ঢাকা ১০ আষাঢ় ১৪৩২, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫
English

এই গরমে হিট স্ট্রোক থেকে সাবধান

প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:২৮ পিএম
আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৪৭ পিএম
এই গরমে হিট স্ট্রোক থেকে সাবধান
হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে প্রচুর পানি পান করা উচিত। ছবি এআই

গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড গরমে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের স্বাভাবিক ক্ষমতা ব্যাহত হলে হিট স্ট্রোক ঘটে। এটি একটি প্রাণঘাতী অবস্থা হতে পারে যদি তাৎক্ষণিক চিকিৎসা না করা হয়। হিট স্ট্রোক সাধারণত দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ তাপমাত্রার সংস্পর্শে থাকার ফলে ঘটে এবং এটি শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা দ্রুত ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার বেশি পর্যন্ত বাড়িয়ে তোলে। এতে শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

 

হিট স্ট্রোকের কারণ

হিট স্ট্রোক সাধারণত উচ্চ তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতার কারণে হয়। এর প্রধান কারণগুলো হলো—
• বর্ধিত তাপমাত্রায় দীর্ঘ সময় থাকা: যদি কেউ দীর্ঘক্ষণ রোদে বা গরম পরিবেশে থাকে, তাহলে শরীরের স্বাভাবিক শীতলীকরণ প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে।
• পর্যাপ্ত পানি না খাওয়া: ঘামের মাধ্যমে শরীরের অতিরিক্ত তাপ দূর হয়, তবে পর্যাপ্ত পানি না খেলে শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়ে এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
• গরম ও আর্দ্র আবহাওয়া: বেশি আর্দ্র আবহাওয়ায় ঘাম দ্রুত শুকিয়ে যায় না, ফলে শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে।
• শারীরিক পরিশ্রম করা: গরমের মধ্যে অতিরিক্ত পরিশ্রম করলে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
• গরম পোশাক পরা: মোটা ও আঁটসাঁট পোশাক শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে তোলে।
• বয়স ও শারীরিক অবস্থা: শিশু, বৃদ্ধ এবং হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা স্থূলতার মতো শারীরিক সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিরা হিট স্ট্রোকের ঝুঁকিতে বেশি থাকে।

 

হিট স্ট্রোক সাধারণত উচ্চ তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতার কারণে হয়। ছবি এআই

 

হিট স্ট্রোকের লক্ষণ

হিট স্ট্রোকের কিছু সাধারণ লক্ষণ নিম্নরূপ—
• শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি (১০৪°F বা তার বেশি)।
• অতিরিক্ত ঘাম বন্ধ হয়ে যাওয়া (শরীর শুষ্ক হয়ে যায়)।
• তীব্র মাথাব্যথা ও মাথা ঘোরা।
• দৃষ্টিবিভ্রম ও বিভ্রান্তি।
• বমি বমি ভাব ও বমি হওয়া।
• হৃৎপিণ্ডের গতি বৃদ্ধি।
• মাংসপেশির খিঁচুনি বা দুর্বলতা।
• জ্ঞান হারানো বা অচেতন হয়ে যাওয়া।

 

হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায়

হিট স্ট্রোক প্রতিরোধের জন্য কিছু কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে—
১. পানি ও তরল গ্রহণ
○ প্রচুর পানি পান করা উচিত, বিশেষ করে গরমের সময়।
○ তরলযুক্ত খাবার যেমন ডাবের পানি, ফলের রস, লাস্যি ইত্যাদি খেতে পারেন।
○ ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন, কারণ এগুলো শরীরকে পানিশূন্য করতে পারে।

 

হিট স্ট্রোক হলে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। ছবি এআই

 

২. হালকা ও আরামদায়ক পোশাক পরা
○ ঢিলেঢালা ও হালকা রঙের কাপড় পরুন।
○ সূতি ও বাতাস চলাচল করে এমন কাপড় বেছে নিন।

৩. রোদ থেকে সুরক্ষা
○ সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত রোদে বের হওয়া এড়িয়ে চলুন।
○ বাইরে গেলে ছাতা বা টুপি ব্যবহার করুন।
○ রোদে বেশি সময় থাকলে ছায়াযুক্ত স্থানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিন।

৪. ঘরের পরিবেশ ঠান্ডা রাখা
○ দরজা-জানালা খুলে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করুন।
○ প্রয়োজন হলে ফ্যান বা এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।

৫. ভারী কাজ ও ব্যায়াম কমানো
○ প্রচণ্ড গরমে ভারী ব্যায়াম ও পরিশ্রম এড়িয়ে চলুন।
○ যদি ব্যায়াম করতেই হয়, তাহলে সকাল বা সন্ধ্যায় করুন।

 

হিট স্ট্রোক এড়াতে প্রচণ্ড গরমে ভারী ব্যায়াম ও পরিশ্রম এড়িয়ে চলুন। ছবি এআই

 

৬. সঠিক খাবার গ্রহণ
○ তরল ও সহজপাচ্য খাবার খান।
○ অতিরিক্ত মসলাযুক্ত ও ভাজাপোড়া খাবার কম খান।

৭. উচ্চ ঝুঁকির ব্যক্তিদের বিশেষ যত্ন
○ শিশু ও বৃদ্ধদের পর্যাপ্ত পানি পান করানোর ব্যবস্থা করুন।
○ যারা হৃদরোগ বা উচ্চ রক্তচাপের রোগী, তাদের বিশেষ যত্ন নেওয়া দরকার।

 

হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে করণীয়

যদি কেউ হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়, তবে দ্রুত তাকে চিকিৎসা দিতে হবে। করণীয়—
• আক্রান্ত ব্যক্তিকে ছায়াযুক্ত বা শীতল জায়গায় নিয়ে যান।
• অতিরিক্ত কাপড় খুলে দিন এবং ঠান্ডা পানি বা বরফের সাহায্যে শরীর ঠান্ডা করার চেষ্টা করুন।
• শরীরে ঠান্ডা পানির স্প্রে করুন বা ভেজা কাপড় ব্যবহার করুন।
• আক্রান্ত ব্যক্তি সচেতন থাকলে ঠান্ডা পানি পান করান।
• অবস্থা গুরুতর হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

 

সঠিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে হিট স্ট্রোক এড়ানো সম্ভব। ছবি এআই

 

সবশেষ

হিট স্ট্রোক একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা। তবে সচেতনতা এবং সঠিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এটি এড়ানো সম্ভব। প্রচণ্ড গরমে পর্যাপ্ত পানি পান করা, সঠিক পোশাক পরা এবং রোদ থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখার মাধ্যমে এই সমস্যা প্রতিরোধ করা যায়। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ এবং অসুস্থ ব্যক্তিদের প্রতি বেশি যত্ন নেওয়া উচিত। সতর্ক থাকুন, সুস্থ থাকুন।

বর্ষাকালের মশাবাহিত রোগ

প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৫, ০১:৫৮ পিএম
আপডেট: ২৩ জুন ২০২৫, ০২:০৫ পিএম
বর্ষাকালের মশাবাহিত রোগ
এডিস মশা মূলত ডেঙ্গু ভাইরাসের জীবাণু ছড়ায়। ছবি এআই

❏ ডেঙ্গু
এডিস মশা মূলত ডেঙ্গু ভাইরাসের জীবাণু ছড়ায়। এই মশা সাধারণত পাত্রে জমে থাকা পরিষ্কার পানিতে ডিম দেয়। বর্ষাকালে এর প্রজনন বেশি হওয়ায় এ সময় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবও বেড়ে যায়। ডেঙ্গু হলে সাধারণত তীব্র জ্বর হয় এবং সারা শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা দেখা দেয়। তীব্র পেটব্যথাও হতে পারে। বিশেষ করে মাংসপেশিতে ব্যথা বেশি হয়। জ্বরের ৪-৫ দিন পর শরীরজুড়ে র‌্যাশ বা ঘামাচির মতো লালচে দানা দেখা দিতে পারে।

 

❏ চিকুনগুনিয়া
চিকুনগুনিয়া রোগটিও এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। এই জ্বরের লক্ষণ অনেকটা সাধারণ ভাইরাল জ্বরের মতো। তবে এতে মাথাব্যথা, বমিভাব, দুর্বলতা, সর্দি-কাশি এবং র‌্যাশের পাশাপাশি শরীরের হাড়ের সংযোগস্থলে তীব্র ব্যথা হয়।

 

❏ ম্যালেরিয়া
ম্যালেরিয়া হয় প্লাজমোডিয়াম নামের এককোষী পরজীবীর কারণে, যা অ্যানোফিলিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। বর্ষাকালে এ রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হলে কয়েক দিন ধরে উচ্চমাত্রার জ্বর থাকে। অনেক সময় এ রোগ মারাত্মকও হতে পারে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রক্ত পরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন।

হঠাৎ বমি বমি লাগছে? জানুন এর কারণ ও করণীয়

প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৫, ০৫:৫১ পিএম
আপডেট: ২২ জুন ২০২৫, ০৫:৫৩ পিএম
হঠাৎ বমি বমি লাগছে? জানুন এর কারণ ও করণীয়
বমি নিজে কোনো রোগ নয়, বরং বিভিন্ন রোগ বা শারীরিক অবস্থার উপসর্গ। ছবি এআই

বমি বমি ভাব (Nausea) ও বমি—এই দু’টি অনুভূতি আমাদের জীবনের কোনো না কোনো সময়ে প্রত্যেকেই অনুভব করেছি। হয়তো এমন কিছু খেয়েছেন যা আপনার পেটে মানায়নি, কিংবা আপনি কেমোথেরাপির মতো চিকিৎসা নিচ্ছেন। আবার অনেক সময় গর্ভাবস্থার প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবেও এটি দেখা দেয়। এই মাথা ঘোরানো, অস্বস্তিকর, বমি আসার মতো অনুভূতিটা খুব পরিচিত।

বমি বমি ভাব ও বমি কী?

বমি বমি ভাব হলো গলা ও পেটের উপরের অংশে এক ধরনের অস্বস্তিকর অনুভূতি, যার সঙ্গে মাথা ঝিমঝিম করা, গা গোলানো, হালকা মাথা ঘোরা বা গিলতে অসুবিধা হওয়া যুক্ত থাকতে পারে। যদিও এটি অনেক সময় বমির পূর্বাভাস দেয়, কিন্তু সবসময় বমি হয় এমন নয়।
অন্যদিকে বমি হলো পেটের ভেতরের উপাদান জোরপূর্বক মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসা। যখন কেউ বমি করে, তখন পেটের পেশিগুলো সংকুচিত হয়ে খাবার উপরে ঠেলে দেয় এবং তা খাদ্যনালী পেরিয়ে মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে।

কেন হয়?

এগুলো নিজে কোনো রোগ নয়, বরং বিভিন্ন রোগ বা শারীরিক অবস্থার উপসর্গ। কিছু সাধারণ কারণের মধ্যে রয়েছে—
• পেটের ভাইরাসজনিত সংক্রমণ (গ্যাস্ট্রোএনটেরাইটিস বা স্টমাক ফ্লু)।
• খাদ্যে বিষক্রিয়া।
• গর্ভাবস্থা।
• মাইগ্রেন বা তীব্র মাথাব্যথা।
• গতি-জনিত অসুস্থতা (যেমন গাড়িতে চড়লে মাথা ঘোরা)।


এছাড়াও কিছু শারীরিক বা স্নায়ুবিষয়ক পরিবর্তনের কারণে বমির প্রবণতা বাড়ে। যেমন:
• আলসার, গ্যাস্ট্রাইটিস বা গ্যাস্ট্রোপারেসিসের মতো হজমজনিত সমস্যা।
• সাগর বা যানবাহনে যাত্রাকালে মাথা ঘোরা।
• গর্ভাবস্থার প্রথমদিক।
• তীব্র ব্যথা।
• হজমের গোলমাল বা খাবারের পর অস্বস্তি।
• সংক্রমণ।
• ভার্টিগো।
• তীব্র গন্ধ বা দুর্গন্ধ।
• অতিরিক্ত অ্যালকোহল বা মারিজুয়ানা সেবন।
• কেমোথেরাপির মতো কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।

 

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বমি ক্ষতিকর নয়। ছবি এআই

 

কোন কোন গুরুতর অসুস্থতায় বমি হতে পারে?

যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বমি ক্ষতিকর নয়, তবে এটি গুরুতর রোগের লক্ষণও হতে পারে। যেমন:
• মস্তিষ্কে আঘাত (কনকাশন)।
• মস্তিষ্কের প্রদাহ (এনসেফালাইটিস)।
• মেনিনজাইটিস।
• অন্ত্রের রুদ্ধতা।
• অ্যাপেনডিসাইটিস।
• মস্তিষ্কে টিউমার।

বমি বমি ভাব কমাতে কী করা যায়?

প্রতিটি ব্যক্তির জন্য কার্যকর উপায় ভিন্ন হতে পারে। তবে কিছু ঘরোয়া উপায় আছে যেগুলো সাহায্য করতে পারে:
• ঠান্ডা পানীয় পান করা।
• হালকা ও সাদাসিধে খাবার খাওয়া (যেমন পাউরুটি বা বিস্কুট)।
• তেল-ঝাল বা মিষ্টিজাত খাবার এড়িয়ে চলা।
• একবারে বেশি না খেয়ে অল্প অল্প করে খাওয়া।
• ধীরে ধীরে খাওয়া।
• খাওয়া শেষে তৎক্ষণাৎ হাঁটাচলা না করা।
• খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দাঁত না মাজা।
• সব ধরনের খাবার খাওয়ার চেষ্টা করা, যেন পুষ্টি ঠিক থাকে।

বমির ক্ষেত্রে করণীয়

• শুরুতে তরল খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।
• বমির সময় কঠিন খাবার এড়িয়ে চলুন।
• বিশ্রাম নিন।
• প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বমি কমানোর ওষুধ ব্যবহার করুন।

 

বমি ঘন ঘন হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। ছবি এআই

 

বমি বা বমি বমি ভাবের জটিলতা কী হতে পারে?

বড়দের জন্য সবচেয়ে বড় আশঙ্কা হলো পানিশূন্যতা (ডিহাইড্রেশন)। বড়রা সাধারণত এই লক্ষণ নিজেরাই বুঝতে পারে (যেমন: অতিরিক্ত পিপাসা, মুখ ও ঠোঁট শুকিয়ে যাওয়া)। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বেশি, বিশেষত যখন বমির সঙ্গে ডায়রিয়াও থাকে। কারণ, শিশুরা অনেক সময় বুঝিয়ে বলতে পারে না তারা কেমন অনুভব করছে।

শিশুদের ক্ষেত্রে ডিহাইড্রেশনের লক্ষণ

• ঠোঁট ও মুখ শুকিয়ে যাওয়া।
• চোখের নিচে গর্ত হয়ে যাওয়া।
• দ্রুত শ্বাস নেওয়া বা হৃদস্পন্দন।
• নবজাতকের মাথার উঁচু নরম স্থান (ফন্টানেল) বসে যাওয়া।
• প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া।

কীভাবে বমি বমি ভাব প্রতিরোধ করবেন?

• দিনে অল্প পরিমানে বার বার খাওয়া।
• ধীরে ধীরে খাওয়া।
• সহজে হজম হয় না এমন খাবার এড়িয়ে চলা।
• ঠান্ডা বা কক্ষতাপমাত্রার খাবার খাওয়া।
• খাওয়ার পর বিশ্রাম নেওয়া, মাথা যেন পায়ের চেয়ে একটু উঁচু থাকে।

মনে রাখবেন— বমি বমি ভাব ও বমি কোনো রোগ নয়, বরং অন্য কিছু সমস্যার লক্ষণমাত্র। তাৎক্ষণিক প্রতিকার যেমন দরকার, তেমনি দীর্ঘস্থায়ী বা ঘন ঘন হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

সূত্র: ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক

পাইলস ও তার নিরাময়

প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৫, ০১:৫৫ পিএম
পাইলস ও তার নিরাময়
ছবি এআই

পাইলস (Piles) বা অর্শ হলো একটি স্বাভাবিক রোগ, যা মলদ্বারের ভেতরের বা বাইরের রক্তনালিগুলোর ফোলাজনিত সমস্যা। এর ফলে মলত্যাগের সময় রক্তপাত, ব্যথা বা মলদ্বারে চুলকানি হতে পারে।

পাইলসের প্রকারভেদ
◉ অভ্যন্তরীণ পাইলস: মলদ্বারের ভেতরে থাকে। সাধারণত ব্যথা হয় না, তবে রক্তপাত হতে পারে।
◉ বাহ্যিক পাইলস: মলদ্বারের বাইরের অংশে ফোলা দেখা যায় এবং এতে ব্যথা বেশি হয়।

পাইলসের কারণ
◉ দীর্ঘ সময় ধরে এক জায়গায় বসে থাকা
◉ কোষ্ঠকাঠিন্য বা অতিরিক্ত চাপ দিয়ে মলত্যাগ
◉ কম ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়া
◉ গর্ভাবস্থা
◉ অতিরিক্ত ওজন
◉ অতিরিক্ত ঝাঁকুনি বা ভারী কাজ করা

পাইলসের লক্ষণ
◉ মলত্যাগের সময় রক্ত পড়া
◉ মলদ্বারে চুলকানি বা জ্বালা
◉ মলদ্বার ফোলা বা গাঁটের মতো অংশ অনুভব হওয়া
◉ ব্যথা, বিশেষ করে বসার সময়

পাইলসের নিরাময় ও প্রতিকার
বাসায় করণীয়
◉ উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়া (সবজি, ফল, শস্য)
◉ প্রচুর পানি পান করা
◉ নিয়মিত ব্যায়াম
◉ দীর্ঘ সময় বসে থাকা এড়ানো
◉ প্রতিদিন একই সময়ে মলত্যাগের অভ্যাস করা
◉ গরম পানিতে সিটজ বাথ নেওয়া (সাধারণত ১৫-২০ মিনিট)

ঔষধ ও চিকিৎসা
◉ ব্যথানাশক ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধ
◉ মল নরম করার ওষুধ (laxatives)
◉ মলদ্বারে ব্যবহারের জন্য কিছু ওষুধ বা ক্রিম (যেমন- হেমোরয়েডাল ক্রিম)

চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা পদ্ধতি
◉ রাবার ব্যান্ড লিগেশন
◉ ইনফ্রারেড কুগুলেশন
◉ সার্জারি (Hemorrhoidectomy)
◉ লেজার

লেখক: জেনারেল অ্যান্ড কলোরেক্টাল সার্জন, আলোক হাসপাতাল, মিরপুর-৬, ঢাকা

চোখ চুলকানি: উপসর্গ, কারণ ও চিকিৎসা

প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২৫, ০১:০৫ পিএম
আপডেট: ১৯ জুন ২০২৫, ০১:১৩ পিএম
চোখ চুলকানি: উপসর্গ, কারণ ও চিকিৎসা
চোখ চুলকানোর সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো অ্যালার্জি। ছবি এআই

চোখ মানুষের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইন্দ্রিয়। আমরা যা কিছু দেখি, বুঝি বা শিখি, তার বড় একটি অংশ আসে চোখের মাধ্যমে। দৃষ্টি আমাদের চলাফেরা, কাজ ও যোগাযোগে সহায়তা করে। চোখ চুলকানি একটি সাধারণ সমস্যা, যা অ্যালার্জি, সংক্রমণ, শুষ্ক চোখ বা ধুলোবালির কারণে হতে পারে। এটি জ্বালা, লালভাব ও পানির মতো স্রাবের সাথে দেখা দেয়। এমনটা হলে প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করা জরুরি।

চুলকানির কারণ

▶ অ্যালার্জি
চোখ চুলকানোর সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো অ্যালার্জি। ঘরের ভেতরে, বাইরে বা অফিসের পরিবেশে থাকা নানা উপাদানের প্রতি চোখে প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যেমন-
• বাইরের উপাদান: গাছ, ঘাস, আগাছা ও ঝোপঝাড় থেকে নির্গত পরাগকণা।
• ঘরের ভেতরের উপাদান: ধূলিকণা, ছত্রাক, ছাঁচ এবং পোষা প্রাণীর ত্বকের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা (ড্যান্ডার)।
• মানবসৃষ্ট উপাদান: তামাকের ধোঁয়া, সুগন্ধি, রাসায়নিক পদার্থ এবং গাড়ির ধোঁয়া।


▶ সংক্রমণ (ইনফেকশন)
চোখে সংক্রমণের সবচেয়ে সাধারণ রূপ হলো ‘পিঙ্ক আই’ বা কনজাংকটিভাইটিস। এটি চোখের ভেতরের আবরণী (কনজাংকটিভা)-এর প্রদাহজনিত অবস্থা। এতে চোখ লাল ও ফুলে যেতে পারে। ঘুমের সময় চোখে পুঁজ জমে গিয়ে পাপড়ি একসাথে লেগে যেতে পারে। 

▶ ব্লেফারাইটিস
এটি চোখের পাতার প্রদাহ। চোখের পাতার গোড়ার ছোট ছোট তৈল গ্রন্থি বন্ধ হয়ে গেলে এটি ঘটে। চোখ লাল ও জ্বালাপোড়া করতে পারে। এটি সংক্রামক নয় এবং সাধারণত দৃষ্টিশক্তিতে প্রভাব ফেলে না, তবে দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। 

▶ শুষ্ক চোখ (ড্রাই আই)
চোখের স্বাভাবিক অশ্রুতে পানি, তেল, প্রোটিন ও শ্লেষ্মা থাকে। যখন এই উপাদানগুলোর সঠিক ভারসাম্য থাকে না, তখন চোখ শুকিয়ে যায় এবং চুলকায়।

▶ বাইরের বস্তু
চোখের পাতার নিচে অল্প পরিমাণ ধুলিকণা বা বালি ঢুকলেও চোখে তীব্র অস্বস্তি হতে পারে। অনেক সময় অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ কাজ না করলে এটি চোখে ঢুকে থাকা কোনো বস্তু হতে পারে।


▶ কনট্যাক্ট লেন্স
কখনো কখনো চোখ বুঝতে পারে না যে লেন্সটি ইচ্ছাকৃতভাবে পরা হয়েছে। তখন তা ‘বাইরের বস্তু’ হিসেবে প্রতিক্রিয়া দেখায়। এর পেছনে কারণ হতে পারে ভুল মাপের লেন্স। লেন্সে ধুলো বা জীবাণু আটকে গেলে সংক্রমণও হতে পারে। নিয়মিত পরিষ্কার ও পরিবর্তন করলেই সমস্যা অনেকাংশে এড়ানো যায়।

▶ কর্নিয়াল আলসার (করনিয়াতে ঘা)
চিকিৎসক একে ‘কেরাটাইটিস’ বলেও উল্লেখ করতে পারেন। অতিরিক্ত শুষ্ক চোখ, আঘাত বা সংক্রমণের ফলে কর্নিয়ার ওপর ছোট ঘা হতে পারে, যা চোখে জ্বালা, পুঁজ ও খরখরে ভাব সৃষ্টি করে।

 

হালকা চুলকানিতে ঠান্ডা, পরিষ্কার কাপড় চোখে চেপে রাখলে আরাম পাওয়া যায়। ছবি এআই

 

উপসর্গ

চোখ চুলকানোর সাধারণ লক্ষণগুলো হলো জ্বালাপোড়া বা পোড়ার মতো অনুভূতি, স্বচ্ছ ও পানির মতো স্রাব, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, হাঁচি ও নাক দিয়ে পানি পড়া (অ্যালার্জির সঙ্গে), সবুজ বা হলুদ রঙের পুঁজ (সংক্রমণের ক্ষেত্রে)।
চিকিৎসা
• হালকা চুলকানিতে ঠান্ডা, পরিষ্কার কাপড় চোখে চেপে রাখলে আরাম পাওয়া যায়। পুঁজ বা ময়লা পরিষ্কারের জন্য উষ্ণ ভেজা কাপড় ব্যবহার করা যেতে পারে। ব্যবহারের পর হাত ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া জরুরি।
• অল্প সংক্রমণের অনেক ক্ষেত্রেই আলাদা ওষুধ ছাড়াই সমস্যা সেরে যায়। অ্যালার্জির ক্ষেত্রে যতটা সম্ভব পরিপ্রেক্ষিত উপাদান এড়িয়ে চলতে হবে। প্রয়োজনে অ্যালার্জির ওষুধ বা চোখে ব্যবহারের ড্রপ নেওয়া যেতে পারে।
• চুলকানি বেশি হলে চোখ ধোয়ার জন্য স্যালাইন দ্রবণ প্রয়োজন হতে পারে। এছাড়া ব্যাকটেরিয়া দূর করতে অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ, প্রদাহ কমাতে স্টেরয়েড ড্রপ, চোখে ঢুকে থাকা বস্তু অপসারণ বা আঘাত সারাতে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।

প্রতিরোধ

চোখ চুলকানো এড়াতে কিছু অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। যেমন— 
• হাত পরিষ্কার রাখুন: হাতের মাধ্যমে জীবাণু সহজেই চোখে যেতে পারে। সাবান-পানি বা অ্যালকোহলযুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন।
• চোখে হাত দেওয়া থেকে বিরত থাকুন: বিশেষ করে অ্যালার্জির সময় চুলকানো চোখ ঘষা চোখের ক্ষতি করতে পারে।
• মেকআপ নিয়মিত পরিষ্কার করুন: ঘুমানোর আগে মেকআপ তুলে ফেলুন এবং ৬ মাস পর পুরোনো মেকআপ ফেলে দিন। অন্যের সঙ্গে মেকআপ ভাগাভাগি না করাই ভালো।
• কনট্যাক্ট লেন্স ব্যবহারে সতর্ক থাকুন: লেন্স পরিষ্কারের নিয়ম চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মেনে চলুন। চোখে অস্বস্তি হলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

সূত্র: ওয়েব এমডি

চুইংগাম কি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর?

প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২৫, ০১:৪১ পিএম
আপডেট: ১৭ জুন ২০২৫, ০১:৪৩ পিএম
চুইংগাম কি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর?
চুইংগাম চোয়াল ও দাঁতের জন্য দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর হতে পারে।

চুইংগাম অনেকের কাছেই নিরীহ মনে হতে পারে। কেউ কেউ তো মনে করেন এটি দাঁতের জন্য ভালো। কিন্তু দাঁতের চিকিৎসক ড. কারিন কাহনের মতে, গাম চিবোনো সবসময় নিরাপদ নয়। বরং এটি আপনার চোয়াল ও দাঁতের জন্য সমস্যা তৈরি করতে পারে।

চুইংগাম কি চোয়ালের ক্ষতি করে?
চোয়ালের নড়াচড়া হয় "টেম্পোরোম্যান্ডিবুলার জয়েন্ট" (TMJ)-এর মাধ্যমে, যা কানের সামনে অবস্থিত। এই জয়েন্টটি অনেকগুলো মাংসপেশির সমন্বয়ে কাজ করে। গাম চিবোনো একটি প্যারাফাংশনাল অভ্যাস — অর্থাৎ স্বাভাবিক চিবোনোর বাইরে একটি অভ্যাস, যা দীর্ঘ সময় ধরে চোয়ালে অপ্রয়োজনীয় চাপ সৃষ্টি করে।
দীর্ঘদিন ঘরে দাঁত নিয়ে কাজ করছেন ব্রিটিশ চিকিৎসক কাহন। তার মতে, বেশি সময় ধরে গাম চিবোলে TMJ-তে ব্যথা, ক্লিকিং বা পপিং শব্দ, মাথাব্যথা, দাঁতের ভাঙন কিংবা চোয়ালের অস্বস্তি দেখা দিতে পারে। যাদের TMJ সমস্যা রয়েছে, তাদের একেবারেই গাম চিবোনো এড়িয়ে চলা উচিত। আর অন্যদের জন্য তিনি দিনে সর্বোচ্চ ১৫ মিনিট গাম চিবোনোর পরামর্শ দেন।

চিনিযুক্ত গাম দাঁতের ক্ষতি করে
প্রথম দিকে গামে চিনি যোগ করে এর স্বাদ বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু ১৯৫০-এর দশক থেকেই দেখা যায়, গামের চিনি দাঁতের ক্ষয় ঘটায়। মুখের ব্যাকটেরিয়া চিনি ভেঙে অ্যাসিড তৈরি করে, যা দাঁতের এনামেল ক্ষয় করে। এর ফলে ক্যাভিটি তৈরি হয় এবং পরে রুট ক্যানাল করার প্রয়োজন হতে পারে।

চিনি ছাড়া গামের উপকারিতা
১৯৬০-এর দশকে বাজারে চিনি ছাড়া গাম আসে, যাতে অ্যাসপারটেম, স্টেভিয়া, জাইলিটল বা সরবিটলের মতো কৃত্রিম সুইটেনার থাকে, যেগুলো দাঁতের ক্ষতি করে না। এসব গাম চিবোলে লালা উৎপাদন বাড়ে, যা মুখের খাবারের অবশিষ্টাংশ সরিয়ে দেয় এবং ব্যাকটেরিয়ার অ্যাসিড নিরপেক্ষ করে।
তবে ড. কাহন মনে করেন, গাম চিবোনো কখনোই ব্রাশিং বা ফ্লসিংয়ের বিকল্প হতে পারে না। তিনি বলেন, ‘প্রতিবার খাওয়ার পর ব্রাশ করা এবং প্রতিদিন ফ্লস করা — এটিই দাঁত সুস্থ রাখার সর্বোত্তম উপায়।’

 

যাদের মুখে লালা কম তৈরি হয় (ড্রাই মাউথ), তাদের জন্য গাম কিছুটা উপকারী হতে পারে। ছবি এআই

 

ড্রাই মাউথের ক্ষেত্রে গামের ব্যবহার
যাদের মুখে লালা কম তৈরি হয় (ড্রাই মাউথ), তাদের জন্য গাম কিছুটা উপকারী হতে পারে। তবে পানি পান করাও সমান কার্যকর এবং নিরাপদ। ড্রাই মাউথের প্রকৃত কারণ শনাক্ত করে চিকিৎসা নেওয়া সবচেয়ে ভালো সমাধান।

মানসিক চাপ বা মনোযোগ বৃদ্ধিতে গামের ভূমিকা?
অনেকেই বলেন গাম চিবোলে মনোযোগ বাড়ে বা স্ট্রেস কমে। কিন্তু গবেষণায় এ বিষয়ে স্পষ্ট প্রমাণ মেলেনি। তাই যদি আপনি গাম চিবিয়ে উপকার পাচ্ছেন মনে করেন, তাহলে এর ক্ষতিকর দিকগুলোর কথাও বিবেচনায় রাখা উচিত।

নিকোটিন গাম – ধূমপান ছাড়ার সহায়তা
ধূমপান ছাড়ার একটি পদ্ধতি হিসেবে নিকোটিন গাম ব্যবহার করা হয়। এটি সাধারণ গামের মতো নয় — হালকা চিবিয়ে মুখের এক পাশে রেখে ধীরে ধীরে নিকোটিন গ্রহণ করতে হয়। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত লালা, মুখে জ্বালাপোড়া বা চোয়ালে ব্যথা।
ড. কাহনের পরামর্শ, নিকোটিন গামের পাশাপাশি প্যাচ, ওষুধ বা কাউন্সেলিং ব্যবহার করলে ধূমপান ছাড়ার সম্ভাবনা বাড়ে।

সারসংক্ষেপ
চুইংগাম চোয়াল ও দাঁতের জন্য দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর হতে পারে। ড. কাহনের কয়েকটি পরামর্শ হলো
• TMJ সমস্যায় গাম চিবোনো একেবারে বন্ধ করুন।
• সুস্থ চোয়ালের জন্যও দিনে ১৫ মিনিটের বেশি গাম চিবোনো উচিত নয়।
• চিনি মুক্ত গাম বেছে নিন।
• গাম কখনোই ব্রাশ বা ফ্লসের বিকল্প নয় — বরং এগুলোর পরিপূরক হতে পারে।
সতর্কভাবে ব্যবহারে গাম থেকে কিছু উপকার মিললেও, নিয়মিত সঠিক দাঁতের যত্নই হলো সবচেয়ে নিরাপদ উপায়।

সূত্র: ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক