
হাইপারহাইড্রোসিস (Hyperhidrosis) হলো অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার সমস্যা, যা সবসময় তাপমাত্রা বৃদ্ধি বা শরীরচর্চার সঙ্গে সম্পর্কিত থাকে না। এতে এত বেশি ঘাম হতে পারে যে কাপড় ভিজে যায় বা হাত থেকে ঘাম ঝরতে থাকে। অতিরিক্ত ঘাম দৈনন্দিন জীবনে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে এবং মানসিক অস্বস্তি ও সামাজিকভাবে বিব্রত করতে পারে।
এ রোগের কার্যকর চিকিৎসা আছে। সাধারণত অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট (ঘাম প্রতিরোধকারী স্প্রে বা লোশন) ব্যবহার দিয়ে চিকিৎসা শুরু হয়। তাতে উপকার না হলে অন্যান্য ওষুধ ও থেরাপির প্রয়োজন হতে পারে। মারাত্মক ক্ষেত্রে অপারেশনের মাধ্যমে ঘামগ্রন্থি অপসারণ বা অতিরিক্ত ঘামের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্নায়ুগুলোর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার চিকিৎসা দেয়া হয়।
কখনো কখনো হাইপারহাইড্রোসিসের পেছনে কোনো অন্তর্নিহিত শারীরিক সমস্যা থাকতে পারে, যেটির চিকিৎসা করলে ঘাম কমে যেতে পারে।
উপসর্গ
হাইপারহাইড্রোসিসের প্রধান উপসর্গ হলো অতিরিক্ত ঘাম। ঘামের পরিমান গরম আবহাওয়া, ব্যায়াম বা দুশ্চিন্তার কারণে হওয়া ঘামের চেয়ে অনেক বেশি। সাধারণত এ ধরনের ঘাম হাত, পা, বগল বা মুখে হয়ে থাকে।
কারণ
ঘাম শরীরের স্বাভাবিক শীতলীকরণ পদ্ধতি। শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে স্নায়ুতন্ত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘামগ্রন্থিকে উদ্দীপ্ত করে।
প্রাইমারি হাইপারহাইড্রোসিস হয়ে থাকে যখন স্নায়ু সংকেতের ত্রুটির কারণে ইক্রাইন (Eccrine) ঘামগ্রন্থিগুলো অতিসক্রিয় হয়ে পড়ে। এটি মূলত হাত, পা, বগল ও মাঝে মাঝে মুখে হয়ে থাকে। এই ধরনের ঘামের কোনো নির্দিষ্ট শারীরিক কারণ পাওয়া যায় না। এটি বংশগতও হতে পারে।
সেকেন্ডারি হাইপারহাইড্রোসিস ঘটে তখন, যখন কোনো শারীরিক রোগ বা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় অতিরিক্ত ঘাম হয়। এই ক্ষেত্রে পুরো শরীরেই ঘাম হতে পারে। যেসব কারণে সেকেন্ডারি হাইপারহাইড্রোসিস হতে পারে তার মধ্যে আছে ডায়াবেটিস, মেনোপজ বা ঋতুবন্ধের সময় গরম ফ্ল্যাশ, থাইরয়েড সমস্যা, কিছু নির্দিষ্ট ধরনের ক্যান্সার, স্নায়ুতন্ত্রের রোগ, সংক্রমণ ইত্যাদি।
জটিলতা
হাইপারহাইড্রোসিস থেকে যেসব জটিলতা দেখা দিতে পারে তার মধ্যে আছে —
• সংক্রমণ: অতিরিক্ত ঘাম ত্বকে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।
• সামাজিক ও মানসিক প্রভাব: হাত ঘামা বা জামাকাপড় ভিজে যাওয়া বিব্রতকর হতে পারে। এটি শিক্ষাজীবন ও পেশাগত অগ্রগতিতেও বাধা হতে পারে।
কখন ডাক্তার দেখাবেন
কখনো কখনো অতিরিক্ত ঘাম গুরুতর শারীরিক সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। যদি অতিরিক্ত ঘামের সঙ্গে মাথা ঘোরা, বুক বা গলা বা চোয়াল বা বাহুতে ব্যথা, ঠান্ডা ত্বক এবং দ্রুত হৃদস্পন্দন দেখা দেয়—তাহলে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করা জরুরি।
নিচের যেকোনো একটি অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত—
• অতিরিক্ত ঘাম দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত করছে।
• ঘাম মানসিক চাপ বা সামাজিক দূরত্ব তৈরি করছে।
• হঠাৎ করে অস্বাভাবিকভাবে ঘাম বেড়ে গেছে।
• কোনো সুস্পষ্ট কারণ ছাড়াই রাতে ঘাম হচ্ছে।
উপসংহার
অতিরিক্ত ঘামকে অবহেলা না করে প্রাথমিক পর্যায়েই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণ করলে হাইপারহাইড্রোসিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
সূত্র: মায়ো ক্লিনিক