ঢাকা ৩ বৈশাখ ১৪৩২, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫
English

জ্বর-কাশি হলেই এইচএমপিভি ভাইরাস আক্রান্ত, এটা ঠিক নয়

প্রকাশ: ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৫৯ পিএম
আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:২৬ এএম
জ্বর-কাশি হলেই এইচএমপিভি ভাইরাস আক্রান্ত, এটা ঠিক নয়
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

শীতে সাধারণত জ্বর, সর্দি-কাশির মতো বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ে। যা কয়েকদিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। যাদের ঠান্ডাজনিত অসুখ রয়েছে তাদের শীতে বাড়তি সতর্কতা না নিলে সমস্যা বেড়ে যায়। এই শীতে চীনে হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) সনাক্ত হয়েছে। যা বিশ্বের কয়েকটি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও কয়েকটি শিশুর মধ্যে এই ভাইরাস পাওয়া গেছে। ফলে অনেকটাই আতঙ্ক বিরাজ করছে মানুষের মধ্যে।

অনেকেই এই ভাইরাসকে করোনাভাইরাসের মতো আরেকটি ভাইরাস বলে অনুমান করছেন। আর করাটাই স্বাভাবিক। করোনার মতোই এই এইচএমপিভি ভাইরাস ছড়ায়। তবে অনেকেই জানেন না যে করোনা ভাইরাসের আগেই এইচএমপিভি ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বর, সর্দি বা কাশি হলেই যে এইচএমপিভি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। এমনটি অন্য ভাইরাস বা ফ্লু থেকেও হতে পারে। তাছাড়া বহুকাল ধরে শীতজনিত যেসব রোগ রয়েছে তাও হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) বলছে, ২০০১ সালে প্রথম এই ভাইরাস শনাক্ত হয়। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হয়তো আরও অনেক যুগ আগে থেকেই পৃথিবীতে এই ভাইরাসের অস্তিত্ব ছিল।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই ঘাবড়ানোর কিছু নেই। কেন না, চীন সরকার বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) কেউই এখনও এই ভাইরাস নিয়ে আনুষ্ঠানিক সতর্কতা জারি করেনি বা এই ভাইরাস ভয়াবহ আকার ধারণ করবে কি-না সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞরাও কোনো সতর্কবার্তা দেননি। তবে, রোগটি যাতে না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

এইচএমপিভি সংক্রমিত হলে সাধারণ জ্বর বা ফ্লুর মতো উপসর্গ দেখা যায়। এর সঙ্গে কাশি, জ্বর, নাক বন্ধ এবং শ্বাসকষ্ট পর্যন্ত হতে পারে। তাছাড়া চামড়ায় র‍্যাশ বা দানা দানা দেখা দিতে পারে।

সিডিসি বলছে, এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে যে কোন বয়সের মানুষের ব্রংকাইটিস বা নিউমোনিয়ার মতো অসুখ হতে পারে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এটি শিশু, বয়স্ক মানুষ এবং যাদের ইমিউিটি সিস্টেম দুর্বল তাদের মধ্যেই বেশি দেখা গেছে।

এইচএমপিভি ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পেতে তিন থেকে ছয় দিন সময় লেগে যায়। কিন্তু আক্রান্ত হলে ঠিক কতদিন ভুগবেন তা নির্ভর করে সংক্রমণের তীব্রতা ও আক্রান্ত ব্যক্তির শারীরিক সক্ষমতার ওপর।

বাংলাদেশের ভাইরোলজিস্টরাও জানিয়েছেন, এইচএমপিভি নিয়ে এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। এর বড় কারণ হচ্ছে, এটি কোভিডের মতো নতুন কোনো ভাইরাস নয়। ২০০১ সালে প্রথম এই ভাইরাস শনাক্ত হয়, এবং বাংলাদেশে ২০১৬ বা ২০১৭ সালের দিকে এই ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছিল। ভারত, চীনসহ বিভিন্ন দেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা ধাঁচের এই ভাইরাসে আগেও মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। সুতরাং কেউ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও তার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একে মোকাবিলা করতে পারবে বলে আশা করা যায়।

জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ভাইরোলজিস্ট মাহবুবা জামিল বিবিসিকে জানান, কোভিড ফুসফুসের যতটা ক্ষতিগ্রস্ত করে, এইচএমপিভিতে ততটা ক্ষতি হয় না। তবে শিশু, বয়স্ক, গর্ভবতী বা কঠিন কোনো রোগে আক্রান্তদের মধ্যে এই ভাইরাসের সংক্রমণ তীব্র হতে পারে।

এইচএমপিভি ভাইরাস ও করোনা ভাইরাসের মধ্যে মিল কতটুকু?

চীনের সেন্ট্রার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, এইচএমপিভি কোভিড-১৯এর মতোই একটি আরএনএ ভাইরাস। অর্থাৎ এর জিনের গঠন একই। এই ভাইরাসও শ্বাসযন্ত্রে আক্রমণ করে। তবে এরা একই পরিবারের ভাইরাস নয়। অর্থাৎ কোভিডের টিকা নেওয়া থাকলে বা আগে কখনো কোভিড হলেও আপনার এইচএমপিভির সংক্রমণ হতে পারে।

সিডিসি জানায়, ভাইরাসটি অন্তত ৬০ বছর আগেই ছড়িয়েছে।

এই ভাইরাস প্রতিরোধে করোনা মোকাবিলায় যেসব সতর্কতা নেওয়া হয়েছিল, একই ধরনের পদক্ষেপে এই ভাইরাস প্রতিরোধ করা সম্ভব।

অমিয়/

জেনে নিন দুধ চা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

প্রকাশ: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৪১ এএম
আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৩০ পিএম
জেনে নিন দুধ চা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
দিনে ১-২ কাপ দুধ চা গ্রহণ করা ভালো। ছবি এআই

দুধ চা আমাদের দেশে এক অতি পরিচিত পানীয়। অনেকেই সকালে ঘুম থেকে উঠে এক কাপ দুধ চা পান না করলে যেন দিন শুরু হয় না। আবার অনেকেই দিনের ক্লান্তি দূর করতে কিংবা অফিসের ব্যস্ত সময়ের ফাঁকে এক কাপ দুধ চা খেয়ে একটু স্বস্তি পান। তবে এই জনপ্রিয় পানীয়টির যেমন কিছু উপকারিতা রয়েছে, তেমনি কিছু অপকারিতাও রয়েছে, বিশেষ করে অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহণ করলে। আসুন জেনে নেই দুধ চা খাওয়ার কিছু উপকারিতা ও অপকারিতা।

দুধ চা খাওয়ার উপকারিতা

১. মানসিক সতেজতা বৃদ্ধি করে
দুধ চায় ক্যাফেইন থাকে যা মস্তিষ্ককে উদ্দীপিত করে এবং ক্লান্তি দূর করে মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে। এক কাপ দুধ চা সকালে কিংবা কাজের মাঝে মন সতেজ রাখতে সহায়ক।

 

২. হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা
দুধ চা হজমের জন্য উপকারী হতে পারে, বিশেষ করে যদি এর সঙ্গে আদা বা এলাচ যোগ করা হয়। এটি গ্যাস্ট্রিক সমস্যা কমাতে ও পেটের অস্বস্তি দূর করতে সাহায্য করতে পারে।

 

দুধে থাকা প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম একত্রে শরীরে শক্তি সরবরাহ করে। ছবি এআই

 

৩. ঠান্ডা-কাশিতে উপকার
দুধ চায়ে আদা, লবঙ্গ, দারুচিনি বা তুলসী পাতা যোগ করলে এটি ঠান্ডা-কাশি, গলা ব্যথা ইত্যাদিতে স্বস্তি দেয়। এটি ঘরোয়া উপায়ে আরামদায়ক চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহার হয়।

 

৪. শক্তির যোগান দেয়
দুধে থাকা প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম এবং চায়ের ক্যাফেইন একত্রে শরীরে শক্তি সরবরাহ করে। এটি বিশেষ করে সকালে ঘুম ঘুম ভাব কাটাতে কার্যকর।

 

৫. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য
চায়ের মধ্যে থাকে পলিফেনলস নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের কোষকে সুরক্ষা দেয় এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।

 

দুধ চায়ে ক্যাফেইন থাকে যা মস্তিষ্ককে উদ্দীপিত করে এবং ক্লান্তি দূর করে। ছবি এআই

 

৬. মানসিক চাপ কমায়
গবেষণায় দেখা গেছে, চায়ের মধ্যে থাকা কিছু উপাদান যেমন L-theanine, উদ্বেগ ও মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে।

 

দুধ চা খাওয়ার অপকারিতা


১. অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ
দুধ চা-তে থাকা ক্যাফেইন যদি অতিরিক্ত গ্রহণ করা হয়, তাহলে এটি অনিদ্রা, মাইগ্রেন, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া এবং উদ্বেগ বাড়াতে পারে। তাই দিনে ২-৩ কাপের বেশি চা খাওয়া ঠিক নয়।

 

দুধ চা অতিরিক্ত পান করলে হজমে সমস্যা হতে পারে। ছবি এআই

 

২. হজমে সমস্যা
দুধ চা অতিরিক্ত পান করলে হজমে সমস্যা হতে পারে, বিশেষ করে যদি খালি পেটে খাওয়া হয়। এতে গ্যাস, অ্যাসিডিটি বা পেট ফাঁপা হতে পারে।

 

৩. আয়রন শোষণে বাধা
চায়ে থাকা ট্যানিন নামক উপাদান শরীরে আয়রনের শোষণ কমিয়ে দেয়। যারা অ্যানিমিয়ায় ভুগছেন বা রক্তস্বল্পতার সমস্যা আছে, তাদের জন্য দুধ চা ক্ষতিকর হতে পারে।

 

৪. ওজন বাড়ার সম্ভাবনা
চা-তে যদি চিনি যোগ করা হয়, তবে তা অতিরিক্ত ক্যালরি সরবরাহ করে, যা ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। দুধেও কিছুটা চর্বি থাকে, যা অতিরিক্ত হলে শরীরের ওজন বাড়াতে পারে।

 

দুধ চা ও চিনি একত্রে পান করলে দাঁতের ওপর প্রভাব ফেলে। ছবি এআই

 

৫. হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট
বেশ কিছু গবেষণায় বলা হয়, নিয়মিত অতিরিক্ত দুধ চা পান করলে শরীরের হরমোনের স্বাভাবিক ভারসাম্য ব্যাহত হতে পারে। এটি মহিলাদের ক্ষেত্রে মেনস্ট্রুয়াল সাইকেলে প্রভাব ফেলতে পারে।

 

৬. দাঁতের ক্ষয়
দুধ চা ও চিনি একত্রে পান করলে দাঁতের ওপর প্রভাব ফেলে। দাঁতে প্লাক জমা, দাগ পড়া এবং দাঁতের এনামেল ক্ষয় হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

 

খাবারের অন্তত ১ ঘণ্টা আগে বা পরে চা পান করুন। ছবি এআই

 

অতিরিক্ত কিছু বিষয়

• দুধ চা তৈরি করার সময় যদি খুব বেশি ফুটিয়ে নেওয়া হয়, তবে চায়ের পুষ্টিগুণ কমে যেতে পারে এবং স্বাদও তেতো হয়ে যেতে পারে।
• যারা ল্যাক্টোজ ইনটলারেন্ট (দুধ সহ্য করতে পারেন না), তাদের জন্য দুধ চা ক্ষতিকর হতে পারে। তাদের ক্ষেত্রে দুধ ছাড়া চা ভালো বিকল্প হতে পারে।

 

দুধ চা উপভোগের পরামর্শ

• দিনে ১-২ কাপ দুধ চা গ্রহণ করুন।
• চিনি কম ব্যবহার করুন বা বিকল্প মিষ্টি উপাদান ব্যবহার করুন (যেমন: গুড়, খেজুরের গুঁড়)।
• চায়ের সঙ্গে আদা, এলাচ, দারুচিনি বা তুলসী পাতা যোগ করলে এটি স্বাস্থ্যকর হয়।
• খাবারের অন্তত ১ ঘণ্টা আগে বা পরে চা পান করুন, যাতে আয়রন শোষণে সমস্যা না হয়।

 

উপসংহার

দুধ চা আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। এটি যেমন ক্লান্তি দূর করে মনকে সতেজ রাখে, তেমনি অতিরিক্ত বা অনিয়ন্ত্রিত গ্রহণ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই দুধ চা পান করতে হবে পরিমিতভাবে এবং স্বাস্থ্যকর উপায়ে। সঠিক মাত্রায় দুধ চা পান করলে এটি আপনার দৈনন্দিন জীবনে উপকারী ভূমিকা রাখতে পারে।

কাঁচা আম খাওয়ার ১০টি উপকারিতা

প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:১৭ পিএম
আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:১৯ পিএম
কাঁচা আম খাওয়ার ১০টি উপকারিতা
কাঁচা আম শুধু সুস্বাদুই নয়, এটি শরীরের জন্যও অত্যন্ত উপকারী।

কাঁচা আম গ্রীষ্মকালে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি ফল। যা শুধু স্বাদেই অনন্য নয়, বরং স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এবার চলুন কাঁচা আম খাওয়ার ১০টি উপকারিতা বিস্তারিতভাবে জেনে নিই।

 

১. ভিটামিন সির চমৎকার উৎস
কাঁচা আম ভিটামিন সি-তে ভরপুর, যা আমাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এটি দেহে কোলাজেন উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক, যা ত্বক ও হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এ ছাড়া ভিটামিন সি সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে এবং সর্দি-কাশি কমাতে কার্যকর।

 

২. হজমশক্তি বৃদ্ধি করে
কাঁচা আমে থাকা এনজাইম হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এটি পিত্তরসের উৎপাদন বাড়ায়, যা চর্বি ও প্রোটিনের পরিপাক প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে। যাদের বদহজম, গ্যাস বা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা আছে, তাদের জন্য কাঁচা আম খুবই উপকারী।

 

৩. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
যদিও পাকা আমে বেশি চিনি থাকে, তবে কাঁচা আম তুলনামূলকভাবে কম মিষ্টি এবং এতে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। এটি ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।

 

কাঁচা আমে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে, যা রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায়।

 

৪. হিটস্ট্রোক প্রতিরোধ করে
গ্রীষ্মকালে তীব্র গরমে শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি ও লবণ বেরিয়ে গিয়ে ডিহাইড্রেশন হতে পারে। কাঁচা আমের শরবত (আম পানা) শরীর ঠাণ্ডা রাখে এবং লবণের ভারসাম্য ঠিক রাখতে সাহায্য করে, যা হিটস্ট্রোক প্রতিরোধে কার্যকর।

 

৫. রক্তস্বল্পতা দূর করে
কাঁচা আমে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে, যা রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। এটি বিশেষ করে মহিলাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। কারণ মাসিক ও গর্ভধারণের সময়ে আয়রনের প্রয়োজনীয়তা বেশি থাকে।

 

৬. ওজন কমাতে সহায়ক
কাঁচা আমে ক্যালোরি কম এবং ফাইবার বেশি থাকে, যা দীর্ঘক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে ও ক্ষুধা কমায়। এ ছাড়া এটি বিপাক ক্রিয়া দ্রুত ও ফ্যাট বার্নিং প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। ফলে ওজন কমাতে সাহায্য করে।

 

৭. লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করে
কাঁচা আম লিভারের জন্য খুবই উপকারী। এটি লিভার এনজাইম সক্রিয় করতে সাহায্য করে এবং টক্সিন দূর করে। ফলে লিভারের কার্যকারিতা ভালো হয়। এটি বিশেষ করে ফ্যাটি লিভার বা যকৃতের সমস্যা থাকলে কার্যকর।

 

৮. ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়
কাঁচা আমে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন এ ও সি থাকে, যা ত্বককে উজ্জ্বল ও সুস্থ রাখে। এটি ব্রণ ও ত্বকের দাগ কমায় এবং বয়সের ছাপ দূর করতে সাহায্য করে।

 

কাঁচা আম লিভারের জন্য খুবই উপকারী।

 

৯. হাড় মজবুত করে
কাঁচা আমে থাকা ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে এবং হাড় মজবুত রাখতে সাহায্য করে। এটি অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

 

১০. রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
কাঁচা আমের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিনসমূহ শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে বিভিন্ন সংক্রমণ ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।

 

যেভাবে খাবেন
কাঁচা আম খাওয়ার বিভিন্ন উপায় রয়েছে, যা স্বাদ ও পুষ্টিগুণ বজায় রেখে খাওয়া যায়। চলুন জেনে নিই কাঁচা আম খাওয়ার সেরা কয়েকটি উপায়—

• সরাসরি লবণ-মরিচ মাখিয়ে
• কাঁচা আমের আচার বানিয়ে
• আম পানা বা শরবত বানিয়ে
• সালাদে কাঁচা আম দিয়ে
• ডাল বা তরকারিতে দিয়ে
• স্মুদি বা জুস করে
• আমের চিপস বা শুকনো আম বানিয়ে
• ভর্তা বা গুড় দিয়ে মাখিয়ে

 

উপসংহার
কাঁচা আম শুধু সুস্বাদুই নয়, এটি শরীরের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। এটি হজমশক্তি বাড়ানো থেকে শুরু করে ত্বকের যত্ন, রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই সুস্থ থাকার জন্য গরমের দিনে নিয়মিত পরিমাণমতো কাঁচা আম খাওয়া যেতে পারে।

এই গরমে হিট স্ট্রোক থেকে সাবধান

প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:২৮ পিএম
আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৪৭ পিএম
এই গরমে হিট স্ট্রোক থেকে সাবধান
হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে প্রচুর পানি পান করা উচিত। ছবি এআই

গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড গরমে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের স্বাভাবিক ক্ষমতা ব্যাহত হলে হিট স্ট্রোক ঘটে। এটি একটি প্রাণঘাতী অবস্থা হতে পারে যদি তাৎক্ষণিক চিকিৎসা না করা হয়। হিট স্ট্রোক সাধারণত দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ তাপমাত্রার সংস্পর্শে থাকার ফলে ঘটে এবং এটি শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা দ্রুত ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার বেশি পর্যন্ত বাড়িয়ে তোলে। এতে শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

 

হিট স্ট্রোকের কারণ

হিট স্ট্রোক সাধারণত উচ্চ তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতার কারণে হয়। এর প্রধান কারণগুলো হলো—
• বর্ধিত তাপমাত্রায় দীর্ঘ সময় থাকা: যদি কেউ দীর্ঘক্ষণ রোদে বা গরম পরিবেশে থাকে, তাহলে শরীরের স্বাভাবিক শীতলীকরণ প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে।
• পর্যাপ্ত পানি না খাওয়া: ঘামের মাধ্যমে শরীরের অতিরিক্ত তাপ দূর হয়, তবে পর্যাপ্ত পানি না খেলে শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়ে এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
• গরম ও আর্দ্র আবহাওয়া: বেশি আর্দ্র আবহাওয়ায় ঘাম দ্রুত শুকিয়ে যায় না, ফলে শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে।
• শারীরিক পরিশ্রম করা: গরমের মধ্যে অতিরিক্ত পরিশ্রম করলে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
• গরম পোশাক পরা: মোটা ও আঁটসাঁট পোশাক শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে তোলে।
• বয়স ও শারীরিক অবস্থা: শিশু, বৃদ্ধ এবং হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা স্থূলতার মতো শারীরিক সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিরা হিট স্ট্রোকের ঝুঁকিতে বেশি থাকে।

 

হিট স্ট্রোক সাধারণত উচ্চ তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতার কারণে হয়। ছবি এআই

 

হিট স্ট্রোকের লক্ষণ

হিট স্ট্রোকের কিছু সাধারণ লক্ষণ নিম্নরূপ—
• শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি (১০৪°F বা তার বেশি)।
• অতিরিক্ত ঘাম বন্ধ হয়ে যাওয়া (শরীর শুষ্ক হয়ে যায়)।
• তীব্র মাথাব্যথা ও মাথা ঘোরা।
• দৃষ্টিবিভ্রম ও বিভ্রান্তি।
• বমি বমি ভাব ও বমি হওয়া।
• হৃৎপিণ্ডের গতি বৃদ্ধি।
• মাংসপেশির খিঁচুনি বা দুর্বলতা।
• জ্ঞান হারানো বা অচেতন হয়ে যাওয়া।

 

হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায়

হিট স্ট্রোক প্রতিরোধের জন্য কিছু কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে—
১. পানি ও তরল গ্রহণ
○ প্রচুর পানি পান করা উচিত, বিশেষ করে গরমের সময়।
○ তরলযুক্ত খাবার যেমন ডাবের পানি, ফলের রস, লাস্যি ইত্যাদি খেতে পারেন।
○ ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন, কারণ এগুলো শরীরকে পানিশূন্য করতে পারে।

 

হিট স্ট্রোক হলে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। ছবি এআই

 

২. হালকা ও আরামদায়ক পোশাক পরা
○ ঢিলেঢালা ও হালকা রঙের কাপড় পরুন।
○ সূতি ও বাতাস চলাচল করে এমন কাপড় বেছে নিন।

৩. রোদ থেকে সুরক্ষা
○ সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত রোদে বের হওয়া এড়িয়ে চলুন।
○ বাইরে গেলে ছাতা বা টুপি ব্যবহার করুন।
○ রোদে বেশি সময় থাকলে ছায়াযুক্ত স্থানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিন।

৪. ঘরের পরিবেশ ঠান্ডা রাখা
○ দরজা-জানালা খুলে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করুন।
○ প্রয়োজন হলে ফ্যান বা এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।

৫. ভারী কাজ ও ব্যায়াম কমানো
○ প্রচণ্ড গরমে ভারী ব্যায়াম ও পরিশ্রম এড়িয়ে চলুন।
○ যদি ব্যায়াম করতেই হয়, তাহলে সকাল বা সন্ধ্যায় করুন।

 

হিট স্ট্রোক এড়াতে প্রচণ্ড গরমে ভারী ব্যায়াম ও পরিশ্রম এড়িয়ে চলুন। ছবি এআই

 

৬. সঠিক খাবার গ্রহণ
○ তরল ও সহজপাচ্য খাবার খান।
○ অতিরিক্ত মসলাযুক্ত ও ভাজাপোড়া খাবার কম খান।

৭. উচ্চ ঝুঁকির ব্যক্তিদের বিশেষ যত্ন
○ শিশু ও বৃদ্ধদের পর্যাপ্ত পানি পান করানোর ব্যবস্থা করুন।
○ যারা হৃদরোগ বা উচ্চ রক্তচাপের রোগী, তাদের বিশেষ যত্ন নেওয়া দরকার।

 

হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে করণীয়

যদি কেউ হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়, তবে দ্রুত তাকে চিকিৎসা দিতে হবে। করণীয়—
• আক্রান্ত ব্যক্তিকে ছায়াযুক্ত বা শীতল জায়গায় নিয়ে যান।
• অতিরিক্ত কাপড় খুলে দিন এবং ঠান্ডা পানি বা বরফের সাহায্যে শরীর ঠান্ডা করার চেষ্টা করুন।
• শরীরে ঠান্ডা পানির স্প্রে করুন বা ভেজা কাপড় ব্যবহার করুন।
• আক্রান্ত ব্যক্তি সচেতন থাকলে ঠান্ডা পানি পান করান।
• অবস্থা গুরুতর হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

 

সঠিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে হিট স্ট্রোক এড়ানো সম্ভব। ছবি এআই

 

সবশেষ

হিট স্ট্রোক একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা। তবে সচেতনতা এবং সঠিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এটি এড়ানো সম্ভব। প্রচণ্ড গরমে পর্যাপ্ত পানি পান করা, সঠিক পোশাক পরা এবং রোদ থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখার মাধ্যমে এই সমস্যা প্রতিরোধ করা যায়। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ এবং অসুস্থ ব্যক্তিদের প্রতি বেশি যত্ন নেওয়া উচিত। সতর্ক থাকুন, সুস্থ থাকুন।

তরমুজ খাওয়ার এক ডজন উপকারিতা

প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৫৬ পিএম
আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৫৯ পিএম
তরমুজ খাওয়ার এক ডজন উপকারিতা
তরমুজে থাকা ভিটামিন বি৬, ভিটামিন সি এবং কার্বোহাইড্রেট শরীরকে দ্রুত শক্তি দেয়। ছবি এআই

তরমুজ একটি জনপ্রিয় গ্রীষ্মকালীন ফল, যা সুস্বাদু এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর। এটি ৯২ শতাংশ জলীয় উপাদানসমৃদ্ধ হওয়ায় শরীরকে আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে এবং তাপপ্রবাহ থেকে রক্ষা করে। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য উপকারী উপাদান রয়েছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আসুন, তরমুজ খাওয়ার এক ডজন উপকারিতা সম্পর্কে জানি-

 

১. শরীরকে হাইড্রেট রাখে
তরমুজে প্রচুর পানি থাকায় এটি শরীরের পানিশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে। গরমের দিনে তরমুজ খেলে শরীরে পর্যাপ্ত জলীয় উপাদান বজায় থাকে, যা ক্লান্তি ও দুর্বলতা কমায়।

 

তরমুজে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও পানি আছে। ছবি এআই

 

২. হজমশক্তি বাড়ায়
তরমুজে ফাইবার ও পানি দুটোই প্রচুর পরিমাণে থাকে, যা হজমশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে কার্যকরী এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।

 

৩. রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
তরমুজে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। এটি শরীরকে বিভিন্ন ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে।

 

তরমুজের ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ছবি এআই

 

৪. হার্টের জন্য উপকারী
তরমুজে ‘সাইট্রুলিন’ নামক অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এ ছাড়া, এতে থাকা ‘লাইকোপিন’নামক একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক। এ ছাড়া তরমুজে থাকা পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। 


৫. ওজন কমাতে সাহায্য করে
যারা ওজন কমাতে চান, তাদের জন্য তরমুজ একটি ভালো খাবার। এটি কম ক্যালোরিযুক্ত কিন্তু দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে। তরমুজে থাকা পানি ও ফাইবার ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে এবং বারবার খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমায়।

 

৬. ত্বকের জন্য উপকারী
তরমুজে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়, বলিরেখা দূর করে এবং বয়সের ছাপ কমায়। এ ছাড়া, এতে থাকা পানি ত্বককে আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে।

 

তরমুজে থাকা বিটা-ক্যারোটিন এবং ভিটামিন এ চোখের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ছবি এআই

 

৭. চোখের জন্য ভালো
তরমুজে থাকা বিটা-ক্যারোটিন এবং ভিটামিন এ চোখের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি রাতকানা রোগপ্রতিরোধ করতে সাহায্য করে এবং চোখের কোষের ক্ষতি রোধ করে।

 

৮. কিডনির কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে
তরমুজ প্রাকৃতিক ডিউরেটিক হিসেবে কাজ করে, যা কিডনি পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। এটি শরীর থেকে অতিরিক্ত টক্সিন বের করতে সাহায্য করে এবং কিডনির কার্যকারিতা উন্নত করে।

 

তরমুজ দ্রুত শক্তি পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে। ছবি এআই

 

৯. পেশির ব্যথা কমায়
তরমুজে থাকা ‘সাইট্রুলিন’নামক উপাদান পেশির ব্যথা ও ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে। যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন, তাদের জন্য তরমুজ একটি আদর্শ খাবার। কারণ এটি দ্রুত শক্তি পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে।

 

১০. ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়
তরমুজে থাকা লাইকোপিন একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। এটি বিশেষ করে প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি কমানোর ক্ষেত্রে কার্যকরী।

 

তরমুজ কিডনি পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। ছবি এআই

 

১১. মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে
তরমুজে থাকা ‘সেরোটোনিন’হরমোন মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে এবং মেজাজ ভালো রাখতে সাহায্য করে। এটি উদ্বেগ ও হতাশা কমাতেও সহায়ক হতে পারে।

 

১২. প্রাকৃতিক এনার্জি বুস্টার
তরমুজে থাকা ভিটামিন বি৬, ভিটামিন সি এবং কার্বোহাইড্রেট শরীরকে দ্রুত শক্তি দেয়, যা কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

 

উপসংহার
তরমুজ শুধু সুস্বাদু ফলই নয়, এটি নানা ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করে। শরীরকে আর্দ্র রাখা থেকে শুরু করে হৃদরোগ প্রতিরোধ, ত্বক ও চোখের যত্ন এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করার মতো অসংখ্য গুণ রয়েছে এই ফলে। তাই নিয়মিত তরমুজ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে শরীর সুস্থ ও সতেজ থাকবে।

যে অভ্যাসগুলো আমাদের আয়ু বাড়িয়ে দেয়

প্রকাশ: ০৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:২১ পিএম
আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২৫, ১০:১৯ পিএম
যে অভ্যাসগুলো আমাদের আয়ু বাড়িয়ে দেয়
দীর্ঘ ও সুস্থ জীবন পেতে হলে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ছবি এআই

জীবনযাত্রা ও অভ্যাসের ওপর নির্ভর করে আমাদের আয়ু। কিছু অভ্যাস ও জীবনধারা গ্রহণ করলে আমরা দীর্ঘ ও সুস্থ জীবন উপভোগ করতে পারি। আধুনিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, কিছু নির্দিষ্ট কাজ ও অভ্যাস মানুষের গড় আয়ু বাড়াতে সাহায্য করে। এখানে আমরা এমন কিছু কার্যকর পন্থা জানাব, যা আমাদের আয়ু বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে।

 

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখে। ছবি এআই


সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখে এবং দীর্ঘায়ুর সম্ভাবনা বাড়ায়। খাদ্যাভ্যাসের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
• সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল গ্রহণ
শাকসবজি ও ফলমূলে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন ও খনিজ উপাদান থাকে যা দেহকে রোগমুক্ত রাখতে সাহায্য করে। এগুলো দেহের কোষগুলোর অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমিয়ে আয়ু বাড়াতে সহায়ক।
• প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার
সঠিক পরিমাণে মাছ, বাদাম, ডাল ও অন্যান্য প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করলে শরীর সুস্থ থাকে এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
• কম ক্যালোরিযুক্ত খাবার গ্রহণ
অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ করলে স্থূলতা, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। ফলে কম পরিমাণে ক্যালোরিযুক্ত খাবার গ্রহণ করলে আয়ু বাড়তে পারে।

 

নিয়মিত ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রম

শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়াম আমাদের শরীরের কার্যকারিতা বাড়ায়। ছবি এআই


শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়াম আমাদের শরীরের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে।
• হাঁটা ও দৌড়ানো
প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০-৪৫ মিনিট হাঁটা বা দৌড়ালে হৃদযন্ত্র ভালো থাকে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং আয়ু বাড়ে।
• যোগব্যায়াম ও মেডিটেশন
যোগব্যায়াম ও মেডিটেশন মানসিক চাপ কমায় এবং শরীরকে সুস্থ রাখে, যা দীর্ঘজীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
• ওয়েট লিফটিং ও স্ট্রেন্থ ট্রেনিং
পেশির শক্তি ধরে রাখার জন্য নিয়মিত ওয়েট লিফটিং ও স্ট্রেন্থ ট্রেনিং করা জরুরি। এটি হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও বার্ধক্যজনিত দুর্বলতা প্রতিরোধ করে।

 

মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখা

বন্ধু ও পরিবারের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখা মানসিক শান্তি এনে দেয়। ছবি এআই


শুধু শারীরিক স্বাস্থ্যই নয়, মানসিক স্বাস্থ্যও দীর্ঘায়ুর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
• ইতিবাচক মানসিকতা
মানসিকভাবে সুখী থাকা এবং ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখলে স্ট্রেস কম হয় এবং আয়ু বাড়ে।
• সামাজিক সংযোগ বজায় রাখা
বন্ধু ও পরিবারের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখা মানসিক শান্তি এনে দেয় এবং মানসিক চাপ কমিয়ে দেয়।
• পর্যাপ্ত ঘুম
প্রতিদিন ৭-৯ ঘণ্টা ঘুমানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কম ঘুম হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও অন্যান্য রোগের ঝুঁকি বাড়ায়, যা আয়ুর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

 

খারাপ অভ্যাস বর্জন

ধূমপান ও মাদক সেবন ক্যানসার, হৃদরোগ ও ফুসফুসজনিত নানা রোগের কারণ হয়ে ওঠে। ছবি এআই


কিছু অভ্যাস মানুষের আয়ু কমিয়ে দেয়। সেগুলো এড়িয়ে চললে দীর্ঘায়ু লাভ করা সম্ভব।
• ধূমপান ও মাদক সেবন পরিহার
ধূমপান ও মাদক সেবন ক্যানসার, হৃদরোগ ও ফুসফুসজনিত নানা রোগের কারণ হয়ে ওঠে।
• অ্যালকোহল পরিহার
অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ লিভার, হৃদপিণ্ড ও মস্তিষ্কের ক্ষতি করতে পারে।
• অস্বাস্থ্যকর খাদ্য এড়িয়ে চলা
অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত, প্রক্রিয়াজাত ও চিনিসমৃদ্ধ খাবার এড়িয়ে চললে সুস্থ থাকা সম্ভব।

 

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা

উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস আয়ু কমিয়ে দিতে পারে। ছবি এআই


নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করলে বিভিন্ন রোগ প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়ে, যা চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময় করা সহজ হয়।
• রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস পরীক্ষা
উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস আয়ু কমিয়ে দিতে পারে, তাই নিয়মিত পরীক্ষা করা প্রয়োজন।
• হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য পরীক্ষা
হার্টের সমস্যা আগে থেকে ধরতে পারলে বড় বিপদ এড়ানো সম্ভব।
• ক্যানসার স্ক্রিনিং
বিশেষত ৪০ বছরের পর নিয়মিত ক্যানসার স্ক্রিনিং করানো উচিত।

 

প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে সংযোগ

প্রাকৃতিক পরিবেশে বেশি সময় কাটানো মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। ছবি এআই


প্রাকৃতিক পরিবেশে বেশি সময় কাটানো মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
• প্রকৃতির মাঝে হাঁটা
গাছগাছালি ও খোলা বাতাসে হাঁটলে শরীর ও মন ভালো থাকে।
• সূর্যালোক গ্রহণ
সঠিক পরিমাণে সূর্যালোক গ্রহণ করলে শরীরে ভিটামিন ডি তৈরি হয়, যা হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

 

মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ

নিয়মিত ধ্যান ও শ্বাসব্যায়াম করলে স্ট্রেস কমে। ছবি এআই


অতিরিক্ত মানসিক চাপ দেহের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত করে ও আয়ু কমিয়ে দেয়।
• ধ্যান ও শ্বাসব্যায়াম
নিয়মিত ধ্যান ও শ্বাসব্যায়াম করলে স্ট্রেস কমে এবং মানসিক শান্তি পাওয়া যায়।
• সময় ব্যবস্থাপনা
সঠিকভাবে কাজের সময় ও বিশ্রামের সময় ভাগ করলে মানসিক চাপ কমে যায়।

 

উপসংহার
দীর্ঘ ও সুস্থ জীবন পেতে হলে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক প্রশান্তি ও খারাপ অভ্যাস পরিহার করলে আমাদের আয়ু বাড়তে পারে। এজন্য ছোট ছোট পরিবর্তন করেও আমরা সুস্থ ও দীর্ঘ জীবন উপভোগ করতে পারি।