-1750593075.jpg)
বমি বমি ভাব (Nausea) ও বমি—এই দু’টি অনুভূতি আমাদের জীবনের কোনো না কোনো সময়ে প্রত্যেকেই অনুভব করেছি। হয়তো এমন কিছু খেয়েছেন যা আপনার পেটে মানায়নি, কিংবা আপনি কেমোথেরাপির মতো চিকিৎসা নিচ্ছেন। আবার অনেক সময় গর্ভাবস্থার প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবেও এটি দেখা দেয়। এই মাথা ঘোরানো, অস্বস্তিকর, বমি আসার মতো অনুভূতিটা খুব পরিচিত।
বমি বমি ভাব ও বমি কী?
বমি বমি ভাব হলো গলা ও পেটের উপরের অংশে এক ধরনের অস্বস্তিকর অনুভূতি, যার সঙ্গে মাথা ঝিমঝিম করা, গা গোলানো, হালকা মাথা ঘোরা বা গিলতে অসুবিধা হওয়া যুক্ত থাকতে পারে। যদিও এটি অনেক সময় বমির পূর্বাভাস দেয়, কিন্তু সবসময় বমি হয় এমন নয়।
অন্যদিকে বমি হলো পেটের ভেতরের উপাদান জোরপূর্বক মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসা। যখন কেউ বমি করে, তখন পেটের পেশিগুলো সংকুচিত হয়ে খাবার উপরে ঠেলে দেয় এবং তা খাদ্যনালী পেরিয়ে মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে।
কেন হয়?
এগুলো নিজে কোনো রোগ নয়, বরং বিভিন্ন রোগ বা শারীরিক অবস্থার উপসর্গ। কিছু সাধারণ কারণের মধ্যে রয়েছে—
• পেটের ভাইরাসজনিত সংক্রমণ (গ্যাস্ট্রোএনটেরাইটিস বা স্টমাক ফ্লু)।
• খাদ্যে বিষক্রিয়া।
• গর্ভাবস্থা।
• মাইগ্রেন বা তীব্র মাথাব্যথা।
• গতি-জনিত অসুস্থতা (যেমন গাড়িতে চড়লে মাথা ঘোরা)।
এছাড়াও কিছু শারীরিক বা স্নায়ুবিষয়ক পরিবর্তনের কারণে বমির প্রবণতা বাড়ে। যেমন:
• আলসার, গ্যাস্ট্রাইটিস বা গ্যাস্ট্রোপারেসিসের মতো হজমজনিত সমস্যা।
• সাগর বা যানবাহনে যাত্রাকালে মাথা ঘোরা।
• গর্ভাবস্থার প্রথমদিক।
• তীব্র ব্যথা।
• হজমের গোলমাল বা খাবারের পর অস্বস্তি।
• সংক্রমণ।
• ভার্টিগো।
• তীব্র গন্ধ বা দুর্গন্ধ।
• অতিরিক্ত অ্যালকোহল বা মারিজুয়ানা সেবন।
• কেমোথেরাপির মতো কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
.jpg)
কোন কোন গুরুতর অসুস্থতায় বমি হতে পারে?
যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বমি ক্ষতিকর নয়, তবে এটি গুরুতর রোগের লক্ষণও হতে পারে। যেমন:
• মস্তিষ্কে আঘাত (কনকাশন)।
• মস্তিষ্কের প্রদাহ (এনসেফালাইটিস)।
• মেনিনজাইটিস।
• অন্ত্রের রুদ্ধতা।
• অ্যাপেনডিসাইটিস।
• মস্তিষ্কে টিউমার।
বমি বমি ভাব কমাতে কী করা যায়?
প্রতিটি ব্যক্তির জন্য কার্যকর উপায় ভিন্ন হতে পারে। তবে কিছু ঘরোয়া উপায় আছে যেগুলো সাহায্য করতে পারে:
• ঠান্ডা পানীয় পান করা।
• হালকা ও সাদাসিধে খাবার খাওয়া (যেমন পাউরুটি বা বিস্কুট)।
• তেল-ঝাল বা মিষ্টিজাত খাবার এড়িয়ে চলা।
• একবারে বেশি না খেয়ে অল্প অল্প করে খাওয়া।
• ধীরে ধীরে খাওয়া।
• খাওয়া শেষে তৎক্ষণাৎ হাঁটাচলা না করা।
• খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দাঁত না মাজা।
• সব ধরনের খাবার খাওয়ার চেষ্টা করা, যেন পুষ্টি ঠিক থাকে।
বমির ক্ষেত্রে করণীয়
• শুরুতে তরল খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।
• বমির সময় কঠিন খাবার এড়িয়ে চলুন।
• বিশ্রাম নিন।
• প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বমি কমানোর ওষুধ ব্যবহার করুন।
.jpg)
বমি বা বমি বমি ভাবের জটিলতা কী হতে পারে?
বড়দের জন্য সবচেয়ে বড় আশঙ্কা হলো পানিশূন্যতা (ডিহাইড্রেশন)। বড়রা সাধারণত এই লক্ষণ নিজেরাই বুঝতে পারে (যেমন: অতিরিক্ত পিপাসা, মুখ ও ঠোঁট শুকিয়ে যাওয়া)। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বেশি, বিশেষত যখন বমির সঙ্গে ডায়রিয়াও থাকে। কারণ, শিশুরা অনেক সময় বুঝিয়ে বলতে পারে না তারা কেমন অনুভব করছে।
শিশুদের ক্ষেত্রে ডিহাইড্রেশনের লক্ষণ
• ঠোঁট ও মুখ শুকিয়ে যাওয়া।
• চোখের নিচে গর্ত হয়ে যাওয়া।
• দ্রুত শ্বাস নেওয়া বা হৃদস্পন্দন।
• নবজাতকের মাথার উঁচু নরম স্থান (ফন্টানেল) বসে যাওয়া।
• প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া।
কীভাবে বমি বমি ভাব প্রতিরোধ করবেন?
• দিনে অল্প পরিমানে বার বার খাওয়া।
• ধীরে ধীরে খাওয়া।
• সহজে হজম হয় না এমন খাবার এড়িয়ে চলা।
• ঠান্ডা বা কক্ষতাপমাত্রার খাবার খাওয়া।
• খাওয়ার পর বিশ্রাম নেওয়া, মাথা যেন পায়ের চেয়ে একটু উঁচু থাকে।
মনে রাখবেন— বমি বমি ভাব ও বমি কোনো রোগ নয়, বরং অন্য কিছু সমস্যার লক্ষণমাত্র। তাৎক্ষণিক প্রতিকার যেমন দরকার, তেমনি দীর্ঘস্থায়ী বা ঘন ঘন হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
সূত্র: ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক