ক্যানসারের নতুন অ্যান্টিবডি চিকিৎসা টিউমার প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ায় বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের ভাইজমান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স (ডব্লিউআইএস)।
এক বিবৃতিতে তারা জানায়, ইসরায়েলি গবেষক ও তাদের যুক্তরাষ্ট্রের সহকর্মীরা এমন একটি অ্যান্টিবডিভিত্তিক ক্যানসারের চিকিৎসা পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে টিউমারের কোষে কার্যকরভাবে আক্রমণ ও তাদের বিস্তার রোধ করতে সক্ষম করে তোলে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, ‘ট্রিপল-নেগেটিভ স্তন ক্যানসার’ নামে পরিচিত স্তন ক্যান্সারের একটি ধরন এর আশপাশে অবস্থিত শরীরের রোগ প্রতিরোধক কোষগুলোকে ‘আণবিক সেতু (মোলেকিউলার ব্রিজ)’ গঠনে উৎসাহ দেয়। এই সেতুগুলো টিউমারকে রোগ প্রতিরোধক কোষগুলোর আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। ফলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাধা পায়।
গবেষণা দলটি দেখিয়েছে, একটি অ্যান্টিবডি চিকিৎসা পদ্ধতি এসব ‘ব্রিজ’ গঠনে বাধা দিয়ে ক্যানসারের কোষগুলোর ওপর শক্তিশালী আক্রমণ চালাতে শরীরের (রোগ) প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারে। একইসঙ্গে এটি শরীরে টিউমারের অগ্রগতিও থামিয়ে দেয়।
তারা বিষয়টির ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে- ক্যানসারের কোষগুলোকে নিরাপত্তা দিতে ‘ব্রিজ’ তৈরি করে সিডি৮৪ নামের প্রোটিন। অথচ, স্তন ক্যানসারের কোষগুলো নিজেরা সিডি৮৪ খুব কম উৎপন্ন করে। ফলে সেগুলো নিকটবর্তী রোগ প্রতিরোধক কোষগুলোকে প্রচুর পরিমাণে এই প্রোটিন উৎপাদন করতে প্ররোচিত করে। আর এর ফলে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ক্যানসারের কোষগুলো দমনে অকার্যকর হয়ে পড়ে।
সমীক্ষায় আরও দেখা গেছে, যেসব রোগীর টিউমারে অধিক পরিমাণে সিডি৮৪ রয়েছে, তাদের বেশিদিন বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
সিডি৮৪ নিয়ন্ত্রণে বিশেষভাবে জিন পরিবর্তন করা কিছু ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা চালানো হয়। তাতে দেখা যায়, যেসব ইঁদুরের শরীরে সিডি৮৪ প্রোটিন ছিল না, তাদের শরীরে টিউমার বৃদ্ধির গতি অতি ধীর। এতেই বোঝা যায়, টিউমারের কোষ দমনে সিডি৮৪ নিয়ন্ত্রণ কতটা প্রভাবশালী।
তবে নতুন তৈরি করা অ্যান্টিবডি প্রয়োগ করার পর স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত ইঁদুরগুলোকে সপ্তাহে দুবার পরীক্ষা করা হয়। তাতে যে ফল এসেছে, তা সত্যিই টিউমারের চিকিৎসায় আশার আলো দেখাচ্ছে।
পরীক্ষায় দেখা গেছে, অ্যান্টিবডি টিউমারের বৃদ্ধিকে উল্লেখযোগ্যভাবে ধীর করে দেয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা টিউমার থেকে সম্পূর্ণ সেরে উঠতে সহায়তা করে।
গবেষক দলটির ভাষ্য, বিশেষ এই অ্যান্টিবডিটি বেছে বেছে শক্তিশালী সিডি৮৪-এর কোষগুলোকে আক্রমণ করে, সেইসঙ্গে দেহের রোগ প্রতিরোধক কোষগুলোকে সুস্থ রাখে।
গবেষকদের পরামর্শ, টিউমারের সঙ্গে সংযুক্ত এই ক্যানসার চিকিৎসা পদ্ধতিটি বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যেতে পারে। সূত্র : ইউএনবি
সুমন/সালমান/