ঢাকা ৫ চৈত্র ১৪৩১, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫
English

মুখের দুর্গন্ধ দূর করার ১০ ঘরোয়া উপায়

প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:৩৪ পিএম
আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২৫, ০১:০১ পিএম
মুখের দুর্গন্ধ দূর করার ১০ ঘরোয়া উপায়
আদার রস মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে কার্যকরী

নানা কারণে মুখে দুর্গন্ধ (Bad Breath) হয়। মুখে গন্ধ থাকলে অন্যের সামনে গিয়ে লজ্জায় পড়তে হয়। তাই এই গন্ধ দূর করা জরুরি। চাইলে সহজেই ঘরোয়া উপায়ে দুর্গন্ধ দূর করা যায়। চলুন সেই কার্যকরী ঘরোয়া উপায়গুলো দেখে নেই।

১. লবঙ্গ মুখে রাখা
লবঙ্গের অ্যান্টিসেপ্টিক ও ব্যাকটেরিয়া-নাশক গুণ আছে, যা মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে। দিনে ২-৩ বার একটি করে লবঙ্গ মুখে রাখলে অথবা চিবিয়ে খেলে ভালো ফল পাবেন।

 

২. লেবু ও মধুর মিশ্রণ
গরম পানিতে এক চামচ মধু ও অর্ধেক লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন। লেবুর অ্যাসিড মুখের ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সাহায্য করে।

লেবুর অ্যাসিড মুখের ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সাহায্য করে

 

৩. আদার রস
এক চা-চামচ আদার রস সামান্য পানির সঙ্গে মিশিয়ে কুলকুচি করুন। এটি মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে কার্যকরী।

 

৪. পানির পরিমাণ বৃদ্ধি করুন
প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। পর্যাপ্ত পানি পান করলে মুখের লালা উৎপাদন বাড়ে, যা দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া কমাতে সাহায্য করে।

 

৫. দারুচিনি ও মধু
গরম পানিতে এক চা-চামচ মধু ও অল্প পরিমাণ দারুচিনি গুঁড়া মিশিয়ে পান করুন। এটি মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে সহায়ক।

পানি পান করলে মুখের লালা উৎপাদন বাড়ে, ফলে দুর্গন্ধ কমে

 

৬. তুলসী পাতা চিবানো
তুলসী পাতা মুখের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে সহায়তা করে। প্রতিদিন ২-৩টি তুলসী পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন।

 

৭. খাবারের পর দই খান
দইয়ে থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়া (প্রোবায়োটিক) মুখের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়াকে কমাতে সহায়তা করে, যা দুর্গন্ধ প্রতিরোধে কার্যকরী।

 

৮. পুদিনা পাতা চিবানো বা পুদিনার পানি পান করা
পুদিনা পাতা মুখে ঠাণ্ডা অনুভূতি এনে দেয় ও মুখের ব্যাকটেরিয়া দূর করে দুর্গন্ধ কমায়।

 

৯. নারিকেল তেল দিয়ে অয়েল পুলিং
সকালে খালি পেটে ১ চা-চামচ নারিকেল তেল মুখে নিয়ে কুলকুচি করুন। তার পর কুলি করে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এটি মুখের ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সাহায্য করে।

দিনে অন্তত দুইবার ব্রাশ করলে দুর্গন্ধ কমে

 

১০. নিয়মিত দাঁত ও জিহ্বা পরিষ্কার করুন
দিনে অন্তত দুইবার ব্রাশ করুন। জিহ্বা পরিষ্কার করতে টং ক্লিনার ব্যবহার করুন। ফ্লস ও মাউথওয়াশ ব্যবহার করুন।

 

এই ঘরোয়া উপায়গুলো নিয়মিত অনুসরণ করলে মুখের দুর্গন্ধ অনেকাংশে কমে যাবে। তবে দীর্ঘদিন ধরে সমস্যা থাকলে ডেন্টিস্টের পরামর্শ নেওয়া ভালো।

যে খাবারগুলো মন ভালো রাখতে সাহায্য করে

প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৫, ০১:০১ পিএম
আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৫, ০১:১০ পিএম
যে খাবারগুলো মন ভালো রাখতে সাহায্য করে
সঠিক খাবার আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করে, বিষণ্নতা কমায় এবং মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। ছবি এআই

আমাদের মনের অবস্থা ও আবেগের সঙ্গে খাদ্যের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। কিছু নির্দিষ্ট খাবার আমাদের মস্তিষ্কে সেরোটোনিন, ডোপামিন এবং এন্ডোরফিনের মতো ‘হ্যাপি হরমোন’ বাড়িয়ে মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। এ ছাড়া, পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ খাবার মানসিক চাপ কমিয়ে মনকে প্রশান্ত করে। আসুন, জেনে নেওয়া যাক কোন কোন খাবার মন ভালো রাখতে সহায়ক—

ডার্ক চকলেট
ডার্ক চকলেটে প্রচুর পরিমাণে ফ্ল্যাভোনয়েড, ক্যাফেইন এবং থিওব্রোমিন থাকে, যা মস্তিষ্কে সেরোটোনিনের মাত্রা বাড়িয়ে মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। এটি দেহে এন্ডোরফিন নিঃসরণ ঘটায়, যা তাৎক্ষণিকভাবে আনন্দের অনুভূতি সৃষ্টি করে।

 

কলা
কলায় রয়েছে ভিটামিন বি৬, যা মস্তিষ্কে সেরোটোনিন উৎপাদন বাড়ায়। এটি মানসিক অবসাদ দূর করতে সাহায্য করে এবং মনকে ফুরফুরে করে তোলে। এ ছাড়া, কলায় থাকা প্রাকৃতিক চিনি এবং ফাইবার শরীরে শক্তি জোগায় ও ক্লান্তি দূর করে।

 

বাদাম ও বীজজাতীয় খাবার
আখরোট, কাজু বাদাম, পেস্তা বাদাম, কাঠ বাদাম এবং সূর্যমুখীর বীজে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ম্যাগনেসিয়াম, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। এগুলো স্ট্রেস হরমোন কমিয়ে দেয় এবং মনকে প্রশান্ত করে।

বাদামে আছে ম্যাগনেসিয়াম, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। ছবি এআই

 

দই ও অন্যান্য ফার্মেন্টেড খাবার
দইয়ে রয়েছে প্রোবায়োটিক, যা অন্ত্রের সুস্থতা বজায় রাখে এবং মস্তিষ্কের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করে মুড ভালো রাখতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া কিমচি, কেফির ও কম্বুচার মতো ফার্মেন্টেড খাবারও মন ভালো রাখতে সাহায্য করে।

 

ওটস ও অন্যান্য পূর্ণ শস্য
ওটস ও ব্রাউন রাইসের মতো পূর্ণ শস্য ধীরে ধীরে গ্লুকোজ সরবরাহ করে, যা মস্তিষ্কের শক্তির উৎস। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং মন ভালো রাখতে সহায়ক হয়।

 

মাছ, বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ
স্যামন, টুনা, সার্ডিন, ট্রাউট এবং ম্যাকেরেলের মতো মাছ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড-সমৃদ্ধ, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত মাছ খেলে বিষণ্নতার ঝুঁকি কমে যায়।

সামুদ্রিক মাছ মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। ছবি এআই

 

ডিম
ডিমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন বি, ওমেগা-৩ এবং কোলিন থাকে, যা স্নায়ুতন্ত্রকে সুস্থ রাখে ও মানসিক চাপ কমায়। এটি মনোযোগ বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে।

 

কমলা ও অন্যান্য সাইট্রাস ফল
কমলা, লেবু ও মাল্টার মতো ফল ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ, যা কর্টিসল (স্ট্রেস হরমোন) কমিয়ে মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। এগুলোতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে।

 

গ্রিন টি
গ্রিন টিতে থিয়ানিন নামক অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে, যা মানসিক চাপ কমাতে ও মস্তিষ্ককে রিল্যাক্স করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টও আছে, যা মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়।

গ্রিন টির থিয়ানিন মস্তিষ্ককে রিল্যাক্স করতে সাহায্য করে। ছবি এআই

 


খেজুর ও মধু
খেজুর প্রাকৃতিক মিষ্টি, যা রক্তে শর্করার ভারসাম্য বজায় রাখে এবং তাৎক্ষণিকভাবে মস্তিষ্কে শক্তি জোগায়। মধুতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।

 

দারুচিনি ও হলুদ
হলুদে কারকুমিন নামক শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান থাকে, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়িয়ে বিষণ্নতা কমায়। দারুচিনি মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে মানসিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

 

ব্রকোলি ও অন্যান্য সবুজ শাকসবজি
ব্রকোলি, পালং শাক, সরিষা শাক ও অন্যান্য সবুজ শাকসবজিতে প্রচুর ফোলেট ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে, যা বিষণ্নতা কমিয়ে মনকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে।

ব্রকোলি বিষণ্নতা কমায়। ছবি এআই

 

বিট
বিট শর্করা ও ফোলেট-সমৃদ্ধ, যা মস্তিষ্কে অক্সিজেনের প্রবাহ বাড়িয়ে মুড উন্নত করে। এটি ক্লান্তি দূর করে ও মন ভালো রাখে।

 

আঙুর ও বেরিজাতীয় ফল
স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, ব্ল্যাকবেরি ও রাস্পবেরির মতো বেরিতে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, যা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে ও স্মৃতিশক্তি বাড়ায়।

আঙুরের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। ছবি এআই

 

কফি
ক্যাফেইনযুক্ত কফি মানসিক উদ্দীপনা সৃষ্টি করে এবং মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। এটি ডোপামিন নিঃসরণ বাড়িয়ে মানসিক প্রশান্তি দেয়। তবে অতিরিক্ত কফি খাওয়া ঠিক নয়। কারণ এটি উদ্বেগ বাড়াতে পারে।

 

দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার
দুধে ট্রিপটোফান নামক অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে, যা সেরোটোনিন উৎপাদন বাড়ায় এবং মস্তিষ্ককে রিল্যাক্স করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া, এতে থাকা ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।

 

টমেটো
টমেটোতে প্রচুর লাইকোপিন ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা মানসিক চাপ কমিয়ে মুড ভালো রাখতে সাহায্য করে। এটি মস্তিষ্কের প্রদাহ কমাতেও কার্যকর।

টমেটোতে প্রচুর লাইকোপিন রয়েছে, যা মুড ভালো রাখে। ছবি এআই

 

খেসারি ও ছোলার ডাল
এগুলোর মধ্যে থাকা প্রোটিন ও বি-ভিটামিন মস্তিষ্কের সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং মানসিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখে।

 

মিষ্টি আলু
মিষ্টি আলুতে রয়েছে প্রচুর বিটা-ক্যারোটিন ও ফাইবার, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রেখে মানসিক চাপ কমায়।

 

মসলা ও ভেষজ চা
পুদিনা চা, ক্যামোমাইল চা ও আদা চা মানসিক চাপ কমাতে ও ঘুমের মান উন্নত করতে সাহায্য করে, যা মন ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ।

আদা চা মানসিক চাপ কমাতে ও ঘুমের মান উন্নত করতে সাহায্য করে। ছবি এআই

 

উপসংহার
সুস্থ ও আনন্দময় জীবনযাপনের জন্য পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক খাবার আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করে, বিষণ্নতা কমায় এবং মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। তাই খাদ্যাভ্যাসে এই স্বাস্থ্যকর খাবারগুলো যুক্ত করে আমরা সহজেই মানসিক প্রশান্তি লাভ করতে পারি।

সিঁড়ি ব্যবহার করলে হাঁপিয়ে যান? কারণ জেনে নিন

প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০২৫, ১২:৪২ পিএম
আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২৫, ০১:১৭ পিএম
সিঁড়ি ব্যবহার করলে হাঁপিয়ে যান? কারণ জেনে নিন
সিঁড়ি বেয়ে উঠলে হাঁটার চেয়ে অনেক বেশি শক্তি ব্যয় হয়। ছবি এআই

সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় অনেক মানুষ দ্রুত হাঁপিয়ে যায়, যা শারীরিক সক্ষমতা ও শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যবস্থার কার্যকারিতার ওপর নির্ভর করে। এই পরিস্থিতির পেছনে বেশ কয়েকটি শারীরবৃত্তীয় এবং জীবনধারা-সংক্রান্ত কারণ রয়েছে। 

১. শক্তির চাহিদা ও অক্সিজেন গ্রহণ
সিঁড়ি বেয়ে ওঠা একটি উচ্চমাত্রার শারীরিক কার্যক্রম। হাঁটার চেয়ে এটি অনেক বেশি শক্তি ব্যয় করে, কারণ এতে শরীরকে তার স্বাভাবিক মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বিপরীতে কাজ করতে হয়।
▶ অক্সিজেনের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি
শরীরের পেশিগুলো যখন বেশি কাজ করে, তখন সেগুলোর বেশি অক্সিজেন প্রয়োজন হয়। আমাদের হৃৎপিণ্ড দ্রুত রক্ত প্রবাহিত করে এবং ফুসফুস বেশি অক্সিজেন গ্রহণ করে এই চাহিদা পূরণের জন্য। ফলে শ্বাস-প্রশ্বাসের হার দ্রুত বেড়ে যায় এবং আমরা হাঁপিয়ে যাই।
▶ এনার্জি প্রোডাকশন ও মেটাবলিজম
আমাদের দেহ প্রধানত অ্যারোবিক (অক্সিজেননির্ভর) এবং অ্যানারোবিক (অক্সিজেনবিহীন) উপায়ে শক্তি উৎপাদন করে। দ্রুতগতিতে সিঁড়ি বেয়ে ওঠার ফলে দেহ কখনো কখনো অ্যারোবিক উপায়ে পর্যাপ্ত শক্তি উৎপাদন করতে পারে না এবং ল্যাকটিক অ্যাসিড তৈরি হয়, যা পেশির ক্লান্তি ও হাঁপিয়ে যাওয়ার কারণ হতে পারে।

 

২. ফিটনেস ও শারীরিক সক্ষমতা
সাধারণত শারীরিকভাবে ফিট ব্যক্তিরা কম হাঁপান। কারণ তাদের হার্ট ও ফুসফুস শক্তিশালী থাকে এবং কার্যকরভাবে অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে।
▶ কার্ডিওভাসকুলার ফিটনেস
যাদের হৃদযন্ত্র ও শ্বাসতন্ত্র উন্নত, তারা কম হাঁপান। কারণ তাদের দেহ দ্রুত অক্সিজেন গ্রহণ ও সরবরাহ করতে পারে। যাদের ফিটনেস কম, তাদের শরীর অক্সিজেনের ঘাটতি অনুভব করে, ফলে তারা দ্রুত হাঁপিয়ে যায়।
▶ পেশিশক্তি ও সহনশীলতা
দুর্বল পেশি হলে বেশি শক্তি ব্যয় হয়, যা ক্লান্তির অন্যতম কারণ। যাদের নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস নেই, তারা সহজেই হাঁপিয়ে যান। কারণ তাদের পেশিগুলো কম কার্যকরভাবে শক্তি ব্যবহার করে।

 

৩. অতিরিক্ত ওজন ও শরীরের গঠন
স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন থাকলে শরীরকে বেশি ওজন বহন করতে হয়, যা সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় হাঁপিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ।
▶ শরীরের অতিরিক্ত ওজন
যদি একজন ব্যক্তি অতিরিক্ত ওজনের হন, তবে তার পায়ের পেশিগুলোর ওপর বেশি চাপ পড়ে এবং হৃৎপিণ্ডকে বেশি পরিশ্রম করতে হয়। ফলে দেহ দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং হাঁপিয়ে যায়।
▶ চর্বির বিপাকীয় প্রভাব
চর্বিযুক্ত দেহে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হতে পারে, যা দেহের কোষে অক্সিজেন সরবরাহ কমিয়ে দেয় এবং হাঁপিয়ে যাওয়ার কারণ হয়।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের পেশিশক্তির কার্যক্ষমতা কমে যায়। ছবি এআই

 

৪. শ্বাসতন্ত্র ও হার্টের সমস্যা
যাদের শ্বাসতন্ত্র বা হৃদযন্ত্রজনিত সমস্যা রয়েছে, তারা সাধারণত দ্রুত হাঁপিয়ে যান। কারণ তাদের দেহ যথাযথভাবে অক্সিজেন গ্রহণ ও সরবরাহ করতে পারে না।
▶ অ্যাজমা ও ব্রংকাইটিস
যাদের অ্যাজমা বা ক্রনিক ব্রংকাইটিস রয়েছে, তারা শ্বাসনালির সংকোচনের কারণে স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে পারেন না। সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় তাদের ফুসফুস পর্যাপ্ত অক্সিজেন সংগ্রহ করতে পারে না, ফলে তারা দ্রুত হাঁপিয়ে যান।
▶ হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ
যদি কারও হার্ট দুর্বল হয় বা উচ্চ রক্তচাপ থাকে, তাহলে শরীর পর্যাপ্ত অক্সিজেনযুক্ত রক্ত প্রবাহিত করতে পারে না। ফলে সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় দ্রুত হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায় এবং হাঁপিয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়।

 

৫. অক্সিজেন গ্রহণের দক্ষতা ও বয়স
শরীরের বয়স ও অক্সিজেন গ্রহণের দক্ষতাও হাঁপিয়ে যাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
▶ বয়স বৃদ্ধির প্রভাব
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের পেশিশক্তি, ফুসফুসের কার্যকারিতা ও হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা কমে যায়। ফলে বেশি বয়সীদের মধ্যে হাঁপিয়ে যাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়।
▶ অক্সিজেন গ্রহণের দক্ষতা
যাদের VO2 max (অক্সিজেন গ্রহণের সর্বোচ্চ সক্ষমতা) কম, তারা কম অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারেন এবং দ্রুত হাঁপিয়ে যান।

 

৬. জীবনযাপন ও অভ্যাস
আধুনিক জীবনযাত্রার কারণে শারীরিক পরিশ্রম কমে গেছে, যা হাঁপিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ।
▶ অনিয়মিত ব্যায়াম
যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন না, তাদের কার্ডিওভাসকুলার ফিটনেস কম থাকে এবং তারা দ্রুত হাঁপিয়ে যান।
▶ ধূমপান ও অ্যালকোহল গ্রহণ
ধূমপান ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়, ফলে শরীর পর্যাপ্ত অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে না। তাই ধূমপায়ীরা দ্রুত হাঁপিয়ে যান।

নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং ধূমপান এড়িয়ে চললে হাঁপিয়ে যাওয়ার সমস্যা কমানো সম্ভব। ছবি এআই

 

৭. মানসিক চাপ ও উদ্বেগ
মনস্তাত্ত্বিক কারণেও হাঁপিয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দিতে পারে।
▶ উদ্বেগ ও প্যানিক অ্যাটাক
যদি কেউ উদ্বিগ্ন বা স্ট্রেসে থাকেন, তবে তার শ্বাস-প্রশ্বাসের হার স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়, যা হাঁপিয়ে যাওয়ার কারণ হতে পারে।
▶ অতিরিক্ত উত্তেজনা
কখনো কখনো অতিরিক্ত দ্রুতগতিতে সিঁড়ি বেয়ে ওঠার ফলে শরীরের অক্সিজেন গ্রহণের হার স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যেতে পারে, যা হাঁপিয়ে যাওয়ার অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে।

 

উপসংহার
সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় হাঁপিয়ে যাওয়ার পেছনে মূলত শারীরিক পরিশ্রম, অক্সিজেন গ্রহণের দক্ষতা, ফিটনেস, ওজন, হৃদযন্ত্র ও শ্বাসযন্ত্রের অবস্থা, জীবনযাত্রার ধরন এবং মানসিক অবস্থার ভূমিকা রয়েছে। নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং ধূমপান এড়িয়ে চললে হাঁপিয়ে যাওয়ার সমস্যা কমানো সম্ভব। যদি কেউ অস্বাভাবিকভাবে দ্রুত হাঁপিয়ে যান, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ দ্রুত হাঁপিয়ে যাওয়া মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে।

রোজা রেখে মুখে দুর্গন্ধ হলে কী করবেন?

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৫, ০২:০১ পিএম
আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২৫, ০২:০৫ পিএম
রোজা রেখে মুখে দুর্গন্ধ হলে কী করবেন?
ইফতার থেকে সাহরি পর্যন্ত প্রচুর পানি পান করুন। ছবি এআই

রমজান মাসে রোজা রাখার কারণে দীর্ঘ সময় পানাহার না করার ফলে অনেকের মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হতে পারে। এটি বেশ স্বাভাবিক একটি বিষয়, তবে এটি এড়ানোর জন্য কিছু কার্যকর উপায় রয়েছে। 

মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার কারণ

রোজার সময় মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার মূল কারণ হলো দীর্ঘ সময় পানাহার না করা এবং লালার পরিমাণ কমে যাওয়া। এতে মুখের ব্যাকটেরিয়া সক্রিয় হয়ে গন্ধ তৈরি করে। এ ছাড়া কিছু নির্দিষ্ট কারণ দুর্গন্ধ সৃষ্টি করতে পারে। যেমন-

 

ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা
দীর্ঘ সময় পানি পান না করার ফলে মুখ শুকিয়ে যায় এবং ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ঘটে, যা দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে।

 

খাবারের অবশিষ্টাংশ
সাহরি বা ইফতারে গ্রহণ করা খাবারের ছোট ছোট কণা দাঁতের ফাঁকে থেকে যায়, যা ব্যাকটেরিয়ার জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে।

 

অপরিষ্কার দাঁত ও মাড়ি
নিয়মিত ব্রাশ ও ফ্লস না করলে দাঁত ও মাড়ির মধ্যে খাবারের কণা জমে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করতে পারে।

 

অতিরিক্ত মসলাযুক্ত বা দুগ্ধজাত খাবার
রসুন, পেঁয়াজ, দুগ্ধজাত খাবার বেশি খেলে মুখে দুর্গন্ধ বাড়তে পারে।

 

অ্যাসিডিটি ও হজমজনিত সমস্যা
রোজায় অনেকে খালি পেটে থাকায় অ্যাসিডিটি ও হজমজনিত সমস্যা অনুভব করেন, যা মুখে খারাপ গন্ধ তৈরি করতে পারে।

 

ধূমপান বা তামাকজাত দ্রব্য সেবন
রোজার আগে ধূমপান বা তামাকজাত দ্রব্য গ্রহণ করলে এটি মুখের স্বাস্থ্য খারাপ করে এবং দুর্গন্ধের কারণ হতে পারে।

 

মুখের দুর্গন্ধ প্রতিরোধের উপায়

রোজার সময় মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে কিছু সহজ ও কার্যকর উপায় অনুসরণ করা যায়।

 

পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন
• ইফতার থেকে সাহরি পর্যন্ত প্রচুর পানি পান করুন।
• শরীর হাইড্রেটেড থাকলে লালা উৎপাদন স্বাভাবিক থাকবে, যা মুখের দুর্গন্ধ কমায়।
• ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় (চা, কফি) কম পান করুন, কারণ এটি শরীর থেকে পানি কমিয়ে দিতে পারে।


সঠিকভাবে দাঁত ও মুখ পরিষ্কার করুন
• সাহরি ও ইফতারের পর অবশ্যই দুইবার ভালোভাবে ব্রাশ করুন।
• দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা খাবারের কণা দূর করতে ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করুন।
• মাউথওয়াশ ব্যবহার করুন (অ্যালকোহলমুক্ত মাউথওয়াশ ভালো, কারণ অ্যালকোহল মুখ শুকিয়ে ফেলতে পারে)।
• জিহ্বা পরিষ্কার করুন, কারণ এর ওপরে ব্যাকটেরিয়া জমে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করতে পারে।

 

মুখ আর্দ্র রাখুন
• রোজার সময় লালা উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে চেষ্টা করুন।
• চুইংগাম চাবানো সম্ভব না হলেও সাহরিতে এমন খাবার খান যা লালা উৎপাদন বাড়ায়, যেমন আপেল বা শসা।

 

খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করুন
• সাহরিতে দুগ্ধজাত খাবার কম খান, কারণ এগুলো ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ঘটায়।
• অতিরিক্ত মসলাযুক্ত ও ভাজাপোড়া খাবার পরিহার করুন, যা অ্যাসিডিটি বাড়িয়ে মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করতে পারে।
• ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খান, যেমন শাকসবজি ও ফলমূল, যা মুখের ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সাহায্য করে।

 

লবণ-পানি ও মিসওয়াক ব্যবহার করুন
• দিনে কয়েকবার লবণ-পানি দিয়ে কুলি করুন, এটি মুখের ব্যাকটেরিয়া কমায়।
• মিসওয়াক সুন্নত এবং এটি প্রাকৃতিকভাবে দাঁত পরিষ্কার রাখে ও মুখের দুর্গন্ধ দূর করে।

 

তাজা ও সুগন্ধিযুক্ত খাবার খান
• পুদিনা পাতা, এলাচ, লবঙ্গ চিবোতে পারেন (ইফতার ও সাহরির সময়), যা মুখের দুর্গন্ধ দূর করে।
• লেবু ও আদাযুক্ত গরম পানি পান করলে মুখের ব্যাকটেরিয়া কমে।

 

শ্বাসনালি ও হজমতন্ত্রের যত্ন নিন
• অ্যাসিডিটি কমানোর জন্য খাবারের পর হালকা হাঁটাহাঁটি করুন।
• বেশি তেল-চর্বিযুক্ত খাবার কম খান। কারণ, এটি হজমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

 

ঘরোয়া সমাধান

রোজার সময় মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে কিছু প্রাকৃতিক উপায় অবলম্বন করা যায়। যেমন-

• পুদিনা পাতা বা গ্রিন টি পান করুন (ইফতার ও সাহরিতে)।
• লবঙ্গ বা দারুচিনি চিবান, যা প্রাকৃতিকভাবে ব্যাকটেরিয়া দূর করে।
• তুলসী পাতা বা মৌরি চিবান, যা দীর্ঘ সময় মুখকে সতেজ রাখে।
• নারকেল তেল ব্যবহার (Oil Pulling) – সকালে খালি পেটে ৫-১০ মিনিট নারকেল তেল মুখে রেখে কুলকুচি করুন, যা ব্যাকটেরিয়া দূর করে।

 

শেষ কথা

রোজার সময় মুখের দুর্গন্ধ একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। নিয়মিত মুখের যত্ন নেওয়া, পর্যাপ্ত পানি পান করা, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা এবং প্রাকৃতিক সমাধান ব্যবহার করলে মুখ সতেজ থাকবে। সুস্থ ও স্বস্তিদায়ক রোজা পালনের জন্য এই টিপসগুলো অনুসরণ করুন এবং প্রতিদিনের অভ্যাসে পরিবর্তন আনুন।

কিডনি রোগ সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা ও সঠিক তথ্য

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৫, ০১:৩৩ পিএম
কিডনি রোগ সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা ও সঠিক তথ্য
ছবি এআই

▶ প্রচলিত ধারণা: শরীর, চোখ-মুখ ফোলা মানেই কিডনি রোগ।
সঠিক তথ্য: শরীর, চোখ-মুখ ফোলা মানেই কিডনি রোগ নয়। শরীরের অন্যান্য রোগ যেমন- হৃদরোগ, লিভারের রোগ বা অ্যালার্জির কারণেও শরীর, চোখ-মুখ ফুলে যেতে পারে।


▶ প্রচলিত ধারণা: কিডনি রোগে শরীর ফোলা মানেই ফেইলিওর।
সঠিক তথ্য: কিডনি রোগের কারণেই শরীর ফোলা মানেই কিডনি ফেইলিওর না। বাচ্চাদের নেফ্রোটিক সিনড্রোম হলে প্রস্রাবে অতিরিক্ত প্রোটিন যাওয়ার কারণে শরীর ফোলা থাকে। কিন্তু কিডনির কার্যকারিতা অটুট থাকে।

▶ প্রচলিত ধারণা: কিডনি রোগ হলে অবশ্যই কিছু লক্ষণ থাকবে। যেমন- শরীর ফোলা, প্রস্রাব কম হওয়া। 
সঠিক তথ্য: কিডনি রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে লক্ষণহীন থাকতে পারে। কিডনির কার্যকারিতা ৬০-৭০ ভাগ কমে যাওয়ার পর লক্ষণ দেখা দেয়। এ জন্য কিডনি রোগকে নীরব ঘাতক বলা হয়। 


▶ প্রচলিত ধারণা: প্রস্রাবে রক্ত যাওয়া মানেই কিডনি রোগ। 
সঠিক তথ্য: প্রস্রাবে রক্ত যাওয়া ছাড়াও মূত্রনালি, মূত্রথলি বা মূত্রপথের রোগের কারণে হতে পারে।


▶ প্রচলিত ধারণা: বেশি করে পানি পান করলে কিডনি রোগ ভালো হয়।
সঠিক তথ্য: কিডনি রোগ প্রতিরোধের জন্য পরিমিত পানি পান প্রয়োজন। কিডনি পাথরজনিত রোগে বেশি পানি পান করা ভালো। তবে উচ্চমাত্রার কিডনি রোগী বা ডায়ালাইসিস করছে এমন রোগী অতিরিক্ত পানি পান করলে বিপদ হতে পারে।


▶ প্রচলিত ধারণা: রক্তে সিরাম ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা না বাড়লে ধরে নেব কিডনি রোগ নেই। 
সঠিক তথ্য: অনেক কিডনি রোগ যেমন- নেফ্রাইটিসে প্রাথমিক পর্যায়ে রক্তের সিরাম ক্রিয়েটিনিন স্বাভাবিক থাকতে পারে। তখন শুধু প্রস্রাবে অতিরিক্ত প্রোটিন বের হয়। 


▶ প্রচলিত ধারণা: ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের কারণে কিডনি রোগ হলে একটি কিডনির কার্যকারিতা কমে যায়। 
সঠিক তথ্য: ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের কারণে কিডনি রোগ হলে দুটি কিডনিই সমানভাবে আক্রান্ত হয়।


▶ প্রচলিত ধারণা: ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে রাখলে কিডনি রোগ হবে না।
সঠিক তথ্য: ডায়াবেটিস (HBA1C<7%) এবং উচ্চ রক্তচাপ (BP<130/80) কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ না করলে কিডনি রোগের ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি। 


▶ প্রচলিত ধারণা: কিডনি ফেইলিওর মানেই নিশ্চিত মৃত্যু। 
সঠিক তথ্য: কিডনি রোগ মানেই নিশ্চিত মৃত্যু নয়। কিডনি সংযোজন বা ডায়ালাইসিস করে কিডনি ফেইলিওর রোগী দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে পারে।


▶ প্রচলিত ধারণা: কিডনি ডায়ালাইসিস করলে রোগীর মৃত্যু দ্রুত হয়। 
সঠিক তথ্য: সঠিক সময়ে ডায়ালাইসিস করলে রোগী অনেক দিন বেঁচে থাকে।

লেখক: বিভাগীয় প্রধান, কিডনি রোগ বিভাগ, স্যার সলিমুল্লাহ্ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতাল

রমজানে খাবারের নিয়মকানুন

প্রকাশ: ১৩ মার্চ ২০২৫, ১২:১৫ পিএম
রমজানে খাবারের নিয়মকানুন

রমজান মাস আমাদের জন্য মহান আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে রহমত। এ সময় ইবাদতে মনোনিবেশ করার জন্য শরীর সুস্থ থাকা অনেক জরুরি। রমজানে দীর্ঘসময় না খেয়ে থাকার কারণে শরীরের পানিশূন্যতা ও শক্তি কমে যেতে পারে। তাই সঠিক খাবার নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পুরো মাস সুস্থ থাকার জন্য পুষ্টিকর সাহরি ও ইফতার খুবই প্রয়োজনীয়। এখানে কিছু খাবারের তালিকা দেওয়া হলো।

সাহরি
অনেকের অভ্যাস সাহরিতে না খেয়ে রোজা রাখা। এতে করে পরে দুর্বলতা, অ্যাসিডিটি, পানিশূন্যতাসহ নানাবিধ সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই সাহরিতে খাবার খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। 

জটিল কার্বোহাইড্রেট (শক্তির প্রধান উৎস)
লাল চালের ভাত /ওটস/চিড়া
আটার রুটি/লাল আটার ব্রেড
মিষ্টি আলু/সেদ্ধ আলু

প্রোটিন (পেশি ও শক্তি ধরে রাখে)
ডিম (সেদ্ধ/ভাজি)
টক দই বা দুধ
মুরগি/মাছ/গরুর মাংস (কম তেলযুক্ত)
ডাল বা ছোলার তরকারি

ফাইবার ও হাইড্রেশন বাড়ানোর জন্য
শাকসবজি 
ফল (আপেল, কলা, কমলা, নাশপাতি)
পানি (২-৩ গ্লাস)

এড়িয়ে চলুন
অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার 
বেশি ঝাল ও মসলাযুক্ত খাবার
চা/কফি (যা পানিশূন্যতা বাড়ায়)

 

ইফতার (উচ্চ পুষ্টিমানসম্পন্ন খাবার), দিনের প্রথম খাবার হওয়ায় ইফতার হতে হবে সুষম ও স্বাস্থ্যকর।

ইফতারের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার
প্রথম ধাপ (পানি ও শক্তি পুনরুদ্ধার)
২-৩টি খেজুর (প্রাকৃতিক চিনি দ্রুত শক্তি দেয়)
এক গ্লাস ডাবের পানি/ লেবুর শরবত/ ফলের স্মুদি (দুধ ও কলা মিশিয়ে)
পানি

দ্বিতীয় ধাপ (পুষ্টিকর ও হালকা খাবার)
ছোলা, মুড়ি ও শসার মিশ্রণ

তৃতীয় ধাপ (প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট-সমৃদ্ধ খাবার)
গ্রিলড/সেদ্ধ মুরগি বা মাছ
হালকা তেলে ভাজা সবজি
আটার রুটি বা লাল চালের ভাত

এ সময় এড়িয়ে চলুন
কোল্ড ড্রিংকস ও অতিরিক্ত চিনিযুক্ত শরবত
বেশি ভাজা-পোড়া (সমুচা, পিয়াজু, বেগুনি)
অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার (হজমে সমস্যা করে)

রাতের খাবার 
লাল চালের ভাত বা আটার রুটি
মুরগি/মাছ/ডিম
সবজি ও সালাদ
এক গ্লাস দুধ/ টক দই/ দই ও ফলের সালাদ

রমজানের জন্য কিছু বিশেষ টিপস
ইফতার থেকে সাহরি পর্যন্ত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন।
ডাবের পানি, ফলের রস ও হালকা শরবত পান করুন।
খাবার আস্তে আস্তে খান, দ্রুত খাবেন না।
বেশি তৈলাক্ত ও ভাজা খাবার খেলে গ্যাস ও বদহজম হতে পারে।
ব্যালান্সড ডায়েট অনুসরণ করুন, যাতে প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি থাকে।
এখানে বিভিন্ন খাবারের তালিকা দেওয়া হয়েছে। খাবারের পরিমাণ একেকজনের উচ্চতা ও ওজন অনুযায়ী একেক রকম হবে। তাই প্রয়োজনে পুষ্টিবিদের শরণাপন্ন হয়ে আপনার নিজের রোজার খাবারের তালিকা ও পরিমাণ ঠিক করে নিতে পারেন।

লেখক: পুষ্টিবিদ, আলোক হাসপাতাল লিমিটেড, মিরপুর, ঢাকা