ঢাকা ২৯ ভাদ্র ১৪৩১, শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

মশাবাহিত রোগ ম্যালেরিয়া

প্রকাশ: ০৮ আগস্ট ২০২৪, ০৫:২৪ পিএম
আপডেট: ০৮ আগস্ট ২০২৪, ০৫:২৫ পিএম
মশাবাহিত রোগ ম্যালেরিয়া

ম্যালেরিয়া হচ্ছে মশাবাহিত একটি সাধারণ ব্যাধি। পরজীবী প্লাসমোডিয়ামের কারণে এটি ছড়ায়। মশা এই রোগ বহন করে থাকে। সারা বিশ্বে মানুষের মারণরোগের মধ্যে এটি অন্যতম। মাই উপচার ওয়েবসাইট অবলম্বনে জানাচ্ছেন ফখরুল ইসলাম

ম্যালেরিয়া কী
প্রতিবছর ম্যালেরিয়ার কারণে ৮ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) সমীক্ষা বলছে, ম্যালেরিয়ার কারণে প্রতি ৪৫ সেকেন্ডে একটি করে শিশুর মৃত্যু হয়। এই রোগের ইতিহাস সুপ্রাচীন এবং সুদূর ৬০০০ বিসিতেও একই ধরনের জ্বরের উল্লেখ পাওয়া যায়।

প্লাসমোডিয়ামের পাঁচটি প্রজাতি ম্যালেরিয়া ছড়ায়- পি ফ্যালসিপেরাম, পি ভাইভ্যাক্স, পি ওভালে, পি কোলেস এবং পি ম্যালারিয়ে। মেয়ে অ্যানোফিলিস মশা (যা হচ্ছে রোগের বাহক বা ভেক্টর) মানুষকে কামড়ালে পরজীবীটি সংক্রমিত হয়। একবার পরজীবীটি মানুষের রক্তে প্রবেশ করলে তা বেড়ে ওঠে এবং যকৃতে তার বৃদ্ধি হতে শুরু করে এবং তারপর এটি লোহিত রক্তকণিকা আক্রমণ করে তাদের ধ্বংস করে।

ম্যালেরিয়ার উপসর্গ
ম্যালেরিয়ার উপসর্গ দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা আছে- সরল এবং জটিল বা প্রবল।

সরল ম্যালেরিয়ার উপসর্গ: সরল ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হলে ম্যালেরিয়ার বৈশিষ্ট্যপূর্ণ সব উপসর্গই দেখা যায়, কিন্তু এসব উপসর্গের সঙ্গে জটিল সংক্রমণের উপসর্গগুলো থাকে না এবং শরীরের প্রধান অঙ্গগুলোর ক্ষতি হয় না।
সরল ম্যালেরিয়ার চিকিৎসা না হলে তা জটিল আকার ধারণ করে। যে ব্যক্তির রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে, তার জটিল ম্যালেরিয়া হতে পারে। ম্যালেরিয়ার উপসর্গ ৬ থেকে ১০ ঘণ্টা থাকে এবং একদিন অন্তর এই উপসর্গ ফিরে ফিরে আসে। পরজীবীর প্রকৃতির ওপর এই উপসর্গগুলো পরিবর্তিত হতে পারে, কোনো কোনো সময়ে মিশ্র উপসর্গও দেখা যায়।
সরল ম্যালেরিয়ার উপসর্গ: কাঁপুনির সঙ্গে শীত ভাব। খুব বেশি জ্বর, মাথাব্যথা এবং বমি। কম বয়সী রোগীদের তড়কা হতে পারে। ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে যাওয়া এবং ক্লান্তি এবং অবসন্ন বোধ।

জটিল ম্যালেরিয়ার উপসর্গ: জটিল ম্যালেরিয়ায় যেসব উপসর্গ দেখা যায় তাতে বোঝা যায় শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জটিল ম্যালেরিয়ার কিছু বৈশিষ্ট্যপূর্ণ উপসর্গ হলো জ্বর এবং কাঁপুনি। জেগে থাকা এবং সচেতনতা হ্রাস পাওয়া থেকে অচেতনতার সমস্যা। উপুড় হয়ে শোবার ইচ্ছা (বুক নিচে করে শোয়া)। গভীরভাবে শ্বাস নেওয়া, শ্বাস নেওয়ার অসুবিধা। ক্লান্তি এবং সাধারণ দুর্বলতা। জন্ডিসের চিহ্ন, যেমন- চোখের সাদা অংশ এবং নখ হলুদ হয়ে যাওয়া, প্রস্রাবের রং অতিরিক্ত হলুদ বর্ণ হয়ে যাওয়া। চিকিৎসা না হলে জটিল ম্যালেরিয়া থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
ম্যালেরিয়ার উপসর্গের সঙ্গে সাধারণ ফ্লু বা ভাইরাল জ্বরের উপসর্গের মিল আছে এবং যারা আগে আক্রান্ত হননি, তাদের ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয় সমস্যা থাকে।

ম্যালেরিয়ার চিকিৎসা
ম্যালেরিয়ারোধী ওষুধের নানা প্রকারভেদ আছে। সেগুলো হলো:

টিস্যু স্কিজন্টিসাইডস: যকৃতে অবস্থানকারী পরজীবীর ওপরে এই ওষুধ কাজ করে এবং তাদের বৃদ্ধি রোধ করে। ম্যালেরিয়ার চিকিৎসা শুধু এই ওষুধে হয় না। কারণ যখন পরজীবীর বৃদ্ধি হয় এবং তারা লোহিত রক্তকণিকা ধ্বংস করতে শুরু করে দেয়, তখনই ম্যালেরিয়ার উপসর্গ দেখা দেয়। উপসর্গ দেখার আগে কার্যত সংক্রমণের উপস্থিতি বুঝতে পারা অসম্ভব।
পুনরায় আক্রমণের জন্য টিস্যু স্কিজন্টিসাইডস: পরজীবীদের কিছু যকৃতে উপস্থিত থাকতে পারে, যা পুনরায় ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ ঘটাতে পারে, তাদের ওপর এই ওষুধ কাজ করে।

ব্লাড স্কিজন্টিসাইডস: পরজীবীদের রক্তের ফর্মের ওপর এই ওষুধগুলো কাজ করে এবং এগুলো হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যালেরিয়ারোধী ওষুধ।

গেমিয়োটোসাইটোসাইডস: এই ওষুধগুলো রক্তে উপস্থিত প্রজননক্ষম পরজীবীদের বিরুদ্ধে কাজ করে এবং যেসব মশা আক্রান্ত রোগীদের কামড়ায়, তাদের সাহায্যে সংক্রমণ ছড়ানো রোধ করে। এই শ্রেণিভুক্ত কিছু ওষুধ সব শ্রেণির ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে সক্রিয় থাকে আর অন্যগুলো কিছু পরজীবীর ওপর কার্যকর থাকে।

স্পোরোন্টোসাইডস: এই ওষুধগুলো মশার মধ্যে সিস্ট গঠন এবং সংক্রমণ রোধ করে।

যুগ্ম থেরাপি: বিভিন্ন ওষুধ একযোগে ব্যবহার করে ম্যালেরিয়ার কার্যকর চিকিৎসা করা সম্ভব, যেগুলো একসঙ্গে যকৃতে এবং রক্তে উপস্থিত পরজীবীদের ওপর কাজ করে এবং সংক্রমণ বৃদ্ধি রোধ করে। এই প্রক্রিয়াটি হলো, একযোগে দুটি অথবা তার বেশি ওষুধ ব্যবহার- যেগুলো পরজীবীদের বিভিন্ন অংশকে নিষ্ক্রিয় করে। এ ধরনের চিকিৎসা করলে চিকিৎসার সময় কম হয় এবং প্রতিরোধী পরজীবীদের বৃদ্ধির আশঙ্কা কমায়।
সংক্রমণের প্রকৃতি কী রকম, সংক্রমণ কতটা প্রবল, রোগীর শারীরিক অবস্থা এবং সংশ্লিষ্ট পরিস্থিতি এবং রোগের ওপর একযোগে বিভিন্ন ওষুধ প্রয়োগের পন্থা নির্ভর করে।

যেসব ব্যক্তি পি ফ্যালসিপেরামে আক্রান্ত, তাদের পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে নিরীক্ষণ এবং পরীক্ষা করতে হবে। কারণ এটি অপেক্ষাকৃত কঠিন সংক্রমণ এবং ম্যালেরিয়ারোধী ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে। কোনো প্রসূতি সংক্রমিত হলে তাকে বিভিন্ন ওষুধ সম্মিলিতভাবে দিতে হবে। কারণ কিছু ম্যালেরিয়ার ওষুধ প্রসূতিদের পক্ষে নিরাপদ নয়। চিকিৎসকদের দেখতে হবে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মৃগী, হৃদরোগ, রেনাল ফেলিওর এবং চর্মরোগের ইতিহাস আছে কি না। কারণ এসব রোগীর ক্ষেত্রে হয় বিভিন্ন ওষুধ সম্মিলিতভাবে দিতে হবে, নাহলে বিভিন্ন ক্ষমতাসম্পন্ন ওষুধ দিতে হবে।

 কলি

 

পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি

প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:২০ পিএম
পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি

পেরিফেরাল স্নায়ুতন্ত্র শরীরের একটা যোগাযোগ পদ্ধতি, যেটা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে, অর্থাৎ মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ড এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গে সংকেত পাঠায়। এই সংকেতগুলো সংজ্ঞাবহ বার্তা হতে পারে, যেমন- ঠাণ্ডা হাত, পেশির সংকোচনের জন্য বার্তা যেটা শরীরের নড়াচড়ায় সাহায্য করে এবং আরও অনেক কিছু। পেরিফেরাল স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি হলে তাকে পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি বলে। মাই উপচার অবলম্বনে জানাচ্ছেন মো. রাকিব

লক্ষণ ও উপসর্গ
লক্ষণ ও উপসর্গগুলো নির্ভর করে কোন স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার ওপর।

মোটর নার্ভে ক্ষতি: এর কারণে পেশিতে খিঁচুনি, পেশির দুর্বলতা, পেশিতে ঝাঁকি মারা এবং পেশি কুঁচকে যায়।

সংজ্ঞাবহ নার্ভে ক্ষতি: এর কারণে কোনো সংবেদন অনুভব করতে পারা যায় না, যেমন- স্পর্শ, ব্যথা এবং তাপমাত্রার পরিবর্তন এবং মোটর সমন্বয়ে অসুবিধা, যেমন- হাঁটা, বোতাম আটকানো ইত্যাদি।

অটোনোমিক নার্ভে ক্ষতি: এর কারণে ঘামে অস্বাভাবিক পরিবর্তন হয়, গরম সহ্য হয় না, এবং শরীরের ভেতরের অঙ্গ সম্পর্কিত অন্যান্য সমস্যা দেখা দেয়।

কারণগুলো কী কী?
পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথির সবচেয়ে প্রভাবশালী কারণ হলো ডায়াবেটিস। এর অন্য কারণগুলো হলো- ভিটামিনের মাত্রা কমে যাওয়া, স্নায়ুতে আঘাত, মদপানে আসক্তি, সংক্রমণ, যেমন- লাইম অসুখ এবং ডিপথেরিয়া। এ ছাড়া রক্তনালিতে প্রদাহ, ক্রনিক যকৃতের অসুখ, ক্রনিক কিডনির অসুখ, রিউমাটয়েড বাত। পাশাপাশি এইচআইভি, হারপিস এবং ভারিসেলা-জোস্টার ভাইরাস সংক্রমণ। শরীরে অতিরিক্ত বিষাক্ত পদার্থ যেমন- আর্সেনিক, মার্কারি এবং লেড প্রবেশ করলেও পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি সমস্যা দেখা দিতে পারে।

রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা
নানা উপায়ে পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি নির্ণয় করা হয়। যেমন- ডায়াবেটিস বা ভিটামিনের অভাব নির্ণয়ের জন্য রক্ত পরীক্ষা। নার্ভ কন্ডাকশন পরীক্ষা। ইমেজিং প্রক্রিয়া যেমন- এক্স-রে, সিটি স্ক্যান এবং ম্যাগনেটিক রেসোনেন্স ইমেজিং (এমআরআই) পরীক্ষা। এ ছাড়া ইলেকট্রোমায়োগ্রাফি, স্নায়ুর বায়োপসি করেও রোগ নির্ণয় করা যায়।

যেসব কারণে পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি হয় সেই কারণ ও উপসর্গগুলো নিয়ন্ত্রণ করে এই রোগের চিকিৎসা করা হয়। যেমন- ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণ ও তার চিকিৎসা। ভিটামিনের জন্য খাওয়ার ওষুধ বা ইনজেকশন। যদি কোনো ওষুধের কারণে এই অসুখ হয় তাহলে সেই ওষুধ বন্ধ করা।

কর্টিকোস্টেরয়েডস, ইমুনোগ্লোবুলিন ইনজেকশন, ইমুনোসাপ্রেস্যান্টস। স্নায়ুর ব্যথা কমাতে ওষুধ প্রয়োগ। সংবেদন অনুভূতি কমে যাওয়ার জন্য সবসময় জুতো ও মোজা পরে থাকা উচিত, যাতে পায়ের পাতায় কোনো আঘাত না লাগে।

 কলি

কিডনি ভালো রাখে যেসব খাবার

প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:১৬ পিএম
আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:১৭ পিএম
কিডনি ভালো রাখে যেসব খাবার

দেহের অত্যাবশ্যকীয় অঙ্গ কিডনিকে সুস্থ ও কার্যকর রাখতে কিছু খাবার বেশ ভূমিকা রাখে। এমন কিছু খাবারের ব্যাপারে পরামর্শ দিচ্ছেন ডায়েট প্লানেট বাংলাদেশের পুষ্টিবিদ মাহবুবা চৌধুরী

শাকসবজি
কিডনি ভালো রাখতে লাউ, ঝিঙা, পটোল, ঢেঁড়স, ধুন্দল, চিচিঙা, মিষ্টিকুমড়া, অঙ্কুরিত মুগডাল, ক্যাপসিকাম ইত্যাদির বেশ ভূমিকা রয়েছে। এসব খাবারে থাকা প্রচুর পরিমাণ খাদ্য আঁশ, ভিটামিন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং পর্যাপ্ত জলীয় উপাদান কিডনি পরিশোধন করে দেহ থেকে দূষিত পদার্থ বের করতে বেশ সাহায্য করে।

আপেল
আপেলে পলিফিনল নামের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে, যা কিডনির স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখতে সাহায্য করে। যাদের কিডনিতে পাথরজনিত সমস্যা রয়েছে, তারা নিয়মিত আপেল খেলে সেই পাথর নরম ও ছোট হয়ে শরীর থেকে বের হয়ে যায়।

মাছ
মাছকে বলা হয়ে থাকে নিরাপদ প্রোটিনের উৎস। দৈনিক প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে মাংসের চেয়ে মাছের ভূমিকা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের পাশাপাশি মাছে রয়েছে ওমেগা ৩, যা কিডনি, হার্ট ও লিভারের বিভিন্ন রোগপ্রতিরোধ করে। এ ছাড়া কোলেস্টেরল কমাতে এর ভূমিকা রয়েছে।

বাঁধাকপি
বাঁধাকপিকে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের খনি বললেও ভুল হবে না। এতে রয়েছে ভিটামিন কে, সি, বি৬, ফলিক অ্যাসিড, প্রচুর ফাইবার, যা দেহের ক্ষতিকারক ফ্রি র‌্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে কাজ করে কিডনিকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি ক্যানসার ও হৃদরোগ প্রতিরোধেও কাজ করে।

রসুন
রসুনে রয়েছে এলিসিন নামের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা মানবদেহের প্রদাহ দূর করে। জারণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানবদেহে অতিমাত্রায় বর্জ্য পদার্থ তৈরিতে বাধাদান করে কিডনি সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

পেঁয়াজ
পেঁয়াজে থাকা কোরসিটিন নামের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট কিডনির জন্য ক্ষতিকারক ফ্রি র‌্যাডিক্যালগুলোকে বাধাদান করে, কিডনি পরিশোধনে সহায়তা করে এবং মূত্রনালির সংক্রমণ রোধ করে।

আদা
দেহের রক্ত চলাচল বাড়িয়ে কিডনিকে সচল রাখতে সাহায্য করে আদা। ফলে কিডনির কার্যকারিতা বেড়ে যায়। নিয়মিত আদা চা পান করলে অথবা কাঁচা আদা খেলে কিডনি সুস্থ থাকে।

চালতা
চালতায় থাকা প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ও খনিজ লবণ কিডনি ভালো রাখতে সহায়তা করে। শরীর থেকে দূষিত বর্জ্য বের করে কিডনি পরিষ্কার করার ক্ষমতা থাকায় চালতাকে প্রাকৃতিক ক্লিনজার বলা হয়।

ডিমের সাদা অংশ
অনেকেই ডিমকে খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দেয়। কিন্তু ডিমের সাদা অংশই হচ্ছে বিশুদ্ধ প্রোটিন, যা কিডনি ভালো থাকার জন্য খুব প্রয়োজন।

 কলি

কায়িক পরিশ্রম হার্টের জন্য ভালো

প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:১১ পিএম
কায়িক পরিশ্রম হার্টের জন্য ভালো

হৃদরোগ নিয়ে অনেকের মনে নানা প্রশ্ন। কিন্তু সব প্রশ্নের বিজ্ঞানসম্মত সঠিক উত্তর মেলে না। ২৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ব হার্ট দিবসকে সামনে রেখে হৃদরোগবিষয়ক কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী

প্রশ্ন: হৃদরোগ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নয় এমন মানুষ কীভাবে হৃদযন্ত্রের যত্ন নিতে পারে?
ডা. ওয়াদুদ: হৃদরোগের আসল কারণ হলো- উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ধূমপান, রক্তে কোলেস্টেরল লেভেল বেশি থাকা, স্থূলতা, বংশগত ইত্যাদি। এখানে শুধু বংশগত কারণ ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে আমাদের নিজেদের সতর্ক থাকার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এসব বিষয়ে সচেতন হলেই হৃদরোগ প্রতিরোধ করা যায়। এ জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।

প্রশ্ন: সুস্থ মানুষ প্রায়ই হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এমনটা আসলে কেন ঘটছে?
ডা. ওয়াদুদ: কারও হয়তো ফ্যামিলি হিস্ট্রি, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ আছে অথচ সে নিজেও তা জানে না বা কোনো দিন পরীক্ষা করেও দেখেনি। যখন সে আক্রান্ত হচ্ছে, তখন না জানার কারণে আমাদের কাছে হঠাৎ সুস্থ মানুষের আক্রান্ত হওয়া মনে হচ্ছে। কারও বয়স ৪০ বছর পার হলেই তার বছরে অন্তত একবার ব্লাড সুগার, কোলেস্টেরল লেভেল পরীক্ষাসহ ইসিজি করে হার্টের অবস্থা দেখা উচিত।

প্রশ্ন: কেউ উত্তরাধিকারসূত্রে হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারে?
ডা. ওয়াদুদ: বংশগত কারণে কারও হৃদরোগ হতে পারে। তবে একক জেনেটিক কারণে হৃদরোগ সহজে হয় না। হৃদরোগের সঙ্গে অনেকগুলো ফ্যাক্টর জড়িত। সবকিছুর সঙ্গে পরিবেশের সম্পর্কও রয়েছে।

প্রশ্ন: জগিং না হাঁটা- কোন ব্যায়ামটি ভালো?
ডা. ওয়াদুদ: দুটিই ভালো। তবে শারীরিক বা কায়িক পরিশ্রম করা উচিত, যাতে শরীর থেকে অন্তত ঘাম বের হয়। মডারেট এক্সারসাইজ সবসময় ভালো, হেভি এক্সারসাইজ কখনোই ভালো না। সবকিছুর মাত্রা রেখে করা উচিত। দিনে ৩০-৪০ মিনিট করে সপ্তাহে পাঁচ দিন ব্যায়াম করা ভালো। সাঁতার কাটাও ভালো ব্যায়াম।

প্রশ্ন: নিম্ন রক্তচাপে যারা ভোগেন, তারা কি হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারেন?
ডা. ওয়াদুদ: নিম্ন রক্তচাপে ভোগা মানুষের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তুলনামূলকভাবে কম। তবে মূল বিষয় হলো, তার ডায়াবেটিস আছে কি না, ধূমপান করেন কি না বা কোলেস্টেরল লেভেল বেশি কি না- এসব বিষয় আগে দেখা উচিত।

প্রশ্ন: কোলেস্টেরলের মাত্রা কি অল্প বয়স থেকেই বাড়তে থাকে? কখন এ বিষয়ে সতর্ক হওয়া উচিত?
ডা. ওয়াদুদ: সাধারণত ৩০ বছর বয়সের পর থেকেই মানুষের দেহে কোলেস্টেরলের মাত্রা পরিবর্তন হতে শুরু করে। আমরা তাই ৪০ বছরের পর লিপিড প্রোফাইল নিয়মিত চেক করার পরামর্শ দিই। আর যাদের বংশগত হৃদরোগ রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে ৩৫ বছর পার হলেই বছরে একবার লিপিড প্রোফাইল করা উচিত।

প্রশ্ন: অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস কীভাবে হৃদযন্ত্রের ওপর প্রভাব ফেলে?
ডা. ওয়াদুদ: অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাসে ভাজাপোড়া, জাংক ফুড বেশি খাওয়া হয়ে যায়। এতে হেলথ এনভায়রনমেন্ট নষ্ট হয়। তাই হৃদরোগ থেকে বাঁচতেই শুধু নয়, বরং শারীরিক সুস্থতায় নিয়মিত খাদ্যাভ্যাস জরুরি।

প্রশ্ন: ওষুধ ছাড়া কি কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করা যায়?
ডা. ওয়াদুদ: অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ও ব্যায়াম- শুধু এ দুটি মাধ্যম দিয়ে পরিপূর্ণভাবে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করেছেন অনেকে। মনে রাখা দরকার, খাদ্যতালিকায় কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাটজাতীয় খাবার কমাতে হবে; কিন্তু প্রোটিন ঠিক রাখতে হবে।

প্রশ্ন: হৃদযন্ত্রের জন্য সবচেয়ে ভালো ও খারাপ খাবার কোনটি?
ডা. ওয়াদুদ: মেডিসিনে একটি কথা আছে, প্রতিটি ওষুধই ক্ষতিকর হতে পারে, যদি সেটি অনুপযুক্ত মাত্রায় ব্যবহার করা হয়। খাদ্যের দোষ নেই, পরিমাণটা উপযুক্ত কি না, তা-ই বিবেচ্য বিষয়। সপ্তাহে একটি বার্গার খেতেই পারি, তাই বলে প্রতিদিন তো খাওয়া ঠিক হবে না।

প্রশ্ন: রান্নার জন্য কোন তেল ভালো?
ডা. ওয়াদুদ: খাঁটি সরিষা ও সানফ্লাওয়ার তেল রান্নার জন্য ভালো। অলিভ অয়েলকে বেস্ট অয়েল বলা হলেও আমাদের দেশের খাঁটি সরিষার তেল কিন্তু বেশ ভালো। রান্নার জন্য রাইস ব্রান অয়েলও ভালো। তবে এটা নিয়ে তেমন স্টাডি নেই। আবার পাম অয়েল মেশানো সয়াবিন তেল খাওয়া ঠিক নয়।

প্রশ্ন: নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য নির্দিষ্ট কোনো পরীক্ষা আছে?
ডা. ওয়াদুদ: খালি পেটে ব্লাড সুগার, লিপিড প্রফাইল, উচ্চ রক্তচাপ পরীক্ষা করে একটা ইসিজি করে নিলেই হয়। বয়স ৩০ পেরোনোর পর দুই বছরে একবার হলেও প্রত্যেকের উচিত এ পরীক্ষাগুলো করা।

প্রশ্ন: হার্ট অ্যাটাক হলে কেউ কি নিজে নিজে প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে পারে? এ সময় করণীয় কী?
ডা. ওয়াদুদ: সাধারণত চার ভাগের এক ভাগ মানুষ কোনো ধরনের পূর্বাপর ব্যথার উপসর্গ ছাড়াই হৃদরোগে বা হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়। এই চিত্রটা সারা পৃথিবীতে একই রকম। সব রোগীর টিপিক্যাল বুকে ব্যথা হয় না। তবে কেউ যদি বুঝতে পারেন যে তার হার্ট অ্যাটাক হতে যাচ্ছে, তখন বিলম্ব না করে ফার্মেসি থেকে অ্যাসপিরিন ৩০০ মি.গ্রা. ট্যাবলেট কিনে সরাসরি চিবিয়ে খেয়ে ফেলবেন। এই অ্যাসপিরিন হার্ট অ্যাটাকে ৩০ শতাংশ মৃত্যু কমাতে পারে। অন্যান্য অসুখ থাকলেও এটা সেবনে কোনো ক্ষতি নেই। এ ছাড়া নাইট্রেট স্প্রে বা ট্যাবলেট জিহ্বার নিচে দিতে পারেন। এরপর গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেট খেয়ে একটা ইসিজি করে হার্ট অ্যাটাকের মার্কার হিসেবে রক্তের ট্রপোনিনও দেখা উচিত।

প্রশ্ন: হৃদরোগজনিত ব্যথা ও গ্যাস্ট্রিকের ব্যথার মধ্যে পার্থক্য করা যায় কীভাবে?
ডা. ওয়াদুদ: বিশেষজ্ঞ ছাড়া এটা আসলে অন্য কারও পক্ষে বোঝা মুশকিল। এটা বুঝতে হলে হার্টের ইসিজি করে দেখতে হবে। তবে ইসিজি নরমাল মানেই যে হার্ট অ্যাটাক হয়নি- এমনটি মনে করা যাবে না। এটায় অনেকেই ভুল করেন। অথচ ২৫ ভাগ ক্ষেত্রে প্রাথমিক ইসিজিতে হার্ট অ্যাটাকের প্রমাণ মেলে না। এ জন্য প্রয়োজনে কিছুক্ষণ হাসপাতালে অবজারভেশনে থেকে আবার ইসিজি করাতে হবে।

প্রশ্ন: যুবকদের মধ্যে হৃদরোগের সমস্যা বাড়ছে, এর কারণ কী?
ডা. ওয়াদুদ: আমার অবজারভেশন হলো, ইয়াবা-মোটরসাইকেল গোষ্ঠীদের হৃদরোগ বাড়ছে। অর্থাৎ যুবকদের মধ্যে একটা গ্রুপ আছে, যারা ইয়াবায় আসক্ত, তারা হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আবার অনেকে মোটরসাইকেল নিয়ে সারা দিন খালি ছুটে বেড়ায়। তারা এত ব্যস্ত যে নিজের শরীরের দিকে তাকানোর পর্যন্ত সময় নেই। এরাও হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছে সতর্কতার অভাবে।

প্রশ্ন: রক্তচাপের স্বাভাবিক মাত্রা (১২০/৮০) না থাকলেও কি কেউ পুরোপুরি সুস্থ থাকতে পারে?
ডা. ওয়াদুদ: রক্তচাপের স্বাভাবিক মার্কার হলো ১২০/৮০ মিমি মার্কারি। তবে রক্তচাপ ওপরেরটা ১০০ থেকে ১৩৯ পর্যন্ত থাকলেও নরমাল। আবার নিচেরটা ৬০ থেকে ৯০-এর নিচে থাকলে নরমাল। অর্থাৎ কারও রক্তচাপ যদি ১১০/৬০ বা ১৩৫/৮৫ থাকে, তবে সে স্বাভাবিক রক্তচাপে অবস্থান করছে ধরতে হবে।

প্রশ্ন: নিকটাত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে করলে সন্তানের হৃদরোগ হতে পারে- এটা কি সত্য?
ডা. ওয়াদুদ: এ ক্ষেত্রে জন্মগত হার্ট ডিজিজ হতে পারে। তবে হবেই যে এমন কোনো কথা নেই।

প্রশ্ন: বেশির ভাগ মানুষ অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করে। অনেক রাত পর্যন্ত কাজ করেন কেউ কেউ। এতে কি হৃদযন্ত্রের ক্ষতি হয়? এ ক্ষেত্রে করণীয় কী?
ডা. ওয়াদুদ: যারা রাত জেগে কাজ করেন, তাদের স্ট্রেস লেভেল বেশি। তারা টেনশন করেন বেশি, মেজাজও খিটমিটে ধরনের হয়। অনেকে উচ্চ রক্তচাপেও ভোগে এবং ধূমপানও বেশি করেন। এদের মধ্যে যাদের উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস রয়েছে এবং রক্তে কোলেস্টেরল লেভেল বেশি, তাদের একটু সতর্ক থাকতে হবে।

প্রশ্ন: অ্যান্টি-হাইপারটেনসিভ ওষুধ গ্রহণ করলে অন্য কোনো জটিলতা তৈরি হয়?
ডা. ওয়াদুদ: প্রতিটি ওষুধেরই রিঅ্যাকশন আছে, সাইড ইফেক্ট আছে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শে মাত্রা জেনে সতর্কতার সঙ্গে যেকোনো ওষুধ সেবন করা উচিত।

প্রশ্ন: নিয়মিত হার্টের ওষুধ খেলে কি কিডনি রোগ বা অন্য সমস্যা হয়?
ডা. ওয়াদুদ: এটা একেবারেই ভুল ধারণা।

প্রশ্ন: অতিরিক্ত চা বা কফি পান করলে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে?
ডা. ওয়াদুদ: অতিরিক্ত যেকোনো কিছুই ক্ষতিকর। সারা দিন তিন-চার কাপ চা বা কফি পান করা যেতে পারে, এতে হার্টের তেমন সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

প্রশ্ন: অ্যাজমা রোগীদের কি হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি?
ডা. ওয়াদুদ: এটা নির্ভর করে রোগীর ডায়াবেটিস, রক্তচাপ, কোলেস্টেরল লেভেল বেশি কি না তার ওপর। তবে যারা আনকন্ট্রোল্ড অ্যাজমার রোগী অথবা যারা নিয়মিত শ্বাসকষ্টে ভুগে থাকেন, তাদের শ্বাসরোগজনিত হৃদরোগ বা কর-পালমোনালে হতে পারে।

প্রশ্ন: রক্তে শ্বেতকণিকা ও হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলে কি হৃদরোগ হতে পারে?
ডা. ওয়াদুদ: রক্তের সঙ্গে হৃদরোগের সরাসরি সম্পর্ক নেই। তবে কেউ রক্তশূন্য থাকলে হার্টের অক্সিজেন সাপ্লাই কমে যায়। কাজেই তাদের অ্যানজাইনা বা হার্টের ব্যথা হতে পারে।

প্রশ্ন: ব্যস্ত জীবনযাত্রার কারণে অনেকের ব্যায়াম করা সম্ভব হয় না। সে ক্ষেত্রে ঘরের স্বাভাবিক কাজের সময় হাঁটাহাঁটি করা অথবা সিঁড়ি বেয়ে ওঠানামা করা কি ব্যায়ামের বিকল্প হতে পারে?
ডা. ওয়াদুদ: কায়িক পরিশ্রম করা হার্টের জন্য ভালো। আমি যখন দ্রুত হাঁটব, তখন ফুসফুসে রক্ত চলাচল বাড়বে, হার্ট অক্সিজেন পাবে। এ অক্সিজেনই হার্টের খাবার। আর ঘরে বসে যখন হাঁটাহাঁটি করব বা সিঁড়ি বেয়ে ওঠানামা করব, তখন সেভাবে তা হয় না। শরীর থেকে ঘাম বের করতে না পারলে তেমন লাভ হয় না।

প্রশ্ন: নারীদের চেয়ে পুরুষরা হৃদরোগে বেশি আক্রান্ত হয় কেন?
ডা. ওয়াদুদ: সবসময় এটাই হয়ে আসছে। ঋতু চলাকালে নারীরা হরমোনাল প্রটেকশনের মধ্যে থাকেন, ফলে তাদের হৃদরোগ কম হয়। নারীদের মাসিক বন্ধ হওয়ার পর এই প্রটেকশনটা চলে যায়, তখন রোগের ঝুঁকিটা পুরুষদের মতোই হয়ে যায়। তাই প্রায় ৫০ বছর পর্যন্ত নারীরা হৃদরোগে তেমন আক্রান্ত হন না।

গ্রন্থনা: হৃদয় জাহান

ক্যানসারে মুষড়ে পড়া নয়

প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৫১ পিএম
আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:৪৯ পিএম
ক্যানসারে মুষড়ে পড়া নয়
ছবি: ১.মাজেদা রহমান ঝর্ণা (কেমোথেরাপি নেওয়ার পর)। ২. স্বামী সন্তানের সঙ্গে ঝর্ণা

উপরের ছবির মেয়েটির সাজসজ্জা দেখে অনেকেই হয়তো ভাবছেন ফ্যাশনের নতুন কোনো ট্রেন্ড। মাথায় চুল নেই কিন্তু টিকলি আছে। না, সাজসজ্জার নতুন কোনো ট্রেন্ড নয়। ক্যানসারের চিকিৎসার অংশ হিসেব কেমোথেরাপি দেওয়ার পর মাথার চুল পড়ে যাচ্ছিল। তাই স্বেচ্ছায় ন্যাড়া হয় মেয়েটি। 

সাধারণত ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার খবর শুনে যে কেউ মনোবল হারিয়ে ফেলেন। কান্নাকাটির পাশাপাশি মরার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। কিন্তু এই মেয়েটির বেলায় দেখলাম ব্যতিক্রম। অসীম সাহসিকতার সঙ্গে সে এই দূরারোগ্য ব্যাধি মোকাবিলা করছে। 

গত ২২ মার্চ ছিল আমাদের পরিবারের জন্য একটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক দিন। সেদিন আমরা জানতে পারি আমাদের সবচেয়ে আদরের ছোট বোন মাজেদা রহমান ঝর্ণা ক্যানসারে আক্রান্ত। ক্যানসার আর্লি স্টেজে থাকলেও আমরা ভাইবোন সবাই মুষড়ে পড়ি। শুরু হয় চিকিৎসকের কাছে ছোটাছুটি। সেই সঙ্গে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, যেন সে দ্রুত সুস্থ হয়। চিকিৎসকরা জানালেন ৬টি কেমোথেরাপির পাশাপাশি ইমিউনোথেরাপি দিতে হবে। ছটি কেমো ও ইমিউনোথেরাপির পর অপারেশন। এরপর আবার ১০টি ইমিউনোথেরাপি দিতে হবে। তার আগে নানা পরীক্ষা–আল্ট্রাসনোগ্রাম, এমআরই, সিটিস্ক্যান, বোনস্ক্যান রেডিওথেরাপি আরও কত কী। সব মিলিয়ে খরচ ৬০ লক্ষাধিক টাকা। 

এত খরচ! আমরা আবারও মুষড়ে পড়লাম। কিন্তু একজন কিছুতেই মুষড়ে পড়লো না। সে ঝর্ণার স্বামী মাসুদ ইমরান মান্নু। লড়াকু এই ছেলেটি জীবনপণ করে ফেললো, যেভাবেই হোক স্ত্রীকে বাঁচাতে হবে। ঝাঁপিয়ে পড়লো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের এই শিক্ষক স্ত্রীর চিকিৎসায়। নিজের ও ১৩ বছরের মেয়েটির ঝর্ণাকে যে বড্ড প্রয়োজন। এরপর শুরু হলো কেমোথেরাপি ও ইমিউনোথেরাপির সেই কঠিন অধ্যায়। ২১ দিন পর পর দিতে হয় এসব থেরাপি। প্রতিটি থেরাপির পর শরীর ভীষণ খারাপ হয়ে যায়। মাথা ঘোরা, কনস্টিপিশনসহ নানা সমস্যা। কিন্তু আমার বোনকে এজন্য এক মুহূর্তের জন্য মন খারাপ করতে দেখিনি। দেখিনি হতাশ হতে। 

চিকিৎসকরা অবশ্য শুরুতেই বলেছেন, ভয়ের কিছু নেই। যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হলে ক্যানসার ভালো হয়ে যাবে। হয়তো চিকিৎসকদের এই অভয়বাণী ঝর্ণাকে উজ্জীবিত করে রেখেছে। সংসারের প্রায় সব কাজ সে একা হাতেই করছে। মেয়ের লেখাপড়া ও তাকে স্কুলে আনা নেওয়া করার কাজটিও সে করছে সুচারুভাবে। পাশাপাশি চলছে সামাজিকতাও। সাজগোজ করে নিজের ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্টও করছে। তাকে এমনটা করতে দেখে আমরাও আর মন খারাপ করি না এবং মনে দৃঢ় আশা পোষণ করি যে চিকিৎসা শেষে ঝর্ণা অবশ্যই সুস্থ হয়ে উঠবে।

ফলিক অ্যাসিডের অভাব

প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৪০ পিএম
ফলিক অ্যাসিডের অভাব

ফলিক অ্যাসিড বা ফলেট বা ভিটামিন বি-৯ শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এই ভিটামিন পানিতে মিশে যায়, ফলে শরীর এই ভিটামিনটি ধরে রাখতে পারে না। তাই প্রতিদিন খাবারের মাধ্যমে শরীরের এই ভিটামিন প্রয়োজন হয়। ফলিক অ্যাসিড লাল রক্ত কোষ (আরবিসি) উৎপাদনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যার মধ্যে হিমোগ্লোবিন রয়েছে এবং এটি ডিএনএ (ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিইক অ্যাসিড) তৈরি ও মেরামত করে। ফলিক অ্যাসিডের অভাবের ফলে মেগালোব্ল্যাস্টিক অ্যানিমিয়া হয়, যা গর্ভাবস্থায় হলে ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

এটির প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলো কী কী?
ফলিক অ্যাসিডের অভাবের প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলো হলো কম হিমোগ্লোবিনের জন্য দুর্বলতা এবং ক্লান্তিভাব। এ ছাড়া শ্বাসের ঘাটতি, মুখের বা জিভের ঘা, মাথা যন্ত্রণা, বিরক্তিভাব, ক্ষুধামান্দ্য এবং মনোযোগে অসুবিধা। গর্ভাবস্থায় ফলেটের অভাবের ফলে শিশুর মধ্যে জন্মগত ত্রুটি হতে পারে। কারণ এটি শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশের জন্য খুবই জরুরি।

এটির প্রধান কারণ কী কী?
খারাপ বা কম পরিমাণে খাবার গ্রহণ করার ফলে ফলেটের অভাব হয়। ম্যালঅ্যাবসরপসন রোগ যেমন- কোয়েলিয়াক রোগ খাবার থেকে রক্তে ফলেট শোষণকে আটকায়, যার ফলে ফলেটের অভাব হয়। দীর্ঘস্থায়ী সময়ের জন্য কিডনি ব্যর্থতার জন্য ডায়ালিসিস এবং দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির ফলে লিভারের ঘাটতি হতে পারে। মেথোট্রেকসেট, সালফাস্যালাজাইনের মতো ওষুধ এবং খিঁচুনি নিয়ন্ত্রণ করার ওষুধের ফলেও ফলিক অ্যাসিডের অভাব হতে পারে।

এটি কীভাবে নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয়?
এ অবস্থার নির্ণয়ের জন্য চিকিৎসক উপসর্গগুলোর সঠিক ইতিহাস নেবেন এবং কিছু ল্যাবরেটরি পরীক্ষার পরামর্শ দেবেন। যেসব রোগীর মধ্যে পুষ্টির অভাব রয়েছে তাদের মধ্যে অ্যানিমিয়া আছে কি না, তা জানার জন্য কমপ্লিট ব্লাড কাউন্টের পরামর্শ দেওয়া হয়।

ফলিক অ্যাসিডের অভাবের কারণে মেগালোব্ল্যাস্টিক অ্যানিমিয়া হয়, যার মধ্যে আরবিসিগুলো সাধারণের থেকে বড় হয় এবং অপরিণত হয়। রক্তে ফলিক অ্যাসিডের কম মাত্রা ফলিক অ্যাসিডের অভাবকে ইঙ্গিত করে। যে ওষুধগুলো রোগী গ্রহণ করে চিকিৎসক তারও একটি ইতিহাস নিতে পারেন এটা জানার জন্য যে, অন্য কোনো ওষুধের কারণে ফলিক অ্যাসিডের ম্যালঅ্যাবসরপসন হচ্ছে কি না।

চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে ফলিক অ্যাসিডের পরিপূরক খাওয়া। ওষুধের দোকানে ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট পাওয়া যায়। ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার যেমন ডিম, শেলফিশ, বিটরুট, ডাল, মটরশুঁটি, সবুজ পাতা সমেত শাকসবজি সমগ্র স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।

 কলি