
একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ দিনে ৩ থেকে ৫ চামচ চিনি খেতে পারেন! এর বেশি খেলে শরীরে নানা ধরনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। আসুন দেখে নিই, চিনি আমাদের শরীরে যে ১০ ধরনের ক্ষতি করে।
১. ওজন বৃদ্ধি করে

চিনি অতিরিক্ত ক্যালোরি প্রদান করে, যা শরীরে জমা হয়ে ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। বিশেষ করে অতিরিক্ত প্রসেসড চিনি খাওয়ার ফলে স্থূলতার ঝুঁকি বেড়ে যায়। ফলে শরীর খুব দ্রুত মোটা হয়ে যায়। অতিরিক্ত ফ্যাট জমে গেলে রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
২. ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়

নিয়মিত অতিরিক্ত চিনি খেলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। যদি দৈনিক চিনি থেকে ১৫০ ক্যালরি গ্রহণ করা হয়, তাহলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায় প্রায় ১ দশমিক ১ শতাংশ।
৩. হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়

অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার ফলে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায় এবং খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। ফলে হার্ট অ্যাটাক, হার্টফেল করার আশঙ্কাও বেড়ে যায়।
৪. দাঁতের ক্ষতি করে

চিনি ব্যাকটেরিয়ার জন্য খাবার হিসেবে কাজ করে, যা ক্যাভিটি এবং দাঁতের ক্ষয়ের মূল কারণ। মিষ্টিজাতীয় খাবার গ্রহণের পর ব্রাশ না করলে দাঁতে চিনি লেগে থাকে। ফলে সেখানে ব্যাকটেরিয়া জমে দাঁতের ক্ষতি করে।
৫. লিভারে সমস্যা দেখা দেয়

চিনি বিশেষত ফ্রুক্টোজের অতিরিক্ত গ্রহণ লিভারে ফ্যাট জমাতে পারে, যা নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজের কারণ হতে পারে। অতিরিক্ত চিনি খেলে লিভারের চারপাশে অতিরিক্ত চর্বির স্তর তৈরি হয়। ফলে লিভারের কার্যক্ষমতা কমে যেতে থাকে।
৬. মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে

অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার ফলে মেজাজ পরিবর্তন, বিষণ্নতা এবং ক্লান্তি অনুভূত হতে পারে। এটি বিশেষত শিশুদের মধ্যে অতিরিক্ত চঞ্চলতা এবং মনোযোগের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। চিনির কারণে আলঝেইমারসের মতো রোগ হতে পারে। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয় চিনি।
৭. ত্বকের সমস্যা দেখা দেয়

চিনি কোলাজেনের গুণমান কমিয়ে ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেয়। এটা ব্রণের সমস্যা বাড়াতে পারে। পাশাপাশি কোলাজেন ও ইলাস্টিনের ক্ষতি করে। চিনি সোরিয়াসিস খারাপ করে এবং ত্বকের প্রদাহ বাড়ায়।
৮. প্রদাহ এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করে

চিনি প্রদাহজনিত প্রতিক্রিয়া বাড়ায় এবং দীর্ঘমেয়াদে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দেয়। অতিরিক্ত চিনে খেলে বিষণ্নতা তৈরি হয়। শরীর সবসময় ক্লান্ত লাগে।
৯. রক্ত চলাচলে বাধা দেয়

শরীরের রক্ত চলাচলের ধমনীর দেয়ালের পুরুত্ব বাড়িয়ে দিতে পারে চিনি। ফলে রক্ত স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারে না এবং রক্তচাপ বেড়ে যায়।
১০. ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়

এক গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্রাতিরিক্ত চিনি খেলে প্যাংক্রিয়েটিক ক্যানসার, প্রস্টেট ক্যানসার, ক্ষুদ্রান্তের ক্যানসার, গলা, ফুসফুস, রেকটাম ও স্তন ক্যানসারের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
করণীয়
চিনি গ্রহণ কমিয়ে প্রাকৃতিক উৎস যেমন ফলমূল থেকে প্রাকৃতিক চিনি গ্রহণের চেষ্টা করুন।
প্রসেসড খাবার এড়িয়ে চলুন।
খাবারের লেবেল পড়ে চিনির মাত্রা যাচাই করুন।
সুস্থ থাকার জন্য চিনির পরিমাণ সীমিত রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।