-1747913763.jpg)
বর্তমান সমাজে কেনাকাটা যেন শুধুমাত্র প্রয়োজন মেটানোর মাধ্যম নয়, হয়ে উঠেছে আত্মতৃপ্তি ও সামাজিক প্রতিপত্তির প্রতীক। অনলাইন মার্কেটপ্লেসের অফার আর ডিসকাউন্টের ঝলক চোখ ধাঁধিয়ে দেয় প্রতিনিয়ত। কিন্তু যখন এই কেনাকাটার অভ্যাস নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন তা পরিণত হতে পারে এক ধরনের মানসিক রোগে, যার নাম Compulsive Buying Disorder (CBD) বা অসাংগতিপূর্ণ কেনাকাটা ব্যাধি।
কী এই ব্যাধি
Compulsive Buying Disorder এমন এক সমস্যা, যেখানে একজন ব্যক্তি বারবার অপ্রয়োজনীয়ভাবে কেনাকাটা করে, যদিও তার সেই জিনিসগুলোর প্রয়োজন নেই বা তার আর্থিক সামর্থ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে। এটি কেবলমাত্র একটা বাজে অভ্যাস নয়, বরং একটি মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা। এটা ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্যে, আর্থিক অবস্থায় এবং পারিবারিক সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
.jpg)
লক্ষণ ও উপসর্গ
এই ব্যাধির বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে যা সহজেই নজর কাড়ে—
• অপ্রয়োজনীয় ও অপ্রতিরোধ্য কেনাকাটার ইচ্ছা।
• কেনাকাটার পর সাময়িক আনন্দ অনুভব, কিন্তু পরে অনুশোচনা বা অপরাধবোধ।
• মানসিক চাপ, একাকীত্ব, হতাশা ইত্যাদি থেকে মুক্তি পেতে কেনাকাটার আশ্রয় নেওয়া।
• ঋণ করে বা ধার নিয়েও কেনাকাটা চালিয়ে যাওয়া।
• পরিবার বা কাছের মানুষের কাছ থেকে এই আচরণ গোপন রাখা।
.jpg)
কেন হয় এই সমস্যা?
মনোবিজ্ঞানীদের মতে, CBD মূলত একটি আচরণগত আসক্তি, যেমন অ্যালকোহল বা গেমিং আসক্তি। এই ব্যাধির পেছনে কিছু মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক কারণ বিদ্যমান। যেমন—
• আত্মসম্মানহীনতা: অনেক সময় আত্মবিশ্বাসের অভাব ঢাকতে মানুষ দামি বা বাহারি জিনিস কিনে নিজেকে ‘ভালো’ মনে করার চেষ্টা করে।
• বিষণ্নতা বা উদ্বেগ: মানসিক চাপ কমানোর একটি মেকানিজম হিসেবে কেনাকাটা বেছে নেয় অনেকেই।
• সামাজিক চাপ: সোশ্যাল মিডিয়া ও বিজ্ঞাপন মানুষের মনে একধরনের ‘চাই-চাই’ প্রবণতা তৈরি করে।
• পারিবারিক ইতিহাস: পরিবারে যদি এমন আচরণ থেকে থাকে, তবে এই অভ্যাসের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
.jpg)
চিকিৎসা ও করণীয়
এই রোগের চিকিৎসা সম্ভব। সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় ও পরামর্শের মাধ্যমে অনেকেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন। CBD-এর জন্য যে চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো সবচেয়ে কার্যকর—
• CBT (Cognitive Behavioral Therapy): এই থেরাপির মাধ্যমে মানুষ তার আচরণগত প্যাটার্ন বুঝে তা নিয়ন্ত্রণ করতে শেখে।
• ওষুধ: যদি বিষণ্নতা বা উদ্বেগের উপসর্গ থাকে, তবে কখনও কখনও ওষুধ দেওয়া হয়।
• আর্থিক পরামর্শ ও পরিকল্পনা: খরচের উপর নিয়ন্ত্রণ আনার জন্য বাজেট তৈরি ও মানসিক সহায়তা একসাথে কাজ করতে পারে।
.jpg)
শেষ কথা
অতিরিক্ত কেনাকাটা অনেক সময় সমাজে ‘চালাকিপূর্ণ শখ’ বলে প্রশংসিত হলেও এর পেছনে যে মানসিক সংকট লুকিয়ে থাকতে পারে, তা আমাদের অনুধাবন করা জরুরি। প্রতিটি মানুষকেই সচেতন হতে হবে নিজের আচরণ সম্পর্কে, এবং প্রয়োজন হলে নির্দ্বিধায় বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে হবে।