
চোখের ভিতরে রক্তক্ষরণ অথবা বাইরে থেকে আঘাতের কারণে চোখ লাল হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া জীবাণু সংক্রমণের কারণেও এমনটা ঘটে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঘরোয়া চিকিৎসা দিয়ে চোখের লাল হওয়া সমস্যার সমাধান করা যায়। তবে পরিস্থিতি জটিল হলে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক ওয়েবসাইট অবলম্বনে লিখেছেন ফখরুল ইসলাম
লাল চোখ কী
লাল চোখ বলতে চোখের সাদা অংশ লাল হয়ে যাওয়াকে বোঝায়। চোখের পৃষ্ঠের নিচে ছোট রক্তনালিগুলো বড় হয়ে গেলে বা স্ফীত হলে লালভাব ঘটে। লালভাব এক বা উভয় চোখেই হতে পারে। সমস্যাটি ধীরে ধীরে দেখা দিতে পারে অথবা হঠাৎ করে দুই চোখ লাল হয়ে যেতে পারে।
উপসর্গ
চোখ লাল হয়ে গেলে বেশ কয়েক ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। যেমন- চোখব্যথা, চুলকানি, চোখ থেকে সাদা তরল বেরিয়ে আসা এবং ফোলা চোখ। এ ছাড়া দৃষ্টিশক্তির পরিবর্তন হতে পারে, যেমন ঝাপসা দৃষ্টি।
লাল চোখের পর্যায়
চোখের লাল হয়ে যাওয়া অনেক ক্ষেত্রে ক্ষতিকারক নয় এবং সাধারণত ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্যমে এটি সারিয়ে তোলা সম্ভব। তবে চোখ যদি এক সপ্তাহের বেশি লাল থাকে, অথবা যদি ব্যথা হতে থাকে, দেখতে সমস্যা হয়, তাহলে একজন চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে দেখা করতে হবে।
চোখ লাল হওয়ার কারণ
চোখ লাল হওয়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। কন্টাক্ট লেন্সগুলো খুব বেশিক্ষণ পরে থাকলে চোখ লাল হতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে একটানা কম্পিউটারের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলেও চোখ লাল হয়। এগুলো সাধারণ কারণ। এর বাইরে চোখ লাল হওয়ার আরও কিছু কারণ আছে। যেমন এলার্জি, চোখ ওঠা (কনজাঙ্কটিডাইটাস)। এ ছাড়া চোখে আঘাত লাগা, গ্লুকোমা রোগ থেকেও চোখ লাল হতে পারে। চোখের ভেতরে থাকা সূক্ষ্ম রক্তনালিগুলো যদি ফুলে যায় তাহলে চোখে রক্তক্ষরণ হতে পারে। সে ক্ষেত্রে চোখ লাল হয়। বাইরের আঘাতের কারণে চোখ লাল হয়ে যাওয়া খুব সাধারণ বিষয়।
লাল চোখের চিকিৎসা
ঘরোয়া কিছু যত্নের মাধ্যমে সাধারণ কারণে হওয়া লাল চোখের সমস্যা সমাধান করা যায়। যেমন- পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিলে লাল চোখ সেরে যেতে পারে। এ ছাড়া বন্ধ চোখের ওপর ঠাণ্ডা পানি দিলে আরাম পাওয়া যায়। চোখের পাতা হালকাভাবে ম্যাসাজ করলে, আলতো করে চোখের পাতা ধুয়ে ফেললে ধীরে ধীরে সমস্যা কেটে যায়। জটিল ক্ষেত্রে একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ অ্যান্টিবায়োটিক, বিশেষ চোখের ড্রপ বা মলম লিখে দিতে পারেন।
যেভাবে চোখ লাল হওয়া প্রতিরোধ করা যায়
অযথা চোখ ঘষা যাবে না। কারণ হাত এবং আঙুলের ময়লায় থাকা জীবাণু চোখে প্রবেশ করে চোল লাল করে দিতে পারে। এ ছাড়া যারা কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করেন, তারা সবসময় সেগুলোকে পরিষ্কার রাখুন। বিশেষ করে ডাক্তারের বেঁধে দেওয়া সময়ের চেয়ে বেশি এটা ব্যবহার করা যাবে না। চোখের মেকআপ করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন কেমিক্যাল চোখে প্রবেশ করতে না পারে। মেকআপ মুছে ফেলার সময়ও সতর্ক থাকতে হবে। দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটারের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে বিরতি নিন। চোখ জ্বালা করে এমন জিনিস এড়িয়ে চলুন, যেমন- ধুলো, ধোঁয়া বা পোষা প্রাণীর খুশকি ও পশম। অনেক ধরনের সংক্রমণ এড়াতে নিয়মিত হাত ধুয়ে রাখুন। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখলে চোখের ভিতরে রক্তপাত হয় না। তাই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন।
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন
যদি এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চোখ লাল থাকে তাহলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। এ ছাড়া যদি দেখতে সমস্যা হয়, আলোর প্রতি অতিরিক্ত সংবেদনশীল হয়ে ওঠে, চোখে পুঁজ বা শ্লেষ্মা তৈরি হচ্ছে যা শুকিয়ে ক্রাস্টে পরিণত হয়, তাহলেও ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। এ ছাড়া চোখের অস্বস্তির সঙ্গে জ্বর থাকে এবং চোখ ব্যথা করে তাহলেও ডাক্তার দেখানো উচিত। বাইরে থেকে যদি দেখা যায় চোখ রক্তের মতো লাল হয়েছে বা চোখের ভিতরে রক্তক্ষরণ হয়েছে, সে ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
কলি