
গ্রীষ্ম কিংবা শরৎকালে গ্রামীণ বা পাহাড়ি এলাকায় ঘুরতে গেলে অনেক সময়ই মৌমাছির কামড়ের শিকার হতে হয়। সাধারণত এটি প্রাণঘাতী নয়, তবে কারও কারও ক্ষেত্রে তীব্র অ্যালার্জি বা শ্বাসকষ্টসহ গুরুতর প্রতিক্রিয়াও সৃষ্টি করতে পারে। তাই মৌমাছি কামড়ালে দ্রুত ও সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। আসুন দেখে নেই মৌমাছির কামড়ে কী করতে হবে—
শান্ত থাকুন
প্রথমত, আতঙ্কিত না হয়ে নিজেকে শান্ত রাখুন। ভয় পেলে বা বেশি নড়াচড়া করলে মৌমাছির বিষ দ্রুত শরীরের অন্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
হুল থাকলে তা সরিয়ে ফেলুন
মৌমাছি কামড়ালে তাদের হুল চামড়ায় রয়ে যায়। হুল যত দ্রুত সম্ভব সরিয়ে ফেলতে হবে। তবে খেয়াল রাখবেন—নখ বা চিমটি দিয়ে হুল টানবেন না। এতে বিষ আরও গভীরে চলে যেতে পারে। বরং একটি প্লাস্টিক কার্ড বা পাতলা কিছু দিয়ে হুলটিকে চামড়ার উপর দিয়ে কেটে তুলে দিন।

ত্বক পরিষ্কার করুন
হুল সরানোর পর আক্রান্ত জায়গাটি পরিষ্কার পানি ও হালকা সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি কমে যাবে।
ঠান্ডা সেঁক দিন
ব্যথা ও ফোলাভাব কমাতে আক্রান্ত স্থানে বরফ জড়ানো কাপড় বা ঠান্ডা পানিতে ভেজানো তোয়ালে ১০–১৫ মিনিট চেপে ধরুন। প্রয়োজনে দিনে কয়েকবার এটি করা যেতে পারে।
ব্যথা ও চুলকানি কমাতে ওষুধ ব্যবহার করুন
প্রয়োজনে ব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল বা ইবুপ্রোফেন খাওয়া যেতে পারে (চিকিৎসকের পরামর্শে)। চুলকানি বা লালভাব কমাতে অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ বা অ্যালার্জি প্রতিরোধক মলম ব্যবহার করা যেতে পারে।
কামড়ের জায়গা খোঁচাবেন না
চুলকানি বা জ্বালাপোড়ার কারণে অনেকেই কামড়ের জায়গা খুঁটতে থাকেন, যা একেবারেই অনুচিত। এতে সংক্রমণ হতে পারে এবং ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

অ্যালার্জির লক্ষণ খেয়াল রাখুন
মৌমাছির বিষে অ্যালার্জি থাকলে কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমন হঠাৎ শ্বাসকষ্ট, চোখ, মুখ বা গলার ফোলা, হাইপার একটিভ হার্টবিট, বমি বা মাথা ঘোরা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। এই ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান বা নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যান।
পূর্ব-অ্যালার্জি থাকলে সতর্ক থাকুন
আপনার আগে মৌমাছির কামড়ে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া হয়ে থাকলে সবসময় সঙ্গে ‘ইপিপেন’ (Epinephrine ইনজেকশন) রাখুন, বিশেষ করে পাহাড়ি বা ঝোপঝাড় এলাকায় গেলে।
প্রাকৃতিক প্রতিকার প্রয়োগ করতে পারেন
বাসায় প্রাথমিক প্রতিকার হিসেবে বেকিং সোডা ও পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে কামড়ের জায়গায় লাগানো যেতে পারে। অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করলে জ্বালাভাব কমে। মধু প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে।

বাচ্চাদের বিশেষভাবে নজর দিন
শিশুরা নিজেদের অস্বস্তি প্রকাশে পারদর্শী নাও হতে পারে। তাই যদি বাচ্চা কোনো অজানা কারণে কান্নাকাটি বা অস্বস্তি করে, তাহলে কামড় খেয়েছে কি না লক্ষ্য করুন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসা নিন।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?
○ শ্বাসকষ্ট বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার লক্ষণ দেখা দিলে।
○ হুল ঢোকার জায়গা লাল হয়ে পুঁজ বের হলে।
○ অনেকক্ষণ ধরে ফোলাভাব না কমলে।
○ শরীরে ছড়িয়ে পড়া চুলকানি বা র্যাশ দেখা দিলে।
মৌমাছির কামড় সবসময় ভয় পাওয়ার বিষয় নয়, তবে সচেতন না হলে ছোট একটি কামড়ও বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই এ বিষয়ে সাবধানতা ও সঠিক প্রাথমিক চিকিৎসা জানা থাকা একান্ত প্রয়োজন।