
প্রতিবছর মার্চ মাসের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবার বিশ্বব্যাপী বিশ্ব কিডনি দিবস পালন করা হয়। ২০২৫ সালের বিশ্ব কিডনি দিবস উদযাপিত হবে ১৩ মার্চ। এ দিবসের মূল উদ্দেশ্য হলো- কিডনি রোগ সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা, এর প্রতিরোধের উপায় জানানো এবং সুস্থ কিডনি বজায় রাখার গুরুত্ব তুলে ধরা। বিশ্বজুড়ে কিডনি রোগের হার ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং অনেক ক্ষেত্রেই এটি নীরবে দেহের ক্ষতিসাধন করে। তাই এ রোগের সচেতনতা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা খুবই জরুরি।
কিডনি ও এর গুরুত্ব
কিডনি মানবদেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটা রক্ত পরিশোধন, শরীর থেকে বিষাক্ত বর্জ্য অপসারণ, পানির ভারসাম্য রক্ষা, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং লবণ ও খনিজ উপাদানের মাত্রা ঠিক রাখার কাজ করে। কিডনি রোগ একটি নীরব ঘাতক। প্রাথমিক পর্যায়ে এর লক্ষণগুলো স্পষ্ট না হওয়ায় অনেকেই বুঝতে পারেন না যে তারা কিডনি রোগে আক্রান্ত। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা এবং ধূমপানের মতো কারণগুলো কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। দুটি কিডনির স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হলে দেহে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়, যা ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপনের মতো গুরুতর চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।
কিডনি রোগের কারণ ও লক্ষণ
বিভিন্ন কারণ কিডনি রোগের জন্য দায়ী হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে—
ডায়াবেটিস: দীর্ঘদিনের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস কিডনির কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ: উচ্চ রক্তচাপ কিডনির ক্ষতি করে এবং ক্রনিক কিডনি রোগের (CKD) অন্যতম প্রধান কারণ।
অতিরিক্ত ওষুধ সেবন: ব্যথানাশক ওষুধ বা স্টেরয়েডের অতিরিক্ত ব্যবহার কিডনির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন: অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ, ধূমপান, মদ্যপান এবং পানি কম পান করা কিডনি সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়।
কিডনি রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলো অনেক সময় স্পষ্টভাবে বোঝা যায় না, তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো—
হাত, পা ও চোখের চারপাশে ফোলা।
প্রস্রাবে পরিবর্তন (বারবার প্রস্রাব হওয়া বা প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া)।
উচ্চ রক্তচাপ।
ক্লান্তি ও দুর্বলতা।
ক্ষুধা মান্দ্য ও বমি ভাব।
কিডনি রোগ প্রতিরোধে করণীয়
কিডনি সুস্থ রাখতে কিছু সহজ কিন্তু কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে—
পর্যাপ্ত পানি পান করুন: প্রতিদিন কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন।
সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন: বেশি ফলমূল ও শাকসবজি খান এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন।
রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন: নিয়মিত রক্তচাপ ও ব্লাড সুগার পরীক্ষা করুন।
অতিরিক্ত লবণ এড়িয়ে চলুন: অতিরিক্ত লবণ কিডনির ওপর চাপ সৃষ্টি করে।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম করুন।
অ্যালকোহল ও ধূমপান পরিহার করুন: এগুলো কিডনি-স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
অপ্রয়োজনীয় ওষুধ গ্রহণ এড়িয়ে চলুন: চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যথানাশক ওষুধ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন।
বিশ্ব কিডনি দিবসের লক্ষ্য
বিশ্ব কিডনি দিবসের মূল লক্ষ্য হলো- কিডনি রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা। এই দিনে বিভিন্ন সেমিনার, ওয়ার্কশপ, স্বাস্থ্য শিবির এবং মিডিয়া ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে কিডনি-স্বাস্থ্যের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়।
উপসংহার
কিডনি রোগ প্রতিরোধযোগ্য এবং সঠিক জীবনযাপন অনুসরণ করলে কিডনি সুস্থ রাখা সম্ভব। বিশ্ব কিডনি দিবস কেবল সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নয়, বরং এটি আমাদের স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গঠনের একটি সুযোগ। ২০২৫ সালের এই দিনে- আসুন, কিডনি সুরক্ষার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই এবং সুস্থ জীবনধারার দিকে এগিয়ে যাই। কিডনি সুস্থ রাখুন, জীবন বাঁচান!
লেখক: কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ ও সহযোগী অধ্যাপক, কিডনি বিভাগ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, মহাখালী, ঢাকা।