ঢাকা ২৫ কার্তিক ১৪৩১, রোববার, ১০ নভেম্বর ২০২৪

গ্যাস্ট্রাইটিস হলে ভয়ের কিছু নেই

প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৩৬ পিএম
আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৪০ পিএম
গ্যাস্ট্রাইটিস হলে ভয়ের কিছু নেই
স্বাভাবিক জীবনধারার ওপর গ্যাস্ট্রাইটিসের প্রভাব আছে

গ্যাস্ট্রাইটিস পরিপাক নালির একটি অতি সাধারণ রোগ। পাকস্থলীর ভেতরের আস্তরণের প্রদাহ এবং জ্বালার কারণে এই রোগ হয়। এই প্রদাহের জন্য পেটের ওপর দিকে ব্যথা, জ্বালা, বুক জ্বালা, ঢেকুর তোলা, খাদ্য উগরানো, বমি ভাব এবং কখনো কখনো বমি হয়। মাই উপচার অবলম্বনে জানাচ্ছেন ফখরুল ইসলাম

পাকস্থলীর ভেতরের আস্তরণের (মিউকোসা) প্রদাহ বা জ্বালা হচ্ছে গ্যাস্ট্রাইটিস। সুস্থ মানুষের পাকস্থলীতে অ্যাসিড, বিভিন্ন প্রকারের এনজাইম এবং শ্লেষ্মা তৈরি হয়। গ্যাস্ট্রাইটিসের সময় শ্লেষ্মার পরিমাণ কমে যায়, ফলে নিজের তৈরি অ্যাসিডই পাকস্থলীকে আক্রমণ করে। ফলে পেটে ব্যথা এবং জ্বালা হয়। এর সঙ্গে খাবার উগরে দেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। কখনো কখনো বমিও হয়। খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন এবং ওষুধ দিয়ে গ্যাস্ট্রাইটিসের নিয়ন্ত্রণ নিরাময় করার হার খুবই বেশি।

সবার জীবনেই বিভিন্ন কারণে অন্তত একবার এই রোগ হয়। সংক্রমণ, ওষুধ, ধূমপান, মদ্যপান, চাপ এবং শরীরের প্রতিরক্ষাসংক্রান্ত কারণগুলো গ্যাস্ট্রাইটিস হওয়ার মূল কারণ। এই রোগ দীর্ঘস্থায়ী কিংবা তীব্র হতে পারে। যদি উপসর্গগুলো ঘন ঘন তীব্র হয় এবং কয়েক দিনের ভেতরে নিরাময় না হয় তখন তাকে অ্যাকিউট গ্যাস্ট্রাইটিস বলা হয়। এর তুলনায় ক্রনিক গ্যাস্ট্রাইটিসের উপসর্গগুলো খুব কম বা মধ্য মাত্রার হয় এবং রোগ বছরের পর বছর চলতে থাকে।

উপসর্গ

বিভিন্ন প্রকারের গ্যাস্ট্রাইটিসের বিভিন্ন প্রকারের উপসর্গ দেখা যায়। সবচেয়ে সাধারণ উপসর্গগুলো হলো পাকস্থলী এবং বুকের মাঝখানে জ্বালা হওয়া। অনেক মানুষের কোনো উপসর্গই থাকে না, শুধু তাদের বদহজম হয়।

ছাড়া আরও যেসব উপসর্গ দেখা যায় তার মধ্যে আছে পাকস্থলীতে অথবা পেটের ওপরের অংশে জ্বালা। পাশাপাশি অতিরিক্ত ঢেকুর তোলা, খাদ্যনালি বা মুখের মধ্যে খাদ্য উগরানো, পেট ফোলা, খাওয়ার পর পেট ভার, বমি বমি ভাব বমি হওয়া। ছাড়া বদহজম হওয়া, ক্ষুধামান্দ্য হওয়া হেঁচকি ওঠা।

গ্যাস্ট্রাইটিসের কারণ এবং প্রকারের ওপর নির্ভর করে এর উপসর্গগুলোর তীব্রতা। নিম্নবর্ণিত লক্ষণ উপসর্গগুলো দেখা গেলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। যেমন- পেটের ওপরের দিকে বা পাকস্থলীতে তীব্র ব্যথা (ছুরি মারা বা মোচড়ানোর মতো ব্যথা), রক্ত বমি (হেমাটেমেসিস), গাঢ় বা কালো রঙের মল, মাথা ঘোরা বা দুর্বলতা। পাশাপাশি নিঃশ্বাসের অসুবিধা, দুর্বলতা, ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া।

এই উপসর্গগুলো গুরুতর গ্যাস্ট্রাইটিস বা ক্ষয়কারী গ্যাস্ট্রাইটিসের ইঙ্গিত দেয়, যার জন্য জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা শুরু হওয়া প্রয়োজন।

চিকিৎসা

সৌভাগ্যবশত, সব রকমের গ্যাস্ট্রাইটিসের কার্যকরী চিকিৎসা এবং নিরাময় আছে। গ্যাস্ট্রাইটিস হওয়ার কারণ জানা গেলে তার জন্য নির্দিষ্ট চিকিৎসা করলে রোগ সেরে যায়। গ্যাস্ট্রাইটিসের চিকিৎসা তার উপসর্গ অনুযায়ী করা হয়।

এন্টাসিড: এই ওষুধে থাকে ম্যাগনেশিয়াম এবং অ্যালুমিনিয়ামের লবণ, যেগুলো পাকস্থলীর অ্যাসিডকে নিষ্ক্রিয় করে ব্যথা এবং জ্বালা কমায়। তবে, এদের জন্য উদরাময় বা কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।

প্রোটোন-পাম্প ইনহিবিটারস: এই রকমের ওষুধগুলো পাকস্থলীতে অ্যাসিডের উৎপাদন হ্রাস করে। এতে উপসর্গগুলো কমে যায় এবং জ্বালা প্রদাহের উপশম হয়। এই ধরনের কয়েকটি ইনহিবিটার হলো প্যান্টোপ্রাজোল, ওমিপ্রাজোল, রাবেপ্রাজোল এবং এসোমিপ্রাজোল।

এইচ টু ব্লকার্স: এই রকমের ওষুধগুলো পাকস্থলীতে অ্যাসিডের উৎপাদন হ্রাস করে কিন্তু এরা প্রোটোন পাম্প ইনহিবিটারগুলোর চেয়ে কম কার্যকরী। এই রকমের কয়েকটি ওষুধ হলো-্যানিটিডিন, নিজাটিডিন এবং ফ্যামোটিডিন।

অ্যান্টিবায়োটিক: যে ব্যাকটেরিয়াগুলো বিশেষত এইচ পাইলোরি, সংক্রমণ করে পাকস্থলীর আস্তরণের ক্ষতি করে, এই অ্যান্টিবায়োটিকগুলো সেই ব্যাকটেরিয়াগুলোর বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে এবং তাদের ধ্বংস করে। এই অ্যান্টিবায়োটিকগুলোর উদাহরণ হচ্ছে এমোক্সিসিলিন, মেট্রোনিডাজোল অথবা ক্ল্যারিথ্রোমাইসিন।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে কয়েকটি চিকিৎসা পদ্ধতির সম্মিলন করে এবং সঙ্গে জীবনধারার পরিবর্তন করে গ্যাস্ট্রাইটিসের চিকিৎসা করা হয়।

জীবন ধারার ব্যবস্থাপনা

স্বাভাবিক জীবনধারার ওপর গ্যাস্ট্রাইটিসের প্রভাব আছে। বিশেষত তীব্র গ্যাস্ট্রাইটিসের ক্ষেত্রে জীবন ধারার পরিবর্তন প্রয়োজন যাতে জটিলতা না হয়, কারণ শুধু ওষুধ যথেষ্ট নয়। গ্যাস্ট্রাইটিসের জন্য জীবন ধারার যে সামান্য পরিবর্তন প্রয়োজন হয় তা হলো-

খাবার পরিকল্পনা: নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে বারবার অল্প করে খাবার খাওয়া ভালো। কারণ একসঙ্গে অনেকটা খাবার খেলে পেটে অ্যাসিডের উৎপাদন বেশি হয়। ছাড়া পাকস্থলীর ধারণক্ষমতাও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অধিক খাদ্য পেটে গেলে উগরানোর সম্ভাবনা থাকে। অধিকন্তু, দুবার খাদ্যগ্রহণের মধ্যে সময়ের অধিক তফাৎ থাকায় অ্যাসিডের উৎপাদন হতে পারে, যা পাকস্থলীর আস্তরণের আরও ক্ষতি করতে পারে।

প্রোবায়োটিকসের ব্যবহার: অন্ত্রের স্বাভাবিক জীবাণুগুলোর বৃদ্ধিতে প্রোবায়োটিকগুলো সহায়তা করে। ফলে গ্যাস্ট্রিক আলসার রোগের উপশম হয়। কিন্তু এগুলো পাকস্থলীর অ্যাসিডের ক্ষরণ রোধ করে না। দই এবং বাটার মিল্ক হলো প্রাকৃতিক প্রোবায়োটিক। এগুলো খেলে সমস্যার সমাধান হয়।

মদ্যপান পরিত্যাগ: মদ পাকস্থলীর ভেতরের আস্তরণের ক্ষতি করে।

ধূমপান পরিত্যাগ: ধূমপান আরেকটি অভ্যাস যা পাকস্থলীতে অ্যাসিডের ক্ষরণ বৃদ্ধি করে।

মসলাযুক্ত খাদ্য পরিহার করা: মসলাযুক্ত এবং ঝাল খাদ্য পাকস্থলীতে অ্যাসিড উৎপাদন করে ভেতরের আস্তরণের ক্ষতি করে।

ব্যথার ব্যবস্থাপনা: অন্যান্য বিকল্প ব্যথা হ্রাস করার উপায়গুলো বা ওষুধগুলো পাকস্থলীতে অ্যাসিডের ক্ষরণ হ্রাস করতে সাহায্য করে।

ওজনের ব্যবস্থাপনা: ওজন হ্রাস করতে পারলে বা বি-এম-আইয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারলে গ্যাস্ট্রাইটিসের তীব্রতা হ্রাস করতে সাহায্য করে। ছাড়া খাদ্যের সঙ্গে ফল, সবজি এবং গোটা শস্য গ্রহণ করলে পাকস্থলীর উপকার করে।

মানসিক চাপের ব্যবস্থাপনা: মানসিক চাপের কারণেও পাকস্থলীতে অ্যাসিড বেশি তৈরি হয়। চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে যোগ ব্যায়াম, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম এবং ধ্যান করা খুব উপকারী।

 

মেহেদী

মাথা ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা

প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০২:১৬ পিএম
আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০২ পিএম
মাথা ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা
সংগৃহীত

কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি প্রয়োগ করলে দ্রুত মাথা ব্যথা কমে যায়। যেমন...

আকুপ্রেসার

ঘাড় ও মাথায় প্রেসার পয়েন্ট আকুপ্রেসার থেরাপি প্রয়োগ করলে অল্প সময়ের মধ্যেই মাথা ব্যথা কমে। এ জন্য বাঁ হাতের বৃদ্ধাঙুলি এবং তর্জনীর মাঝখানের অংশে অন্য হাতের বৃদ্ধাঙুলি ও তর্জনী দিয়ে চাপ দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ম্যাসাজ করতে হয়। একইভাবে ডান হাতেও করতে হয়।

 

গোসল

হালকা গরম পানিতে গোসল করলে মাথা ব্যথা কমে।

 

পানি পান

একগ্লাস পানি পান নিমেষেই মাথা ব্যথা দূর করে। শরীর আর্দ্র থাকলে ব্যথাও ধীরে ধীরে কমে।

 

পানি

 

লবঙ্গ

কিছু লবঙ্গ তাওয়ায় গরম করে তা একটি রুমালে মুড়ে নিয়ে কিছুক্ষণ ঘ্রাণ নিলে মাথা ব্যথা দূর হয়।

 

পুদিনাপাতা

পুদিনাপাতায় রয়েছে ম্যানথল ও ম্যানথন, যা মাথা ব্যথা দূর করতে বেশ কার্যকর।

 

পুদিনাপাতা

 

আপেল

এক টুকরো আপেলের সঙ্গে সামান্য লবণ মিশিয়ে খেলে মাথা ব্যথা কমে।

 

আদা

সমপরিমাণ আদা ও লেবুর রস মিশিয়ে খেলে বা একটু টাটকা আদা কয়েকবার চিবিয়ে খেলে মাথা ব্যথা দূর হয়।

 

আদা

 

বরফ

বরফের প্যাক ঘাড়ে বা মাথায় কিছুক্ষণ ধরে রাখলে মাথা ব্যথা, বিশেষ করে মাইগ্রেনের ব্যথা অনেকটাই কমে যায়।

 

বরফ

 

হাসি-খুশি মন

মাথাব্যথার কার্যকর উপায় হলো মনকে ইতিবাচক এবং পজিটিভ দিকে ডাইভার্ট করা। এতেও মাথা ব্যথা দূর হয়।

সুপার ফুড গাজর

প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৮ পিএম
আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২৯ পিএম
সুপার ফুড গাজর
সংগৃহীত

উচ্চ রক্তচাপ খুব সাধারণ একটি রোগ। একবার এই রোগের ফাঁদে পড়লে সাবধান হতে হবে। একটু বেগতিক হলেই স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক থেকে শুরু করে একাধিক জটিল রোগের ফাঁদে পড়ার আশঙ্কা বাড়ে। তবে উচ্চ রক্তচাপ কমাতে গাজর হতে পারে অন্যতম হাতিয়ার। কেন এই কথা বলা হচ্ছে, চলুন দেখে নেই।

 

পটাশিয়ামের ভাণ্ডার

রক্তে লবণের মাত্রা বাড়লে শরীর বেশি পরিমাণে পানি ধরে রাখে। যার ফলে বাড়ে রক্তচাপ। তবে ভালো খবর হলো, আপনি যদি নিয়মিত গাজর খান, তা হলে অনায়াসে রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন। কারণ, এই সবজিতে রয়েছে পটাশিয়ামের ভাণ্ডার। আর এই খনিজ দেহে সোডিয়ামের ভারসাম্য ফেরায়। যার ফলে কমে প্রেসার। বেশি উপকার পেতে চাইলে এই সবজি কাঁচা অবস্থায় খান। আর যাঁরা এ ভাবে খেতে চাইছেন না, তাঁরা তরকারিতে গাজর খেতে পারেন। তাতেও উপকার পাবেন।

তবে শুধু হার্টের স্বাস্থ্য ফেরানো নয়, এর পাশাপাশি আরও একাধিক উপকার করে গাজর। যেমন ধরুন-

 

হার্টের অসুখ কমবে

এই সবজিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। আর এই উপাদান খাবারে উপস্থিত কোলেস্টেরকে অন্ত্রে বেঁধে ফেলে। তার পর মলের মাধ্যমে বের করে দেয়। যে কারণে কমে কোলেস্টেরল। শুধু তাই নয়, এতে থাকা একাধিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। যার ফলে হার্টের অসুখে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা এক ধাক্কায় কমে। তাই তো বিশেষজ্ঞরা সকলকে নিয়মিত গাজর খাওয়ার পরামর্শ দেন।

 

বাড়বে ইমিউনিটি

আমরা মোটামুটি সকলেই জানি যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে চাইলে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। আর গাজরে এই ভিটামিন ভরপুর পরিমাণে রয়েছে। শুধু তাই নয়, এতে মজুত ভিটামিন এ-ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা চাঙ্গা রাখতে বিশেষ ভাবে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিনের ডায়েটে অবশ্যই গাজরকে জায়গা করে দিন। বিশেষত, যাঁরা নিয়মিত জ্বর, সর্দি, কাশিতে ভোগেন, তাঁদের প্রচুর গাজর খেতে হবে।

 

ব্রেন কাজ করবে দ্রুত গতিতে

জীবনে উন্নতি করতে চাইলে দ্রুত গতিতে ব্রেনকে কাজ করাতে হবে। আর সেই কাজেও আপনাকে সাহায্য করতে পারে গাজরের মতো একটি উপকারী সবজি। কারণ, এতে উপস্থিত বেশ কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মস্তিষ্কের প্রদাহ কমায়। যার ফলে স্মৃতিশক্তি অটুট থাকে। সেই সঙ্গে দ্রুত কাজ করতে পারে ব্রেন। তাই আপনার প্রতিদিনের ডায়েটে অবশ্যই গাজরকে জায়গা করে দিতে হবে। তাতেই শরীর ও স্বাস্থ্যের সুদিন ফিরবে।

 

কমবে ওজন

আপনি কি দ্রুত গতিতে শরীরের মেদ ঝরিয়ে ফেলতে চান? সেক্ষেত্রে ভরসা রাখতেই পারেন গাজরের মতো একটি উপকারী সবজির উপর। কারণ, এতে রয়েছে ফাইবারের ভাণ্ডার। সেই সঙ্গে এই সবজিতে কিছুটা পানিও রয়েছে। যেই কারণে গাজর খেলে দীর্ঘক্ষণ ভরে থাকে পেট। ফলে খিদে পায় কম। আর কম খেলে যে দ্রুত গতিতে ওজন হ্রাস পাবে, এ কথা আর আলাদা করে বলতে হবে না নিশ্চয়ই। তাই প্রতিদিনের ডায়েটে অবশ্যই গাজরকে জায়গা করে দিন।

জন্ডিসের সময় যে ৫ খাবার খেতে হবে

প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৮ পিএম
আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫৩ পিএম
জন্ডিসের সময় যে ৫ খাবার খেতে হবে
সংগৃহীত

জন্ডিস গুরুতর অসুখ। এই রোগে লিভারের ক্ষতি হয়। শরীরে বাড়ে বিলিরুবিন। লিভার বা যকৃতের রোগ থেকেই দ্রুত সুস্থ হওয়ার জন্য কম ফ্যাট এবং প্রোটিন যুক্ত খাবার খাওয়া প্রয়োজন। এছাড়া বেশি কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার আর প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা উপকারী। কার্বোহাইড্রেট লিভারের কোষকে দ্রুত তৈরি হতে সাহায্য করে। আবার ফ্যাট এবং প্রোটিনের পরিমাণ কমিয়ে সহজে খাবার হজমে সহায়তা করে।
নানা কারনে জন্ডিস হতে পারে। এর মধ্যে আছে কিছু ওষুধের প্রতিক্রিয়া থেকে, গলস্টোনের কারণে, মদ্যপান বেশি করার কারণে, গলব্লাডার ও প্যানক্রিয়াটিক ক্যানসার থেকে, সিররোসিস, হেপাইটাইটিস এবং অন্যান্য লিভার ইনফেকশন থেকে। এবং হেমোলাইটিক অ্যানিমিয়া থেকে। 
জন্ডিস হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কিছু খাবার আছে যেগুলো এ সময় খেলে রোগ দ্রুত সেরে যাবে। চলুন দেখে নেই।

তাজা ফলমূল
তাজা ফল এবং সবজিতে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার থাকে। এই উপাদান লিভারের বিপাকীয় ক্ষতি হ্রাস করে। ফলে লিভার দ্রুত সুস্থ হতে পারে। এছাড়া এই উপাদান হজমকে সহজতর করে তুলতে পারে। ফাইটোকেমিক্যালস সমৃদ্ধ এবং নানা উপকারী উপাদান সমৃদ্ধ পদার্থ থাকা ফল লিভারের রোগ থেকে মানুষকে রক্ষা করে। লিভারের পক্ষে উপকারী ফলগুলি হল ক্রানবেরি, ব্লুবেরি, আঙুর, পাতিলেবু এবং গ্রেপ ফ্রুটস মতো সাইট্রাস নানা ফল, পেঁপে এবং তরমুজ ইত্যাদি। 

 

ফলমূল

 


তাজা শাকসবজি
শাকসবজিতে ভিটামিন সি এবং ই, বিটা ক্যারোটিন, দস্তা, ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম এবং ফলিক অ্যাসিডসহ অনেক ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে। এই খাবারে চর্বি বা ফ্যাট, চিনি বা সুগার এবং লবণের পরিমাণ কম। এছাড়া ফাইবার এবং পাচক এনজাইমের পরিমাণ বেশি। তাই সবজি জন্ডিস আক্রান্তদের ডায়েটের জন্য অত্যন্ত সহায়ক। লিভার এর পক্ষে উপকারী সবজিগুলো হল কুমড়ো, মিষ্টি আলু, টমেটো, গাজর, শালগম, শালগম, ব্রোকোলি, ফুলকপি এবং ব্রাসেলস স্প্রাউটের মতো ক্রুসিফেরাস সবজি। এছাড়া শাকের মধ্যে পালং শাক ভালো।

 

শাকসবজি

 

দানা শস্য
দানা শস্যে লিভারের পক্ষে উপকারী প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি পদার্থ যেমন ভালো ফ্যাট, ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস এবং মিনারেলস বা খনিজ পদার্থ থাকে। তাই এই খাবার রোগী খেতেই পারেন। মনে রাখবেন, এই খাবারে থাকা নানা পুষ্টিগুণ শুধু লিভার নয়, তার পাশাপাশি শরীরের অন্যান্য় অঙ্গেরও উপকার করে। তাই এই খাবার প্রতিদিন খান।

 

দানা শস্য

 

বাদাম 
বেশিরভাগ বাদাম এবং শিম জাতীয় শস্য ভিটামিন ই এবং ফেনোলিক অ্যাসিডের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলিতে সমৃদ্ধ। বাদাম এবং শিম জাতীয় শস্যগুলিতে সাধারণত প্রচুর ফাইবার এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট থাকে। গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে আখরোট এবং অন্যান্য গাছের বাদাম নিয়মিত খাওয়া হলে লিভারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। তাই এই খাবার প্রতিদিন রোগী অল্প করে খেতেই পারেন। 

 

বাদাম

 

চা
জন্ডিসের সময় চা পান করলেও দ্রুত সেরে উঠতে সাহায্য করে। চায়ের মধ্যে আছে উচ্চমাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা লিভারে প্রদাহ হ্রাস করে, হজমে সহায়তা করে এবং জন্ডিস থেকে সেরে উঠতে সহায়তা করে।

 

চা

 

তবে মনে রাখবেন, এই পরামর্শগুলি রোগের তীব্রতা এবং রোগীর শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে পরিবর্তন হতে পারে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাবার নির্ধারণ করতে হবে।

কানের পর্দা ফেটে গেলে যা করবেন

প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০০ এএম
আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৫৮ পিএম
কানের পর্দা ফেটে গেলে যা করবেন
ছবি এআই

কানের পর্দা হলো একটি পাতলা টিস্যু, যা আমাদের কানের ক্যানালকে মধ্যকর্ণ থেকে আলাদা করে। কানের পর্দায় একটি ছিদ্র দেখা দিলে বা ছিঁড়ে গেলে সেটাকে ফেটে যাওয়া কানের পর্দা বা টাইমপ্যানিক ঝিল্লিও বলা হয়। ভারতের জিনজার হেলথকেয়ার হাসপাতালের ওয়েবসাইট অবলম্বনে জানাচ্ছেন ফারজানা আলম


একাধিক জাটিলতার কারণে কানের পর্দা ফেটে যেতে পারে। যেমন মধ্য কানের সংক্রমণ এবং শ্রবণশক্তি হ্রাস। পর্দার ক্ষতি মেরামতের জন্য অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে। তবে অনেক ক্ষেত্রে যত্ন নিলে ফেটে যাওয়া কানের পর্দা কয়েক মাসের মধ্যে কোনো চিকিৎসা ছাড়াই নিজে থেকে সেরে যেতে পারে।
লক্ষণ
কানের পর্দা ফেটে গেলে নানা ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। যেমন- কান থেকে শ্লেষ্মা, পুঁজ-ভরা বা রক্তাক্ত নিষ্কাশন। কানে ব্যথা যা দ্রুত কমতে পারে। শ্রবণ ক্ষমতা হ্রাস। কানে অযাচিত শব্দ হওয়া অর্থাৎ টিনিটাস। ঘূর্ণায়মান সংবেদনশীলতা অর্থাৎ ভার্টিগো। ভার্টিগোর ফলে বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া। যদি কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার লক্ষণ বা উপসর্গ অনুভব করেন, তাহলে ডাক্তারকে জানানো জরুরি। 
কারণ
বিভিন্ন কারণে কানের পর্দা ফেটে যেতে পারে। সাধারণ কিছু কারণের মধ্যে রয়েছে সংক্রমণ। সংক্রমণটি ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক দ্বারা অভ্যন্তরীণ কান অথবা ইউস্টাচিয়ান টিউবকে সংক্রমিত করার কারণে হতে পারে, যা কানের পর্দার ওপর চাপ প্রয়োগের পাশাপাশি এটি প্রসারিত করে। স্পোর্টস ইনজুরি যার মধ্যে যেকোনো মাথার আঘাত থাকতে পারে। কান পরিষ্কার করতে গিয়ে আঘাত। এ ছাড়া বিস্ফোরণ তরঙ্গ যেমন- আতশবাজি, বন্দুকের গুলি বা যেকোনো ধরনের বিস্ফোরক শব্দ থেকে এটা হতে পারে। গাড়ি দুর্ঘটনা থেকে হতে পারে। বায়ুমণ্ডলীয় চাপের দ্রুত পরিবর্তন, উদাহরণস্বরূপ, স্কুবা ডাইভিং। 
রোগ নির্ণয়
কানের পর্দা ফেটে গেছে কি না, তা দেখতে একজন ইএনটি বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া প্রয়োজন। সাধারণত তিনি একটি আলোকিত যন্ত্র ব্যবহার করতে পারেন, যা একটি অটোস্কোপ বা একটি মাইক্রোস্কোপ হতে পারে। তিনি উপসর্গের কারণ নির্ণয় বা শ্রবণশক্তি হ্রাসের উপস্থিতি শনাক্ত করার জন্য অতিরিক্ত পরীক্ষা পরিচালনা করতে পারেন। কিছু পরীক্ষা অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
চিকিৎসা
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে, ফেটে যাওয়া কানের পর্দা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে কোনো চিকিৎসা ছাড়াই সেরে যায়। সংক্রমণের কোনো প্রমাণ থাকলে, ডাক্তার অ্যান্টিবায়োটিক লিখে দিতে পারেন। যদি কানের পর্দার ছিদ্র  নিজে থেকে সেরে না যায়, তাহলে ডাক্তার চিকিৎসার পরামর্শ নিন।
কানের পর্দার প্যাচ
কানের পর্দার ছিদ্র বা ছিদ্র যদি নিজে থেকে বন্ধ না হয়, তাহলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার একটি কাগজের প্যাচ দিয়ে বা অন্য উপাদান দিয়ে তৈরি একটি প্যাচ দিয়ে সিল করে দিতে পারেন। প্রক্রিয়া চলাকালীন, ডাক্তার টিয়ার প্রান্তে রাসায়নিক প্রয়োগ করতে পারেন, যা কানের পর্দাকে নিজেই নিরাময় করতে সাহায্য করতে পারে। ছিদ্রগুলো নিজেরাই বন্ধ হওয়ার আগে এই পদ্ধতিটি একাধিকবার পুনরাবৃত্তি করতে হতে পারে।
সার্জারি
যদি প্যাচ চিকিৎসা ছিদ্র নিরাময়ে সাহায্য করতে না পারে বা ডাক্তার যদি বুঝতে পারেন প্যাচ দিয়ে ছিদ্রটি নিরাময় হওয়ার সম্ভাবনা নেই, তাহলে তিনি অস্ত্রোপচারের সুপারিশ করতে পারেন। ফেটে যাওয়া কানের পর্দার জন্য সবচেয়ে সাধারণ অস্ত্রোপচার পদ্ধতি হলো টাইমপ্যানোপ্লাস্টি। এই পদ্ধতিতে সার্জন কানের পর্দার ছিদ্র বন্ধ করার জন্য আপনার নিজের টিস্যুর একটি প্যাচ গ্রাফটিং করবেন। এই অপারেশনে রোগী সাধারণত একই দিনে বাড়িতে ফিরে যেতে পারেন।

 

মেহেদী

যেমন জ্বর তেমন চিকিৎসা

প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৭ পিএম
আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৫২ পিএম
যেমন জ্বর তেমন চিকিৎসা
সংগৃহীত

এখন প্রায় ঘরে ঘরে জ্বর, সর্দি-কাশি হচ্ছে। অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন নিউমোনিয়ায়। আক্রান্তদের মধ্যে শিশু-কিশোরের সংখ্যাই বেশি। তবে জ্বর নিয়ে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। বিশ্রাম, সাধারণ পরিচর্যা ও কিছু ওষুধ সেবন করলে বেশির ভাগ জ্বর এমনিতেই সেরে যায়। হেলথ লাইন অবলম্বনে লিখেছেন ফখরুল ইসলাম

জ্বরের অনেক ধরন থাকে। তবে জ্বরকে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন, ভাইরাল জ্বর এবং প্যারাসাইটিক জ্বর- সাধারণত এসব ভাগে ভাগ করা হয়।
ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন
ব্যাকটেরিয়াগুলো শরীরের কোষের ভেতর লুকিয়ে থেকে ইমিউন সিস্টেমে চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করে। এগুলোর সংক্রমণে কান ও গলার ইনফেকশন, নিউমোনিয়া, ট্রাভেলার্স ডায়রিয়া, ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন, নেফ্রাইটিস ইত্যাদির ফলে জ্বর হয়। রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন থেকে জ্বরে সর্দি, কফ ও শ্বাসকষ্ট থাকে। আবার ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনে ঠাণ্ডা লাগা ভাব থাকে।
ভাইরাল জ্বর
এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির মধ্যে কোনো রোগ ছড়ালে তাকে ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগ বলে। ভাইরাল জ্বর হলো ছোঁয়াচে রোগ, যা একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা। ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ভাইরাল হেপাটাইটিস ‘এ’, ভাইরাল হেপাটাইটিস ‘বি’ ইত্যাদি ভাইরাল জ্বর হয়নি এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। সাধারণত হাঁচি, কাশি, হাই তোলা, লালা, কথা বলা ইত্যাদির মাধ্যমে এ রোগগুলো ছড়ায়। এসব জ্বরের প্রকোপ এখন বেশি।
প্যারাসাইটিক জ্বর
ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া, টাইফয়েডের মতো ক্ষতিকর জ্বরগুলো প্যারাসাইটিক জ্বরের পর্যায়ে পড়ে, যা রোগীর জন্য বেশ কষ্টদায়ক। তবে এ সময় বেশি হওয়া ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, সর্দি-কাশি-ফ্লুর ধরন, লক্ষণ, করণীয় ও চিকিৎসা সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো।
জ্বরের ধরন: ডেঙ্গু
ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী মশা কোনো ব্যক্তিকে কামড়ালে কয়েক দিনের মধ্যে সেই ব্যক্তি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়। বেশির ভাগ ডেঙ্গু জ্বর ছয়-সাত দিনের মধ্যে সেরে যায়। তবে হেমোরেজিক বা রক্তক্ষরণজনিত ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বেশি। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না নিলে ঝুঁকি থাকে।
লক্ষণ
প্লাটিলেট কমে যায়। শরীর ব্যথা, মাথাব্যথা, চোখ লাল হওয়া ও চোখ ব্যথা, চোখ থেকে পানি পড়া, অরুচি বা বমি বমি ভাব ইত্যাদি দেখা দেয়। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে হামের মতো র‌্যাশ হতে পারে। হেমোরেজিক বা রক্তক্ষরণজনিত ডেঙ্গু হলে দাঁত ও মাড়ির গোড়া থেকে, নাক দিয়ে বা বমির সঙ্গে, পায়ুপথসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তপাত হতে পারে। গায়ে রক্ত জমে ছিটা ছিটা দাগ থাকতে পারে।
করণীয়
রোগীকে পরিপূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে। যথেষ্ট পরিমাণ পানি বা তরল খাবার গ্রহণ করতে হবে। জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল গ্রুপের ওষুধ ছাড়া ব্যথানাশক অ্যাসপিরিন বা ক্লোফেনাকজাতীয় ওষুধ সেবন করা উচিত নয়। এতে রক্তক্ষরণ বেড়ে যেতে পারে। রক্তক্ষরণের লক্ষণ দেখামাত্র হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। কারও ডেঙ্গু জ্বর হলে মশারি ব্যবহার করে রোগীকে আলাদা রাখতে হবে। এতে অন্যরাও রক্ষা পাবে।
জ্বরের ধরন: চিকুনগুনিয়া
ডেঙ্গুর মতোই ভাইরাসজনিত একটি অসুখ চিকুনগুনিয়া। এটি ছড়ায় স্ত্রীজাতীয় এডিস ইজিপ্টি ও এডিস এলবোপিকটাস মশার কামড়ের মাধ্যমে। চিকুনগুনিয়া হলে শরীরের ১০ বা তারও বেশি জয়েন্টে আক্রমণ করতে পারে। তবে এটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ। 
লক্ষণ
চিকুনগুনিয়ার লক্ষণ অনেকটা ডেঙ্গু জ্বরের মতোই, তবে দেহের তাপমাত্রা একটু বেশি (প্রায় ১০৪ ডিগ্রি পর্যন্ত) থাকে। সাধারণত দুই থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত চিকুনগুনিয়া থাকে এবং একসময় নিজে থেকেই ভালো হয়ে যায়। হাত বা পায়ের আঙুল, গোড়ালি, কবজি, মেরুদণ্ড বা অস্থিসন্ধিতে তীব্র ব্যথার সঙ্গে তা ফুলেও যেতে পারে। জ্বর সেরে যাওয়ার পরও ব্যথা থাকতে পারে। তীব্র মাথাব্যথা, মাংসপেশির দুর্বলতা দেখা দেয়। জ্বর কমে যাওয়ার পর ৭০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে তিন সপ্তাহের মধ্যে ব্যথা চলে যায়। বাকি ৩০ শতাংশের ব্যথা বেশ কিছুদিন থাকে। ডেঙ্গুতে প্লাটিলেট কমে যায়, রক্তক্ষরণের ঝুঁকি, এমনকি মৃত্যুঝুঁকিও থাকে। চিকুনগুনিয়ায় এসব থাকে না।
করণীয়
এডিস মশার কামড়ে চিকুনগুনিয়া হয় বলে এ থেকে বাঁচতে এডিস মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংস ও মশা নির্মূল করা উচিত। রোগীকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে এবং প্রচুর পানি, ফলের জুস বা অন্যান্য তরল খেতে দিতে হবে। সংক্রমিত অবস্থায় সব ধরনের সামাজিকতা এড়িয়ে চলতে হবে। চিকুনগুনিয়া জ্বর হলে বাড়িতেই চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। এই রোগের নির্ধারিত কোনো চিকিৎসা নেই। সাপোর্টিভ ট্রিটমেন্ট হিসেবে প্যারাসিটামলজাতীয় ওষুধই যথেষ্ট। এতে জ্বরের পাশাপাশি ব্যথাও কমে যায়। ব্যথা বেশি হলে এনএসঅ্যাইড ছাড়া সাময়িকভাবে ট্রামাডল গ্রুপের ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। গলাব্যথা থাকলে লবণ ও গরম পানি দিয়ে ঘন ঘন গার্গল করতে হবে।
জ্বরের ধরন: ম্যালেরিয়া
সংক্রমিত অ্যানোফিলিসজাতীয় স্ত্রী মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া শুরু হয়। পরে এর জীবাণু লালার মাধ্যমে প্রোস্টেটের সংবহনতন্ত্রের মধ্যে প্রবেশ করে এবং যকৃতে পৌঁছে। সেখানে তারা পরিপক্ব হয় এবং বংশবৃদ্ধি ঘটায়।
লক্ষণ
উচ্চমাত্রায় জ্বর, বমি বমি ভাব ও মাথাব্যথা থাকে। এই রোগের প্রধান লক্ষণ কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা, যা ১০৫-১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে। মাঝারি থেকে তীব্র কাঁপুনি বা শীত অনুভব। মাথা ধরা, অনিদ্রা। রুচিহীনতা বা ক্ষুধামান্দ্য। কোষ্ঠকাঠিন্য, হজমে গোলযোগ, বমি বমি ভাব বা বমি। অত্যধিক ঘাম হওয়া, খিঁচুনি, পিপাসা লাগা ইত্যাদি।
করণীয়
কারও ম্যালেরিয়া হয়েছে এমন সন্দেহ হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। রোগটি কোন ধরনের ম্যালেরিয়া- বিষয়টি নির্ণয় করতে রক্ত পরীক্ষা করালেই জানা যাবে এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে। তবে তা অবশ্যই ওষুধ শুরু করার আগে হতে হবে। ম্যালেরিয়াপ্রবণ এলাকায় গেলে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। 
জ্বরের ধরন: টাইফয়েড
সাধারণত ‘সালেমানেলা টাইফি’ ও ‘প্যারাটাইফি’ জীবাণু থেকে টাইফয়েড নামের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা গুরুতর ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনের কারণে টাইফয়েড জ্বর হয়ে থাকে। টাইফয়েডের অন্যতম কারণ হলো দূষিত খাবার গ্রহণ।
লক্ষণ
ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, চামড়ায় লালচে দানা দেখা দেওয়া টাইফয়েডের প্রাথমিক লক্ষণ। প্রচণ্ড মাথাব্যথা, গলাব্যথা, পেট ব্যথা ও দুর্বলতা। তাপমাত্রা হতে পারে ১০৩-১০৪ ফারেনহাইট। তবে অনেক ক্ষেত্রেই এই জ্বর প্রথম দিকে ধরা পড়ে না। দুই বা তিন সপ্তাহ পর পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ধরা পড়ে এবং তখন মারাত্মক হতে পারে।
করণীয়
টাইফয়েড হয়েছে কি না, তা বুঝতে সবার আগে অসুস্থ ব্যক্তির রক্ত পরীক্ষা করতে হবে। পানি ফুটিয়ে পান করতে হবে। খাবার গরম করে খেতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ব্যবহার করতে হবে। 
জ্বরের ধরন: সর্দি-কাশি ও ইনফ্লুয়েঞ্জা
হঠাৎ গরম বা ঠাণ্ডাজনিত আবহাওয়ার কারণে সর্দি-কাশি ও ইনফ্লুয়েঞ্জা হতে পারে। এটি একটি কমন সমস্যা, যাতে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়।
লক্ষণ
গলাব্যথা, খুসখুস ভাব, নাক বন্ধ বা অনবরত হাঁচি। মাথাব্যথা, মাংসপেশিতে ব্যথা, শরীর ম্যাজম্যাজ, দুর্বল লাগা ও ক্ষুধামান্দ্য দেখা দেওয়া। জ্বর পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যেই ভালো হয়ে গেলেও সর্দি বা কাশি কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। সাইনাস, টনসিলে প্রদাহ, অ্যালার্জিক রাইনাইটিস হতে পারে। সর্দি বা কাশির সঙ্গে হলুদাভ কফ থাকতে পারে, যা ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণকেই নির্দেশ করে। অ্যাজমার রোগীদের শ্বাসকষ্টও বেড়ে যেতে পারে।
করণীয়
ঠাণ্ডা বা বাসি খাবার ও পানীয়, ধূমপান পরিহার, ধুলোবালি এড়িয়ে চলা। সতেজ ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ এবং পর্যাপ্ত পানি পান করা। চোখ বা নাক মোছার পরপরই হাত ধোয়া। আদা-লং-এলাচ-লেবু চা, তুলসীপাতা, মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে উপকার মেলে। অ্যান্টিহিস্টামিনজাতীয় ওষুধ, প্রয়োজনে কাশির সিরাপ সেবন বা নাকের ড্রপ ব্যবহার করা যায়। অ্যাজমার রোগীরা ধুলোবালি বা ঠাণ্ডা এড়িয়ে অ্যালার্জির ওষুধ বা ইনহেলার ব্যবহার করলে ভালো থাকবেন। গলাব্যথা বা অস্বস্তি ভাব কাটাতে কুসুম গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে ঘন ঘন গার্গল করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

 

মেহেদী