
গরমের সময় শরীর থেকে ঘাম হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু অতিরিক্ত ঘাম ও ব্যাকটেরিয়ার কারণে অনেক সময় শরীরে দুর্গন্ধ হতে পারে। এটি শুধু অস্বস্তিকর নয়, বরং আত্মবিশ্বাসেও প্রভাব ফেলে। তাই আসুন জেনে নেই, গরমে শরীরকে দুর্গন্ধমুক্ত রাখার জন্য কিছু কার্যকর উপায়...
১. প্রতিদিন নিয়মিত গোসল করুন
গরমে শরীরকে দুর্গন্ধমুক্ত রাখতে প্রতিদিন অন্তত একবার বা তার বেশি গোসল করা অত্যন্ত জরুরি। ঠাণ্ডা পানি দিয়ে গোসল করলে শরীর সতেজ থাকে এবং ব্যাকটেরিয়া জন্মানোর সম্ভাবনা কমে যায়। বিশেষ করে যাদের অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার প্রবণতা আছে, তাদের জন্য দিনে দুইবার গোসল করাই ভালো।
গোসলের সময় জীবাণুনাশক সাবান বা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বডি ওয়াশ ব্যবহার করুন। এগুলো শরীর থেকে ব্যাকটেরিয়া দূর করে দুর্গন্ধ কমাতে সাহায্য করে। বিশেষ করে বগল, গলা, পা ও অন্যান্য সংবেদনশীল অংশ ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।
২. সঠিক ডিওডোরেন্ট বা অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট ব্যবহার করুন
ডিওডোরেন্ট এবং অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট দুর্গন্ধ দূর করতে কার্যকর। তবে অনেকেই এদের মধ্যে পার্থক্য জানেন না।
▶ ডিওডোরেন্ট: ব্যাকটেরিয়া কমিয়ে ঘামের দুর্গন্ধ দূর করে।
▶ অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট: ঘাম হওয়া কমিয়ে দেয়।
যারা বেশি ঘামেন, তারা অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইডযুক্ত অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট ব্যবহার করতে পারেন। তবে সংবেদনশীল ত্বকের জন্য অ্যালকোহলমুক্ত ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করাই ভালো।
৩. পরিষ্কার ও হালকা পোশাক পরুন
গরমের দিনে হালকা, ঢিলেঢালা ও পরিষ্কার কাপড় পরা উচিত। বিশেষ করে সুতি কাপড় শরীরের ঘাম শুষে নেয় এবং বাতাস চলাচলে সাহায্য করে। ফলে ব্যাকটেরিয়া কম জন্মায়। এ ছাড়া, প্রতিদিনের পোশাক ধুয়ে পরিষ্কার করে পরা জরুরি। ঘামের কারণে কাপড়ে ব্যাকটেরিয়া জন্মায়, যা আবার দুর্গন্ধের কারণ হতে পারে।
৪. নিয়মিত বগল ও শরীরের লোম পরিষ্কার করুন
বগল ও শরীরের অন্যান্য অংশে লোম বেশি থাকলে ঘাম বেশি জমে, যা ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ঘটায় এবং শরীরে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। তাই গরমের সময় বগলের লোম নিয়মিত পরিষ্কার রাখা উচিত। শেভিং বা ট্রিমিং করলে বগলে ঘামের পরিমাণ কমে এবং দুর্গন্ধ হওয়ার সম্ভাবনাও কমে যায়।
৫. সঠিক খাবার খান
আপনার খাদ্যাভ্যাসের ওপরেও শরীরের গন্ধ নির্ভর করে। কিছু খাবার ঘামের দুর্গন্ধ বাড়িয়ে দিতে পারে, যেমন- অতিরিক্ত মসলা ও ঝালযুক্ত খাবার, পেঁয়াজ ও রসুন, ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল। অন্যদিকে, পর্যাপ্ত পানি পান করলে শরীর থেকে টক্সিন দূর হয় এবং ঘামের দুর্গন্ধ কমে। এ ছাড়া, বেশি করে শাকসবজি, ফলমূল ও দই খেলে শরীর থেকে প্রাকৃতিকভাবে ভালো গন্ধ আসে।
৬. পা ও জুতার যত্ন নিন
অনেকের পা থেকে দুর্গন্ধ হয়, যা গরমকালে আরও বাড়তে পারে। এটি মূলত ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের সংক্রমণের কারণে হয়। এর জন্য কিছু সহজ সমাধান হলো প্রতিদিন পা ধোয়া ও শুকনো রাখা। পাশাপাশি জীবাণুনাশক পাউডার বা ফুট স্প্রে ব্যবহার করা। এ ছাড়া খোলামেলা ও আরামদায়ক জুতা পরা এবং মোজা প্রতিদিন পরিবর্তন করা।
৭. ঘরের ভেতরে ও বাইরে পরিষ্কার থাকুন
শরীরের পাশাপাশি যেসব জায়গায় আপনি বেশি সময় কাটান, সেগুলোও পরিষ্কার রাখা জরুরি। বিশেষ করে বিছানার চাদর, বালিশের কাভার ও তোয়ালে নিয়মিত ধোয়া উচিত। দীর্ঘসময় ধরে ঘামে ভেজা পোশাক পরে থাকা উচিত নয়। গরমে নিয়মিত হাত-মুখ ধুয়ে নেওয়া শরীরকে সতেজ রাখতে সাহায্য করে।
৮. প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করুন
বাজারের কেমিক্যালযুক্ত ডিওডোরেন্টের পরিবর্তে কিছু প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করেও শরীরের দুর্গন্ধ দূর করা সম্ভব। যেমন-
▶ বেকিং সোডা: এটি ঘাম শুষে নিয়ে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি কমায়।
▶ লেবুর রস: ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে সাহায্য করে এবং দীর্ঘস্থায়ী সতেজতা দেয়।
▶ নারিকেল তেল: এতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান আছে, যা ত্বককে মসৃণ ও দুর্গন্ধমুক্ত রাখে।
৯. স্ট্রেস কমান
মনোবিজ্ঞানীদের মতে, অতিরিক্ত স্ট্রেস থাকলে শরীর বেশি ঘামে এবং সেই ঘাম থেকে দুর্গন্ধ হয়। তাই নিজেকে রিল্যাক্স রাখার চেষ্টা করুন। ধ্যান, যোগব্যায়াম বা হালকা ব্যায়াম করলে স্ট্রেস কমে এবং ঘামের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আসে।
১০. পর্যাপ্ত পানি পান করুন
পানি শরীরকে ঠাণ্ডা রাখতে সাহায্য করে এবং ঘামের মাধ্যমে অতিরিক্ত টক্সিন বের করে দেয়। ফলে ঘামের দুর্গন্ধ কমে যায়। প্রতিদিন কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত।
উপসংহার
গরমকালে শরীরকে দুর্গন্ধমুক্ত রাখা কঠিন হলেও কিছু সহজ অভ্যাস গড়ে তুললে এটি সম্ভব। প্রতিদিন গোসল করা, পরিষ্কার পোশাক পরা, সঠিক খাবার খাওয়া এবং প্রাকৃতিক প্রতিকার ব্যবহার করলে গরমেও সতেজ ও দুর্গন্ধমুক্ত থাকা যায়। এ ছাড়া, হাইজিন মেনে চলা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা দুর্গন্ধ কমানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী।