ঢাকা ১০ বৈশাখ ১৪৩২, বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫
English
বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২

যে খাবারগুলো মন ভালো রাখতে সাহায্য করে

প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৫, ০১:০১ পিএম
আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২৫, ০১:০৬ পিএম
যে খাবারগুলো মন ভালো রাখতে সাহায্য করে
সঠিক খাবার আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করে, বিষণ্নতা কমায় এবং মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। ছবি এআই

আমাদের মনের অবস্থা ও আবেগের সঙ্গে খাদ্যের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। কিছু নির্দিষ্ট খাবার আমাদের মস্তিষ্কে সেরোটোনিন, ডোপামিন এবং এন্ডোরফিনের মতো ‘হ্যাপি হরমোন’ বাড়িয়ে মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। এ ছাড়া, পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ খাবার মানসিক চাপ কমিয়ে মনকে প্রশান্ত করে। আসুন, জেনে নেওয়া যাক কোন কোন খাবার মন ভালো রাখতে সহায়ক—

ডার্ক চকলেট
ডার্ক চকলেটে প্রচুর পরিমাণে ফ্ল্যাভোনয়েড, ক্যাফেইন এবং থিওব্রোমিন থাকে, যা মস্তিষ্কে সেরোটোনিনের মাত্রা বাড়িয়ে মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। এটি দেহে এন্ডোরফিন নিঃসরণ ঘটায়, যা তাৎক্ষণিকভাবে আনন্দের অনুভূতি সৃষ্টি করে।

 

কলা
কলায় রয়েছে ভিটামিন বি৬, যা মস্তিষ্কে সেরোটোনিন উৎপাদন বাড়ায়। এটি মানসিক অবসাদ দূর করতে সাহায্য করে এবং মনকে ফুরফুরে করে তোলে। এ ছাড়া, কলায় থাকা প্রাকৃতিক চিনি এবং ফাইবার শরীরে শক্তি জোগায় ও ক্লান্তি দূর করে।

 

বাদাম ও বীজজাতীয় খাবার
আখরোট, কাজু বাদাম, পেস্তা বাদাম, কাঠ বাদাম এবং সূর্যমুখীর বীজে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ম্যাগনেসিয়াম, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। এগুলো স্ট্রেস হরমোন কমিয়ে দেয় এবং মনকে প্রশান্ত করে।

বাদামে আছে ম্যাগনেসিয়াম, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। ছবি এআই

 

দই ও অন্যান্য ফার্মেন্টেড খাবার
দইয়ে রয়েছে প্রোবায়োটিক, যা অন্ত্রের সুস্থতা বজায় রাখে এবং মস্তিষ্কের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করে মুড ভালো রাখতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া কিমচি, কেফির ও কম্বুচার মতো ফার্মেন্টেড খাবারও মন ভালো রাখতে সাহায্য করে।

 

ওটস ও অন্যান্য পূর্ণ শস্য
ওটস ও ব্রাউন রাইসের মতো পূর্ণ শস্য ধীরে ধীরে গ্লুকোজ সরবরাহ করে, যা মস্তিষ্কের শক্তির উৎস। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং মন ভালো রাখতে সহায়ক হয়।

 

মাছ, বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ
স্যামন, টুনা, সার্ডিন, ট্রাউট এবং ম্যাকেরেলের মতো মাছ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড-সমৃদ্ধ, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত মাছ খেলে বিষণ্নতার ঝুঁকি কমে যায়।

সামুদ্রিক মাছ মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। ছবি এআই

 

ডিম
ডিমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন বি, ওমেগা-৩ এবং কোলিন থাকে, যা স্নায়ুতন্ত্রকে সুস্থ রাখে ও মানসিক চাপ কমায়। এটি মনোযোগ বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে।

 

কমলা ও অন্যান্য সাইট্রাস ফল
কমলা, লেবু ও মাল্টার মতো ফল ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ, যা কর্টিসল (স্ট্রেস হরমোন) কমিয়ে মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। এগুলোতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে।

 

গ্রিন টি
গ্রিন টিতে থিয়ানিন নামক অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে, যা মানসিক চাপ কমাতে ও মস্তিষ্ককে রিল্যাক্স করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টও আছে, যা মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়।

গ্রিন টির থিয়ানিন মস্তিষ্ককে রিল্যাক্স করতে সাহায্য করে। ছবি এআই

 


খেজুর ও মধু
খেজুর প্রাকৃতিক মিষ্টি, যা রক্তে শর্করার ভারসাম্য বজায় রাখে এবং তাৎক্ষণিকভাবে মস্তিষ্কে শক্তি জোগায়। মধুতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।

 

দারুচিনি ও হলুদ
হলুদে কারকুমিন নামক শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান থাকে, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়িয়ে বিষণ্নতা কমায়। দারুচিনি মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে মানসিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

 

ব্রকোলি ও অন্যান্য সবুজ শাকসবজি
ব্রকোলি, পালং শাক, সরিষা শাক ও অন্যান্য সবুজ শাকসবজিতে প্রচুর ফোলেট ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে, যা বিষণ্নতা কমিয়ে মনকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে।

ব্রকোলি বিষণ্নতা কমায়। ছবি এআই

 

বিট
বিট শর্করা ও ফোলেট-সমৃদ্ধ, যা মস্তিষ্কে অক্সিজেনের প্রবাহ বাড়িয়ে মুড উন্নত করে। এটি ক্লান্তি দূর করে ও মন ভালো রাখে।

 

আঙুর ও বেরিজাতীয় ফল
স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, ব্ল্যাকবেরি ও রাস্পবেরির মতো বেরিতে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, যা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে ও স্মৃতিশক্তি বাড়ায়।

আঙুরের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। ছবি এআই

 

কফি
ক্যাফেইনযুক্ত কফি মানসিক উদ্দীপনা সৃষ্টি করে এবং মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। এটি ডোপামিন নিঃসরণ বাড়িয়ে মানসিক প্রশান্তি দেয়। তবে অতিরিক্ত কফি খাওয়া ঠিক নয়। কারণ এটি উদ্বেগ বাড়াতে পারে।

 

দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার
দুধে ট্রিপটোফান নামক অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে, যা সেরোটোনিন উৎপাদন বাড়ায় এবং মস্তিষ্ককে রিল্যাক্স করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া, এতে থাকা ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।

 

টমেটো
টমেটোতে প্রচুর লাইকোপিন ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা মানসিক চাপ কমিয়ে মুড ভালো রাখতে সাহায্য করে। এটি মস্তিষ্কের প্রদাহ কমাতেও কার্যকর।

টমেটোতে প্রচুর লাইকোপিন রয়েছে, যা মুড ভালো রাখে। ছবি এআই

 

খেসারি ও ছোলার ডাল
এগুলোর মধ্যে থাকা প্রোটিন ও বি-ভিটামিন মস্তিষ্কের সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং মানসিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখে।

 

মিষ্টি আলু
মিষ্টি আলুতে রয়েছে প্রচুর বিটা-ক্যারোটিন ও ফাইবার, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রেখে মানসিক চাপ কমায়।

 

মসলা ও ভেষজ চা
পুদিনা চা, ক্যামোমাইল চা ও আদা চা মানসিক চাপ কমাতে ও ঘুমের মান উন্নত করতে সাহায্য করে, যা মন ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ।

আদা চা মানসিক চাপ কমাতে ও ঘুমের মান উন্নত করতে সাহায্য করে। ছবি এআই

 

উপসংহার
সুস্থ ও আনন্দময় জীবনযাপনের জন্য পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক খাবার আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করে, বিষণ্নতা কমায় এবং মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। তাই খাদ্যাভ্যাসে এই স্বাস্থ্যকর খাবারগুলো যুক্ত করে আমরা সহজেই মানসিক প্রশান্তি লাভ করতে পারি।

নিয়মিত দই খাওয়ার সুবিধা ও অসুবিধা

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৩১ পিএম
আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৩৬ পিএম
নিয়মিত দই খাওয়ার সুবিধা ও অসুবিধা
দই একটি পুষ্টিসমৃদ্ধ, উপকারী এবং সহজলভ্য খাদ্য। ছবি এআই

দই একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ও পুষ্টিকর খাদ্য। এটি মূলত দুধ থেকে প্রস্তুতকৃত এক প্রকার ফারমেন্টেড খাদ্য, যার স্বাদ টক-মিষ্টি এবং এটি আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর বিভিন্নভাবে প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে দই নিত্যদিনের খাদ্যতালিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। দইয়ে থাকে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি-২, ভিটামিন বি-১২, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম। তবে, সব খাদ্যের মতোই দইয়েরও কিছু কিছু অসুবিধা রয়েছে, যা জানা জরুরি।

 

দই খাওয়ার সুবিধা

◉ হজমে সহায়ক: দই প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্যবান্ধব ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এটি হজম প্রক্রিয়া সহজ করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। পাশাপাশি ডায়রিয়া ও গ্যাস-অম্বলের মতো সমস্যা প্রতিরোধে সহায়ক।

◉ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: দইয়ে থাকা প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে সক্রিয় করে এবং ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।

◉ হাড় ও দাঁতের জন্য উপকারী: দই ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের একটি চমৎকার উৎস। এই দুটি উপাদান হাড় ও দাঁতের গঠন ও মজবুতির জন্য অত্যন্ত জরুরি। নিয়মিত দই খেলে অস্টিওপরোসিস বা হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি হ্রাস পায়।

 

দইয়ে থাকা প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ছবি এআই

 

◉ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক: দইয়ে থাকা পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এটি দেহের সোডিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, যা রক্তচাপ হ্রাসে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

◉ ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে: দইয়ে প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর চর্বি থাকে, যা দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে। এতে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমে, ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।

◉ ত্বক ও চুলের যত্ন: দইতে থাকা দুধের ল্যাকটিক অ্যাসিড ত্বককে মসৃণ ও উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। এছাড়া এটি চুলের খুশকি দূর করতেও কার্যকর।

◉ মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন: গবেষণায় দেখা গেছে, দইয়ের প্রোবায়োটিক উপাদান মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটি বিষণ্ণতা ও উদ্বেগ হ্রাসে ভূমিকা রাখতে পারে।

 

দইতে থাকা দুধের ল্যাকটিক অ্যাসিড ত্বককে মসৃণ ও উজ্জ্বল করে। ছবি এআই

 

দই খাওয়ার অসুবিধা

◉ ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স: অনেক মানুষের দেহে ল্যাকটোজ নামক একটি দুধের শর্করা হজম করার জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইম (ল্যাকটেজ) থাকে না। ফলে তারা দই খেলে গ্যাস, ডায়রিয়া বা পেট ফাঁপার মতো সমস্যায় পড়েন।

◉ অতিরিক্ত খেলে ওজন বৃদ্ধি: যদি অতিরিক্ত চিনি বা মিষ্টি দিয়ে তৈরি দই নিয়মিত খাওয়া হয়, তবে তা শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি প্রবেশ করিয়ে ওজন বাড়াতে পারে।

◉ ঠান্ডাজনিত সমস্যা: অনেক সময় ঠান্ডা দই খেলে সর্দি-কাশি বা গলা ব্যথা হতে পারে, বিশেষ করে যাদের ঠান্ডাজনিত সমস্যা সহজে হয়।

◉ সংবেদনশীল ত্বকে সমস্যা: অনেকের ত্বক অত্যন্ত সংবেদনশীল হয়। এই ধরনের লোকেরা যদি নিয়মিত দই ব্যবহার করেন (বিশেষ করে সরাসরি ত্বকে), তবে ত্বকে জ্বালাপোড়া বা অ্যালার্জি হতে পারে।

◉ প্যাকেটজাত দইয়ের ক্ষতি: অনেক প্যাকেটজাত দইয়ে অতিরিক্ত কেমিক্যাল, প্রিজারভেটিভ এবং চিনির ব্যবহার করা হয়, যা দেহের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই সবসময় ঘরে তৈরি বা নির্ভরযোগ্য উৎসের দই খাওয়াই উত্তম।

 

দই হজম প্রক্রিয়া সহজ করে। ছবি এআই

 

কিছু সতর্কতা

• প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণে দই খাওয়া উচিত (প্রায় ১ কাপ বা ২০০ গ্রাম)।
• রাতে দই খাওয়া অনেকের জন্য হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে, তাই সকালের দিকে খাওয়াই ভালো।
• ঠান্ডা বা সংক্রামক রোগে আক্রান্ত অবস্থায় দই খাওয়া এড়িয়ে চলা ভালো।

 

সবশেষ

দই একটি পুষ্টিসমৃদ্ধ, উপকারী এবং সহজলভ্য খাদ্য। এটি নিয়মিত খেলে হজমশক্তি বৃদ্ধি, হাড়ের মজবুতি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোসহ নানা স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়। তবে দই খাওয়ার কিছু অসুবিধাও রয়েছে, বিশেষ করে যাদের ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স বা ঠান্ডাজনিত সমস্যা আছে তাদের জন্য। সবকিছুর মতই, দই খাওয়ায়ও পরিমিতি এবং সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত।

অতিবেগুনি রশ্মি থেকে বাঁচবেন যেভাবে

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:১৭ পিএম
আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:২১ পিএম
অতিবেগুনি রশ্মি থেকে বাঁচবেন যেভাবে
সচেতনতা, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গ্রহণের মাধ্যমে UV রশ্মির ক্ষতি থেকে বাঁচা সম্ভব। ছবি এআই

অতিবেগুনি রশ্মি (Ultraviolet Rays বা UV Rays) সূর্যের এক প্রকার অদৃশ্য বিকিরণ, যা মানুষের ত্বক, চোখ ও স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। অতিবেগুনি রশ্মি সাধারণত তিন প্রকার— UVA, UVB ও UVC। এর মধ্যে UVA ও UVB পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে এবং মানবদেহে ক্ষতি সাধন করে। তাই এই রশ্মি থেকে বাঁচতে সচেতনতা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। নিচে অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতি এবং তা থেকে বাঁচার উপায় বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।

 

অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতি

▶ ত্বকের ক্ষতি: অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে কোলাজেন ভেঙে দেয়, ফলে ত্বকে বলিরেখা, রুক্ষতা ও বয়সের ছাপ পড়ে। UVB রশ্মি সরাসরি ত্বকে পোড়ার (Sunburn) কারণ হয়।

▶ ত্বকের ক্যানসার: দীর্ঘ সময় অতিবেগুনি রশ্মির সংস্পর্শে থাকলে ত্বকের ক্যানসার, বিশেষ করে মেলানোমা (Melanoma) নামক মারাত্মক ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

▶ চোখের সমস্যা: UV রশ্মি চোখের কর্নিয়া ও লেন্সে প্রভাব ফেলে। এর ফলে ছানি পড়া (Cataract), ফোটোকেরাটাইটিস (Photokeratitis) বা অস্থায়ী অন্ধত্বের ঝুঁকি বাড়ে।

UV রশ্মি চোখের কর্নিয়া ও লেন্সে প্রভাব ফেলে। এর ফলে চোখে ছানি পড়ে। ছবি এআই

 

▶ ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হওয়া: অতিবেগুনি রশ্মি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। যার ফলে বিভিন্ন সংক্রমণ ও রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।

▶ ডিএনএ ক্ষতি: UV রশ্মি কোষের ডিএনএ গঠন নষ্ট করে, যা কোষের স্বাভাবিক গঠন ও কার্যকারিতা ব্যাহত করে এবং ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।

 

অতিবেগুনি রশ্মি থেকে বাঁচার উপায়

▶ সানস্ক্রিন ব্যবহার করা: সানস্ক্রিন হলো UV রশ্মি প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর উপায়। এতে SPF (Sun Protection Factor) নামক একটি উপাদান থাকে, যা ত্বকে UV রশ্মি প্রবেশ রোধ করে।
বাইরে যাওয়ার অন্তত ১৫-২০ মিনিট আগে SPF ৩০ বা তার বেশি মানের সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। প্রতি ২-৩ ঘণ্টা পর পুনরায় লাগাতে হবে, বিশেষ করে ঘামলে বা পানিতে নামলে। ঠোঁটের জন্য আলাদা লিপ বাম ব্যবহার করুন যাতে SPF থাকে।

▶ সানগ্লাস ব্যবহার করা: UV রশ্মি থেকে চোখ রক্ষা করতে UV প্রটেকশনযুক্ত সানগ্লাস ব্যবহার করা প্রয়োজন। এমন সানগ্লাস বেছে নিন যা ৯৯%-১০০% UVA ও UVB রশ্মি প্রতিরোধে সক্ষম। বড় ফ্রেম বা Wrap-around সানগ্লাস চোখের চারপাশের অঞ্চলও রক্ষা করে।

UV রশ্মি থেকে চোখ রক্ষা করতে UV প্রটেকশনযুক্ত সানগ্লাস ব্যবহার করা প্রয়োজন। ছবি এআই

 

▶ সঠিক পোশাক পরা: UV রশ্মি প্রতিরোধী বা ঘন বুননের কাপড় পরা উচিত। লম্বা হাতা জামা, লম্বা প্যান্ট, হ্যাট বা ছাতা ব্যবহার UV রশ্মির প্রভাব কমাতে সাহায্য করে। আজকাল বাজারে UV প্রতিরোধী কাপড়ও পাওয়া যায়।

▶ সূর্যের আলো এড়িয়ে চলা: সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে সূর্যের UV রশ্মি সবচেয়ে বেশি তীব্র হয়। এই সময়ের মধ্যে রোদে না যাওয়াই ভালো। জরুরি কাজে গেলে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। ছায়াযুক্ত জায়গায় অবস্থান করতে হবে।

▶ ছাতা ও হ্যাট ব্যবহার করা: বাইরে গেলে ছাতা ব্যবহার করুন, বিশেষ করে রোদ বেশি হলে। পাখা বা প্রশস্ত ব্রিমযুক্ত হ্যাট মাথা, মুখ ও ঘাড়কে রক্ষা করে।

▶ গাড়ির জানালা ও জানালায় UV ফিল্টার লাগানো: গাড়ির কাঁচে বা বাড়ির জানালায় UV প্রটেকশন ফিল্ম লাগালে সূর্যের UV রশ্মি ভিতরে প্রবেশ কম হয়।

▶ সন্তানদের বিশেষ যত্ন নেওয়া: শিশুরা UV রশ্মিতে বড়দের তুলনায় বেশি সংবেদনশীল। তাই তাদের জন্য সানস্ক্রিন, সানগ্লাস ও টুপি ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। শিশুদের দুপুরের রোদে খেলাধুলা করা থেকে বিরত রাখতে হবে।

বাইরে গেলে ছাতা ব্যবহার করুন, বিশেষ করে রোদ বেশি হলে। ছবি এআই

 

অতিরিক্ত টিপস

• বেশি পানি পান করুন: ত্বক আর্দ্র রাখলে UV ক্ষতির প্রভাব কিছুটা কমে।
• ট্যানিং বেড এড়িয়ে চলুন: ট্যানিং বেড থেকেও UV রশ্মি নির্গত হয়, যা ক্ষতিকর।
• খাবার: খাদ্যাভ্যাসে ভিটামিন C ও E যুক্ত খাবার রাখলে ত্বকের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

 

উপসংহার

অতিবেগুনি রশ্মি আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হলেও, এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়া একান্ত জরুরি। সচেতনতা, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গ্রহণের মাধ্যমে আমরা UV রশ্মির ক্ষতি থেকে নিজেদের ও পরিবারের সদস্যদের রক্ষা করতে পারি। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং ত্বক ও চোখের যত্নে বিশেষ মনোযোগ দিলে এই বিপদ অনেকাংশেই এড়ানো সম্ভব।

তীব্র গরমের সময় কী খাওয়া যাবে ও কী খাওয়া যাবে না

প্রকাশ: ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৪০ পিএম
আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:০০ পিএম
তীব্র গরমের সময় কী খাওয়া যাবে ও কী খাওয়া যাবে না
তীব্র গরমে সুস্থ ও সতেজ থাকার জন্য খাবারে সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। ছবি এআই

তীব্র গরমের সময় শরীর ও মন দুটোকেই সতেজ ও সুস্থ রাখতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গ্রীষ্মকালে আমাদের দেহ অতিরিক্ত ঘাম ঝরায়, যার ফলে পানি, লবণ ও খনিজ পদার্থের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। তাই এই সময় এমন কিছু খাবার নির্বাচন করা উচিত যা শরীরকে ঠান্ডা রাখে, পানিশূন্যতা রোধ করে এবং হজমের সমস্যা এড়াতে সাহায্য করে।

গরমের সময় কী খাওয়া উচিত

১. পানি ও পানিজাতীয় খাবার
গ্রীষ্মকালে সবচেয়ে জরুরি হলো শরীরের পানির ভারসাম্য বজায় রাখা। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করা উচিত (৮-১০ গ্লাস বা তার বেশি)। এর পাশাপাশি অন্যান্য হাইড্রেটিং পানীয়ও খাওয়া যেতে পারে যেমন—
◉ ডাবের পানি: প্রাকৃতিক ইলেকট্রোলাইট সমৃদ্ধ, পানিশূন্যতা রোধে সাহায্য করে।
◉ লেবুর শরবত: গ্লুকোজ বা লবণ দিয়ে খেলে তা শরীরকে চাঙ্গা করে ও শক্তি জোগায়।
◉ তাজা ফলের রস: যেমন তরমুজ, মাল্টা, কমলা ইত্যাদির রস শরীরকে ঠান্ডা রাখে।
◉ চিড়ার শরবত বা বেলের শরবত: হজমে সহায়ক এবং গরমে আরামদায়ক।

২. পানিশূন্যতা রোধকারী ফলমূল
গ্রীষ্মের ফলে প্রাকৃতিকভাবে অনেকটা পানি থাকে। কিছু জনপ্রিয় গ্রীষ্মকালীন ফল—
◉ তরমুজ: ৯২% পানি থাকে, শরীর ঠান্ডা রাখতে সহায়ক।
◉ খিরা (শসা): হাইড্রেটিং ও হালকা, হজম সহজ।
◉ বেল: ডায়রিয়া প্রতিরোধ করে, পেট ঠান্ডা রাখে।
◉ আমড়া, লিচু, জামরুল: ভিটামিন সমৃদ্ধ ও সুস্বাদু।

৩. হালকা ও সহজপাচ্য খাবার
গরমে ভারী খাবার হজমে সমস্যা করে, তাই হালকা ও কম চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত—
◉ খিচুড়ি, ডাল-ভাত, সবজি-ভাত।
◉ স্টিমড বা সিদ্ধ সবজি।
◉ স্যালাড (শসা, গাজর, টমেটো, ধনে পাতা)।
◉ গ্রিলড বা বেকড মাছ/মুরগি (কম তেলে)।

 

বেলের শরবত হজমে সহায়ক এবং গরমে আরামদায়ক। ছবি এআই

 

৪. দই
দই ঠান্ডা প্রকৃতির ও হজমে সহায়ক। সরবত বা ফল মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে (ফ্রুট ইয়োগার্ট)। ঘোল বা লাচ্ছিও উপকারী।

৫. ভেষজ পানীয় ও পানীয় চা
তুলসী, পুদিনা, অ্যালোভেরা বা আদা দিয়ে তৈরি হালকা চা গরমে স্বস্তি দেয় এবং হজমেও সাহায্য করে।

 

গরমের সময় কী খাওয়া উচিত নয়

১. ভাজাপোড়া ও তেল-চর্বিযুক্ত খাবার
গরমে ভাজাপোড়া খাবার হজমে সমস্যা করে এবং শরীরে অতিরিক্ত গরম সৃষ্টি করে। তাই বাদ দিতে হবে—
◉ সিঙ্গারা, সমোসা, পুরি, পাকোড়া।
◉ অতিরিক্ত মসলাযুক্ত তরকারি।
◉ বার্গার, ফ্রাইড চিকেন ইত্যাদি জাঙ্ক ফুড।

২. অতিরিক্ত মিষ্টি ও কোল্ড ড্রিঙ্কস
সফট ড্রিঙ্ক, বটলজাত শরবত বা এনার্জি ড্রিঙ্ক – এসব চিনি ও ক্যাফেইনসমৃদ্ধ পানীয় শরীরকে আরও পানিশূন্য করে তুলতে পারে। এছাড়া অতিরিক্ত মিষ্টি শরীরে গরম সৃষ্টি করে, ওজন বাড়ায় এবং অলসতা তৈরি করে।

৩. ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল
চা, কফি ও অ্যালকোহল শরীর থেকে পানি বের করে দেয় (ডাইইউরেটিক)। অতিরিক্ত খেলে পানিশূন্যতা ও মাথা ঘোরা হতে পারে।

 

ডাবের পানিতে আছে প্রাকৃতিক ইলেকট্রোলাইট। ছবি এআই

 

৪. মাংস ও অতিরিক্ত প্রোটিন
গরমে অতিরিক্ত প্রোটিন হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে। লাল মাংস বা গরুর মাংস তুলনায় বেশি গরম প্রকৃতির, তাই কম খাওয়া উচিত। মাছ ও মুরগি খাওয়া নিরাপদ, তবে পরিমাণে ও রান্নায় হালকা রাখাই ভালো।

৫. বাসি ও খোলা খাবার
গরমে খাবার দ্রুত নষ্ট হয়, তাই রান্নার পর দ্রুত ফ্রিজে রাখা উচিত এবং বাইরে খোলা জায়গার খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত। এতে ফুড পয়জনিং, ডায়রিয়া, টাইফয়েডের আশঙ্কা থাকে।

 

অতিরিক্ত টিপস

◉ খাবারের সাথে লেবু ও ধনে পাতা ব্যবহার করলে তা হজমে সহায়তা করে ও স্বাদ বাড়ায়।
◉ খাবার বেশি গরম অবস্থায় না খেয়ে একটু ঠান্ডা করে খাওয়া ভালো।
◉ প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় আঁশযুক্ত খাবার (ফাইবার) রাখা জরুরি যেন হজম ভালো থাকে।
◉ দিনে অন্তত ৪-৫ বার অল্প অল্প করে খাবার খাওয়া উচিত – একসাথে বেশি খাবার খেলে শরীর গরম হয়ে যায়।

 

উপসংহার

তীব্র গরমে সুস্থ ও সতেজ থাকার জন্য খাবারে সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। শরীরের পানির চাহিদা পূরণ, হালকা ও সহজপাচ্য খাবার গ্রহণ এবং অতিরিক্ত তেল, চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চললেই এই সময়টা আরামে কাটানো সম্ভব। মনে রাখবেন, আপনি যেমনটা খাবেন, তেমন থাকবেন। তাই গরমে সঠিক খাবার খাওয়ার গুরুত্ব অনেক বেশি।

হঠাৎ ব্লাড প্রেসার কমে গেলে যা করতে হবে

প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:২০ পিএম
আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:২৩ পিএম
হঠাৎ ব্লাড প্রেসার কমে গেলে যা করতে হবে
রক্তচাপ কমে যাওয়া একটি সাধারণ সমস্যা হলেও, এটি অবহেলা করলে গুরুতর হতে পারে। ছবি এআই

রক্তচাপ বা ব্লাড প্রেসার কমে গেলে (Low Blood Pressure বা Hypotension) শরীরে নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। মাথা ঘোরা, দুর্বলতা, চোখের সামনে অন্ধকার দেখা, এমনকি অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থাও হতে পারে। সাধারণভাবে, একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির স্বাভাবিক রক্তচাপ থাকে ১২০/৮০ mmHg। কিন্তু যদি রক্তচাপ ৯০/৬০ mmHg বা তার নিচে নেমে যায়, তখন একে লো ব্লাড প্রেসার বলা হয়।
আসুন দেখে নেই, ব্লাড প্রেসার কেন কমে যায়, কী লক্ষণ দেখা দেয়, এবং দ্রুত করণীয় কী কী।

 

রক্তচাপ কমে যাওয়ার কারণ

রক্তচাপ কমে যাওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। সাধারণ কিছু কারণ হলো—
• ডিহাইড্রেশন (Dehydration): শরীরে পানির অভাব হলে রক্তের পরিমাণ কমে যায়, ফলে রক্তচাপ হঠাৎ করে নিচে নেমে যেতে পারে।
• অনাহারে থাকা: দীর্ঘ সময় না খাওয়া বা কম ক্যালোরি গ্রহণের কারণে শরীরে শক্তি ও লবণের ঘাটতি হয়, যা রক্তচাপ কমিয়ে দেয়।
• রক্তাল্পতা (Anemia): রক্তে হিমোগ্লোবিন কম থাকলে অক্সিজেন পরিবহন বাধাগ্রস্ত হয়, রক্তচাপ কমে যায়।
• হৃদযন্ত্রের সমস্যা: হৃদযন্ত্র ঠিকমতো পাম্প না করলে সারা শরীরে রক্ত চলাচল কমে যায়।
• হরমোনের অসামঞ্জস্য: থাইরয়েড বা অ্যাড্রিনাল গ্ল্যান্ডের সমস্যাও রক্তচাপ কমিয়ে দিতে পারে।
• ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু ওষুধ যেমন ডায়ুরেটিকস, অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট বা উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ রক্তচাপ অনেকটা কমিয়ে ফেলতে পারে।
• গর্ভাবস্থা: গর্ভবতী নারীদের হরমোন পরিবর্তনের কারণে রক্তচাপ কিছুটা কমে যেতে পারে।
• সংক্রমণ বা শক: গুরুতর সংক্রমণের ফলে সেপটিক শক হতে পারে, যার ফলে রক্তচাপ বিপজ্জনকভাবে নেমে যেতে পারে।

কিছু ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় রক্তচাপ অনেকটা কমে যেতে পারে। ছবি এআই

 

লো ব্লাড প্রেসারের লক্ষণ

রক্তচাপ কমে গেলে শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গে রক্ত কম পৌঁছায়, ফলে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। যেমন—
• মাথা ঘোরা বা ভার ভার লাগা।
• চোখের সামনে ঝাপসা দেখা।
• ক্লান্তি বা দুর্বল লাগা।
• বমি বমি ভাব।
• বুক ধড়ফড় করা।
• অজ্ঞান হয়ে যাওয়া (Fainting)।
• ত্বক শুষ্ক ও ঠান্ডা হয়ে যাওয়া।
• শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া।

 

রক্তচাপ কমে গেলে যা করবেন

১. শুয়ে পড়ুন এবং পা উপরে তুলুন
রক্তচাপ কমে গেলে যত দ্রুত সম্ভব শুয়ে পড়ুন এবং পা দুটি মাথার চেয়ে উঁচুতে রাখুন। এতে রক্ত দ্রুত মস্তিষ্কে পৌঁছাতে পারে।

২. পানি পান করুন
যদি ডিহাইড্রেশন হয়, তাহলে দ্রুত পর্যাপ্ত পানি বা ওরস্যালাইন খাওয়া দরকার। এতে শরীরে তরলের ঘাটতি পূরণ হয় এবং রক্তচাপ বাড়ে।

৩. লবণযুক্ত কিছু খান
লবণে সোডিয়াম থাকে যা রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করে। এক গ্লাস পানিতে একটু লবণ ও চিনি মিশিয়ে খেতে পারেন বা সামান্য লবণযুক্ত কোনো খাবার গ্রহণ করতে পারেন।

৪. ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় খাওয়া
চা বা কফি সাময়িকভাবে রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। তবে যাদের হৃদ্যন্ত্রের সমস্যা আছে, তারা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ক্যাফেইন গ্রহণ করবেন না।

৫. ধীরে চলাফেরা করুন
হঠাৎ করে বসা বা শোয়া অবস্থা থেকে দাঁড়ালে রক্তচাপ আরও নিচে নেমে যেতে পারে। তাই ধীরে ধীরে উঠুন এবং একবারে উঠে দাঁড়াবেন না।

৬. জুতার মোজা বা স্টকিং ব্যবহার করুন
কমপ্রেশন স্টকিং বা মোজা পা থেকে রক্ত শরীরের উপরের দিকে উঠতে সাহায্য করে, এতে রক্তচাপ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকে।

চা বা কফি সাময়িকভাবে রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। ছবি এআই

 

কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন

রক্তচাপ কমে গেলে সবসময়ই আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই। কিন্তু যদি নিম্নলিখিত লক্ষণ দেখা যায়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে—
• বারবার অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
• শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া।
• বুকব্যথা।
• অতি দুর্বলতা বা অসুস্থ বোধ।
• রক্তচাপ ৭০/৫০ mmHg এর নিচে নেমে যাওয়া।
• কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই রক্তচাপ কমে যাওয়া।
চিকিৎসক প্রয়োজনে রক্ত পরীক্ষা, ইসিজি, ইকোকার্ডিওগ্রাম বা থাইরয়েড টেস্ট করাতে পারেন।

 

প্রতিরোধের উপায়

• পর্যাপ্ত পানি পান করুন, বিশেষ করে গরম আবহাওয়ায় বা শরীরচর্চার পরে।
• নিয়মিত ও পরিমাণমতো খাবার খান।
• হঠাৎ করে উঠে দাঁড়াবেন না, ধীরে ধীরে চলাফেরা করুন।
• দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকার সময় মাঝে মাঝে হাঁটাচলা করুন।
• চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ গ্রহণ করবেন না।
• শরীরে কোনো অসামঞ্জস্য থাকলে তা উপেক্ষা না করে পরীক্ষা করুন।

 

সবশেষ

রক্তচাপ কমে যাওয়া একটি সাধারণ সমস্যা হলেও, এটি অবহেলা করলে গুরুতর হতে পারে। বিশেষ করে যদি এর পেছনে কোনো রোগ লুকিয়ে থাকে। তাই লক্ষণ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। প্রতিদিনের জীবনধারায় কিছু পরিবর্তন এনে, সুষম খাদ্যগ্রহণ ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিয়ে আমরা রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে পারি। তবে যেকোনো শারীরিক সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে বা ঘন ঘন হলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
যদি আপনি বা আপনার পরিচিত কেউ বারবার এই সমস্যায় ভোগেন, তাহলে সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

ডাউন সিনড্রোম একটি দুরারোগ্য রোগ

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৪৩ পিএম
ডাউন সিনড্রোম একটি দুরারোগ্য রোগ
ডাউন সিনড্রোমের কোনো প্রতিকার নেই। তবে পরিচর্যার মাধ্যমে শারীরিক সমস্যাগুলো নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। ছবি এআই

মানবদেহে প্রতিটি কোষে ক্রোমোজম থাকে ৪৬টি। ডাউন সিনড্রোম ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রতিটি দেহকোষে ২১তম ক্রোমোজমে একটি অতিরিক্ত ক্রোমোজম থাকে, যাকে ‘ট্রাইসমি ২১’ বলা হয়। এই অতিরিক্ত ক্রোমোজমটির কারণে বিশেষ কিছু শারীরিক ও মানসিক ত্রুটি নিয়ে ডাউন সিনড্রোম শিশুর জন্ম হয়। ১৮৮৬ সালে ইংল্যান্ডে জন ল্যাংডন ডাউন নামে এক ব্যক্তি এটি আবিষ্কার করেন। তখন থেকেই এটি ডাউনস সিনড্রোম বা শুধু ডাউন সিনড্রোম বলে চিকিৎসাবিজ্ঞানে স্থান পায়। ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশে প্রতিদিন ১৫ জন ডাউন শিশু জন্ম নেয় এবং দেশে প্রতি বছর গড়ে ৫ হাজার ডাউন শিশু জন্মায়। 

ডাউন সিনড্রোমের প্রকারভেদ
ডাউন সিনড্রোম তিন প্রকার।
ট্রাইসোমি২১: সবচেয়ে সাধারণ প্রকার, প্রায় ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে এই ধরনের রোগী দেখা যায়। এদের শরীরের প্রতিটি কোষে ক্রোমোজোম ২১ এর তিনটি কপি থাকে।
ট্রান্সলোকেশন ডাউন সিনড্রোম: এই অবস্থা প্রায় ৪ শতাংশ ক্ষেত্রে ঘটে। এই সিন্ড্রোমে ক্রোমোজোম ২১-এর অংশ অন্য ক্রোমোজোমের সঙ্গে সংযুক্ত (ট্রান্সলোকেটেড) হয়ে যায়।
মোজাইক ডাউন সিনড্রোম: প্রায় ১ শতাংশ ক্ষেত্রে পাওয়া যায়, যেখানে কিছু কোষে ক্রোমোজোম ২১-এর তিনটি কপি থাকে, অন্যদের সাধারণত দুটি কপি থাকে।

ঝুঁকি
মায়ের বয়স ২০ বছরের কম বা ৩৫ বছর বেশি হলে এর ঝুঁকি বাড়ে। বয়স যত বেশি হবে, শিশুর ডাউনস সিনড্রোম হওয়ার আশঙ্কা তত বাড়বে। যেমন ৩৫ বছর বয়সের প্রতি ৩৫০ জন অন্তঃসত্ত্বার মধ্যে একজনের এবং ৪০ বছর বয়সের প্রতি ১০০ জন মায়ের একজনের ডাউন শিশু হতে পারে। অন্যদিকে কোনো মায়ের আগে একটি ডাউন শিশু থাকলে পরবর্তী সময়ে ডাউন শিশু হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। বাবা-মা ত্রুটিযুক্ত ক্রোমোজমের বাহক হলে তাদের সন্তানও ডাউন শিশু হতে পারে। যদি বাহক বাবা হন তবে সে ক্ষেত্রে ঝুঁকি থাকে ৩ শতাংশ আর মা হলে তা বেড়ে হয়ে যায় ১২ শতাংশ।

গর্ভাবস্থায় শনাক্তকরণ
পরীক্ষার মাধ্যমে জন্মের আগেই শিশুর ডাউন সিনড্রোম আছে কি না তা আশঙ্কা করা যায়। আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে মায়ের পেটে ১১ থেকে ১৪ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভস্থ শিশু ডাউন শিশু হিসেবে জন্ম নেওয়ার ঝুঁকি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। ডাউন সিনড্রোম সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য ক্রনিওনিকভিলাস স্যামপ্লিং করা প্রয়োজন হয়। তবে ক্রোমোজম পরীক্ষাই এ রোগ নিশ্চিতকরণের একমাত্র উপায়।

লক্ষণ ও জটিলতা
যেসব শিশু ডাউন সিনড্রোম নিয়ে জন্মগ্রহণ করে, তাদের মধ্যে যেসব লক্ষণ দেখা যায় সেগুলো হলো-

- শরীরের মাংসপেশি শক্তিশালী না হওয়া বা মাংসপেশিতে স্বাভাবিক শিশুদের মতো জোর না থাকা। একে মাংসপেশির শিথিলতা বলে এবং শিশু নরম তুলতুলে হয় যাকে ফ্লপি বেবি বলে।
- দুই চোখের বাইরের কোনা বাঁকাভাবে ওপরের দিকে উঠে থাকা।
- তাদের হাতের তালু জুড়ে একটি রেখা থাকতে পারে।
- নাক চ্যাপ্টা।
- কান ছোট ও নিচু।
- জিব বের হয়ে থাকা।
- জন্মের সময় শিশুর ওজন ও উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকা। ডাউন সিনড্রোম আক্রান্তদের মধ্যে ব্যক্তিত্ব ও সক্ষমতায় এবং বিভিন্ন মাত্রার বুদ্ধিমত্তা ও অক্ষমতা থাকে। এ ছাড়া, ডাউন সিনড্রোম আক্রান্ত অনেক শিশুর বিভিন্ন শারীরিক ও স্বাস্থ্যগত সমস্যা থাকে। যেমন-
- জন্মগত হৃদরোগ।
- অন্ত্রের অস্বাভাবিকতা।
- শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তির বৈকল্য।
- থাইরয়েডের ত্রুটিপূর্ণ ক্রিয়া।
- অধিক সংক্রমণের আশঙ্কা।
- ঘাড়ের হাড়ের সমস্যা।
- রক্তের রোগ।
কিছু শিশুর এর কোনোটিই হয় না, আবার কাউকে এর কয়েকটি ভোগ করতে হয়।

শিশুর যত্ন
ডাউন সিনড্রোমের কোনো প্রতিকার নেই। তবে পরিচর্যার মাধ্যমে শারীরিক সমস্যাগুলো নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। সঠিক যত্ন, পুষ্টিকর খাবার, স্পিচ ও ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি এবং ফিজিক্যাল থেরাপি দিলে ডাউন সিনড্রোম শিশুরা অন্য স্বাভাবিক শিশুর মতো পড়ালেখা করে স্বনির্ভর হতে পারে। স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি শারীরিক সমস্যা থাকে বলে এদের নিয়মিত শিশু বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে পরীক্ষা করাতে হয়।

মনে রাখুন
সময়মতো পরিচর্যা ও চিকিৎসার মাধ্যমে হরমোনজনিত জটিলতাসহ অন্যান্য শারীরিক সমস্যা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।
উপযুক্ত পরিবেশ ও বিশেষ শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে বড় করতে পারলে এই শিশুরা কর্মক্ষম হয়ে অর্থবহ জীবনযাপন করতে পারে।
মা বেশি বয়সে সন্তান ধারণ করলে এ রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাই সঠিক বয়সে সন্তান ধারণ করা উচিত।