
বগুড়ায় পুন্ড্রনগর মহাস্থানগড়ে প্রত্নতাত্ত্বিক খননে পাওয়া গেছে যিশুখ্রিষ্টের জন্মেরও বহু বছর আগে তৈরি নর্দান ব্লাক পলিশড ওয়ার (এনবিপিডব্লিউ) বা উত্তরাঞ্চলীয় চকচকে মৃৎ পাত্রের অনেক টুকরা। এনবিপিডব্লিউ ব্যবহার শুরু হয় যিশুখ্রিষ্টের জন্মের প্রায় ৪শ বছর আগে। আর ব্যবহার হয়েছে তার জন্মের পর প্রায় ৩শ বছর পর্যন্ত।
বাংলাদেশ ও ফ্রান্স দল যৌথভাবে খননে আরও পেয়েছে প্রাচীন ইটের তৈরি অবকাঠামো, কাঁচের পুঁতি, পোড়ামাটির গুটিকা ও শুংগ আমলের নকশা করা পোড়ামাটির ফলকসহ নানা ধরনের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের ১২ সদস্যের দুইটি দল মহাস্থানগড়ের দক্ষিণ বৈরাগী ভিটায় খনন শুরু করেন গত ১৮ জানুয়ারি। ৫ সদস্যের বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক ড. মোছা. নাহিদ সুলতানা ও ৭ সদস্যবিশিষ্ট ফ্রান্স দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ফিল্ড ডিরেক্টর কলিন লেফ্রাংক। খনন শেষ হবে আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি।
ফ্রান্স দলের প্রধান কলিন লেফ্রাংকের ধারণা একই জায়গায় পাওয়া এনবিপিডব্লিউগুলো অন্তত ২ হাজার ৪ বছর আগে তৈরি। তবে সঠিক বয়স নিশ্চিত হতে আরও গবেষণা করতে হবে। কলিন লেফ্রাংক বলেন, ‘এবারের খননে এনবিপিডব্লিউ ছাড়া পাওয়া গেছে, প্রাচীন ইটে তৈরি দেয়াল, পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেন বা নালা, কূপ ও অলংকার তৈরির কাঁচের ও মাটির গুটিকা।’ প্রত্নতাত্ত্বিকদের ধারণা অবকাঠামো নির্মাণে যেসব ইট ব্যবহার করা হয়েছে সেসব ইট পাল আমলের। তবে অবকাঠামোগুলোর অনেকাংশেই ভিন্ন আকৃতির ইটও পাওয়া গেছে যে কারণে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না খননে পাওয়া অবকাঠামোগুলো পাল আমলে তৈরি কি না।
বগুড়ায় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক অফিসে কর্মরত সহকারী পরিচালক ড. আহমেদ আবদুল্লাহ জানান, প্রাচীন এ দুর্গনগরীতে এবারের খননে পাওয়া প্রতিটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনই গুরুত্বপূর্ণ। তবে পরীক্ষা না করে এনবিপিডব্লিউগুলো ঠিক কত বছরের পুরোনো তা বলা মুশকিল। যদিও চকচকে মৃৎ পাত্রের ব্যবহার শুরু হয় যিশুখ্রিষ্টের জন্মের ৩/৪ বছর আগে এবং ব্যবহার হয় তার জন্মের পর অন্তত ৩শ বছর পর্যন্ত।
ড. আহমেদ আবদুল্লাহ বলেন, ‘দেশের সবচেয়ে প্রাচীন এ দুর্গনগরীর সঠিক ইতিহাস জানার জন্য গবেষণা এবং আরও খনন প্রয়োজন।’ তিনি বলেন এ দুর্গনগরীতে প্রথম প্রত্নতাত্ত্বিক খনন হয় ১৯২৮ সালে। তারপর অনেকবারই খনন হয়েছে। এর বিভিন্ন অংশে পাওয়া গেছে ধাতব মুদ্রা ও মূর্তির পাশাপাশি মাটি ও পাথরে তৈরি নানা ধরনের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন।
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্র কাছারি বাড়ির কাস্টোডিয়ান ও বাংলাদেশ দলের সদস্য হাবিবুর রহমান জানান, এবারের খননে পাওয়া নিদর্শনগুলোর মধ্যে শুংগ আমলের পোড়ামাটির ফলক, মাটির গুটিকা, রিং ওয়েল (স্থানীয়ভাবে পাটকুয়া হিসেবে পরিচিত) প্রায় অক্ষত অবস্থায় আছে। হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এবারের খননে পাঞ্চমার্ক প্রাচীন কয়েন বা ছাপাঙ্কিত মুদ্রাও পাওয়া গেছে। পাঞ্চমার্ক কয়েনের ব্যবহার শুরু হয় যিশুখ্রিষ্টের জন্মের ৬ বছর আগে। ব্যবহার হয়েছে তার জন্মের পর ২শ বছর পর্যন্ত।
দক্ষিণ বৈরাগী ভিটায় খননে পাওয়া ইটের অবকাঠামো, দুটি কূপ, পানি নিষ্কাশনের জন্য তৈরি নালাসহ অন্যান্য অবকাঠামোগুলো কোন আমলে তৈরি বা কত বয়স বছর তা এ মুহূর্তে নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না প্রত্নতাত্ত্বিকরা। তবে তারা অনেকটাই নিশ্চিত ইটের দেয়ালের নিচে একখানে পাওয়া এনবিপিডব্লিউগুলো অন্তত ২ হাজার বছরের পুরোনো। ইটের দেয়ালগুলোর বয়সও দেড় হাজার বছর হতে পারে।