ঢাকা ৮ চৈত্র ১৪৩১, শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫
English

দেশের টুথপেস্ট ও হ্যান্ডওয়াশে মিলেছে বিপজ্জনক মাত্রায় প্যারাবেন

প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯:৫৪ পিএম
দেশের টুথপেস্ট ও হ্যান্ডওয়াশে মিলেছে বিপজ্জনক মাত্রায় প্যারাবেন
ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশের টুথপেস্ট ও হ্যান্ডওয়াশে বিপজ্জনক মাত্রায় প্যারাবেন পাওয়া গেছে পরিবেশক বিষয়ে প্রতিষ্ঠান এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (এসডো) গবেষণায়। 

বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর লালমাটিয়ায় এসডোর প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। দক্ষিণ কোরিয়ার ওনজিন ইনস্টিটিউট ফর অকুপেশনাল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল হেলথ (ডব্লিউআইওইএইচ) সংস্থার সহযোগিতায় এই গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সাধারণত অধিক কার্যকরি এবং সাশ্রয়ী হওয়ার কারণে পারসোনাল কেয়ার প্রোডাক্টে প্রিজারভেটিভ হিসেবে প্যারাবেন ব্যবহার করা হয়। তবে এ ধরনের রাসায়নিক পদার্থ মানবদেহের হরমোন নিয়ন্ত্রণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্ড্রোকাইন সিস্টেমের কার্যক্রমকে ব্যাহত করে। এ কারণেই বেশ কয়েকটি দেশ তাদের এ ধরনের পণ্যগুলোতে প্যারাবেনের ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করেছে। 

সংবাদ সম্মেলনে এসডোর চেয়ারপারসন এবং সাবেক সচিব সৈয়দ মারগুব মোর্শেদ দৈনন্দিন ব্যবহৃত ব্যক্তিগত পরিচর্যা পণ্যতে প্যারাবেনের উপস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি এই রাসায়নিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানান। পাশাপাশি টুথপেস্ট ও হ্যান্ডওয়াশে প্যারাবেনের উপস্থিতি সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেন।

গবেষণা পরিচালনার জন্য ঢাকার বিভিন্ন দোকান থেকে টুথপেস্ট এবং হ্যান্ডওয়াশের ৩০টি নমুনা সংগ্রহ করার পর ল্যাব পরীক্ষার জন্য ডব্লিউআইওইএইচ-এ পাঠানো হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, টুথপেস্ট এবং হ্যান্ডওয়াশের সব নমুনাতেই নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রার রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। নমুনাগুলোতে ফ্লোরাইড (শুধু টুথপেস্টে) এবং সোডিয়াম ডাইক্লোরাইডের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে। আরও ভয়াবহ তথ্য হলো, প্রাপ্তবয়স্কদের পারসোনাল কেয়ার প্রোডাক্টে ২২টি নমুনার মধ্যে ৫টি পণ্যে সর্বোচ্চ মাত্রায় প্যারাবেনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। বিশেষ করে, একটি টুথপেস্টে ১৮২৩ মাইক্রোগ্রাম/গ্রাম এবং দুটি হ্যান্ডওয়াশের নমুনায় ১৪০৩-১৮৩৪ মাইক্রোগ্রাম/গ্রাম প্যারাবেনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এমনকি শিশুদের একটি টুথপেস্টেও ৬৫৯ মাইক্রোগ্রাম/গ্রাম মিথাইলপ্যারাবেন এবং ৫০ দশমিক ৫ মাইক্রোগ্রাম/গ্রাম বিউটাইলপ্যারাবেনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এ গবেষণায় সাতটি অন্যান্য দেশের নমুনাও বিশ্লেষণ করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশি পণ্যগুলোতেই সবচেয়ে বেশি মাত্রায় প্যারাবেন ব্যবহার করা হয়।  

এই গবেষণাটিতে মানব স্বাস্থ্যের ওপর এসব রাসায়নিক পদার্থের সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাবের বিষয়গুলোও তুলে ধরা হয়েছে। যেমন, প্যারাবেনের কারণে হরমোন নিয়ন্ত্রণে ব্যাঘাত, প্রজনন সমস্যা এমনকি ক্যানসারের ঝুঁকিও সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে ফ্লোরাইডের অতিরিক্ত ব্যবহার হাড়ের ভারসাম্য নষ্ট করে এবং দাঁতের অ্যানামেল গঠনে সমস্যা তৈরি করে। তা ছাড়া অতিরিক্ত সোডিয়াম ডাইক্লোরাইড ব্যবহারের ফলে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং কিডনির সমস্যাও সৃষ্টি হতে পারে।

এই সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, এসডোর সিনিয়র টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মো. আবুল হাশেম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মুহম্মদ আনোয়ার সাদাত, এসডোর সেক্রেটারি জেনারেল ড. শাহরিয়ার হোসেন। এ ছাড়া এসডোর নির্বাহী পরিচালক সিদ্দিকা সুলতানা অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবার সামনে পারসোনাল কেয়ার প্রোডাক্টে ব্যবহৃত প্যারাবেনের ক্ষতিকারক প্রভাব এবং ঝুঁকিগুলো তুলে ধরেন। 

কানে পানি ঢুকলে যা করবেন

প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২৫, ০২:৫৮ পিএম
আপডেট: ২১ মার্চ ২০২৫, ০৩:০৯ পিএম
কানে পানি ঢুকলে যা করবেন
কানে পানি গেলে শুনতে সমস্যা হতে পারে। ছবি এআই

কানে পানি ঢুকে যাওয়া একটি সাধারণ সমস্যা। বিশেষত সাঁতার কাটার সময় বা গোসলের সময় এটি হতে পারে। যদিও সাধারণত এটি গুরুতর কিছু নয়, তবে যদি পানি দীর্ঘ সময় ধরে কানে থেকে যায়, তাহলে ইনফেকশন হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই কানে পানি ঢুকলে দ্রুত ও নিরাপদ উপায়ে তা বের করা জরুরি।

 

কানে পানি ঢোকার লক্ষণ

◉ কানে ভারী অনুভূত হওয়া।
◉ শুনতে সমস্যা হওয়া বা শব্দ কম শোনা।
◉ কানের ভেতরে চুলকানি বা অস্বস্তি।
◉ মাঝে মাঝে বুদবুদ ফাটার মতো শব্দ শোনা।
◉ দীর্ঘ সময় পানি থাকলে ব্যথা ও সংক্রমণ হতে পারে।

 

কান থেকে পানি বের করার উপায়

১. মাথা কাত করে ঝাঁকানো
এটি সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর উপায়। মাথা কাত করে (যে কানে পানি ঢুকেছে সেই দিকটি নিচে) হালকা ঝাঁকাতে হবে। এতে মধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে পানি নিজেই বের হয়ে আসতে পারে।


২. কান টানটান করা
মাথা একদিকে কাত করে হাত দিয়ে কানের লতি (earlobe) টানলে কানের ভেতরের পথ প্রশস্ত হয়, ফলে পানি সহজেই বের হয়ে যেতে পারে। চোয়াল নাড়ানো বা হাই তোলার মতো কাজ করলেও পানি বের হতে পারে।


৩. ভ্যাকুয়াম পদ্ধতি
মাথা একদিকে কাত করে হাতের তালু দিয়ে কানের ওপর আলতোভাবে চাপ দিন ও ছেড়ে দিন। এটি ভ্যাকুয়ামের মতো কাজ করে এবং পানিকে টেনে বের করতে সাহায্য করে। এভাবে কয়েকবার করলে পানি বের হয়ে যেতে পারে।


৪. পাশ ফিরে শোয়া
যদি অন্য কোনো পদ্ধতি কাজ না করে, তাহলে আক্রান্ত কানের দিকটি নিচে রেখে শুয়ে থাকুন। মধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে ধীরে ধীরে পানি বের হয়ে যাবে।


৫. গরম সংকোচন (Warm Compress)
একটি গরম কাপড় বা তোয়ালে নিয়ে আক্রান্ত কানের ওপর হালকা চাপ দিন। ৩০ সেকেন্ড ধরে রাখুন, তার পর সরিয়ে ফেলুন। এটি কয়েকবার করলে পানি বের হয়ে যেতে পারে।


৬. হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করা
হেয়ার ড্রায়ারকে কম তাপে রেখে আক্রান্ত কানের কাছ থেকে কিছুটা দূরত্বে ধরে রাখুন। হালকা গরম বাতাস কানের ভেতরের পানিকে বাষ্পে পরিণত করে শুকিয়ে ফেলতে পারে। তবে এটি খুব কাছ থেকে করলে কানের পর্দা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, তাই সাবধানতা অবলম্বন করুন।


৭. অ্যালকোহল ও ভিনেগারের মিশ্রণ ব্যবহার
সমপরিমাণ অ্যালকোহল ও ভিনেগার মিশিয়ে কয়েক ফোঁটা কানে দিন। এটি পানিকে বাষ্পীভূত করতে সাহায্য করবে এবং ইনফেকশন প্রতিরোধ করবে। তবে কানের পর্দায় ছিদ্র থাকলে এটি ব্যবহার করা উচিত নয়।

কানে পানি গেলে কটন বাড বা অন্য কোনো বস্তু দিয়ে কান খোঁচানো উচিত নয়। ছবি এআই

 

করণীয় নয়

◉ কানে পানি ঢোকার পর কাপড় বা টিস্যু জোরে ঢুকিয়ে পরিষ্কার করতে গেলে পানি আরও ভেতরে চলে যেতে পারে।
◉ তুলো কানের গভীরে প্রবেশ করালে কানের পর্দার ক্ষতি হতে পারে।
◉ কটন বাড বা অন্য কোনো বস্তু দিয়ে কান খোঁচানো উচিত নয়। এতে ইনফেকশন বা ক্ষতি হতে পারে।

 

কখন ডাক্তার দেখানো জরুরি?

যদি নিচের কোনো উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত—
◉ ২-৩ দিনের মধ্যে পানি বের না হলে।
◉ কানে তীব্র ব্যথা অনুভূত হলে।
◉ কানের ভেতর থেকে দুর্গন্ধযুক্ত তরল বের হলে।
◉ শুনতে সমস্যা হলে।
◉ কান লাল বা ফুলে গেলে।

 

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

◉ সাঁতার কাটার সময় কান ঢেকে রাখার জন্য বিশেষ ইয়ারপ্লাগ ব্যবহার করুন।
◉ গোসলের সময় কানে পানি যাতে না ঢোকে, সেজন্য সতর্ক থাকুন।
◉ কান পরিষ্কার করার সময় খুব বেশি ভেতরে হাত দেবেন না।

 

সবশেষ

কানে পানি ঢুকলে আতঙ্কিত না হয়ে দ্রুত ও সঠিক পদ্ধতিতে তা বের করার চেষ্টা করা উচিত। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সহজ উপায়ে পানি বের হয়ে যায়। তবে যদি সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয় বা সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

যখন শরীর অতিরিক্ত ঘামে

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৫, ০৩:১৩ পিএম
যখন শরীর অতিরিক্ত ঘামে
ছবি সংগৃহীত

ঘাম হওয়া একটি স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়া। ঘামের মাধ্যমে আমাদের শরীর থেকে অপ্রয়োজনীয় ও বর্জ্য পদার্থ বের হয়। ঘামের মাধ্যমে শরীরের তাপমাত্রার ভারসাম্য রক্ষা হয়। অতিরিক্ত ঘাম হলে শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যায়। তাপমাত্রা কমে যায়। এমনকি মানুষ শকে চলে যেতে পারে। যেমন Heatstroke হয়। ঘাম পুরো শরীরে হতে পারে, আবার নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় বেশি হতে পারে। স্বাভাবিক তাপমাত্রায় অস্বাভাবিক ঘাম হলে উদ্বিগ্ন হওয়ারই কথা। 


ঘাম কী 
ঘাম হলো আমাদের ঘর্মগ্রন্থি (Sweatgland) থেকে নিঃসৃত এক ধরনের তরল পদার্থ।


অতিরিক্ত ঘামের কারণ কী?

সাধারণ কারণ
অতিরিক্ত গরম বা তাপমাত্রা আর্দ্রতা।
ব্যায়াম করা- শারীরিক পরিশ্রম করা।
গরম খাদ্য- ঝাল ও মসলাযুক্ত খাদ্য খাওয়া।
অতিরিক্ত চা ও কফি পান করা। 
টেনশন বা ভয়ে ঘাম হওয়া।
জ্বরের ও ব্যথার ওষুধ খাওয়ার পর ঘাম হওয়া ইত্যাদি।

বিশেষ কারণ 
ডায়াবেটিস কমে বা বেড়ে গেলে।
রোগী শকে গেলে
প্রেশার কমে গেলে, হার্টঅ্যাটাক হলে।
অন্তঃসত্ত্বার রক্তশূন্যতা ও মাসিক বন্ধ হওয়ার পর।
Sympathetic Nervous System-এর কিছু রোগ।
কিছু ওষুধের কারণে।
কিছু রোগ যেমন Pheochromocytoma, Lymphoma, Carcinoid Syndrome ইত্যাদি।

হাত-পা বেশি ঘামা
অনেকের হাতের তালু, পায়ের তলা ও বগলে ঘাম বেশি হয়। এটা সারা বছরেই হতে পারে, আবার মাঝে মধ্যে হতে পারে। ঘাম বেশি হওয়ার কারণে দৈনন্দিন কাজকর্ম ব্যাহত হয়। অনেকে সব সময় টিস্যু বা রুমাল ব্যবহার করেন। বেশি ঘামার কারণে আক্রমণ স্থান ঠাণ্ডা, চামড়া স্যাঁতসেঁতে এবং অনেক সময় দুর্গন্ধযুক্ত হয়। 

হাত-পা ঘামার কারণ কী?
প্রকৃত কারণ এখনো অজানা। তবে বংশগতভাবে (Autosomal Dominant) হতে পারে। অতিরিক্ত টেনশন, মানসিক চাপ ও ভয় বেড়ে যেতে পারে। এসব লোকের Sympathetic Over Activity হয়। ফলে অল্পতেই নার্ভাস হন ও দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। বড় হওয়ার পর কারও কারও কমে যায়। ঘুমের সময় সাধারণত হাত-পা ঘামে না।

চিকিৎসা
পুরো শরীরে বেশি ঘাম হলে তার কারণ নির্ণয় করে চিকিৎসা দিতে হবে।
টেনশন ও দুশ্চিন্তামুক্ত থাকুন। চর্মরোগ ছাড়া অস্বাভাবিক ঘাম হলে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

লেখক: চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ, সিনিয়র কনসালট্যান্ট, আলোক হেলথকেয়ার, মিরপুর, ঢাকা

জেনে নিন গরমে শরীর দুর্গন্ধমুক্ত রাখার ১০ উপায়

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৫, ০১:১৩ পিএম
জেনে নিন গরমে শরীর দুর্গন্ধমুক্ত রাখার ১০ উপায়
গরমকালে শরীরকে দুর্গন্ধমুক্ত রাখা কঠিন হলেও কিছু সহজ অভ্যাস গড়ে তুললে এটি সম্ভব। ছবি এআই

গরমের সময় শরীর থেকে ঘাম হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু অতিরিক্ত ঘাম ও ব্যাকটেরিয়ার কারণে অনেক সময় শরীরে দুর্গন্ধ হতে পারে। এটি শুধু অস্বস্তিকর নয়, বরং আত্মবিশ্বাসেও প্রভাব ফেলে। তাই আসুন জেনে নেই, গরমে শরীরকে দুর্গন্ধমুক্ত রাখার জন্য কিছু কার্যকর উপায়...

১. প্রতিদিন নিয়মিত গোসল করুন
গরমে শরীরকে দুর্গন্ধমুক্ত রাখতে প্রতিদিন অন্তত একবার বা তার বেশি গোসল করা অত্যন্ত জরুরি। ঠাণ্ডা পানি দিয়ে গোসল করলে শরীর সতেজ থাকে এবং ব্যাকটেরিয়া জন্মানোর সম্ভাবনা কমে যায়। বিশেষ করে যাদের অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার প্রবণতা আছে, তাদের জন্য দিনে দুইবার গোসল করাই ভালো।
গোসলের সময় জীবাণুনাশক সাবান বা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বডি ওয়াশ ব্যবহার করুন। এগুলো শরীর থেকে ব্যাকটেরিয়া দূর করে দুর্গন্ধ কমাতে সাহায্য করে। বিশেষ করে বগল, গলা, পা ও অন্যান্য সংবেদনশীল অংশ ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।

 

২. সঠিক ডিওডোরেন্ট বা অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট ব্যবহার করুন
ডিওডোরেন্ট এবং অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট দুর্গন্ধ দূর করতে কার্যকর। তবে অনেকেই এদের মধ্যে পার্থক্য জানেন না।
▶ ডিওডোরেন্ট: ব্যাকটেরিয়া কমিয়ে ঘামের দুর্গন্ধ দূর করে।
▶ অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট: ঘাম হওয়া কমিয়ে দেয়।
যারা বেশি ঘামেন, তারা অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইডযুক্ত অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট ব্যবহার করতে পারেন। তবে সংবেদনশীল ত্বকের জন্য অ্যালকোহলমুক্ত ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করাই ভালো।

 

৩. পরিষ্কার ও হালকা পোশাক পরুন
গরমের দিনে হালকা, ঢিলেঢালা ও পরিষ্কার কাপড় পরা উচিত। বিশেষ করে সুতি কাপড় শরীরের ঘাম শুষে নেয় এবং বাতাস চলাচলে সাহায্য করে। ফলে ব্যাকটেরিয়া কম জন্মায়। এ ছাড়া, প্রতিদিনের পোশাক ধুয়ে পরিষ্কার করে পরা জরুরি। ঘামের কারণে কাপড়ে ব্যাকটেরিয়া জন্মায়, যা আবার দুর্গন্ধের কারণ হতে পারে।

 

৪. নিয়মিত বগল ও শরীরের লোম পরিষ্কার করুন
বগল ও শরীরের অন্যান্য অংশে লোম বেশি থাকলে ঘাম বেশি জমে, যা ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ঘটায় এবং শরীরে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। তাই গরমের সময় বগলের লোম নিয়মিত পরিষ্কার রাখা উচিত। শেভিং বা ট্রিমিং করলে বগলে ঘামের পরিমাণ কমে এবং দুর্গন্ধ হওয়ার সম্ভাবনাও কমে যায়।

 

৫. সঠিক খাবার খান
আপনার খাদ্যাভ্যাসের ওপরেও শরীরের গন্ধ নির্ভর করে। কিছু খাবার ঘামের দুর্গন্ধ বাড়িয়ে দিতে পারে, যেমন- অতিরিক্ত মসলা ও ঝালযুক্ত খাবার, পেঁয়াজ ও রসুন, ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল। অন্যদিকে, পর্যাপ্ত পানি পান করলে শরীর থেকে টক্সিন দূর হয় এবং ঘামের দুর্গন্ধ কমে। এ ছাড়া, বেশি করে শাকসবজি, ফলমূল ও দই খেলে শরীর থেকে প্রাকৃতিকভাবে ভালো গন্ধ আসে।

 

৬. পা ও জুতার যত্ন নিন
অনেকের পা থেকে দুর্গন্ধ হয়, যা গরমকালে আরও বাড়তে পারে। এটি মূলত ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের সংক্রমণের কারণে হয়। এর জন্য কিছু সহজ সমাধান হলো প্রতিদিন পা ধোয়া ও শুকনো রাখা। পাশাপাশি জীবাণুনাশক পাউডার বা ফুট স্প্রে ব্যবহার করা। এ ছাড়া খোলামেলা ও আরামদায়ক জুতা পরা এবং মোজা প্রতিদিন পরিবর্তন করা।

 

৭. ঘরের ভেতরে ও বাইরে পরিষ্কার থাকুন
শরীরের পাশাপাশি যেসব জায়গায় আপনি বেশি সময় কাটান, সেগুলোও পরিষ্কার রাখা জরুরি। বিশেষ করে বিছানার চাদর, বালিশের কাভার ও তোয়ালে নিয়মিত ধোয়া উচিত। দীর্ঘসময় ধরে ঘামে ভেজা পোশাক পরে থাকা উচিত নয়। গরমে নিয়মিত হাত-মুখ ধুয়ে নেওয়া শরীরকে সতেজ রাখতে সাহায্য করে।

 

৮. প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করুন
বাজারের কেমিক্যালযুক্ত ডিওডোরেন্টের পরিবর্তে কিছু প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করেও শরীরের দুর্গন্ধ দূর করা সম্ভব। যেমন- 
▶ বেকিং সোডা: এটি ঘাম শুষে নিয়ে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি কমায়।
▶ লেবুর রস: ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে সাহায্য করে এবং দীর্ঘস্থায়ী সতেজতা দেয়।
▶ নারিকেল তেল: এতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান আছে, যা ত্বককে মসৃণ ও দুর্গন্ধমুক্ত রাখে।

 

৯. স্ট্রেস কমান
মনোবিজ্ঞানীদের মতে, অতিরিক্ত স্ট্রেস থাকলে শরীর বেশি ঘামে এবং সেই ঘাম থেকে দুর্গন্ধ হয়। তাই নিজেকে রিল্যাক্স রাখার চেষ্টা করুন। ধ্যান, যোগব্যায়াম বা হালকা ব্যায়াম করলে স্ট্রেস কমে এবং ঘামের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আসে।

 

১০. পর্যাপ্ত পানি পান করুন
পানি শরীরকে ঠাণ্ডা রাখতে সাহায্য করে এবং ঘামের মাধ্যমে অতিরিক্ত টক্সিন বের করে দেয়। ফলে ঘামের দুর্গন্ধ কমে যায়। প্রতিদিন কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত।

 

উপসংহার
গরমকালে শরীরকে দুর্গন্ধমুক্ত রাখা কঠিন হলেও কিছু সহজ অভ্যাস গড়ে তুললে এটি সম্ভব। প্রতিদিন গোসল করা, পরিষ্কার পোশাক পরা, সঠিক খাবার খাওয়া এবং প্রাকৃতিক প্রতিকার ব্যবহার করলে গরমেও সতেজ ও দুর্গন্ধমুক্ত থাকা যায়। এ ছাড়া, হাইজিন মেনে চলা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা দুর্গন্ধ কমানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী।

যে খাবারগুলো মন ভালো রাখতে সাহায্য করে

প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৫, ০১:০১ পিএম
আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৫, ০১:১০ পিএম
যে খাবারগুলো মন ভালো রাখতে সাহায্য করে
সঠিক খাবার আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করে, বিষণ্নতা কমায় এবং মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। ছবি এআই

আমাদের মনের অবস্থা ও আবেগের সঙ্গে খাদ্যের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। কিছু নির্দিষ্ট খাবার আমাদের মস্তিষ্কে সেরোটোনিন, ডোপামিন এবং এন্ডোরফিনের মতো ‘হ্যাপি হরমোন’ বাড়িয়ে মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। এ ছাড়া, পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ খাবার মানসিক চাপ কমিয়ে মনকে প্রশান্ত করে। আসুন, জেনে নেওয়া যাক কোন কোন খাবার মন ভালো রাখতে সহায়ক—

ডার্ক চকলেট
ডার্ক চকলেটে প্রচুর পরিমাণে ফ্ল্যাভোনয়েড, ক্যাফেইন এবং থিওব্রোমিন থাকে, যা মস্তিষ্কে সেরোটোনিনের মাত্রা বাড়িয়ে মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। এটি দেহে এন্ডোরফিন নিঃসরণ ঘটায়, যা তাৎক্ষণিকভাবে আনন্দের অনুভূতি সৃষ্টি করে।

 

কলা
কলায় রয়েছে ভিটামিন বি৬, যা মস্তিষ্কে সেরোটোনিন উৎপাদন বাড়ায়। এটি মানসিক অবসাদ দূর করতে সাহায্য করে এবং মনকে ফুরফুরে করে তোলে। এ ছাড়া, কলায় থাকা প্রাকৃতিক চিনি এবং ফাইবার শরীরে শক্তি জোগায় ও ক্লান্তি দূর করে।

 

বাদাম ও বীজজাতীয় খাবার
আখরোট, কাজু বাদাম, পেস্তা বাদাম, কাঠ বাদাম এবং সূর্যমুখীর বীজে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ম্যাগনেসিয়াম, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। এগুলো স্ট্রেস হরমোন কমিয়ে দেয় এবং মনকে প্রশান্ত করে।

বাদামে আছে ম্যাগনেসিয়াম, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। ছবি এআই

 

দই ও অন্যান্য ফার্মেন্টেড খাবার
দইয়ে রয়েছে প্রোবায়োটিক, যা অন্ত্রের সুস্থতা বজায় রাখে এবং মস্তিষ্কের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করে মুড ভালো রাখতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া কিমচি, কেফির ও কম্বুচার মতো ফার্মেন্টেড খাবারও মন ভালো রাখতে সাহায্য করে।

 

ওটস ও অন্যান্য পূর্ণ শস্য
ওটস ও ব্রাউন রাইসের মতো পূর্ণ শস্য ধীরে ধীরে গ্লুকোজ সরবরাহ করে, যা মস্তিষ্কের শক্তির উৎস। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং মন ভালো রাখতে সহায়ক হয়।

 

মাছ, বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ
স্যামন, টুনা, সার্ডিন, ট্রাউট এবং ম্যাকেরেলের মতো মাছ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড-সমৃদ্ধ, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত মাছ খেলে বিষণ্নতার ঝুঁকি কমে যায়।

সামুদ্রিক মাছ মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। ছবি এআই

 

ডিম
ডিমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন বি, ওমেগা-৩ এবং কোলিন থাকে, যা স্নায়ুতন্ত্রকে সুস্থ রাখে ও মানসিক চাপ কমায়। এটি মনোযোগ বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে।

 

কমলা ও অন্যান্য সাইট্রাস ফল
কমলা, লেবু ও মাল্টার মতো ফল ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ, যা কর্টিসল (স্ট্রেস হরমোন) কমিয়ে মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। এগুলোতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে।

 

গ্রিন টি
গ্রিন টিতে থিয়ানিন নামক অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে, যা মানসিক চাপ কমাতে ও মস্তিষ্ককে রিল্যাক্স করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টও আছে, যা মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়।

গ্রিন টির থিয়ানিন মস্তিষ্ককে রিল্যাক্স করতে সাহায্য করে। ছবি এআই

 


খেজুর ও মধু
খেজুর প্রাকৃতিক মিষ্টি, যা রক্তে শর্করার ভারসাম্য বজায় রাখে এবং তাৎক্ষণিকভাবে মস্তিষ্কে শক্তি জোগায়। মধুতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।

 

দারুচিনি ও হলুদ
হলুদে কারকুমিন নামক শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান থাকে, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়িয়ে বিষণ্নতা কমায়। দারুচিনি মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে মানসিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

 

ব্রকোলি ও অন্যান্য সবুজ শাকসবজি
ব্রকোলি, পালং শাক, সরিষা শাক ও অন্যান্য সবুজ শাকসবজিতে প্রচুর ফোলেট ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে, যা বিষণ্নতা কমিয়ে মনকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে।

ব্রকোলি বিষণ্নতা কমায়। ছবি এআই

 

বিট
বিট শর্করা ও ফোলেট-সমৃদ্ধ, যা মস্তিষ্কে অক্সিজেনের প্রবাহ বাড়িয়ে মুড উন্নত করে। এটি ক্লান্তি দূর করে ও মন ভালো রাখে।

 

আঙুর ও বেরিজাতীয় ফল
স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, ব্ল্যাকবেরি ও রাস্পবেরির মতো বেরিতে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, যা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে ও স্মৃতিশক্তি বাড়ায়।

আঙুরের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। ছবি এআই

 

কফি
ক্যাফেইনযুক্ত কফি মানসিক উদ্দীপনা সৃষ্টি করে এবং মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। এটি ডোপামিন নিঃসরণ বাড়িয়ে মানসিক প্রশান্তি দেয়। তবে অতিরিক্ত কফি খাওয়া ঠিক নয়। কারণ এটি উদ্বেগ বাড়াতে পারে।

 

দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার
দুধে ট্রিপটোফান নামক অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে, যা সেরোটোনিন উৎপাদন বাড়ায় এবং মস্তিষ্ককে রিল্যাক্স করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া, এতে থাকা ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।

 

টমেটো
টমেটোতে প্রচুর লাইকোপিন ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা মানসিক চাপ কমিয়ে মুড ভালো রাখতে সাহায্য করে। এটি মস্তিষ্কের প্রদাহ কমাতেও কার্যকর।

টমেটোতে প্রচুর লাইকোপিন রয়েছে, যা মুড ভালো রাখে। ছবি এআই

 

খেসারি ও ছোলার ডাল
এগুলোর মধ্যে থাকা প্রোটিন ও বি-ভিটামিন মস্তিষ্কের সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং মানসিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখে।

 

মিষ্টি আলু
মিষ্টি আলুতে রয়েছে প্রচুর বিটা-ক্যারোটিন ও ফাইবার, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রেখে মানসিক চাপ কমায়।

 

মসলা ও ভেষজ চা
পুদিনা চা, ক্যামোমাইল চা ও আদা চা মানসিক চাপ কমাতে ও ঘুমের মান উন্নত করতে সাহায্য করে, যা মন ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ।

আদা চা মানসিক চাপ কমাতে ও ঘুমের মান উন্নত করতে সাহায্য করে। ছবি এআই

 

উপসংহার
সুস্থ ও আনন্দময় জীবনযাপনের জন্য পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক খাবার আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করে, বিষণ্নতা কমায় এবং মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। তাই খাদ্যাভ্যাসে এই স্বাস্থ্যকর খাবারগুলো যুক্ত করে আমরা সহজেই মানসিক প্রশান্তি লাভ করতে পারি।

সিঁড়ি ব্যবহার করলে হাঁপিয়ে যান? কারণ জেনে নিন

প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০২৫, ১২:৪২ পিএম
আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২৫, ০১:১৭ পিএম
সিঁড়ি ব্যবহার করলে হাঁপিয়ে যান? কারণ জেনে নিন
সিঁড়ি বেয়ে উঠলে হাঁটার চেয়ে অনেক বেশি শক্তি ব্যয় হয়। ছবি এআই

সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় অনেক মানুষ দ্রুত হাঁপিয়ে যায়, যা শারীরিক সক্ষমতা ও শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যবস্থার কার্যকারিতার ওপর নির্ভর করে। এই পরিস্থিতির পেছনে বেশ কয়েকটি শারীরবৃত্তীয় এবং জীবনধারা-সংক্রান্ত কারণ রয়েছে। 

১. শক্তির চাহিদা ও অক্সিজেন গ্রহণ
সিঁড়ি বেয়ে ওঠা একটি উচ্চমাত্রার শারীরিক কার্যক্রম। হাঁটার চেয়ে এটি অনেক বেশি শক্তি ব্যয় করে, কারণ এতে শরীরকে তার স্বাভাবিক মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বিপরীতে কাজ করতে হয়।
▶ অক্সিজেনের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি
শরীরের পেশিগুলো যখন বেশি কাজ করে, তখন সেগুলোর বেশি অক্সিজেন প্রয়োজন হয়। আমাদের হৃৎপিণ্ড দ্রুত রক্ত প্রবাহিত করে এবং ফুসফুস বেশি অক্সিজেন গ্রহণ করে এই চাহিদা পূরণের জন্য। ফলে শ্বাস-প্রশ্বাসের হার দ্রুত বেড়ে যায় এবং আমরা হাঁপিয়ে যাই।
▶ এনার্জি প্রোডাকশন ও মেটাবলিজম
আমাদের দেহ প্রধানত অ্যারোবিক (অক্সিজেননির্ভর) এবং অ্যানারোবিক (অক্সিজেনবিহীন) উপায়ে শক্তি উৎপাদন করে। দ্রুতগতিতে সিঁড়ি বেয়ে ওঠার ফলে দেহ কখনো কখনো অ্যারোবিক উপায়ে পর্যাপ্ত শক্তি উৎপাদন করতে পারে না এবং ল্যাকটিক অ্যাসিড তৈরি হয়, যা পেশির ক্লান্তি ও হাঁপিয়ে যাওয়ার কারণ হতে পারে।

 

২. ফিটনেস ও শারীরিক সক্ষমতা
সাধারণত শারীরিকভাবে ফিট ব্যক্তিরা কম হাঁপান। কারণ তাদের হার্ট ও ফুসফুস শক্তিশালী থাকে এবং কার্যকরভাবে অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে।
▶ কার্ডিওভাসকুলার ফিটনেস
যাদের হৃদযন্ত্র ও শ্বাসতন্ত্র উন্নত, তারা কম হাঁপান। কারণ তাদের দেহ দ্রুত অক্সিজেন গ্রহণ ও সরবরাহ করতে পারে। যাদের ফিটনেস কম, তাদের শরীর অক্সিজেনের ঘাটতি অনুভব করে, ফলে তারা দ্রুত হাঁপিয়ে যায়।
▶ পেশিশক্তি ও সহনশীলতা
দুর্বল পেশি হলে বেশি শক্তি ব্যয় হয়, যা ক্লান্তির অন্যতম কারণ। যাদের নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস নেই, তারা সহজেই হাঁপিয়ে যান। কারণ তাদের পেশিগুলো কম কার্যকরভাবে শক্তি ব্যবহার করে।

 

৩. অতিরিক্ত ওজন ও শরীরের গঠন
স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন থাকলে শরীরকে বেশি ওজন বহন করতে হয়, যা সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় হাঁপিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ।
▶ শরীরের অতিরিক্ত ওজন
যদি একজন ব্যক্তি অতিরিক্ত ওজনের হন, তবে তার পায়ের পেশিগুলোর ওপর বেশি চাপ পড়ে এবং হৃৎপিণ্ডকে বেশি পরিশ্রম করতে হয়। ফলে দেহ দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং হাঁপিয়ে যায়।
▶ চর্বির বিপাকীয় প্রভাব
চর্বিযুক্ত দেহে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হতে পারে, যা দেহের কোষে অক্সিজেন সরবরাহ কমিয়ে দেয় এবং হাঁপিয়ে যাওয়ার কারণ হয়।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের পেশিশক্তির কার্যক্ষমতা কমে যায়। ছবি এআই

 

৪. শ্বাসতন্ত্র ও হার্টের সমস্যা
যাদের শ্বাসতন্ত্র বা হৃদযন্ত্রজনিত সমস্যা রয়েছে, তারা সাধারণত দ্রুত হাঁপিয়ে যান। কারণ তাদের দেহ যথাযথভাবে অক্সিজেন গ্রহণ ও সরবরাহ করতে পারে না।
▶ অ্যাজমা ও ব্রংকাইটিস
যাদের অ্যাজমা বা ক্রনিক ব্রংকাইটিস রয়েছে, তারা শ্বাসনালির সংকোচনের কারণে স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে পারেন না। সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় তাদের ফুসফুস পর্যাপ্ত অক্সিজেন সংগ্রহ করতে পারে না, ফলে তারা দ্রুত হাঁপিয়ে যান।
▶ হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ
যদি কারও হার্ট দুর্বল হয় বা উচ্চ রক্তচাপ থাকে, তাহলে শরীর পর্যাপ্ত অক্সিজেনযুক্ত রক্ত প্রবাহিত করতে পারে না। ফলে সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় দ্রুত হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায় এবং হাঁপিয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়।

 

৫. অক্সিজেন গ্রহণের দক্ষতা ও বয়স
শরীরের বয়স ও অক্সিজেন গ্রহণের দক্ষতাও হাঁপিয়ে যাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
▶ বয়স বৃদ্ধির প্রভাব
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের পেশিশক্তি, ফুসফুসের কার্যকারিতা ও হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা কমে যায়। ফলে বেশি বয়সীদের মধ্যে হাঁপিয়ে যাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়।
▶ অক্সিজেন গ্রহণের দক্ষতা
যাদের VO2 max (অক্সিজেন গ্রহণের সর্বোচ্চ সক্ষমতা) কম, তারা কম অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারেন এবং দ্রুত হাঁপিয়ে যান।

 

৬. জীবনযাপন ও অভ্যাস
আধুনিক জীবনযাত্রার কারণে শারীরিক পরিশ্রম কমে গেছে, যা হাঁপিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ।
▶ অনিয়মিত ব্যায়াম
যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন না, তাদের কার্ডিওভাসকুলার ফিটনেস কম থাকে এবং তারা দ্রুত হাঁপিয়ে যান।
▶ ধূমপান ও অ্যালকোহল গ্রহণ
ধূমপান ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়, ফলে শরীর পর্যাপ্ত অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে না। তাই ধূমপায়ীরা দ্রুত হাঁপিয়ে যান।

নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং ধূমপান এড়িয়ে চললে হাঁপিয়ে যাওয়ার সমস্যা কমানো সম্ভব। ছবি এআই

 

৭. মানসিক চাপ ও উদ্বেগ
মনস্তাত্ত্বিক কারণেও হাঁপিয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দিতে পারে।
▶ উদ্বেগ ও প্যানিক অ্যাটাক
যদি কেউ উদ্বিগ্ন বা স্ট্রেসে থাকেন, তবে তার শ্বাস-প্রশ্বাসের হার স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়, যা হাঁপিয়ে যাওয়ার কারণ হতে পারে।
▶ অতিরিক্ত উত্তেজনা
কখনো কখনো অতিরিক্ত দ্রুতগতিতে সিঁড়ি বেয়ে ওঠার ফলে শরীরের অক্সিজেন গ্রহণের হার স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যেতে পারে, যা হাঁপিয়ে যাওয়ার অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে।

 

উপসংহার
সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় হাঁপিয়ে যাওয়ার পেছনে মূলত শারীরিক পরিশ্রম, অক্সিজেন গ্রহণের দক্ষতা, ফিটনেস, ওজন, হৃদযন্ত্র ও শ্বাসযন্ত্রের অবস্থা, জীবনযাত্রার ধরন এবং মানসিক অবস্থার ভূমিকা রয়েছে। নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং ধূমপান এড়িয়ে চললে হাঁপিয়ে যাওয়ার সমস্যা কমানো সম্ভব। যদি কেউ অস্বাভাবিকভাবে দ্রুত হাঁপিয়ে যান, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ দ্রুত হাঁপিয়ে যাওয়া মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে।