
ভালোবাসা দিবস উদযাপনের জন্য প্রিয় মানুষের সঙ্গে ঘুরতে যেতে পারেন। ঢাকার কাছেই কিছু দর্শনীয় জায়গা রয়েছে। যেখানে প্রিয়জনকে নিয়ে অল্প খরচের মধ্যে ঘুরতে গেলে সময় ভালো কাটবে।
দোয়েল চত্বর ও কার্জন হল
কার্জন হল জায়গাটির একটি বিশেষ আকর্ষণ আছে। পুরো এলাকাটি পুরোনো স্থাপত্যের যে ছাপটি আছে, তা একটি প্রাচীন ভাব এনে দেয়। এখানকার বিভিন্ন ভবনের পুরোনো কাঠের সিঁড়িতে বসে খানিকটা সময় কাটিয়েই দেওয়া যায়। কার্জন হল থেকে বেরিয়েই দোয়েল চত্বর যেতে পারেন। সেখানে আপনি বিভিন্ন হস্তশিল্প কেনাকাটা করতে পারবেন। বেশ কিছু ছোট নার্সারি, যেখান থেকে বিভিন্ন ধরনের ছোট-বড় গাছ ও উপহার দিতে পারবেন।
আহসান মঞ্জিল ও লালবাগ কেল্লা
পুরান ঢাকায় বুড়িগঙ্গার তীরে অবস্থিত আহসান মঞ্জিল একসময় ঢাকার নবাবদের আবাসিক প্রাসাদ ও জমিদারির কাছারি হিসেবে ব্যবহৃত হলেও বর্তমানে জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। একই নদীর তীরে লালবাগ এলাকায় অবস্থিত মোগল স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন লালবাগ কেল্লা। মূল তিনটি ভবনের সমন্বয়ে (মসজিদ, পরী বিবির সমাধি এবং দেওয়ান-ই-আম বা দরবার হল) স্থাপনাটি গঠিত। আরও আছে কিছু ফোয়ারা এবং সর্বসাধারণের জন্য শায়েস্তা খাঁর বাসভবনে তৈরি করা জাদুঘর। চাইলে প্রিয়জনকে নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন এই ঐতিহাসিক জায়গাগুলোতে।
বইমেলা
বইমেলা জায়গাটা ঠিক ঘোরার জায়গা নয়, তবে ভালোবাসা দিবসে বইমেলায় থাকে তরুণ-তরুণীদের উপচে পড়া ভিড়। মেয়েরা লাল শাড়ি ও চুলের খোপায় ফুলের মালা পরে, তার সঙ্গে মিলিয়ে ছেলেরা পাঞ্জাবি পরে বইমেলায় ভিড় জমান। আপনার ভালো লাগার মানুষটিকে নিয়ে গিয়ে বই দেখতে বা কিনতে যেতেই পারেন।
মিরপুর বেড়িবাঁধ
মিরপুর বেড়িবাঁধে এলে হারিয়ে যেতে পারেন ট্রাফিক জ্যাম মুক্ত হাইওয়েতে। দেখতে পাবেন দুই পাশে গাছের সারি, দিগন্ত বিস্তৃত খোলা প্রান্তর, দূরে সবুজ গ্রাম আর রুপালি পানির নদী। এখানে রয়েছে বিভিন্ন ভাসমান রেস্তোরাঁ এবং বিনোদন পার্ক। সেখানেও সময় কাটাতে পারেন। রয়েছে অনেক পুরোনো কিছু বটগাছ। তবে আলো থাকতে থাকতে এখান থেকে চলে যাওয়াটা ভালো হবে।
মায়াদ্বীপ
নারায়ণঞ্জের বারদী ইউনিয়নের মায়াদ্বীপ হতে পারে সঙ্গীকে নিয়ে ঘুরে আসার ভালো জায়গা। দুজনে সুন্দর মুহূর্ত কাটাতে পারবেন। মেঘনা নদীর বুকে ভেসে ওঠা সুন্দর এক চরের নাম মায়াদ্বীপ। তবে মূল ভূখণ্ড থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন। রাজধানী ঢাকার গুলিস্তান থেকে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কয়েক মিনিট পরপর বিভিন্ন বাস ছেড়ে যায়। ভাড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকা। বাসে গিয়ে সোজা নামতে হবে মোগরাপাড়ায়। তারপর সেখান থেকে ইজি বাইকে বৈদ্যের বাজার নেমে নৌকা ভাড়া করে যেতে হবে। সময় লাগবে ৪০ মিনিটের মতো।
নরসিংদী জমিদার বাড়ি
জমিদার বাড়ি ঘুরতে যাওয়া কিন্তু দারুণ অভিজ্ঞতা। নরসিংদীর জমিদার বাড়িটি বেশ সুন্দর। তাকালেই দৃষ্টি জুড়িয়ে যায়। শতবছরের ভবন ও ঐতিহ্যপ্রেমী এবং ভ্রমণপিপাসুদের মুগ্ধ করে বাড়িটি। উকিলবাড়ি বা লক্ষণ সাহার বাড়ি নামেই পরিচিত বাড়িটি। নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ডাংগা বাজার থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত লক্ষণ সাহার জমিদারবাড়ি। এর সামনে বিশাল পুকুর, শান বাঁধানো পুকুরঘাট, কারুকার্যখচিত মন্দির। ঢাকার গুলিস্তান সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্সের সামনে নরসিংদীগামী মেঘালয় বাস কাউন্টার আছে। মেঘালয় বাসে করে পাঁচদোনা মোড় নামবেন, ভাড়া নেবে ১২০ টাকা। পাঁচদোনা মোড় থেকে ডাংগা বাজারের অটোরিকশায় উঠবেন, ভাড়া ২০ টাকা। তারপর ডাংগা বাজার থেকে হেঁটে বা ৩০ টাকা রিকশা ভাড়ায় জমিদার লক্ষণ সাহার বাড়িতে যাওয়া যায়।
সোনার গাঁ
বাংলার এক প্রাচীন রাজধানী সোনার গাঁ, যেখানে প্রিয়জনকে নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন। সেখানে উপভোগ করার মতো আছে অনেক কিছুই। জাদুঘরের ভেতরে রয়েছে প্রধান ফটকে দুজন অশ্বারোহী, গরুর গাড়ির ভাস্কর্য, লাইব্রেরি ও ডকুমেন্টেশন সেন্টার, সদ্য নির্মিত জয়নুলের আবক্ষ ভাস্কর্য, ক্যান্টিন, লোকজ রেস্তোরাঁ, সেমিনার হল, ডাকবাংলো, কারুশিল্প গ্রাম, কারুপল্লি, জামদানি ঘর, কারু-মঞ্চ, কারু-ব্রিজ, মৃৎশিল্পের বিক্রয়কেন্দ্র। এ ছাড়া গ্রামীণ উদ্যান, আঁকাবাঁকা দৃষ্টিনন্দন লেক, বড়শিতে মাছ শিকার. নৌকায় ভ্রমণ ও বনজ, ফলদ, ঔষধিসহ শোভাবর্ধন প্রজাতির বাহারি বৃক্ষরাজি দিতে পারে অসাধারণ একটি সময়।
ছুটি রিসোর্ট
ঢাকা থেকে মাত্র ১৮ কিমি দূরে গাজীপুরে ছুটি রিসোর্ট অবস্থিত। ৫৪ বিঘা জমির ওপর তৈরি হয়েছে রিসোর্টটি। বিমানবন্দর থেকে এক ঘণ্টার কম সময়ে এখানে যেতে পারবেন। রিসোর্টে ঢুকেই নানা রকম গাছগাছালি ও বন্য প্রাণীর বিচরণ দেখা যায়। এখানে পরিবার বা বন্ধুবান্ধব নিয়ে থাকার জন্য ৫০টির বেশি রুম আছে। বিশেষ করে উডেন কটেজ, ভাওয়াল কটেজ, ফ্যামিলি কটেজ নামের কটেজগুলো বেশ জনপ্রিয়।
পানাম নগর, নারায়ণগঞ্জ
যদি ঐতিহ্যের কাছাকাছি একটা দিন কাটাতে চান তবে নির্দ্বিধায় ঘুরে আসতে পারেন হারানো নগরীখ্যাত পানাম নগর বা পানাম সিটি থেকে। মূল সড়কের দুপাশ জুড়ে বেড়ে ওঠা প্রাচীন নগরীর মায়াজাল আপনাকে মুগ্ধ করে রাখবে। বার ভূঁইয়া প্রধান ঈসা খাঁ কর্তৃক নির্মিত এই পানাম নগরীতে হেঁটে বেড়ালে হয়তো আপনি নিজেকে ১৫ শতকে খুঁজে পেতে পারেন। ঢাকার গুলিস্তান থেকে দোয়েল, স্বদেশ কিংবা বোরাকের বাসে করে মোগড়াপাড়া চৌরাস্তায় নেমে ব্যাটারিচালিত রিকশায় কিংবা প্যাডেলচালিত রিকশায় করে পানাম নগরীতে যেতে পারবেন।
সাদুল্লাহপুর গোলাপ বাগান, ঢাকা
সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের সাদুল্লাপুর গ্রামটি বর্তমানে গোলাপ গ্রাম নামে পরিচিত। এখানে বছরজুড়েই গোলাপের ঘ্রাণে ভরে থাকে সারা গ্রাম। বিস্তীর্ণ গোলাপের বাগান ছাড়াও এখানে রজনীগন্ধা, জারভারা ও গ্লাডিওলাসের বাগান রয়েছে। ঢাকার সিংহভাগ গোলাপের চাহিদা এই গ্রামের উৎপাদন থেকেই মেটানো হয়। প্রিয়জনকে নিয়ে বেড়িয়ে আসতে পারেন গোলাপের এই রাজ্য থেকে। বিভিন্ন রুট দিয়ে গোলাপ গ্রাম যাওয়া যায়। এর মধ্যে ঢাকার মিরপুর বা উত্তরা দিয়ে যাওয়াটা সুবিধাজনক। উত্তরার হাউজ বিল্ডিং এলাকায় নর্থ টাওয়ারের কাছ থেকে লেগুনায় করে দিয়াবাড়ি আসতে হবে। সেখান থেকে মেইন রোডে এগিয়ে লোকাল গাড়িতে বিরুলিয়া ব্রিজ পর্যন্ত গিয়ে আরেকটি অটো ভাড়া করে চলে আসুন সাদুল্লাহপুর গোলাপ গ্রামে।
বাহ্রা ঘাট
মিনি কক্সবাজারের মতো ঢাকার আশপাশেই আছে মিনি পতেঙ্গা। ঢাকার কাছে তেমনই একটি মনোমুগ্ধকর স্থান হলো বাহ্রা ঘাট। দোহার উপজেলায় অবস্থিত এই ঘাট বর্তমানে মিনি পতেঙ্গা নামে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ঢাকার কাছাকাছি হওয়ায় রাজধানীবাসী ডে লং ট্রিপের জন্য বেছে নেন দৃষ্টিনন্দন এই স্থান। নদীভাঙন ঠেকাতে পদ্মা নদীর পাড়ের দীর্ঘ এলাকাজুড়ে বসানো হয়েছে ব্লক। এই ব্লকের ওপর দিয়েই ঘুরে বেড়ান দর্শনার্থীরা। মৈনট ঘাটের মতোই মিনি পতেঙ্গার পাড় থেকে পদ্মা নদীতে নৌকায় চড়ে ঘুরে বেড়ানো যায় পাড় ধরে। ঢাকার গুলিস্তান থেকে প্রায় ৩৮ কিলোমিটার দূরে এটি অবস্থিত। ঢাকার গুলিস্তান থেকে বাসে সেখানে যেতে সময় লাগে মাত্র দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। গোলাপশাহ মাজার থেকে দোহারের মৈনট ঘাটে সরাসরি বাসে যেতে জনপ্রতি ভাড়া ১১০ টাকা।
কলি