
গবেষণায় দেখা গেছে, আজীবন সুস্বাস্থ্যের গোপন চাবিকাঠি হলো ‘লাইফস্টাইল মেডিসিন’, যা খুবই সহজ। কেবল আপনার ডায়েটে কিছু স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন আনুন এবং নিয়মিত ব্যায়াম করুন। সেই সঙ্গে কীভাবে নিজেকে স্ট্রেস-ফ্রি রাখতে পারবেন, সেটা শিখুন। অনকো ওয়েবসাইট অবলম্বনে জানাচ্ছেন ফখরুল ইসলাম
নিজের সুস্বাস্থ্য কীভাবে বজায় রাখবেন তার সঠিক পদ্ধতি বেছে নেওয়া জরুরি। কয়েকটি সাধারণ ধাপ অনুসরণ করলে সহজেই শরীর সুস্থ ও ফিট রাখা সম্ভব। চলুন দেখে নেই সেগুলো।
ব্যায়াম
নিয়মিত শরীরচর্চা বার্ধক্য ঠেকাতে পারে। এটি দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে, রক্তচাপ স্বাভাবিক করে, চর্বিহীন পেশি উন্নত করে, কোলেস্টেরল কমায় এবং হাড়ের ঘনত্ব উন্নত করে।
বাড়ির চারপাশে জগিং করুন, বাড়ির বা প্রতিবেশীর বাচ্চাদের সঙ্গে পার্কে হাঁটুন, দড়ি লাফের অভ্যাস করুন বা খেলাধুলা করুন, হাইকিং পছন্দ হলে সেটাও করতে পারেন।
ব্যায়াম শরীরে এন্ডোরফিন রিলিজ করে, যা সামগ্রিকভাবে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতাকে বাড়ায়। এভাবে নিয়মিত ব্যায়াম শুধু শারীরিকভাবে ফিট থাকতে সাহায্য করে না, বরং বিষণ্নতা, উদ্বেগ এবং মানসিক অসুস্থতার ঝুঁকিও কমায়।
সঠিক খাবার খান
সারা দিনে অন্তত পাঁচটি সবজি খাদ্যতালিকায় রাখুন। সেগুলো পছন্দমতো কাঁচা, সেদ্ধ বা ভেজে খেতে পারেন।
ডায়েটে শাকসবজির পরিমাণ বেশি হলে ফুসফুস, কোলন, স্তন, জরায়ু, খাদ্যনালি, পাকস্থলী, মূত্রাশয়, অগ্ন্যাশয় এবং ডিম্বাশয়ের ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি কমায়। সঠিক খাবার ওজন ঠিক রাখবে, লক্ষ্যে স্থির রাখতে সাহায্য করবে।
খাদ্যতালিকা থেকে কোমল পানীয়, ক্যান্ডি, চিপসের মতো প্রক্রিয়াজাত খাবার বাদ দিন। কারণ এগুলো শরীরে পুষ্টি জোগায় না, বরং শরীরে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ক্যালোরি পৌঁছে দেয়।
চা এবং কফির আকারে প্রতিদিন কতটা ক্যাফেইন গ্রহণ করছেন সেদিকে খেয়াল রাখুন। প্রতিদিন দুই কাপের বেশি খেলে তা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
পর্যাপ্ত পানি পান করুন
সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা খুবই প্রয়োজন। পানি ডিটক্সিফাই করে, হজমে সাহায্য করে, কেমোথেরাপির ফলাফলে সাহায্য করে, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, পেশিকে শক্তি জোগায় এবং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। চাইলে ডায়েটে ডাবের পানি এবং তাজা ফলের রসও অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।
মেডিটেশন
মেডিটেশন বা ধ্যানের সুদূরপ্রসারী এবং দীর্ঘস্থায়ী উপকারিতা রয়েছে। এটি মানসিক চাপ কমায় এবং আরও ভালোভাবে সংযোগ স্থাপন করতে দেয়, লক্ষ্যে স্থির রাখে এবং ব্যথা দূর করে। পর্যাপ্ত অনুশীলন, মননশীলতা, মস্তিষ্ককে স্থির রাখা এবং নিজের প্রতি সদয় হওয়া জীবনের অভ্যাসে পরিণত হতে পারে।
নিয়মিত ডাক্তারের কাছে যান
আপনি পুরোপুরি সুস্থবোধ করলেও আপনার শরীর সুস্থ আছে তো? নিজের জন্য সময় বের করে অবশ্যই পরীক্ষা করে দেখুন। এটি যেকোনো রোগের প্রাথমিক শনাক্তকরণ এবং প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। স্বাস্থ্যের ঝুঁকি কমে যায়, শরীরকে নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ঘুমাতে সাহায্য করতে পারে।
সঠিক ওজন বজায় রাখুন
যদিও সবার শরীরের আকার, আয়তন, ওজন এক নয়; তবে শরীরের ওজন ঠিক আছে কি-না জানার জন্য ‘বডি মাস ইনডেক্স’-এর সাহায্য নিন।
ওজন কমানোর অনেক উপায় রয়েছে, তবে কোনটি আপনার জন্য সঠিক- সেটা বেছে নেওয়া জরুরি। প্রয়োজনে আপনি কোনো ভালো ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নিতে পারেন।
রাতে ভালো ঘুমান
বিশ্রাম এবং মেডিটেশন, ঘুমানোর আগে এক গ্লাস উষ্ণ দুধ রাতে ভালো ঘুমাতে সাহায্য করতে পারে। ঘুমাতে যাওয়ার ঠিক আগেই খাবার খাবেন না। শোবার ঘর অন্ধকার রাখুন এবং সমস্ত স্ট্রেস ঝেড়ে ফেলে ঘুমাতে যান। অপ্রয়োজনীয় বিভ্রান্তি থেকে নিজেকে দূরে রাখাই ভালো।
অ্যালকোহল পান করবেন না
অ্যালকোহল শরীরে টক্সিনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়, হৃৎপিণ্ড এবং ফুসফুসের গতি অনিয়মিত করে তোলে, মস্তিষ্ক নিজেকে ত্বরান্বিত করে এবং লিভার এটিকে বিপাক করার চেষ্টা করে ওভারড্রাইভ করে।
এসব ছাড়াও আরও খারাপ দিক রয়েছে- যা মানসিক স্বাস্থ্য, শরীরের ওজন, ঘুমের ওপর প্রভাব ফেলে। অ্যালকোহল শরীরে ক্যানসারসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
তামাক থেকে দূরে থাকুন
ধূমপান ক্যানসারের অন্যতম কারণ, যা চাইলে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। পুরুষদের মধ্যে ক্যানসারের ৫০ শতাংশ ধূমপানের সঙ্গে সম্পর্কিত। যদি এই অভ্যাস ছাড়তে সমস্যা হয়, তা হলে কাউন্সেলিংয়ের সাহায্য নিতে পারেন। কেন ধূমপান ছেড়ে দেওয়া উচিত, চাইলে সে বিষয়ে অনলাইনে পড়ে নিতে পারেন।
ঘরে রান্না করুন এবং বাইরের খাবার এড়িয়ে চলুন
চেষ্টা করুন সহজ সিম্পল খাবার রান্না করে খেতে। তাতে সময়ও বাঁচবে, আবার শরীরের জন্যও উপকারী হবে। প্রয়োজনে ছুটির দিনে একবার বসে সপ্তাহের খাবার মেনু ঠিক করে নিন, তাতে আপনার সুবিধে হবে। পূর্ব পরিকল্পনা আপনাকে অতিরিক্ত ফ্যাট, চিনি এবং লবণযুক্ত খাবার এড়াতে সাহায্য করবে এবং আপনাকে অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর রাখবে।
দাঁতের কথা ভুলবেন না
মুখের স্বাস্থ্যও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মুখকে অবহেলা করলে দাঁতের সমস্যা এবং মাড়ির রোগ যেমন প্রদাহ এবং প্লাক তৈরি হতে পারে। পরীক্ষায় দেখা গেছে যে, দাঁতের সুস্বাস্থ্য হৃদরোগ, নিউমোনিয়া, অস্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থা, অ্যালজাইমার এবং ইরেক্টাইল ডিসফাংশনের ঝুঁকি কমায়। মুখের মধ্যে কোনো অস্বাভাবিক চিহ্ন, আলসার বা ক্ষত রয়েছে কি-না দেখুন। সেক্ষেত্রে ডেন্টিস্ট বা সাধারণ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
মাঝেমধ্যেই বাইরে যান
আপনি যদি ডেস্কে কাজ করেন, তা হলে আপনার জীবনধারায় পরিবর্তন করার সময় এসেছে। কারণ পেশিগুলোকে নড়াচড়া করতে এবং নমনীয় করতে একটানা কাজ না করে মাঝেমধ্যে বিরতি নিন এবং চলাফেরা করুন। অফিসের কাজের পর প্রয়োজনে জিমে জয়েন করুন। বাচ্চাদের বা প্রিয় পোষ্যকে নিয়ে পার্কে বেড়াতে যান। প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলুন, সহকর্মীদের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করুন।
কলি