ঢাকা ১৭ বৈশাখ ১৪৩২, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫
English
বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২

ডাউন সিনড্রোম একটি দুরারোগ্য রোগ

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৪৩ পিএম
ডাউন সিনড্রোম একটি দুরারোগ্য রোগ
ডাউন সিনড্রোমের কোনো প্রতিকার নেই। তবে পরিচর্যার মাধ্যমে শারীরিক সমস্যাগুলো নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। ছবি এআই

মানবদেহে প্রতিটি কোষে ক্রোমোজম থাকে ৪৬টি। ডাউন সিনড্রোম ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রতিটি দেহকোষে ২১তম ক্রোমোজমে একটি অতিরিক্ত ক্রোমোজম থাকে, যাকে ‘ট্রাইসমি ২১’ বলা হয়। এই অতিরিক্ত ক্রোমোজমটির কারণে বিশেষ কিছু শারীরিক ও মানসিক ত্রুটি নিয়ে ডাউন সিনড্রোম শিশুর জন্ম হয়। ১৮৮৬ সালে ইংল্যান্ডে জন ল্যাংডন ডাউন নামে এক ব্যক্তি এটি আবিষ্কার করেন। তখন থেকেই এটি ডাউনস সিনড্রোম বা শুধু ডাউন সিনড্রোম বলে চিকিৎসাবিজ্ঞানে স্থান পায়। ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশে প্রতিদিন ১৫ জন ডাউন শিশু জন্ম নেয় এবং দেশে প্রতি বছর গড়ে ৫ হাজার ডাউন শিশু জন্মায়। 

ডাউন সিনড্রোমের প্রকারভেদ
ডাউন সিনড্রোম তিন প্রকার।
ট্রাইসোমি২১: সবচেয়ে সাধারণ প্রকার, প্রায় ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে এই ধরনের রোগী দেখা যায়। এদের শরীরের প্রতিটি কোষে ক্রোমোজোম ২১ এর তিনটি কপি থাকে।
ট্রান্সলোকেশন ডাউন সিনড্রোম: এই অবস্থা প্রায় ৪ শতাংশ ক্ষেত্রে ঘটে। এই সিন্ড্রোমে ক্রোমোজোম ২১-এর অংশ অন্য ক্রোমোজোমের সঙ্গে সংযুক্ত (ট্রান্সলোকেটেড) হয়ে যায়।
মোজাইক ডাউন সিনড্রোম: প্রায় ১ শতাংশ ক্ষেত্রে পাওয়া যায়, যেখানে কিছু কোষে ক্রোমোজোম ২১-এর তিনটি কপি থাকে, অন্যদের সাধারণত দুটি কপি থাকে।

ঝুঁকি
মায়ের বয়স ২০ বছরের কম বা ৩৫ বছর বেশি হলে এর ঝুঁকি বাড়ে। বয়স যত বেশি হবে, শিশুর ডাউনস সিনড্রোম হওয়ার আশঙ্কা তত বাড়বে। যেমন ৩৫ বছর বয়সের প্রতি ৩৫০ জন অন্তঃসত্ত্বার মধ্যে একজনের এবং ৪০ বছর বয়সের প্রতি ১০০ জন মায়ের একজনের ডাউন শিশু হতে পারে। অন্যদিকে কোনো মায়ের আগে একটি ডাউন শিশু থাকলে পরবর্তী সময়ে ডাউন শিশু হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। বাবা-মা ত্রুটিযুক্ত ক্রোমোজমের বাহক হলে তাদের সন্তানও ডাউন শিশু হতে পারে। যদি বাহক বাবা হন তবে সে ক্ষেত্রে ঝুঁকি থাকে ৩ শতাংশ আর মা হলে তা বেড়ে হয়ে যায় ১২ শতাংশ।

গর্ভাবস্থায় শনাক্তকরণ
পরীক্ষার মাধ্যমে জন্মের আগেই শিশুর ডাউন সিনড্রোম আছে কি না তা আশঙ্কা করা যায়। আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে মায়ের পেটে ১১ থেকে ১৪ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভস্থ শিশু ডাউন শিশু হিসেবে জন্ম নেওয়ার ঝুঁকি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। ডাউন সিনড্রোম সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য ক্রনিওনিকভিলাস স্যামপ্লিং করা প্রয়োজন হয়। তবে ক্রোমোজম পরীক্ষাই এ রোগ নিশ্চিতকরণের একমাত্র উপায়।

লক্ষণ ও জটিলতা
যেসব শিশু ডাউন সিনড্রোম নিয়ে জন্মগ্রহণ করে, তাদের মধ্যে যেসব লক্ষণ দেখা যায় সেগুলো হলো-

- শরীরের মাংসপেশি শক্তিশালী না হওয়া বা মাংসপেশিতে স্বাভাবিক শিশুদের মতো জোর না থাকা। একে মাংসপেশির শিথিলতা বলে এবং শিশু নরম তুলতুলে হয় যাকে ফ্লপি বেবি বলে।
- দুই চোখের বাইরের কোনা বাঁকাভাবে ওপরের দিকে উঠে থাকা।
- তাদের হাতের তালু জুড়ে একটি রেখা থাকতে পারে।
- নাক চ্যাপ্টা।
- কান ছোট ও নিচু।
- জিব বের হয়ে থাকা।
- জন্মের সময় শিশুর ওজন ও উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকা। ডাউন সিনড্রোম আক্রান্তদের মধ্যে ব্যক্তিত্ব ও সক্ষমতায় এবং বিভিন্ন মাত্রার বুদ্ধিমত্তা ও অক্ষমতা থাকে। এ ছাড়া, ডাউন সিনড্রোম আক্রান্ত অনেক শিশুর বিভিন্ন শারীরিক ও স্বাস্থ্যগত সমস্যা থাকে। যেমন-
- জন্মগত হৃদরোগ।
- অন্ত্রের অস্বাভাবিকতা।
- শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তির বৈকল্য।
- থাইরয়েডের ত্রুটিপূর্ণ ক্রিয়া।
- অধিক সংক্রমণের আশঙ্কা।
- ঘাড়ের হাড়ের সমস্যা।
- রক্তের রোগ।
কিছু শিশুর এর কোনোটিই হয় না, আবার কাউকে এর কয়েকটি ভোগ করতে হয়।

শিশুর যত্ন
ডাউন সিনড্রোমের কোনো প্রতিকার নেই। তবে পরিচর্যার মাধ্যমে শারীরিক সমস্যাগুলো নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। সঠিক যত্ন, পুষ্টিকর খাবার, স্পিচ ও ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি এবং ফিজিক্যাল থেরাপি দিলে ডাউন সিনড্রোম শিশুরা অন্য স্বাভাবিক শিশুর মতো পড়ালেখা করে স্বনির্ভর হতে পারে। স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি শারীরিক সমস্যা থাকে বলে এদের নিয়মিত শিশু বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে পরীক্ষা করাতে হয়।

মনে রাখুন
সময়মতো পরিচর্যা ও চিকিৎসার মাধ্যমে হরমোনজনিত জটিলতাসহ অন্যান্য শারীরিক সমস্যা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।
উপযুক্ত পরিবেশ ও বিশেষ শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে বড় করতে পারলে এই শিশুরা কর্মক্ষম হয়ে অর্থবহ জীবনযাপন করতে পারে।
মা বেশি বয়সে সন্তান ধারণ করলে এ রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাই সঠিক বয়সে সন্তান ধারণ করা উচিত।

বজ্রপাতে কেউ আহত হলে যা করতে হবে

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৩৪ পিএম
আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৪৮ পিএম
বজ্রপাতে কেউ আহত হলে যা করতে হবে
বজ্রপাত প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও সচেতনতা এবং তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিলে অনেক প্রাণ রক্ষা করা সম্ভব। ছবি এআই

বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের অনেক দেশেই প্রতিবছর বজ্রপাতে বহু মানুষ আহত ও নিহত হন। বিশেষ করে বর্ষাকাল ও গ্রীষ্মকালে বজ্রপাতের প্রকোপ বেড়ে যায়। বজ্রপাত সাধারণত অতিবেগুনী বিকিরণ ও উচ্চ তাপমাত্রার মাধ্যমে মানবদেহে মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। অনেক সময় মানুষ তাৎক্ষণিক মারা যায়, আবার অনেক সময় আহত হলেও সঠিক চিকিৎসা না পেলে জটিলতা দেখা দেয়। তাই বজ্রপাতে আহত হলে কী করতে হবে তা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

বজ্রপাত কীভাবে ক্ষতি করে?

বজ্রপাত হলো প্রকৃতির বিদ্যুৎ নির্গমন প্রক্রিয়া, যা মেঘের ভেতর বা মেঘ থেকে ভূমিতে নির্গত হয়। এতে প্রায় ৩০,০০০ কেলভিন পর্যন্ত তাপমাত্রা সৃষ্টি হয়, যা সূর্যের পৃষ্ঠের তাপমাত্রার চেয়েও বেশি। বজ্রপাত সরাসরি দেহে আঘাত হানলে বা কাছাকাছি কোথাও বিদ্যুৎ বিস্ফোরিত হলে শরীরে তড়িৎ প্রবাহিত হয়, যা মস্তিষ্ক, হৃদপিণ্ড, স্নায়ুতন্ত্রসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ভয়াবহ ক্ষতি করতে পারে।

 

বজ্রপাত হলো প্রকৃতির বিদ্যুৎ নির্গমন প্রক্রিয়া, যা মেঘের ভেতর বা মেঘ থেকে ভূমিতে নির্গত হয়।

 

বজ্রপাতে আহত হলে করণীয় পদক্ষেপসমূহ

১. প্রথমে নিশ্চিত করুন আহত ব্যক্তি জীবিত কি না
বজ্রপাতের ফলে অনেকে তাৎক্ষণিকভাবে অচেতন হয়ে পড়ে। তাদের শ্বাসপ্রশ্বাস ও নাড়ি পরীক্ষা করুন। যদি হৃদস্পন্দন না থাকে বা শ্বাস না চলে, তবে দ্রুত CPR (কার্ডিও-পালমোনারি রিসাসিটেশন) শুরু করুন। যদি আপনি প্রশিক্ষিত না হন, তাহলে যতদূর পারেন চেষ্টা করুন এবং দ্রুত চিকিৎসা সহায়তা চান।

 

২. স্থানীয় ঝুঁকি থেকে নিরাপদে সরিয়ে আনুন
আহত ব্যক্তি যদি এখনো খোলা জায়গায় থাকে, তাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনুন। বজ্রপাত একাধিকবার একই স্থানে হতে পারে। ধাতব বস্তু বা ভেজা মাটি থেকে তাকে সরিয়ে শুকনো স্থানে রাখুন।

 

একই স্থানে একাধিকবার বজ্রপাত হতে পারে।

 

৩. প্রাথমিক চিকিৎসা দিন
• পোড়ার ক্ষত: বজ্রপাতের ফলে অনেক সময় ত্বকে পুড়ে যাওয়ার মতো দাগ পড়ে বা আসলেই পুড়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ক্ষতস্থান পরিষ্কার রাখুন। পোড়া স্থানে বরফ বা ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করুন। তবে সরাসরি বরফ ঘষবেন না।
• স্নায়ু ও পেশীর ক্ষতি: অনেক সময় হাত-পা অবশ হয়ে যায় বা কাঁপুনি হয়। রোগীকে শান্ত থাকতে বলুন এবং অপ্রয়োজনীয় নড়াচড়া থেকে বিরত রাখুন।
• অচেতনতা ও মানসিক বিভ্রান্তি: বজ্রপাতের ফলে মাথায় আঘাত লেগে মস্তিষ্কে সমস্যা হতে পারে। আহত ব্যেক্তির যদি কথা বলতে সমস্যা হয়, বিভ্রান্ত হয় বা স্মৃতি হারায়, তবে চিকিৎসককে দ্রুত জানান।

 

৪. রক্তপাত হলে নিয়ন্ত্রণ করুন
খোলা ক্ষত থেকে রক্ত বের হলে পরিষ্কার কাপড় বা ব্যান্ডেজ দিয়ে চাপ দিয়ে রক্তপাত বন্ধের চেষ্টা করুন। ক্ষতস্থান ওপরে তুলে ধরলে রক্তপাত কমে।

 

৫. জীবনরক্ষাকারী সহায়তা নিন
যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে নিন। বজ্রপাতে চোখে না পড়া অনেক অভ্যন্তরীণ ক্ষতি হতে পারে, যা চিকিৎসক ছাড়া নির্ণয় করা কঠিন।

 

বজ্রপাত থেকে বেঁচে গেলেও অনেক ক্ষেত্রে রোগীর স্নায়ু, চোখ, কান ও মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

 

হাসপাতালে চিকিৎসা কীভাবে হয়?

হাসপাতালে সাধারণত নিম্নোক্ত চিকিৎসাগুলো দেওয়া হয়:

• ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম (ECG) করে হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা পরীক্ষা।
• সিটি স্ক্যান বা এমআরআই করে মস্তিষ্ক ও অভ্যন্তরীণ অঙ্গের ক্ষতি যাচাই।
• স্নায়ু ও মাংসপেশির ফাংশন টেস্ট।
• পোড়া স্থান ড্রেসিং, অ্যান্টিসেপ্টিক ও অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ।
• ব্যথানাশক ও স্টেরয়েড ব্যবস্থাপনা।

 

বজ্রপাতের সময় খোলা মাঠ, ধানক্ষেত বা উঁচু স্থানে থাকবেন না।

 

বজ্রপাতের পর দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা

বজ্রপাত থেকে বেঁচে গেলেও অনেক ক্ষেত্রে রোগীর স্নায়ু, চোখ, কান ও মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে আছে—
• স্মৃতিভ্রষ্টতা বা মনোযোগের অভাব।
• হঠাৎ ঝাঁকুনি বা খিঁচুনি।
• চোখে ঝাপসা দেখা বা শ্রবণশক্তি হ্রাস।
• হতাশা, বিষণ্নতা বা প্যানিক অ্যাটাক।
এই সমস্যাগুলোর জন্য ফলো-আপ চিকিৎসা এবং কাউন্সেলিং দরকার হতে পারে।

 

সতর্কতামূলক পরামর্শ

বজ্রপাতের সময় যেখানে থাকবেন না—
• খোলা মাঠ, ধানক্ষেত বা উঁচু স্থান।
• নদী বা পুকুরে গোসল করা।
• মোবাইল ফোনে কথা বলা বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার।
• গাছের নিচে বা খোলা ছাদে আশ্রয় নেওয়া।

যেখানে থাকবেন—
• পাকা ভবনের ভিতরে।
• ধাতব বস্তু থেকে দূরে।
• জানালা-দরজা বন্ধ করে নিরাপদ আশ্রয়ে।

 

বজ্রপাতের সময় গাছের নিচে বা খোলা ছাদে আশ্রয় নেওয়া যাবে না।

 

উপসংহার

বজ্রপাত প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও সচেতনতা এবং তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিলে অনেক প্রাণ রক্ষা করা সম্ভব। বজ্রপাতে কেউ আহত হলে ভয় না পেয়ে ঠান্ডা মাথায় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। প্রাথমিক চিকিৎসার পাশাপাশি দ্রুত চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়াই জীবন রক্ষার প্রধান উপায়।

পায়ের তালু জ্বলার ৬টি মারাত্মক কারণ

প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০২:০০ পিএম
আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০২:১৩ পিএম
পায়ের তালু জ্বলার ৬টি মারাত্মক কারণ
পায়ের তালু জ্বলার সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো স্নায়ু সমস্যা। ছবি এআই

পায়ের তালু জ্বলা একটি অস্বস্তিকর এবং কখনো কখনো বেদনাদায়ক সমস্যা। এই সমস্যার পেছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে, যা কখনো সাধারণ জীবনধারাগত বিষয়ক, আবার কখনো জটিল শারীরিক অসুস্থতার ইঙ্গিত দেয়। আসুন, পায়ের তালু জ্বলার প্রধান কারণগুলো বিস্তারিতভাবে জানি—

১. স্নায়বিক সমস্যা (Neuropathy)
পায়ের তালু জ্বলার সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো স্নায়ু সমস্যা (নিউরোপ্যাথি)। নিউরোপ্যাথি তখন হয় যখন পায়ের স্নায়ুগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা দুর্বল হয়ে পড়ে।
▶ ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি: ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে রক্তে অতিরিক্ত শর্করা স্নায়ুর ক্ষতি করে। এর ফলে পায়ের তালুতে জ্বালাপোড়া, ব্যথা বা ঝিনঝিন অনুভূতি হয়।
▶ ভিটামিনের ঘাটতি: বিশেষ করে ভিটামিন বি১২, বি১ (থায়ামিন), বি৬ এর ঘাটতি স্নায়ুর স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত করে। ফলে তালুতে অস্বস্তি বা জ্বালা অনুভূত হয়।
▶ ক্রনিক কিডনি রোগ: কিডনি ঠিকমতো কাজ না করলে শরীরে টক্সিন জমে যায়, যা স্নায়ু ক্ষতির কারণ হতে পারে।

 

২. সংক্রমণ ও ছত্রাকজনিত সমস্যা
পায়ের ত্বকের সংক্রমণও তালুতে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করতে পারে।

▶ অ্যাথলেটস ফুট (Athlete’s Foot): এটি একটি ছত্রাক সংক্রমণ, যেখানে পায়ের আঙুলের ফাঁক ও তালুতে চুলকানি, লালচে ভাব ও জ্বালা অনুভূত হয়।
▶ ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ: ত্বকের ক্ষত বা ফুটো দিয়ে ব্যাকটেরিয়া ঢুকে সংক্রমণ ঘটালে তালুতে ব্যথা ও জ্বালা হতে পারে।

 

৩. অতিরিক্ত চাপ ও হাঁটার ধরণ
দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা বা অতিরিক্ত হাঁটার ফলে পায়ের পেশী এবং স্নায়ু অতিরিক্ত চাপের মধ্যে পড়ে।
▶ চোখা বা শক্ত জুতা পরা: পায়ের মাপের চেয়ে ছোট বা শক্ত জুতা ব্যবহারে রক্ত চলাচল কমে যায় এবং পায়ের তলায় চাপ সৃষ্টি হয়, যার ফলে জ্বালা অনুভূত হতে পারে।
▶ প্লান্টার ফ্যাসিয়াইটিস: এটি একটি সাধারণ পায়ের সমস্যা যেখানে পায়ের পাতার নিচের টিস্যুতে (plantar fascia) প্রদাহ হয় এবং পায়ের তলায় ব্যথা ও জ্বালাভাব হয়, বিশেষ করে সকালে ঘুম থেকে উঠে হাঁটতে গেলে।

 

৪. জীবনধারা ও অন্যান্য কারণ
▶ মদ্যপান: অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ স্নায়ুর ক্ষতি করে (alcoholic neuropathy) এবং পায়ের তালুতে জ্বালাভাব সৃষ্টি করে।
▶ গর্ভাবস্থা: গর্ভাবস্থায় নারীদের শরীরে তরল জমে যায় এবং স্নায়ুতে চাপ পড়ে, ফলে পায়ের তালুতে জ্বালা হতে পারে।
▶ বয়সজনিত পরিবর্তন: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্নায়ুর কার্যক্ষমতা কমে যায়, ফলে পায়ের তালুতে জ্বালা অনুভব হতে পারে।

 

৫. রোগব্যাধি
কিছু বিশেষ রোগের কারণেও তালু জ্বালার সমস্যা দেখা দেয়—
▶ থাইরয়েডের সমস্যা: হাইপোথাইরয়েডিজমে (থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি) স্নায়ুগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে এবং পায়ের তালুতে ঝিনঝিনি বা জ্বালা হতে পারে।
▶ রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস ও লুপাস: অটোইমিউন রোগের ফলে শরীরের নিজেরই ইমিউন সিস্টেম স্নায়ুতে আক্রমণ করে, যার ফলে ব্যথা এবং জ্বালাভাব হয়।
▶ হেলথ কন্ডিশনস: যেমন HIV/AIDS, ক্যান্সার চিকিৎসার (কেমোথেরাপি) পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ইত্যাদিতেও পায়ের তালুতে জ্বালা হতে পারে।

 

৬. রক্ত সঞ্চালনের সমস্যা
▶ পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজ (PAD): ধমনী সংকীর্ণ হয়ে গেলে পায়ের রক্ত প্রবাহ কমে যায়, ফলে তালুতে জ্বালা বা ঠান্ডা অনুভূতি হতে পারে।
▶ ডিপ ভেইন থ্রোমবোসিস (DVT): পায়ের শিরায় রক্ত জমাট বাঁধলে তালু ভারী ও জ্বলন্ত মনে হতে পারে।

 

কীভাবে চিনবেন সমস্যাটি গুরুতর কি না?
যদি পায়ের তালুতে জ্বালার সঙ্গে সঙ্গে নীচের উপসর্গগুলো থাকে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি—
• পা ফোলা
• তীব্র ব্যথা বা চলাফেরায় অক্ষমতা
• পায়ের রঙ পরিবর্তন
• পায়ে অনুভূতি একেবারে হারিয়ে যাওয়া

 

প্রতিকার ও পরামর্শ
• রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখা
• সঠিক মাপের আরামদায়ক জুতা পরা
• নিয়মিত পায়ের যত্ন নেয়া (পা পরিষ্কার ও শুকনো রাখা)
• ভিটামিনের ঘাটতি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা
• ছত্রাক সংক্রমণ থাকলে অ্যান্টিফাঙ্গাল চিকিৎসা নেয়া
• অতিরিক্ত মদ্যপান এড়িয়ে চলা

 

উপসংহার
পায়ের তালু জ্বলার সমস্যা কখনো হালকাভাবে নেয়া উচিত নয়। কারণ এর পেছনে থাকা কারণগুলো যদি অবহেলা করা হয়, তাহলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই সঠিক সময়ে সঠিক কারণ নির্ণয় করে চিকিৎসা গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

যে লক্ষণগুলো দেখলে বুঝবেন আপনার ডায়াবেটিস হতে পারে

প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৪০ পিএম
আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৪৬ পিএম
যে লক্ষণগুলো দেখলে বুঝবেন আপনার ডায়াবেটিস হতে পারে
ডায়াবেটিসের প্রাথমিক লক্ষণগুলো সাধারণত ধীরে ধীরে দেখা দেয়। ছবি এআই

ডায়াবেটিস বা মধুমেহ হলো একটি দীর্ঘমেয়াদী (ক্রনিক) রোগ, যেখানে শরীরে রক্তের গ্লুকোজ (চিনি) মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়ে যায়। এর মূল কারণ হলো ইনসুলিন হরমোনের উৎপাদন কমে যাওয়া বা শরীরে ইনসুলিন সঠিকভাবে কাজ না করা। ইনসুলিন হলো একটি হরমোন যা অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত হয় এবং রক্তের গ্লুকোজকে কোষে প্রবেশ করিয়ে শক্তিতে পরিণত করতে সাহায্য করে।

ডায়াবেটিস প্রধানত তিন ধরনের হয়—
• টাইপ ১ ডায়াবেটিস: শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা ভুল করে ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষ ধ্বংস করে ফেলে।
• টাইপ ২ ডায়াবেটিস: শরীর পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না অথবা ইনসুলিন সঠিকভাবে কাজ করে না।
• জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস: গর্ভাবস্থায় কিছু নারীর রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়।

 

ডায়াবেটিসের প্রাথমিক লক্ষণ

ডায়াবেটিসের প্রাথমিক লক্ষণগুলো সাধারণত ধীরে ধীরে দেখা দেয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে দ্রুতও লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ কিছু লক্ষণ হলো—

• প্রচণ্ড পিপাসা অনুভব করা: রক্তে অতিরিক্ত চিনি থাকার কারণে শরীর পানির প্রয়োজন অনুভব করে। ফলে সারাক্ষণ তৃষ্ণা অনুভূত হয়।

• ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া: শরীর অতিরিক্ত চিনিকে প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দিতে চায়, ফলে ঘন ঘন প্রস্রাব হয়, বিশেষ করে রাতে।

• অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগা: গ্লুকোজ কোষে প্রবেশ না করায় শরীর শক্তির অভাব অনুভব করে এবং বারবার খাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়।

• ওজন কমে যাওয়া: যথেষ্ট খাবার খাওয়া সত্ত্বেও হঠাৎ ওজন কমে যেতে পারে, বিশেষ করে টাইপ ১ ডায়াবেটিসে।

• অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব করা: কোষে পর্যাপ্ত গ্লুকোজ না পৌঁছানোর ফলে শরীরে শক্তির ঘাটতি হয়, যা ক্লান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

• দৃষ্টির সমস্যা: উচ্চ রক্তচাপের কারণে চোখের লেন্সের আকৃতি পরিবর্তিত হয়, ফলে ঝাপসা দেখা যেতে পারে।

• ক্ষত ধীরে ভালো হওয়া: রক্তের উচ্চ চিনি মাত্রা ক্ষত নিরাময় প্রক্রিয়া ধীর করে দেয়। ফলে সামান্য কাটাছেঁড়াও অনেক দিন স্থায়ী হয়।

• ত্বক ও মুখের সংক্রমণ: বিশেষ করে ছত্রাকজনিত সংক্রমণ সহজেই হতে পারে।

• হাত-পা অবশ বা ঝিনঝিনে অনুভব করা: স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতির কারণে এমন অনুভূতি হয়।

 

ডায়াবেটিস হলে বারবার খাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। ছবি এআই

 

কারা বেশি ঝুঁকিতে আছেন?

• পরিবারে কারো ডায়াবেটিস থাকলে।
• ওজন বেশি হলে বা স্থূলতা থাকলে।
• উচ্চ রক্তচাপ বা উচ্চ কোলেস্টেরল থাকলে।
• কম শারীরিক পরিশ্রম করলে।
• গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস ইতিহাস থাকলে।
• ৪০ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে।

 

কম শারীরিক পরিশ্রম করলে ডায়াবেটিস হতে পারে। ছবি এআই

 

কীভাবে নিশ্চিত হওয়া যাবে যে ডায়াবেটিস হয়েছে?

শুধুমাত্র উপসর্গ দেখে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়। এজন্য কিছু নির্দিষ্ট পরীক্ষা করতে হয়। যেমন—


▶ ফাস্টিং ব্লাড সুগার টেস্ট (উপবাস অবস্থায় রক্তের গ্লুকোজ পরীক্ষা)।
৮ ঘণ্টা না খেয়ে থেকে রক্তের গ্লুকোজ মাপা হয়। ১২৬ মি.গ্রা./ডেসি.লি. বা তার বেশি হলে ডায়াবেটিস ধরা পড়ে। 

▶ ওরাল গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট (OGTT)
নির্দিষ্ট পরিমাণ গ্লুকোজ খাওয়ার দুই ঘণ্টা পরে রক্তের চিনি মাপা হয়। ২০০ মি.গ্রা./ডেসি.লি. বা বেশি হলে ডায়াবেটিস নিশ্চিত।


▶ HbA1c (গ্লাইকেটেড হিমোগ্লোবিন টেস্ট)
গত ২-৩ মাসের গড় রক্তের গ্লুকোজ পরিমাপ করে। ৬.৫% বা তার বেশি হলে ডায়াবেটিস বলে গণ্য করা হয়।

▶ র‌্যান্ডম ব্লাড সুগার টেস্ট
দিনে যেকোনো সময় রক্তের গ্লুকোজ মাপা হয়। ২০০ মি.গ্রা./ডেসি.লি. বা বেশি হলে এবং লক্ষণ উপস্থিত থাকলে ডায়াবেটিস নির্ধারণ করা হয়।

 

নিয়মিত রক্তের গ্লুকোজ পরীক্ষা করা জরুরি। ছবি এআই

 

ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমানোর উপায়

যদি আপনি মনে করেন যে আপনি ঝুঁকিতে আছেন বা লক্ষণ অনুভব করেন, তবে কিছু প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি—
• নিয়মিত ব্যায়াম করুন। সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম।
• স্বাস্থ্যকর খাবার খান। কম চিনি, কম চর্বি, বেশি শাকসবজি ও আঁশযুক্ত খাবার।
• ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। 
• ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করুন।
• নিয়মিত রক্তের গ্লুকোজ পরীক্ষা করুন।
• মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করুন।

 

ডায়াবেটিস এড়াতে চাইলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। ছবি এআই

 

শেষ কথা

ডায়াবেটিস একটি নীরব ঘাতক। শুরুতে খুব বেশি লক্ষণ নাও দেখা যেতে পারে। তাই ঝুঁকির মধ্যে থাকলে নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করানো জরুরি। সময়মতো শনাক্ত হলে জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন এনে এবং সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে ডায়াবেটিস সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। সতর্কতা ও সচেতনতাই ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনার মূল চাবিকাঠি।

চোখে কিছু পড়লে যা করা যাবে এবং যা করা যাবে না

প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ০২:১০ পিএম
আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৩২ পিএম
চোখে কিছু পড়লে যা করা যাবে এবং যা করা যাবে না
চোখে কিছু পড়লে আতঙ্কিত না হয়ে মাথা ঠান্ডা রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ছবি এআই

চোখে কিছু পড়ে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে কী করতে হবে এবং কী করা থেকে বিরত থাকতে হবে—এই বিষয়ে সচেতনতা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চোখ মানবদেহের সবচেয়ে সংবেদনশীল অঙ্গগুলোর একটি। তাই সামান্য অসতর্কতা বা ভুল পদক্ষেপ বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে। নিচে চোখে কিছু পড়লে করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো —

 

চোখে কিছু পড়লে করণীয়

১. শান্ত ও স্থির থাকা: প্রথমত, ভয় না পেয়ে শান্ত থাকা জরুরি। অনেকে আতঙ্কে চোখ ঘষতে শুরু করেন বা তাড়াহুড়ো করে ভুল পদক্ষেপ নেন, যা ক্ষতির পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে। চোখে কিছু পড়লে ধৈর্য ধরে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

২. চোখ না ঘষা: চোখে ধুলাবালি, কণা বা ছোট কোনো বস্তু পড়লে সেটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ায় অস্বস্তি সৃষ্টি করে, ফলে চোখ ঘষার প্রবণতা তৈরি হয়। কিন্তু এটি মোটেও করা উচিত নয়। ঘষা-ঘষি করলে বস্তুটি কর্নিয়ার (চোখের সামনের স্বচ্ছ আবরণ) ক্ষতি করতে পারে, যার ফলে সংক্রমণ, ব্যথা বা চোখে দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পেতে পারে।

৩. পরিষ্কার পানির সাহায্যে ধোয়া: সবচেয়ে নিরাপদ ও কার্যকর পদ্ধতি হলো চোখ পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা। এক্ষেত্রে কুসুম গরম পানি সবচেয়ে ভালো, তবে তা অবশ্যই সম্পূর্ণ পরিশুদ্ধ ও জীবাণুমুক্ত হতে হবে। পানির প্রবাহ এমনভাবে রাখতে হবে যেন তা চোখে হালকাভাবে পড়ে এবং কিছুক্ষণ পরপর ধুতে থাকে।
ধোয়ার পদ্ধতি
• চোখ হালকাভাবে খোলা রেখে পানির নিচে ধরে রাখুন।
• এক বা দুই মিনিট পানি ঢেলে চোখ পরিষ্কার করুন।
• এটি চোখে ধুলো, বালি বা রাসায়নিক বস্তু পড়লে দ্রুত প্রতিক্রিয়ার প্রথম ধাপ হিসেবে কার্যকর।

 

চোখে কিছু পড়লে এক বা দুই মিনিট পানি ঢেলে চোখ পরিষ্কার করুন। ছবি এআই

 

৪. চোখে পড়া বস্তু শনাক্তের চেষ্টা: আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চোখ খুলে দেখে নিতে পারেন কিছু দৃশ্যমান বস্তু চোখে রয়ে গেছে কি না। যদি দেখা যায় কোনো ছোট কণা আটকে আছে, তবে পরিষ্কার পানি অথবা চোখের জন্য নিরাপদ স্যালাইন দিয়ে তা ধোয়ার চেষ্টা করা যেতে পারে।

৫. চোখ না চেপে রাখা: অনেকে অস্বস্তি থেকে চোখ বন্ধ করে রাখেন এবং চাপ প্রয়োগ করেন। এটি চোখে চাপ সৃষ্টি করে, যা পরিস্থিতি আরও খারাপ করতে পারে। চোখকে আরামদায়ক অবস্থায় রেখে স্বাভাবিকভাবে খুলে রাখতে চেষ্টা করুন।

৬. বিশ্রাম নেওয়া: চোখে কোনো কিছু পড়লে দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হতে পারে। এমন অবস্থায় বই পড়া, মোবাইল দেখা বা টিভি দেখা থেকে বিরত থাকা উচিত। চোখকে বিশ্রাম দিলে তা দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারে।


চোখে রাসায়নিক বা দাহ্য পদার্থ পড়লে

এটি একটি জরুরি পরিস্থিতি। সাবান, ব্লিচ, অ্যাসিড বা অন্য কোনো রাসায়নিক চোখে পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে চোখ খোলা রেখে বিশ মিনিটের মতো পানি দিয়ে ধুতে হবে। এরপর যত দ্রুত সম্ভব চোখের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যাওয়া জরুরি। দেরি করলে চিরস্থায়ী ক্ষতি হতে পারে।

 

চোখে রাসায়নিক পড়লে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। ছবি এআই

 

চোখে কী পড়েছে তা বুঝে করণীয় নির্ধারণ

চোখে পড়া বস্তুর ধরন বুঝে করণীয় কিছুটা ভিন্ন হয়। নিচে তা বিস্তারিতভাবে বলা হলো —

ক. ধুলাবালি বা ছোট কণা: এ ধরনের কিছু পড়লে তা সাধারণত চোখে ঘষে অস্বস্তির সৃষ্টি করে। এই অবস্থায় চোখ ধোয়া এবং চোখে বরফ ঠান্ডা পানি দিয়ে কমপ্রেস করাই যথেষ্ট।

খ. পোকা বা পতঙ্গ: কখনো চোখে ছোট পোকা ঢুকে যেতে পারে। চোখ বন্ধ করে বরফ ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন এবং কোনো বস্তু থাকলে তা বেরিয়ে আসবে।

গ. ধাতব কণা বা কাচের টুকরা: এ ধরনের বস্তু চোখে প্রবেশ করলে তা চোখে ক্ষতের সৃষ্টি করতে পারে। এক্ষেত্রে কোনোভাবেই নিজেরা তা বের করার চেষ্টা করা উচিত নয়। দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

ঘ. রাসায়নিক পদার্থ: পানি দিয়ে চোখ ধুয়ে, চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

 

চোখ ফুলে গেলে বা চুলকানি বেড়ে গেলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। ছবি এআই

 

কখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে

নিচের যেকোনো লক্ষণ দেখা গেলে দ্রুত চোখের চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে —
• চোখ লাল হয়ে যাওয়া ও তা না কমা।
• চোখে তীব্র ব্যথা।
• আলো সহ্য করতে না পারা।
• ঝাপসা দেখা বা চোখে দৃষ্টিশক্তি হ্রাস।
• চোখ ফুলে যাওয়া বা চুলকানি বেড়ে যাওয়া।
• ধোয়ার পরও বস্তু চোখে লেগে থাকা।

 

করণীয় নয় এমন কিছু কাজ

• চোখ ঘষা বা চাপ দেয়া।
তুলা বা নোংরা কাপড় দিয়ে চোখ মোছা।
• চোখে নিজে নিজে ওষুধ বা ড্রপ ব্যবহার করা (ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া)।
• দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হলেও চোখে অতিরিক্ত কাজ চালিয়ে যাওয়া।

 

ধুলাবালি বা রাসায়নিক কাজের সময় সুরক্ষা চশমা ব্যবহার করতে হবে। ছবি এআই

 

প্রতিরোধের উপায়

• ধুলাবালি বা রাসায়নিক কাজের সময় সুরক্ষা চশমা ব্যবহার করা।
• রান্নাঘরে রান্নার সময় বা টয়লেট পরিষ্কার করার সময় চোখ বাঁচিয়ে কাজ করা।
• বাইক চালানোর সময় হেলমেট বা চশমা ব্যবহার করা।

 

উপসংহার

চোখে কিছু পড়লে আতঙ্কিত না হয়ে মাথা ঠান্ডা রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চোখের প্রাথমিক যত্ন ও দ্রুত সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করলে অনেক বড় ক্ষতি এড়ানো যায়। তবে সবসময় মনে রাখতে হবে, চোখের কোনো সমস্যা বা সন্দেহ হলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যাওয়াই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।

শিশুর স্থূলতা থেকে নানা সমস্যা

প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৫৮ পিএম
আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৫৯ পিএম
শিশুর স্থূলতা থেকে নানা সমস্যা
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ শিশুর স্থূলতা প্রতিরোধ করতে পারে। ছবি এআই

শিশুর স্থূলতা একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা, যা বিশ্বব্যাপী শিশুদের প্রভাবিত করে। এটি শিশুদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে।

শিশুর স্থূলতার কারণ    
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: ফাস্টফুড, চিনিযুক্ত পানীয় এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশি খাওয়া।
শারীরিক কার্যকলাপের অভাব: খেলাধুলা এবং অন্যান্য শারীরিক ক্রিয়াকলাপের অভাব।
বংশগতি: স্থূলতার বংশগতি/পারিবারিক ইতিহাস থাকা।
মানসিক কারণ: মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা বিষণ্নতা।
চিকিৎসা: কিছু ওষুধ ওজন বৃদ্ধি করতে পারে।
এ ছাড়া কিছু রোগ, যেগুলো শিশুদের স্থূলতার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। যেমন- হাইপোথাইরয়েডিজম, কুশিং সিনড্রোম, হাইপারইনসুলিনেমিয়া। এ ছাড়া ডাউন সিনড্রোমের কারণেও শিশু মোটা হতে পারে।


শিশুর স্থূলতার জন্য যেসব রোগের ঝুঁকি বাড়ে
ডায়াবেটিস
উচ্চ রক্তচাপ
উচ্চ কোলেস্টেরল
হৃদরোগ
অ্যাজমা
পিত্তথলিতে পাথর
স্কিন ইনফেকশন
অকালপক্ব বয়ঃসন্ধি
স্ট্রোক
ক্যানসার
হাড়ের সমস্যা
ঘুমের সমস্যা
মানসিক সমস্যা


শিশুর স্থূলতার প্রতিরোধ ও প্রতিকার
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: ফল, শাকসবজি, গোটা শস্য এবং চর্বিহীন প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া।
নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ: প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০-৬০ মিনিট খেলাধুলা, সাইকেল চালানো, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা অথবা অন্যান্য কার্যকলাপ।
পারিবারিক সমর্থন: স্বাস্থ্যকর জীবনধারা পরিবর্তনের জন্য পরিবারের সদস্যদের সমর্থন প্রয়োজন।
চিকিৎসকের পরামর্শ: শিশুর ওজন বা স্থূলতা নিয়ে উদ্বিগ্ন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।      

শিশুর স্থূলতা সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
শিশুর স্থূলতা একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ শিশুর স্থূলতা প্রতিরোধ করতে পারে।
শিশুর স্থূলতা শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে।
বাবা-মায়ের সচেতনতা শিশুর স্থূলতা প্রতিরোধে সব থেকে বেশি জরুরি।

লেখক: শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, আলোক মাদার অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার, মিরপুর, ঢাকা