
আমাদের মনের অবস্থা ও আবেগের সঙ্গে খাদ্যের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। কিছু নির্দিষ্ট খাবার আমাদের মস্তিষ্কে সেরোটোনিন, ডোপামিন এবং এন্ডোরফিনের মতো ‘হ্যাপি হরমোন’ বাড়িয়ে মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। এ ছাড়া, পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ খাবার মানসিক চাপ কমিয়ে মনকে প্রশান্ত করে। আসুন, জেনে নেওয়া যাক কোন কোন খাবার মন ভালো রাখতে সহায়ক—
ডার্ক চকলেট
ডার্ক চকলেটে প্রচুর পরিমাণে ফ্ল্যাভোনয়েড, ক্যাফেইন এবং থিওব্রোমিন থাকে, যা মস্তিষ্কে সেরোটোনিনের মাত্রা বাড়িয়ে মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। এটি দেহে এন্ডোরফিন নিঃসরণ ঘটায়, যা তাৎক্ষণিকভাবে আনন্দের অনুভূতি সৃষ্টি করে।
কলা
কলায় রয়েছে ভিটামিন বি৬, যা মস্তিষ্কে সেরোটোনিন উৎপাদন বাড়ায়। এটি মানসিক অবসাদ দূর করতে সাহায্য করে এবং মনকে ফুরফুরে করে তোলে। এ ছাড়া, কলায় থাকা প্রাকৃতিক চিনি এবং ফাইবার শরীরে শক্তি জোগায় ও ক্লান্তি দূর করে।
বাদাম ও বীজজাতীয় খাবার
আখরোট, কাজু বাদাম, পেস্তা বাদাম, কাঠ বাদাম এবং সূর্যমুখীর বীজে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ম্যাগনেসিয়াম, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। এগুলো স্ট্রেস হরমোন কমিয়ে দেয় এবং মনকে প্রশান্ত করে।

দই ও অন্যান্য ফার্মেন্টেড খাবার
দইয়ে রয়েছে প্রোবায়োটিক, যা অন্ত্রের সুস্থতা বজায় রাখে এবং মস্তিষ্কের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করে মুড ভালো রাখতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া কিমচি, কেফির ও কম্বুচার মতো ফার্মেন্টেড খাবারও মন ভালো রাখতে সাহায্য করে।
ওটস ও অন্যান্য পূর্ণ শস্য
ওটস ও ব্রাউন রাইসের মতো পূর্ণ শস্য ধীরে ধীরে গ্লুকোজ সরবরাহ করে, যা মস্তিষ্কের শক্তির উৎস। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং মন ভালো রাখতে সহায়ক হয়।
মাছ, বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ
স্যামন, টুনা, সার্ডিন, ট্রাউট এবং ম্যাকেরেলের মতো মাছ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড-সমৃদ্ধ, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত মাছ খেলে বিষণ্নতার ঝুঁকি কমে যায়।

ডিম
ডিমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন বি, ওমেগা-৩ এবং কোলিন থাকে, যা স্নায়ুতন্ত্রকে সুস্থ রাখে ও মানসিক চাপ কমায়। এটি মনোযোগ বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে।
কমলা ও অন্যান্য সাইট্রাস ফল
কমলা, লেবু ও মাল্টার মতো ফল ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ, যা কর্টিসল (স্ট্রেস হরমোন) কমিয়ে মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। এগুলোতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে।
গ্রিন টি
গ্রিন টিতে থিয়ানিন নামক অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে, যা মানসিক চাপ কমাতে ও মস্তিষ্ককে রিল্যাক্স করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টও আছে, যা মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়।

খেজুর ও মধু
খেজুর প্রাকৃতিক মিষ্টি, যা রক্তে শর্করার ভারসাম্য বজায় রাখে এবং তাৎক্ষণিকভাবে মস্তিষ্কে শক্তি জোগায়। মধুতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
দারুচিনি ও হলুদ
হলুদে কারকুমিন নামক শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান থাকে, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়িয়ে বিষণ্নতা কমায়। দারুচিনি মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে মানসিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
ব্রকোলি ও অন্যান্য সবুজ শাকসবজি
ব্রকোলি, পালং শাক, সরিষা শাক ও অন্যান্য সবুজ শাকসবজিতে প্রচুর ফোলেট ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে, যা বিষণ্নতা কমিয়ে মনকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে।

বিট
বিট শর্করা ও ফোলেট-সমৃদ্ধ, যা মস্তিষ্কে অক্সিজেনের প্রবাহ বাড়িয়ে মুড উন্নত করে। এটি ক্লান্তি দূর করে ও মন ভালো রাখে।
আঙুর ও বেরিজাতীয় ফল
স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, ব্ল্যাকবেরি ও রাস্পবেরির মতো বেরিতে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, যা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে ও স্মৃতিশক্তি বাড়ায়।

কফি
ক্যাফেইনযুক্ত কফি মানসিক উদ্দীপনা সৃষ্টি করে এবং মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। এটি ডোপামিন নিঃসরণ বাড়িয়ে মানসিক প্রশান্তি দেয়। তবে অতিরিক্ত কফি খাওয়া ঠিক নয়। কারণ এটি উদ্বেগ বাড়াতে পারে।
দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার
দুধে ট্রিপটোফান নামক অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে, যা সেরোটোনিন উৎপাদন বাড়ায় এবং মস্তিষ্ককে রিল্যাক্স করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া, এতে থাকা ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।
টমেটো
টমেটোতে প্রচুর লাইকোপিন ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা মানসিক চাপ কমিয়ে মুড ভালো রাখতে সাহায্য করে। এটি মস্তিষ্কের প্রদাহ কমাতেও কার্যকর।

খেসারি ও ছোলার ডাল
এগুলোর মধ্যে থাকা প্রোটিন ও বি-ভিটামিন মস্তিষ্কের সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং মানসিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখে।
মিষ্টি আলু
মিষ্টি আলুতে রয়েছে প্রচুর বিটা-ক্যারোটিন ও ফাইবার, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রেখে মানসিক চাপ কমায়।
মসলা ও ভেষজ চা
পুদিনা চা, ক্যামোমাইল চা ও আদা চা মানসিক চাপ কমাতে ও ঘুমের মান উন্নত করতে সাহায্য করে, যা মন ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ।

উপসংহার
সুস্থ ও আনন্দময় জীবনযাপনের জন্য পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক খাবার আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করে, বিষণ্নতা কমায় এবং মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। তাই খাদ্যাভ্যাসে এই স্বাস্থ্যকর খাবারগুলো যুক্ত করে আমরা সহজেই মানসিক প্রশান্তি লাভ করতে পারি।