
শরীরের ভিত বা কাঠামো হলো হাড়। এই হাড়গুলো যদি দুর্বল হয়ে পড়ে, তবে আমাদের দৈনন্দিন চলাফেরা, ভারসাম্য রাখা কিংবা সামান্য আঘাতে টিকে থাকাও কঠিন হয়ে পড়ে। তাই হাড় মজবুত রাখতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত জরুরি। হাড়ের সুস্থতায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি। এ ছাড়াও প্রোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন কে হাড়ের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে বড় ভূমিকা রাখে।
দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার হলো ক্যালসিয়ামের প্রধান উৎস। গরুর দুধ, ছানা, পনির বা টক দইয়ে রয়েছে এমন উপাদান, যা হাড় গঠনে সহায়ক। প্রতিদিন অন্তত এক গ্লাস দুধ পান করলে দেহের ক্যালসিয়ামের বড় একটি অংশ পূরণ হয়ে যায়। ডিম, বিশেষ করে ডিমের কুসুমে থাকা ভিটামিন ডি শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণে সহায়তা করে। পাশাপাশি ডিমে থাকা প্রোটিন হাড়ের টিস্যু গঠনে সাহায্য করে।
সামুদ্রিক মাছ যেমন- সালমন, টুনা ও ম্যাকারেলেও রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ডি এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা হাড়ের ক্ষয় রোধ করে এবং হাড়কে শক্তিশালী রাখে। দেশি ছোট মাছ যেমন- পুঁটি, চাপিলা, মলা ইত্যাদি কাঁটাসহ খাওয়া যায় বলে এগুলো ক্যালসিয়ামের একটি দারুণ উৎস।
সবুজ শাকসবজি; যেমন- পালং শাক, মেথি শাক, ব্রকলি ইত্যাদিতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন কে ও ম্যাগনেসিয়াম। ভিটামিন কে হাড়ের ভেতরের খনিজ উপাদান স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে। বাদাম ও বীজ, বিশেষ করে তিল, কাঠবাদাম ও চিয়া সিডে রয়েছে এমন পুষ্টি উপাদান, যা হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায়।
ডাল ও ছোলা, বিশেষ করে নিরামিষভোজীদের জন্য প্রোটিন ও ম্যাগনেসিয়ামের ভালো উৎস। এগুলো হাড় গঠনে সহায়ক খনিজ সরবরাহ করে। একইভাবে সয়া ও সয়ার তৈরি পণ্য; যেমন- টোফু বা সয়া দুধেও ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন পাওয়া যায়, যা হাড় সুস্থ রাখতে কার্যকর।
ফলমূলের মধ্যে কমলা, কলা ও কিউইতে ভিটামিন সি ও পটাশিয়াম থাকে। ভিটামিন সি কোলাজেন তৈরি করতে সাহায্য করে, যা হাড়ের গঠন মজবুত করে। কিছু প্রজাতির মাশরুমেও ভিটামিন ডি থাকে, বিশেষ করে যেগুলো সূর্যের আলোতে জন্মায়।
শুধু খাবারেই নয়, হাড়ের সুস্থতায় সূর্যের আলোও জরুরি। শরীর প্রাকৃতিকভাবে ভিটামিন ডি তৈরি করে সূর্যালোকে থাকলে। দিনে অন্তত ১৫-২০ মিনিট রোদে থাকা উচিত। এদিকে চিনি, অতিরিক্ত লবণ, সফট ড্রিংকস, ধূমপান ও অ্যালকোহল হাড়ের জন্য ক্ষতিকর। এগুলো ক্যালসিয়াম শোষণে বাধা সৃষ্টি করে এবং হাড় ক্ষয় করে।
মাংস হাড়ের জন্য উপকারী। মাংসে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে, যা হাড়ের গঠন ও মজবুতিতে সহায়তা করে। এতে থাকা জিঙ্ক হাড়ের বৃদ্ধিতে সহায়ক এবং ক্যালসিয়ামের শোষণ বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া মাংসে থাকা ভিটামিন বি১২ ও ফসফরাস হাড়কে সুস্থ ও শক্ত রাখে। বিশেষ করে লাল মাংসে আয়রন ও খনিজ পদার্থ থাকে, যা হাড়ের ঘনত্ব বজায় রাখতে ভূমিকা রাখে।
তবে অতিরিক্ত মাংস খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, তাই পরিমাণমতো খাওয়াই ভালো। সুষম খাদ্যের অংশ হিসেবে মাংস খেলে হাড়ের সুস্থতা বজায় থাকে।
সবশেষে বলা যায়, হাড়ের যত্ন নেওয়া মানে শুধু দাঁড়িয়ে থাকা নয়, সুস্থভাবে বেঁচে থাকার ভিত গড়ে তোলা।