ঢাকা ৯ চৈত্র ১৪৩১, রোববার, ২৩ মার্চ ২০২৫
English

দিনাজপুরের ঐতিহ্যবাহী চেরাডাঙ্গী ঘোড়ার মেলা

প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:০৮ এএম
আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:২৯ এএম
দিনাজপুরের ঐতিহ্যবাহী চেরাডাঙ্গী ঘোড়ার মেলা
দিনাজপুর সদরের আউলিয়াপুরে চেরাডাঙ্গী ঘোড়ার মেলায় বিক্রেতারা ঘোড়া বিক্রি করেন। ছবি: খবরের কাগজ

দিনাজপুর সদরের আউলিয়াপুরে ৭৮তম চেরাডাঙ্গী ঘোড়ার মেলা গতকাল শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিক্রেতারা এ বছর এক শর বেশি ঘোড়া নিয়ে আসেন। মেলাতে ঘোড়া রাখার পাশেই অস্থায়ী ভিত্তিতে ঘোড়ার মালিকদের থাকারও ঘর তৈরি করা হয়।

কেউ আবার ঘোড়া রাখার জায়গার পাশেই নিজেদের দুপুরের খাবার রান্না করেন। কেউ পানি নিয়ে আসেন। এক কথায় ঘোড়ার মেলায় এসে যেন বনভোজনের আয়োজনও হয়। 

মেলায় কারও ঘোড়া পছন্দ হলেই পছন্দমতো ঘোড়ায় পিঠে চড়িয়ে ট্রায়াল দেওয়া হয়েছে। এরপরই চলে দাম-দর। এবারের মেলায় ৭ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকায় ঘোড়া কেনাবেচা হয়। 

মেলায় আনা ঘোড়াগুলোকে রাস্তার রাজা, বিজলী রানি, রাস্তার পাগল, কিরণমালা, রানি, সুইটি, রংবাজ, পারলে ঠেকাও, কাজলী, তাজিয়া, কুমার রাজা, বাহাদুর, দাপটিয়া, চাওয়ালিসহ বিভিন্ন নাম ধরে ডাকা হয়। মেলায় ঘোড়ার পাশাপাশি ২-৪টি গাধাও থাকে। ঘোড়ার তুলনায় গাধার দাম অনেক বেশি। একটি গাধার সর্বনিম্ন দাম ৩৫ হাজার টাকা, সর্বোচ্চ ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

এবারের মেলায় সাদা-কালো ঘোড়াটি মেলায় দর্শনার্থীদের নজর কাড়ে। কেউ কেউ ঘোড়া দেখার জন্য আসেন। কেউ কেউ আবার ঘোড়ার সঙ্গে ছবি তোলেন। সাদা-কালো ঘোড়াটি ক্ষিপ্রতা আর বুদ্ধিমত্তার কারণে ‘তাজিয়ানা ঘোড়া’ নামে পরিচিত। এই ঘোড়াটির দাম হাঁকানো হয় ৮০ হাজার টাকা। ক্রেতারা ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা দাম বলেন।

ঘোড়া বিক্রেতা আবু জাফর বলেন, ‘নওগাঁ থেকে ৪টি ঘোড়া নিয়ে এসেছি। ৭ হাজার টাকায় একটি ঘোড়ার বাচ্চা বিক্রি করেছি। আরও দুটি বাচ্চা ঘোড়াসহ তিনটি ঘোড়া রয়েছে। এ বছর ঘোড়ার দাম অনেক কম।’

আজিজুল ইসলাম নামে আরেক বিক্রেতা বলেন, ‘বগুড়া থেকে চারটি ঘোড়া ও একটি গাধা নিয়ে এসেছি। গাধাটি ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছি। আর একটি মাত্র ঘোড়ার বাচ্চা বিক্রি হয়েছে। বাকি ঘোড়া বিক্রি হবে কি না, চিন্তায় আছি।’

মেলায় ঘোড়া কিনতে আসা আহসান হাবিব বলেন, ‘আমার বাড়িতে আরও দুটি ঘোড়া আছে। চেরাডাঙ্গী মেলায় আসা সাদা-লাল ঘোড়াটি খুবই পছন্দ হয়েছে। আমি ৫০ হাজার টাকা দাম বলেছি। কিন্তু বিক্রেতা ৮০ হাজার টাকার কমে বিক্রি করছেন না। দর-দাম ঠিক হলে ঘোড়াটি কেনার ইচ্ছা ছিল।’ 

অপর ক্রেতা রেজাউল করিম রঞ্জু বলেন, ‘বেশ কয়েকটি ঘোড়া দেখেছি। এর মধ্যে দুটি ঘোড়া আমার পছন্দ হয়েছে। ৪৫ হাজার টাকা দাম বলেছি। তারা ৬০ হাজার টাকা বলেছেন।’ 

মেলায় ঘোড়া দেখতে আসা স্কুলছাত্র ফাহিম আজাদ বলে, ‘ঘোড়া আমার খুবই পছন্দের একটি প্রাণী। আমি ঘোড়ায় চড়তেও পারি। এ বছর না হলেও আগামী বছর আমি ঘোড়া কিনব।’

চেরাডাঙ্গী ঘোড়ার মেলার ইজারাদার নজমুল ইসলাম জানান, এ পর্যন্ত বিক্রেতারা মেলায় ১৩০টির বেশি ঘোড়া নিয়ে আসেন। প্রতিটি ঘোড়া নিবন্ধন করা হয়। বিভিন্ন এলাকা থেকে ঘোড়া বিক্রেতারা এই মেলায় প্রতিবছর আসেন।

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিউর রহমান বলেন, ‘পুলিশের পেট্রোল টিম প্রতিদিন মেলায় যাওয়া-আসা করে। বিশেষভাবে পুলিশ চাওয়া হয়নি। তাই সেখানে পুলিশি পাহারা বসানো হয়নি।’

ঐতিহ্যের সাক্ষী গোয়ালবাথান মসজিদ

প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৫, ০৮:৩৮ এএম
আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৫, ০৮:৪৬ এএম
ঐতিহ্যের সাক্ষী গোয়ালবাথান মসজিদ
নড়াইল সদর উপজেলার ৫০০ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী গোয়ালবাথান মসজিদ। ছবি: খবরের কাগজ

নড়াইলের গোয়ালবাথান গ্রামের ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি সবাই দেখেছে, তবে কেউ সঠিকভাবে বলতে পারেনি এটির বয়স কত! কেউ বলছে ৪০০ বছর, কেউ বলছে সাড়ে ৪০০ বছর আবার অনেকের মতে প্রায় ৫০০ বছর। স্থানীয়রা বলছেন এটিই বৃহত্তর যশোরের সবচেয়ে পুরোনো মসজিদ।

জানা গেছে, নড়াইল সদর উপজেলার চণ্ডিবরপুর ইউনিয়নের একটি গ্রামের নাম গোয়ালবাথান। জেলা সদর থেকে সাত কিলোমিটার দূরে গ্রামটির অবস্থান। এখান থেকে এক কিলোমিটার সোজা গিয়ে ধুড়িয়া গ্রামে যাওয়ার পথে রাস্তার বামপাশে নীল রঙের ছোট একটি মসজিদ চোখে পড়ে। এটিই গোয়ালবাথান মসজিদ।

মসজিদটি বৃহত্তর যশোরের সবচেয়ে পুরোনো মসজিদ। ৫ একর ৭০ শতক জায়গার ওপর নির্মিত মসজিদটি দৈর্ঘ্যে ৫০ ফুট এবং প্রস্থে ৩৫ ফুট। ছোট ছোট ইট আর চুন-সুরকির গাঁথুনিতে এক গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ। ওপরে চারটি ছোট মিনার রয়েছে। আছে বজ্রপাত নিরোধক লোহার দণ্ড। তবে নেই কোনো পিলার। কোনো রডের ব্যবহার ছাড়াই মসজিদের গম্বুজটি অপূর্ব স্থাপত্য নির্মাণশৈলী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে।

স্থানীয়রা জানান, প্রায় ৫০০ বছর আগে এই গ্রামে এসে বসবাস শুরু করেন মুন্সী হবৎউল্লাহ নামে এক ব্যক্তি। এর কিছুদিন পর তিনি ওই জায়গায় এ মসজিদটি নির্মাণ এবং এর সংলগ্ন একটি পুকুর খনন করেন। সেই থেকে এ গ্রামে আস্তে আস্তে জনবসতি শুরু হয় এবং আশপাশের মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষরা মসজিদটিতে নিয়মিত নামাজ আদায় শুরু করেন। 

এলাকাবাসী জানান, এখানে কোনো বসতি ছিল না। গাছপালায় ভরা ছিল এলাকাটি। মুন্সী হবৎউল্লাহই এ গ্রামের প্রথম বাসিন্দা। তিনি এখানে আসার পর এ মসজিদটি স্থাপন করেন এবং একটি পুকুর খনন করেন। মসজিদটি তৈরির সঠিক সময় বলতে পারেন না তারা। তবে ধারণা করা হয়, প্রায় সাড়ে ৪০০ বছর থেকে ৫০০ বছরের আগের হবে। 

ঢাকা থেকে মসজিদ দেখতে আসা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি গোয়ালবাথান মসজিদে এসে নামাজ পড়েছি। ৫০০ বছরের পুরোনো মসজিদটি দেখে খুব ভালো লাগছে। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের উদ্যোগে মসজিদটির সংরক্ষণ করা হলে আরও ভালো হতো।’
স্থানীয় মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে আমার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। যখনই এখানে আসি এ মসজিদে নামাজ আদায় করি। প্রায় ৫০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী মসজিদে নামাজ পড়তে পেরে আমি আনন্দিত।’

মসজিদের নিয়মিত মুসল্লি মো. সুলতান কাজী বলেন, ‘আমরা নিয়মিত এখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করি। মসজিদটি চুন-সুরকি দিয়ে তৈরি। এ কারণে শীতের সময় এর ভেতরে গরম অনুভূত হয় আর গরমের সময় শীত অনুভূত হয়।’ 
মুন্সী হবৎউল্লাহের বংশধর মুন্সী তফসির উদ্দিন বলেন, ‘মসজিদটির যেমন উন্নয়ন হওয়ার কথা ছিল, সেটা হয়নি। আমরা জেলা পরিষদসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে অর্থ এনে এটি সংস্কার করেছি। এখানে ভালো শৌচাগার কিংবা পানির ব্যবস্থা নেই। এসব সমস্যা সমাধানে জোর দাবি জানাচ্ছি।’ 

গোয়ালবাথান জামে মসজিদের ইমাম মুন্সী রহমতউল্লাহ বলেন, আমার পূর্বপুরুষের গড়া এই মসজিদ। এখানে একসময় শুক্রবারে বিরাট আয়োজনে জুমার নামাজ আদায় হতো। দূর-দূরান্ত থেকে দুই থেকে তিন দিন আগেই মানুষ হেঁটে নামাজ আদায় করতে আসতেন। এ উপলক্ষে খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন হতো। এখানে ইমামতি করতে পেরে আমার খুব ভালো লাগছে।’

গোয়ালবাথান জামে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক এইচ এম তৈয়েবুর রহমার বলেন, ‘এটি ঐতিহ্যবাহী মসজিদ। তবে এখানে তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। দেশের পুরোনো স্থাপনাগুলো প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে সংরক্ষণ করা হয়। কিন্তু মসজিদটি নিয়ে তাদের কোনো কার্যক্রম আমরা দেখছি না। অবিলম্বে এটি সংরক্ষণ করার দাবি জানাই।’

ধনী-গরিব নির্বিশেষে একসঙ্গে শাহজালাল (রহ.) মাজারে ইফতার

প্রকাশ: ০৯ মার্চ ২০২৫, ০১:১৬ পিএম
ধনী-গরিব নির্বিশেষে একসঙ্গে শাহজালাল (রহ.) মাজারে ইফতার
হজরত শাহজালালের (রহ.) মাজারে ইফতার করছেন অসংখ্য মানুষ। ছবি: খবরের কাগজ

সিলেটের হজরত শাহজালাল (রহ.) মাজারে মুসাফিরদের সাহরি ও ইফতার করানোর ঐতিহ্য প্রায় ৭০০ বছর আগের। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। প্রথম রমজান থেকে শাহজালাল (রহ.) মাজারে মুসাফিররা আসছেন সাহরি ও ইফতার করতে। সাহরিতে খাওয়ানো হয় ভাত-তরকারি অথবা খিচুড়ি। ইফতারের প্রধান খাবার থাকে আখনি-পোলাও, বুটের পোলাও অথবা খিচুড়ি। সঙ্গে দেওয়া হয় খেজুর, জিলাপি, পেঁয়াজু শরবতসহ বিভিন্ন খাবার।

সারা বছরই সিলেটের হজরত শাহজালাল (রহ.) মাজারে থাকে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের ভিড়। রমজান মাসেও এর ব্যতিক্রম হয় না। দেশের নানা প্রান্ত থেকে এই মাজারে মানুষজন আসেন। তাই রমজান মাসে মাজারের ভক্ত-আশেকানদের জন্য রাখা হয় ইফতার আর সাহরির ব্যবস্থা। রমজানে আসরের নামাজের পরই মাজারের আঙিনায় জড়ো হতে থাকেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। ইফতারের আগমুহূর্তে মাজারে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরাও বসে পড়েন মাজারের আঙিনায়। সাইরেন বাজার সঙ্গে সঙ্গে সবাই ইফতার শুরু করেন।

গত শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,  ইফতার করছেন পাঁচ শতাধিক মানুষ। ইফতার শুরুর আধা ঘণ্টা আগে মাজারের আঙিনায় সারি হয়ে বসে পড়েন মানুষজন। এরপর একদল স্বেচ্ছাসেবক এসে প্লেট ও গ্লাস বিতরণ করেন। আরেক দল স্বেচ্ছাসেবক এসে খাবার পরিবেশন করেন। ইফতারের আগে দোয়া পড়া হয়। দোয়া শেষে ইফতারের সময় হলে সাইরেন বাজানো হয়। এরপর ধনী-গরিবনির্বিশেষে সবাই একসঙ্গে ইফতার করা শুরু করেন।

হজরত শাহজালাল (রহ.) মাজারের এই আয়োজনে সবচেয়ে বেশি খুশি হন স্থানীয় নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ। কারণ স্বল্প আয় করা রিকশাচালক, সবজি বিক্রেতা, ফেরিওয়ালারা চাইলেও ইফতারে ভালো খাবার খেতে পারেন না। কিন্তু মাজারে তারা বিনামূল্যে ভালো মানের ইফতারি খেতে পারেন। তবে স্থানীয়রা ছাড়াও মাজারের ইফতারির স্বাদ গ্রহণ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত মানুষজন ছুটে আসেন সিলেটে। 

শুক্রবার ইফতার করতে আসা রিকশাচালক সুমন মিয়া বলেন, ‘আমি দরগার আশপাশেই রিকশা চালাই। পাঁচ বছর হয় প্রতি রোজায় আমি ইফতার করি এখানে। আমার মতো অনেক রিকশাচালক এখানে আসেন ইফতার করতে। কারণ আখনি-পোলাও কিনে খাওয়ার মতো সামর্থ্য আমাদের নাই।’ 

সিলেটের পার্শ্ববর্তী জেলা হবিগঞ্জ থেকে হজরত শাহজালাল (রহ.) মাজারে আসেন সুহেল মিয়া। তিনি বলেন, ‘অনেক দিন ধরে মাজার জিয়ারত করব বলে ভাবছি। কিন্তু ব্যবসায়িক ব্যস্ততার জন্য আসতে পারছিলাম না। তাই আজ এলাম। আমার এক বন্ধু বলেছিল তার বাসায় ইফতার করতে। কিন্তু আমি তাকে না করে দিয়েছি মাজারে ইফতার করব বলে। কারণ সবার সঙ্গে এভাবে মাজারে বসে ইফতার করার সুযোগ হয়তো আর না-ও পেতে পারি।’ 

ইফতার করতে আসা সিলেট নগরীর শিবগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা নূরজাহান বেগম বলেন, ‘আমি প্রায় ৩০ বছর ধরে শাহজালাল মাজারে ইফতার করি। প্রতিবছর রোজার সময় মাজারে এক দিন হলেও ইফতার করি। এতে আমার মনে অন্য রকম শান্তি পাই। এখন বয়স হয়েছে, শরীরেও অনেক রোগ বাসা বেঁধেছে। তাই একা আসা অনেক কষ্টকর হয়ে যায়। হাঁটুর ব্যথায় হাঁটতে ও বসতে পারি না। বাসার সবাই বলছিল এতদূর না আসতে। কিন্তু আমার আগ্রহ দেখে নাতি এখানে নিয়ে এসেছে।’

শাহজালালের (রহ.) মাজার সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ মাজারে সাহরি ও ইফতার করেন। তবে ইফতারের সময় বেশি মানুষ থাকেন। সাহরির সময় মানুষ তুলনামূলক কম থাকেন। প্রতিদিন প্রায় ২৫০ জন ইফতার করেন মাজারে। তবে শুক্রবার বেশি মানুষ ইফতার করেন। এর বাইরেও প্রতিদিন প্রায় ১৫০ প্যাকেট ইফতারি বিতরণ করা হয়।  মাজারের আঙিনায় নারী-পুরুষ আলাদা সারিতে বসে ইফতার করেন। রান্না ও খাবার পরিবেশনের জন্য প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন মাজারে।   

হজরত শাহজালালের (রহ.) মাজারের খাদেম সামুন মাহমুদ খান বলেন, ‘মাজারের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য রমজানে মাসে মুসাফিরদের ইফতার করানো। প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৫০০ মানুষ মাজারে ইফতার করেন। রোজার প্রথম দিকে মানুষজন একটু কম আসেন। তবে এরপর থেকে মুসাফিরদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। আমরা আমাদের সাধ্য অনুযায়ী খাবারের ব্যবস্থা করি। ইফতারে থাকে আখনি-পোলাও, খেজুর, জিলাপি, পেঁয়াজু, শরবত। সাহরিতে পোলাও বা সাদা ভাতের সঙ্গে কখনো আলু দিয়ে গরুর মাংস অথবা আলু দিয়ে খাসির তরকারি। এর সঙ্গে মানুষজন মাজারে যেসব খাবার দেন সেসবও পরিবেশন করি।’

দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা হার্ডিঞ্জ ব্রিজ

প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০২৫, ১২:০২ পিএম
দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা হার্ডিঞ্জ ব্রিজ
ঈশ্বরদীর পাকশীতে পদ্মা নদীর ওপর শোভা পাচ্ছে রেলসেতু হার্ডিঞ্জ ব্রিজ। ছবি: খবরের কাগজ

রেলসেতু হার্ডিঞ্জ ব্রিজের বয়স ১১০ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ ৪ মার্চ। বিট্রিশ শাসন আমলে রেলপথ নির্মাণের সময় উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ স্থাপনে পাবনার ঈশ্বরদীর পাকশী পদ্মা নদীর ওপর নির্মাণ করা হয় এ ব্রিজ। ১৯১৫ সালের এই দিনে রেল চলাচলের জন্য ব্রিজটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রেলসেতু। 

পাকশী রেলওয়ে বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯১৫ সালের ৪ মার্চ ভারতের তৎকালীন গভর্নর জেনারেল লর্ড হার্ডিঞ্জ ব্রিজটির নির্মাণ শেষে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এরপর ব্রিজের ওপর দিয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। পরে তার নামানুসারে এর নামকরণ করা হয় ‘হার্ডিঞ্জ ব্রিজ।’ এই ব্রিজের নির্মাণশৈলী দৃষ্টিনন্দন অপূর্ব। ১৫টি গার্ডার সংবলিত ব্রিজটি শত বছর আগের প্রকৌশলীদের দক্ষতার স্বাক্ষর বহন করে।

পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে সেতু প্রকৌশল কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯০৯ সালের শুরুতে প্রাথমিক জরিপ, জমি অধিগ্রহণ ও প্রয়োজনীয় পাথর সংগ্রহের কাজ শুরুর মধ্য দিয়ে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নির্মাণকাজ শুরু হয়। এ কাজ শেষ হয়েছিল ১৯১৪ সালের ডিসেম্বরে। ব্রিজটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর পরীক্ষামূলকভাবে ১৯১৫ সালের ১ জানুয়ারি ব্রিজের ওপর দিয়ে মালবাহী ট্রেন চালানো হয়। একই বছরের ৪ মার্চ যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের জন্য ব্রিজটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। ব্রিজটির ওপর দুটি ব্রডগেজ রেললাইন রয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়ার দীর্ঘতম এই রেলসেতুটিতে রয়েছে ১৫টি স্প্যান। স্প্যানগুলোর উচ্চতা ৫২ ফুট। প্রতিটি স্প্যানের ওজন ১২৫০ টন। প্রধান ১৫টি স্প্যান ছাড়াও সেতুর উভয় পাশে রয়েছে ৩টি করে অতিরিক্ত ৬টি ল্যান্ডস্প্যান। ল্যান্ডস্প্যানগুলোর প্রতিটির বিয়ারিংয়ের দৈর্ঘ্য ৭৫ ফুট। নির্মাণশৈলী ও নান্দনিক দৃশ্যপটে চোখজুড়ানো হার্ডিঞ্জ সেতুটি সেই সময়ের বর্ষা মৌসুমের হিসাব অনুযায়ী সর্বোচ্চ পানির লেভেল থেকে ৪০ ফুট এবং গ্রীষ্মে সর্বনিম্ন পানি প্রবাহ থেকে ৭১ ফুট উচ্চতায় নির্মিত হয়। পানির উচ্চতা হিসাব করে সেতুটি নির্মাণ করা হয় এ কারণে যে, সেতুর নিচ দিয়ে স্টিমারসহ বড় বড় নৌকা যাতে নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে।

শৈল্পিক কারুকাজের দৃষ্টিনন্দন হার্ডিঞ্জ ব্রিজ। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ঈশ্বরদী উপজেলার একটি ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা। এই ব্রিজ শুধু ঈশ্বরদী, পাবনা নয়, বাংলাদেশের অহঙ্কারের প্রতীক। ঈশ্বরদী উপজেলা শহর হতে প্রায় ৮ কিলোমিটার দক্ষিণে পাকশী ইউনিয়নে পদ্মা নদীর ওপর ব্রিজটির অবস্থান। ব্রিজটির পাশে যানবাহন চলাচলে লালন সেতু নির্মাণ করায় হার্ডিঞ্জ ব্রিজের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এই সৌন্দর্যের আরও বিস্তৃতি ঘটেছে ব্রিজটির পাশ ঘেঁষে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করার জন্য। এই ত্রি-মাত্রিক সৌন্দর্য মিশ্রণের অপরূপ দৃশ্য দেখার জন্য এ এলাকায় প্রতিদিন প্রচুর মানুষের সমাগম ঘটছে। এ কারণে দাবি উঠেছে বিস্তীর্ণ এলাকা ঘিরে পরিকল্পিতভাবে মনোরম পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আজ থেকে ১৩৪ বছর আগে ১৮৮৯ সালে ব্রিটিশ সরকার তৎকালীন অবিভক্ত ভারত সরকার আসাম, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড ও উত্তরবঙ্গের সঙ্গে কলকাতার যোগাযোগ সহজতর করার লক্ষ্যে পদ্মা নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণের প্রস্তাব করেন। ১৯০৮ সালে ব্রিজ নির্মাণের অনুমতি পাওয়ার পর বৃটিশ প্রকৌশলী স্যার রবার্ট গেইলস হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নির্মাণের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরে তার নামানুসারে এর নামকরণ করা হয় ‘হার্ডিঞ্জ ব্রিজ।’

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে উত্তর-দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে পাকহানাদার বাহিনী রেল যোগাযোগ বন্ধ করতে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর একটি বিমান থেকে বোমা নিক্ষেপ করা হয়। বোমার আঘাতে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ১২ নম্বর গাডার স্প্যানটি ভেঙে নিচে পড়ে যায়। দিনটি ছিল ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর। এতে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরের বছর ১৯৭২ সালে একই নকশায় তৈরি করে গাডার স্প্যানটি পুনঃস্থাপন করা হয়। 

রেলওয়ে পাকশী বিভাগীয় কার্যালয়ের প্রকৌশলী-২ বীরবল মন্ডল বলেন, দেশের ঐতিহ্যবাহী হার্ডিঞ্জ ব্রিজটি ১১০ বছরেও এখনো পূর্ণ যৌবনা। তখন থেকেই বলা হয়েছে ১২০ বছর পর্যন্ত ব্রিজের ওপর দিয়ে ট্রেন চলাচলে সমস্যা হবে না।

তিনি বলেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ ব্রিজটি পর্যবেক্ষণ, রক্ষণাবেক্ষণ কাজ নিয়মিত হয়ে থাকে।



অরক্ষিত রোয়াইলবাড়ি দুর্গ, হতাশ পর্যটকরা

প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২৫, ১০:০৫ এএম
অরক্ষিত রোয়াইলবাড়ি দুর্গ, হতাশ পর্যটকরা
নেত্রকোনার রোয়াইলবাড়ি দুর্গ। ছবি : বাসস

বাংলার প্রাচীন শাসনকর্তাদের নির্মিত ঐতিহাসিক রোয়াইলবাড়ি দুর্গে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। ঠিক কখন বা কার আমলে এ দুর্গটি নির্মিত হয়েছিল, এ সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য প্রমাণ মিলেনি আজও। তবে ইতিহাসবিদদের ধারণা, দুর্গটি মোগল আমল অথবা সুলতানি আমলের কোনো সেনানায়ক নির্মাণ করে থাকতে পারেন। দৃষ্টিনন্দন এ স্থাপত্যটিকে কেন্দ্র করে এলাকায় প্রচলিত রয়েছে নানা জনশ্রুতি। প্রাচীন ইতিহাস জানতে নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি আমতলা ইউনিয়নের রোয়াইলবাড়ি এলাকায় অবস্থিত এ দুর্গটিতে প্রতিদিনই ছুটে আসছেন পর্যটকরা। কিন্তু এখানে এসে হতাশ হয়ে ফিরতে হয় তাদের। দুর্গটি বর্তমানে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে।

সরকারিভাবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মাধ্যমে ঐতিহাসিক এসব নিদর্শন সংরক্ষণের জন্য মাঝে মধ্যে খননকাজ শুরু হলেও মাঝ পথে আবার থেমে যায়। ফলে অযত্ন, অবহেলায় ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ঐতিহাসিক এ নিদর্শনটি আজ হুমকির মুখে পড়েছে। এলাকাবাসী ও পর্যটকদের দাবি, সরকার নজর দিলে ঐতিহাসিক দুর্গটি হতে পারে একটি চমৎকার পর্যটন কেন্দ্র। কারণ পর্যটনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে এখানে। কিন্তু এ এলাকাটি একটি পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে ওঠার প্রচুর সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও সঠিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে তা হয়ে উঠছে না। এতে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে মোটা অঙ্কের রাজস্ব আয় থেকেও।

কেন্দুয়া উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে অবস্থিত ঐতিহাসিক রোয়াইবাড়ি দুর্গ। কালের আবর্তে এ দুর্গটি হারিয়ে যায় মাটির নিচে। এরপর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ১৯৮৭ সালে সরকারিভাবে ঐতিহাসিক নিদর্শন রক্ষায় প্রায় ৪৬ একর ভূমি পুরাকীর্তি এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সে সময় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর শুধু একটি সাইন বোর্ড টানিয়ে দিয়ে এলাকাটিকে একটি সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করলেও নির্মাণ করা হয়নি কোনো বাউন্ডারি কিংবা কাঁটা তারের বেড়া।

একপর্যায়ে ১৯৯১ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত দুর্গটিতে খননকাজ চালায় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। খননকাজ পরিচালনা করে দুর্গটির সন্ধান পাওয়া যায়। সে সময় মাটির ঢিবি খনন করে সন্ধান পাওয়া যায় কারুকার্যসংবলিত ইট দিয়ে গড়া একটি বারো দুয়ারি মসজিদ এবং এর আশপাশে প্রাসাদের চিহ্ন, একটি সুড়ঙ্গ পথ। সুড়ঙ্গের পাশেই একটি বটগাছের নিচে কথিত নিয়ামত বিবির মাজার এবং প্রায় ১২ হাত লম্বা ডেংগু মালের কবরস্থান। খননকাজ সমাপ্ত করার পর থেকেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে পাথরের ও কাঁচের বিভিন্ন পিলার।

এদিকে সর্বশেষ ২০১৭ সালে নেত্রকোনার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর নতুন করে খননকাজ শুরু করে আরও বেশ কিছু ঐতিহাসিক নিদর্শন বারো দুয়ারি মসজিদের দক্ষিণ দিকে খুঁজে পায়। খুঁজে পায় দুর্গের ফটকের সন্ধান। খনন করে সংরক্ষিত বিভিন্ন কারুকার্যসংবলিত ইটপাথরের অস্থায়ী প্রদর্শনী উপস্থাপন করা হয় সেখানে। এ প্রদর্শনী ও খননকাজ দেখতে পরিদর্শনে যান প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তৎকালীন মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) আলতাব হোসেন। তিনি পরিদর্শনকালে স্থানীয় এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে এলাকাটিকে পর্যটন এলাকা হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার আশ্বাস দিলেও খননকাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কয়েক বছরেও তার কোনো অগ্রগতি হয়নি। এদিকে ঐতিহাসিক রোয়াইলবাড়ি দুর্গ এলাকা দেখতে প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে পর্যটকরা এখানে আসছেন। কিন্তু সম্ভাবনাময় এ পর্যটন এলাকাটিতে জেলা পরিষদের উদ্যোগে পাকা করে দুটি ছাতা আকৃতির বিশ্রামাগার নির্মাণ করলেও এর আধুনিকায়নে আর কিছুই করা হয়নি। ফলে পর্যটকদের পড়তে হয় বিড়ম্বনায়।

কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলা থেকে রোয়াইলবাড়ি দুর্গ পরিদর্শনে আসা নূর সালাম নামে এক তরুণ জানান, এলাকাটি খুবই সুন্দর। দুর্গের স্থাপনাগুলোও বেশ দৃষ্টিনন্দন। জায়গাটি দেখে খুবই ভালো লেগেছে। কিন্তু এখানে নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা নেই। নেই কোনো রেস্টুরেন্ট বা বিশ্রামাগারও। দুর্গটির উন্নয়নকাজ করা হলে এবং পর্যটকদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হলে এখানে দর্শনার্থীদের যাতায়াত আরও বৃদ্ধি পাবে। এ নিয়ে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমদাদুল হক তালুকদারের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘দুর্গটির সৌন্দর্য ও পর্যটকদের সুবিধা বৃদ্ধিসহ পুরো দুর্গ এলাকার উন্নয়নে একটি পরিকল্পনা ইতোমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করি, সে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে এটি জেলার একটি অন্যতম পর্যটক এলাকা হিসেবে গড়ে উঠবে। 
এ বিষয়ে নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস জানান, যদি অধিদপ্তর-মন্ত্রণালয় থেকে খননকাজের জন্য আবারও প্রয়োজনীয় বরাদ্দ পাওয়া যায়, তবে রোয়াইলবাড়ি দুর্গসহ জেলার অন্যা দর্শনীয় স্থানগুলোকে আরও আকর্ষণীয় করে গড়ে তুলতে কাজ করবে জেলা প্রশাসন। এরই মধ্যে এ বিষয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে।

রোয়াইলবাড়ি দুর্গের ইতিহাস সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ‘রোয়াইলবাড়ি’ শব্দটি আরবি ও বাংলা শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। ‘রোয়াইল’ শব্দটি এসেছে আরবি ‘রেইল’ বা ‘রালাহ’ শব্দ থেকে; যার বাংলা অর্থ ‘অশ্বারোহী সৈন্যদল’। আর বাংলায় ‘বাড়ি’ শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘ঘর’ বা ‘বসবাসের জায়গা’। তাই বাংলায় ‘রোয়াইলবাড়ি’ শব্দের পূর্ণ অর্থ দাঁড়ায়- ‘অশ্বারোহী সৈন্যদলের বাড়ি’। এলাকার লোকজন এ পুরাকীর্তিটিকে ‘ঈশা খাঁর দুর্গ’ হিসেবে জানেন। স্থানীয় ঐতিহাসিকের মতে, ১৪৯৮ খ্রিস্টাব্দে সুলতান আলাউদ্দিন হুসেন শাহ্ কামরূপের রাজা নিলাম্বরের বিরুদ্ধে প্রচুর যুদ্ধ পরিচালনা করে কামরূপ রাজ্য অধিকার করেন। পরে তার ছেলে নছরৎ শাহ্ কামরূপ রাজ্যশাসন করেন। এর কিছুদিন পর তিনি প্রতিপক্ষের আক্রমণের মুখে বিতাড়িত হন এবং কামরূপ থেকে পালিয়ে এসে রোয়াইলবাড়িতে আশ্রয় নেন। তখন তিনি এ অঞ্চলটির নামকরণ করেন ‘নছরৎ ও জিয়াল’ (কারও কারও মতে ‘নছরৎ আজিয়াল’)। পরবর্তী সময়ে তার শাসনান্তর্গত পুরো প্রদেশটিই ‘নছরৎশাহি পরগনা’ নামে পরিচিত হয় এবং আকবর শাহর সময় পর্যন্তও পরগনাটি ওই নামেই পরিচিত ছিল। এরপর মসনদে আলি ঈশা খাঁ এ অঞ্চলে বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে কিশোরগঞ্জের জঙ্গলবাড়ি ও নেত্রকোনার রোয়াইলবাড়ি দুর্গের নিয়ন্ত্রণ নেন।

রোয়াইলবাড়ি থেকে জঙ্গলবাড়ি পর্যন্ত যাতায়াতের জন্য একটি রাস্তাও ছিল জানিয়ে স্থানীয়রা বলেন, সে রাস্তাটি বর্তমানে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। তবে এ স্থাপনাটি ঠিক কার সময়ে নির্মাণ করা হয়েছিল সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত নয় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। এদিকে ঈশা খাঁর মৃত্যুর পর তার পারিষদ দেওয়ান মজলিশ জালাল এখানকার আধিপত্য গ্রহণ করেন। তিনি রোয়াইলবাড়ি দুর্গের ব্যাপক সংস্কার এবং দুর্গের বাইরে একটি সুরম্য মসজিদ নির্মাণ করেন। এটি ‘মসজিদ-এ জালাল’ বা ‘জালাল মসজিদ’ নামে পরিচিত ছিল। খননের পর এখানে কারুকার্যখচিত যে মসজিদের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে; অনেকের মতে- এটিই দেওয়ান জালাল নির্মিত ‘মসজিদ-এ জালাল’ বা ‘জালাল মসজিদ’। বর্তমানে জেলার হাওর উপজেলা মদনসহ জেলার অন্যান্য এলাকাতেও দেওয়ান মজলিশ জালালের বংশধররা রয়েছেন বলেও জানা যায়। সূত্র: বাসস

পলান সরকারের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০২৫, ০৩:৫০ পিএম
পলান সরকারের মৃত্যুবার্ষিকী আজ
ছবি: সংগৃহীত

পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে শিক্ষিত করার লক্ষ্যে নিজের টাকায় বই কিনে বাড়ি বাড়ি দিয়ে আসতেন পলান সরকার। আবার পড়া বই ফেরত নিতে গিয়ে দিয়ে আসতেন নতুন বই। টানা ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি এই কাজ করেছেন। তার এ কাজে আলোকিত হয়েছেন রাজশাহীর বাঘা উপজেলার অন্তত ২০ গ্রামের মানুষ। সেই আলোর ফেরিওয়ালা পলান সরকারের মৃত্যুবার্ষিকী আজ ১ মার্চ। ২০১৯ সালের এই দিনে ৯৮ বছর বয়সে তিনি মারা যান। 

পলান সরকার ১৯২১ সালের ১ আগস্ট নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। মা-বাবা তার নাম রেখেছিলেন হারেজ উদ্দিন সরকার। তবে মা ডাকতেন ‘পলান’ নামে। ব্রিটিশ আমলে তিনি যাত্রাদলে যোগ দিয়েছিলেন। ১৯৬৫ সালে ৫২ শতাংশ জমি দান করে সেখানে 

তিনি বাউসা হারুন অর রসিদ শাহ দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯০ সাল থেকে ওই বিদ্যালয়ের মেধা তালিকায় থাকা প্রথম ১০ শিক্ষার্থীকে তিনি বই উপহার দেওয়া শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে অন্য শিক্ষার্থীরাও তার কাছে বইয়ের আবদার করে। এরপর তিনি সিদ্ধান্ত নেন, তাদেরও বই দেবেন। তবে তাদের শর্ত দেন, পড়ার পর বই ফেরত দেওয়ার। সে থেকেই শুরু হয় পলান সরকারের বই বিলির অভিযান। বেশ কয়েকটি গ্রামজুড়ে তিনি গড়ে তুলেন বই পড়ার এক অভিনব আন্দোলন। বই পড়ার এ অভিনব আন্দোলনের জন্য ২০১১ সালে পলান সরকার একুশে পদক পান।