকিব।
পানিতে লেবুর রসের সঙ্গে মধু
অনেক আগে থেকেই লেবু ও মধু সহযোগে পানি পান করার কথা শোনা যায়। সকালে খালি পেটে এই পানীয়টি গ্রহণ করলে হার্ট ভালো থাকে। পাশাপাশি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বজায় থাকে, হজম প্রক্রিয়া সচল থাকে এবং ঠান্ডা-কাশির সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। কুসুম গরম পানিতে মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে পান করতে হয়। তবে দীর্ঘসময় পান করলে অ্যাসিডিটি, দাঁতের ক্ষয়, অনিয়ন্ত্রিত সুগারসহ বেশকিছু সমস্যা হতে পারে।
পানিতে ইসবগুল
পানিতে ইসবগুল মিশিয়ে পান করার অনেক উপকারিতা আছে। সকালে এই আয়ুর্বেদিক পানীয়টি গ্রহণ করলে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা মিটে যায়। এ ছাড়া হজম প্রক্রিয়া ভালো রাখতে, অতিরিক্ত কোলেস্টেরল বা চর্বির পরিমাণ কমাতে ভালো কাজ করে। পানিতে মিশিয়ে এটি পান করতে হয়। অনেকে কিছু সময় পানিতে ভিজিয়ে রেখে ফুলে উঠলে পান করেন। মাত্রাতিরিক্ত ইসবগুল পান করলে বমি বমি ভাব, পেটে ব্যথা, ক্ষুধা কম লাগাসহ কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে।
পানিতে চিয়া সিড
চিয়া সিড একটি আদর্শ খাবার। পানিতে কিছু সময় ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে পান করলে নানা ধরনের উপকার পাওয়া যায়। যেমন- এটা ভালো ফ্যাটের উৎস। এটা থেকে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। এ ছাড়া রক্তে চিনির মাত্রা ও প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখতে চিয়া সিড সাহায্য করে। এটা পানিতে মিশিয়ে পান করতে হয়। তবে দীর্ঘসময় ভিজিয়ে রাখার প্রয়োজন নেই। অতিরিক্ত চিয়া সিড সেবনের ফলে কারও কারও অ্যালার্জি, ডায়াবেটিস হঠাৎ কমে যাওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
পানিতে তিসি
কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় ভুগছেন যারা, তারা এক গ্লাস পানিতে তিসি ভিজিয়ে খেলে উপকার পাবেন। এ ছাড়া যাদের ডায়াবেটিস, পাকস্থলীর প্রদাহ, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ, মাসিকের সমস্যাসহ ত্বকের নানা সমস্যায় ভুগছেন- তাদের জন্যও তিসি দারুণ কাজ করে। এটা পানিতে মিশিয়ে পান করতে হয়। দীর্ঘদিন তিসি-পানি পান করলে প্রদাহজনিত সমস্যা তৈরি হতে পারে। এটি ইস্ট্রোজেনের মতো কাজ করে বলে হরমোনের স্বাভাবিক কার্যকলাপে পরিবর্তন আনে। গর্ভবতী মা এবং যারা সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন, তারা এটি এড়িয়ে চলবেন।
জিরা পানি
জিরা পানিতে ফুটিয়ে সকালে খালি পেটে পান করলে নানা ধরনের উপকার পাওয়া যায়। এটি হজম প্রক্রিয়া ভালো রাখতে বেশ সাহায্য করে। প্রদাহজনিত সমস্যা কমাতে কার্যকর। গর্ভকালে মর্নিং সিকনেস কমাতেও ভালো কাজ করে। তবে দীর্ঘদিন ধরে এটি পান করলে বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা তৈরি হতে পারে।
পানিতে মেথি
মেথি একটি আয়ুর্বেদিক উপাদান। এটি পানিতে মিশিয়ে পান করলে কোলেস্টেরল ও ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে আসে। এ ছাড়া ক্যানসার প্রতিরোধে, টেস্টোস্টেরন লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখতে, ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতে, হজম প্রক্রিয়া ভালো রাখতে এবং মলাশয় পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে থাকে মেথি-পানি। তবে গর্ভকালে এটা পান না করাই ভালো। এক টানা দীর্ঘসময় পান করলে অ্যালার্জি সমস্যা, বদহজম, কিডনির জটিলতা তৈরি হতে পারে।
পানিতে দারুচিনি
দারুচিনি পানিতে ফুটিয়ে অথবা দারুচিনির গুঁড়া কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে সকালে খালি পেটে পান করলে নানা শারীরিক উপকার পাওয়া যায়। এই পানীয় রক্তের চিনি নিয়ন্ত্রণে রাখে। এ ছাড়া হৃৎপিণ্ড ভালো রাখতে, হজম প্রক্রিয়া সচল রাখতে, কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। পাশাপাশি অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের চমৎকার উৎস দারুচিনি। তবে এটি অনেকের অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। সেই সঙ্গে দুগ্ধদানকারী মায়েদের জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ।
মোহনা জাহ্নবী