
দিনাজপুর সদরের আউলিয়াপুরে ৭৮তম চেরাডাঙ্গী ঘোড়ার মেলা গতকাল শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিক্রেতারা এ বছর এক শর বেশি ঘোড়া নিয়ে আসেন। মেলাতে ঘোড়া রাখার পাশেই অস্থায়ী ভিত্তিতে ঘোড়ার মালিকদের থাকারও ঘর তৈরি করা হয়।
কেউ আবার ঘোড়া রাখার জায়গার পাশেই নিজেদের দুপুরের খাবার রান্না করেন। কেউ পানি নিয়ে আসেন। এক কথায় ঘোড়ার মেলায় এসে যেন বনভোজনের আয়োজনও হয়।
মেলায় কারও ঘোড়া পছন্দ হলেই পছন্দমতো ঘোড়ায় পিঠে চড়িয়ে ট্রায়াল দেওয়া হয়েছে। এরপরই চলে দাম-দর। এবারের মেলায় ৭ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকায় ঘোড়া কেনাবেচা হয়।
মেলায় আনা ঘোড়াগুলোকে রাস্তার রাজা, বিজলী রানি, রাস্তার পাগল, কিরণমালা, রানি, সুইটি, রংবাজ, পারলে ঠেকাও, কাজলী, তাজিয়া, কুমার রাজা, বাহাদুর, দাপটিয়া, চাওয়ালিসহ বিভিন্ন নাম ধরে ডাকা হয়। মেলায় ঘোড়ার পাশাপাশি ২-৪টি গাধাও থাকে। ঘোড়ার তুলনায় গাধার দাম অনেক বেশি। একটি গাধার সর্বনিম্ন দাম ৩৫ হাজার টাকা, সর্বোচ্চ ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
এবারের মেলায় সাদা-কালো ঘোড়াটি মেলায় দর্শনার্থীদের নজর কাড়ে। কেউ কেউ ঘোড়া দেখার জন্য আসেন। কেউ কেউ আবার ঘোড়ার সঙ্গে ছবি তোলেন। সাদা-কালো ঘোড়াটি ক্ষিপ্রতা আর বুদ্ধিমত্তার কারণে ‘তাজিয়ানা ঘোড়া’ নামে পরিচিত। এই ঘোড়াটির দাম হাঁকানো হয় ৮০ হাজার টাকা। ক্রেতারা ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা দাম বলেন।
ঘোড়া বিক্রেতা আবু জাফর বলেন, ‘নওগাঁ থেকে ৪টি ঘোড়া নিয়ে এসেছি। ৭ হাজার টাকায় একটি ঘোড়ার বাচ্চা বিক্রি করেছি। আরও দুটি বাচ্চা ঘোড়াসহ তিনটি ঘোড়া রয়েছে। এ বছর ঘোড়ার দাম অনেক কম।’
আজিজুল ইসলাম নামে আরেক বিক্রেতা বলেন, ‘বগুড়া থেকে চারটি ঘোড়া ও একটি গাধা নিয়ে এসেছি। গাধাটি ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছি। আর একটি মাত্র ঘোড়ার বাচ্চা বিক্রি হয়েছে। বাকি ঘোড়া বিক্রি হবে কি না, চিন্তায় আছি।’
মেলায় ঘোড়া কিনতে আসা আহসান হাবিব বলেন, ‘আমার বাড়িতে আরও দুটি ঘোড়া আছে। চেরাডাঙ্গী মেলায় আসা সাদা-লাল ঘোড়াটি খুবই পছন্দ হয়েছে। আমি ৫০ হাজার টাকা দাম বলেছি। কিন্তু বিক্রেতা ৮০ হাজার টাকার কমে বিক্রি করছেন না। দর-দাম ঠিক হলে ঘোড়াটি কেনার ইচ্ছা ছিল।’
অপর ক্রেতা রেজাউল করিম রঞ্জু বলেন, ‘বেশ কয়েকটি ঘোড়া দেখেছি। এর মধ্যে দুটি ঘোড়া আমার পছন্দ হয়েছে। ৪৫ হাজার টাকা দাম বলেছি। তারা ৬০ হাজার টাকা বলেছেন।’
মেলায় ঘোড়া দেখতে আসা স্কুলছাত্র ফাহিম আজাদ বলে, ‘ঘোড়া আমার খুবই পছন্দের একটি প্রাণী। আমি ঘোড়ায় চড়তেও পারি। এ বছর না হলেও আগামী বছর আমি ঘোড়া কিনব।’
চেরাডাঙ্গী ঘোড়ার মেলার ইজারাদার নজমুল ইসলাম জানান, এ পর্যন্ত বিক্রেতারা মেলায় ১৩০টির বেশি ঘোড়া নিয়ে আসেন। প্রতিটি ঘোড়া নিবন্ধন করা হয়। বিভিন্ন এলাকা থেকে ঘোড়া বিক্রেতারা এই মেলায় প্রতিবছর আসেন।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিউর রহমান বলেন, ‘পুলিশের পেট্রোল টিম প্রতিদিন মেলায় যাওয়া-আসা করে। বিশেষভাবে পুলিশ চাওয়া হয়নি। তাই সেখানে পুলিশি পাহারা বসানো হয়নি।’