
কানে পানি ঢুকে যাওয়া একটি সাধারণ সমস্যা। বিশেষত সাঁতার কাটার সময় বা গোসলের সময় এটি হতে পারে। যদিও সাধারণত এটি গুরুতর কিছু নয়, তবে যদি পানি দীর্ঘ সময় ধরে কানে থেকে যায়, তাহলে ইনফেকশন হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই কানে পানি ঢুকলে দ্রুত ও নিরাপদ উপায়ে তা বের করা জরুরি।
কানে পানি ঢোকার লক্ষণ
◉ কানে ভারী অনুভূত হওয়া।
◉ শুনতে সমস্যা হওয়া বা শব্দ কম শোনা।
◉ কানের ভেতরে চুলকানি বা অস্বস্তি।
◉ মাঝে মাঝে বুদবুদ ফাটার মতো শব্দ শোনা।
◉ দীর্ঘ সময় পানি থাকলে ব্যথা ও সংক্রমণ হতে পারে।
কান থেকে পানি বের করার উপায়
১. মাথা কাত করে ঝাঁকানো
এটি সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর উপায়। মাথা কাত করে (যে কানে পানি ঢুকেছে সেই দিকটি নিচে) হালকা ঝাঁকাতে হবে। এতে মধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে পানি নিজেই বের হয়ে আসতে পারে।
২. কান টানটান করা
মাথা একদিকে কাত করে হাত দিয়ে কানের লতি (earlobe) টানলে কানের ভেতরের পথ প্রশস্ত হয়, ফলে পানি সহজেই বের হয়ে যেতে পারে। চোয়াল নাড়ানো বা হাই তোলার মতো কাজ করলেও পানি বের হতে পারে।
৩. ভ্যাকুয়াম পদ্ধতি
মাথা একদিকে কাত করে হাতের তালু দিয়ে কানের ওপর আলতোভাবে চাপ দিন ও ছেড়ে দিন। এটি ভ্যাকুয়ামের মতো কাজ করে এবং পানিকে টেনে বের করতে সাহায্য করে। এভাবে কয়েকবার করলে পানি বের হয়ে যেতে পারে।
৪. পাশ ফিরে শোয়া
যদি অন্য কোনো পদ্ধতি কাজ না করে, তাহলে আক্রান্ত কানের দিকটি নিচে রেখে শুয়ে থাকুন। মধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে ধীরে ধীরে পানি বের হয়ে যাবে।
৫. গরম সংকোচন (Warm Compress)
একটি গরম কাপড় বা তোয়ালে নিয়ে আক্রান্ত কানের ওপর হালকা চাপ দিন। ৩০ সেকেন্ড ধরে রাখুন, তার পর সরিয়ে ফেলুন। এটি কয়েকবার করলে পানি বের হয়ে যেতে পারে।
৬. হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করা
হেয়ার ড্রায়ারকে কম তাপে রেখে আক্রান্ত কানের কাছ থেকে কিছুটা দূরত্বে ধরে রাখুন। হালকা গরম বাতাস কানের ভেতরের পানিকে বাষ্পে পরিণত করে শুকিয়ে ফেলতে পারে। তবে এটি খুব কাছ থেকে করলে কানের পর্দা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, তাই সাবধানতা অবলম্বন করুন।
৭. অ্যালকোহল ও ভিনেগারের মিশ্রণ ব্যবহার
সমপরিমাণ অ্যালকোহল ও ভিনেগার মিশিয়ে কয়েক ফোঁটা কানে দিন। এটি পানিকে বাষ্পীভূত করতে সাহায্য করবে এবং ইনফেকশন প্রতিরোধ করবে। তবে কানের পর্দায় ছিদ্র থাকলে এটি ব্যবহার করা উচিত নয়।

করণীয় নয়
◉ কানে পানি ঢোকার পর কাপড় বা টিস্যু জোরে ঢুকিয়ে পরিষ্কার করতে গেলে পানি আরও ভেতরে চলে যেতে পারে।
◉ তুলো কানের গভীরে প্রবেশ করালে কানের পর্দার ক্ষতি হতে পারে।
◉ কটন বাড বা অন্য কোনো বস্তু দিয়ে কান খোঁচানো উচিত নয়। এতে ইনফেকশন বা ক্ষতি হতে পারে।
কখন ডাক্তার দেখানো জরুরি?
যদি নিচের কোনো উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত—
◉ ২-৩ দিনের মধ্যে পানি বের না হলে।
◉ কানে তীব্র ব্যথা অনুভূত হলে।
◉ কানের ভেতর থেকে দুর্গন্ধযুক্ত তরল বের হলে।
◉ শুনতে সমস্যা হলে।
◉ কান লাল বা ফুলে গেলে।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
◉ সাঁতার কাটার সময় কান ঢেকে রাখার জন্য বিশেষ ইয়ারপ্লাগ ব্যবহার করুন।
◉ গোসলের সময় কানে পানি যাতে না ঢোকে, সেজন্য সতর্ক থাকুন।
◉ কান পরিষ্কার করার সময় খুব বেশি ভেতরে হাত দেবেন না।
সবশেষ
কানে পানি ঢুকলে আতঙ্কিত না হয়ে দ্রুত ও সঠিক পদ্ধতিতে তা বের করার চেষ্টা করা উচিত। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সহজ উপায়ে পানি বের হয়ে যায়। তবে যদি সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয় বা সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।