ব্রণ আমাদের ত্বকের ঔজ্জ্বল্য এবং সৌন্দর্য নষ্ট করে দেয়। আমাদের ত্বকের তৈলগ্রন্থি ব্যাটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হলে এর আকৃতি বৃদ্ধি পায় এবং এর ভিতরে পুঁজ জমা হতে থাকে, যা ধীরে ধীরে ব্রণের আকার ধারণ করে। সাধারণত টিনেজাররা ব্রণ ও ব্রণের দাগ নিয়ে বেশি ভোগে। ব্রণ থেকে বাঁচতে ঘরোয়া, প্রাকৃতিক ও অরগানিক সামগ্রীই সবচেয়ে ভালো আর নিরাপদ। এতে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ারও ভয় থাকে না। চলুন দেখে নেই তেমন কিছু উপায়।
মুলতানি মাটি
ত্বকে অতিরিক্ত তেলতেলে ভাবের ফলে ব্রণের সমস্যা দেখা দেয়। এ ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে মুখে মুলতানি মাটি পানি দিয়ে পেস্ট করে লাগাতে পারেন। মুলতানি মাটি ত্বকের অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ বন্ধ করতে সাহায্য করে।
কাঁচা হলুদ এবং চন্দনকাঠের গুঁড়ো
কাঁচা হলুদ এবং চন্দনকাঠের গুঁড়ো ব্রণের জন্য খুবই কার্যকর দুটো উপাদান। সমপরিমাণ বাটা কাঁচা হলুদ এবং চন্দন কাঠের গুঁড়ো একত্রে নিয়ে এতে পরিমাণ মত পানি মিশিয়ে পেষ্ট তৈরি করতে হবে। মিশ্রণটি ব্রণ আক্রান্ত জায়গায় লাগিয়ে রেখে কিছুক্ষণ পর শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এই মিশ্রণটি শুধুমাত্র ব্রণদূর করার কাজ করে না বরং ব্রণের দাগ দূর করতেও সাহায্য করে।
আপেল এবং মধুর মিশ্রণ
আপেল এবং মধুর মিশ্রণ হচ্ছে ব্রণের দাগ দূর করার সবচেয়ে জনপ্রিয় ঘরোয়া পদ্ধতি। প্রথমে আপেলের পেষ্ট তৈরি করে তাতে ৪-৬ ফোঁটা মধু মিশাতে হবে। মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষন অপেক্ষা করে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি ত্বকের টানটান ভাব বজায় রাখে এবং গায়ের রঙ হালকা করে। সপ্তাহে ৫-৬ বার এটি ব্যবহার করা যেতে পারে।
চালের গুঁড়া ও মধু
শশার রসের সঙ্গে চালের গুঁড়া মিশিয়ে নিন। যাদের মধুতে অ্যালার্জি নেই, তারা সামান্য মধুও মিশিয়ে নিতে পারেন এই মিশ্রণে। সপ্তাহে দুই দিন এই প্যাক ব্যবহার করলে ত্বক পরিষ্কার হবে। ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডস দূর হয়ে যাবে। খেয়াল রাখতে হবে, ব্রণ থাকলে স্ক্রাব করা যাবে না।
তুলসি পাতার রস
ব্রণের জন্য তুলসি পাতার রস খুব উপকারী। কারণ তুলসি পাতায় আছে আয়ূরবেদিক গুণ। শুধুমাত্র তুলসি পাতার রস ব্রণ আক্রান্ত অংশে লাগিয়ে রেখে শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এরপর কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে।
চন্দন কাঠের গুড়োঁ, গোলাপ জল ও লেবুর রস
প্রথমে চন্দন কাঠের গুড়োঁর সাথে গোলাপ জল মিশিয়ে পেষ্ট তৈরি করুন। এরপর এতে ২-৩ ফোঁটা লেবুর রস মিশান। গোলাপজল অনেকের ত্বকের সাথে অ্যাডজাষ্ট হয় না। সেই ক্ষেত্রে গোলাপ জলের পরিবর্তে মধু ব্যবহার করতে পারেন। এই মিশ্রণ আপনার ব্রণের দাগ দূর করতে সাহায্য করবে। সপ্তাহে ৩-৪দিন ব্যবহার করতে পারলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
শসার রস
শসার রস তৈলাক্ততা দূর করতে খুবই কার্যকর। প্রতিদিন বাইরে থেকে এসে শসার রস দিয়ে মুখ পরিষ্কার করতে পারেন। কিংবা রস ফ্রিজে জমিয়ে আইস কিউব করেও ব্যবহার করতে পারেন। এতে ওপেন পোরসের সমস্যাওর সমাধান হবে।
দারুচিনি গুঁড়ার ও গোলাপজল
গোলাপজলের নিয়মিত ব্যবহারে ব্রণের দাগ কমে যায়। দারুচিনি গুঁড়ার সাথে গোলাপজল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্ট ব্রণের ওপর লাগিয়ে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এতে ব্রণের সংক্রমণ, চুলকানি এবং ব্যথা অনেকটাই কমে যাবে।
ডিমের সাদা অংশ
রাতে শোয়ার আগে ডিমের সাদা অংশ ব্রণ আক্রান্ত জায়গায় ম্যাসেজ করে সারারাত রাখতে পারেন। এটি ত্বকের খসখসে ভাব দূর করে। সবচেয়ে ভালো হয়, যদি এর সাথে লেবুর রস যোগ করা যায়। ব্যবহারের আধ ঘণ্টা পর ধুয়ে ফেলতে হবে।
পেঁপে ও চালের গুঁড়ো
ব্রণ হবার অন্যতম কারণ হলো অপরিষ্কার ত্বক। তাই ত্বক রাখতে হবে পরিষ্কার। নিয়মিত স্ক্রাবিং ত্বককে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। পাকা পেঁপে চটকে নিন এক কাপ। এর সাথে মেশান এক টেবিল চামচ লেবুর রস এবং প্রয়োজন অনুযায়ী চালের গুঁড়ো। মিশ্রণটি মুখসহ পুরো শরীরে লাগান। ২০-২৫ মিনিট মাসাজ করে গোসল করে ফেলুন।
পুদিনা পাতা
অতিরিক্ত গরমের কারণে ত্বকে যেসব ফুসকুড়ি এবং ব্রণ হয় সেগুলো দূর করতেও পুদিনা পাতা উপকারী। টাটকা পুদিনা পাতা বেটে ব্রণের ওপর লাগিয়ে রাখুন। ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
মুলতানি মাটি ও নিম পাতা
চার-পাঁচটা নিম পাতা ভালো করে ধুয়ে পিষে নিন। এর মধ্যে এক চামচ মুলতানি মাটি, অল্প গোলাপ জল মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। প্যাকটা যদি গাঢ় হয়ে যায় তাহলে এর মধ্যে গোলাপ জল মিশিয়ে নিন। মুখে লাগিয়ে বেশ কিছুক্ষণ রেখে দিন। শুকিয়ে গেলে হালকা পানি দিয়ে মুখটা ধুয়ে ফেলুন।