
রমজান মাসে রোজা রাখার কারণে দীর্ঘ সময় পানাহার না করার ফলে অনেকের মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হতে পারে। এটি বেশ স্বাভাবিক একটি বিষয়, তবে এটি এড়ানোর জন্য কিছু কার্যকর উপায় রয়েছে।
মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার কারণ
রোজার সময় মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার মূল কারণ হলো দীর্ঘ সময় পানাহার না করা এবং লালার পরিমাণ কমে যাওয়া। এতে মুখের ব্যাকটেরিয়া সক্রিয় হয়ে গন্ধ তৈরি করে। এ ছাড়া কিছু নির্দিষ্ট কারণ দুর্গন্ধ সৃষ্টি করতে পারে। যেমন-
ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা
দীর্ঘ সময় পানি পান না করার ফলে মুখ শুকিয়ে যায় এবং ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ঘটে, যা দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে।
খাবারের অবশিষ্টাংশ
সাহরি বা ইফতারে গ্রহণ করা খাবারের ছোট ছোট কণা দাঁতের ফাঁকে থেকে যায়, যা ব্যাকটেরিয়ার জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে।
অপরিষ্কার দাঁত ও মাড়ি
নিয়মিত ব্রাশ ও ফ্লস না করলে দাঁত ও মাড়ির মধ্যে খাবারের কণা জমে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করতে পারে।
অতিরিক্ত মসলাযুক্ত বা দুগ্ধজাত খাবার
রসুন, পেঁয়াজ, দুগ্ধজাত খাবার বেশি খেলে মুখে দুর্গন্ধ বাড়তে পারে।
অ্যাসিডিটি ও হজমজনিত সমস্যা
রোজায় অনেকে খালি পেটে থাকায় অ্যাসিডিটি ও হজমজনিত সমস্যা অনুভব করেন, যা মুখে খারাপ গন্ধ তৈরি করতে পারে।
ধূমপান বা তামাকজাত দ্রব্য সেবন
রোজার আগে ধূমপান বা তামাকজাত দ্রব্য গ্রহণ করলে এটি মুখের স্বাস্থ্য খারাপ করে এবং দুর্গন্ধের কারণ হতে পারে।
মুখের দুর্গন্ধ প্রতিরোধের উপায়
রোজার সময় মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে কিছু সহজ ও কার্যকর উপায় অনুসরণ করা যায়।
পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন
• ইফতার থেকে সাহরি পর্যন্ত প্রচুর পানি পান করুন।
• শরীর হাইড্রেটেড থাকলে লালা উৎপাদন স্বাভাবিক থাকবে, যা মুখের দুর্গন্ধ কমায়।
• ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় (চা, কফি) কম পান করুন, কারণ এটি শরীর থেকে পানি কমিয়ে দিতে পারে।
সঠিকভাবে দাঁত ও মুখ পরিষ্কার করুন
• সাহরি ও ইফতারের পর অবশ্যই দুইবার ভালোভাবে ব্রাশ করুন।
• দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা খাবারের কণা দূর করতে ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করুন।
• মাউথওয়াশ ব্যবহার করুন (অ্যালকোহলমুক্ত মাউথওয়াশ ভালো, কারণ অ্যালকোহল মুখ শুকিয়ে ফেলতে পারে)।
• জিহ্বা পরিষ্কার করুন, কারণ এর ওপরে ব্যাকটেরিয়া জমে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করতে পারে।
মুখ আর্দ্র রাখুন
• রোজার সময় লালা উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে চেষ্টা করুন।
• চুইংগাম চাবানো সম্ভব না হলেও সাহরিতে এমন খাবার খান যা লালা উৎপাদন বাড়ায়, যেমন আপেল বা শসা।
খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করুন
• সাহরিতে দুগ্ধজাত খাবার কম খান, কারণ এগুলো ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ঘটায়।
• অতিরিক্ত মসলাযুক্ত ও ভাজাপোড়া খাবার পরিহার করুন, যা অ্যাসিডিটি বাড়িয়ে মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করতে পারে।
• ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খান, যেমন শাকসবজি ও ফলমূল, যা মুখের ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সাহায্য করে।
লবণ-পানি ও মিসওয়াক ব্যবহার করুন
• দিনে কয়েকবার লবণ-পানি দিয়ে কুলি করুন, এটি মুখের ব্যাকটেরিয়া কমায়।
• মিসওয়াক সুন্নত এবং এটি প্রাকৃতিকভাবে দাঁত পরিষ্কার রাখে ও মুখের দুর্গন্ধ দূর করে।
তাজা ও সুগন্ধিযুক্ত খাবার খান
• পুদিনা পাতা, এলাচ, লবঙ্গ চিবোতে পারেন (ইফতার ও সাহরির সময়), যা মুখের দুর্গন্ধ দূর করে।
• লেবু ও আদাযুক্ত গরম পানি পান করলে মুখের ব্যাকটেরিয়া কমে।
শ্বাসনালি ও হজমতন্ত্রের যত্ন নিন
• অ্যাসিডিটি কমানোর জন্য খাবারের পর হালকা হাঁটাহাঁটি করুন।
• বেশি তেল-চর্বিযুক্ত খাবার কম খান। কারণ, এটি হজমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
ঘরোয়া সমাধান
রোজার সময় মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে কিছু প্রাকৃতিক উপায় অবলম্বন করা যায়। যেমন-
• পুদিনা পাতা বা গ্রিন টি পান করুন (ইফতার ও সাহরিতে)।
• লবঙ্গ বা দারুচিনি চিবান, যা প্রাকৃতিকভাবে ব্যাকটেরিয়া দূর করে।
• তুলসী পাতা বা মৌরি চিবান, যা দীর্ঘ সময় মুখকে সতেজ রাখে।
• নারকেল তেল ব্যবহার (Oil Pulling) – সকালে খালি পেটে ৫-১০ মিনিট নারকেল তেল মুখে রেখে কুলকুচি করুন, যা ব্যাকটেরিয়া দূর করে।
শেষ কথা
রোজার সময় মুখের দুর্গন্ধ একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। নিয়মিত মুখের যত্ন নেওয়া, পর্যাপ্ত পানি পান করা, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা এবং প্রাকৃতিক সমাধান ব্যবহার করলে মুখ সতেজ থাকবে। সুস্থ ও স্বস্তিদায়ক রোজা পালনের জন্য এই টিপসগুলো অনুসরণ করুন এবং প্রতিদিনের অভ্যাসে পরিবর্তন আনুন।