স্বাস্থ্য উপাদানের কথা চিন্তা করলে বাদাম জাতীয় খাবার, অন্য সকল ড্রাই ফুডের চেয়ে উন্নত এবং অধিক পুষ্টিগুনে সমৃদ্ধ। কারণ বাদাম জাতীয় খাবারে একাধারে ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট এবং শর্করা থেকে শুরু করে অন্যান্য আরো অনেক উপকারী পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়। প্রকৃতিতে পাওয়া যায় এমন অনেক বাদামের মধ্যে আখরোট অন্যতম যা ওয়ালনাট হিসেবেও পরিচিত।
আখরোট খাওয়ার উপকারিতা
আখরোট খাওয়ার নানামুখী উপকারিতা রয়েছে। নিচে বিস্তারিতভাবে উপকারিতাগুলো আলোচনা করা হয়েছে।
ডায়াবিটিসের ঝুঁকি কমায়
আখরোট রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে। বিশেষ করে রক্তে থাকা ক্ষতিকর শর্করা প্রতিরোধ করে এবং রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে। যেহেতু রক্তে থাকা শর্করা ডায়াবেটিসের প্রধান কারণ সেহেতু আখরোট পরোক্ষভাবে এর ঝুঁকি কমায়। অর্থাৎ নিয়মিত ওয়ালনাট খেলে তা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি তা প্রতিরোধ করে।
ওজন কমায়
আখরোটে থাকা অতিরিক্ত ফ্যাট থাকার কারণে অনেকেই মনে করে এটি খেলে ওজন বৃদ্ধি পাবে। তবে এতে থাকা ওমেগা-৩, প্রোটিন ও ফাইবার দেহের পুষ্টি উপাদান নিয়ন্ত্রণ করে ওজন ঠিক রাখে। তবে কখনোই আখরোট বেশি খাওয়া যাবে না। কারণ এতে দেহে অতিরিক্ত ফ্যাট জমা হবে যা স্থূলতা বৃদ্ধি করে।
হৃদরোগ প্রতিরোধ করে
হৃদরোগের জন্য সব থেকে বেশি দায়ী হল ক্ষতিকর কোলেস্টরেল, ফ্যাট এবং রক্তে থাকা শর্করা। এগুলো প্রতিরোধ করার জন্য আখরোট অনেক ভালো কাজ করে। কারণ আখরোটে আছে ওমেগা-৩, ভিটামিন, ফাইবার, এন্টিঅক্সিডেন্ট ইত্যাদি উপাদান। এগুলো দেহের সকল পুষ্টিগুণ স্বাভাবিক রাখে এবং রক্ত চলাচল বাধামুক্ত রাখে। এতে হৃৎপিণ্ড সচল থাকে এবং এর পারিপার্শ্বিক পেশীগুলো কর্মক্ষম থাকে। এই কারণে সম্ভাব্য হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণ হয়।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে
দেহের কর্মক্ষমতা স্বাভাবিক রাখার জন্য কোলেস্টেরেলের প্রয়োজন হয়। তবে ক্ষতিকারক এলডিএল কোলেস্টরেল উপকারের থেকে ক্ষতি বেশি করে। বিশেষ করে হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করার জন্য এই এলডিএল কোলেস্টরেল দায়ী। নিয়মিত আখরোট বা ওয়ালনাট খেলে তা রক্তে থাকা এই ক্ষতিকারক উপাদান দূর করে এবং শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এতে হৃদরোগের ঝুঁকি কমার সাথে সাথে অন্যান্য সমস্যা নির্মূল হয়।
শিশুদের বিকাশে সাহায্য করে
শিশুর শারীরিক ও মানুষিক সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য যে যে স্বাস্থ্য উপাদান প্রয়োজন তার প্রায় সব গুলই আখরোটে পাওয়া যায়। বিশেষ করে ওমেগা-৩, ভিটামিন, খনিজ, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি উপাদান, যা শিশুর শরীর সুগঠিত হতে সাহায্য করে। এতে শিশুর অপুষ্টি সমস্যার সমাধান হয়। এ সকল দিক বিবেচনা করে দেখা যায় প্রকৃতি থেকে পাওয়া আখরোট শিশুর স্বাস্থ্য বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।
মস্তিষ্ক ভালো রাখে
ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডকে একটি সর্বজনীন উপকারী পুষ্টি উপাদান বলা হয়। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড প্রাকৃতিক ভাবে পাওয়া যায় এমন খাবারের মধ্যে আখরোট অন্যতম। অন্যদিকে ওমেগা থ্রি এন্টিঅক্সিডেন্ট বৃদ্ধি করার পাশাপাশি মস্তিষ্কের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে। অর্থাৎ নিয়মিত আখরোট খেলে তা স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
আখরোটে পর্যাপ্ত পরিমাণে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, পলিফেনলস এবং ইউরোলিথিন থাকে যাদের ক্যানসার প্রতিরোধী উপাদান বলে। এই কারণে বিভিন্ন গবেষণায় বলা হয়, নিয়মিত আখরোট খেতে কারণ এতে থাকা পুষ্টি উপাদান সব ধরনের ক্যানসার প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। বিশেষ করে স্তন, প্রটেস্ট এবং কোলন ক্যানসার প্রতিরোধ করার প্রয়োজনীয় উপাদান ওয়ালনাটে বিদ্যমান।
হাড় শক্ত করে
আখরোটে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম থাকে। হাড় শক্ত ও মজবুত করার জন্য ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন পরে। নিয়মিত আখরোট খেলে তা শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম সরবরাহ করে যা অস্থিমজ্জা শক্তিশালী করার পাশাপাশি হাড়ের গঠন সুগঠিত করে।
শুক্রাণুর মান বৃদ্ধি করে
বীর্যে স্বাস্থ্যবান শুক্রাণু না থাকলে তা থেকে সন্তান উৎপাদন হয় না। প্রাকৃতিক উপায়ে শুক্রাণুর মান বৃদ্ধি করার যে যে খাবার আছে আখরোট তাদের মধ্যে অন্যতম। নিয়মিত মধুর সাথে আখরোট মিশিয়ে খেলে তা যৌন স্বাস্থ্য উন্নত করার সাথে সাথে শুক্রাণুর মান বৃদ্ধি করে।
চুলের উপকার করে
চুলের জন্য উপকারী উপাদান যেমন পটাশিয়াম, ওমেগা থ্রি, ওমেগা সিক্স ও ওমেগা নাইন ইত্যাদি আখরোটে পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে। এই কারণে নিয়মিত আখরোট খেলে তা চুল শক্ত করে, উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে, চুলের গোঁড়া মজবুত করে। এতে চুল হয় ঘন, কালো, লম্বা এবং স্বাস্থ্য উজ্জ্বল।
ভালো ঘুমের সহায়ক
ভালো ঘুমের জন্য প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় রাখতে পারেন এই আখরোট। আখরোটে থাকা মেলাটোনিল, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড, আমাদের রক্ত চাপ কমাতে এবং স্ট্রেস উপশম করতে সাহায্য করে। যা ভালো ঘুমের সহায়ক।
গর্ভাবস্থায় উপকারী
আমরা জানি আখরোটে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন বি, ফোলেট, রাইবোফ্লাভিন, থিয়ামিন এবং ফলিক অ্যাসিড থাকে যা গর্ভবতী মা এবং অনাগত সন্তানের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে। নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণ আখরোট খেলে তা গর্ভাবস্থায় উপকারী হিসেবে কাজ করে।
ডার্ক সার্কল দূর করে
আমরা জানি ডার্ক সার্কেল তৈরি হয় অনিদ্রা, দুশ্চিন্তার কারণে। নিয়মিত আখরোট খেলে তা মানষিক অবসাদ দূর করে। এতে স্ট্রেস দূর হয় এবং স্বাস্থ্যসম্মত ঘুম হয়। অন্যদিকে এতে থাকা ফাইবার, আলফা লাইনলেনিক অ্যাসিড এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট চোখের নিচে ফোলাভাব দূর করে এবং চেহারার উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
মেহেদী