ঢাকা ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫
English
মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পুরুষের রোগ গাইনেকোমাস্টিয়া

প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৪, ০৫:৩৬ পিএম
পুরুষের রোগ গাইনেকোমাস্টিয়া

গাইনেকোমাস্টিয়া শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ গাইনেক ও মাস্টস থেকে। এখানে গাইনেক অর্থ হলো মেয়েদের মতো আর মাস্টস অর্থ হলো স্তন। অর্থাৎ মেয়েদের মতো স্তন। গাইনেকোমাস্টিয়া প্রকৃত পক্ষে পুরুষদের স্তন গ্রন্থি টিস্যু বৃদ্ধির সঙ্গে স্তন বৃদ্ধির একটি অবস্থা। রোগটি সব বয়সের পুরুষের মধ্যে দেখা যায়, তবে নবজাতক, বয়ঃসন্ধিকালে এবং বৃদ্ধ বয়সে বেশি দেখা যায়। টেস্টোস্টেরন (পুরুষ যৌন হরমোন) এবং ইস্ট্রোজেন (মহিলা যৌন হরমোন) হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে গাইনেকোমাস্টিয়া হয়। জানাচ্ছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সাবেক বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ডা. সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদ

গাইনেকোমাস্টিয়া কয়েক প্রকারের হয়ে থাকে। এর মধ্যে আছে-

১। সিডো-গাইনেকোমাস্টিয়া  
শৈশবে এই সিডো- গাইনেকোমাস্টিয়ার সূত্রপাত ঘটে, স্তনে অতিরিক্ত চর্বি ডিপোজিশনের কারণে। এ ধরনের গাইনেকোমাস্টিয়ার চিকিৎসায় সাধারণত খাদ্যাভ্যাস ও শারীরিক ব্যায়ামকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়। সার্জারির প্রয়োজন হয় না।

২। জুভেনাইল গাইনেকোমাস্টিয়া
বয়ঃসন্ধিকালের ট্রানজিশনাল সময়ে জুভেনাইল গাইনেকোমাস্টিয়ার উদ্ভব ঘটে। এ ধরনের গাইনেকোমাস্টিয়ার চিকিৎসা সার্জারির মাধ্যমেই করতে হয়। অনেক সময় ছোট হলে সাধারণত সুস্থ হয়ে যায়।

৩। ড্রাগ ইন্ডিউসড গাইনেকোমাস্টিয়া
বিভিন্ন রকম ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতে বা খাদ্যশস্য, দুধ বা মাছ-মাংসে পরোক্ষভাবে প্রয়োগ করা হরমোনের প্রভাবে এ ধরনের গাইনেকোমাস্টিয়া হয়ে থাকে, যার একমাত্র চিকিৎসা সার্জারি। যে ওষুধের কারণে এটি হয়েছে সে ওষুধ বন্ধ করে দিলে আর বৃদ্ধি পায় না। তবে যতটুকু বৃদ্ধি পেয়েছে সেটি সার্জারির মাধ্যমেই চিকিৎসা করতে হয়।
গবেষণা বলছে আরও কিছু ওষুধের ব্যবহার ড্রাগ ইন্ডিউসড গাইনেকোমাস্টিয়ার কারণ হিসেবে চিহ্নিত
অ্যান্টি-অ্যান্ড্রোজেন ওষুধ: এই ওষুধগুলো বর্ধিত প্রোস্টেট, প্রোস্টেট ক্যানসার এবং অন্য ব্যাধিগুলোর চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ হলো স্পিরোনোল্যাক্টোন, ফিনাস্টেরাইড এবং ফ্লুটামিড।
অ্যানাবলিক স্টেরয়েড এবং অ্যান্ড্রোজেন: এই ওষুধগুলো বিলম্বিত বয়ঃসন্ধি, পেশি ক্ষয় এবং অন্য রোগের কারণে হরমোনের ঘাটতির চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়।
এইডসের জন্য ওষুধ: এইচআইভি রোগীদের জন্য কিছু ওষুধ, যেমন এফাভিরেঞ্জ, ইস্ট্রোজেনের মতো বৈশিষ্ট্যযুক্ত এবং গাইনেকোমাস্টিয়া হতে পারে।
অ্যান্টি-অ্যাংজাইটি ওষুধ: ডায়াজেপামের মতো ওষুধ সেবনের ফলে গাইনেকোমাস্টিয়া হতে পারে।
অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার (ADHD) ওষুধ: অ্যাডেরালের মতো ওষুধ যাতে অ্যামফেটামাইন থাকে সেগুলো গাইনেকোমাস্টিয়া হতে পারে।
অ্যান্টিবায়োটিক: সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত ওষুধগুলো গাইনেকোমাস্টিয়া হতে পারে।
ট্রাইসাইক্লিক এন্টিডিপ্রেসেন্টস স্তনকে বড় করে তুলতে পারে।
কেমোথেরাপির ওষুধ: ক্যানসারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ সেবনের ফলে গাইনেকোমাস্টিয়া হতে পারে।
আলসারের ওষুধ: সিমেটিডিনের মতো ওষুধ স্তন বড় করতে পারে।
পেট খালি করার ওষুধ: মেটোক্লোপ্রামাইডের মতো ওষুধ স্তন বড় করতে পারে।
হার্টের ওষুধ: ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার এবং ডিগক্সিনের মতো ওষুধগুলো গাইনেকোমাস্টিয়ার জন্য দায়ী হতে পারে।কেমোথেরাপির ওষুধ: ক্যানসারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ সেবনের ফলে গাইনেকোমাস্টিয়া হতে পারে।
আলসারের ওষুধ: সিমেটিডিনের মতো ওষুধ স্তন বড় করতে পারে।
পেট খালি করার ওষুধ: মেটোক্লোপ্রামাইডের মতো ওষুধ স্তন বড় করতে পারে।
হার্টের ওষুধ: ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার এবং ডিগক্সিনের মতো ওষুধগুলো গাইনেকোমাস্টিয়ার জন্য দায়ী হতে পারে।

৪। সিস্টেমিক ডিজিজ গাইনেকোমাস্টিয়া
শারীরিক নানা জটিল অসুখের প্রভাবেও গাইনেকোমাস্টিয়া হয়ে থাকে, যাকে বলা হয় ‘সিস্টেমিক ডিজিজ গাইনেকোমাস্টিয়া’। এ ধরনের রোগগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো Cushing’s Syndrome এবং Cirrhosis Liver।
স্তনের সাইজ ও ধরন অনুযায়ী ৪টি গ্রেডে গাইনেকোমাস্টিয়াকে ভাগ করা হয়।
গ্রেড ১ - অতিরিক্ত ত্বক ছাড়া স্তনের সামান্য বৃদ্ধি
গ্রেড ২ - অতিরিক্ত ত্বক ছাড়া মাঝারি মাপের বৃদ্ধি
গ্রেড ৩ - অতিরিক্ত ত্বক সমেত মাঝারি বৃদ্ধি
গ্রেড ৪ - অতিরিক্ত ত্বক সমেত ভালো বৃদ্ধি

গাইনেকোমাস্টিয়ার ঝুঁকির কারণগুলো কী কী? 
কিছু কারণ গাইনেকোমাস্টিয়া হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। এই কারণগুলো হলো বার্ধক্য, অ্যাথলেটিক পারফরম্যান্সের উন্নতির জন্য অ্যানাবলিক স্টেরয়েড ব্যবহার করা, লিভারের ব্যাধি, কিডনি ফেইলিওর, থাইরয়েড রোগ, টিউমার, ক্লাইনফেল্টার সিন্ড্রোমের মতো স্বাস্থ্যের অবস্থা। এ ছাড়া অ্যান্টি-এন্ড্রোজেন, অ্যান্টি-অ্যাংজাইটি ওষুধ, অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস, অ্যান্টি-আলসার ওষুধ, এডিএইচডির ওষুধ, এইডসের ওষুধ ইত্যাদি ব্যবহার। অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন, অবৈধ ওষুধের ব্যবহার, ল্যাভেন্ডার তেলের মতো ভেষজ পণ্যের ব্যবহার এবং অ্যালকোহল এবং বিনোদনমূলক ওষুধের ব্যবহারও গাইনেকোমাস্টিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। এসব ওষুধের মধ্যে আছে মারিজুয়ানা, মদ, অ্যামফিটামাইনস, হেরোইন, অ্যানাবলিক স্টেরয়েড (পেশি নির্মাণ এবং অ্যাথলেটিক কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত) ও মেথাডোন।

গাইনেকোমাস্টিয়ার লক্ষণ
গাইনেকোমাস্টিয়ায় আক্রান্ত অনেক পুরুষের কোনো উপসর্গ নাও থাকতে পারে। যাইহোক, তাদের মধ্যে কিছু নিম্নলিখিত উপসর্গ আছে যেমন- ব্যথা, স্তনের টিস্যু ফোলা, স্তনের কোমলতা, স্তনের সংবেদনশীলতা এবং স্তনবৃন্ত স্রাব।

কীভাবে গাইনেকোমাস্টিয়া নির্ণয় করবেন
শারীরিক পরীক্ষা: ডাক্তার প্রথমে রোগীকে শারীরিকভাবে পরীক্ষা করবেন। রোগীর সম্পূর্ণ চিকিৎসা ইতিহাস এবং পারিবারিক ইতিহাসসহ রোগীর লক্ষণগুলো উল্লেখ করা হয়।
রক্ত পরীক্ষা: রক্তে হরমোনের মাত্রা এবং অন্তর্নিহিত সংক্রমণের উপস্থিতি পরীক্ষা করার জন্য একটি রক্ত পরীক্ষা কার্যকর।
স্তন আল্ট্রাসাউন্ড: শব্দ তরঙ্গ স্তন বৃদ্ধির স্পষ্ট ছবি পেতে ব্যবহার করা হয়।
ম্যামোগ্রাম: এটি স্তনের টিস্যুর কোনো পরিবর্তন বা অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পরীক্ষা করতে সাহায্য করে।
কম্পিউটারাইজড টোমোগ্রাফি (সিটি) স্ক্যান এবং ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (এমআরআই) স্ক্যান: এগুলো শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ যেমন স্তন টিস্যুর স্পষ্ট ছবি পেতে ইমেজিং পরীক্ষা করা হয়।
টেস্টিকুলার আল্ট্রাসাউন্ড: টেস্টিসের আশপাশের এলাকার স্পষ্ট ছবি তৈরি করতে শব্দ তরঙ্গ ব্যবহার করা হয়।
টিস্যু বায়োপসি: সন্দেহভাজন টিস্যু বৃদ্ধির একটি ছোট নমুনা এক্সাইজ করা হয় এবং কোনো ক্যানসার কোষের উপস্থিতি পরীক্ষা করার জন্য পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। এই পরীক্ষা সাধারণত স্তন ক্যানসার বাতিল করার জন্য করা হয়।

গাইনেকোমাস্টিয়ার চিকিৎসা কী?
সিডো-গাইনেকোমাস্টিয়া ব্যতীত অন্যান্য গাইনেকোমাস্টিয়ার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সার্জারি একমাত্র চিকিৎসা পদ্ধতি। যদিও এটি শারীরিক অসুবিধার থেকে সামাজিক বিড়ম্বনাটাই বেশি। এ ক্ষেত্রে প্লাস্টিক সার্জারি করলে সাধারণত দাগ থাকে না।

গাইনেকোমাস্টিয়া কীভাবে প্রতিরোধ করবেন
গাইনেকোমাস্টিয়া প্রতিরোধ করার জন্য কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। এর মধ্যে আছে বিনোদনমূলক ওষুধের ব্যবহার এড়িয়ে চলা, অ্যালকোহল সেবন না করা, ডাক্তার দ্বারা নির্ধারিত স্টেরয়েড ব্যবহার এড়িয়ে চলা, বডি বিল্ডিং পরিপূরক এবং ওষুধ এড়ানো, স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা, সুষম খাদ্য খাওয়া এবং ব্যায়াম নিয়মিত করা।

কলি

টাইফয়েড জ্বর হবার এখনই সময়

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৫, ০১:২৬ পিএম
আপডেট: ০২ জুন ২০২৫, ০১:৪৫ পিএম
টাইফয়েড জ্বর হবার এখনই সময়
টাইফয়েড ব্যাকটেরিয়া আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত ও অন্ত্রনালিতে অবস্থান করে। ছবি এআই

টাইফয়েড জ্বর হলো স্যালমোনেলা টাইফি (Salmonella Typhi) নামের ব্যাকটেরিয়ার কারণে সৃষ্ট একটি জীবনঘাতী সংক্রমণ। এটি সাধারণত দূষিত খাবার বা পানির মাধ্যমে ছড়ায়। শরীরে প্রবেশের পর ব্যাকটেরিয়াটি দ্রুত গুণে বেড়ে রক্তপ্রবাহে ছড়িয়ে পড়ে এবং পুরো শরীরে সংক্রমণ ঘটায়।
শহরায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বজুড়ে টাইফয়েডের প্রকোপ বাড়ছে। একই সঙ্গে, অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ার ফলে নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনের অভাব রয়েছে এমন এলাকাগুলিতে রোগটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়ছে।

উপসর্গ ও শনাক্তকরণ
টাইফয়েড ব্যাকটেরিয়া শুধুমাত্র মানুষের মধ্যেই বাস করে। আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত ও অন্ত্রনালিতে এই জীবাণু অবস্থান করে। সাধারণ উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে— দীর্ঘস্থায়ী উচ্চ জ্বর, ক্লান্তি, মাথাব্যথা, বমিভাব, পেটব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া। কিছু রোগীর শরীরে লালচে র‍্যাশও দেখা যেতে পারে। মারাত্মক সংক্রমণে জটিলতা বেড়ে যায়। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে টাইফয়েড নিশ্চিতভাবে শনাক্ত করা যায়।

বিস্তার, ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল ও আক্রান্তের হার
উন্নত জীবনমান ও অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারের ফলে শিল্পোন্নত দেশগুলোতে টাইফয়েডের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। তবে এটি এখনো আফ্রিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল ও পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে একটি গুরুতর জনস্বাস্থ্য সমস্যা।

২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় ৯ মিলিয়ন মানুষ টাইফয়েডে আক্রান্ত হয় এবং প্রায় ১ লক্ষ ১০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনের অভাবে বসবাসরত জনগোষ্ঠী বিশেষত শিশুরা এই রোগে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

চিকিৎসা ও প্রতিরোধ
টাইফয়েড জ্বর সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিকের মাধ্যমে নিরাময়যোগ্য, তবে অনেক অঞ্চলে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধ (antimicrobial resistance) দেখা যাওয়ায় চিকিৎসা জটিল ও ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে।
অনেক সময় রোগের উপসর্গ চলে যাওয়ার পরও ব্যক্তি দেহে জীবাণু বহন করতে থাকেন এবং মলদ্বারের মাধ্যমে অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারেন। তাই চিকিৎসাকালে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মেনে চলা জরুরি —
• চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্ধারিত সময় পর্যন্ত অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করা।
• টয়লেট ব্যবহারের পর সাবান ও পানি দিয়ে ভালোভাবে হাত ধোয়া।
• যতক্ষণ না রোগ পুরোপুরি নিরাময় হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত অন্যের জন্য খাবার তৈরি বা পরিবেশন না করা।
• চিকিৎসা শেষে নিশ্চিত হওয়ার জন্য পুনরায় জীবাণু পরীক্ষা করানো।

টিকা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
টাইফয়েড প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো: নিরাপদ পানি নিশ্চিত করা, খাদ্য প্রস্তুতকারীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থা, এবং টাইফয়েড টিকাদান।
বর্তমানে WHO অনুমোদিত দুটি টাইফয়েড কনজুগেট টিকা (Typhoid Conjugate Vaccine) রয়েছে, যা ৬ মাস বয়স থেকে ৪৫ বা ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত মানুষকে একবার ইনজেকশনের মাধ্যমে দেওয়া যায়। এর পাশাপাশি দুটি পুরনো ধরনের টিকাও কিছু দেশে ব্যবহার হয়।
• দুই বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সীদের জন্য ইনজেকশনভিত্তিক টিকা।
• ছয় বছর বা তার বেশি বয়সীদের জন্য মুখে খাওয়ার ক্যাপসুল-আকারের টিকা।
এগুলোর কার্যকারিতা তুলনামূলকভাবে কম এবং দীর্ঘস্থায়ী সুরক্ষা নিশ্চিত করে না, তাই মাঝে মাঝে বুস্টার ডোজ প্রয়োজন হয়। WHO অনুমোদিত নতুন কনজুগেট টিকাগুলো বর্তমানে টাইফয়েড-প্রবণ দেশগুলোর শিশুদের নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচিতে যুক্ত করা হচ্ছে।

ভ্রমণকারীদের জন্য পরামর্শ
টাইফয়েড-প্রবণ অঞ্চলে ভ্রমণকারীদের জন্য ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম হলেও নিরাপদ খাদ্য, পানীয় ও ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধির বিষয়গুলো মেনে চলা জরুরি। নিচের পরামর্শগুলো অনুসরণ করলে নিরাপদ থাকা সম্ভব:
• সবসময় ভালোভাবে রান্না করা ও গরম খাবার গ্রহণ করুন।
• কাঁচা দুধ ও দুধজাত পণ্য পরিহার করুন। কেবল পাস্তুরিত বা ফুটানো দুধ পান করুন।
• নিরাপদ পানি ছাড়া বরফ গ্রহণ করবেন না।
• সন্দেহজনক পানির ক্ষেত্রে ফুটিয়ে বা নির্ভরযোগ্য জীবাণুনাশক দিয়ে বিশুদ্ধ করে পান করুন।
• টয়লেট ব্যবহারের পর, পশুপাখি বা খামারের পশুর সংস্পর্শে আসার পর সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিন।
• কাঁচা ফল ও সবজি ভালোভাবে ধুয়ে অথবা খোসা ছাড়িয়ে খান।
টাইফয়েড জ্বর প্রতিরোধযোগ্য একটি রোগ হলেও বিশ্বজুড়ে এর প্রকোপ এখনো মারাত্মক। উন্নত স্যানিটেশন, নিরাপদ পানি, জনসচেতনতা এবং টিকাদানই পারে এই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে।

সূত্র: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)

বাসি খাবার খাওয়ার ক্ষতিকর দিক

প্রকাশ: ২৯ মে ২০২৫, ০২:৩৩ পিএম
আপডেট: ২৯ মে ২০২৫, ০২:৫৩ পিএম
বাসি খাবার খাওয়ার ক্ষতিকর দিক
বারবার বাসি খাবার খাওয়া স্বাস্থ্যহানির কারণ হতে পারে। ছবি এআই

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে খাবার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবার শরীরকে সুস্থ রাখে, কর্মক্ষমতা বাড়ায় এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তবে অনেক সময় আমরা তাজা খাবারের পরিবর্তে বাসি খাবার খেয়ে থাকি, যা বিভিন্ন কারণে শরীরের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। নিচে বাসি খাবার খাওয়ার কিছু প্রধান ক্ষতিকর দিক বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।

○ ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক সংক্রমণ
বাসি খাবার দীর্ঘ সময় ধরে সংরক্ষিত থাকায় তাতে সহজেই ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক জন্ম নিতে পারে। বিশেষ করে যদি খাবারটি সঠিক তাপমাত্রায় বা উপযুক্ত পাত্রে সংরক্ষণ না করা হয়, তাহলে সালমোনেলা, ই. কোলাই, ক্লোস্ট্রিডিয়াম বোটুলিনাম ইত্যাদি ক্ষতিকর জীবাণু জন্ম নিতে পারে। এসব জীবাণু খাবারের গুণগত মান নষ্ট করে এবং খাদ্যবাহিত রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

 

○ খাদ্য বিষক্রিয়া
বাসি খাবার খাওয়ার ফলে অনেক সময় খাদ্য বিষক্রিয়ার (Food Poisoning) ঘটনা ঘটে। এর ফলে বমি, পেটব্যথা, পাতলা পায়খানা, জ্বর, দুর্বলতা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে। শিশু, বৃদ্ধ ও রোগপ্রবণ মানুষদের জন্য এটি আরও মারাত্মক হতে পারে এবং হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজনও হতে পারে।

 

বাসি খাবারে সহজেই ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক জন্ম নিতে পারে। ছবি এআই

 

○ পুষ্টিগুণের ক্ষতি
খাবার দীর্ঘ সময় সংরক্ষণের ফলে তার পুষ্টিগুণ অনেকটাই হ্রাস পায়। বিশেষ করে ভিটামিন 'সি', 'বি-কমপ্লেক্স' জাতীয় পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিনগুলো দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। ফলে সেই খাবার থেকে শরীর পর্যাপ্ত পুষ্টি পায় না এবং ধীরে ধীরে অপুষ্টির সমস্যা দেখা দিতে পারে।

 

○ হজমজনিত সমস্যা
বাসি খাবার অনেক সময় কঠিন ও শুকনো হয়ে যায়, যা সহজে হজম হয় না। এর ফলে পেট ফাঁপা, গ্যাস, বুক জ্বালা, অম্বল ও কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে যাদের হজমশক্তি দুর্বল, তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যাগুলো বেশি দেখা দেয়।

 

○ দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকি
নিয়মিত বাসি খাবার খাওয়ার অভ্যাস গ্যাস্ট্রিক আলসার, লিভার সমস্যা, কিডনি ক্ষতি এমনকি ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়াতে পারে। অনেক বাসি খাবারে নাইট্রেট, ফাঙ্গাল টক্সিন (যেমন অ্যাফ্লাটক্সিন) তৈরি হয়, যা দীর্ঘমেয়াদে ক্যানসারজনিত রোগের কারণ হতে পারে।

 

বাসি খাবার থেকে গ্যাস্ট্রিক আলসার, লিভার সমস্যা, কিডনি ক্ষতি হতে পারে। ছবি এআই

 

মনে রাখবেন
বাসি খাবার কখনো কখনো খাওয়া যায়, যদি তা উপযুক্তভাবে সংরক্ষিত হয় এবং গরম করে খাওয়া হয়। তবে অভ্যাসবশত বা অলসতায় বারবার বাসি খাবার খাওয়া স্বাস্থ্যহানির কারণ হতে পারে। সুস্থ থাকতে হলে তাজা ও গরম খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে এবং খাবার সংরক্ষণের ব্যাপারে যত্নশীল হতে হবে। মনে রাখা দরকার, ‘স্বাস্থ্যই সম্পদ’ — আর স্বাস্থ্য রক্ষা করতে হলে খাবারের গুণগত মান নিশ্চিত করা অপরিহার্য।

মজবুত হাড়ের জন্য যা খাবেন

প্রকাশ: ২৯ মে ২০২৫, ০১:৫৯ পিএম
মজবুত হাড়ের জন্য যা খাবেন

শরীরের ভিত বা কাঠামো হলো হাড়। এই হাড়গুলো যদি দুর্বল হয়ে পড়ে, তবে আমাদের দৈনন্দিন চলাফেরা, ভারসাম্য রাখা কিংবা সামান্য আঘাতে টিকে থাকাও কঠিন হয়ে পড়ে। তাই হাড় মজবুত রাখতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত জরুরি। হাড়ের সুস্থতায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ক্যালসিয়াম ভিটামিন ডি। ছাড়াও প্রোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস ভিটামিন কে হাড়ের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে বড় ভূমিকা রাখে।

দুধ দুগ্ধজাত খাবার হলো ক্যালসিয়ামের প্রধান উৎস। গরুর দুধ, ছানা, পনির বা টক দইয়ে রয়েছে এমন উপাদান, যা হাড় গঠনে সহায়ক। প্রতিদিন অন্তত এক গ্লাস দুধ পান করলে দেহের ক্যালসিয়ামের বড় একটি অংশ পূরণ হয়ে যায়। ডিম, বিশেষ করে ডিমের কুসুমে থাকা ভিটামিন ডি শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণে সহায়তা করে। পাশাপাশি ডিমে থাকা প্রোটিন হাড়ের টিস্যু গঠনে সাহায্য করে।

সামুদ্রিক মাছ যেমন- সালমন, টুনা ম্যাকারেলেও রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ডি এবং ওমেগা- ফ্যাটি অ্যাসিড, যা হাড়ের ক্ষয় রোধ করে এবং হাড়কে শক্তিশালী রাখে। দেশি ছোট মাছ যেমন- পুঁটি, চাপিলা, মলা ইত্যাদি কাঁটাসহ খাওয়া যায় বলে এগুলো ক্যালসিয়ামের একটি দারুণ উৎস।

সবুজ শাকসবজি; যেমন- পালং শাক, মেথি শাক, ব্রকলি ইত্যাদিতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন কে ম্যাগনেসিয়াম। ভিটামিন কে হাড়ের ভেতরের খনিজ উপাদান স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে। বাদাম বীজ, বিশেষ করে তিল, কাঠবাদাম চিয়া সিডে রয়েছে এমন পুষ্টি উপাদান, যা হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায়।

ডাল ছোলা, বিশেষ করে নিরামিষভোজীদের জন্য প্রোটিন ম্যাগনেসিয়ামের ভালো উৎস। এগুলো হাড় গঠনে সহায়ক খনিজ সরবরাহ করে। একইভাবে সয়া সয়ার তৈরি পণ্য; যেমন- টোফু বা সয়া দুধেও ক্যালসিয়াম প্রোটিন পাওয়া যায়, যা হাড় সুস্থ রাখতে কার্যকর।

ফলমূলের মধ্যে কমলা, কলা কিউইতে ভিটামিন সি পটাশিয়াম থাকে। ভিটামিন সি কোলাজেন তৈরি করতে সাহায্য করে, যা হাড়ের গঠন মজবুত করে। কিছু প্রজাতির মাশরুমেও ভিটামিন ডি থাকে, বিশেষ করে যেগুলো সূর্যের আলোতে জন্মায়।

শুধু খাবারেই নয়, হাড়ের সুস্থতায় সূর্যের আলোও জরুরি। শরীর প্রাকৃতিকভাবে ভিটামিন ডি তৈরি করে সূর্যালোকে থাকলে। দিনে অন্তত ১৫-২০ মিনিট রোদে থাকা উচিত। এদিকে চিনি, অতিরিক্ত লবণ, সফট ড্রিংকস, ধূমপান অ্যালকোহল হাড়ের জন্য ক্ষতিকর। এগুলো ক্যালসিয়াম শোষণে বাধা সৃষ্টি করে এবং হাড় ক্ষয় করে।

মাংস হাড়ের জন্য উপকারী। মাংসে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে, যা হাড়ের গঠন মজবুতিতে সহায়তা করে। এতে থাকা জিঙ্ক হাড়ের বৃদ্ধিতে সহায়ক এবং ক্যালসিয়ামের শোষণ বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া মাংসে থাকা ভিটামিন বি১২ ফসফরাস হাড়কে সুস্থ শক্ত রাখে। বিশেষ করে লাল মাংসে আয়রন খনিজ পদার্থ থাকে, যা হাড়ের ঘনত্ব বজায় রাখতে ভূমিকা রাখে।

তবে অতিরিক্ত মাংস খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য  ক্ষতিকর হতে পারে, তাই পরিমাণমতো খাওয়াই ভালো। সুষম খাদ্যের অংশ হিসেবে মাংস খেলে হাড়ের সুস্থতা বজায় থাকে।

সবশেষে বলা যায়, হাড়ের যত্ন নেওয়া মানে শুধু দাঁড়িয়ে থাকা নয়, সুস্থভাবে বেঁচে থাকার ভিত গড়ে তোলা।

দ্রুত খাবার খাওয়ার ক্ষতিকর দিক

প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৫, ০২:০৬ পিএম
আপডেট: ২৮ মে ২০২৫, ০২:১২ পিএম
দ্রুত খাবার খাওয়ার ক্ষতিকর দিক
দ্রুত খাওয়ার অভ্যাস আপাতদৃষ্টিতে সময় বাঁচালেও শরীরের জন্য ক্ষতিকর। ছবি এআই

বর্তমান দ্রুতগতির জীবনে অনেকেই সময় বাঁচাতে দ্রুত খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলেছেন। বিশেষ করে কর্মজীবী মানুষ, শিক্ষার্থী বা যারা ব্যস্ত রুটিনে চলেন, তারা প্রায়শই দ্রুত খাওয়াকে একটি প্রয়োজনীয়তা হিসেবে দেখেন। কিন্তু এই অভ্যাসটি ক্ষতির কারণ হতে পারে। নিচে দ্রুত খাবার খাওয়ার কিছু গুরুতর ক্ষতিকর দিক নিয়ে আলোচনা করা হলো —

হজমে সমস্যা
দ্রুত খাওয়ার সময় আমরা খাবারটি ভালোভাবে চিবিয়ে খাই না। ফলে তা পাকস্থলীতে গিয়ে ঠিকভাবে ভাঙতে পারে না। এতে হজমে সমস্যা হয়। গ্যাস, অম্বল, পেট ফাঁপা এবং পেটব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। দীর্ঘমেয়াদে এটি গ্যাস্ট্রিক আলসার বা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোমের (IBS) মতো রোগের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা
আমাদের মস্তিষ্ক সাধারণত খাবার খাওয়ার ২০ মিনিট পর অনুভব করে যে পেট ভরে গেছে। দ্রুত খেলে এই সময়ের আগে অনেক বেশি খাবার খাওয়া হয়ে যায়, ফলে অতিরিক্ত ক্যালোরি শরীরে জমা হয়। এর ফলাফল হলো ওজন বৃদ্ধি, স্থূলতা এবং পরবর্তীতে টাইপ-২ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের ঝুঁকি।

 

দ্রুত খেলে অম্বল, পেট ফাঁপা এবং পেটব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। ছবি এআই

 

পুষ্টি গ্রহণের ঘাটতি
দ্রুত খাওয়ার ফলে খাবার চিবিয়ে খাওয়ার পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায় না, ফলে হজমের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয় না এবং শরীর প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণগুলো ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারে না। দীর্ঘমেয়াদে এটি পুষ্টিহীনতা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাসের কারণ হতে পারে।

মানসিক চাপ ও উদ্বেগ বৃদ্ধি
দ্রুত খাওয়া একটি চাপযুক্ত অভ্যাস। এটি শরীরে কর্টিসল নামক স্ট্রেস হরমোনের নিঃসরণ বাড়ায়, যা মানসিক চাপ ও উদ্বেগের কারণ হতে পারে। এছাড়া দ্রুত খাওয়া অনেক সময় অসচেতনভাবে ‘ইমোশনাল ইটিং’-এর সঙ্গে সম্পর্কিত, যেখানে মানুষ দুঃখ বা মানসিক চাপ কমানোর জন্য খাবারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।

মুখ ও দাঁতের সমস্যাও হতে পারে
খাবার ভালোভাবে না চিবিয়ে খেলে দাঁতের স্বাভাবিক কাজ বাধাগ্রস্ত হয়। চোয়াল ও দাঁতে অস্বস্তি, ব্যথা বা দাঁতের ক্ষয় দেখা দিতে পারে। এমনকি মুখে দুর্গন্ধের সমস্যাও বাড়তে পারে।

 

খাবার ভালোভাবে না চিবিয়ে খেলে দাঁতের স্বাভাবিক কাজ বাধাগ্রস্ত হয়। ছবি এআই

 

করণীয়
◉ প্রতিটি লোকমা অন্তত ২০-৩০ বার চিবিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করুন।
◉ প্রতিবার খাবার খাওয়ার সময় অন্তত ২০ মিনিট সময় দিন।
◉ খাবার খাওয়ার সময় অন্য কিছু না করে সম্পূর্ণ মনোযোগ দিন।
◉ ধীরে ও স্বস্তির সঙ্গে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

মরে রাখবেন
দ্রুত খাওয়ার অভ্যাস আপাতদৃষ্টিতে সময় বাঁচালেও শরীরের জন্য একটি নীরব শত্রু। এটি দীর্ঘমেয়াদে নানা শারীরিক ও মানসিক সমস্যার জন্ম দিতে পারে। তাই সচেতনভাবে ধীরে, ভালোভাবে চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। সুস্থ জীবনযাপনের জন্য খাবারকে সময় দেওয়া কোনো বিলাসিতা নয়, বরং এটি একটি প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য-অভ্যাস।

ক্যানসারের ১০টি লক্ষণ: সচেতনতাই প্রতিরোধের প্রথম ধাপ

প্রকাশ: ২৬ মে ২০২৫, ১২:৫৫ পিএম
আপডেট: ২৬ মে ২০২৫, ০১:০৫ পিএম
ক্যানসারের ১০টি লক্ষণ: সচেতনতাই প্রতিরোধের প্রথম ধাপ
ক্যানসার শরীরের যে কোনো অঙ্গকে প্রভাবিত করতে পারে। ছবি এআই

ক্যানসার এমন একটি রোগ যা শরীরের কোষগুলো নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বিভাজিত হয়ে টিউমার বা ফোলার সৃষ্টি করে। এটি শরীরের যে কোনো অঙ্গকে প্রভাবিত করতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যানসারের লক্ষণগুলো অনেক সময় সাধারণ অসুস্থতার মতো মনে হয়, তাই এগুলোকে অবহেলা করলে মারাত্মক পরিণতি হতে পারে। নিচে ক্যানসারের ১০টি সাধারণ লক্ষণ নিয়ে আলোচনা করা হলো, যেগুলোর প্রতি আমাদের সজাগ থাকা প্রয়োজন।

১. অজানা ওজন হ্রাস
হঠাৎ করেই যদি কোনো ব্যাখ্যাতীত কারণে শরীরের ওজন কমতে থাকে, তা ক্যানসারের একটি প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। বিশেষ করে ৫ কেজি বা তার বেশি ওজন কমে গেলে সতর্ক হওয়া জরুরি। প্যানক্রিয়াস, পাকস্থলী, খাদ্যনালি বা ফুসফুসের ক্যানসারে এই ধরনের লক্ষণ দেখা যেতে পারে।

২. দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি
অতিরিক্ত পরিশ্রম না করেও যদি দীর্ঘদিন ধরে ক্লান্তি বা দুর্বলতা অনুভব করেন, তাহলে সেটি রক্তাল্পতা বা ক্যানসারজনিত হতে পারে। বিশেষ করে লিউকেমিয়া বা কোলন ক্যানসারে এমন উপসর্গ দেখা যায়। শরীরে রক্তস্বল্পতা তৈরি হলে অক্সিজেন পরিবহনে সমস্যা হয়, যার ফলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে।

৩. জ্বর এবং বারবার সংক্রমণ
প্রায়ই জ্বর হওয়া বা সংক্রমণে ভোগা শরীরে ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হওয়ার ইঙ্গিত হতে পারে। এটি বিশেষ করে রক্তের ক্যানসার যেমন লিউকেমিয়ার একটি সাধারণ লক্ষণ। শরীরে ক্যানসার কোষ ছড়িয়ে পড়লে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।

৪. ত্বকে পরিবর্তন
ত্বকে অস্বাভাবিক দাগ, ঘন কালো ছোপ, আঁচিলের রঙ বা আকারে পরিবর্তন হলে তা ত্বক ক্যানসারের ইঙ্গিত হতে পারে। নতুন কোনো দাগ তৈরি হলে অথবা পুরোনো আঁচিল ব্যথা বা রক্তপাত করলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

৫. কফের সঙ্গে রক্ত অথবা দীর্ঘমেয়াদি কাশি
ফুসফুস ক্যানসারের একটি সাধারণ লক্ষণ হলো দীর্ঘদিন ধরে শুকনো কাশি থাকা বা কফের সঙ্গে রক্ত যাওয়া। বিশেষ করে ধূমপায়ীদের মধ্যে এই লক্ষণ বেশি দেখা যায়। দীর্ঘস্থায়ী কাশি কখনোই অবহেলা করা উচিত নয়।

৬. কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়ার মতো অন্ত্রের অভ্যাসে পরিবর্তন
হঠাৎ করে যদি মলত্যাগের ধরনে পরিবর্তন আসে — যেমন কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া বা মলের রঙ গাঢ় হয়ে যাওয়া — তবে তা কোলন ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। মলে রক্ত থাকা আরও বিপজ্জনক সংকেত হতে পারে।

৭. প্রস্রাবে সমস্যা বা রক্ত
প্রস্রাবের সময় জ্বালা, রক্ত বা ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রবণতা প্রস্রাবনালী বা প্রোস্টেট ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। এটি পুরুষদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, তবে নারীদের ক্ষেত্রেও ব্লাডার ক্যানসারে এই ধরনের উপসর্গ থাকতে পারে।

৮. অজানা ব্যথা
শরীরের কোনো অংশে দীর্ঘদিন ধরে ব্যথা থাকলে তা গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত। উদাহরণস্বরূপ, পিঠে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা অস্থি ক্যানসার বা স্তন ক্যানসারের ছড়িয়ে পড়ার লক্ষণ হতে পারে। ক্যানসার যখন আশপাশের টিস্যুতে ছড়িয়ে পড়ে তখন ব্যথা দেখা দেয়।

৯. ঘনঘন রক্তপাত
মাসিকের বাইরে যোনি থেকে রক্তপাত, মলত্যাগ বা প্রস্রাবের সময় রক্ত যাওয়া, নাক দিয়ে রক্তপাত — এগুলো ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। যেমন জরায়ুমুখ ক্যানসার বা মূত্রাশয়ের ক্যানসারে এই ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়।

১০. চাকা বা গাঁট তৈরি হওয়া
স্তনে, ঘাড়ে বা শরীরের অন্য অংশে কোনো চাকা বা গাঁট অনুভব করলে, তা অবহেলা করা ঠিক নয়। অনেক সময় এই চাকা ব্যথাহীন হয়, কিন্তু ক্যানসারের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। বিশেষ করে স্তন ক্যানসারে এটি প্রথম লক্ষণ হিসেবে দেখা যায়।

উপসংহার
উল্লিখিত লক্ষণগুলো সবসময় ক্যানসার নির্দেশ করে না, তবে এগুলো যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা ধীরে ধীরে খারাপের দিকে যায়, তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। ক্যানসার যত দ্রুত শনাক্ত করা যায়, তার চিকিৎসা তত বেশি কার্যকর হয়। তাই সচেতনতা ও নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষাই হতে পারে ক্যানসার প্রতিরোধের প্রথম ধাপ।