ঢাকা ১৬ বৈশাখ ১৪৩২, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫
English
মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২

ক্রনিক কিডনি ডিজিজ

প্রকাশ: ০৬ মার্চ ২০২৫, ১২:৩৬ পিএম
ক্রনিক কিডনি ডিজিজ
ছবি এআই

কিডনি স্বাস্থ্য এবং প্রাথমিক শনাক্তকরণ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৩ মার্চ বিশ্ব কিডনি দিবস পালিত হতে যাচ্ছে। এবারের কিডনি দিবসের প্রতিপাদ্য হলো, ‘আপনার কিডনি কি সুস্থ? তাড়াতাড়ি খুঁজে বের করুন। কিডনি স্বাস্থ্য রক্ষা করুন’, যা কিডনি রোগ গুরুতর হওয়ার আগেই শনাক্ত করার জন্য সক্রিয় স্ক্রিনিংয়ের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়।
ক্রনিক কিডনি ডিজিজ অথবা স্থায়ীভাবে কিডনি অকেজো বর্তমান বিশ্বের অসংক্রামক রোগ বা নন-কমিউনিকেবল ডিজিজগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান রোগ। সারা বিশ্বে বর্তমানে ৮৫০ মিলিয়ন মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত। প্রতিবছর ২.৪ মিলিয়ন মানুষ দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগে আক্রান্ত এবং ১.৭ মিলিয়ন মানুষ আকস্মিক কিডনি রোগে মারা যান। বিশ্বের জনগোষ্ঠীর প্রতি ১০ জনে একজন কিডনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। 
জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউট ২০২৪ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত। এদের মধ্যে আবার পুরুষের তুলনায় নারীর এই রোগ হওয়ার প্রবণতা বেশি। তাদের মধ্যে প্রতিবছর ৪০-৪৫ হাজার রোগীর কিডনি সম্পূর্ণ বিকল হয়ে যাচ্ছে এবং ৩০-৩৫ হাজার রোগী স্থায়ী কিডনি রোগে ভুগছেন। এই আড়াই কোটি কিডনি রোগীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এই রোগ বংশগত হতে পারে। সাধারণত নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি দেখা যায়। 

ক্রনিক কিডনি ডিজিজ কী?
সাধারণত একজন ব্যক্তির তিন মাস বা তার অধিক সময় ধরে যদি কিডনি অকেজো থাকে, রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বেশি থাকে, প্রস্রাবের সঙ্গে প্রোটিন যায়, প্রস্রাবের অ্যালবুমিনের মাত্রা (ACR/অ্যালবুমিন ক্রিয়েটিনিন রেশিও) বেশি থাকে, কিডনির আল্ট্রাসনোগ্রাম করলে কিডনির ক্ষতি হয়েছে এমন দেখা যায় অথবা eGFR ৬০ মিলির নিচে থাকে, তা হলে তার দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগ অথবা ক্রনিক কিডনি ডিজিজ হয়েছে, এটা বলা হয়ে থাকে। 

কারণ কী কী?
দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস।
দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ।
বংশগত কিডনি রোগ- পলিসিস্টিক কিডনি ডিজিজ, অ্যালপর্ট সিন্ড্রোম।
ক্রনিক গ্লোমারুলোনেফ্রাইটিস অথবা দীর্ঘস্থায়ীভাবে কিডনির ঝিল্লির প্রদাহ।
ক্রনিক ইন্টারস্টিশিয়াল নেফ্রাইটিস (যারা দীর্ঘদিন ধরে ব্যথার ওষুধ খাচ্ছেন, তাদের হয়)।
দুই কিডনির রক্তনালি বন্ধ হয়ে গেলে বা বাইল্যাটারাল রেনাল আর্টারি স্টেনোসিস।
বাইল্যাটারাল অবসট্রাক্টিভ ইউরোপ্যাথি অথবা দুই কিডনির প্রস্রাব বের হওয়ার নালি বন্ধ হয়ে গেলে।
ওবেসিটি অথবা অত্যধিক ওজন। 

লক্ষণগুলো কী কী?
ক্ষুধা মান্দ্য, খাদ্যে অরুচি।
বমি বমি ভাব হওয়া অথবা বমি হওয়া।
অত্যধিক দুর্বলতা বোধ করা।
রক্তস্বল্পতা।
উচ্চ রক্তচাপ।
রাতে বারবার প্রস্রাবের জন্য ঘুম থেকে ওঠে যাওয়া।
প্রস্রাবে ফেনা যাওয়া।
গাঢ় রঙের প্রস্রাব হওয়া।
প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া।
পায়ে পানি আসা।
শ্বাসকষ্ট হওয়া।
বুকে ব্যথা।
সারা শরীরে চুলকানি হওয়া।
খিঁচুনি হওয়া।
অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।

চিকিৎসা ও পথ্য
বাড়তি লবণ ও লবণাক্ত খাবার গ্রহণ বন্ধ করতে হবে। 
ফলের মধ্যে আপেল, পেয়ারা, নাশপাতি, আনারস, পাকা পেপে খেতে পারবেন।  অন্যান্য ফল খেতে পারবেন না। কামরাঙা ও বিলিম্বি খাওয়া নিষেধ। 
প্রোটিনের পরিমাণ কমাতে হবে। সারা দিনে ৪০-৫০ গ্রাম। 
পানির পরিমাণ সাধারণত ১ লিটার, ২৪ ঘণ্টায়। পায়ে পানি না থাকলে পানি বাড়ানো যাবে। 
ডায়াবেটিস থাকলে ডায়াবেটিক খাদ্যতালিকা অনুযায়ী খাবার খাবেন আর সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। 
ডায়াবেটিক কিডনি রোগীদের সবচেয়ে কার্যকরী ওষুধ এম্পাগ্লিফ্লোজিন। অবশ্য যাদের প্রস্রাবে ইনফেকশন অথবা ক্রনিক সিস্টাইটিস আছে, তাদের এ ওষুধ না খাওয়াই ভালো।  
প্রেশার থাকলে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রেশার নিয়ন্ত্রণ ও প্রোটিন যাওয়া কমানোর জন্য কার্যকরী ওষুধ এসিই ইনহিবিটার (ACEI) অথবা এআরবি (ARB)। 
এ ছাড়া নন-স্টেরডাল এমআরএ (মিনারেলো কর্টিকয়েড রিসেপ্টার এন্টাগোনিস্ট) ব্যবহার করা হয়ে থাকে ডায়াবেটিক কিডনি রোগের চিকিৎসায়। 
রক্তস্বল্পতার জন্য রক্ত তৈরি হওয়ার ইঞ্জেকশন দিতে হবে, আয়রন ট্যাবলেট খেতে হবে। 
ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ব্যথানাশক ট্যাবলেট খাওয়া যাবে না। 
ওজন বেশি থাকলে কমাতে হবে। 
প্রতিদিন আধাঘণ্টা হাঁটতে হবে। 
একজন কিডনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সব ওষুধের পরিমাণ ও ধরন ঠিক করে নিতে হবে এবং ডিজিজ প্রগ্রেশান আটকাতে ওষুধ খেতে হবে। 

প্রতিরোধ ও প্রতিকার 
কিডনি রোগপ্রতিরোধ করতে হলে ছোটবেলা থেকেই খাদ্যাভ্যাস ও নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করতে হবে। 
একজন মানুষের যত কেজি ওজন, দৈনিক তত গ্রাম প্রোটিন খাওয়া উচিত। এর বেশি প্রোটিন খাওয়া কিডনির জন্য ক্ষতিকর। 
একজন সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের দৈনিক ৩.৫-৪ লিটার পানি পান করা উচিত।  
শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। অতি ওজন অথবা ওবেসিটি থেকে কিডনি অকেজো হতে পারে। 
লবণাক্ত খাবার, ফাস্টফুড, অতিরিক্ত তেল ও চর্বিজাতীয় খাবার কম খাওয়া উচিত।  
প্রতিদিন অন্ততপক্ষে আধাঘণ্টা হাঁটতে হবে। 
যাদের বংশে কিডনি রোগ আছে এবং যাদের ডায়াবেটিস অথবা উচ্চ রক্তচাপ আছে, তাদের বছরে অন্তত দুইবার কিডনির পরীক্ষা (S. Creatinine, eGFR, Urine R/E, Urine for ACR/Urine for Microalbumin, USG of KUB region) করাতে হবে। 
ব্যথানাশক ওষুধ যতদূর সম্ভব পরিহার করতে হবে। অথবা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সেবন কর‍তে হবে। 
ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আছে বলতে আমরা বুঝি, যখন HbA1c-এর মাত্রা ৬%-এর মধ্যে থাকে। এই পরীক্ষা প্রতি ৪ মাস পরপর করাতে হবে। 
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আছে বলতে আমরা বুঝি, যখন প্রেশার ১২০/৮০ থাকে। 
কিডনির সমস্যা থাকলে হার্টের সমস্যা হতে পারে। আবার হার্টের সমস্যা থাকলে কিডনির সমস্যা হয়। তাই এই দুই রোগ থাকলে ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। 


লেখক: বিভাগীয় প্রধান, কিডনি রোগ বিভাগ, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা

পায়ের তালু জ্বলার ৬টি মারাত্মক কারণ

প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০২:০০ পিএম
আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০২:১৩ পিএম
পায়ের তালু জ্বলার ৬টি মারাত্মক কারণ
পায়ের তালু জ্বলার সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো স্নায়ু সমস্যা। ছবি এআই

পায়ের তালু জ্বলা একটি অস্বস্তিকর এবং কখনো কখনো বেদনাদায়ক সমস্যা। এই সমস্যার পেছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে, যা কখনো সাধারণ জীবনধারাগত বিষয়ক, আবার কখনো জটিল শারীরিক অসুস্থতার ইঙ্গিত দেয়। আসুন, পায়ের তালু জ্বলার প্রধান কারণগুলো বিস্তারিতভাবে জানি—

১. স্নায়বিক সমস্যা (Neuropathy)
পায়ের তালু জ্বলার সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো স্নায়ু সমস্যা (নিউরোপ্যাথি)। নিউরোপ্যাথি তখন হয় যখন পায়ের স্নায়ুগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা দুর্বল হয়ে পড়ে।
▶ ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি: ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে রক্তে অতিরিক্ত শর্করা স্নায়ুর ক্ষতি করে। এর ফলে পায়ের তালুতে জ্বালাপোড়া, ব্যথা বা ঝিনঝিন অনুভূতি হয়।
▶ ভিটামিনের ঘাটতি: বিশেষ করে ভিটামিন বি১২, বি১ (থায়ামিন), বি৬ এর ঘাটতি স্নায়ুর স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত করে। ফলে তালুতে অস্বস্তি বা জ্বালা অনুভূত হয়।
▶ ক্রনিক কিডনি রোগ: কিডনি ঠিকমতো কাজ না করলে শরীরে টক্সিন জমে যায়, যা স্নায়ু ক্ষতির কারণ হতে পারে।

 

২. সংক্রমণ ও ছত্রাকজনিত সমস্যা
পায়ের ত্বকের সংক্রমণও তালুতে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করতে পারে।

▶ অ্যাথলেটস ফুট (Athlete’s Foot): এটি একটি ছত্রাক সংক্রমণ, যেখানে পায়ের আঙুলের ফাঁক ও তালুতে চুলকানি, লালচে ভাব ও জ্বালা অনুভূত হয়।
▶ ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ: ত্বকের ক্ষত বা ফুটো দিয়ে ব্যাকটেরিয়া ঢুকে সংক্রমণ ঘটালে তালুতে ব্যথা ও জ্বালা হতে পারে।

 

৩. অতিরিক্ত চাপ ও হাঁটার ধরণ
দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা বা অতিরিক্ত হাঁটার ফলে পায়ের পেশী এবং স্নায়ু অতিরিক্ত চাপের মধ্যে পড়ে।
▶ চোখা বা শক্ত জুতা পরা: পায়ের মাপের চেয়ে ছোট বা শক্ত জুতা ব্যবহারে রক্ত চলাচল কমে যায় এবং পায়ের তলায় চাপ সৃষ্টি হয়, যার ফলে জ্বালা অনুভূত হতে পারে।
▶ প্লান্টার ফ্যাসিয়াইটিস: এটি একটি সাধারণ পায়ের সমস্যা যেখানে পায়ের পাতার নিচের টিস্যুতে (plantar fascia) প্রদাহ হয় এবং পায়ের তলায় ব্যথা ও জ্বালাভাব হয়, বিশেষ করে সকালে ঘুম থেকে উঠে হাঁটতে গেলে।

 

৪. জীবনধারা ও অন্যান্য কারণ
▶ মদ্যপান: অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ স্নায়ুর ক্ষতি করে (alcoholic neuropathy) এবং পায়ের তালুতে জ্বালাভাব সৃষ্টি করে।
▶ গর্ভাবস্থা: গর্ভাবস্থায় নারীদের শরীরে তরল জমে যায় এবং স্নায়ুতে চাপ পড়ে, ফলে পায়ের তালুতে জ্বালা হতে পারে।
▶ বয়সজনিত পরিবর্তন: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্নায়ুর কার্যক্ষমতা কমে যায়, ফলে পায়ের তালুতে জ্বালা অনুভব হতে পারে।

 

৫. রোগব্যাধি
কিছু বিশেষ রোগের কারণেও তালু জ্বালার সমস্যা দেখা দেয়—
▶ থাইরয়েডের সমস্যা: হাইপোথাইরয়েডিজমে (থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি) স্নায়ুগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে এবং পায়ের তালুতে ঝিনঝিনি বা জ্বালা হতে পারে।
▶ রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস ও লুপাস: অটোইমিউন রোগের ফলে শরীরের নিজেরই ইমিউন সিস্টেম স্নায়ুতে আক্রমণ করে, যার ফলে ব্যথা এবং জ্বালাভাব হয়।
▶ হেলথ কন্ডিশনস: যেমন HIV/AIDS, ক্যান্সার চিকিৎসার (কেমোথেরাপি) পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ইত্যাদিতেও পায়ের তালুতে জ্বালা হতে পারে।

 

৬. রক্ত সঞ্চালনের সমস্যা
▶ পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজ (PAD): ধমনী সংকীর্ণ হয়ে গেলে পায়ের রক্ত প্রবাহ কমে যায়, ফলে তালুতে জ্বালা বা ঠান্ডা অনুভূতি হতে পারে।
▶ ডিপ ভেইন থ্রোমবোসিস (DVT): পায়ের শিরায় রক্ত জমাট বাঁধলে তালু ভারী ও জ্বলন্ত মনে হতে পারে।

 

কীভাবে চিনবেন সমস্যাটি গুরুতর কি না?
যদি পায়ের তালুতে জ্বালার সঙ্গে সঙ্গে নীচের উপসর্গগুলো থাকে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি—
• পা ফোলা
• তীব্র ব্যথা বা চলাফেরায় অক্ষমতা
• পায়ের রঙ পরিবর্তন
• পায়ে অনুভূতি একেবারে হারিয়ে যাওয়া

 

প্রতিকার ও পরামর্শ
• রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখা
• সঠিক মাপের আরামদায়ক জুতা পরা
• নিয়মিত পায়ের যত্ন নেয়া (পা পরিষ্কার ও শুকনো রাখা)
• ভিটামিনের ঘাটতি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা
• ছত্রাক সংক্রমণ থাকলে অ্যান্টিফাঙ্গাল চিকিৎসা নেয়া
• অতিরিক্ত মদ্যপান এড়িয়ে চলা

 

উপসংহার
পায়ের তালু জ্বলার সমস্যা কখনো হালকাভাবে নেয়া উচিত নয়। কারণ এর পেছনে থাকা কারণগুলো যদি অবহেলা করা হয়, তাহলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই সঠিক সময়ে সঠিক কারণ নির্ণয় করে চিকিৎসা গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

যে লক্ষণগুলো দেখলে বুঝবেন আপনার ডায়াবেটিস হতে পারে

প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৪০ পিএম
আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৪৬ পিএম
যে লক্ষণগুলো দেখলে বুঝবেন আপনার ডায়াবেটিস হতে পারে
ডায়াবেটিসের প্রাথমিক লক্ষণগুলো সাধারণত ধীরে ধীরে দেখা দেয়। ছবি এআই

ডায়াবেটিস বা মধুমেহ হলো একটি দীর্ঘমেয়াদী (ক্রনিক) রোগ, যেখানে শরীরে রক্তের গ্লুকোজ (চিনি) মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়ে যায়। এর মূল কারণ হলো ইনসুলিন হরমোনের উৎপাদন কমে যাওয়া বা শরীরে ইনসুলিন সঠিকভাবে কাজ না করা। ইনসুলিন হলো একটি হরমোন যা অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত হয় এবং রক্তের গ্লুকোজকে কোষে প্রবেশ করিয়ে শক্তিতে পরিণত করতে সাহায্য করে।

ডায়াবেটিস প্রধানত তিন ধরনের হয়—
• টাইপ ১ ডায়াবেটিস: শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা ভুল করে ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষ ধ্বংস করে ফেলে।
• টাইপ ২ ডায়াবেটিস: শরীর পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না অথবা ইনসুলিন সঠিকভাবে কাজ করে না।
• জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস: গর্ভাবস্থায় কিছু নারীর রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়।

 

ডায়াবেটিসের প্রাথমিক লক্ষণ

ডায়াবেটিসের প্রাথমিক লক্ষণগুলো সাধারণত ধীরে ধীরে দেখা দেয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে দ্রুতও লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ কিছু লক্ষণ হলো—

• প্রচণ্ড পিপাসা অনুভব করা: রক্তে অতিরিক্ত চিনি থাকার কারণে শরীর পানির প্রয়োজন অনুভব করে। ফলে সারাক্ষণ তৃষ্ণা অনুভূত হয়।

• ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া: শরীর অতিরিক্ত চিনিকে প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দিতে চায়, ফলে ঘন ঘন প্রস্রাব হয়, বিশেষ করে রাতে।

• অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগা: গ্লুকোজ কোষে প্রবেশ না করায় শরীর শক্তির অভাব অনুভব করে এবং বারবার খাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়।

• ওজন কমে যাওয়া: যথেষ্ট খাবার খাওয়া সত্ত্বেও হঠাৎ ওজন কমে যেতে পারে, বিশেষ করে টাইপ ১ ডায়াবেটিসে।

• অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব করা: কোষে পর্যাপ্ত গ্লুকোজ না পৌঁছানোর ফলে শরীরে শক্তির ঘাটতি হয়, যা ক্লান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

• দৃষ্টির সমস্যা: উচ্চ রক্তচাপের কারণে চোখের লেন্সের আকৃতি পরিবর্তিত হয়, ফলে ঝাপসা দেখা যেতে পারে।

• ক্ষত ধীরে ভালো হওয়া: রক্তের উচ্চ চিনি মাত্রা ক্ষত নিরাময় প্রক্রিয়া ধীর করে দেয়। ফলে সামান্য কাটাছেঁড়াও অনেক দিন স্থায়ী হয়।

• ত্বক ও মুখের সংক্রমণ: বিশেষ করে ছত্রাকজনিত সংক্রমণ সহজেই হতে পারে।

• হাত-পা অবশ বা ঝিনঝিনে অনুভব করা: স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতির কারণে এমন অনুভূতি হয়।

 

ডায়াবেটিস হলে বারবার খাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। ছবি এআই

 

কারা বেশি ঝুঁকিতে আছেন?

• পরিবারে কারো ডায়াবেটিস থাকলে।
• ওজন বেশি হলে বা স্থূলতা থাকলে।
• উচ্চ রক্তচাপ বা উচ্চ কোলেস্টেরল থাকলে।
• কম শারীরিক পরিশ্রম করলে।
• গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস ইতিহাস থাকলে।
• ৪০ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে।

 

কম শারীরিক পরিশ্রম করলে ডায়াবেটিস হতে পারে। ছবি এআই

 

কীভাবে নিশ্চিত হওয়া যাবে যে ডায়াবেটিস হয়েছে?

শুধুমাত্র উপসর্গ দেখে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়। এজন্য কিছু নির্দিষ্ট পরীক্ষা করতে হয়। যেমন—


▶ ফাস্টিং ব্লাড সুগার টেস্ট (উপবাস অবস্থায় রক্তের গ্লুকোজ পরীক্ষা)।
৮ ঘণ্টা না খেয়ে থেকে রক্তের গ্লুকোজ মাপা হয়। ১২৬ মি.গ্রা./ডেসি.লি. বা তার বেশি হলে ডায়াবেটিস ধরা পড়ে। 

▶ ওরাল গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট (OGTT)
নির্দিষ্ট পরিমাণ গ্লুকোজ খাওয়ার দুই ঘণ্টা পরে রক্তের চিনি মাপা হয়। ২০০ মি.গ্রা./ডেসি.লি. বা বেশি হলে ডায়াবেটিস নিশ্চিত।


▶ HbA1c (গ্লাইকেটেড হিমোগ্লোবিন টেস্ট)
গত ২-৩ মাসের গড় রক্তের গ্লুকোজ পরিমাপ করে। ৬.৫% বা তার বেশি হলে ডায়াবেটিস বলে গণ্য করা হয়।

▶ র‌্যান্ডম ব্লাড সুগার টেস্ট
দিনে যেকোনো সময় রক্তের গ্লুকোজ মাপা হয়। ২০০ মি.গ্রা./ডেসি.লি. বা বেশি হলে এবং লক্ষণ উপস্থিত থাকলে ডায়াবেটিস নির্ধারণ করা হয়।

 

নিয়মিত রক্তের গ্লুকোজ পরীক্ষা করা জরুরি। ছবি এআই

 

ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমানোর উপায়

যদি আপনি মনে করেন যে আপনি ঝুঁকিতে আছেন বা লক্ষণ অনুভব করেন, তবে কিছু প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি—
• নিয়মিত ব্যায়াম করুন। সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম।
• স্বাস্থ্যকর খাবার খান। কম চিনি, কম চর্বি, বেশি শাকসবজি ও আঁশযুক্ত খাবার।
• ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। 
• ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করুন।
• নিয়মিত রক্তের গ্লুকোজ পরীক্ষা করুন।
• মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করুন।

 

ডায়াবেটিস এড়াতে চাইলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। ছবি এআই

 

শেষ কথা

ডায়াবেটিস একটি নীরব ঘাতক। শুরুতে খুব বেশি লক্ষণ নাও দেখা যেতে পারে। তাই ঝুঁকির মধ্যে থাকলে নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করানো জরুরি। সময়মতো শনাক্ত হলে জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন এনে এবং সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে ডায়াবেটিস সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। সতর্কতা ও সচেতনতাই ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনার মূল চাবিকাঠি।

চোখে কিছু পড়লে যা করা যাবে এবং যা করা যাবে না

প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ০২:১০ পিএম
আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৩২ পিএম
চোখে কিছু পড়লে যা করা যাবে এবং যা করা যাবে না
চোখে কিছু পড়লে আতঙ্কিত না হয়ে মাথা ঠান্ডা রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ছবি এআই

চোখে কিছু পড়ে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে কী করতে হবে এবং কী করা থেকে বিরত থাকতে হবে—এই বিষয়ে সচেতনতা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চোখ মানবদেহের সবচেয়ে সংবেদনশীল অঙ্গগুলোর একটি। তাই সামান্য অসতর্কতা বা ভুল পদক্ষেপ বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে। নিচে চোখে কিছু পড়লে করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো —

 

চোখে কিছু পড়লে করণীয়

১. শান্ত ও স্থির থাকা: প্রথমত, ভয় না পেয়ে শান্ত থাকা জরুরি। অনেকে আতঙ্কে চোখ ঘষতে শুরু করেন বা তাড়াহুড়ো করে ভুল পদক্ষেপ নেন, যা ক্ষতির পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে। চোখে কিছু পড়লে ধৈর্য ধরে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

২. চোখ না ঘষা: চোখে ধুলাবালি, কণা বা ছোট কোনো বস্তু পড়লে সেটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ায় অস্বস্তি সৃষ্টি করে, ফলে চোখ ঘষার প্রবণতা তৈরি হয়। কিন্তু এটি মোটেও করা উচিত নয়। ঘষা-ঘষি করলে বস্তুটি কর্নিয়ার (চোখের সামনের স্বচ্ছ আবরণ) ক্ষতি করতে পারে, যার ফলে সংক্রমণ, ব্যথা বা চোখে দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পেতে পারে।

৩. পরিষ্কার পানির সাহায্যে ধোয়া: সবচেয়ে নিরাপদ ও কার্যকর পদ্ধতি হলো চোখ পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা। এক্ষেত্রে কুসুম গরম পানি সবচেয়ে ভালো, তবে তা অবশ্যই সম্পূর্ণ পরিশুদ্ধ ও জীবাণুমুক্ত হতে হবে। পানির প্রবাহ এমনভাবে রাখতে হবে যেন তা চোখে হালকাভাবে পড়ে এবং কিছুক্ষণ পরপর ধুতে থাকে।
ধোয়ার পদ্ধতি
• চোখ হালকাভাবে খোলা রেখে পানির নিচে ধরে রাখুন।
• এক বা দুই মিনিট পানি ঢেলে চোখ পরিষ্কার করুন।
• এটি চোখে ধুলো, বালি বা রাসায়নিক বস্তু পড়লে দ্রুত প্রতিক্রিয়ার প্রথম ধাপ হিসেবে কার্যকর।

 

চোখে কিছু পড়লে এক বা দুই মিনিট পানি ঢেলে চোখ পরিষ্কার করুন। ছবি এআই

 

৪. চোখে পড়া বস্তু শনাক্তের চেষ্টা: আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চোখ খুলে দেখে নিতে পারেন কিছু দৃশ্যমান বস্তু চোখে রয়ে গেছে কি না। যদি দেখা যায় কোনো ছোট কণা আটকে আছে, তবে পরিষ্কার পানি অথবা চোখের জন্য নিরাপদ স্যালাইন দিয়ে তা ধোয়ার চেষ্টা করা যেতে পারে।

৫. চোখ না চেপে রাখা: অনেকে অস্বস্তি থেকে চোখ বন্ধ করে রাখেন এবং চাপ প্রয়োগ করেন। এটি চোখে চাপ সৃষ্টি করে, যা পরিস্থিতি আরও খারাপ করতে পারে। চোখকে আরামদায়ক অবস্থায় রেখে স্বাভাবিকভাবে খুলে রাখতে চেষ্টা করুন।

৬. বিশ্রাম নেওয়া: চোখে কোনো কিছু পড়লে দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হতে পারে। এমন অবস্থায় বই পড়া, মোবাইল দেখা বা টিভি দেখা থেকে বিরত থাকা উচিত। চোখকে বিশ্রাম দিলে তা দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারে।


চোখে রাসায়নিক বা দাহ্য পদার্থ পড়লে

এটি একটি জরুরি পরিস্থিতি। সাবান, ব্লিচ, অ্যাসিড বা অন্য কোনো রাসায়নিক চোখে পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে চোখ খোলা রেখে বিশ মিনিটের মতো পানি দিয়ে ধুতে হবে। এরপর যত দ্রুত সম্ভব চোখের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যাওয়া জরুরি। দেরি করলে চিরস্থায়ী ক্ষতি হতে পারে।

 

চোখে রাসায়নিক পড়লে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। ছবি এআই

 

চোখে কী পড়েছে তা বুঝে করণীয় নির্ধারণ

চোখে পড়া বস্তুর ধরন বুঝে করণীয় কিছুটা ভিন্ন হয়। নিচে তা বিস্তারিতভাবে বলা হলো —

ক. ধুলাবালি বা ছোট কণা: এ ধরনের কিছু পড়লে তা সাধারণত চোখে ঘষে অস্বস্তির সৃষ্টি করে। এই অবস্থায় চোখ ধোয়া এবং চোখে বরফ ঠান্ডা পানি দিয়ে কমপ্রেস করাই যথেষ্ট।

খ. পোকা বা পতঙ্গ: কখনো চোখে ছোট পোকা ঢুকে যেতে পারে। চোখ বন্ধ করে বরফ ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন এবং কোনো বস্তু থাকলে তা বেরিয়ে আসবে।

গ. ধাতব কণা বা কাচের টুকরা: এ ধরনের বস্তু চোখে প্রবেশ করলে তা চোখে ক্ষতের সৃষ্টি করতে পারে। এক্ষেত্রে কোনোভাবেই নিজেরা তা বের করার চেষ্টা করা উচিত নয়। দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

ঘ. রাসায়নিক পদার্থ: পানি দিয়ে চোখ ধুয়ে, চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

 

চোখ ফুলে গেলে বা চুলকানি বেড়ে গেলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। ছবি এআই

 

কখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে

নিচের যেকোনো লক্ষণ দেখা গেলে দ্রুত চোখের চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে —
• চোখ লাল হয়ে যাওয়া ও তা না কমা।
• চোখে তীব্র ব্যথা।
• আলো সহ্য করতে না পারা।
• ঝাপসা দেখা বা চোখে দৃষ্টিশক্তি হ্রাস।
• চোখ ফুলে যাওয়া বা চুলকানি বেড়ে যাওয়া।
• ধোয়ার পরও বস্তু চোখে লেগে থাকা।

 

করণীয় নয় এমন কিছু কাজ

• চোখ ঘষা বা চাপ দেয়া।
তুলা বা নোংরা কাপড় দিয়ে চোখ মোছা।
• চোখে নিজে নিজে ওষুধ বা ড্রপ ব্যবহার করা (ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া)।
• দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হলেও চোখে অতিরিক্ত কাজ চালিয়ে যাওয়া।

 

ধুলাবালি বা রাসায়নিক কাজের সময় সুরক্ষা চশমা ব্যবহার করতে হবে। ছবি এআই

 

প্রতিরোধের উপায়

• ধুলাবালি বা রাসায়নিক কাজের সময় সুরক্ষা চশমা ব্যবহার করা।
• রান্নাঘরে রান্নার সময় বা টয়লেট পরিষ্কার করার সময় চোখ বাঁচিয়ে কাজ করা।
• বাইক চালানোর সময় হেলমেট বা চশমা ব্যবহার করা।

 

উপসংহার

চোখে কিছু পড়লে আতঙ্কিত না হয়ে মাথা ঠান্ডা রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চোখের প্রাথমিক যত্ন ও দ্রুত সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করলে অনেক বড় ক্ষতি এড়ানো যায়। তবে সবসময় মনে রাখতে হবে, চোখের কোনো সমস্যা বা সন্দেহ হলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যাওয়াই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।

শিশুর স্থূলতা থেকে নানা সমস্যা

প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৫৮ পিএম
আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৫৯ পিএম
শিশুর স্থূলতা থেকে নানা সমস্যা
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ শিশুর স্থূলতা প্রতিরোধ করতে পারে। ছবি এআই

শিশুর স্থূলতা একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা, যা বিশ্বব্যাপী শিশুদের প্রভাবিত করে। এটি শিশুদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে।

শিশুর স্থূলতার কারণ    
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: ফাস্টফুড, চিনিযুক্ত পানীয় এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশি খাওয়া।
শারীরিক কার্যকলাপের অভাব: খেলাধুলা এবং অন্যান্য শারীরিক ক্রিয়াকলাপের অভাব।
বংশগতি: স্থূলতার বংশগতি/পারিবারিক ইতিহাস থাকা।
মানসিক কারণ: মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা বিষণ্নতা।
চিকিৎসা: কিছু ওষুধ ওজন বৃদ্ধি করতে পারে।
এ ছাড়া কিছু রোগ, যেগুলো শিশুদের স্থূলতার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। যেমন- হাইপোথাইরয়েডিজম, কুশিং সিনড্রোম, হাইপারইনসুলিনেমিয়া। এ ছাড়া ডাউন সিনড্রোমের কারণেও শিশু মোটা হতে পারে।


শিশুর স্থূলতার জন্য যেসব রোগের ঝুঁকি বাড়ে
ডায়াবেটিস
উচ্চ রক্তচাপ
উচ্চ কোলেস্টেরল
হৃদরোগ
অ্যাজমা
পিত্তথলিতে পাথর
স্কিন ইনফেকশন
অকালপক্ব বয়ঃসন্ধি
স্ট্রোক
ক্যানসার
হাড়ের সমস্যা
ঘুমের সমস্যা
মানসিক সমস্যা


শিশুর স্থূলতার প্রতিরোধ ও প্রতিকার
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: ফল, শাকসবজি, গোটা শস্য এবং চর্বিহীন প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া।
নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ: প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০-৬০ মিনিট খেলাধুলা, সাইকেল চালানো, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা অথবা অন্যান্য কার্যকলাপ।
পারিবারিক সমর্থন: স্বাস্থ্যকর জীবনধারা পরিবর্তনের জন্য পরিবারের সদস্যদের সমর্থন প্রয়োজন।
চিকিৎসকের পরামর্শ: শিশুর ওজন বা স্থূলতা নিয়ে উদ্বিগ্ন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।      

শিশুর স্থূলতা সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
শিশুর স্থূলতা একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ শিশুর স্থূলতা প্রতিরোধ করতে পারে।
শিশুর স্থূলতা শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে।
বাবা-মায়ের সচেতনতা শিশুর স্থূলতা প্রতিরোধে সব থেকে বেশি জরুরি।

লেখক: শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, আলোক মাদার অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার, মিরপুর, ঢাকা

বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস ম্যালেরিয়া রোগ নিয়ে আতঙ্ক নয়

প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৫০ পিএম
আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৫৪ পিএম
ম্যালেরিয়া রোগ নিয়ে আতঙ্ক নয়
স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশা ম্যালেরিয়ার জন্য দায়ী। ছবি এআই

আগামীকাল বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস ২০২৫। ম্যালেরিয়া হলো মানুষ এবং অন্য প্রাণীদের একটি মশাবাহিত সংক্রামক রোগ। এর মূলে রয়েছে প্লাজমোডিয়াম গোত্রের প্রোটিস্টা (এক ধরনের অণুজীব)। ম‍্যালেরিয়া শব্দটি সর্বপ্রথম ব‍্যবহার হয় ১৭৫৩ সালে। ইতালীয় শব্দ দূষিত বায়ু থেকে ম্যালেরিয়া শব্দটি এসেছে। তখন মানুষ মনে করত দূষিত বায়ু সেবনে এ রোগ হয়।
১৮৮০ সাল নাগাদ চার্লস ল্যাভেরন লোহিত রক্ত কণিকা থেকে ম্যালেরিয়ার কারণ হিসেবে একটি কোষবিশিষ্ট পরজীবী প্রোটোজোয়াকে চিহ্নিত করেন। ফলে শত বছর ধরে চলা দূষিত বায়ু সেবনের ফলে রোগ সৃষ্টির ভুল ধারণার অবসান ঘটে। ১৮৯৭ সালে ভারতে কর্মরত ব্রিটিশ ডাক্তার স‍্যার রোনাল্ড রস প্রমাণ করেন যে, অ্যানোফিলিস মশা এই রোগের বাহক হিসেবে কাজ করে। এ যুগান্তকারী আবিষ্কারের কারণে তাকে ১৯০২ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়।
এটি একটি সংক্রমিত স্ত্রী মশার (অ্যানোফিলিস মশা) কামড়ের সঙ্গে শুরু হয়, যা তার লালার মাধ্যমে প্রোটিস্টর সংবহন তন্ত্রের মধ্যে প্রবেশ করে এবং শেষে যকৃতে পৌঁছায়, যেখানে তারা পরিপক্ব হয় এবং বংশবৃদ্ধি করে। ম্যালেরিয়ার সাধারণ রোগের লক্ষণগুলো হলো জ্বর এবং মাথাব্যথা, যা খুব গুরুতর ক্ষেত্রে কোমা বা মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
বাংলাদেশে ১ কোটি ৭৫ লাখ ২০ হাজার মানুষ ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ১৩ জেলায় ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেশি। প্রতি বছর এ রোগে অসুস্থতা এবং মৃত্যুর প্রায় ৯৮ শতাংশ এই ১৩ জেলায় হয়ে থাকে। জেলাগুলো হলো- রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, শেরপুর ও কুড়িগ্রাম।


যেভাবে ম্যালেরিয়া ছড়ায়
স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশার কামড়ে দেহে প্রবেশ করে স্যালাইভা। তারপর প্রোটিস্ট নামক অণুজীবের মাধ্যমে রক্তে ছড়িয়ে পড়ে পরজীবী। এর ফলে দেখা দেয় ম্যালেরিয়া। এ পর্যন্ত ৬০-এর অধিক প্রজাতির ম্যালেরিয়া পরজীবী আবিষ্কার করা সম্ভব হলেও এর মধ্যে চারটি প্রজাতি মানুষের ম্যালেরিয়ার জন্য দায়ী।
প্লাজমোডিয়াম ভাইভাক্স, ফ্যালসিপ্যারাম, ম্যালেরি ও ওভাল-এর যেকোনো একটি জীবাণু বহনকারী মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া হতে পারে। এর মধ্যে ফ্যালসিপ্যারাম ম্যালেরিয়ার সবচেয়ে মারাত্মক, যা মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে।

কেন এই রোগটি মারাত্মক?
মশার মাধ্যমে সংক্রমিত ম্যালেরিয়া রোগটি কীভাবে প্রাণঘাতী রোগ হয়ে উঠল, এ বিষয়ের অজানা তথ্য ওঠে এসেছে রোগটির ওপর জেনেটিক গবেষণায়। ক্যামব্রিজের ওয়েলকাম স্যাংগার ইনস্টিটিউটের গবেষকদের নেতৃত্বে এক গবেষণায় জানা যায়, এ পরজীবীর বংশতালিকা অনুযায়ী সাত ধরনের ম্যালেরিয়ার বিষয়ে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
সেখানে তারা দেখতে পেয়েছেন, প্রায় ৫০ হাজার বছর আগে এই জীবাণুটি রূপান্তরিত হয়ে রোগের নতুন একটি শাখায় রূপান্তরিত হয়। যা মানবজাতির জন্য মারাত্মক সংক্রমণের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। নেচার মাইক্রোবায়োলজি নামে জার্নালে এই গবেষণার তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।

ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণগুলো
নির্দিষ্ট সময় পরপর কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা এ রোগের প্রধান লক্ষণ। জ্বর সাধারণত ১০৫-১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে।
নিয়মিত ও নির্দিষ্ট বিরতিতে জ্বর আসা-যাওয়া করে। জ্বর তিন থেকে চার ঘণ্টা দীর্ঘ হয়। এরপর ঘাম দিয়ে জ্বর কমে যায়।
জ্বর ছেড়ে গেলে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যেতে পারে।
এ ছাড়া মাঝারি থেকে তীব্র কাঁপুনি বা শীত শীত অনুভব, গায়ে প্রচণ্ড ব্যথা, মাথাব্যথা, অনিদ্রা দেখা দেয়।
খাবারের প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়া বা ক্ষুধামন্দা, কোষ্ঠকাঠিন্য, বমি বমি ভাব অথবা বমি, হজমে গোলযোগে ভোগে রোগী।
অত্যধিক ঘাম হওয়া, খিঁচুনি, পিপাসা লাগা, ক্লান্তি বা অবসাদ অনুভব করা, মাংসপেশি, তলপেটে ব্যথা অনুভব, প্লীহা ও যকৃৎ বড় হয়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়।
ম্যালেরিয়া হলে লোহিত রক্তকণিকা ধ্বংস হওয়ার কারণে অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা দেখা দেয়।
ম্যালেরিয়া রোগের জটিলতম ধরন হলো ‘ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়া’। সাধারণ ম্যালেরিয়ার মতো উপসর্গ দেখা দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের জটিলতা দেখে দেয়। যেমন- রক্তশূন্যতা, কিডনি বৈকল্য, শ্বাসকষ্ট হওয়া, জন্ডিস, খিঁচুনি, রক্তে গ্লুকোজ কমে যাওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পায়। জরুরি চিকিৎসা না পেলে এসব রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।

রোগ নির্ণয় ও ম্যালেরিয়ার চিকিৎসা
ম্যালেরিয়া সন্দেহ হলে অবশ্যই আগে পরীক্ষা করাতে হবে। যদি ম্যালেরিয়া ধরা না পড়ে; তাহলে পরপর তিন দিন পরীক্ষাটি করতে হবে। যদি ম্যালেরিয়া শনাক্ত হয়; তাহলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। 

ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে যা করবেন
ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের জন্য এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো টিকা আবিষ্কৃত হয়নি। তবে এ রোগ সম্পূর্ণভাবে আরোগ্য হয়। 
মশাবাহিত রোগ থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে হলে সচেতন থাকতে হবে। মশার কামড় থেকে দূরে থাকাই এ রোগ প্রতিরোধের উপায়।
দিনে বা রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি বা কয়েল ব্যবহার করতে হবে।
দরজা-জানালায় জাল, প্রতিরোধক ক্রিম, স্প্রে ব্যবহার করুন।
ঘরের আশপাশে কোথাও যেন পানি জমে মশা বংশবিস্তার না করতে পারে; সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
জলাবদ্ধ এলাকা নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। কারণ জমা পানিতে মশা ডিম পাড়ে।
মশাবহুল স্থানে কীটনাশক বা কেরোসিন ছিটিয়ে দিন।
ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকায় ঘুরতে গেলে, চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী ওষুধ সঙ্গে রাখুন।
পরিশেষে, উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে ম্যালেরিয়া থেকে আরোগ্য লাভ করা সম্ভব। ম্যালেরিয়া রোগে অধিকাংশ মৃত্যুর কারণ হলো সময়মতো রোগ শনাক্ত না হওয়া এবং চিকিৎসায় বিলম্ব। সে জন্য জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। রোগের লক্ষণ দেখা দিলে, জটিলতা সৃষ্টির আগেই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। তাই এই বছর ১৮তম বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস এবং ম্যালেরিয়ার বিধ্বংসী প্রভাবের থেকে নিজেদের রক্ষার উপযুক্ত সময়। সরকার, দাতা সংস্থা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, এনজিও, গবেষক ও নাগরিকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ম্যালেরিয়া নির্মূল করা সম্ভব।