
স্থূলতা বর্তমান সময়ের একটি প্রধান জনস্বাস্থ্য সমস্যা। এটি ধীরে ধীরে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন, উৎপাদনশীলতা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) স্থূলতাকে একটি ‘গ্লোবাল এপিডেমিক’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। উন্নত দেশ থেকে শুরু করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও এই সমস্যা দিন দিন বাড়ছে।
স্থূলতা কী
স্থূলতা হলো শরীরে অতিরিক্ত চর্বি সঞ্চিত হয়ে শরীরের ওজন অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়া। যখন কোনো ব্যক্তির বডি মাস ইনডেক্স (BMI) ৩০ বা তার চেয়ে বেশি হয়, তখন তাকে স্থূল বলা হয়।
বডি মাস ইনডেক্স = ওজন (কেজি) ÷ উচ্চতা² (মিটার)
স্থূলতার কারণ
• জৈবিক কারণ: জেনেটিক বা বংশগতি। এ ছাড়া হরমোনাল অসামঞ্জস্য, যেমন- হাইপোথাইরয়েডিজম, পিসিওএস, কুশিং সিনড্রোম।
• পরিবেশগত কারণ: উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাদ্যগ্রহণ, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, কম পরিশ্রম এবং আধুনিক জীবনধারা ও যান্ত্রিকতা।
• মানসিক কারণ: অবসাদ, দুশ্চিন্তা, ইমোশনাল ইটিং এবং ঘুমের ব্যাঘাত।
• ওষুধজনিত কারণ: স্টেরয়েড, এন্টিসাইকোটিক ওষুধ, ইনসুলিন ও অন্যান্য হরমোন।
স্থূলতার শারীরিক জটিলতা
• টাইপ ২ ডায়াবেটিস
• হৃদরোগ
• উচ্চ রক্তচাপ
• স্ট্রোক
• লিভারের ফ্যাটি ডিজিজ
• অস্টিওআর্থ্রাইটিস
• ইনফার্টিলিটি
• কিছু নির্দিষ্ট ক্যাসনার, যেমন- ব্রেস্ট, কোলন
মানসিক ও সামাজিক প্রভাব
স্থূলতা শুধু শারীরিক নয়, মানসিক সমস্যাও সৃষ্টি করে। নিজেকে হীনম্মন্য মনে করা, আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া, বিষণ্ণতা ও সমাজে হেনস্তা এসব এর ফলাফল।
শিশুদের মধ্যে স্থূলতা
শিশুদের মাঝে স্থূলতার হার আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। ভিডিও গেমস, মোবাইল আসক্তি, বাইরের খাবারে ঝোঁক ও কম শারীরিক পরিশ্রম এর মূল কারণ। শৈশবের স্থূলতা ভবিষ্যতে বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করে।
প্রতিকার ও ব্যবস্থাপনা
• খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন: কম চর্বি ও চিনি নেওয়া। অধিক ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়া। সুষম খাদ্যগ্রহণ এবং ফাস্টফুড ও কার্বোনেটেড ড্রিংক বর্জন।
• শারীরিক পরিশ্রম: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা। সাইক্লিং, সাঁতার, জিম করা। সিঁড়ি ব্যবহার করা।
• জীবনধারায় পরিবর্তন: পর্যাপ্ত ঘুমানো। মানসিক চাপ কমানো। ধূমপান ও মদ্যপান বর্জন করা।
• ওষুধ বা চিকিৎসা (ডাক্তারের পরামর্শে): অরলিস্ট্যাট, লিরাগ্লুটাইড এবং বারিয়াট্রিক সার্জারি, যেমন- গ্যাস্ট্রিক বাইপাস।
• সরকারি ও সামাজিক উদ্যোগ: স্কুলপর্যায়ে স্বাস্থ্যশিক্ষা দেওয়া। খাদ্যে ক্যালোরি লেবেল বাধ্যতামূলক করা। ওয়ার্কপ্লেসে ফিটনেস সুবিধা রাখা। মিডিয়াতে সচেতনতামূলক প্রচার করা।
স্থূলতা একটি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সমস্যা। সবার সম্মিলিত সচেতনতা, স্বাস্থ্যবান্ধব নীতিমালা এবং নিজস্ব উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা স্থূলতা প্রতিরোধ করতে পারি। শরীর ও মনের সুস্থতার জন্য প্রয়োজন স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন।
লেখক: মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, আলোক হাসপাতাল লিমিটেড, মিরপুর-৬, ঢাকা