ঢাকা ৪ বৈশাখ ১৪৩২, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫
English
বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২

এইচএমপিভি ভাইরাসের লক্ষণ যেমন হতে পারে

প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:২৮ পিএম
আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:০১ পিএম
এইচএমপিভি ভাইরাসের লক্ষণ যেমন হতে পারে
হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি)

করোনা মহামারির পাঁচ বছর পর চীনে হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) নামে এক ভাইরাসের আবির্ভাব হয়েছে। চীনের বাইরে জাপান, ভারত, মালয়েশিয়ায়ও এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

জানা যায়, ২০০১ সালে নেদারল্যান্ডসে ভাইরাসটি সর্বপ্রথম শনাক্ত হয়েছিল। এইচএমপিভি আক্রান্ত যেকোনো জীব বা জড় উপাদানের সংস্পর্শ থেকে ভাইরাসটি মানবদেহে ঢুকতে পারে। ভাইরাসটি নির্দিষ্ট কিছু জড় উপাদানের পৃষ্ঠে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকে।

এই ভাইরাসের প্রাথমিক উপসর্গগুলো হলো- সাধারণ জ্বর, ঠান্ডা, কাশি ইত্যাদি। এতে বেশি আক্রান্ত হয় শিশু এবং বয়স্করা। প্রাদুর্ভাবের পর থেকে এটি উত্তর এশিয়ায় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তবে আসলেই কী দুশ্চিন্তার কোনো কারণ আছে?
দেশের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভাইরাসটি তেমন ক্ষতিকারক নয়। করোনার তুলনায় মোটেও শক্তিশালী নয়। এর লক্ষণ সাধারণ নিউমোনিয়ার মতো; জ্বর-সর্দি-কাশি হয়। শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা হয়। মৃত্যুর আশঙ্কা কম। মৃত্যুহার নেই বললেই চলে। তাই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

কোভিড-১৯ মানুষের মনে অন্য রকম ভয় সৃষ্টি করেছে। তার পর থেকে কোনো দেশে কোনো ভাইরাস সংক্রমণের কথা শুনলেই মানুষ আঁতকে ওঠেন। সম্প্রতি চীন-জাপানে এইচএমপিভির প্রাদুর্ভাবের খবরে অনেকের মধ্যে আতঙ্ক-উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এতদিন উদ্বেগ কম থাকলেও প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে দুই শিশুর শনাক্তের খবরে বাংলাদেশে অনেকের মনে কিছুটা ভয় দেখা দিয়েছে। তবে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

হালকা লক্ষণ: সর্দি, নাক বন্ধ, কাশি, গলা ব্যথা, হালকা জ্বর, প্রচণ্ড ক্লান্তি ইত্যাদি।

গুরুতর লক্ষণ: শ্বাসকষ্টজনিত জটিলতা, বুক ব্যথা, অবিরাম কাশি ইত্যাদি।

হালকা উপসর্গগুলো সাধারণত সাত থেকে ১০দিন স্থায়ী হয়। তবে গুরুতর অবস্থায় গেলে দীর্ঘস্থায়ী জটিলতায় রূপ নিতে পারে।

সংক্রমণ হয় যেভাবে:
এইচএমপিভির মাধ্যমে দূষিত কোনো বস্তুকে স্পর্শ করার পর মুখ, নাক বা চোখে স্পর্শ করলে এর সংক্রমণ হতে পারে। যেমন-  দরজার হাতল, টেবিল এবং ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মতো জিনিসের মাধ্যমে ছড়াতে পারে।

এছাড়া, এইচএমপিভিতে আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি, এমনকি কথা বলার সময় মুখ থেকে বের হওয়া অল্প তরলও সংক্রমণের কারণ হতে পারে। 

ঝুঁকি
প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে যাদের ক্যান্সার, হৃদরোগ বা শ্বাসনালি সংক্রান্ত দুরারোগ্য ব্যাধি রয়েছে তাদের এতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। 

যা করা দরকার
> খাবারের আগে ও পরে সাবান ও পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালোভাবে হাত ধোয়া এবংবাইরে থেকে ঘরে ঢোকার সময় শরীরের উন্মুক্ত জায়গাগুলো ধুয়ে নেওয়া।
> আক্রান্ত ব্যক্তিদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখা। 
> কাশি বা হাঁচি দেওয়ার সময় সর্বদা মুখ এবং নাক টিস্যু বা কনুই দিয়ে ঢেকে রাখা।
> যেসব গৃহস্থালি বস্তুগুলো সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনা থাকে সেগুলো নিয়মিত স্যানিটাইজ করা।
> ঘরের ভেতর বায়ুচলাচল নিশ্চিত করা।

এই ভাইরাসের লক্ষণ দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

মেহেদী/অমিয়/

ডাউন সিনড্রোম একটি দুরারোগ্য রোগ

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৪৩ পিএম
ডাউন সিনড্রোম একটি দুরারোগ্য রোগ
ডাউন সিনড্রোমের কোনো প্রতিকার নেই। তবে পরিচর্যার মাধ্যমে শারীরিক সমস্যাগুলো নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। ছবি এআই

মানবদেহে প্রতিটি কোষে ক্রোমোজম থাকে ৪৬টি। ডাউন সিনড্রোম ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রতিটি দেহকোষে ২১তম ক্রোমোজমে একটি অতিরিক্ত ক্রোমোজম থাকে, যাকে ‘ট্রাইসমি ২১’ বলা হয়। এই অতিরিক্ত ক্রোমোজমটির কারণে বিশেষ কিছু শারীরিক ও মানসিক ত্রুটি নিয়ে ডাউন সিনড্রোম শিশুর জন্ম হয়। ১৮৮৬ সালে ইংল্যান্ডে জন ল্যাংডন ডাউন নামে এক ব্যক্তি এটি আবিষ্কার করেন। তখন থেকেই এটি ডাউনস সিনড্রোম বা শুধু ডাউন সিনড্রোম বলে চিকিৎসাবিজ্ঞানে স্থান পায়। ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশে প্রতিদিন ১৫ জন ডাউন শিশু জন্ম নেয় এবং দেশে প্রতি বছর গড়ে ৫ হাজার ডাউন শিশু জন্মায়। 

ডাউন সিনড্রোমের প্রকারভেদ
ডাউন সিনড্রোম তিন প্রকার।
ট্রাইসোমি২১: সবচেয়ে সাধারণ প্রকার, প্রায় ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে এই ধরনের রোগী দেখা যায়। এদের শরীরের প্রতিটি কোষে ক্রোমোজোম ২১ এর তিনটি কপি থাকে।
ট্রান্সলোকেশন ডাউন সিনড্রোম: এই অবস্থা প্রায় ৪ শতাংশ ক্ষেত্রে ঘটে। এই সিন্ড্রোমে ক্রোমোজোম ২১-এর অংশ অন্য ক্রোমোজোমের সঙ্গে সংযুক্ত (ট্রান্সলোকেটেড) হয়ে যায়।
মোজাইক ডাউন সিনড্রোম: প্রায় ১ শতাংশ ক্ষেত্রে পাওয়া যায়, যেখানে কিছু কোষে ক্রোমোজোম ২১-এর তিনটি কপি থাকে, অন্যদের সাধারণত দুটি কপি থাকে।

ঝুঁকি
মায়ের বয়স ২০ বছরের কম বা ৩৫ বছর বেশি হলে এর ঝুঁকি বাড়ে। বয়স যত বেশি হবে, শিশুর ডাউনস সিনড্রোম হওয়ার আশঙ্কা তত বাড়বে। যেমন ৩৫ বছর বয়সের প্রতি ৩৫০ জন অন্তঃসত্ত্বার মধ্যে একজনের এবং ৪০ বছর বয়সের প্রতি ১০০ জন মায়ের একজনের ডাউন শিশু হতে পারে। অন্যদিকে কোনো মায়ের আগে একটি ডাউন শিশু থাকলে পরবর্তী সময়ে ডাউন শিশু হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। বাবা-মা ত্রুটিযুক্ত ক্রোমোজমের বাহক হলে তাদের সন্তানও ডাউন শিশু হতে পারে। যদি বাহক বাবা হন তবে সে ক্ষেত্রে ঝুঁকি থাকে ৩ শতাংশ আর মা হলে তা বেড়ে হয়ে যায় ১২ শতাংশ।

গর্ভাবস্থায় শনাক্তকরণ
পরীক্ষার মাধ্যমে জন্মের আগেই শিশুর ডাউন সিনড্রোম আছে কি না তা আশঙ্কা করা যায়। আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে মায়ের পেটে ১১ থেকে ১৪ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভস্থ শিশু ডাউন শিশু হিসেবে জন্ম নেওয়ার ঝুঁকি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। ডাউন সিনড্রোম সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য ক্রনিওনিকভিলাস স্যামপ্লিং করা প্রয়োজন হয়। তবে ক্রোমোজম পরীক্ষাই এ রোগ নিশ্চিতকরণের একমাত্র উপায়।

লক্ষণ ও জটিলতা
যেসব শিশু ডাউন সিনড্রোম নিয়ে জন্মগ্রহণ করে, তাদের মধ্যে যেসব লক্ষণ দেখা যায় সেগুলো হলো-

- শরীরের মাংসপেশি শক্তিশালী না হওয়া বা মাংসপেশিতে স্বাভাবিক শিশুদের মতো জোর না থাকা। একে মাংসপেশির শিথিলতা বলে এবং শিশু নরম তুলতুলে হয় যাকে ফ্লপি বেবি বলে।
- দুই চোখের বাইরের কোনা বাঁকাভাবে ওপরের দিকে উঠে থাকা।
- তাদের হাতের তালু জুড়ে একটি রেখা থাকতে পারে।
- নাক চ্যাপ্টা।
- কান ছোট ও নিচু।
- জিব বের হয়ে থাকা।
- জন্মের সময় শিশুর ওজন ও উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকা। ডাউন সিনড্রোম আক্রান্তদের মধ্যে ব্যক্তিত্ব ও সক্ষমতায় এবং বিভিন্ন মাত্রার বুদ্ধিমত্তা ও অক্ষমতা থাকে। এ ছাড়া, ডাউন সিনড্রোম আক্রান্ত অনেক শিশুর বিভিন্ন শারীরিক ও স্বাস্থ্যগত সমস্যা থাকে। যেমন-
- জন্মগত হৃদরোগ।
- অন্ত্রের অস্বাভাবিকতা।
- শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তির বৈকল্য।
- থাইরয়েডের ত্রুটিপূর্ণ ক্রিয়া।
- অধিক সংক্রমণের আশঙ্কা।
- ঘাড়ের হাড়ের সমস্যা।
- রক্তের রোগ।
কিছু শিশুর এর কোনোটিই হয় না, আবার কাউকে এর কয়েকটি ভোগ করতে হয়।

শিশুর যত্ন
ডাউন সিনড্রোমের কোনো প্রতিকার নেই। তবে পরিচর্যার মাধ্যমে শারীরিক সমস্যাগুলো নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। সঠিক যত্ন, পুষ্টিকর খাবার, স্পিচ ও ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি এবং ফিজিক্যাল থেরাপি দিলে ডাউন সিনড্রোম শিশুরা অন্য স্বাভাবিক শিশুর মতো পড়ালেখা করে স্বনির্ভর হতে পারে। স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি শারীরিক সমস্যা থাকে বলে এদের নিয়মিত শিশু বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে পরীক্ষা করাতে হয়।

মনে রাখুন
সময়মতো পরিচর্যা ও চিকিৎসার মাধ্যমে হরমোনজনিত জটিলতাসহ অন্যান্য শারীরিক সমস্যা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।
উপযুক্ত পরিবেশ ও বিশেষ শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে বড় করতে পারলে এই শিশুরা কর্মক্ষম হয়ে অর্থবহ জীবনযাপন করতে পারে।
মা বেশি বয়সে সন্তান ধারণ করলে এ রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাই সঠিক বয়সে সন্তান ধারণ করা উচিত।

চোখ ভালো রাখতে যা করতে হবে

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০১:১৮ পিএম
আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৩৩ পিএম
চোখ ভালো রাখতে যা করতে হবে
দৃষ্টিশক্তি ছাড়া স্বাভাবিক জীবনযাপন কল্পনা করা কঠিন। ছবি এআই

চোখ আমাদের দেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর একটি। দৃষ্টিশক্তি ছাড়া স্বাভাবিক জীবনযাপন কল্পনা করা কঠিন। কিন্তু আমরা অনেক সময় চোখের যত্নে উদাসীন হয়ে পড়ি। চোখ সুস্থ রাখতে হলে কিছু নিয়মিত অভ্যাস ও সঠিক পুষ্টির প্রতি মনোযোগী হতে হয়। নিচে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।

সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ
চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে খাবারের কোনো বিকল্প নেই। চোখের জন্য উপকারী কিছু পুষ্টি উপাদান হলো—
• ভিটামিন এ: এটি চোখের কর্নিয়া সুস্থ রাখে এবং রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে। গাজর, কুমড়া, ডিম, কলিজা ইত্যাদি খাবারে ভিটামিন এ পাওয়া যায়।
• ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড: চোখের শুষ্কতা (Dry Eyes) রোধ করে এবং রেটিনার স্বাস্থ্য রক্ষা করে। সামুদ্রিক মাছ (যেমন- সালমোন, সারডিন), চিয়া সিড, ফ্ল্যাক্স সিডে এটি পাওয়া যায়।
• লুটেইন ও জিয়াক্সানথিন: এরা চোখের রেটিনাকে ক্ষতিকর আলো থেকে রক্ষা করে এবং বয়সজনিত চোখের সমস্যার ঝুঁকি কমায়। পালংশাক, ব্রকলি, ডিমের কুসুম, ভুট্টা এগুলোর ভালো উৎস।
• ভিটামিন সি এবং ই: এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্টগুলো চোখের কোষকে ফ্রি র‌্যাডিকেল থেকে রক্ষা করে। পেয়ারা, কমলা, আমলকী, বাদাম, সূর্যমুখীর বীজে এগুলো পাওয়া যায়।
• দস্তা (Zinc): দস্তা ভিটামিন এ-কে রেটিনায় পৌঁছাতে সাহায্য করে, যা রাতকানা প্রতিরোধে সহায়ক। রেটিনায় (বিশেষ করে ম্যাকুলায়) উচ্চমাত্রায় দস্তা থাকে। এটি চোখের কোষকে ক্ষতিকর ফ্রি র‌্যাডিকেল থেকে রক্ষা করে। গবেষণায় দেখা গেছে, দস্তা ছানি পড়ার প্রক্রিয়া ধীর করতে পারে।

 

চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে খাবারের কোনো বিকল্প নেই। ছবি এআই

 

ধূমপান ও অতিরিক্ত অ্যালকোহল পরিহার
ধূমপান চোখের রেটিনার কোষ নষ্ট করে দেয় এবং ম্যাকুলার ডিজেনারেশন ও ছানি পড়ার ঝুঁকি বাড়ায়। এ ছাড়া ধূমপানের ফলে চোখে রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়, যা চোখের ক্ষতি করে। অ্যালকোহলও চোখ শুকিয়ে ফেলে এবং দৃষ্টিশক্তিতে প্রভাব ফেলে।

 

পর্যাপ্ত পানি পান
চোখে আর্দ্রতা বজায় রাখা খুব জরুরি, বিশেষ করে যারা অনেকক্ষণ কম্পিউটার বা মোবাইল স্ক্রিনে কাজ করেন। দিনে অন্তত ৮–১০ গ্লাস পানি পান করলে চোখ শুষ্ক হয়ে যাওয়া বা চুলকানোর সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়।

 

দিনে ৮–১০ গ্লাস পানি পান করলে চোখ শুষ্ক হয়ে যাওয়া কমে যায়। ছবি এআই

 

নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করানো
চোখে সমস্যা না থাকলেও অন্তত বছরে একবার চক্ষু চিকিৎসকের কাছে গিয়ে চোখ পরীক্ষা করানো উচিত। অনেক সময় চোখের ভেতরের রোগ (যেমন- গ্লুকোমা, রেটিনোপ্যাথি) শুরুতে কোনো লক্ষণ ছাড়াই হতে পারে, যা সময়মতো ধরা পড়লে চিকিৎসা সহজ হয়।

 

ডিজিটাল স্ক্রিন ব্যবহারে সচেতনতা
বর্তমানে মোবাইল, ল্যাপটপ ও টিভি স্ক্রিনে দীর্ঘ সময় কাটানো সাধারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম চোখের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে। এ সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে করণীয়—
• ২০-২০-২০ নিয়ম মেনে চলুন: প্রতি ২০ মিনিটে ২০ সেকেন্ডের জন্য ২০ ফুট দূরের কোনো জিনিসের দিকে তাকান। এটি চোখের চাপ কমায়।
• স্ক্রিন থেকে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রাখুন: স্ক্রিন চোখের সমান্তরালে ও অন্তত ২০–২৫ ইঞ্চি দূরে রাখুন।
• অ্যান্টি-গ্লেয়ার চশমা ব্যবহার করুন: যারা দীর্ঘ সময় স্ক্রিনের সামনে থাকেন, তারা অ্যান্টি-রিফ্লেকটিভ লেন্স বা ব্লু-লাইট ফিল্টারযুক্ত চশমা ব্যবহার করতে পারেন।

 

ডিভাইস ব্যবহারের সময় অ্যান্টি-গ্লেয়ার চশমা নিন। ছবি এআই

 

চোখের ব্যায়াম
চোখের পেশিকে সচল রাখতে সহজ কিছু ব্যায়াম প্রতিদিন কয়েক মিনিট করলে উপকার পাওয়া যায়। যেমন-
• চোখ বন্ধ করে ধীরে ধীরে ডান থেকে বাম দিকে ঘোরানো।
• চোখের পাতা দ্রুত খোলা ও বন্ধ করা।
• চোখ দিয়ে দূরের কোনো বস্তু নিরীক্ষণ করা।
• হাতের তালু গরম করে চোখে কিছুক্ষণ রাখা (পামিং)।
এই ব্যায়ামগুলো চোখের পেশি শক্তিশালী করে এবং ক্লান্তি কমায়।

 

পর্যাপ্ত ঘুম
ঘুমের অভাব চোখের নিচে কালো দাগ (dark circles), চোখ লাল হয়ে যাওয়া বা ফুলে যাওয়ার কারণ হতে পারে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন অন্তত ৭–৮ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। ঘুম চোখকে বিশ্রাম দেয় এবং চোখের কোষ পুনর্গঠনে সাহায্য করে।

 

ঘুম চোখকে বিশ্রাম দেয় এবং চোখের কোষ পুনর্গঠনে সাহায্য করে। ছবি এআই

 

মেকআপ ও কনট্যাক্ট লেন্স ব্যবহারে সতর্কতা
চোখের আশপাশে ব্যবহৃত প্রসাধনী যেমন আইলাইনার, কাজল, মাশকারা ইত্যাদি ভালো মানের ও মেয়াদোত্তীর্ণ নয় এমন হওয়া উচিত। মেকআপ শোয়ার আগে অবশ্যই তুলে ফেলুন। কনট্যাক্ট লেন্স ব্যবহারে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অত্যন্ত জরুরি— না হলে চোখে সংক্রমণ হতে পারে।

 

সূর্যের আলো থেকে চোখ রক্ষা
সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি (UV ray) চোখের রেটিনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। দীর্ঘ সময় রোদে থাকলে ছানি পড়ার আশঙ্কাও বাড়ে। তাই বাইরে বের হলে মানসম্পন্ন UV প্রটেকটিভ সানগ্লাস ব্যবহার করা উচিত।

 

বাইরে বের হলে মানসম্পন্ন UV প্রটেকটিভ সানগ্লাস ব্যবহার করা উচিত। ছবি এআই

 

চোখে হাত দেওয়া বা ঘষা বন্ধ করুন
চোখ চুলকালে বা ধুলাবালি ঢুকলে অনেকেই চোখ ঘষেন, যা চোখের সংক্রমণ বা আঘাতের কারণ হতে পারে। চোখে হাত দেওয়ার আগে অবশ্যই হাত ধোয়া উচিত এবং প্রয়োজনে বিশুদ্ধ পানি দিয়ে চোখ ধুয়ে ফেলা ভালো।

 

উপসংহার
চোখের সুস্থতা নিশ্চিত করতে হলে শুধু খাদ্য নয়, বরং দৈনন্দিন জীবনের অভ্যাসগুলোতেও সচেতন হতে হয়। প্রযুক্তিনির্ভর এই যুগে চোখের ওপর চাপ অনেক বেড়ে গেছে। তাই আগে থেকেই চোখের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। চোখ একবার ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা নিরাময় করা কঠিন। তাই চোখের যত্ন নিন, সচেতন হোন।

জেনে নিন দুধ চা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

প্রকাশ: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৪১ এএম
আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৩০ পিএম
জেনে নিন দুধ চা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
দিনে ১-২ কাপ দুধ চা গ্রহণ করা ভালো। ছবি এআই

দুধ চা আমাদের দেশে এক অতি পরিচিত পানীয়। অনেকেই সকালে ঘুম থেকে উঠে এক কাপ দুধ চা পান না করলে যেন দিন শুরু হয় না। আবার অনেকেই দিনের ক্লান্তি দূর করতে কিংবা অফিসের ব্যস্ত সময়ের ফাঁকে এক কাপ দুধ চা খেয়ে একটু স্বস্তি পান। তবে এই জনপ্রিয় পানীয়টির যেমন কিছু উপকারিতা রয়েছে, তেমনি কিছু অপকারিতাও রয়েছে, বিশেষ করে অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহণ করলে। আসুন জেনে নেই দুধ চা খাওয়ার কিছু উপকারিতা ও অপকারিতা।

দুধ চা খাওয়ার উপকারিতা

১. মানসিক সতেজতা বৃদ্ধি করে
দুধ চায় ক্যাফেইন থাকে যা মস্তিষ্ককে উদ্দীপিত করে এবং ক্লান্তি দূর করে মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে। এক কাপ দুধ চা সকালে কিংবা কাজের মাঝে মন সতেজ রাখতে সহায়ক।

 

২. হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা
দুধ চা হজমের জন্য উপকারী হতে পারে, বিশেষ করে যদি এর সঙ্গে আদা বা এলাচ যোগ করা হয়। এটি গ্যাস্ট্রিক সমস্যা কমাতে ও পেটের অস্বস্তি দূর করতে সাহায্য করতে পারে।

 

দুধে থাকা প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম একত্রে শরীরে শক্তি সরবরাহ করে। ছবি এআই

 

৩. ঠান্ডা-কাশিতে উপকার
দুধ চায়ে আদা, লবঙ্গ, দারুচিনি বা তুলসী পাতা যোগ করলে এটি ঠান্ডা-কাশি, গলা ব্যথা ইত্যাদিতে স্বস্তি দেয়। এটি ঘরোয়া উপায়ে আরামদায়ক চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহার হয়।

 

৪. শক্তির যোগান দেয়
দুধে থাকা প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম এবং চায়ের ক্যাফেইন একত্রে শরীরে শক্তি সরবরাহ করে। এটি বিশেষ করে সকালে ঘুম ঘুম ভাব কাটাতে কার্যকর।

 

৫. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য
চায়ের মধ্যে থাকে পলিফেনলস নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের কোষকে সুরক্ষা দেয় এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।

 

দুধ চায়ে ক্যাফেইন থাকে যা মস্তিষ্ককে উদ্দীপিত করে এবং ক্লান্তি দূর করে। ছবি এআই

 

৬. মানসিক চাপ কমায়
গবেষণায় দেখা গেছে, চায়ের মধ্যে থাকা কিছু উপাদান যেমন L-theanine, উদ্বেগ ও মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে।

 

দুধ চা খাওয়ার অপকারিতা


১. অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ
দুধ চা-তে থাকা ক্যাফেইন যদি অতিরিক্ত গ্রহণ করা হয়, তাহলে এটি অনিদ্রা, মাইগ্রেন, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া এবং উদ্বেগ বাড়াতে পারে। তাই দিনে ২-৩ কাপের বেশি চা খাওয়া ঠিক নয়।

 

দুধ চা অতিরিক্ত পান করলে হজমে সমস্যা হতে পারে। ছবি এআই

 

২. হজমে সমস্যা
দুধ চা অতিরিক্ত পান করলে হজমে সমস্যা হতে পারে, বিশেষ করে যদি খালি পেটে খাওয়া হয়। এতে গ্যাস, অ্যাসিডিটি বা পেট ফাঁপা হতে পারে।

 

৩. আয়রন শোষণে বাধা
চায়ে থাকা ট্যানিন নামক উপাদান শরীরে আয়রনের শোষণ কমিয়ে দেয়। যারা অ্যানিমিয়ায় ভুগছেন বা রক্তস্বল্পতার সমস্যা আছে, তাদের জন্য দুধ চা ক্ষতিকর হতে পারে।

 

৪. ওজন বাড়ার সম্ভাবনা
চা-তে যদি চিনি যোগ করা হয়, তবে তা অতিরিক্ত ক্যালরি সরবরাহ করে, যা ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। দুধেও কিছুটা চর্বি থাকে, যা অতিরিক্ত হলে শরীরের ওজন বাড়াতে পারে।

 

দুধ চা ও চিনি একত্রে পান করলে দাঁতের ওপর প্রভাব ফেলে। ছবি এআই

 

৫. হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট
বেশ কিছু গবেষণায় বলা হয়, নিয়মিত অতিরিক্ত দুধ চা পান করলে শরীরের হরমোনের স্বাভাবিক ভারসাম্য ব্যাহত হতে পারে। এটি মহিলাদের ক্ষেত্রে মেনস্ট্রুয়াল সাইকেলে প্রভাব ফেলতে পারে।

 

৬. দাঁতের ক্ষয়
দুধ চা ও চিনি একত্রে পান করলে দাঁতের ওপর প্রভাব ফেলে। দাঁতে প্লাক জমা, দাগ পড়া এবং দাঁতের এনামেল ক্ষয় হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

 

খাবারের অন্তত ১ ঘণ্টা আগে বা পরে চা পান করুন। ছবি এআই

 

অতিরিক্ত কিছু বিষয়

• দুধ চা তৈরি করার সময় যদি খুব বেশি ফুটিয়ে নেওয়া হয়, তবে চায়ের পুষ্টিগুণ কমে যেতে পারে এবং স্বাদও তেতো হয়ে যেতে পারে।
• যারা ল্যাক্টোজ ইনটলারেন্ট (দুধ সহ্য করতে পারেন না), তাদের জন্য দুধ চা ক্ষতিকর হতে পারে। তাদের ক্ষেত্রে দুধ ছাড়া চা ভালো বিকল্প হতে পারে।

 

দুধ চা উপভোগের পরামর্শ

• দিনে ১-২ কাপ দুধ চা গ্রহণ করুন।
• চিনি কম ব্যবহার করুন বা বিকল্প মিষ্টি উপাদান ব্যবহার করুন (যেমন: গুড়, খেজুরের গুঁড়)।
• চায়ের সঙ্গে আদা, এলাচ, দারুচিনি বা তুলসী পাতা যোগ করলে এটি স্বাস্থ্যকর হয়।
• খাবারের অন্তত ১ ঘণ্টা আগে বা পরে চা পান করুন, যাতে আয়রন শোষণে সমস্যা না হয়।

 

উপসংহার

দুধ চা আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। এটি যেমন ক্লান্তি দূর করে মনকে সতেজ রাখে, তেমনি অতিরিক্ত বা অনিয়ন্ত্রিত গ্রহণ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই দুধ চা পান করতে হবে পরিমিতভাবে এবং স্বাস্থ্যকর উপায়ে। সঠিক মাত্রায় দুধ চা পান করলে এটি আপনার দৈনন্দিন জীবনে উপকারী ভূমিকা রাখতে পারে।

কাঁচা আম খাওয়ার ১০টি উপকারিতা

প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:১৭ পিএম
আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:১৯ পিএম
কাঁচা আম খাওয়ার ১০টি উপকারিতা
কাঁচা আম শুধু সুস্বাদুই নয়, এটি শরীরের জন্যও অত্যন্ত উপকারী।

কাঁচা আম গ্রীষ্মকালে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি ফল। যা শুধু স্বাদেই অনন্য নয়, বরং স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এবার চলুন কাঁচা আম খাওয়ার ১০টি উপকারিতা বিস্তারিতভাবে জেনে নিই।

 

১. ভিটামিন সির চমৎকার উৎস
কাঁচা আম ভিটামিন সি-তে ভরপুর, যা আমাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এটি দেহে কোলাজেন উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক, যা ত্বক ও হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এ ছাড়া ভিটামিন সি সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে এবং সর্দি-কাশি কমাতে কার্যকর।

 

২. হজমশক্তি বৃদ্ধি করে
কাঁচা আমে থাকা এনজাইম হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এটি পিত্তরসের উৎপাদন বাড়ায়, যা চর্বি ও প্রোটিনের পরিপাক প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে। যাদের বদহজম, গ্যাস বা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা আছে, তাদের জন্য কাঁচা আম খুবই উপকারী।

 

৩. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
যদিও পাকা আমে বেশি চিনি থাকে, তবে কাঁচা আম তুলনামূলকভাবে কম মিষ্টি এবং এতে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। এটি ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।

 

কাঁচা আমে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে, যা রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায়।

 

৪. হিটস্ট্রোক প্রতিরোধ করে
গ্রীষ্মকালে তীব্র গরমে শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি ও লবণ বেরিয়ে গিয়ে ডিহাইড্রেশন হতে পারে। কাঁচা আমের শরবত (আম পানা) শরীর ঠাণ্ডা রাখে এবং লবণের ভারসাম্য ঠিক রাখতে সাহায্য করে, যা হিটস্ট্রোক প্রতিরোধে কার্যকর।

 

৫. রক্তস্বল্পতা দূর করে
কাঁচা আমে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে, যা রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। এটি বিশেষ করে মহিলাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। কারণ মাসিক ও গর্ভধারণের সময়ে আয়রনের প্রয়োজনীয়তা বেশি থাকে।

 

৬. ওজন কমাতে সহায়ক
কাঁচা আমে ক্যালোরি কম এবং ফাইবার বেশি থাকে, যা দীর্ঘক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে ও ক্ষুধা কমায়। এ ছাড়া এটি বিপাক ক্রিয়া দ্রুত ও ফ্যাট বার্নিং প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। ফলে ওজন কমাতে সাহায্য করে।

 

৭. লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করে
কাঁচা আম লিভারের জন্য খুবই উপকারী। এটি লিভার এনজাইম সক্রিয় করতে সাহায্য করে এবং টক্সিন দূর করে। ফলে লিভারের কার্যকারিতা ভালো হয়। এটি বিশেষ করে ফ্যাটি লিভার বা যকৃতের সমস্যা থাকলে কার্যকর।

 

৮. ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়
কাঁচা আমে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন এ ও সি থাকে, যা ত্বককে উজ্জ্বল ও সুস্থ রাখে। এটি ব্রণ ও ত্বকের দাগ কমায় এবং বয়সের ছাপ দূর করতে সাহায্য করে।

 

কাঁচা আম লিভারের জন্য খুবই উপকারী।

 

৯. হাড় মজবুত করে
কাঁচা আমে থাকা ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে এবং হাড় মজবুত রাখতে সাহায্য করে। এটি অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

 

১০. রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
কাঁচা আমের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিনসমূহ শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে বিভিন্ন সংক্রমণ ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।

 

যেভাবে খাবেন
কাঁচা আম খাওয়ার বিভিন্ন উপায় রয়েছে, যা স্বাদ ও পুষ্টিগুণ বজায় রেখে খাওয়া যায়। চলুন জেনে নিই কাঁচা আম খাওয়ার সেরা কয়েকটি উপায়—

• সরাসরি লবণ-মরিচ মাখিয়ে
• কাঁচা আমের আচার বানিয়ে
• আম পানা বা শরবত বানিয়ে
• সালাদে কাঁচা আম দিয়ে
• ডাল বা তরকারিতে দিয়ে
• স্মুদি বা জুস করে
• আমের চিপস বা শুকনো আম বানিয়ে
• ভর্তা বা গুড় দিয়ে মাখিয়ে

 

উপসংহার
কাঁচা আম শুধু সুস্বাদুই নয়, এটি শরীরের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। এটি হজমশক্তি বাড়ানো থেকে শুরু করে ত্বকের যত্ন, রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই সুস্থ থাকার জন্য গরমের দিনে নিয়মিত পরিমাণমতো কাঁচা আম খাওয়া যেতে পারে।

এই গরমে হিট স্ট্রোক থেকে সাবধান

প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:২৮ পিএম
আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৪৭ পিএম
এই গরমে হিট স্ট্রোক থেকে সাবধান
হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে প্রচুর পানি পান করা উচিত। ছবি এআই

গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড গরমে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের স্বাভাবিক ক্ষমতা ব্যাহত হলে হিট স্ট্রোক ঘটে। এটি একটি প্রাণঘাতী অবস্থা হতে পারে যদি তাৎক্ষণিক চিকিৎসা না করা হয়। হিট স্ট্রোক সাধারণত দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ তাপমাত্রার সংস্পর্শে থাকার ফলে ঘটে এবং এটি শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা দ্রুত ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার বেশি পর্যন্ত বাড়িয়ে তোলে। এতে শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

 

হিট স্ট্রোকের কারণ

হিট স্ট্রোক সাধারণত উচ্চ তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতার কারণে হয়। এর প্রধান কারণগুলো হলো—
• বর্ধিত তাপমাত্রায় দীর্ঘ সময় থাকা: যদি কেউ দীর্ঘক্ষণ রোদে বা গরম পরিবেশে থাকে, তাহলে শরীরের স্বাভাবিক শীতলীকরণ প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে।
• পর্যাপ্ত পানি না খাওয়া: ঘামের মাধ্যমে শরীরের অতিরিক্ত তাপ দূর হয়, তবে পর্যাপ্ত পানি না খেলে শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়ে এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
• গরম ও আর্দ্র আবহাওয়া: বেশি আর্দ্র আবহাওয়ায় ঘাম দ্রুত শুকিয়ে যায় না, ফলে শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে।
• শারীরিক পরিশ্রম করা: গরমের মধ্যে অতিরিক্ত পরিশ্রম করলে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
• গরম পোশাক পরা: মোটা ও আঁটসাঁট পোশাক শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে তোলে।
• বয়স ও শারীরিক অবস্থা: শিশু, বৃদ্ধ এবং হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা স্থূলতার মতো শারীরিক সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিরা হিট স্ট্রোকের ঝুঁকিতে বেশি থাকে।

 

হিট স্ট্রোক সাধারণত উচ্চ তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতার কারণে হয়। ছবি এআই

 

হিট স্ট্রোকের লক্ষণ

হিট স্ট্রোকের কিছু সাধারণ লক্ষণ নিম্নরূপ—
• শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি (১০৪°F বা তার বেশি)।
• অতিরিক্ত ঘাম বন্ধ হয়ে যাওয়া (শরীর শুষ্ক হয়ে যায়)।
• তীব্র মাথাব্যথা ও মাথা ঘোরা।
• দৃষ্টিবিভ্রম ও বিভ্রান্তি।
• বমি বমি ভাব ও বমি হওয়া।
• হৃৎপিণ্ডের গতি বৃদ্ধি।
• মাংসপেশির খিঁচুনি বা দুর্বলতা।
• জ্ঞান হারানো বা অচেতন হয়ে যাওয়া।

 

হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায়

হিট স্ট্রোক প্রতিরোধের জন্য কিছু কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে—
১. পানি ও তরল গ্রহণ
○ প্রচুর পানি পান করা উচিত, বিশেষ করে গরমের সময়।
○ তরলযুক্ত খাবার যেমন ডাবের পানি, ফলের রস, লাস্যি ইত্যাদি খেতে পারেন।
○ ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন, কারণ এগুলো শরীরকে পানিশূন্য করতে পারে।

 

হিট স্ট্রোক হলে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। ছবি এআই

 

২. হালকা ও আরামদায়ক পোশাক পরা
○ ঢিলেঢালা ও হালকা রঙের কাপড় পরুন।
○ সূতি ও বাতাস চলাচল করে এমন কাপড় বেছে নিন।

৩. রোদ থেকে সুরক্ষা
○ সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত রোদে বের হওয়া এড়িয়ে চলুন।
○ বাইরে গেলে ছাতা বা টুপি ব্যবহার করুন।
○ রোদে বেশি সময় থাকলে ছায়াযুক্ত স্থানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিন।

৪. ঘরের পরিবেশ ঠান্ডা রাখা
○ দরজা-জানালা খুলে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করুন।
○ প্রয়োজন হলে ফ্যান বা এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।

৫. ভারী কাজ ও ব্যায়াম কমানো
○ প্রচণ্ড গরমে ভারী ব্যায়াম ও পরিশ্রম এড়িয়ে চলুন।
○ যদি ব্যায়াম করতেই হয়, তাহলে সকাল বা সন্ধ্যায় করুন।

 

হিট স্ট্রোক এড়াতে প্রচণ্ড গরমে ভারী ব্যায়াম ও পরিশ্রম এড়িয়ে চলুন। ছবি এআই

 

৬. সঠিক খাবার গ্রহণ
○ তরল ও সহজপাচ্য খাবার খান।
○ অতিরিক্ত মসলাযুক্ত ও ভাজাপোড়া খাবার কম খান।

৭. উচ্চ ঝুঁকির ব্যক্তিদের বিশেষ যত্ন
○ শিশু ও বৃদ্ধদের পর্যাপ্ত পানি পান করানোর ব্যবস্থা করুন।
○ যারা হৃদরোগ বা উচ্চ রক্তচাপের রোগী, তাদের বিশেষ যত্ন নেওয়া দরকার।

 

হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে করণীয়

যদি কেউ হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়, তবে দ্রুত তাকে চিকিৎসা দিতে হবে। করণীয়—
• আক্রান্ত ব্যক্তিকে ছায়াযুক্ত বা শীতল জায়গায় নিয়ে যান।
• অতিরিক্ত কাপড় খুলে দিন এবং ঠান্ডা পানি বা বরফের সাহায্যে শরীর ঠান্ডা করার চেষ্টা করুন।
• শরীরে ঠান্ডা পানির স্প্রে করুন বা ভেজা কাপড় ব্যবহার করুন।
• আক্রান্ত ব্যক্তি সচেতন থাকলে ঠান্ডা পানি পান করান।
• অবস্থা গুরুতর হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

 

সঠিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে হিট স্ট্রোক এড়ানো সম্ভব। ছবি এআই

 

সবশেষ

হিট স্ট্রোক একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা। তবে সচেতনতা এবং সঠিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এটি এড়ানো সম্ভব। প্রচণ্ড গরমে পর্যাপ্ত পানি পান করা, সঠিক পোশাক পরা এবং রোদ থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখার মাধ্যমে এই সমস্যা প্রতিরোধ করা যায়। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ এবং অসুস্থ ব্যক্তিদের প্রতি বেশি যত্ন নেওয়া উচিত। সতর্ক থাকুন, সুস্থ থাকুন।