কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি প্রয়োগ করলে দ্রুত মাথা ব্যথা কমে যায়। যেমন...
আকুপ্রেসার
ঘাড় ও মাথায় প্রেসার পয়েন্ট আকুপ্রেসার থেরাপি প্রয়োগ করলে অল্প সময়ের মধ্যেই মাথা ব্যথা কমে। এ জন্য বাঁ হাতের বৃদ্ধাঙুলি এবং তর্জনীর মাঝখানের অংশে অন্য হাতের বৃদ্ধাঙুলি ও তর্জনী দিয়ে চাপ দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ম্যাসাজ করতে হয়। একইভাবে ডান হাতেও করতে হয়।
গোসল
হালকা গরম পানিতে গোসল করলে মাথা ব্যথা কমে।
পানি পান
একগ্লাস পানি পান নিমেষেই মাথা ব্যথা দূর করে। শরীর আর্দ্র থাকলে ব্যথাও ধীরে ধীরে কমে।
লবঙ্গ
কিছু লবঙ্গ তাওয়ায় গরম করে তা একটি রুমালে মুড়ে নিয়ে কিছুক্ষণ ঘ্রাণ নিলে মাথা ব্যথা দূর হয়।
পুদিনাপাতা
পুদিনাপাতায় রয়েছে ম্যানথল ও ম্যানথন, যা মাথা ব্যথা দূর করতে বেশ কার্যকর।
আপেল
এক টুকরো আপেলের সঙ্গে সামান্য লবণ মিশিয়ে খেলে মাথা ব্যথা কমে।
আদা
সমপরিমাণ আদা ও লেবুর রস মিশিয়ে খেলে বা একটু টাটকা আদা কয়েকবার চিবিয়ে খেলে মাথা ব্যথা দূর হয়।
বরফ
বরফের প্যাক ঘাড়ে বা মাথায় কিছুক্ষণ ধরে রাখলে মাথা ব্যথা, বিশেষ করে মাইগ্রেনের ব্যথা অনেকটাই কমে যায়।
হাসি-খুশি মন
মাথাব্যথার কার্যকর উপায় হলো মনকে ইতিবাচক এবং পজিটিভ দিকে ডাইভার্ট করা। এতেও মাথা ব্যথা দূর হয়।
চিনি অতিরিক্ত ক্যালোরি প্রদান করে, যা শরীরে জমা হয়ে ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে
একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ দিনে ৩ থেকে ৫ চামচ চিনি খেতে পারেন! এর বেশি খেলে শরীরে নানা ধরনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। আসুন দেখে নিই, চিনি আমাদের শরীরে যে ১০ ধরনের ক্ষতি করে।
১. ওজন বৃদ্ধি করে
চিনি অতিরিক্ত ক্যালোরি প্রদান করে, যা শরীরে জমা হয়ে ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। বিশেষ করে অতিরিক্ত প্রসেসড চিনি খাওয়ার ফলে স্থূলতার ঝুঁকি বেড়ে যায়। ফলে শরীর খুব দ্রুত মোটা হয়ে যায়। অতিরিক্ত ফ্যাট জমে গেলে রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
২. ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়
নিয়মিত অতিরিক্ত চিনি খেলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। যদি দৈনিক চিনি থেকে ১৫০ ক্যালরি গ্রহণ করা হয়, তাহলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায় প্রায় ১ দশমিক ১ শতাংশ।
৩. হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়
অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার ফলে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায় এবং খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। ফলে হার্ট অ্যাটাক, হার্টফেল করার আশঙ্কাও বেড়ে যায়।
৪. দাঁতের ক্ষতি করে
চিনি ব্যাকটেরিয়ার জন্য খাবার হিসেবে কাজ করে, যা ক্যাভিটি এবং দাঁতের ক্ষয়ের মূল কারণ। মিষ্টিজাতীয় খাবার গ্রহণের পর ব্রাশ না করলে দাঁতে চিনি লেগে থাকে। ফলে সেখানে ব্যাকটেরিয়া জমে দাঁতের ক্ষতি করে।
৫. লিভারে সমস্যা দেখা দেয়
চিনি বিশেষত ফ্রুক্টোজের অতিরিক্ত গ্রহণ লিভারে ফ্যাট জমাতে পারে, যা নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজের কারণ হতে পারে। অতিরিক্ত চিনি খেলে লিভারের চারপাশে অতিরিক্ত চর্বির স্তর তৈরি হয়। ফলে লিভারের কার্যক্ষমতা কমে যেতে থাকে।
৬. মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে
অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার ফলে মেজাজ পরিবর্তন, বিষণ্নতা এবং ক্লান্তি অনুভূত হতে পারে। এটি বিশেষত শিশুদের মধ্যে অতিরিক্ত চঞ্চলতা এবং মনোযোগের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। চিনির কারণে আলঝেইমারসের মতো রোগ হতে পারে। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয় চিনি।
৭. ত্বকের সমস্যা দেখা দেয়
চিনি কোলাজেনের গুণমান কমিয়ে ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেয়। এটা ব্রণের সমস্যা বাড়াতে পারে। পাশাপাশি কোলাজেন ও ইলাস্টিনের ক্ষতি করে। চিনি সোরিয়াসিস খারাপ করে এবং ত্বকের প্রদাহ বাড়ায়।
৮. প্রদাহ এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করে
চিনি প্রদাহজনিত প্রতিক্রিয়া বাড়ায় এবং দীর্ঘমেয়াদে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দেয়। অতিরিক্ত চিনে খেলে বিষণ্নতা তৈরি হয়। শরীর সবসময় ক্লান্ত লাগে।
৯. রক্ত চলাচলে বাধা দেয়
শরীরের রক্ত চলাচলের ধমনীর দেয়ালের পুরুত্ব বাড়িয়ে দিতে পারে চিনি। ফলে রক্ত স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারে না এবং রক্তচাপ বেড়ে যায়।
১০. ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়
এক গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্রাতিরিক্ত চিনি খেলে প্যাংক্রিয়েটিক ক্যানসার, প্রস্টেট ক্যানসার, ক্ষুদ্রান্তের ক্যানসার, গলা, ফুসফুস, রেকটাম ও স্তন ক্যানসারের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
করণীয় চিনি গ্রহণ কমিয়ে প্রাকৃতিক উৎস যেমন ফলমূল থেকে প্রাকৃতিক চিনি গ্রহণের চেষ্টা করুন।
প্রসেসড খাবার এড়িয়ে চলুন।
খাবারের লেবেল পড়ে চিনির মাত্রা যাচাই করুন।
সুস্থ থাকার জন্য চিনির পরিমাণ সীমিত রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কনুই ব্যথার কারণ অনেক। ব্যথার অবস্থানের মাধ্যমে এর কারণ ও রোগ সম্পর্কে ধারণা করা যায়। বাহুর হাড়ের নিচের প্রান্তের বাইরের অংশকে ল্যাটারাল ইপিকোনডাইল বলে। নিবাহুর পেছনের পেশিগুলো এ স্থান থেকে উৎপত্তি হয় এবং এর প্রদাহকে ল্যাটারাল ইপিকোনডাইলাইটিস বা টেনিস এলবো বলে। কনুই ও হাতের কবজি বারবার পেছনে বাঁকা করলে টেনিস এলবো হয়। ধারণা করা হয়, টেনিস খেলোয়াড়দের এটি বেশি হয় বলে একে টেনিস এলবো বলে।
উপসর্গ
হাতের কনুইয়ে ব্যথা অনুভব হয় বলে হাত দিয়ে কোনো কিছু তুলতে সমস্যা হয়। হাতের নড়াচড়া বা কাজকর্মে ব্যথা বেড়ে যায়। এই ব্যথা কনুই থেকে শুরু হয়ে হাতের আঙুল পর্যন্ত যেতে পারে। ভেজা কাপড় নিংড়ানো, চামচ দিয়ে কিছু নাড়ানো, দরজা খোলা ও লাগানো কষ্টকর হয়; এমনকি আরেকজনের সঙ্গে করমর্দন করতেও অসুবিধা হয়।
যাদের বেশি হয় হাতুড়ি ও স্ক্রু ড্রাইভার ব্যবহারকারী। পেইন্টার বা রংমিস্ত্রি। টাইপিস্ট, স্টেনোগ্রাফার, কাঠুরে, টেনিস ও ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়। অত্যধিক মোটরসাইকেল চালনাকারী। বিভিন্ন ধরনের আর্থ্রাইটাস যেমন, রিউমাটয়েড, গাউট ও ডায়াবেটিসের রোগী এবং সাংসারিক কাজে ব্যস্ত নারী ইত্যাদি মানুষের।
রোগ নির্ণয় টেনিস এলবো কেন হয়, এর কারণ নির্ণয় করতে হলে প্রথমেই রোগীর অসুবিধার কথাগুলো জানতে হবে। রোগীকে ভালোভাবে পরীক্ষা করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে এক্স-রে ও রক্তের পরীক্ষা যেমন- শর্করা, সিরাম ইউরিক অ্যাসিড, আরএ ফ্যাক্টর ইত্যাদি করাতে হবে। অনেক সময় এক্স-রে ও রক্ত পরীক্ষায়ও রোগ শনাক্ত করা যায় না। কনুইয়ের বিশেষ ধরনের আল্ট্রাসাউন্ড এবং এমআরআই করেও অনেক সময় এই রোগ শনাক্ত করা যায়।
চিকিৎসা হাত দিয়ে কোনো কাজ বা কোনো কিছু বহন করতে না পারলে, রাতের বেলায় বা বিশ্রাম অবস্থায় ব্যথা হলে, একটানা কিছুদিন কনুইয়ে ব্যথা থাকলে, সোজা বা ভাঁজ করতে অসুবিধা হলে, কনুই ফুলে গেলে বা চামড়ার রং পরির্বতন হলে, অন্য কোনো অস্বাভাবিক অসুবিধা বা চিনচিনে ব্যথা অনুভূত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কনজারভেটিভ চিকিৎসায় টেনিস এলবো সেরে যায়। তবে দুঃখের বিষয়, এই রোগ সেরে যাওয়ার কিছুদিন পর আবার দেখা দিতে পারে। অনেক সময় কনুইয়ের বাইরের দিকে ব্যথা না হয়ে যখন কনুইয়ের ভেতরের পাশে ব্যথা হয়, তাকে গলফার্স এলবো বলে, যার চিকিৎসাও টেনিস এলবোর মতোই। টেনিস এলবোর চিকিৎসায় নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগ সেবন করা যেতে পারে। করটিসন ইনজেকশন পুশ করলে রোগের উপসর্গ দ্রুত কমে। বারবার টেনিস এলবোতে আক্রান্ত হলে ছোট ছিদ্র দিয়ে আর্থোস্কোপ টেনিসয়ে প্রবেশ করিয়ে বিসংকোচন ও ডেব্রাইডমেন্ট করালে ব্যথা কমে যায়। কখনো কখনো টেনডনের উৎপত্তি নতুন জায়গায় সরানো হয় এবং এনকোর সুচার দিয়ে লাগানো হয়। এই উভয় পদ্ধতিতে রোগীর সমস্যা দ্রুত নিরাময় হয়। রোগের জটিল পর্যায়, বিশেষ করে পেশাজীবী খেলোয়াড়দের এই রোগ হলে অনেক সময় অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে। অভিজ্ঞ অর্থোপেডিকস সার্জনরা এই অপারেশন পরিচালনা করে থাকেন, যাতে প্রায় ৯০ শতাংশ সফলতা মেলে।
করণীয় চিকিৎসার পাশাপাশি কনুইকে যথাসম্ভব বিশ্রামে রাখতে হবে, যাতে প্রদাহ বা ব্যথা কম হয়। তবে অতিরিক্ত বিশ্রামে আবার কনুই স্টিফ হয় বা জমে যেতে পারে। নিয়মিত বরফ বা গরম সেঁক দিলে প্রদাহ, ফোলা ও ব্যথা কমে যায়। ফোলা ও ব্যথা কমে এলে কনুইয়ের স্বাভাবিক নড়াচড়া ও পেশি শক্তিশালী হওয়ার জন্য ব্যায়াম করতে হবে। প্রয়োজনে ফিজিওথেরাপি দিতে হবে।
কিডনিতে পাথর বলতে বোঝায়, কিডনি অথবা মূত্রনালির মধ্যে একটি শক্ত ও অনিয়মিত আকারের খনিজ পদার্থের অবস্থান। পাথরের অবস্থানের ওপর নির্ভর করে রোগটির নামকরণ করা হয়ে থাকে। যেমন-
নেফ্রোলিথিয়াসিস: এই রোগে কিডনিতে পাথর থাকে। ইউরোলিথিয়াসিস: এই রোগে মূত্রাশয় এবং মূত্রনালিতে পাথর থাকে। ইউরেটেরোলিথিয়াসিস: এই রোগে পাথর মূত্রনালিতে অবস্থান করে।
কিডনির পাথরের প্রকারভেদ
পাথর কী ধরনের রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে গঠিত, তার ওপর ভিত্তি করে পাথরের প্রকারভেদ করা হয়। এর মধ্যে আছে- ক্যালসিয়াম অক্সালেট পাথর: এটি ক্যালসিয়াম অক্সালেট দিয়ে তৈরি। ক্যালসিয়াম ফসফেট পাথর: এটি ক্যালসিয়াম ফসফেট দিয়ে তৈরি। ইউরিক অ্যাসিড পাথর: এটি ইউরিক অ্যাসিড দিয়ে তৈরি। সিস্টাইন পাথর: এটি সিস্টাইন দিয়ে তৈরি।
কিডনির পাথর কাদের হয়
যেকোনো বয়সের মানুষের কিডনিতে পাথর হতে পারে। তবে বিশেষ কিছু মানুষের মধ্যে এবং বিশেষ কিছু সময়ে কিডনিতে পাথর হতে দেখা যায়। যেমন- বয়স্ক পুরুষদের, অন্তঃসত্ত্বাদের, যাদের কিডনিতে পাথরের পূর্ব ইতিহাস রয়েছে, যাদের পরিবারের সদস্যদের কিডনিতে পাথর রয়েছে। এ ছাড়া নির্দিষ্ট কিছু রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি এবং চিকিৎসার অবস্থা যেমন- গাউট, হাইপারক্যালসিউরিয়া, হাইপারপ্যারাথাইরয়েডিজম, ডায়াবেটিস, ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি ইত্যাদি রোগে ভুগছেন এমন রোগীদের মধ্যে কিডনির পাথর হওয়ার প্রবণতা বেশি। পাশাপাশি অ্যান্টাসিড, মূত্রবর্ধক ইত্যাদির মতো নির্দিষ্ট ওষুধ গ্রহণকারী লোকেদের মধ্যেও এটা দেখা যায়।
যেসব কারণে কিডনিতে পাথর হয়
কিডনিতে পাথর তৈরি হয় যখন পাথর গঠনকারী পদার্থ (লবণ) প্রস্রাবে নির্গত হয়। প্রস্রাবের সংমিশ্রণে পরিবর্তন বা প্রস্রাবের পরিমাণ হ্রাস কিডনিতে পাথর গঠনে সহায়তা করে। এ ছাড়া আরও যেসব কারণে কিডনিতে পাথর হয় তার মধ্যে আছে পানি কম খাওয়া, কঠোর ব্যায়ামের কারণে পানিশূন্যতা তৈরি হওয়া, প্রস্রাব বের হওয়ার পথে যেকোনো ধরনের বাধা, মূত্রনালিতে সংক্রমণ ইত্যাদি। কিছু খাদ্যাভ্যাস যেমন উচ্চ প্রোটিন গ্রহণ, অত্যধিক লবণ বা চিনি, ভিটামিন ডি সম্পূরক দীর্ঘক্ষণ গ্রহণ এবং পালংশাকের মতো অক্সালেটযুক্ত খাবার বেশি খাওয়া হলেও কিডনিতে পাথর হতে পারে।
যে লক্ষণগুলো দেখলে বুঝবেন কিডনিতে পাথর থাকতে পারে
কিডনিতে পাথর হলে সাধারণত ব্যথা হয়। পিঠের নিচের দিক ও কুঁচকি অঞ্চলে এই ব্যথা হতে পারে। ব্যথা হঠাৎ এবং অসহনীয় হতে পারে। ব্যথার সঙ্গে বমি বমি ভাব এবং বমি হতে পারে। এ ছাড়া আরও যেসব লক্ষণ দেখা যায় তার মধ্যে আছে- প্রস্রাবে রক্তের উপস্থিতি, যাবে ডাক্তারি ভাষায় হেমাটুরিয়া বলে। মূত্রনালিতে সংক্রমণের কারণে জ্বর এবং ঠাণ্ডা লাগা থাকতে পারে। প্রস্রাব করতে অসুবিধা হয়। প্রস্রাবের রং গাঢ় হলুদ হতে পারে। পুরুষদের অণ্ডকোষ এলাকায়ও ব্যথা থাকতে পারে। এই লক্ষণগুলো যদি কারও মধ্যে দেখা যায় তাহলে জরুরি ভিত্তিতে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
প্রোস্টেট ক্যানসার সারা বিশ্বে পুরুষদের সাধারণ ক্যানসারগুলোর মধ্যে অন্যতম
প্রোস্টেট ক্যানসার সারা বিশ্বে পুরুষদের মধ্যে সাধারণ ক্যানসারগুলোর মধ্যে একটি। এটা যেকোনো বয়সের ব্যক্তিদের হতে পারে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ৫০ বছরের বেশি পুরুষদের মধ্যে দেখা যায়। এমন কিছু উপায় রয়েছে যা প্রোস্টেট ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি কমাতে পারে। আসুন দেখে নেই সেগুলো কী কী।
১. আইসোফ্ল্যাভোন খান
আইসোফ্ল্যাভোন একটি উপাদান, যা ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে কাজ করে। টোফু, ছোলা, মসুর ডাল, চিনাবাদাম ইত্যাদিতে এই উপাদানটি পাওয়া যায়। এর পাশাপাশি গ্রিন টির মতো ভেষজ চা প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি দূর করতে প্রমাণিত। সমীক্ষায় দেখা গেছে, যে পুরুষরা গ্রিন টি পান করেন, তাদের প্রোস্টেট ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। দিনে চার থেকে পাঁচ কাপ গ্রিন টি প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে বা দূর করতে পারে।
২. খাবারে রাখুন সাইট্রাস ফল
তাজা সাইট্রাস ফল সুষম খাদ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। দেখা গেছে, যারা বেশি পরিমাণে সাইট্রাস ফল খায়, তাদের প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি কম বা নেই। সাইট্রাস ফলের মধ্যে আছে কমলালেবু, জাম্বুরা, লেবু, লাইম, মানডারিন, ইউজু এবং ম্যান্ডারিন কমলা।
৩. ভিটামিন ডি গ্রহণ করুন
বেশির ভাগ লোকই পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি পায় না। ভিটামিন ডি প্রোস্টেট ক্যানসার থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। খাবারে ভিটামিন ডি জাতীয় খাবার যেমন স্যামন, কড লিভার অয়েল, শুকনো মাশরুম ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এ ছাড়াও, সরাসরি ভিটামিন ডি পাওয়ার জন্য সবাইকে অবশ্যই রোদে বের হতে হবে।
৪. কফি পান করুন
প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে কফি একটি আদর্শ পানীয়। প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ কাপ কফি পান উচ্চ-গ্রেড ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, দিনে তিন কাপ কফি প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি প্রায় ১১ শতাংশ কমিয়ে দেয়। তবে মনে রাখবেন, ক্যাফিনের উচ্চ মাত্রা পেটে ব্যথা, দ্রুত হৃদস্পন্দন এবং ঘুমের সমস্যাগুলোর মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
৫. চর্বি বাদ দিন
পশুর চর্বির সঙ্গে প্রোস্টেট ক্যানসারের মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগসূত্র রয়েছে। তাই প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং প্রাণিজ চর্বিকে বাদ দিয়ে উদ্ভিদভিত্তিক চর্বি খেতে হবে। উদাহরণস্বরূপ মাখনের পরিবর্তে জলপাই তেল, ক্যান্ডির পরিবর্তে ফল এবং পনিরের পরিবর্তে বাদাম খেতে পারেন। এ ছাড়াও অতিরিক্ত মাংস খাওয়া এড়িয়ে চলুন। কারণ এটি প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
৬. খেতে পারেন লাল ফল
লাল ফল যেমন-তরমুজ, টমেটো, বিটরুট ইত্যাদিতে রয়েছে লাইকোপিন, যা অত্যন্ত শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। লাইকোপিন প্রোস্টেট ক্যানসার কোষের অগ্রগতি এবং বৃদ্ধি কমাতে পারে। তাই খাবারে এই লাল ফল ও সবজি অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সপ্তাহে চারবারের বেশি রান্না করা টমেটো খাওয়ার ফলে অন্যান্য রান্না করা খাবারের তুলনায় ক্যানসারের ঝুঁকি ২৮ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। মনে রাখতে হবে, ফল যত লাল হবে, তাতে লাইকোপিন তত বেশি থাকবে!
৭. ধূমপান ত্যাগ করুন
ধূমপানের কারণে প্রোস্টেট ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। কেউ যদি স্বাস্থ্যকর খাবার খায় কিন্তু দিন-রাত ধূমপান করে, তা হলে কোনো লাভ নেই। ধূমপান ত্যাগ করে স্বাস্থ্যকর জীবনধারা গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। যারা ধূমপান ছেড়েছেন তাদের প্রোস্টেট ক্যানসার এবং অন্যান্য ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি অনেক কমে যায়।
৮. নিয়মিত ব্যায়াম করুন
অতিরিক্ত ওজন বা স্থূল হলে প্রোস্টেট ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। অতিরিক্ত ওজন শরীরের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। নিয়মিত ব্যায়াম প্রোস্টেট ক্যানসারসহ বেশির ভাগ ক্যানসার প্রতিরোধ করে। সাইকেল চালানো, হাঁটা, সাঁতার কাটা ইত্যাদি ব্যায়াম করলে প্রোস্টেট ক্যানসারের আশঙ্কা অনেকাংশে কমে যায়।
৯. শারীরিক সম্পর্কে সক্রিয় থাকুন
শারীরিক সম্পর্কে সক্রিয় থাকলে পুরুষদের প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি কম থাকে। পরীক্ষায় দেখা গেছে, বীর্যপাত শরীরের বিষাক্ত পদার্থ এবং অন্যান্য অবাঞ্ছিত পদার্থগুলোকে পরিষ্কার করে। এসব উপাদান প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই শারীরিক সম্পর্কে সক্রিয় পুরুষদের প্রোস্টেট ক্যানসারের আশঙ্কা কমে যায়।
১০. ডাক্তারের সহায়তা নিন
এই লক্ষণগুলো যদি কারও মধ্যে থাকে, তা হলে তাকে দ্রুত ডাক্তার দেখাতে হবে। যেমন- দুর্বল প্রস্রাবের স্রোত, প্রস্রাবের সময় ব্যথা, প্রস্রাব করার পর মূত্রাশয় খালি না হওয়া, প্রস্রাবে রক্ত যাওয়া, তলপেটে অস্বস্তি বা ব্যথা ইত্যাদি। প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয় করতে পারলে রোগমুক্তির সুযোগ বেড়ে যায়।
হার্ট ভালো রাখতে সঠিক খাবারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিছু খাবার হার্টের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। নিচে এমন কিছু খাবারের তালিকা দেওয়া হলো, যা হার্টের জন্য ভালো।
১. ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড-সমৃদ্ধ খাবার
হার্ট ভালো রাখতে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড-সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। এর মধ্যে আছে স্যামন, ম্যাকারেল, সার্ডিনস, টুনা। পাশাপাশি চিয়া সিডস এবং ফ্ল্যাক্স সিডস খাওয়া যেতে পারে।
২. ফল এবং শাকসবজি
ফল ও সবুজ শাকসবজি হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কাজ করে। ফলের মধ্যে আছে ব্লুবেরি, স্ট্রবেরি, কমলালেবু এবং আঙুর। শাকসবজির মধ্যে আছে পালংশাক, ব্রোকলি, ক্যালে ইত্যাদি।
৩. সম্পূর্ণ শস্য (Whole Grains)
হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সম্পূর্ণ শস্য খাওয়ার বিকল্প নেই। এসব শস্যের মধ্যে আছে ওটস, ব্রাউন রাইস, কোয়িনোয়া। চাইলে খেতে পারেন পুরো গমের রুটি বা পাস্তা।
৪. বাদাম ও বীজ
অবসর সময়ে অল্প করে বাদাম এবং বীজ খেতে পারেন। আলমন্ড, ওয়ালনাট, চিনাবাদাম হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কাজ করে। পাশাপাশি খান কুমড়োর বীজ, সূর্যমুখীর বীজ।
৫. অলিভ অয়েল
এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল হার্টের জন্য উপকারী। দৈনন্দিন খাবারে সোয়াবিন কিংবা সরিষা তেলের পরিবর্তে খেতে পারেন অলিভ অয়েল।
৬. ডার্ক চকলেট (৭০% কোকো বা তার বেশি)
পরিমিত ডার্ক চকলেট রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে। ডার্ক চকলেট মস্তিষ্কের নার্ভ সিস্টেমকে সতেজ রাখে। এতে হাইপারটেনশন বা হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
৭. লেবুজাতীয় ফল (Citrus Fruits)
ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ ফল হৃৎপিণ্ডের জন্য ভালো। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে লেবুর পটাশিয়াম সোডিয়াম সাহায্য করে। তাই উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের ডায়েটে রাখা হয় লেবু। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের গবেষণা অনুসারে, নিয়মিত লেবু খেলে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে।
৮. রসুন
রসুন রক্তে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। রসুন হার্টের জন্যও অনেক ভালো। নিয়মিত রসুন ব্লাঞ্চিং (গরম পানিতে ২ মিনিট ফোটানো) করে খেলে অথবা তরকারিতে আস্ত রসুন খেলে হার্ট সতেজ থাকে।
৯. সবুজ চা
সবুজ চা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট-সমৃদ্ধ, যা হার্টের স্বাস্থ্য উন্নত করে। এটা শরীরে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, সবুজ চা রক্ত জমাট বাঁধতে দেয় না। পাশাপাশি শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করতে সাহায্য করে।
১০. লিন প্রোটিন
যে প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাবারে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ কম থাকে, সেটাই হলো লিন প্রোটিন। অর্থাৎ প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাবার, কিন্তু এতে ফ্যাট ও ক্যালোরির পরিমাণ অনেক কম রয়েছে। যেমন- চর্বিহীন মাংস, মুরগি এবং মটরশুঁটি।
আরও মনে রাখুন... হার্ট সুস্থ রাখতে চাইলে লবণ কম খান। প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন। সঙ্গে প্রচুর পানি পান করুন। সুষম খাবার খান। যদি বিশেষ কোনো শারীরিক সমস্যা থাকে, তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ডায়েট ঠিক করুন।