
সিলেটে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত হয় ১৯৪৭ সালে। সে বছরের ৩০ নভেম্বর আলিয়া মাদ্রাসা হলে একটি আলোচনা সভায় কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী রাষ্ট্রভাষা বাংলার পক্ষে যুক্তি-তথ্যসহ একটি দীর্ঘ বক্তৃতা করেন। পরে তার এই বক্তব্য ‘পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’ নামে বই আকারে বের হয়। এর পরের বছর থেকে মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে সিলেটেও শুরু হয় তুমুল আন্দোলন।
মাতৃভাষার প্রশ্নে তৎকালীন মুসলিম লীগ নেতাদের সঙ্গে প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বে জড়ায় মুসলিম ছাত্র ফেডারেশন। এ সময় সিলেটের প্রগতিশীল নারীসমাজ বাংলা ভাষার মর্যাদার দাবিতে পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিনের কাছে একাধিক স্মারকলিপি পাঠায়। এতে স্বাক্ষর করেন স্বনামধন্য রাজনীতিক যোবেদা খাতুন চৌধুরানী, শাহেরা বানু, সৈয়দা লুৎফুন্নেছা খাতুন, রাবেয়া খাতুন। সিলেটের ভাষাসংগ্রামীদের মধ্যে সামনের সারিতে ছিলেন আসাদ্দর আলী, ওয়ারিছ আলী, তারা মিয়া, মাহমুদ আলী, দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ, মুসলিম চৌধুরী, নুরুল হক, প্রসূনকান্তি রায়, যোবেদা খাতুন, শাহেরা বানু, সৈয়দা নজিবুন্নেছা, সৈয়দা লুফুন্নেছা, ছালেহা খাতুন। এ সময় মুসলিম সাহিত্য সংসদও রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে জনসমর্থন আদায় করে এবং ভাষাসংগ্রামীদের পক্ষে থাকে সাপ্তাহিক নওবেলাল ও আল ইসলাহ।
বায়ান্নর ফেব্রুয়ারিতে রাষ্ট্রভাষার আন্দোলন যখন ক্রমেই জোরদার হচ্ছে, সিলেটেও গঠিত হয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ; যার আহ্বায়ক ছিলেন পীর হাবিবুর রহমান। ঢাকা থেকে ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সিলেটে একুশে ফেব্রুয়ারির তৎপরতা শুরু হয়। ঢাকায় ছাত্র হত্যার সংবাদের প্রতিক্রিয়ায় সিলেট শহর জ্বলে ওঠে। ছাত্ররা ধর্মঘটসহ পূর্ণ হরতাল ডাকে শহরে। শহিদদের স্মরণে সিলেটে অনুষ্ঠিত হয় গায়েবানা জানাজা।
নিরস্ত্র ছাত্রদের ওপর গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে ২২ ফেব্রুয়ারি সিলেটের গোবিন্দ পার্কে বিরাট জনসভার আয়োজন করা হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি যোবেদা খাতুনের নেতৃত্বে সিলেটের নারীরাও রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে যোগ দেন। এরপর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সিলেটের প্রতিটি মহকুমা শহরে।