
গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড গরমে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের স্বাভাবিক ক্ষমতা ব্যাহত হলে হিট স্ট্রোক ঘটে। এটি একটি প্রাণঘাতী অবস্থা হতে পারে যদি তাৎক্ষণিক চিকিৎসা না করা হয়। হিট স্ট্রোক সাধারণত দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ তাপমাত্রার সংস্পর্শে থাকার ফলে ঘটে এবং এটি শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা দ্রুত ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার বেশি পর্যন্ত বাড়িয়ে তোলে। এতে শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
হিট স্ট্রোকের কারণ
হিট স্ট্রোক সাধারণত উচ্চ তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতার কারণে হয়। এর প্রধান কারণগুলো হলো—
• বর্ধিত তাপমাত্রায় দীর্ঘ সময় থাকা: যদি কেউ দীর্ঘক্ষণ রোদে বা গরম পরিবেশে থাকে, তাহলে শরীরের স্বাভাবিক শীতলীকরণ প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে।
• পর্যাপ্ত পানি না খাওয়া: ঘামের মাধ্যমে শরীরের অতিরিক্ত তাপ দূর হয়, তবে পর্যাপ্ত পানি না খেলে শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়ে এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
• গরম ও আর্দ্র আবহাওয়া: বেশি আর্দ্র আবহাওয়ায় ঘাম দ্রুত শুকিয়ে যায় না, ফলে শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে।
• শারীরিক পরিশ্রম করা: গরমের মধ্যে অতিরিক্ত পরিশ্রম করলে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
• গরম পোশাক পরা: মোটা ও আঁটসাঁট পোশাক শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে তোলে।
• বয়স ও শারীরিক অবস্থা: শিশু, বৃদ্ধ এবং হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা স্থূলতার মতো শারীরিক সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিরা হিট স্ট্রোকের ঝুঁকিতে বেশি থাকে।

হিট স্ট্রোকের লক্ষণ
হিট স্ট্রোকের কিছু সাধারণ লক্ষণ নিম্নরূপ—
• শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি (১০৪°F বা তার বেশি)।
• অতিরিক্ত ঘাম বন্ধ হয়ে যাওয়া (শরীর শুষ্ক হয়ে যায়)।
• তীব্র মাথাব্যথা ও মাথা ঘোরা।
• দৃষ্টিবিভ্রম ও বিভ্রান্তি।
• বমি বমি ভাব ও বমি হওয়া।
• হৃৎপিণ্ডের গতি বৃদ্ধি।
• মাংসপেশির খিঁচুনি বা দুর্বলতা।
• জ্ঞান হারানো বা অচেতন হয়ে যাওয়া।
হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায়
হিট স্ট্রোক প্রতিরোধের জন্য কিছু কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে—
১. পানি ও তরল গ্রহণ
○ প্রচুর পানি পান করা উচিত, বিশেষ করে গরমের সময়।
○ তরলযুক্ত খাবার যেমন ডাবের পানি, ফলের রস, লাস্যি ইত্যাদি খেতে পারেন।
○ ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন, কারণ এগুলো শরীরকে পানিশূন্য করতে পারে।

২. হালকা ও আরামদায়ক পোশাক পরা
○ ঢিলেঢালা ও হালকা রঙের কাপড় পরুন।
○ সূতি ও বাতাস চলাচল করে এমন কাপড় বেছে নিন।
৩. রোদ থেকে সুরক্ষা
○ সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত রোদে বের হওয়া এড়িয়ে চলুন।
○ বাইরে গেলে ছাতা বা টুপি ব্যবহার করুন।
○ রোদে বেশি সময় থাকলে ছায়াযুক্ত স্থানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিন।
৪. ঘরের পরিবেশ ঠান্ডা রাখা
○ দরজা-জানালা খুলে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করুন।
○ প্রয়োজন হলে ফ্যান বা এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।
৫. ভারী কাজ ও ব্যায়াম কমানো
○ প্রচণ্ড গরমে ভারী ব্যায়াম ও পরিশ্রম এড়িয়ে চলুন।
○ যদি ব্যায়াম করতেই হয়, তাহলে সকাল বা সন্ধ্যায় করুন।

৬. সঠিক খাবার গ্রহণ
○ তরল ও সহজপাচ্য খাবার খান।
○ অতিরিক্ত মসলাযুক্ত ও ভাজাপোড়া খাবার কম খান।
৭. উচ্চ ঝুঁকির ব্যক্তিদের বিশেষ যত্ন
○ শিশু ও বৃদ্ধদের পর্যাপ্ত পানি পান করানোর ব্যবস্থা করুন।
○ যারা হৃদরোগ বা উচ্চ রক্তচাপের রোগী, তাদের বিশেষ যত্ন নেওয়া দরকার।
হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে করণীয়
যদি কেউ হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়, তবে দ্রুত তাকে চিকিৎসা দিতে হবে। করণীয়—
• আক্রান্ত ব্যক্তিকে ছায়াযুক্ত বা শীতল জায়গায় নিয়ে যান।
• অতিরিক্ত কাপড় খুলে দিন এবং ঠান্ডা পানি বা বরফের সাহায্যে শরীর ঠান্ডা করার চেষ্টা করুন।
• শরীরে ঠান্ডা পানির স্প্রে করুন বা ভেজা কাপড় ব্যবহার করুন।
• আক্রান্ত ব্যক্তি সচেতন থাকলে ঠান্ডা পানি পান করান।
• অবস্থা গুরুতর হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

সবশেষ
হিট স্ট্রোক একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা। তবে সচেতনতা এবং সঠিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এটি এড়ানো সম্ভব। প্রচণ্ড গরমে পর্যাপ্ত পানি পান করা, সঠিক পোশাক পরা এবং রোদ থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখার মাধ্যমে এই সমস্যা প্রতিরোধ করা যায়। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ এবং অসুস্থ ব্যক্তিদের প্রতি বেশি যত্ন নেওয়া উচিত। সতর্ক থাকুন, সুস্থ থাকুন।