ঢাকা ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫
English
মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পায়ে ব্যথা যা জানতে ও করতে হবে

প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২৪, ০৫:৫৪ পিএম
পায়ে ব্যথা যা জানতে ও করতে হবে

পা হলো হাঁটাচলা করা এবং সোজা হয়ে দাঁড়ানোর জন্য শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। হাঁটা এবং দাঁড়িয়ে থাকার সময় শরীরের ওজনের ভারসাম্য বজায় রাখতে পায়ের গঠন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমেরিকান পেডিয়াট্রিক মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের গবেষণাতে জানা গেছে, ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত মানুষের এক জোড়া পা গড়ে ৭৫ হাজার মাইল অতিক্রম করে। ফলে পায়ে দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষয়ক্ষতি হয়, আঘাত পায় এবং শারীরিক চাপ সহ্য করে, যেগুলো পায়ের ব্যথার মূল কারণ। মাই উপচার অবলম্বনে জানাচ্ছেন মো. রাকিব

নারীদের চেয়ে পুরুষদের পা ব্যথা বেশি হয়। পায়ের যেকোনো জায়গায় ব্যথা হতে পারে। তবে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয় গোড়ালি এবং মেটাটারসালস (গোড়ালি এবং পায়ের আঙুলের মাঝের হাড়)। কারণ এরাই শরীরের ওজন সবচেয়ে বেশি বহনকারী পায়ের অংশ। ঘরোয়া চিকিৎসা করতে চাইলে বরফের প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। এ ছাড়া সঠিক মাপের জুতা, যা ধাক্কা সামলাতে পারে। চাইলে গোড়ালির নিচে প্যাড ব্যবহার করতে পারেন। করতে পারেন স্ট্রেচিং ব্যায়াম। এগুলো পায়ের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

বিভিন্ন রকম পায়ের ব্যথা
একজন ব্যক্তির পায়ের বিভিন্ন অংশে ব্যথা হতে পারে। যেমন-
গোড়ালি ব্যথা: গোড়ালি থেকে পায়ের আঙুল পর্যন্ত সরু এবং লম্বা লিগামেন্টটির প্রদাহকে প্ল্যানটার ফ্যাসাইটিস বলা হয়। গোড়ালির বৃদ্ধি (ক্যালসিয়াম জমে গিয়ে হাড় বড় হয়ে যাওয়া) হলে অথবা লিগামেন্টগুলোয় অতিরিক্ত চাপ পড়লে লিগামেন্টগুলোয় টান পড়ে এবং আঘাত লাগে, ফলে গোড়ালি ব্যথা হয়।

গোড়ালি বা পায়ের পাতার মাঝখানে ব্যথা: অনেকক্ষণ শুয়ে থাকার পর (ঘুম থেকে ওঠার পর) বা বসে থাকার পর উঠে দাঁড়িয়ে প্রথম কয়েকটি পদক্ষেপের ফেলার সময় গোড়ালিতে অসহ্য ব্যথা লাগে। কয়েক পা চলার পর ব্যথা কমতে থাকে। ব্যায়াম করার পর বা অনেক্ষণ হাঁটার পর বা ওই রকমের কোনো কাজের পর ব্যথা বেড়ে যায়। ব্যথার সঙ্গে শিরশিরানি বা অসাড়তাও বোধ হতে পারে।

আচিলিস টেনডিনাইটাস: যে টেনডনটি গোড়ালি আর পায়ের মধ্যে সংযোগ রাখে, তার প্রদাহকে আচিলেস টেনডিনাইটিস বলা হয়। পায়ের পেশির শেষ প্রান্ত উপরের দিকে উঠে গিয়ে আচিলেস টেনডন তৈরি হয়। হাঁটা, লাফানো এবং দৌড়ানোর সময়ে পা নিচের দিকে নামাতে আচিলেস টেনডন সাহায্য করে। অত্যধিক হাঁটা বা দৌড়ানো, পায়ের পেশি শক্ত হয়ে যাওয়া, শক্ত জমির উপরে দৌড়ানো, লাফানো এবং এই রকমের অন্যান্য কার্যক্রমের ফলে টেনডনের প্রদাহ হয়। ফ্ল্যাট ফিট, জুতার নাল এবং আর্থ্রাইটাস আচিলেস টেনডনের প্রদাহ হয়।

মধ্য পাতায় ব্যথা: পায়ের পাতার মধ্যবর্তী স্থানের ব্যথাকে মেটাটারসালজিয়া বলা হয়। সঠিক জুতা না পরা, আর্থ্রাইটাস এবং অত্যধিক খেলাধুলার কারণে গোড়ালি আর আঙুলের মধ্যবর্তী জায়গার হাড়ে ব্যথা হয়। স্থূলতা, চ্যাপটা পায়ের পাতা, ধনুকাকৃতির পায়ের পাতা, আর্থ্রাইটাস, বাত, বুনিয়নস (পায়ের বুড়ো আঙুলের প্রথম গাঁটে বেদনাদায়ক ফোলা), হ্যামারটো (পায়ের পাতা স্থায়ীভাবে নিচের দিকে বেঁকে থাকা), মর্টনের নিউরোমা (ক্যানসার নয় এমন একটি ফোলা যা নার্ভকে চাপ দেয়), ফেটে যাওয়া এবং বয়স্কদের ডায়াবেটিস থেকে মেটাটারসালজিয়া হয়।

পাতার সামনের দিকে ব্যথা: কতগুলো সাধারণ সমস্যা যেমন- বাড়তে থাকা পায়ের নখ, ভেরুসে বা আব, নখে ও ত্বকে ছত্রাকের সংক্রমণ, (অ্যাথলেটস ফুট), কড়া পড়া এবং ক্যালোসাইটস (মোটা ও শক্ত চামড়া), বুনিয়নস, হ্যামার টো, ক্ল ফুট এবং বাত পায়ের পাতের সামনের অংশকে প্রভাবিত করে। সাধারণত যে লক্ষণগুলো দেখা যায়, সেগুলো হল, প্রভাবিত জায়গা ফুলে যাওয়া, খসখসে হয়ে যাওয়া এবং সঙ্গে ধক ধক করা ব্যথা হয়। ব্যথাটা তখন হয় যখন পায়ের নখ ভেতর দিকে বাড়তে থাকে এবং বাত থাকে। বাত হচ্ছে হাড়ের প্রদাহ, বিশেষত পায়ের বুড়ো আঙুলের।
পায়ের পাতার বিকৃতি থেকেও ব্যথা হতে পারে যেমন-
হ্যামার টো: পায়ের পাতা হাতুড়ির মতো দেখতে হয়।

ক্ল ফুট: পায়ের বিকৃতির জন্য পায়ের পাতাকে থাবার মতো দেখতে মনে হয়।

বুনিয়ন: হাড়ে একটি শক্ত পিণ্ড হওয়ার কারণে পায়ের বুড়ো আঙুল ডান দিকের আঙুলের দিকে বেঁকে যায়।

স্নায়ু জড়িয়ে যাওয়া: পায়ের পাতার পেশির সংকোচন হওয়াতে স্নায়ুগুলো জড়িয়ে যায়। ফলে পাতার সামনের দিকে জ্বালা ও ব্যথা হয়। যখন স্নায়ুগুলো জড়িত থাকে তখন পায়ে শিরশির করা এবং অসাড়তা বোধ হয়।

ছত্রাকের সংক্রমণ: ছত্রাকের সংক্রমণ হলে ব্যথার সঙ্গে ফোড়া হয় এবং ত্বক শুষ্ক ও খসখসে হয়ে যায়। নখগুলো ভঙ্গুর হয়ে যায় এবং তাদের রং সাধারণত বদলে যায়।

পায়ের সাধারণ ব্যথা
ইডিমা, হাড়ের ফাটল এবং পাদস্ফোট (দীর্ঘ সময় ধরে কম তাপমাত্রাতে থাকার কারণে ফোলা) পায়ের ব্যথার কারণ। ভেরুসে বা আব, কড়া এবং কলুষতার জন্য পায়ে তীক্ষ্ণ ব্যথা হয়। পাদস্ফোট হলে পায়ে তীব্র ব্যথা হয়। চামড়া ফুলে যায় এবং রং বদলে গাঢ় লাল বা নীল হয়ে যায়।
পায়ের ফাটল এবং প্রদাহ যেমন- রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটাস, বাত, অস্টিওআর্থ্রাইটাস, সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটাস এবং অন্যান্য সমস্যা থাকলে অসহ্য ব্যথা হতে থাকে। ব্যথার সঙ্গে সঙ্গে পা ফুলে যায়, ফলে পা নাড়াচাড়া করা কষ্টকর হয়ে পড়ে।

পায়ের পাতার ব্যথার চিকিৎসা
বিভিন্ন প্রকার ওষুধ এবং শল্যচিকিৎসার মাধ্যমে পায়ের ব্যথার নিরাময় করা যায়। প্যারাসিটামল জাতীয় ব্যথা কমানোর ওষুধগুলো অল্প ব্যথায় আরাম দেয়। প্রদাহ কমানোর ওষুধগুলো প্রদাহ হ্রাস করে ব্যথা কমায়। যখন অন্য কিছু আর কাজ না করে তখন কর্টিকোস্টেরইড ওষুধ সেবন করলে এবং ব্যথার জায়গায় ইনজেকশান দিলে পা ব্যথা খুব তাড়াতাড়ি কমে যায়। ইউরিক অ্যাসিড কমানোর ওষুধ দিয়ে বাতের চিকিৎসা করা হয়।

এদিকে পায়ের বিকৃতি ঠিক করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতির অস্ত্রোপচার করা হয়। ফলে যে স্নায়ুগুলো অবরুদ্ধ অবস্থাতে শিরশির করা এবং অসাড়তার সঙ্গে সঙ্গে ব্যথার কারণ থাকে, সেগুলো মুক্তি পায়। পায়ের ব্যথাও ঠিক হয়ে যায়। প্ল্যানটার ফাসিয়াতে চাপ সৃষ্টিকারী শক্ত হয়ে যাওয়া পা, যেগুলো স্ট্রেচিং ব্যায়ামে সাড়া দেয় না, সেই পেশিগুলো গ্যাসট্রোনেমাস রিসেশান পদ্ধতিতে টানটান করা হয়। তাতে ব্যথা কমে যায়। প্ল্যানটার ফাসিয়াকে ছাড়াতে একটা ছোট অপারেশন করা হয়, যাতে শক্ত হয়ে যাওয়া প্ল্যানটার ফাসিয়ার টেনশন কমে ব্যথা নিরাময় হয়।

কলি

 

 

টাইফয়েড জ্বর হবার এখনই সময়

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৫, ০১:২৬ পিএম
আপডেট: ০২ জুন ২০২৫, ০১:৪৫ পিএম
টাইফয়েড জ্বর হবার এখনই সময়
টাইফয়েড ব্যাকটেরিয়া আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত ও অন্ত্রনালিতে অবস্থান করে। ছবি এআই

টাইফয়েড জ্বর হলো স্যালমোনেলা টাইফি (Salmonella Typhi) নামের ব্যাকটেরিয়ার কারণে সৃষ্ট একটি জীবনঘাতী সংক্রমণ। এটি সাধারণত দূষিত খাবার বা পানির মাধ্যমে ছড়ায়। শরীরে প্রবেশের পর ব্যাকটেরিয়াটি দ্রুত গুণে বেড়ে রক্তপ্রবাহে ছড়িয়ে পড়ে এবং পুরো শরীরে সংক্রমণ ঘটায়।
শহরায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বজুড়ে টাইফয়েডের প্রকোপ বাড়ছে। একই সঙ্গে, অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ার ফলে নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনের অভাব রয়েছে এমন এলাকাগুলিতে রোগটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়ছে।

উপসর্গ ও শনাক্তকরণ
টাইফয়েড ব্যাকটেরিয়া শুধুমাত্র মানুষের মধ্যেই বাস করে। আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত ও অন্ত্রনালিতে এই জীবাণু অবস্থান করে। সাধারণ উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে— দীর্ঘস্থায়ী উচ্চ জ্বর, ক্লান্তি, মাথাব্যথা, বমিভাব, পেটব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া। কিছু রোগীর শরীরে লালচে র‍্যাশও দেখা যেতে পারে। মারাত্মক সংক্রমণে জটিলতা বেড়ে যায়। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে টাইফয়েড নিশ্চিতভাবে শনাক্ত করা যায়।

বিস্তার, ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল ও আক্রান্তের হার
উন্নত জীবনমান ও অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারের ফলে শিল্পোন্নত দেশগুলোতে টাইফয়েডের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। তবে এটি এখনো আফ্রিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল ও পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে একটি গুরুতর জনস্বাস্থ্য সমস্যা।

২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় ৯ মিলিয়ন মানুষ টাইফয়েডে আক্রান্ত হয় এবং প্রায় ১ লক্ষ ১০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনের অভাবে বসবাসরত জনগোষ্ঠী বিশেষত শিশুরা এই রোগে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

চিকিৎসা ও প্রতিরোধ
টাইফয়েড জ্বর সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিকের মাধ্যমে নিরাময়যোগ্য, তবে অনেক অঞ্চলে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধ (antimicrobial resistance) দেখা যাওয়ায় চিকিৎসা জটিল ও ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে।
অনেক সময় রোগের উপসর্গ চলে যাওয়ার পরও ব্যক্তি দেহে জীবাণু বহন করতে থাকেন এবং মলদ্বারের মাধ্যমে অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারেন। তাই চিকিৎসাকালে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মেনে চলা জরুরি —
• চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্ধারিত সময় পর্যন্ত অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করা।
• টয়লেট ব্যবহারের পর সাবান ও পানি দিয়ে ভালোভাবে হাত ধোয়া।
• যতক্ষণ না রোগ পুরোপুরি নিরাময় হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত অন্যের জন্য খাবার তৈরি বা পরিবেশন না করা।
• চিকিৎসা শেষে নিশ্চিত হওয়ার জন্য পুনরায় জীবাণু পরীক্ষা করানো।

টিকা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
টাইফয়েড প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো: নিরাপদ পানি নিশ্চিত করা, খাদ্য প্রস্তুতকারীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থা, এবং টাইফয়েড টিকাদান।
বর্তমানে WHO অনুমোদিত দুটি টাইফয়েড কনজুগেট টিকা (Typhoid Conjugate Vaccine) রয়েছে, যা ৬ মাস বয়স থেকে ৪৫ বা ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত মানুষকে একবার ইনজেকশনের মাধ্যমে দেওয়া যায়। এর পাশাপাশি দুটি পুরনো ধরনের টিকাও কিছু দেশে ব্যবহার হয়।
• দুই বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সীদের জন্য ইনজেকশনভিত্তিক টিকা।
• ছয় বছর বা তার বেশি বয়সীদের জন্য মুখে খাওয়ার ক্যাপসুল-আকারের টিকা।
এগুলোর কার্যকারিতা তুলনামূলকভাবে কম এবং দীর্ঘস্থায়ী সুরক্ষা নিশ্চিত করে না, তাই মাঝে মাঝে বুস্টার ডোজ প্রয়োজন হয়। WHO অনুমোদিত নতুন কনজুগেট টিকাগুলো বর্তমানে টাইফয়েড-প্রবণ দেশগুলোর শিশুদের নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচিতে যুক্ত করা হচ্ছে।

ভ্রমণকারীদের জন্য পরামর্শ
টাইফয়েড-প্রবণ অঞ্চলে ভ্রমণকারীদের জন্য ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম হলেও নিরাপদ খাদ্য, পানীয় ও ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধির বিষয়গুলো মেনে চলা জরুরি। নিচের পরামর্শগুলো অনুসরণ করলে নিরাপদ থাকা সম্ভব:
• সবসময় ভালোভাবে রান্না করা ও গরম খাবার গ্রহণ করুন।
• কাঁচা দুধ ও দুধজাত পণ্য পরিহার করুন। কেবল পাস্তুরিত বা ফুটানো দুধ পান করুন।
• নিরাপদ পানি ছাড়া বরফ গ্রহণ করবেন না।
• সন্দেহজনক পানির ক্ষেত্রে ফুটিয়ে বা নির্ভরযোগ্য জীবাণুনাশক দিয়ে বিশুদ্ধ করে পান করুন।
• টয়লেট ব্যবহারের পর, পশুপাখি বা খামারের পশুর সংস্পর্শে আসার পর সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিন।
• কাঁচা ফল ও সবজি ভালোভাবে ধুয়ে অথবা খোসা ছাড়িয়ে খান।
টাইফয়েড জ্বর প্রতিরোধযোগ্য একটি রোগ হলেও বিশ্বজুড়ে এর প্রকোপ এখনো মারাত্মক। উন্নত স্যানিটেশন, নিরাপদ পানি, জনসচেতনতা এবং টিকাদানই পারে এই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে।

সূত্র: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)

বাসি খাবার খাওয়ার ক্ষতিকর দিক

প্রকাশ: ২৯ মে ২০২৫, ০২:৩৩ পিএম
আপডেট: ২৯ মে ২০২৫, ০২:৫৩ পিএম
বাসি খাবার খাওয়ার ক্ষতিকর দিক
বারবার বাসি খাবার খাওয়া স্বাস্থ্যহানির কারণ হতে পারে। ছবি এআই

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে খাবার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবার শরীরকে সুস্থ রাখে, কর্মক্ষমতা বাড়ায় এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তবে অনেক সময় আমরা তাজা খাবারের পরিবর্তে বাসি খাবার খেয়ে থাকি, যা বিভিন্ন কারণে শরীরের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। নিচে বাসি খাবার খাওয়ার কিছু প্রধান ক্ষতিকর দিক বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।

○ ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক সংক্রমণ
বাসি খাবার দীর্ঘ সময় ধরে সংরক্ষিত থাকায় তাতে সহজেই ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক জন্ম নিতে পারে। বিশেষ করে যদি খাবারটি সঠিক তাপমাত্রায় বা উপযুক্ত পাত্রে সংরক্ষণ না করা হয়, তাহলে সালমোনেলা, ই. কোলাই, ক্লোস্ট্রিডিয়াম বোটুলিনাম ইত্যাদি ক্ষতিকর জীবাণু জন্ম নিতে পারে। এসব জীবাণু খাবারের গুণগত মান নষ্ট করে এবং খাদ্যবাহিত রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

 

○ খাদ্য বিষক্রিয়া
বাসি খাবার খাওয়ার ফলে অনেক সময় খাদ্য বিষক্রিয়ার (Food Poisoning) ঘটনা ঘটে। এর ফলে বমি, পেটব্যথা, পাতলা পায়খানা, জ্বর, দুর্বলতা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে। শিশু, বৃদ্ধ ও রোগপ্রবণ মানুষদের জন্য এটি আরও মারাত্মক হতে পারে এবং হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজনও হতে পারে।

 

বাসি খাবারে সহজেই ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক জন্ম নিতে পারে। ছবি এআই

 

○ পুষ্টিগুণের ক্ষতি
খাবার দীর্ঘ সময় সংরক্ষণের ফলে তার পুষ্টিগুণ অনেকটাই হ্রাস পায়। বিশেষ করে ভিটামিন 'সি', 'বি-কমপ্লেক্স' জাতীয় পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিনগুলো দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। ফলে সেই খাবার থেকে শরীর পর্যাপ্ত পুষ্টি পায় না এবং ধীরে ধীরে অপুষ্টির সমস্যা দেখা দিতে পারে।

 

○ হজমজনিত সমস্যা
বাসি খাবার অনেক সময় কঠিন ও শুকনো হয়ে যায়, যা সহজে হজম হয় না। এর ফলে পেট ফাঁপা, গ্যাস, বুক জ্বালা, অম্বল ও কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে যাদের হজমশক্তি দুর্বল, তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যাগুলো বেশি দেখা দেয়।

 

○ দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকি
নিয়মিত বাসি খাবার খাওয়ার অভ্যাস গ্যাস্ট্রিক আলসার, লিভার সমস্যা, কিডনি ক্ষতি এমনকি ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়াতে পারে। অনেক বাসি খাবারে নাইট্রেট, ফাঙ্গাল টক্সিন (যেমন অ্যাফ্লাটক্সিন) তৈরি হয়, যা দীর্ঘমেয়াদে ক্যানসারজনিত রোগের কারণ হতে পারে।

 

বাসি খাবার থেকে গ্যাস্ট্রিক আলসার, লিভার সমস্যা, কিডনি ক্ষতি হতে পারে। ছবি এআই

 

মনে রাখবেন
বাসি খাবার কখনো কখনো খাওয়া যায়, যদি তা উপযুক্তভাবে সংরক্ষিত হয় এবং গরম করে খাওয়া হয়। তবে অভ্যাসবশত বা অলসতায় বারবার বাসি খাবার খাওয়া স্বাস্থ্যহানির কারণ হতে পারে। সুস্থ থাকতে হলে তাজা ও গরম খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে এবং খাবার সংরক্ষণের ব্যাপারে যত্নশীল হতে হবে। মনে রাখা দরকার, ‘স্বাস্থ্যই সম্পদ’ — আর স্বাস্থ্য রক্ষা করতে হলে খাবারের গুণগত মান নিশ্চিত করা অপরিহার্য।

মজবুত হাড়ের জন্য যা খাবেন

প্রকাশ: ২৯ মে ২০২৫, ০১:৫৯ পিএম
মজবুত হাড়ের জন্য যা খাবেন

শরীরের ভিত বা কাঠামো হলো হাড়। এই হাড়গুলো যদি দুর্বল হয়ে পড়ে, তবে আমাদের দৈনন্দিন চলাফেরা, ভারসাম্য রাখা কিংবা সামান্য আঘাতে টিকে থাকাও কঠিন হয়ে পড়ে। তাই হাড় মজবুত রাখতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত জরুরি। হাড়ের সুস্থতায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ক্যালসিয়াম ভিটামিন ডি। ছাড়াও প্রোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস ভিটামিন কে হাড়ের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে বড় ভূমিকা রাখে।

দুধ দুগ্ধজাত খাবার হলো ক্যালসিয়ামের প্রধান উৎস। গরুর দুধ, ছানা, পনির বা টক দইয়ে রয়েছে এমন উপাদান, যা হাড় গঠনে সহায়ক। প্রতিদিন অন্তত এক গ্লাস দুধ পান করলে দেহের ক্যালসিয়ামের বড় একটি অংশ পূরণ হয়ে যায়। ডিম, বিশেষ করে ডিমের কুসুমে থাকা ভিটামিন ডি শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণে সহায়তা করে। পাশাপাশি ডিমে থাকা প্রোটিন হাড়ের টিস্যু গঠনে সাহায্য করে।

সামুদ্রিক মাছ যেমন- সালমন, টুনা ম্যাকারেলেও রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ডি এবং ওমেগা- ফ্যাটি অ্যাসিড, যা হাড়ের ক্ষয় রোধ করে এবং হাড়কে শক্তিশালী রাখে। দেশি ছোট মাছ যেমন- পুঁটি, চাপিলা, মলা ইত্যাদি কাঁটাসহ খাওয়া যায় বলে এগুলো ক্যালসিয়ামের একটি দারুণ উৎস।

সবুজ শাকসবজি; যেমন- পালং শাক, মেথি শাক, ব্রকলি ইত্যাদিতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন কে ম্যাগনেসিয়াম। ভিটামিন কে হাড়ের ভেতরের খনিজ উপাদান স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে। বাদাম বীজ, বিশেষ করে তিল, কাঠবাদাম চিয়া সিডে রয়েছে এমন পুষ্টি উপাদান, যা হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায়।

ডাল ছোলা, বিশেষ করে নিরামিষভোজীদের জন্য প্রোটিন ম্যাগনেসিয়ামের ভালো উৎস। এগুলো হাড় গঠনে সহায়ক খনিজ সরবরাহ করে। একইভাবে সয়া সয়ার তৈরি পণ্য; যেমন- টোফু বা সয়া দুধেও ক্যালসিয়াম প্রোটিন পাওয়া যায়, যা হাড় সুস্থ রাখতে কার্যকর।

ফলমূলের মধ্যে কমলা, কলা কিউইতে ভিটামিন সি পটাশিয়াম থাকে। ভিটামিন সি কোলাজেন তৈরি করতে সাহায্য করে, যা হাড়ের গঠন মজবুত করে। কিছু প্রজাতির মাশরুমেও ভিটামিন ডি থাকে, বিশেষ করে যেগুলো সূর্যের আলোতে জন্মায়।

শুধু খাবারেই নয়, হাড়ের সুস্থতায় সূর্যের আলোও জরুরি। শরীর প্রাকৃতিকভাবে ভিটামিন ডি তৈরি করে সূর্যালোকে থাকলে। দিনে অন্তত ১৫-২০ মিনিট রোদে থাকা উচিত। এদিকে চিনি, অতিরিক্ত লবণ, সফট ড্রিংকস, ধূমপান অ্যালকোহল হাড়ের জন্য ক্ষতিকর। এগুলো ক্যালসিয়াম শোষণে বাধা সৃষ্টি করে এবং হাড় ক্ষয় করে।

মাংস হাড়ের জন্য উপকারী। মাংসে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে, যা হাড়ের গঠন মজবুতিতে সহায়তা করে। এতে থাকা জিঙ্ক হাড়ের বৃদ্ধিতে সহায়ক এবং ক্যালসিয়ামের শোষণ বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া মাংসে থাকা ভিটামিন বি১২ ফসফরাস হাড়কে সুস্থ শক্ত রাখে। বিশেষ করে লাল মাংসে আয়রন খনিজ পদার্থ থাকে, যা হাড়ের ঘনত্ব বজায় রাখতে ভূমিকা রাখে।

তবে অতিরিক্ত মাংস খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য  ক্ষতিকর হতে পারে, তাই পরিমাণমতো খাওয়াই ভালো। সুষম খাদ্যের অংশ হিসেবে মাংস খেলে হাড়ের সুস্থতা বজায় থাকে।

সবশেষে বলা যায়, হাড়ের যত্ন নেওয়া মানে শুধু দাঁড়িয়ে থাকা নয়, সুস্থভাবে বেঁচে থাকার ভিত গড়ে তোলা।

দ্রুত খাবার খাওয়ার ক্ষতিকর দিক

প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৫, ০২:০৬ পিএম
আপডেট: ২৮ মে ২০২৫, ০২:১২ পিএম
দ্রুত খাবার খাওয়ার ক্ষতিকর দিক
দ্রুত খাওয়ার অভ্যাস আপাতদৃষ্টিতে সময় বাঁচালেও শরীরের জন্য ক্ষতিকর। ছবি এআই

বর্তমান দ্রুতগতির জীবনে অনেকেই সময় বাঁচাতে দ্রুত খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলেছেন। বিশেষ করে কর্মজীবী মানুষ, শিক্ষার্থী বা যারা ব্যস্ত রুটিনে চলেন, তারা প্রায়শই দ্রুত খাওয়াকে একটি প্রয়োজনীয়তা হিসেবে দেখেন। কিন্তু এই অভ্যাসটি ক্ষতির কারণ হতে পারে। নিচে দ্রুত খাবার খাওয়ার কিছু গুরুতর ক্ষতিকর দিক নিয়ে আলোচনা করা হলো —

হজমে সমস্যা
দ্রুত খাওয়ার সময় আমরা খাবারটি ভালোভাবে চিবিয়ে খাই না। ফলে তা পাকস্থলীতে গিয়ে ঠিকভাবে ভাঙতে পারে না। এতে হজমে সমস্যা হয়। গ্যাস, অম্বল, পেট ফাঁপা এবং পেটব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। দীর্ঘমেয়াদে এটি গ্যাস্ট্রিক আলসার বা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোমের (IBS) মতো রোগের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা
আমাদের মস্তিষ্ক সাধারণত খাবার খাওয়ার ২০ মিনিট পর অনুভব করে যে পেট ভরে গেছে। দ্রুত খেলে এই সময়ের আগে অনেক বেশি খাবার খাওয়া হয়ে যায়, ফলে অতিরিক্ত ক্যালোরি শরীরে জমা হয়। এর ফলাফল হলো ওজন বৃদ্ধি, স্থূলতা এবং পরবর্তীতে টাইপ-২ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের ঝুঁকি।

 

দ্রুত খেলে অম্বল, পেট ফাঁপা এবং পেটব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। ছবি এআই

 

পুষ্টি গ্রহণের ঘাটতি
দ্রুত খাওয়ার ফলে খাবার চিবিয়ে খাওয়ার পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায় না, ফলে হজমের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয় না এবং শরীর প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণগুলো ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারে না। দীর্ঘমেয়াদে এটি পুষ্টিহীনতা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাসের কারণ হতে পারে।

মানসিক চাপ ও উদ্বেগ বৃদ্ধি
দ্রুত খাওয়া একটি চাপযুক্ত অভ্যাস। এটি শরীরে কর্টিসল নামক স্ট্রেস হরমোনের নিঃসরণ বাড়ায়, যা মানসিক চাপ ও উদ্বেগের কারণ হতে পারে। এছাড়া দ্রুত খাওয়া অনেক সময় অসচেতনভাবে ‘ইমোশনাল ইটিং’-এর সঙ্গে সম্পর্কিত, যেখানে মানুষ দুঃখ বা মানসিক চাপ কমানোর জন্য খাবারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।

মুখ ও দাঁতের সমস্যাও হতে পারে
খাবার ভালোভাবে না চিবিয়ে খেলে দাঁতের স্বাভাবিক কাজ বাধাগ্রস্ত হয়। চোয়াল ও দাঁতে অস্বস্তি, ব্যথা বা দাঁতের ক্ষয় দেখা দিতে পারে। এমনকি মুখে দুর্গন্ধের সমস্যাও বাড়তে পারে।

 

খাবার ভালোভাবে না চিবিয়ে খেলে দাঁতের স্বাভাবিক কাজ বাধাগ্রস্ত হয়। ছবি এআই

 

করণীয়
◉ প্রতিটি লোকমা অন্তত ২০-৩০ বার চিবিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করুন।
◉ প্রতিবার খাবার খাওয়ার সময় অন্তত ২০ মিনিট সময় দিন।
◉ খাবার খাওয়ার সময় অন্য কিছু না করে সম্পূর্ণ মনোযোগ দিন।
◉ ধীরে ও স্বস্তির সঙ্গে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

মরে রাখবেন
দ্রুত খাওয়ার অভ্যাস আপাতদৃষ্টিতে সময় বাঁচালেও শরীরের জন্য একটি নীরব শত্রু। এটি দীর্ঘমেয়াদে নানা শারীরিক ও মানসিক সমস্যার জন্ম দিতে পারে। তাই সচেতনভাবে ধীরে, ভালোভাবে চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। সুস্থ জীবনযাপনের জন্য খাবারকে সময় দেওয়া কোনো বিলাসিতা নয়, বরং এটি একটি প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য-অভ্যাস।

ক্যানসারের ১০টি লক্ষণ: সচেতনতাই প্রতিরোধের প্রথম ধাপ

প্রকাশ: ২৬ মে ২০২৫, ১২:৫৫ পিএম
আপডেট: ২৬ মে ২০২৫, ০১:০৫ পিএম
ক্যানসারের ১০টি লক্ষণ: সচেতনতাই প্রতিরোধের প্রথম ধাপ
ক্যানসার শরীরের যে কোনো অঙ্গকে প্রভাবিত করতে পারে। ছবি এআই

ক্যানসার এমন একটি রোগ যা শরীরের কোষগুলো নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বিভাজিত হয়ে টিউমার বা ফোলার সৃষ্টি করে। এটি শরীরের যে কোনো অঙ্গকে প্রভাবিত করতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যানসারের লক্ষণগুলো অনেক সময় সাধারণ অসুস্থতার মতো মনে হয়, তাই এগুলোকে অবহেলা করলে মারাত্মক পরিণতি হতে পারে। নিচে ক্যানসারের ১০টি সাধারণ লক্ষণ নিয়ে আলোচনা করা হলো, যেগুলোর প্রতি আমাদের সজাগ থাকা প্রয়োজন।

১. অজানা ওজন হ্রাস
হঠাৎ করেই যদি কোনো ব্যাখ্যাতীত কারণে শরীরের ওজন কমতে থাকে, তা ক্যানসারের একটি প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। বিশেষ করে ৫ কেজি বা তার বেশি ওজন কমে গেলে সতর্ক হওয়া জরুরি। প্যানক্রিয়াস, পাকস্থলী, খাদ্যনালি বা ফুসফুসের ক্যানসারে এই ধরনের লক্ষণ দেখা যেতে পারে।

২. দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি
অতিরিক্ত পরিশ্রম না করেও যদি দীর্ঘদিন ধরে ক্লান্তি বা দুর্বলতা অনুভব করেন, তাহলে সেটি রক্তাল্পতা বা ক্যানসারজনিত হতে পারে। বিশেষ করে লিউকেমিয়া বা কোলন ক্যানসারে এমন উপসর্গ দেখা যায়। শরীরে রক্তস্বল্পতা তৈরি হলে অক্সিজেন পরিবহনে সমস্যা হয়, যার ফলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে।

৩. জ্বর এবং বারবার সংক্রমণ
প্রায়ই জ্বর হওয়া বা সংক্রমণে ভোগা শরীরে ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হওয়ার ইঙ্গিত হতে পারে। এটি বিশেষ করে রক্তের ক্যানসার যেমন লিউকেমিয়ার একটি সাধারণ লক্ষণ। শরীরে ক্যানসার কোষ ছড়িয়ে পড়লে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।

৪. ত্বকে পরিবর্তন
ত্বকে অস্বাভাবিক দাগ, ঘন কালো ছোপ, আঁচিলের রঙ বা আকারে পরিবর্তন হলে তা ত্বক ক্যানসারের ইঙ্গিত হতে পারে। নতুন কোনো দাগ তৈরি হলে অথবা পুরোনো আঁচিল ব্যথা বা রক্তপাত করলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

৫. কফের সঙ্গে রক্ত অথবা দীর্ঘমেয়াদি কাশি
ফুসফুস ক্যানসারের একটি সাধারণ লক্ষণ হলো দীর্ঘদিন ধরে শুকনো কাশি থাকা বা কফের সঙ্গে রক্ত যাওয়া। বিশেষ করে ধূমপায়ীদের মধ্যে এই লক্ষণ বেশি দেখা যায়। দীর্ঘস্থায়ী কাশি কখনোই অবহেলা করা উচিত নয়।

৬. কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়ার মতো অন্ত্রের অভ্যাসে পরিবর্তন
হঠাৎ করে যদি মলত্যাগের ধরনে পরিবর্তন আসে — যেমন কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া বা মলের রঙ গাঢ় হয়ে যাওয়া — তবে তা কোলন ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। মলে রক্ত থাকা আরও বিপজ্জনক সংকেত হতে পারে।

৭. প্রস্রাবে সমস্যা বা রক্ত
প্রস্রাবের সময় জ্বালা, রক্ত বা ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রবণতা প্রস্রাবনালী বা প্রোস্টেট ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। এটি পুরুষদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, তবে নারীদের ক্ষেত্রেও ব্লাডার ক্যানসারে এই ধরনের উপসর্গ থাকতে পারে।

৮. অজানা ব্যথা
শরীরের কোনো অংশে দীর্ঘদিন ধরে ব্যথা থাকলে তা গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত। উদাহরণস্বরূপ, পিঠে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা অস্থি ক্যানসার বা স্তন ক্যানসারের ছড়িয়ে পড়ার লক্ষণ হতে পারে। ক্যানসার যখন আশপাশের টিস্যুতে ছড়িয়ে পড়ে তখন ব্যথা দেখা দেয়।

৯. ঘনঘন রক্তপাত
মাসিকের বাইরে যোনি থেকে রক্তপাত, মলত্যাগ বা প্রস্রাবের সময় রক্ত যাওয়া, নাক দিয়ে রক্তপাত — এগুলো ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। যেমন জরায়ুমুখ ক্যানসার বা মূত্রাশয়ের ক্যানসারে এই ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়।

১০. চাকা বা গাঁট তৈরি হওয়া
স্তনে, ঘাড়ে বা শরীরের অন্য অংশে কোনো চাকা বা গাঁট অনুভব করলে, তা অবহেলা করা ঠিক নয়। অনেক সময় এই চাকা ব্যথাহীন হয়, কিন্তু ক্যানসারের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। বিশেষ করে স্তন ক্যানসারে এটি প্রথম লক্ষণ হিসেবে দেখা যায়।

উপসংহার
উল্লিখিত লক্ষণগুলো সবসময় ক্যানসার নির্দেশ করে না, তবে এগুলো যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা ধীরে ধীরে খারাপের দিকে যায়, তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। ক্যানসার যত দ্রুত শনাক্ত করা যায়, তার চিকিৎসা তত বেশি কার্যকর হয়। তাই সচেতনতা ও নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষাই হতে পারে ক্যানসার প্রতিরোধের প্রথম ধাপ।